#নীরব_সাক্ষী
#ফারহানা_ছবি
#পর্ব-৫
মুন চুপ চাপ ঔষধ টা খেয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিতে গভির ঘুমে তলিয়ে যায় মুন…..
হঠাৎ করে মুন শরীলে ভারি কিছু অনুভব করে ঘুম ছুটে যায় মুনের , চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে পুরো রুম ঘুট ঘুটে অন্ধকার আর কেউ ওকে আস্টে পিস্টে জরিয়ে আছে ৷ মুনের ভিষন অসস্থি হয়ে লাগলো মুন ওই মানুষটার শক্ত হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বিছানা থেকে নেমে লাইট জ্বালাতে দেখে রিদ ঘুমিয়ে আছে ৷ মুন ভেবে পাচ্ছে না রিদ এখানে কি করছে ৷ পরক্ষনে মনে পরলো এটা প্রিয়ন্তির রুম তারমানে রিদ ওর কাছে নয় প্রিয়ন্তির কাছে এসেছে ৷ মুন ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সন্ধা সাতটা বাজে …
“” আল্লাহ্ সন্ধা হয়ে গেছে রাতের রান্না টা তো এখনো করেনি””
মুন দ্রুত রুম থেকে বের হতে নিলে প্রিয়ন্তির সাথে ধাক্কা খেয়ে মুন পরে যেতে নিলে প্রিয়ন্তি মুন কে ধরে ফেলে…..
“” ভাবি তোমার লাগে নি তো ? আর এভাবে ছুটে যাচ্ছো কোথায়? তোমার না শরীল খারাপ””
“” প্রিয়ন্তি সাতটা বেজে গেছে আমাকে রাতের খাবার তৈরি করতে হবে আর দেখো আমি এখন সম্পূর্ন সুস্থ “”
“” চুপ করো ভাবি আমি খালামনি কে আগে বলে দিয়েছি তুমি অসুস্থ আজ তুমি রান্না করতে পারবে না ৷ আর তুমি আজ রেস্ট করবে””
“” তাহলে কে রান্না করবে ? আর রাতে খাবার কে তৈরি করবে?””
“” খালামনি নিজে করবে আর আমি খালামনিকে হেল্প করবো””
মুন প্রিয়ন্তির কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়লো রিয়ানা বেগম যে তো সহজে মেনে যাবে এটা মুন কল্পনায় ভাবতে পারে নি ৷
“” কি ভাবছো ভাবি? “”
প্রিয়ন্তির কথায় মুন ভাবনার জগত থেকে বেরিয়ে আসে ৷
“” ও এখানে কেন? (রিদ কে উদ্দেশ্যে করে )”
“” আসলে ভাবি রিদ ভাইয়া বিকেলে ফিরে তোমাকে খুজছিলো ৷ তুমি আমার রুমে জানাতে এই রুমে এসেছিলো”” নিচু গলায় বললো প্রিয়ন্তি.
“” হঠাৎ এতো দরদ আমার উপর উতলে উঠলো কেন প্রিয়ন্তি আর তোমাদের শপিংয়ে বের হবার কথা ছিলো?””
“” বিকেলে তোমার গায় ধুম জ্বর থাকায় রিদ ভাইয়া যেতে চাই নি বললো আগামি কাল নিয়ে যাবে””
প্রিয়ন্তি এক ঝলক রিদের দিকে তাকিয়ে নিজের এলোমেলো চুল গুলো খোপা করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ৷ প্রিয়ন্তি পিছুন থেকে ডেকেও সারা না পেয়ে থেমে যায়….
“” আই এম স্যরি ভাবি , আমার জন্য তোমার সংস্যার টা ভেঙে গেল ৷ কিন্তু আমি যে অসহায় “” প্রিয়ন্তি দীর্ঘশ্বাস ফেলে রিদ কে ঘুম থেকে তোলার জন্য এগিয়ে গেল….
মুন নিজের ঘরে নিয়ে ওয়াসরুমে ঢুকে চোখে মুখে পানি দিয়ে চুল টা আচরে খোপা করে নেয়৷ মুনের শরীল টা এখনো খুব দূর্বল লাগছে কিন্তু শরীলে সেই ব্যাথা নেই ৷ মুন কিছুক্ষন আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখছে”” এক বছরে ত্বকের কি পরিবর্তন আগের থেকে গায়ের রং ময়লা হয়ে গেছে ৷চোখের নিচে কালো দাগ , শরীলে অজস্র মারের দাগ যে গুলো কালসিটে পরে গেছে৷ মুন আয়নায় নিজেকে দেখার সময় হঠাৎ খেয়াল করে দুটো চোখ তাকে দেখছে সে চোখ দুটো আর কারোর না রিদের ৷ রিদ কে দেখে মুন দ্রুত বেরিয়ে যেতে নিলে হঠাৎ করে মুনের মাথাটা ঘুরে যায় ৷ মুন পরে যেতে নিলে রিদ মুন কে ধরে ফেলে ৷ রিদ মুন কে ভালো না বাসলেও মুনের জন্য রিদের মনের কোনে এক সুপ্ত অনুভূতি আছে যেটা রিদ কখনো মুন কে বুজতে দিতে চায় না ৷ রিদ মুন কে দার করিয়ে বলে উঠলো “” কি বেপার নবাবজাদীর বেটি আমাকে দেখে কি পরে যাওয়ার ভান করছিস ভাবছিস এভাবে আমার কাছে আসতে পারবি?””
রিদের কথা শুনে তাচ্ছিল্যর হাসি দিয়ে বলে উঠলো “” এমনটা ভাবার কোন কারন নেই রিদ ৷ আমি যতোক্ষন সৎজ্ঞানে আছি ৷ আমি বেচে থাকতে তোমার মতো নোংরা লোকের কাছে যাওয়ার কথা কল্পনাতেও ভাবতে পারি না ৷ তাহলে যে নিজেকে অপমান করা হবে৷””
মুনের কথা শুনে মুহূর্তে রিদের মাথা যেন গরম হয়ে গেল ৷ রিদ তার সমস্থ শরীলের শক্তি দিয়ে মুন কে থাপ্পোর মারলো মুন ছিটকে খাটের কোনায় বাড়ি খেয়ে ফ্লোরে পরে যায়৷ মুনের শরীল অত্যান্ত দূর্বল থাকায় মুন সেন্সলেস হয়ে যায় ৷ মুন কে উঠতে না দেখে রিদ ঘাবড়ে যায় ৷ মুনের কাছে গিয়ে দেখে মুন সেন্সলেস হয়ে গেছে ৷ রিদ মুন কে কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিতে খেয়াল করে মুনের ঠোটের কোন কেটে রক্ত পরছে৷ রিদ তুলো দিয়ে রক্ত মুছে মলম লাগিয়ে মুনের গায়ে কম্বল চাপিয়ে দিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়৷
এতোক্ষন রিয়ানা বেগম দরজার কাছে তার ছেলে আর ছেলের বউ এর কাহিনি দেখছিলো যখনি দেখলো রিদ মুন কে থাপ্পোর মারছে ওনার ইচ্ছে করছিলো রিদ কে বলতে যে মুন কে আরো মারতে কিন্তু তিনি তা বলতে পারবেন না কারন বাড়িতে এখন রিদের বাবা আছে এই জন্য তিনি শান্ত হয়ে যায়৷ কিন্তু পরক্ষনে রিদ কে যখন দেখলো মুনের সেবা করতে তখনি ওনার মাথায় আগুন ধরে যায় ছুটে যায় প্রিয়ন্তির রুমে……
“” প্রিয়ন্তি ….””
“” জ্বি খালামনি তুমি এখন এখানে কিছু বলবে?””
“” হুম বলতেই তো এসেছি””
“” তাহলে ভনিতা না করে বলে ফেলো…””
______________
“” বাবা আর কতো? তোর বাবা কিন্তু তোর উপর খুব ক্ষেপে আছে আবিদ””(মনিরা বেগম)
“” তাতে আমার সত্যি কিছু যায় আসে না আম্মু ৷ লোকটার কথায় সত্যি আমার কিছু যায় আসে না৷””
“” আবিদ ভুলে যেও না উনি তোমার বাবা হন””
“” সত্যি যদি ভূলতে পারতাম উনি আমার বাবা””
মনিরা বেগম এবার খানিকটা নরম হয়ে বলতে লাগলেন৷
“” দেখ বাবা তুই তো জানিস তোর বাবা নিজের সির্দ্ধান্তে অনর মুন কে কখনো মেনে নিবে না ৷””
“” কেন আম্মু কেন মুন কে মেনে নিতে কি সমস্যা আব্বুর ?””
“” কারন টা তুমি খুব ভালো করে জানো কারন টা হলো মুনের বাবা মা ৷ বিশেষ করে মুনের মা উনি কতো টা বাজে লোভি , নিজের লাভ ছাড়া এক পাও এগোয় না ৷ তার উপর ব্যবহার এতো খারাপ যে ওনার সাথে কথা বলা পর্যন্ত যায় না ৷ “”
মনিরা বেগমের কথা শুনে আবিদ চুপ করে আছে ৷ কারন আবিদ জানে তার আম্মু যা বলেছে তার প্রত্যেকটা কথা সত্য ৷ আবিদ কে চুপ থাকতে দেখে মনিরা বেগম আবার বলতে লাগলেন”” আবিদ সব থেকে বড় কথা কি জানিস মুন এখন বিবাহিত ৷ এক বছর হয়ে গেছে ওর বিয়ের এখনো কেন তুই ওকে ভূলতে পারছিস না ?””
“” ভূলে যাওয়াটা কি সত্যি খুব সহজ আম্মু? “”
“” সহজ না বাবা কিন্তু তোকে ভূলতে হবে নিজের না হলেও মুনের জন্য ,কারন ও এখন অন্য কারো স্ত্রী অন্য বাড়ির বউ , আমি জানি আমার আবিদ সোনা আমার কথা শুনবে ৷””
“” স্যরি আম্মু মুন কে ভূলে যাওয়া আমার পক্ষে কোন দিন সম্ভব নয় ৷ আমি জানি আমার মুন আমাকে ছাড়া ভালো নেই ৷ আমি আমার মুন কে ফিরিয়ে আনবো ৷ তুমি জানো না আম্মু কার সাথে বিয়ে হয়েছে আমার মনপাখির ৷একটা অমানুষের সাথে যে কিনা বিয়ে আগে থেকে নিজের কাজিনের সাথে রিলেশনশিপে আছে”” (মনে মনে )
“” আবিদ তোকে তোর আব্বু ডাকছে “”( আবির)
“” মেজো ভাইয়া তুমি যাও আমি আসছি””(আবিদ)
“” আচ্ছা তারাতারি আয় আব্বু খুব রেগে আছে দেখলাম””
আবিদ তাচ্ছিল্যর হাসি মনে মনে বলতে লাগলো” মা বাবা তোমরা যতো যাই করো না কেন মুন কে আমি ওই নরক থেকে বের করে আনবো-ই আর এ বাড়ির ছোট বউ আমার মনপাখি হবে””
___________________
” তুই ওই মুখপুরির সাইড হয়ে কথা বলছিস কেন?”(রিয়ানা বেগম)
“” খালামনি আমি রক্ত মাংসে গড়া একজন মানুষ কোন জন্তু না””
“” কি বলতে চাইছিস তুই “” তিক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে বললো রিয়ানা বেগম
“” আমি কি বলতে চাইছি তুমি ঠিক বুজতে পারছো খালামনি ৷ যাই হোক তোমাকে একটা কথা বলছি ভাবিকে তুমি বউ হিসেবে মেনে নেওনি আর মেনে নিবেও না এটা আমি খুব ভালো করেই জানি কিন্তু ভাবি তো মানুষ এরকম টর্চার করো না প্লিজ “”
“” তাহলে কি করতে বলছিস আমায় ওই বেশ্যা কে ঘরে রাখতে ? কোন দিন না ওকে তো আমি ঘর ছাড়া করবোই ৷””
প্রিয়ন্তি বুজতে পারলো তার খালামনি তার কথায় অনড় মুন কে এতো তারাতারি ছাড়বে না ….
রিদ মুনের কপালে হাত দিয়ে বার বার চেক করছে জ্বর এসেছে কিনা ৷ রাতে রায়হান আহাম্মেদ রিদের বাবা খাবার খাওয়ার সময় মুন কে না দেখতে পেয়ে রিয়ানা বেগম কে মুনের কথা জ্বিগাসা করতে রিয়ানা বেগম মুখ বাকিয়ে বলতে লাগলো”” তোমার বউ মা হলো ননীর পুতুল টোকা লাগতে মুচরে যায়””
“” রিদের মা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কথা না বলে সোজাসুজি বলো কি হয়েছে বউমার ?””
“” মাথা ঘুরে পরে গেছে তাই তিনি তার রুমে বিশ্রাম নিচ্ছেন”” খুন্তির ছেকা দেওয়ার কথা লুকিয়ে গেল রিয়ানা বেগম..
“” কিহ বউমা অসুস্থ আর তুমি এখন আমাকে বলছো রিদের মা? বউ মাকে ডাক্তার দেখিয়েছো?””
“” একটু মাথা ঘুরে গেছে তার জন্য কিনা ডাক্তার দেখাতে হবে হু ঢং দেখে আর বাচি না “” ফোড়ং কেটে বললো রিয়ানা বেগম…
রিয়ানা বেগমের কথা শুনে রায়হান আহাম্মেদ চুপ হয়ে গেলেন তিনি জানেন এখন তিনি যাই বলুক না কেন রিয়ানা তা শুনবে না তাই চুপ করে রইল……..
__________
” তোমাকে কখন ডেকেছিলাম আবিদ?”” (আফজাল হোসেন)
আবিদ কিছু বললো না মাথা নিচু করে দারিয়ে রইল…
“” আবিদ শুনলাম তুমি নাকি আমাদের পারিবারিক ব্যবসায় হাত লাগবে না ?””
“” জ্বি আব্বু , ”
“” কারন টা কি আমি জানতে পারি?””
“” কারন টা হলো আমি নিজে নিজের ব্যবসা দার করাবো “”
“” এর আগে দশ লাখ টাকা তুমি নষ্ট করেছিলে মনে আছে আবিদ?” গম্ভির গলায় বললো আফজাল হোসেন…
“” সময় হলে দশ লাখ টাকা তোমাকে ফেরত দিয়ে দিবো””
“” আবিদ আমি তোমাকে তিন মাস সময় দিলাম তুমি যদি এর ভিতর কিছু করে দেখাতে না পারো তাহলে তুমি আমাদের বিজনেসে জয়েন করবে””
আবিদের বাবার কথা শেষ হতে-ই আবিদের ফোন টা বেজে ওঠে ৷ আবিদ ফোন বের করে দেখে সুমিতের নাম ,,, আবিদ তার বাবার কথা উপেক্ষা করে ফোন নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় এদিকে আফজাল হোসেন তার ছেলের এতো অধপতন দেখে রাগে যেন ফেটে পরলো …..
.
.
.
.
#চলবে……………
[বিঃদ্রঃ ভূলট্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন জনগন আর হ্যা ভালো না লাগলে প্লিজ ইগনোর করুন]