নীরব সাক্ষী পর্ব-০৭

0
347

#নীরব_সাক্ষী
#ফারহানা_ছবি
#পর্ব-৭

অন্যদিকে আবিদ বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ায় আফজাল সাহেব প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়ে আছে মনিরা বেগমের উপর , তিনি তার দুই ছেলে সামনে মনিরা বেগম কে ডেকে পাঠান..মনিরা বেগম তার স্বামীকে প্রচন্ড রকমের ভয় পান তার সামনে আসতে মনিরা বেগম চুপ হয়ে যায়৷ আফজাল হোসেন বলতে লাগলেন……

“” মনি আবিদ তোমাকে কিছু বলে গেছে?””(আফজাল হোসেন)

“” না আজমিরের আব্বু আবিদ আমাকে কিচ্ছু বলেনি””

“” ওই ওই মেয়েটাই আবিদের মাথা খেয়েছে ৷ ওর জন্য আবিদ আজ আমার হাত ছাড়া হয়ে গেছে৷ মেয়েটা দুরে গিয়েও আমার পরিবারে শান্তি ছিনিয়ে নিয়ে চলে গেছে ৷ কি এমন দেখলো ওই মেয়ের মধ্যে যার জন্য ঘর ছাড়তেও দ্বিতীয় বার ভাবেনি? ” প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়ে বললেন আফজাল হোসেন….

“” তুমি প্রথম থেকে ভূল ছিলে আজমিরের আব্বু, তুমি যদি শুরুতে এতো বকা ঝকা না করে ঠান্ডা মাথায় বুঝাতে আর মুন কে একটু বুঝার চেষ্টা করতে তাহলে এই দিন তোমাকে দেখতে হতো “”

মনিরা বেগমের কথা শুনে আফজাল হোসেন যেন আরো তেতে উঠলো ..

“” মনি তোমার সাহস কি করে হয় এমন কথা বলার ওই মেয়ে হবে আমার বংসের পুত্র বধু যার মা কিনা কাঁচা মালের ব্যবসায় করে তার উপর আমার বাড়িতে ভাড়া থেকে গেছে ৷ যার বাবা মায়ের কোন ক্ষমতা নেই আমার সামনে দারানোর সেই ভারাটিয়ার মেয়ে কে করবো আমার ছেলের বউ হু কোন দিন না “”

“আজমিরের আব্বু এখন সব কিছু তোমার আমার হাতের বাইরে চলে গেছে ৷ আবিদ এখন বড় হয়েছে মাস্টার’স শেষ করেছে ও এখন ভালো মন্দ বুজতে শেখেছে ৷ আমার মনে হয়না আবিদ কে এতো সহজে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না ৷””

“” ফিরে তো ওকে আসতে হবে মনি আজ নয়তো কাল ফিরে আসতে হবে””

________________

“” আম্মু আপু কে কতোদিন দেখেনি আপুকে নিয়ে এসো না কিছুদিনের জন্য”” মৃন্ময় এর কথা শেষ হতে-ই মৃন্ময় এর গালে স্বজোরে এক থাপ্পোর মেরে বলে উঠলেন”” খুব শখ না বোন কে দেখার হুম বল .. দুই ভাইবোন মিলে আমার শুধু খরচ করানোর ধান্দা , একটা কে তো বিদেয় করেছি এবার মনে হচ্ছে তোকে ও করতে হবে ৷ এখন দোকানে যা আমাকে নতুন বাড়িতে যেতে হবে বাড়ির কাজ এখনো বাকি আছে ৷

মৃন্ময় ছলছল চোখ নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল ৷

_____________

“” আসসালামু আলাইকুম মামা কেমন আছো?””(আবিদ)

“” অলাইকুম আসসালাম , আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি তুমি কেমন আছো আবিদ?””

“” আলহামদুলিল্লাহ “”

“” আবিদ নিরবের সাথে আমার কথা হয়েছে ৷ তুমি আজ থেকে আমার সাথে আমার বাড়িতে থাকবে আর আমার সাথে দোকানে কাজ করবে ৷ আমি তোমাকে সব কাজ বুঝিয়ে দিবো ৷””

“” ঠিক আছে মামু “” আবিদ দোকানের ভিতর ঢুকে দেখতে লাগলো বিভিন্ন সাইজের পাইপ , টাইস আর পাশের দোকান টায় রড রাখা….

নিরবের মামা সামসু হক আবিদের জন্য নাস্তার ব্যাবস্থা করে ফিরে এসে বলে “” আবিদ বাবা তোমার সব কথাই আমি জানি জানি তোমার মুনের কথাও তুমি চিন্তা করো না আমি তোমার পাশে আছি ৷ তোমাকে সাহায্য করবো আমি ৷””

“” ধন্যবাদ মামা , আমি নিজের পায়ে দারিয়ে আমি আমার মুন কে আমার কাছে নিয়ে আসবো “”

“” ইনশা আল্লাহ “”

আবিদ কে কাজ দোকানের কাজ একটু একটু করে বুঝিয়ে দিতে লাগলো৷ আর আবিদ খুব দক্ষতার সাথে কাজ বুঝে নিচ্ছে আর খদ্দের কে হেন্ডেল করছে ৷ সামসু হক আবিদের দক্ষতা দেখে ভিষন খুশি কারন আবিদ ব্যবহার দক্ষতা জিনিসের বিবরন দেওয়া দেখে তিনি অবাক কারন তিনি নিজেও এভাবে বিবরন দিয়ে ক্রেতাদের বুঝাতে পারবে না ৷

সামসু হকের আজ দ্বিগুন মাল বিক্রয় হওয়ায় তিনি আবিদের উপর ভিষন ভাবে সন্তস্ট ৷ আবিদ কে নিয়ে দুপুরে বাড়িতে নিয়ে এসে বিশাল আপ্পায়ন করছে ৷ সামসু তার বউ আফিয়া কে সব টা খুলে বলতে তিনি আবিদ কে নিজের ছেলের মতো আপন করে নেয় ৷ সামসু হকের এক মেয়ে আর ক ছেলে বড় ছেলে সামির এবার ইন্টার প্রথম বর্ষে পরে আর ছোট মেয়ে সামিরা ক্লাস টুতে ভিষন কিউট মেয়েটি ৷

সামসু হক আবিদ কে সামিরের সাথে একি রুমে থাকতে দিলো ৷ সামির আগে থেকে আবিদ কে চেনায় না করলো না ৷ সামির খুশি হয়ে আবিদের সাথে রুম শেয়ার করার জন্য রাজি হয়ে গেল ৷

“” আবিদ ভাইয়া তুমি রেস্ট করো আর তোমার যদি কিছুর প্রয়োজন হয় আমাকে বলো””

সামিরের কথা শুনে আবিদ সামিরের গাল টেনে দিয়ে বলে” তোর রুমে থাকবো তোর কোন সমস্যা হবে না তো ?”

“” কি যে বলো ভাইয়া তুমি আমার রুমে থাকবে আর আমার সমস্যা হবে ৷ আমার তো আরো ভালো লাগছে তুমি আমার সাথে থাকবে এটা ভেবে””

আবিদ মুচকি হাসি দিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল ৷ আর সামির নিজ দ্বায়িত্বে আবিদের জামা কাপড় নিজের আলমারিতে গুছিয়ে রাখছে ৷

_________________

সকাল থেকে হাড় ভাঙা খাটুনি খেটে ক্লান্ত মুন তবুও মুখে হাসি রেখে কাজ করে যাচ্ছে ৷ সকালে ডিভোর্সের কথা শোনার পর থেকে মুনের যেন খাওয়ার রুচি মরে গেছে ৷ মুন ডিভোর্স নিয়ে অতটা ভাবান্তর নেই যতোটা ভাবান্তর হচ্ছে নিজের জন্মদাত্রী মায়ের জন্য .. আলিয়া বেগম যখন জানতে পারবে মুনের ডিভোর্সের কথা তখন কি ভয়ঙ্কর কান্ড করবে এটা ভেবে-ই মুনের আত্তা কেঁপে উঠছে ৷ মুনের শশুর মুনের শাশুড়ীর কথায় রাজি হয়ে যায় তখন কারন রায়হান আহাম্মেদ ও চায় না মুনের মতো একটা লক্ষী মেয়ে এই নরকে রিদ এর মতো পিচাশ এর কাছে থেকে অর্তাচারিত না হয় ৷ তিনি তখনি উকিলের কাছে চলে যান আর উকিলের সাথে কথা বলে ডিভোর্স ফাইল করেন ৷

দুপুরে মুনের শ্বশুর মুন কে পাশে বসিয়ে নিজের হাতে খাইয়ে দেয় ৷ শশুরের এতো এতো ভালোবাসা পেয়ে মুনের চোখ জোড়া ছলছল করছে ৷ কারন এতো ভালোবাসা হয়তো নিজের বাবার কাছেও পায়নি ৷ রায়হান আহাম্মেদ মুনের চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলতে লাগলেন “” পাগলি মেয়ে কাদঁছিস কেন ? খাবার খাওয়ার সময় কাঁদতে নেই জানিস না””

রায়হান আহাম্মেদ এর কথা শুনে রিয়ানা বেগম ফোরং কেটে বলে উঠলো “” কতো ঢং যে দেখবো আর হু , প্রিয়ন্তি মা খেয়ে নে ঝটপট তারপর বাবু কে নিয়ে মার্কেটে যা কাল তো এই মেয়েটার জন্য যেতে পারিস নি “”

“” আচ্ছা খালামনি কিন্তু তুমি এখন এই সব কথা বলা বন্ধ করো প্লিজ””

“” হু এখন তো কারোর আমার কথা ভালো লাগে না বুঝি বুঝি “” কথাটা মুনের দিকে আগুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো রিয়ানা বেগম…….

মুন বুজতে পারলো তার শাশুড়ীর রাগের কারন.. মুন এবার তা গায় না লাগিয়ে শশুরের হাতে খেতে লাগলো ৷ রিদ দরজার কাছে দারিয়ে লুকিয়ে মুন কে দেখছে আজ প্রায় এক বছর পর মুনের মুখটা এতোটা খুশি খুশি দেখাচ্ছে তবে আজ দুপুরে তার মা যখন ডিভোর্সের কথা বলেছিলো কেন যেন তখন রিদের শ্বাস আটকে যাচ্ছিলো মুন যে এতো দিনে রিদের অভ্যাসে পরিনত হয়েছে ৷ মুন কে ভালো না বাসলেও ওকে ছাড়া থাকার কথা ভাবতে-ই রিদের দম আটকে আসছে কিন্তু রিদ ভেবে পাচ্ছে না ও তো নিজে চেয়েছিলো মুন তার জীবন থেকে চলে যাক কিন্তু আজ যখন সে সুযোগ এসেছে তখন কেন ও খুশি হতে পাচ্ছে না? রিদ ভেবে পাচ্ছে না কেন এটা হচ্ছে ?

প্রিয়ন্তি খেতে খেতে হঠাৎ চোখ পরে রিদের দিকে রিদ যে এক দৃষ্টিতে মুনের দিকে তাকিয়ে আছে তা প্রিয়ন্তি খুব ভালো করে বুজতে পারছে ৷ কিন্তু এটা কেন যেন প্রিয়ন্তির সহ্য হচ্ছে না বুকের ভিতর চিন চিন ব্যাথা অনুভব করছে ৷ প্রিয়ন্তি মনে মনে ভাবছে ” রিদ তার বউয়ের উপর দূবর্ল হয়ে পরেনি তো ? তাহলে ওর কি হবে ওর সবটা যে রিদ নিয়ে গেছে ওর নিজের কাছে অবশিস্ট আর কিছুই নেই?”

প্রিয়ন্তির গলা থেকে যেন আর খাবার নামছে না ৷ না খেয়ে উঠে গেল প্রিয়ন্তি ৷ কিন্তু মুন যেন আজ তৃপ্তি করে খেয়েছে তার শশুর মশাইয়ের হাতে , মুন খেয়ে উঠে বাকি খাবার গুলো গুছিয়ে রেখে টেবিল পরিষ্কার করে রুমে চলে যায় ৷ রুমে গিয়ে দেখে রিদ ল্যাপটপে কাজ করছে অথচ রিদ কাজের ফাঁকে-ফাঁকে আড়চোখে মুন কে দেখছে ৷ মুন কে আজ খুব ফুর ফুরে লাগছে ৷ তার ঘন চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে গুন গুনিয়ে গান গাইতে লাগলো ……..

আমারও পরানো যাহা চায়
তুমি তাই , তুমি তাই গো
আমারও পরানো যাহা চায়…..
.
.
.
.
#চলবে………….