নীরব সাক্ষী পর্ব-০৯

0
361

#নীরব_সাক্ষী
#ফারহানা_ছবি
#পর্ব-৯
.
.
.
মুনের ঘুম ভাঙতে দেখে রিদ ওকে আস্টে পিস্টে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে ৷ মুনের কেন যেন রিদের স্পর্শে প্রচন্ড ঘৃনা লাগছে ৷ বার বার মনে পরে যাচ্ছে প্রিয়ন্তি আর রিদের অন্তরঙ্গ অবস্তার দৃশ্য , মুনের রাগ যেন দ্বিগুন বেরে গেল হুট করে রিদ কে ধাক্কা সরিয়ে দিয়ে মুন উঠে পরে আর ঘুমের ঘরে ধাক্কা সামলাতে না পেরে নিচে পরে যায়৷ প্রচন্ড ব্যাথা পেয়ে জেগে যায় রিদ , নিজেকে নিচে দেখে যা বোঝার বুজতে পেরেছে রিদ আগুন দৃষ্টিতে মুনের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলতে লাগলো”” কাজ টা মটেও ঠিক করলি না এর মূল্য তোকে চোকাতে হবে “” রিদ ফ্লোর থেকে উঠে ওয়াশরুমে ঢুকে যায় সে সুযোগে মুন বিছানা গুছিয়ে নেয়৷ রিদ ফ্রেস হয়ে বের হয়ে ছোট্ট বেলকনিতে চলে যায় ৷ মুন ফ্রেস হয়ে রান্না ঘরে চলে যায় ৷ ঝটপট পরোটা আলুর দম করে দুপুরের রান্নার আয়োজন করতে লাগলো …

রিয়ানা বেগম সকাল সারে ন-টায় ঘুম থেকে উঠে দেখে রায়হান আহাম্মেদ রেডি হচ্ছে ৷

“” ও রিদের বাপ নাস্তা করে যাবা তো?””

“” হুম “গম্ভির গলায় বললো রায়হান আহাম্মেদ

“” কি বেপার রিদের বাপ সকাল সকাল এতো গম্ভির হয়ে আছে কেন? কিছু কি হয়েছে নাকি ওই ফকিন্নির ঝি রিদের বাপের কান ভাঙিয়েছে কোন টা? “”(মনে মনে ভাবতে লাগলো রিয়ানা বেগম)

“রিদের মা তোমার ভাবা ভাবি হয়ে গেলে যাও হাত মুখ ধুয়ে এসো আমি নাস্তা করবো””

রায়হান আহাম্মেদ এর কথা শুনে রিয়ানা বেগম আর কথা বাড়ালেন না বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলেন ৷ আজ রায়হান আহাম্মেদ এর আগে রিদ ডাইনিং টেবিলে এসে হাজির হয় ৷ মুন রিদ কে দেখে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে এসে রিদ কে পরোটা আলুর দম আর এক গ্লাস পানি দিয়ে সরে যায় ৷ তখনি প্রিয়ন্তি একেবারে রেডি হয়ে আসে কলেজে যাওয়ার জন্য…

“” ভাবি নাস্তা দেও “”

“” হুম দিচ্ছি “”

মুন মুখে হাসি নিয়ে প্রিয়ন্তি কে আর পরে শশুর কে নাস্তা খাইয়ে নেয় ৷ রিয়ানা বেগম মুন কে দেখে মুখ বাকিয়ে রিদ কে বলতে লাগলো”” বাবু অফিসে যাচ্ছিস প্রিয়ন্তি মা কে সাথে নিয়ে যা “”

“” ঠিক আছে “”

রিদ এর বাবা খাওয়া শেষ করে সবার উদ্দ্যশে বলে উঠলো “” তোমাদের কে আমার কিছু বলার আছে আশা করি মন দিয়ে আমার কথাটা শুনবে “”

“” কি কথা বাবা?”(রিদ)

“” আগামি সপ্তাহে রিদ আর বউমার ডিভোর্স হয়ে যাবে আর আমি ঠিক করেছি খুলনায় আমার যে বাড়িটা আছে সেটা আমি বউমার নামে লিখে দিবো “”

কথাটা শোনা মাত্র রিয়ানা বেগম তৈলে বেগুনে জ্বলে উঠলো “” কিহ কি বলছো রিদের বাপ ওই ফকিন্নির ঝি রে বাড়ি লিখে দেবে? এটা আমি কিছুতে হতে দিবো না?””

“” আমি তোমাদের মতামত জানতে চাইনি রিদের মা৷ আমি আমার কথাটা বলেছি আর এটাই আমি করবো “”

এবার মুন বলে উঠলো “” বাবা আমার বাড়ির কোন প্রয়োজন নেই ৷ আমাদের আইনগত ভাবে ডিভোর্স টা হয়ে গেলে আমি চলে যাবো তার জন্য বাড়ি লিখে দেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই৷ “”

এতোক্ষন রিদ চুপ থাকলে ও এবার আর চুপ থাকলো না “” বাবা তুমি যা ভালো মনে করো সেটা করো তবে ডিভোর্স টা যতো তারাতারি সম্ভব করানোর ব্যবস্তা করো””

রিদের মুখে ডিভোর্স দেওয়ার কথা শুনে প্রিয়ন্তির মনের উপর থেকে যেন পাথর নেমে গেল ৷ প্রিয়ন্তি ভেবেছিলো হয়তো মুনের জন্য রিদের মনে কোথায় ভালোবাসা জন্ম নিয়েছে তবে এখন তা সম্পূর্ন ভূল ধারনা এটা খুব ভালো করেই বুজতে পারছে প্রিয়ন্তি৷

রিয়ানা বেগম তার স্বামীর মুখের উপর কথা বলার সাহস পাইনি বিধায় একা একা বির বির করে মুন কে গালাগাল করতে লাগলো এতে অবশ্য মুনে কিছু যায় আসে না ৷ সবাই বেরিয়ে যেতে রিয়ানা বেগম মুন কে মারার জন্য উদ্দ্যত হলে মুন শান্ত স্বরে বলে উঠলো “” আম্মা আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন বাবা আমাকে বাড়ি দলিল আমার নামে করে দিলেও আমি নিবো না ৷ “”

কথাটা শোনা মাত্র রিয়ানা বেগম মুখ বাকিয়ে বলতে লাগলো”” হ্যা মিথ্যা বলার আর জায়গা পাস না তুই , তোদের মতো ছোট লোক লোভি এতো বড় সম্পত্তি পেয়ে হাত ছাড়া করবি এটা আমাকে বিশ্বাস করতে বলছিস ?””

“” বিশ্বাস করা না করা এটা আপনার বিষয় তবে হ্যা ডিভোর্স যখন হয়ে-ই যাচ্ছে তখন দয়া করে আমাকে গালাগাল করা একটু বন্ধ করেন ৷ চলেই তো যাবো তারপর না হয় গালাগাল করবেন””

রিয়ানা বেগম কিছু না বলে চলে গেলেন ৷ মুন দীর্ঘশ্বাস ফেলে নাস্তা করে কাজে লেগে পড়লো৷

দেখতে দেখলে কয়েকদিন কেটে গেল ৷ ডিভোর্সের দিন ও এগিয়ে আসছে কিন্তু তাতে মুনের কোন কিছু আসে যায় না বলে মনে হচ্ছে রিদের ৷ রিদের কেন যেন এখন প্রিয়ন্তি কে প্রচন্ড বিরক্ত লাগতে লাগলো ৷ রিদের রাগ লাগছে এটা ভেবে মুন একটি বার ও রিদের কাছে ডিভোর্স চায় না এ কথাটা বললো না ৷ তার মানে কি মুন ও চায় ওদের ডিভোর্স টা হোক? রিদের সব কিছু যেন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে ৷ এ কদিন রিয়ানা বেগম বা রিদ কেউ মুনের গায় হাত দেয়নি ৷ না কটু কথা বলেছে তবে রিয়ানা বেগন ভেবে নিয়েছে আজ তার স্বামী বাড়ি ফিরলে এই নিয়ে কথা বলবে যাতে বাড়িটা মুনের নামে লিখে না দেয় ৷

মুন তার মতো-ই আছে তবে আগের থেকে গায়ের মারের দাগ গুলো একটু একটু করে মুছে যাচ্ছে ৷ চোখের নিচে কালো দাগ অনেকটা নেই বললে চলে ৷ মুন দুপুরের রান্না শেষ করে গোছলে চলে যায় ৷ রিদ আজ তারা তারি বাড়িতে ফিরে আসে কেন যেন মুন কে খুব মিস করতে লাগলো রিদ ৷ রিদ বাড়িতে ফিরে রুমে এসে ব্যাগ রেখে মুন কে খুজতে লাগলো হঠাৎ পানির শব্দ পেয়ে বুজতে পারলো মুন ওয়াশরুমে ৷ রিদ কাপড় পাল্টে নিয়ে সোফায় বসে বসে মুনের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো ৷ মুন গোছল শেষে কলাপাতা রঙের একটা সুতির কাপড় পরে নিয়ে বেরিয়ে আসে ৷ হঠাৎ করে রিদ কে সোফায় বসে থাকতে দেখে চমকে যায় ৷

দরজা খোলার শব্দ পেয়ে সামনে তাকিয়ে মুন কে দেখে রিদের চোখ জোড়া যেন আটকে গেল ৷ কোমড় সমান ভেজা চুল , কয়েক গোছা ভেজা চুল মুখের উপর লেপ্টে আছে ৷ গোলাপি ঠোঁট , ভেজা চোখের পাপড়ি যেন সদ্য ফুটে ওঠা পদ্ম ফুল , রিদের হৃদস্পন্দন হঠাৎ করে বেরে গেল ৷ রিদ নেশা কাতর চোখে মুনের দিকে তাকিয়ে আছে ৷ কখন যে রিদ বসা থেকে উঠে মুনের সামনে দারালো রিদ নিজেও বুজতে পারেনি ৷ রিদ অজান্তে মুনের গোলাপি ঠোট জোড়ায় হাত ছুতে গেলে মুন রিদ কে ধাক্কা মারে , আচমকা ধাক্কা মারায় রিদ সামলাতে না পেরে দুরে ছিটকে পরে , মুন দাঁতে দাঁত চেপে রিদের দিকে দু পা এগিয়ে বলে উঠলো “” ডোন্ট ইউ ডেয়ার টু টার্চ মি মিস্টার রিদওয়ান আহাম্মেদ রিদ ৷ আমি আপনার নাম মাত্র বউ যার সাথে আর তিনদিন পর ডিভোর্স হয়ে যাবে ৷ আর একটা কথা আমি একা কিন্তু দূর্বল নই ৷ এতো দিন কোন প্রতিবাদ করেনি বলে ভাববেন না আমি প্রতিবাদ করতে পারি না আই এম স্ট্রং এনাফ টু হেন্ডেল থিংস বাই মাইসেল্ফ , “”

মুন আর দারালো না গট গট করে হেটে রুম থেকে বেরিয়ে ছাঁদে চলে গেল ৷ এদিকে রিদ যেন কোন ঘোরের ভিতর আছে প্রায় এক বছর হতে চল্লো তাদের বিয়ের কিন্তু মুনের এই রুপ রিদ কখনো দেখেনি আজ মুনের এই অগ্নিকন্না রুপ দেখে রিদ হতবাক ৷ কিন্তু পরক্ষনে রিদের চোখ মুখ রাগে লাল হয়ে গেল ৷ মুন যে তাকে অপমান করেছে তা রিদ খুব ভালো করেই বুজতে পেরেছে ৷ রিদের সমস্থ শরীল যেন জ্বলে যাচ্ছে ৷ রিদের মনে হচ্ছে মুন তার পুরুষত্বে আঘাত করেছে ৷ রিদের মনে মুনের জন্য এক আকাশ রাগের জন্ম নিলো ৷ রাগে ফুসতে ফুসতে রিদ বলতে লাগলো”” খুব তেজ হয়েছে তোর তাই না আজ দেখবো তোর এই তেজ থাকে কি করে…””

মুন ছাঁদে উঠে শীতের নরম রোদ গায়ে মাখছে মুন ৷ আজ মুনের মন টা ভিষন ভালো রিদ কে তার প্রাপ্য জায়গাটা দেখিয়ে দিতে পেরে মুনের মনের কোনায় কোনায় আনন্দ ছেয়ে গেছে ৷ মুন গুন গুন করে বলতে লাগলো গাইতে লাগলো
“” পথ খুজে যায় পথের সীমানায়৷
আমার ঝাপসা চোখের বারান্দাতে
দীর্ঘ শ্বাসের জল,
আমার মুঠোয় বন্দী
এখন শুধুই স্মৃতির শতদল

এদিকে নিচে রিদ শুধু পাইচারি করছে আর ভাবছে কি করে মুন কে শিক্ষা দেওয়া যায় ৷ রিদের ভাবনার ছেদ ঘটে প্রিয়ন্তির কথায়…….

.
.
.

_____________ এদিকে সামসু হক দোকানের ভির সামলাতে হিমসিম খেয়ে যাচ্ছে ৷ আবিদ দোকানে আসার পর থেকে দোকানের বেচা কিনা প্রচুর বেরে গেছে ৷ আবিদ তার দক্ষতা দিয়ে সবটা সামলাচ্ছে ৷ প্রচুর লাভ হচ্ছে সামসুর ৷ এদিকে নিরব বরিশাল মুনের শশুর বাড়ির পাশে তার ছোট মামার বাড়িতে থেকে মুনের উপর নজর রাখছে ৷ নিরব আগে থেকে তার মামিকে সবটা জানিয়ে দেয় ৷ নিরবের মামি সব টা শুনে খুব আফসোস করে বলে তার কোন সাহায্য লাগলে জানাতে ৷ সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিরব তার মামি কে ও বাড়িতে পাঠিয়ে খোজ খবর নেয় আর জানতে পারে রিদ আর মুনের ডিভোর্সের কথা ৷ কথা টা শোনা মাত্র নিরব আবিদ কে কয়েকবার ফোন করে কিন্তু দোকানের ভিরে আবিদ ফোনের আওয়াজ শুনতে পায়না ৷ দোকানের ভির কিছুটা কমতে সামসু তার ফোন টা নিয়ে আবিদ কে দিয়ে বলে “” আবিদ বাবা নিরব তোমাকে না পেয়ে আমাকে ফোন করেছে নেও কথা বলো “”

“” জ্বি মামা””

আবিদ ফোনটা নিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে কিছুটা দুরে গিয়ে ফোন কানে নিরব কে বলতে লাগলো….

“” হ্যালো “”

“” থাকিস কই সালা তোরে কতোবার কল করেছি তার কোন ধারনা আছে তোর””

নিরবের কথা শুনে আবিদ হেসে দিয়ে বললো”” দোস্ত এতোবার করে সালা বলে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করার কোন প্রয়োজন নেই কারন আমার দুই আপুর বিয়ে হয়ে গেছে অলরেডি ৷ সো সালা বলা অফ কর””

“” হা হা হা আবিদ তোর সাথে কখনো কথায় পারবো না আমি আচ্ছা শোন তোর জন্য একটা গুড নিউজ আছে “”

“” গুড নিউজ “”

“” হুম,,, খুব তারাতারি তুই তোর মনপাখি কে নিজের কাছে নিয়ে আসতে পারবি””

কথাটা শোনা মাত্র আবিদের চোখ মুখে খুশির ঝিলিক ফুটে উঠলো

“” সত্যি বলছিস নিরব বল সত্যি বলছিস তুই?”” উত্তিজিত হয়ে

“” হ্যা মামি আজ ও বাড়িতে গিয়ে জানতে পারলো দু-তিন দিন বাদে রিদ আর মুনের ডিভোর্স টা হয়ে যাবে ৷ মুক্ত হয়ে যাবে তোর মুনপাখি””

আবিদ কি বলবে বুজে উঠতে পারছে না মুন ফাইনালি ওই নরক থেকে বের হতে পারবে ৷

“” ডিভোর্স টা শিওর কবে হবে আমাকে জানা “”

“” ঠিক আছে , আর শোন মামু কে আমি সবটা বুঝিয়ে দিবো মামু বাকিটা হেল্প করবে আর আমি তো আছি””

“” আমি জানি তোরা আছিস আর থাকবি তোদের ঋন আমি কখনো পরিশোধ করতে পারবো না নিরব””

“” সালা ট্রিট দিবি বুজতে পারছিস “”

“” হুম পেয়ে যাবি আচ্ছা এখন রাখছি রাতে আমি ফোন দিবো তোকে “”

“” ওকে রাখছি তাহলে “”

“” আল্লাহ হাফেজ “”

“” আল্লাহ হাফেজ””

আবিদের মুখে হাসি দেখে সামসু হকের মুখেও হাসি ফুটে উঠলো ….

অন্যদিকে মুন ছাঁদ থেকে নামতে…
.
.
.
#চলবে…………………..