নীরব সাক্ষী পর্ব-১২

0
352

#নীরব_সাক্ষী
#ফারহানা_ছবি
#পর্ব-১২
.
.
.
___________ মুন বিয়ের রেজিট্রি কাগজে সাইন করার পর আবিদ সাইন করে তারপর সাক্ষী হিসেবে নিরব সামসু আর আবিদের কিছু বন্ধুরা সাইন করে দেয় ৷

“” আলহামদুলিল্লাহ বিয়েটা সম্পূর্ন হয়েছে ৷ আপনারা এখন আইনত স্বামী স্ত্রী “” (কাজী)

সামসু হক নিজে বিয়ের সব খরচ খরচা করে ৷ আবিদ আর মুন কে নিয়ে যায়৷

আবিদ মুন নিরব তিন জন তার মামার বাড়িতে এসে পুরো অবাক হয়ে যায় পুরো বাড়িটা খুব সুন্দর করে বিয়ে বাড়ির মতো সাজানো ৷ নিরবের মামি এসে মুন কে ভিতরে নিয়ে যায় ৷ এদিকে আবিদ নিরবের মামা কে কিছু একটা বলার চেষ্টা করে যাচ্ছে কিন্তু সামসু হক কিছুতেই আবিদ কে পাত্তা দিচ্ছে না ৷ সামসু হক একটা পান্জাবি নিয়ে এসে নিরবের হাতে দিয়ে বলে আবিদ কে পান্জাবি পরে রেডি হয়ে আসতে ৷ ও দিকে মুন গোছল করে বের হতেই নিরবের মামি লাল একটা বেনারসী শাড়ী মুন কে পরিয়ে দিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে দেয় ৷

“” মাশাআল্লাহ মুন তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে ৷ আবিদ তোমাকে দেখে না জ্ঞান হারিয়ে ফেলে ৷ “”

মামীর কথা শুনে মুন লজ্জায় লাল হয়ে গেছে ৷ মুন কখনো ভাবতে পারেনি তার জীবনে এমন সুখময় জীবন আসবে ৷ তার ভালোবাসা কে পাবে ৷ মুনের দু-চোখ ছল ছল করছে মুনের খুব করে মৃন্ময় আর সানজু কেমনে পরছে ৷ মুনের জীবনে ভালোবাসার মানুষের সংখ্যা খুব কম বাবা, সানজু , আবিদ , আর মৃন্ময় শুধু মাত্র এই কয়টা মানুষ ৷

“” মুন মা কাদছো কেন মায়ের কথা মনে পড়ছে?””(মামী)

মুন মায়ের কথা শুনে চোখ মুখে ভয়ের ছাপ ফুটে উঠলো৷ মুন মনে মনে বলতে লাগলো …”” মা কে তো ডিভোর্সের কথা জানানো হয়নি আর না আবিদের সাথে বিয়ের কথা ৷ মা যদি জানতে পারে তাহলে কি হবে?””

মুন আর ভাবতে পারছে না ৷ মাথা ঘুরছে মুনের ৷ মামী আবিদ আর মুন কে পাশাপাশি বসিয়ে খেতে দেয় তবে শর্ত একটা মুন আবিদ কে খাইয়ে দিবে আর আবিদ মুন কে ৷ বিদ সাচ্ছোন্দে মুনকে খাইয়ে দিলো কিন্তু মুনের ভিষন লজ্জা লাগছে ৷ তারপর আবিদ কে খাইয়ে দেয় ৷ খাওয়া শেষ হতে বাকি সবাই খেয়ে নেয়৷ এদিকে সামির গোপনে মৃন্ময় আর সানজু কে নিয়ে আসে মুন সানজু আর মৃন্ময় কে দেখে দৌড়ে গিয়ে জরিয়ে ধরে দীর্ঘ একটা বছর পর ভাই আর প্রিয় বান্ধবী কে দেখে মুনের দুচোখের পানির বাধ আটকে রাখতে পারছে না ৷

মুনের কান্না বন্ধ করার জন্য বলে উঠলো ….

“” আরে আপু এতো কাঁদছিস কেন দেখ তোর মুখের মেকয়াপ লেপ্টে পেত্নির মতো লাগছে “”

মৃন্ময়ের কথা শুনে সানজু দাঁত বের করে দিয়ে বলে উঠলো “” হে রে মুন সত্যি তোকে পেত্নির মতো লাগছে কাজল লেপ্টে গেছে মেকয়াপ চোখের পানিতে ধুয়ে গেছে ইসস কি বিশ্রি লাগছে তোকে জিজু তোকে এখন দেখলে নির্ঘাত হার্ডফেল করবে “” বলে হািতে লাগলো সানজু ৷ সাজুর দিকে হ্যা করে তাকিয়ে আছে নিরব ৷ আবিদ নিরবের দিকে তাকিয়ে পেটে খোচা মারতে নিরব আবিদের দিকে দাঁত কো-পাটি বের করে আবিদের দিকে তাকিয়ে বলে “” দোস্ত এবার আমার দিকে একটু তাকা , তোর তো একটা হিল্লে হয়ে গেল এবার আমারও একটা হিল্লে করে দে””

“” হয়ে যাবে মুনকে বলিস ৷ মুন তোর সেটিং টা করিয়ে দিবে৷””

মুন মৃন্ময় আর সানজুর সাথে গল্প জুরে দেয় ৷ এদিকে আবিদ বার বার মুন কে দেখে যাচ্ছে মুন বুজতে পারছে আবিদ ওকে দেখছে ৷ কিছুক্ষন পর মুন ওয়াশরুমে যায় চোখে মুখে পানি দিতে , মুন চোখে মুখে পানি দিয়ে বের হতে হঠাৎ হাত ধরে কেউ হ্যাচকা ট্যান দিয়ে কোমড় জরিয়ে ধরে ৷ মুনের এই স্পর্শ চেনা আবিদ মুন কে জরিয়ে ধরে আছে ৷ আবিদ মুনের চুলের খোপা টা খুলে দিয়ে চুলে মুখ গুজে দেয় ৷ মুন আবিদের স্পর্শে বার বার কেঁপে উঠছে ৷ মুনের ইচ্ছে করছে এই সময় টাকে এখানে থামিয়ে দিতে ৷ তা হবার নয় ৷

“” আবিদ …””

“” হুমম”” নেশা ভরা কন্ঠে..

“” দরজা খোলা আছে কেউ এসে যাবে ৷ এখন ছাড়ো প্লিজ””

“” উহু একটা বছর তোমাকে ছাড়া থেকেছি আর না ৷ আমি আর এক নেনোসেকেন্ডের জন্য তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না “”

আবিদের এতো ভালোবাসা দেখে মুনের প্রচন্ড ভালো লাগছে ৷ মুনের নিজের ও ইচ্ছে করছে না আবিদের বাধন থেকে নিজেকে মুক্ত করতে ৷ মুন আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলে ৷ আবিদ মুনের গলায় আলতো করে ঠোটের স্পর্শ ছুইয়ে দেয় ৷ মুন লজ্জায় ঘুরে আবিদের বুকে মুখ লুকায় …..

“” ইশ আমার মায়াবতির লজ্জা মাখা মুখ লুকিয়ে ফেললে আমাকে দেখার সুযোগ পর্যন্ত দিলে না ৷ ইটস নট ডান বেবি””

“” ধ্যাত , আমাকে যেতে হবে সানজু মৃন্ময় আমার জন্য অপেক্ষা করছে ৷””

মুন আবিদের বুক থেকে মাথা তুলে যেতে নিলে আবিদ মুন কে শক্ত করে জরিয়ে ধরে বলে……

“” আমাকে ক্ষমা করে দিও মনপাখি ৷ আজ আমার আমার জন্য তুমি একটা বছর নরকের যন্ত্রনা সহ্য করেছো ৷ কষ্ট পেয়েছো৷ সে দিন যদি বাবার কথা শুনে বিজনেসে জন্য ঢাকা না যেতাম তাহলে এক বছর পূর্বে আমার বউ হয়ে আসতে””

“” ভূলে যাও না আবিদ পুরনো সব কথা আমরা নতুন করে শুরু করবো ৷ নতুন করে বাচঁবো আবিদ””

“” মুন বেপি কই তুই এই রে আমি কিছু দেখি নি “” হাত দিয়ে চোখ ঢেকে বলতে লাগলো সানজু….

“” আসার আর সময় পেল না ৷ এসে যখন পরেছো তখন আর চোখ ঢেকে রাখতে হবে না ৷ চোখ মেলে তাকিয়ে বলুন সালী সাহেবা এখানে আসার কারন কি?””

সানজু চোখ মেলে কমোড়ে হাত দিয়ে আবিদকে বলতে লাগলো “” এখানে আসার কারন টা হলো আপনার বউ আর আমার বেস্টু ৷ এখন মুন কে ছাড়তে হবে আপনাকে “”

“” কেন কেন আমি আমার বউ কে কেন ছাড়বো , মটেও না আমি মার বউ কে ছাড়ছি না”” কথাটা বলে আবিদ মুন কে সানজুর সামনে জরিয়ে ধরে …..””

“” এই কি করছো কি সানজুর সামনে ছাড়ো বলছি”” (মুন)

“” একদম না তোমাকে আর আমি ছাড়ছি না গট ইট””(আবিদ)

“” জিজু তাহলে আমি নিরবের মামা মামি কে পাঠিয়ে দি কি বলেন?”” (সানজু)

সানজুর কথা শুনে আবিদ মুন কে ছেড়ে দেয় ৷ সানজু টিটকারি মেরে বলে “” কি হলো জিজু আপনি নাকি মুন কে ছাড়বেন না তাহলে মামা মামির নাম শুনেই ছেড়ে দিলে ইসস এতো ভিতু আপনি “”

সানজু আর আবিদের কথার মাঝে মুন ধমক দিয়ে ওঠে ৷ মুনের ধমকে দুজনে চুপ হয়ে যায় ৷ এটা নতুন না এর আগেও যখন মুনের সাথে আবিদ দেখা করতে আসতো তখন সানজু আবিদ আর নিরবের সাথে তর্ক করে যেত ৷ তবে সানজুর সাথে তর্কে আবিদ বা নিরব কেউ পেরে উঠতো না ৷ এই নিয়ে সানজুর অহংকারের শেষ নেই৷

সানজু মুনের হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় মামা মামির রুমে…..

_____________ এদিকে আবিদের মা মনিরা বেগম মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে ৷ মাত্রই আবিরের পেট থেকে বেরিয়েছে আবিদ আর মুনের বিয়ের কথা ৷ মনিরা বেগম ভয়ে কাঁপতে এটা ভেবে যে কখন না তার স্বামীর কানে আবিদ আর মুনের বিয়ের খবর টা চলে যায় ৷ মনিরা বেগম তার বড় ছেলেকে মনেও বিশ্বাস করে না কিন্তু আবির কে বিশ্বাস করে ৷ সে কারনে আবির এখনো তার বাবা কে আবিদের বিয়ের কথা বলে নি ৷

_______________ ” কি হয়েছে রিদ তোমার? তুমি আমাকে এভোয়েট কেন করছো?””(প্রিয়ন্তি)

“” আমাকে একা থাকতে দে প্রিয়ন্তি “” গম্ভির গলায় বললো রিদ…..

রিদের কথা শুনে প্রিয়ন্তি যেন তৈলে বেগুনে জ্বলে উঠলো ৷ প্রিয়ন্তি রিদের শার্টের কলার্ট ধরে আগুন চোখে তাকিয়ে বলতে লাগলো”” কুকুরের বাচ্চা এতো বছর আমাকে ভোগ করে মজা নিয়ে এখন ভালো সাজা হচ্ছে ৷ তোর কি মনে হয় আমি তোকে ছেড়ে দিবো? হ্যা কোন দিন না ৷ তোর মা আর তুই মুন ভাবির উপর কি ভাবে অমানুবিক অর্তাচার করেছিস তা আমি নিজ চোখে দেখেছি ৷ এমনটা নয় আমি কিছু করিনি আমিও কষ্ট দিয়েছি কিন্তু কেন দিয়েছি তোর জন্য দিয়েছি ৷ আর আজ তোকে একলা ছেড়ে দিতে বলছিস ৷ “”

রিদ প্রিয়ন্তির হাত ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলতে লাগলো”” কলার্ট টা ছাড়ো প্রিয়ন্তি””

“” ছাড়বো না , ছাড়বো না তোমায় তুমি কি আমাকে পুতুল পেয়েছো হ্যা “”

“” হ্যা তুই আমার হাতের পুতুল যেমন আমি চাইবো তেমন তোকে চলতে হবে ৷ এখন আমার রুম বিদেয় হো প্লিজ””

“” বাহ একদিনে দেখছি ভাবির জন্য দেবদাস হয়ে গেলে ৷ আর আগে কেমন দুর ছাই করতে তাকে ?”” কলাট ছেড়ে দিয়ে বললো প্রিয়ন্তি

“” কি চাস তুই ?””

“” তোমাকে চাই , আগামিকাল আমাকে বিয়ে করবে আর তা না হলে আমি সুইসাইড করবো , তোমার জন্য এর আগে দু বার আমি আমার সন্তান কে নষ্ট করেছি কিন্তু এবার আর আমি তা করবো না”””

প্রিয়ন্তির কথা শুনে রিদ যেন আকাশ থেকে পড়লো ..”” কি,, কি বলছিস তার মানে তুই…. রিদ কে বলতে না দিয়ে প্রিয়ন্তি বলে উঠলো “” হ্যা আমি প্রেগনেন্ট তোমার অংশ আমার শরীলে একটু একটু করে বেড়ে উঠছে ৷””

রিদ আর কিছু বলার সুযোগ পেল না ৷ কিন্তু মুন কে রিদ একদমি ভূলতে পারছে না ৷ মনের কোথায় যেন বার বার খালি খালি লাগছে রিদের ৷ তবুও বাচ্চার কথা শুনে রিদ প্রিয়ন্তির দিকে তাকায় এক দিনে প্রিয়ন্তির চোখ মুখ বসে গেছে ৷ হয়তো ওর চিন্তার ওর ইগনোর নেস সহ্য করতে পারছে না তাই ৷ রিদ শান্ত গলায় প্রিয়ন্তি কে রুমে যেতে বলে তবে এবার আর প্রিয়ন্তি অবাধ্য হয় না ধির পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় ৷ রিদ ফোন বের করে রিদ তার বন্ধু অন্তর কে কল করে ৷ অন্তর নিরবের মামার এলাকাল থাকে ৷ কিছুক্ষন পর অন্তর কল রিসিব করে ….

“” হ্যালো দোস্ত কেমন আছিস?””(অন্তর)

“” এইতো ভালো তুই কেমন আছিস?”(রিদ)

“” ভালো বাট তুই আমাকে একটা কথা বল তোর সাথে ভাবির ছাড়াছাড়ি কবে হলো? “”

“” ম,,মানে ?”” তুতলিয়ে বললো রিদ

“” মানেটা খুব সহজ রিদ ৷ তোর সাথে ভাবির ছাড়াছাড়ি না হলে ভাবি কখনো দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারতো না””

অন্তরের কথা শুনে রিদ যেন আকাশ থেকে পড়লো ….

“” অন্তর তুই কি বলছিস আমি সত্যি কিছুই বুজতে পারছি না ৷ ক্লিয়ার করে বল প্লিজ””

“” তার আগে বল ভাবির সাথে কি তোর ডিভোর্স হয়েছে?””

রিদ কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো ” হুম মুনের সাথে আজ সকালে ডিভোর্স হয়ে গেছে৷””

“” ওহ বেশ ভাবি এখন কোথায় জানিস?””

“” কোথায় ?”

“” আবিদ মুনের প্রথম ভালোবাসা তার বুকে ৷ আজ-ই ওরা বিয়ে করেছে ৷ আমি নিজের চোখে দেখেছি ওদের কাজী অফিস থেকে বের হতে ৷””

অন্তরের কথা শুনে রিদের যেন পুরো শরীল টা জ্বলে উঠলো , রাগে মাথাটা ধপধপ করছে ৷ রিদ ভাবতে পারছে না মুন অন্য কারোর বুকে শুয়ে আছে ৷ এক মুহূর্তের জন্য রিদ তার পুরনো রুপে ফিরে এলো…….
.
.
.
.
#চলবে…………….