#নীরব_সাক্ষী
#ফারহানা_ছবি
#পর্ব-১৭
.
.
.
__________ “আজমির আবিদের কোন খবর পেয়েছিস?””(আফজাল হোসেন)
“” জ্বি আব্বু আবিদ নিরবের মামুর বাড়িতে মুন কে নিয়ে আছে “”(আজমির)
মুনের কথা শুনে আফজাল সাহেব প্রচন্ড রেগে বলতে লাগলেন…..
“” মেয়েটার মা কে খবর দে আজমির ৷ ওই মহিলাকে এবার একটু ভালো করে শাসাতে হবে তাহলে ওই মহিলা আমাদের অর্ধেক কাজ করে দিবে৷””
“” আব্বু তুমি ঠিক বলছো তো ? ওই মহিলা পারবে?””
আজমিরের কথা শুনে আফজাল প্রচন্ড রেগে যায়৷ তিনি অগ্নি দৃষ্টি দিয়ে আজমিরের দিকে তাকিয়ে বলে “” তোর কি মনে হয় আমি না ভেবে তোকে এতো কিছু বলছি হুম ৷ তোর থেকে এই পৃথিবী আমি বেশি দেখেছি ৷ কাকে কখন কি কথা বললে তাকে দিয়ে কাজ করানো যাবে সেটা এই আফজাল হোসেন খুব ভালো করে জানে ৷””
“” স্যরি আব্বু””
“” এর পর থেকে আমার মুখের উপর কথা বলার সাহস করবে না আজমির ৷ এই সাহস দ্বিতীয় বার করলে বিষয় টা তোমার জন্য ভালো হবে না “”
” স্যরি আব্বু আর হবে না৷””
“” তোকে যে কাজটা দিয়েছি সেটা কর যাহ””
আজমির রুম থেকে বের হতে যাবে তার আগে রুমে সামনে থেকে একটা ছায়া সরে গেল ৷ আজমির মুনের মাকে খুজতে এসে জানতে পারে এক ঘন্টা আগে আলিয়া বেগম আর মৃন্ময় গ্রামের বাড়ি যাওয়ার উদ্দ্যশ্যে বেরিয়ে পরেছে ৷ আজমির নিরাশ হয়ে ফিরে আসে৷
.
.
.
____________ দেখতে দেখতে কিছুদিন কেটে গেল রিদ আর তার বাবার মাঝে দ্রুত বেরে গেছে ৷ রায়হান আহাম্মেদ রিদের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছেন অন্যদিকে রিয়ানা বেগম দিন দিন আরো অসুস্থ হয়ে পরে ৷ এক কথায় বিছানা নিয়েছে কিন্তু প্রিয়ন্তির এতে কিছু যায় আসে বলে মনে হয় না ৷ প্রিয়ন্তি তার নিজের ইচ্ছে মতো লাইফ লিড করতে লাগলো ৷ বন্ধু বান্ধুবী লং ড্রাইব হ্যাং আউট এই সব -ই চলছে ৷ রিদ বাধ্য হয়ে একজন কাজের লোক রেখে দেয় যে কিনা বাড়ির সব কাজ করবে ৷ রিদ তার সন্তানের কথা ভেবে ঘরোয়া ভাবে প্রিয়ন্তি আর রিদের বিয়ের ব্যাবস্তা করে ৷ রিদ অনেকক্ষন যাবত কাজি সাহেব কে নিয়ে বসে আছে কিন্তু প্রিয়ন্তির কোন খোজ নেই রিদ বিরক্ত হয়ে প্রিয়ন্তির রুমে এসে দেখে প্রিয়ন্তি সর্ট টপট আর টি শার্ট পরে কানে হেড ফোন লাগিয়েবিছানা পা দুলিয়ে দুলিয়ে গান শুনছে৷
প্রিয়ন্তিকে এই অবস্তায় দেখে রিদের মাথায় যেন আগুন জ্বলে উঠলো ৷ একজন প্রেগনেন্ট মহিলা যে এমন ভাবে আচরন করতে পারে এটা রিদের জানা ছিলো না ৷ প্রচন্ড রেগে যায় রিদ ৷ প্রিয়ন্তির কান থেকে হেডফোন খুলে নিয়ে দুরে ছুড়ে মারে ৷ প্রিয়ন্তি রিদ কে দেখে উঠে বসে রিদের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়…….
” হেই ব্রো কি হয়েছে এতো হাইপার হচ্ছো কেন হুম”” প্রিয়ন্তি ফ্লোর থেকে হেডফোন টা তুলে নিয়ে কানে দিতে রিদ আবার প্রিয়ন্তির কান থেকে হেড ফোন টা নিয়ে টেনে ছিড়ে ফেলে দাঁতে দাঁত চেপে বলতে লাগলো…
“” কেন করছিস এই সব ..?””
“” কি করেছি আমি রিদ ভাইয়া..?” গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলতে লাগলো প্রিয়ন্তি..
“” আজ তোর আর আমার বিয়ে ভূলে গেছিস তুই? আর এই সব কি ড্রেস পরেছিস , ভূলে গেছিস তুই প্রেগনেন্ট ?””
“” প্রেগনেন্ট কে আমি ! ওয়াট এ জোক রিদ ভাইয়া?”” কথাটা বলে দাঁত বের করে হাসতে লাগলো প্রিয়ন্তি..
প্রিয়ন্তির কথা শুনে রিদের যেন মাথাটা ঘুরে গেল …
“” কি কি বলছিস এই সব প্রিয়ন্তি , তুই তো বললি তুই প্রেগনেন্ট “”
“” হি হি হি বলেছিলাম বুঝি ওহ হা বলেছিলাম কিন্তু ওটা মিথ্যে ছিলো “” কাচমাচু মুখ করে বললো প্রিয়ন্তি
“” মিথ্যে ছিলো মানে?””
“” মানেটা খুব সহজ রিদ ভাইয়া আমি প্রেগনেন্ট নই এতো দিন আমি তোমাদের সাথে নাটক করেছি বুনতে পেরেছো””
“” কিহ সব টা নাটক ছিলো?
“” ইয়েস আর আমি তোমাকে বিয়ে করছি না আমি আলভি কে ভালোবাসি আর ওকে বিয়ে করবো ৷””
রিদ প্রিয়ন্তির কথা সহ্য করতে না পেরে প্রিয়ন্তিকে থাপ্পোর মারে ৷ প্রিয়ন্তি ছিটকে ফ্লোরে পরে যায় ৷ তবুও প্রিয়ন্তির মুখের হাসি মিলিয়ে যায় নি এখনো হাসি বিদ্যমান ….
প্রিয়ন্তি উঠে দারিয়ে রিদ কে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো”” কি ভাবেছো রিদ ভাইয়া আমি মুন ভাবির মতো তোমাদের হাতের পুতুল হ্যা , মটেও না আমি মুন না আমি প্রিয়ন্তি ৷ তুমি আমার জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছো রিদ ভাইয়া ….””
“” তার জন্য তোকে বিয়ে করতে চেয়েছি আমি , তোর জন্য আমি মুন কে কখনো মেনে নেইনি ৷ শারিরিক মানুষিক সব রকম অর্তাচার করেছি ওর উপর , কার জন্য করেছি শুধু মাত্র তোর জন্য ,””
“” চুপ একদম চুপ মিথ্যে বলার একদম চেষ্টা করবে না ৷ তুমি কখনো আমার জন্য এমন টা করোনি করেছো তোমাদের সার্থের জন্য , মোটা অংকের টাকা না পাওয়ায় এমন টা করেছো৷””
“” বাট আই লাভ ইউ প্রিয়ন্তি””
“” নো নো রিদ ভাইয়া তুমি আমাকে ভালোবাসো নি ৷ ভালোবাসেছো আমার শরীল টাকে ৷ “”
“” প্রিয়ন্তি”” জোরে চিৎকার করে উঠলো রিদ…
“” ডোন্ট শাউট রিদ ভাইয়া ৷ আমি এখন আর ছোট্টটি নেই যে ধমক দিয়ে আমাকে কাজ করাবে ৷ এটা যদি ভেবে থাকো তাহলে ভূল ভাবছো ৷ আমাকে দিয়ে আর তুমি পুতুল খেলা খেলতে পারবে না রিদ ভাইয়া ৷ যাও কাজি ফিরে যেতে বলো ৷ তোমার আর আমার বিয়ে টা হচ্ছে না ৷ “”
রিদ রাগে ফুসতে ফুসতে রুম থেকে বাইরে যেতে নিলে প্রিয়ন্তি পিছুন থেকে রিদ কে বলে ওঠে “” আর একটা কথা রিদ ভাইয়া আমি আগামি কাল হোস্টেলে চলে যাবো ৷ আমি আশা করবো তুমি আমার যাওয়া পথে কাটা হবে না “”
রিদ আর কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ৷ রিদ যেতে প্রিয়ন্তি দরজা বন্ধ করে দিয়ে ফোন বালিশের পাশ থেকে বের করে দেখে কলে এখনো মানুষটি আছে ৷ প্রিয়ন্তি ভয়ে ভয়ে ফোনটা কানে ধরে হ্যালো বলতে ফোনের অপাশ থেকে বলে উঠলো….
“” ওয়েলডান প্রিয়ন্তি ওয়েলডান , আমার শিখানো বুলি খুব সুন্দর করে বলেছো ৷””
“” ম্যাম আমি আপনার কথা মতো রিদ ভাইয়া কে বিয়ে করেনি ৷ এখন নিশ্চয় আপনি ওই ছবি গুলো ডিলিট করে দিবেন?””
“” হা হা হা এতো তারা কিসের প্রিয়ন্তি ৷ ডিলিট তো করবো ছবি গুলো কিন্তু তার আগে যে আরো কিছু কাজ করতে হবে তোমাকে””
“” কি কাজ ? আমি আপনার সব কাজ করে দিবো কিন্তু প্লিজ ছবি গুলো ডিলিট করে দিন “”
“” আমার কথা মতো কাজ করলে ছবি গুলো ডিলিট হয়ে যাবে কিন্তু কাজ না করলে ছবি গুলো লিক হবে যাবে৷””
“” না না না আমি করবো আপনি যা বলবেন আমি তাই করবো””
“” গুড এখন ফ্রেস হয়ে বাইরে বের হও ৷ বাইরে আলভি তোমাকে পিক করার জন্য গাড়ি নিয়ে দারিয়ে আছে৷ “”
“” ওকে ম্যাম”” প্রিয়ন্তি দ্রুত ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে চেন্জ করে বেরিয়ে যায় ৷ অন্যদিকে কল ডিসকানেক্ট করে মুখে রহস্যময় হাসি দিয়ে টেবিলের উপর ছোট্ট গোলক টা ঘুড়াতে লাগলো অজানা মেয়েটি….
.
.
.
.
.
___________ দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে নিরব আবিদ সামির মুন সামসু গল্প করতে বসে পরে ৷ সামিরাকে রুমে ঘুম পারিয়ে মুক্তা এসে বসে….
সবাই সন্ধা পর্যন্ত গল্প করে সেই ফাকে মুন সবার জন্য পাকোড়া আর চা বানিয়ে নিয়ে আসে ৷
“” চা পাকোড়া এসে গেছে সবাই ঝটপট গরম গরম পাকোড়া খেয়ে নেও””(মুন)
“” বাহ আমার মুন মা দেখছি আমার মনের কথা বুঝে গেছে ৷ এতোক্ষন মনটা চা চা করছিলো আর দেখো মুন মা চা আর সাথে পাকোড়া নিয়ে হাজির …””
“” হয়েছে তোমার চা টা খাও বক বক কম করে নয়তো চা টা ঠান্ডা হয়ে যাবে৷”” (মামী)
“” এতো বকো না মুক্তা ভয় পাই তো “”
কথাটা বলে ফিক করে হেসে দিলো ৷ সামসুর মুখে হাসি দেখে মুক্তা রেগে রুমে চলে গেল তখনি মুন সবার উদ্দ্যশ্যে বলে উঠলো “” মামা আপনাদের সাথে আমার কিছু দরকারি কথা বলার ছিলো””
“” কি কথা মুন মা?””
মুনের কথা শুনে আবিদ ও জ্বিগাসা চোখে তাকিয়ে আছে …
“” মামা আমি অনেক কষ্ট করে অনার্স পাশ করেছি ৷ রেজাল্ট খুব ভালো না হলেও মোটামুটি আমি জব করতে চাই নিজের পায় দারাতে চাই কারো অনুগ্রহ নিয়ে থাকতে চাই না আমি ৷ নিজে কিছু করতে চাই মামা ৷ আমি অসহায় ছিলাম বলে আমার মা ওরকম জঘন্য লোকের সাথে জোড় করে বিয়ে দিয়েছিল ৷ তখন যদি আমার কোন চাকড়ি থাকতো পায়ের নিচের মাটি যদি শক্ত থাকতো তাহলে হয়তো আমাকে এতোদুর আসতে হতো না ৷ হয়তো আমাদের জীবন টা অন্যরকম হতো ৷ হয়তো আমার মতো হাজার হাজার মেয়ে বউ দের এমন অর্তাচার সহ্য করতে হচ্ছে ৷ মামা আমি তাদের জন্য কিছু করতে চাই ৷ আর আমার মা কে তার উচিত জ্ববাব দিতে চাই “”
সামসু হক কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে উঠলো”” মুন মা আমার কোন সমস্যা নেই ৷ মেয়েদের নিজের পায়ে দারানো উচিত ৷ অন্য কারোর উপর নির্ভরশীল হয়ে না থেকে নিজের পায়ে দাড়ানো ৷ জানি না আবিদ কি বলবে তবে আমি আমার মতামত তোমাকে জানালাম তুমি যা ভেবেছো একদম ঠিক ভেবেছো””
“” মামা আমিও তোমার সাথে একমত মুন যে নিজে কিছু করতে চাইছে এটা জেনে আমার সত্যি খুব ভালো লাগছে ৷ মুন তুমি যেমন কম্ফিটেবল তেমন চাকড়ি করবে ৷ এতে আমার কোন সমস্যা নেই৷ তোমার সব সার্টিফিকেট তোমার কাছে আছে?””
“” হুম সব সার্টিফিকেট এক বছর আগে আমি ও বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছিলাম””
“” ভালো করেছো মা ,তোমার যদি কোন সাহায্যের প্রয়োজন হয় তাহলে আমাকে বলো “”
“” জ্বি মামা…””
মুন চায়ের কাপ নিয়ে রান্না ঘরে রেখে রুমে এসে দেখে আবিদ ওর বিছানায় শুয়ে আছে….
“” এই তোমার লাজ লজ্জা বলে কিছু নেই নাকি যখন তখন আমার রুমে এসে হামলা করো “” কোমড়ে হাত দিয়ে বলতে লাগলো মুন…
“” কি করবো মনপাখি তোমাকে ছাড়া যে আমার এক মুহূর্ত থাকতে পারি না জানো- ই তো “”
“” হু ঢং””
“” মনপাখি ঝটপট বোরকা পড়ে নেও আমরা বের হবো””
“” কোথায় যাবো আমরা?””
“” গেলেই দেখতে পাবে মনপাখি এখন কথা না বলে রেডি হয়ে নেও…””
________ “ভাই সাহেব আমাকে এখানে ডেকেছেন কেন?”
“” কারন টা আপনার মে……
.
.
.
.
#চলবে………..
#নীরব_সাক্ষী
#ফারহানা_ছবি
#পর্ব-১৮
.
.
.
________ “ভাই সাহেব আমাকে এখানে ডেকেছেন কেন?”
“” কারন টা আপনার মেয়ে “” (আফজাল )
“” আমার মেয়ে !”” অবাক হয়ে আবার প্রশ্ন করলো আলিয়া বেগম
“” হ্যা আপনার মেয়ে মুন ৷ যে কিনা এখন আমার ছোট ছেলের ঘাড়ে চেপে বসেছে৷””
আবিদ এর বাবার কথা আলিয়া বেগম এর সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে ৷ মুন তো তার শশুর বাড়ি তাহলে আফজাল সাহেব এই সব কি বলছে?
“” কিহ হলো আপনি কথা বলছেন না কেন ? ওহ বুজতে পেরেছি আপনারা মা মেয়ে মিলে প্লান করে আমার ছেলে কে ফাসিয়েছেন তাই না?””
“” দেখুন ভাই সাহেব আপনি কি বলছেন আমি সত্যি বুজতে পারছি না একটু পরিষ্কার করে বলুন ৷ আর মুন তো ওর শশুর বাড়ি বরিশাল আছে৷””
“” হা হা হা আপনি তো দেখছি সত্যি কিছু জানেন না নাকি না জানার ভান করছেন৷ আপনি জানেন না কিছুদিন আগে আপনার মেয়ে জামাইয়ের ডিভোর্স হয়ে গেছে ৷ আর তারপর -ই আপনার মেয়ে ফুসলিয়ে আমার ছোট ছেলে আবিদ কে বিয়ে করেছে ৷””
“” কিহ এতো কিছু হয়ে গেলো অথচ আমি কিছুই জানি না ৷ “” অবাক হয়ে
“” শুনুন আপনি জানেন বা জানেন না এটি আমি জানতে চাই নি ৷ আমি শুধু আপনার সাথে একটা ডিল করতে চাই””
আলিয়া বেগম এবার একটু নরে চরে বসলেন ডিলের কথা শুনে…..
“” আমি আপনাকে এক লাখ টাকা দিবো তার বিনিময়ে আমার ছেলের জীবন থেকে আপনার মেয়ে কে সরিয়ে আনবেন””
এক লাখ টাকার কথা শুনে আলিয়া বেগমের চোখ দুটো চকচক করে উঠলো ৷ আফজাল সাহেব আলিয়া বেগমের মুখের ভাব ভঙ্গি দেখে বুজতে পারলেন তার ট্রাপ টা কাজে দিয়েছে ৷
“” কিহ বলুন রাজি কিনা?””
“” ইয়ে মানে ভাই সাহেব আপনার কথার অমান্য কি করে করি বলুন ৷ আপনি যা ভালো মনে করেন করুন ৷ আর বলুন আমাকে কি কি করতে হবে ?””
“” ঠিক আছে তাহলে শুনুন ……………..
.
.
.
.
_________ ” আবিদ আমরা তো বড় রেস্টুরেন্টে কেন এসেছি?””(মুন)
“” ভিতরে ঢুকলে বুজতে পারবে ৷ এখন কথা না বাড়িয়ে ভিতরে চলো “”(আবিদ)
মুন আবিদের কথা মতো আবিদ কে অনুসরন করে রেস্টুরেন্টে যেতে লাগলো… আবিদ মুন কে নিয়ে সেকেন্ড ফ্লোরে উঠে সোজা গিয়ে ডান দিকে গিয়ে দেখে একটা টেবিলে একজন ছেলে আর মেয়ে বসে আছে ৷ আবিদ ফোন বের করে একটা নাম্বারে কল দিতে মেয়েটার ফোন টা বেজে ওঠে ৷ আবিদ শিউর হয় ৷ ওই টেবিলে ওকে যেতে হবে ৷
আবিদ মুন কে নিয়ে মেয়েটির সিমনে দারাতে মেয়ে টি বসা থেকে উঠে দারিয়ে মুন কে জরিয়ে ধরে বলতে লাগলো……
“” জানু কেমন আছিস কতো বছর পর তোকে দেখছি””(ফারিহা)
“” আলহামদুলিল্লাহ ভালো তুই কেমন আছিস ? আর তুই এখানে ? “”
ফারিহা মুন কে ছেড়ে পাশে বসিয়ে বলতে লাগলো”” এতো কোশ্চেন এক সাথে ? “”
“” আচ্ছা বাদ তুই বল তুই কেমন আছিস?””(মুন)
“” আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি, জিজু দারিয়ে কেন বসে পরুন ৷ ওহ হ্যা পরিচয় করিয়ে দি ৷ আয়ান এ হচ্ছে আমার কিউট বান্ধবীর জামাই আবিদ ৷ আর জিজু এ হচ্ছে আয়ান আমার একমাত্র বর৷ “”
আয়ান আবিদ দুজনে হ্যান্ডশেক করে নিজেরা পরিচিত হয়ে কথা বলতে লাগলো আর এদিকে মুন অবাক হয়ে ফারিহা কে দেখছে ৷
“” কি রে এভাবে তাকিয়ে কি দেখছিস তুই হুম”” (ফারিহা)
“” তোকে দেখছি তুই তো একটুও বদলাস নি কিন্তু বিয়ে করে নিলে আর আমাকে জানালিও না “” মুখ গোমড়া করে বললো মুন..
“” আমি তোকে বললে তুই কি আসতে পারতি? আর তার চেয়ে বড় কথা আমি যতবার তোকে কল দিয়ে ছিলাম ওই জানোয়ার টা কল রিসিব করে আমাকে যা নয় তাই বলতো এটা হয়তো তুই জানতিস না?””
মুন মাথা নেরে না সম্মতি জানায়..
“” তাহলে তুই জানবি কি করে ৷””
“” কিন্তু আবিদের সাথে যোগাযোগ কি করে করলি?””
“” ইয়ার এখন এই যুগে একটা মানুষ কে খুজে বের করা কোন ঘটনা নাকি ৷ যাই হোক তোকে একটা ইন্টারেস্টিং নিউজ দেবার আছে “”
“” আমি কি খালামনি হতে চলেছি নাকি””(মুন)
“” ধুর শালী এই সব কিছু না ৷ “”
“” তাহলে?””
“” কানে কানে বলবো কান টা এদিকে নিয়ে আয়…””
মুনের কানে কানে ফারিহা কিছু একটা বলতে মুনের চোখ দুটো রসগোল্লার মতো বড় হয়ে গেল ৷ মুন ভাবতে পারেনি ফারিহা সত্যি এমন কিছু করবে ৷
“” তু,,তুই সত্যি এই সব করেছিস ফারিহা?”” অবাক হয়ে আবার ও জানতে চাইলো মুন…
“” ইয়েস বেবি ৷ আমি কলেজ লাইফ থেকে বলে আসছি সুযোগ পেলে তোর জন্য আমি কিছু না কিছু করবো ৷ তখন সুযোগ পাইনি বলতে পারিস আমার সাধ্য ছিলো না এখন ইনশা আল্লাহ যখন সাধ্য হয়েছে তখন আমি তোর পাশে থাকবো তোকে সাপোর্ট দিতে৷””
মুন কিছু না বলে ফারিহা কে জরিয়ে ধরে …..
“” এই মুনের বাচ্চি একদম ইমোশনাল হওয়ার চেষ্টা করবি না হু””
“” তার আগে মুনের বাচ্চি বলা বন্ধ কর কারন আমার এখনো কোন বাচ্চা হয়নি বুজলি “”
“” ওহ মাই গড , জিজু শুনলেন তো এবার যা করার আপনাকে করতে হবে কিন্তু..””
এতোক্ষন আয়ান আর আবিদ বসে বসে মুন আর ফারিহার কথা শুনছিলো হঠাৎ ফারিহা ওকে উদ্দ্যশ্য করে বলা কথাটা শুনে আবিদ দাঁত বের করে বলে উঠলো “” আমি প্রস্তুত শালী সাহেবা কিন্তু তোমার বান্ধবী তো আমাকে তার কাছে এলাউ করছে না ইদ্দত পালন করছে বিধায়….””
“” কিহ মুন তুই এই সব মানিস?””
“” হুম মানি আর আমি চাই আমাদের পবিত্র সম্পর্কের উপর কেউ যেন আঙ্গুল তুলতে না পারে ৷ এই ইদ্দত পালনে যদি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায় তাহলে ইদ্দত পালন করাই আমার কোন আপত্তি নেই””
“” ওকে ফাইন , জিজু আপনাদের যদি কোন সমস্যা হয় তো আমাকে একবার ফোন করবেন৷ আমাকে সব সময় আপনাদের পাশে পাবেন ইন শা আল্লাহ “”
“”একদম শালী সাহেবা””
“” ফারিহা তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে …””(মুন)
“” ওয়েট , জিজু আমি একটু আপনার বউ কে নিয়ে যাচ্ছি””
“” আচ্ছা ততোক্ষন না হয় আমি মিস্টার আয়ান এর সাথে আড্ডা দি””
“” জানপাখি আমি জলদি ফিরে এসো কিন্তু””(আয়ান)
“” আয়ান জিজু আমি আছি তো আপনার জানপাখি কে দুরে কোথাও নিয়ে যাচ্ছি না””(মুন)
মুনের কথার প্রতি উওরে মুচকি হাসলো আয়ান,
ফারিহা মুনে কে নিয়ে একটু দুরে দারায়…
“” এবার বল কি বলবি ?””
“” রিদের বাবা কে কিছু করিস না উনি ভিষন ভালো একটা মানুষ ৷ ওই বাড়িতে থাকা কালিন ওই একটা মাত্র ব্যাক্তি আমাকে কখনো মারে নি কটু কথা শুনায় নি উল্টো বাবা স্নেহ আদর ভালোবাসা দিয়েছে “””
“” ওকে ওনাকে লিস্ট থেকে বাদ দিয়ে দিলাম কিন্তু রিদ প্রিয়ন্তি আর তোর এক্স কুটনি জালিম শাশুড়ি কে তো আমি ছাড়বো না ৷””
“” তোকে একটা রিকুয়েস্ট করবো ?””
“” থাপ্পোর দিবো হারামি রিকুয়েস্ট বলছিস কেন হুম””
“” ওদের সাথে সাথে আমার মাকেও একটু শাস্তি দিতে পারবি?””
মুনের কথা শুনে ফারিহা বাকা হাসলো…”
“” বেবি ওনাকে শাস্তি দেওয়া আমার কাছে কোন বেপার না তবে আমি চাই তুই ওনাকে শাস্তি দিবি””
“” আমি!”” কথা শুনে আতকে উঠলো মুন..
“” হ্যা তুই , জানি প্রথম প্রথম একটু কষ্ট হবে কিন্তু পরে ঠিক হয়ে যাবে ৷””
“” কি করবো আমি?””
“” মুন মন টাকে শক্ত কর ৷ শত্রুর মোকাবেলা করতে শেখ ৷ যে মা হয়ে নিজের সন্তানের ক্ষতি চায় এমন মা থাকার থেকে না থাকাই উচিত ৷ আর এখন তুই বিবাহিত আবিদ জিজুর লিগালি ওয়াইফ তুই ভুলে যাস না ৷ যে বা যারা তোদের আলাদা করতে আসবে তাদের শক্ত হাতে মোকাবেলা করতে হবে তোকে ৷ জানিস তো শক্তের ভক্ত নরমের জম ৷ তোকে এখন শক্ত হতে হবে ৷ আর আমার সিক্স সেন্স বলছে ৷ তোর ওই দরজাল মা খুব তারাতারি তোর জীবনটাকে তছনছ করে দেওয়ার জন্য আসবে””
“” তখন কি হবে ফারিহা?”” মুনের চোখে মুখে ভয়ের আভাস..
“” হায়রে বোকা মেয়ে এখনো ভয় পাচ্ছিস? তোর এতো বছরের কষ্টের নীরব সাক্ষী হয়ে ছিলাম শুধু আমি নই আশে পাশের প্রত্যেকটা মানুষ ছিলো কিন্তু এখন তোর দিন পাল্টেছে তুই আগের মুন নেই বুজেছিস ৷ আর নীরব হয়ে অন্যের দেওয়া কস্ট , অপমান মাথা পেতে নিবে না উলটো তার দশ গুন কষ্ট অপমান ফিরিয়ে দিবি ৷ এই যুগে কেউ কারোর নয় মুন ৷ সবাই নিজ নিজ স্বার্থ খোজে ৷ ইভেন নিস্বার্থ ভালোবাসা এখন দেখা যায় না ৷ দুদিন পর পর ভালোবাসা ঠিক থাকলেও মানুষ গুলো পাল্টে যায় ৷ এই সমাজের মানুষ গুলো ভিষন স্বার্থপর রে মুন ৷ তারা অন্যের সংসারে ঝামেলা হলে তারা শুধু মজা নেয় আর সুযোগ বুঝে বিষ ঢালে ৷ তাই তোকে বলবো তুই শক্ত হো মানুষের মুখের উপর কড়া জবাব দিতে শেখ ৷ জানিস তো নরম কাঁদা পেলে মানুষ আচড়ায় ৷ তোকে নরম নয় শক্ত হতে হবে ৷ আর নিজের জবাব নিজে দিবি কথা দে আমায়..””
ফারিহার কথা গুলো শুনে মুন যেন আত্নবিশ্বাস ফিরে পেল ৷ মনে ভিষন জোর অনুভব করছে মুন ৷
“” কথা দিলাম ফারিহা আজ থেকে আমি নিজের লরাই নিজে লড়বো ভয় পেয়ে পিছু হাটবো না ৷ আর একটা কথা দিচ্ছি এবার নিজের অধিকার আমি সেচ্ছায় এক বিন্দু ছাড় দিবো না ৷ নিজের সেল্ফ রিসপেক্টে কাউ কে আঘাত করতে দিবো না “”
“” এই স্প্রিড টাই তো চেয়েছি বেবি ৷ এখন আর আমার কোন চিন্তা নেই ৷ আমি ওই দিক টা সামলাচ্ছি তুই এই দিক টা সামলা৷ বাই দ্যা ওয়ে তুই কি শুধু সংসার করবি নিজের জন্য কিছু করবি না ? নিজের পায়ে দারাবি না?””
“” হুম কাল থেকে চাকড়ি খুজবো “”
“” তোকে চাকড়ি খুজতে হবে না ৷ খুলনায় আমাদের কম্পানির আর একটা শাখা আছে জানিস তো ? ওটায় তুই জয়েন করতে পারিস?””
“” কিন্তু আমার রেজাল্ট তো… বাকিটা বলতে না দিয়ে ফারিহা বলে উঠলো…”” এই সব নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না ৷ তোর বর্তমান ঠিকানা টা আমাকে মেসেজ করে পাঠিয়ে দিস ৷ দু দিনের ভিতর জয়েনিং লেটার পেয়ে যাবি ৷ আর খবরদার থ্যাংকিউ দেওয়ার চেষ্টা করবি না তাহলে তোর ঘুষ্টির তুষ্টি করে দিবো””
“” পাগল নাকি আমি চিনি না তো কে হু , আচ্ছা চল অনেকটা সময় হয়ে গেল দেখি বাকি দুজন কি করছে ৷ “”
“” হু চল””
ফারিহা মুন ফিরে এসে দেখে ওরা খাবার অলরেডি অডার্র করে দিয়েছে ৷
“” তো আপনাদের কথা শেষ হলো তাহলে “(আবিদ)
“” আবিদ আমি তো ভেবেছিলাম আজ পুরো রাতটাই এরা দু বান্ধবী কথা বলতে বলতে শেষ করে দিবে “” (আয়ান)
“” কেন তোমাদের কি হিংসে হয়? আমাদের মতো হতে চাও তাহলে 7up খাও….”” (ফারিহা)
“” আজ তোমার হচ্ছে জানপাখি””(আয়ান)
“” থ্রেট করছো ওকে আজ-ই আমি বাপের বাড়ি চলে যাবো””(ফারিহা)
“” এই না না আমি তোমাকে থ্রেট করতে পারি বলো জানপাখি “” কাচুমাচু মুখ করে বললো আয়ান
“” বাড়িতে চলো আজ তারপর তোমাকে দেখছি আমি..”””(ফারিহা)
“” ফারিহা একদম আমার জিজু কে ভয় দেখাবি না খবরদার””হাসতে হাসতে বললো মুন, মুনের মুখে হাসি দেখে আবিদের ঠোটের কোনে হাসির রেখা ফুটে উঠলো , আবিদ তো মুনের মুখের হাসি দেখার জন্য এই সারপ্রাইজ এর আয়োজন করেছে ৷ তবে ফারিহা কে বিশেষ ভাবে অনুরোধ করা লাগেনি একবার বলতে রাজি হয়ে গেছে ৷
“” হয়েছে এখন জিজুর চামচাগিরি রেখে খেয়ে নে , রাত দশটা বেজে গেছে অলরেডি””(ফারিহা)
“” ওহ গড এতো রাত হয়ে গেল কখন?””( আবিদ)
“” প্রব্লেম নেই জিজু আমরা আপনাদের ড্রপ করে দিবো সো চিল ওকে””
মুন আবিদ ফারিহা আয়ান ডিনার করে মুন আবিদ কে বাসায় ড্রপ করে দিয়ে চলে যায় ৷
অন্যদিকে প্রিয়ন্তি ফ্লোরে জ্ঞান হারিয়ে পরে আছে ৷ কিছু আগে রিদ জানোয়ারের মতো মেরেছে প্রিয়ন্তিকে ৷ প্রিয়ন্তির অবচেন মুখটার দিকে একরাশ ঘৃনা নিয়ে তাকিয়ে আছে রিদ ৷ এই মুখটাকে এক সময় ভিষন ভালোবাসতো রিদ আর আজ এই মুখটাকে দেখলে রিদের ঘৃনা লাগছে ৷ আজ বুজতে পারছে মুন কে কষ্ট দিয়ে কতোটা ভূল করেছে রিদ ৷ রাগে ঘৃনায় পানির জগ নিয়ে পুরো পানিটা প্রিয়ন্তির মুখে ছুড়ে মারে …..
.
.
.
.
#চলবে………