নীরব সাক্ষী পর্ব-২৭ এবং শেষ পর্ব

0
906

#নীরব_সাক্ষী
#ফারহানা_ছবি
#অন্তিম_পর্ব
.
.
.
ডাক্তার রিদ ভাইয়ার এমন করছে কেন কি হয়েছে ..?””(প্রিয়ন্তি)

ডাক্তার প্রিয়ন্তির কোন কথার জবাব না দিয়ে নার্স কে বললো রিদ কে ইনজেকশন দিতে ৷ এদিকে প্রিয়ন্তি রিয়ানা বেগম রায়হান আহাম্মেদ রিমা ভয়ে তাদের হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে রিদের কোন খবর পাচ্ছে না ভিতর থেকে ,,, প্রিয়ন্তির কেন যেন মনে হলো মুন কে সবটা জানানো উচিত হয়তো রিদ আর বাঁচবে না ৷ প্রিয়ন্তি রিদের বাবার কাছ থেকে প্রিয়ন্তির নাম্বার টা নিয়ে ফোন করে ,,,, এদিকে মুন ফোন বাজার শব্দে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে আস্টে পিস্টে জরিয়ে আছে আবিদ ৷ মুন মুচকি হেসে আবিদের কপালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা চুল গুলো আরো এলোমেলো করে দিয়ে কাপালে ঠোট জোড়া ছুইয়ে দিলো ৷

“” ইসস আমার জামাইটাকে কি সুন্দর লাগছে ইচ্ছে করছে গাল দুটো টেনে দি ..”” মুন তার ইচ্ছে দমিয়ে না রেখে আলতো করে আবিদের গাল ধরতে আবিদ মুনের হাত ধরে ফেলে …চমকে ওঠে মুন

“” নট ডান মনপাখি , এভাবে একটা ইনোসেন্ট কিউট ছেলের ঘুমন্ত অবস্তায় গাল টানা টানি করছো এর শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে…””

“” তুমি না ঘুমিয়ে ছিলে? ওহ তার মানে ঘুমের ভান ধরে ছিলে তাই তো?””

“” উহু ঘুমের ভান ধরেনি ফোনের রিং এর শব্দে ঘুম ভেঙে গেছে..”” মুনের টনক নরলো আবিদ কে ছারিয়ে পাতলা ছাদর শরীলে জরিয়ে নিয়ে ড্রেসিং টেবিলে সামনে গিয়ে ফোন টা ধরে কল রিসিব করে…

“” হ্যালো আসসালামু আলাইকুম “”

“” অলাইকুম আসসালাম , ভাবি আমি প্রিয়ন্তি বলছি…””

প্রিয়ন্তি নাম টা শুনে মুন ভিষন অবাক হয় ৷ এতো মাস পর ও বাড়ি থেকে ফোন আসবে এটা মুন কখনো ভাবেনি৷

“” ভাবি শুনছো?”

” হুম বলো কি বলবে কেন ফোন দিয়েছো?””

“” ভাবি রিদ ভাইয়া হাসপাতালে ভর্তি ৷ সুইসাইড এটেম্ড করেছে হয়তো আর বেশিক্ষন এই পৃথিবী তে নেই ৷ আমার মনে হলো তোমাকে জানানো প্রয়োজন তাই জানিয়েছি৷ “”

“” প্রিয়ন্তি আমি এখন অন্য কারোর স্ত্রী ৷ রিদ আমার কেউ না প্রিয়ন্তি আর না আমি একজন ডক্টর ৷ হসপিটালে নিয়ে গেছো যখন ডক্টর দেখবে আমি নয়…””

“” ভাবি.!””

“” প্রিয়ন্তি আমাকে ভাবি বলে ডাকবে না ৷ আর…. বাকিটা বলার আগে আবিদ ফোন টা ছিনিয়ে নেয় মুনের কাছ থেকে…

“” কোন হসপিটালে রিদ এডমিট আছে প্রিয়ন্তি.?””( আবিদ)

প্রিয়ন্তি বুজতে পারলো ভারি পুরুষালি কন্ঠ মুনের বর্তমান হাসবেন্টের , প্রিয়ন্তি কোন প্রশ্ন ছাড়াই হসপিটালের নাম আর কেবিন নম্বর টা বলে কল কেটে দেয়৷

আবিদ কান থেকে ফোন নামিয়ে মুন কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো “” ফ্রেস হয়ে রেডি হয়ে নেও মনপাখি ৷ আমরা হসপিটালে যাবো৷””

“” কিন্তু…””

“” কোন কিন্তু নয় মনপাখি রিদ তার প্রাপ্য শাস্তি পেয়েছে আর নয় ৷ যে ব্যাক্তি জীবন মরনের মধ্যেখানে আছে তাকে ঘৃনা করে দূরে সরে থাকাটা মনুষ্যত্বের ভিতর পরে না মনপাখি “”

মুন স্তব্ধ হয়ে আবিদের কথা গুলো শুনছে ৷ কতো সুন্দর করে বুঝিয়ে দিলো তাকে , মুন মুচকি হেসে আবিদ কে জরিয়ে ধরে…

“” কি বেপার মনপাখি বিয়ের পর দেখছি তুমি আমার থেকে আরো বেশি রোমান্টিক হয়ে গেছো ..”” মুন কে লজ্জা দেওয়ার জন্য আবিদ কথাটা বললো…

“” তুমি আসলে একটা যাচ্ছেতাই ৷ “” মুন লজ্জা পেয়ে আবিদ কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল ৷ ওয়াশরুমে ঢুকে শাওয়ার নেওয়ার পর মুনের মনে পড়লো ও কোন কাপড় আনে নি সাথে , মুন দরজা ফাঁক করে আবিদ কে খুজতে লাগলো , আবিদ কে রুমে না দেখতে পেয়ে মুন ভেবে নেয় আবিদ হয়তো অন্য রুমে ফ্রেস হতে চলে গেছে ৷ মুন তোয়ালে পেচিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে চুপি চুপি কাবার্ড খুলে শাড়ি নিয়ে কাবার্ড আটকে পিছুনে ঘুড়ে চমকে ওঠে …..

“” তু,,তুমি রুমে ছিলে..??””

“” ইয়ে মনপাখি তুমি হয়তো বেলকনিতে খেয়াল করোনি ৷ আমি ওখানে ছিলাম৷ ওয়াশরুমের দরজা খোলার আওয়াজ শুনে ভিতরে আসলাম আর এসে তোমাকে এই রুপে … বাকিটা বলতে পারলো না আবিদ কারন মুন আবিদের মুখ চেপে ধরে আছে ৷

কিন্তু তাতে আবিদের কিছু যায় আসে বলে মনে হয়না ৷নেশা ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মুনের দিকে ভেজা চুল , মুখে বিন্দু বিন্দু পানি ভেজা চোখের পাপড়ি , গোলাপি ঠোট ,,, আবিদ মুনের ঠোটের দিকে আগাতে মুন আবিদের পিছুনে তাকিয়ে বলে ওঠে “” আরে মামি আপনি এখানে ..?”” মামির কথা বলতে আবিদ মুন কে ছেড়ে পিছুনে তাকাতে মুন দৌরে ওয়াশরুমে ঢুকে যায় ৷ আর আবিদ পিছুনে তাকিয়ে কাউকে না দেখতে পেয়ে হেসে ফেলে… “” বাহ আমার বউটা দিন দিন বেশ বুদ্ধিমতি হয়ে উঠছে…””

মুনের বের হতে দেরি হচ্ছে বিধায় আবিদ আবিরের রুমে গিয়ে শাওয়ার নিয়ে নেয় ৷ রুমে এসে দেখে মুন লাল কালো মিশ্রিত একটা জামদানি শাড়ি পরেছে৷ মুন তার ঘন লম্বা চুল গুলো ভালো করে মুছেনি বিধায় পিছুন থেকে শাড়ি অনেকটাই ভিজে গেছে ৷ আবিদ তোয়ালে টা নিয়ে মুনের চুল মুছতে লাগলো৷ মুন আয়নায় সামনে দারিয়ে আবিদ কে দেখছে ৷ এতো আদর ভালোবাসা স্নেহ কেয়ারিং এক জন মেয়ে তার স্বামীর কাছে আশা করে আর মুন তা পেয়েছে৷

“” জানো আবিদ আজ নিজেকে বড় ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে তোমার মতো এতো লাভিং কেয়ারিং হাসবেন্ট পেয়ে..””

আবিদ মুনে মাথায় চুমু দিয়ে মিষ্টি হেসে বলে উঠলো “” তাহলে তো বলতে হয় তোমার থেকেও আমি বেশি ভাগ্যবান তোমার মতো লাভিং কেয়ারিং ওয়াইফ পেয়ে…””

মুন আবিদের চোখে নিজের জন্য অফুরন্ত ভালোবাসার সমুদ্র দেখছে ৷ এই সমুদ্রের গভীরতা মাপার মতো ক্ষমতা হয়তো মুনের নেই৷

মুনের ধ্যান ভাঙে আবিদের ঠোটের স্পর্শে …

“” মনপাখি আজ আমি তোমাকে সাজাবো””

“”পেতনি সাজাতে তাইতো””

“” ধুর দেখো না আগে..”” আবিদ মুনে টুলে বসিয়ে মুনের চুল গুলো ব্রাশ করে দিয়ে খুব যত্ন করে মুনের চোখে কাজল পড়িয়ে দেয় ৷ কানে দুল হাতে কাচের চুড়ি গলায় চিকন হার ঠোটে লিপস্টিক পরিয়ে দিলো…

“” ব্যাস এখন আয়নায় নিজেকে একবার দেখো মনপাখি ..”” মুন ভয়ে ভয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেকে দেখে চোখ দুটো বড় বড় হয়ে যায় ৷

” দেখেছো আমি সাজাতে পারি কি না “”

“” হু কারন তুমি বেস্ট তাই বুজলে..””

“” আচ্ছা আমি রেডি হয়ে আসছি তুমি নিচে গিয়ে ওদের সাথে দেখা করে নেও আর শোন আমরা দু দিন পর আমার ভাড়া করা ফ্লাটে উঠবো””

“” ঠিক আছে তাহলে আমি নিচে গিয়ে সবার সাথে দেখা করে আসি “”

মুন নিচে চলে আসে ৷ নিচে এসে দেখে ড্রইং রুমে মামা মামি ফারুক খান বসে চা খাচ্ছে আর গল্প করছে ৷ মুন সবাই কে সালাম দিয়ে সামনে গিয়ে দারায়…

মুন কে দেখে মামি বসা থেকে উঠে দারায়…

“” মুন মা এতো সকালে উঠতে গেলি কেন সবে মাত্র সাতটা বাজে ..””

“” আসলে মামি আমাদের একটু হসপিটালে যেতে হবে..””

হসপিটালে যাওয়ার কথা শুনে সামচু হক , ফারুক খান চিন্তিত হয়ে জানতে চায় কেন হসপিটালে যেতে হবে কেন… মুন তারপর সবটা খুলে বলে তাদের ,

“” ঠিক আছে তোমরা গিয়ে দেখা করে আসো “”(ফারুক খান)

“” জ্বি আঙ্কেল””

“তোরা যখন বের হবি নাস্তা করে যা ,”(মামি)

মামির কথায় সারবেন্ট আবিদ আর মুনের নাস্তা টেবিলে সার্ব করে দেয় ৷ কিছুক্ষণ পর আবিদ রেডি হয়ে নিচে নেমে এসে সবার সাথে কথা বলে নাস্তা করে মুন কে নিয়ে বেরিয়ে যায়৷
.
.
.
.
তিন বছর পর……….

আবিদ নিরব আয়ান মামা মামি মৃন্ময় ফারিহা হসপিটালের অটির সামনে দারিয়ে আছে ৷ আবিদের চোখ মুখ ভয়ে শুকিয়ে গেছে ৷ একঘন্টা পর বাচ্চার কান্নার আওয়াজ পেয়ে সবার চোখে মুখে খুশির ঝিলিক ফুটে উঠলো শুধু মাত্র আবিদের ছাড়া ৷ মুনের সুস্থতার খবর না পাওয়া পর্যন্ত আবিদের মনে কোন শান্তি নেই ৷

কিছুক্ষন পর ডক্টর অটি থেকে বের হয়ে আসে ৷

“” Congratulations মিস্টার আবিদ আপনি কন্যা সন্তানের পিতা হয়েছেন৷””

“” ডক্টর আমার ওয়াইফ মুন কেমন আছে?””(আবিদ)

“” সি ইজ এ্যাবসুলুটলি ফাইন, “”

“” আমি আমার ওয়াইফের সাথে দেখা করতে চাই””

“” কিছুক্ষন পর কেবিনে দেওয়া হবে মিস্টার আবিদ , ততোখন অপেক্ষা করুন…””

একজন নার্স এসে বলে”” এই যে আপনার মেয়ে””

আবিদ নার্সের কোলে তোয়ালে পেচানো বাচ্চাটির দিকে তাকিয়ে আছে ৷ আবিদের বিশ্বাস হচ্ছে এই ছোট্ট পরী টা তার মেয়ে ৷ কাঁপা কাঁপা হাতে কোলে তুলে নিলো মেয়ে কে …

“” মাশাআল্লাহ কি কিউট বেবিটা হয়েছে সামিরার বাবা দেখেছো..””(মামী)

“” খালি হাতে তো আর নাতনির মুখ দেখতে পারবো না ৷ তাই পরে দেখে নিবো৷””

“” মামা আমি সানজু কে ফোন করে জানিয়ে দি ৷ না হয় বেচারি এই অবস্তায় টেনশন করবে…””

সানজু নিরবে হবু সন্তানে মা হতে চলেছে ৷ হ্যা নিরব আর সানজুর বিয়ে গেছে ৷ তিন বছর পূর্বে মুন আর আবিদের ফুল সজ্জার রাতে নিরব সানজু কে নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পর পরিচিত এক কাজিকে ফোন করে ডেকে নিয়ে বিয়ে করে নিরব ৷ নিরবের বাবা মা নিরবের বিয়ে মেনে নেয় ৷ সানজুর বাবা প্রথমে মানতে না চাইলেও মেয়ে খুশির জন্য মানতে বাধ্য হয় বলতে গেলে মুন সবটা মেনেজ করে আবার ধুম ধাম করে ওদের বিয়ে দেয়৷ সানজু এখন ছয় মাসের প্রেগনেন্ট তাই নিরব সানজু কে হসপিটালে আসার পারমিশন দেয় নি৷

মুন কে কেবিনে শিফট করার আদঘন্টা পর কেবিনে সবাইকে এলাউ করে ৷ সাথে সাথে প্রত্যেকে কেবিনে প্রবেশ করে ৷

“”” মনপাখি এখন কেমন আছো?”(আবিদ)

মুন এতোক্ষন চোখ বুজে ছিলো ৷ আবিদের গলা শুনে চোখ মেলে তাকিয়ে সবার হাসি মাখা মুখটি দেখতে পায় মুন…

আবিদ তার ছোট্ট পরীটাকে মুনের পাশে শুইয়ে দিলো ৷ মুন দু চোখ ভরে নিজের সন্তান কে দেখছে৷ তখনি আবিদ বলে উঠলো

“” মনপাখি দেখলে তো জুনিয়র মুন হলো আমার এখন আমার পছন্দের নাম রাখবে তুমি …”

“” আদিবা ইয়াসমিন মৌ তাই তো?”” (মুন)

“” একদম””

সবাই মুন আর আবিদের কথা শুনছে আর মিটি মিটি হাসতে …

এদিকে ফারিহা আর আয়ানের এক মাত্র ছেলে ফারদিন আয়ানের কোল থেকে নেমে আবিদের কাছে গিয়ে কোলে উঠতে চায় ৷ আবিদ মুচকি হেসে ফারদিন কে কোলে তুলে নিয়ে ফারদিনের গালে চুমু খায় ৷ ফারদিন ফোকলা দাতের হাসি দিয়ে মৌর গাল টেনে দেয় সাথে সাথে মৌ কেঁদে ওঠে ……

“” বাহ দেখলি মুন আমার ছেলের কেরামতি তোর মেয়ে জন্মানোর পর পর আমার ছেলে হাজির জ্বালাতে …””(ফারিহা)

“” দেখো সালিকা তোমার ছেলে যেন আবার আমার ছোট্ট পরীটার প্রেমে না পরে যায় সামলে রেখো..””

“”ওহ জিজু সামলোর সময় পরে আছে আগে এদের বড় তো হতে দেও তারপর এরাই ডিসাইড করবে ৷””

“” আবিদ আমি ডক্টরের সাথে কথা বলে এসেছি মুনকে আমরা আগামিকাল বাড়িতে নিয়ে যেতে পারবো..””

“” ফাইন তাহলে এখন আমরা বাইরে যাই ওদের কে একটু একলা ছেড়ে দি “”(আয়ান)

“” ওকে” সবাইকে ইশারা করতে সবাই বাইরে চলে যায় আর আয়ান ফারদিন কে কোলে তুলে নিয়ে বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে….

” ইসস চোখ মুখ একে বারে শুকিয়ে গেছে ৷ এতো টেনশন কেন করো আবিদ দেখো আমি মরে যাই নি সুস্থ আছি…””

মুনের কথা শুনে আবিদের চোখ মুখ রাগে লাল বর্ন ধারন করে… মুন ভয় পেয়ে যায় আবিদের চোখ মুখ দেখে কিন্তু আচমকা আবিদ মুন কে জরিয়ে ধরে চোখে মুখে ঠোটে চুমু দিতে থাকে ৷ মুনের মনে হচ্ছে তার উপর চুমুর বর্ষন হচ্ছে ৷

“” আর কখনো এমন বাজে কথা মুখে আনবে না মনপাখি তাহলে আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না “”

“” স্যরি””
.
.
.
.

মুন মৌ কে কোলে নিয়ে ফ্লাটে ঢুকতে মুনের চোখ ছানা বরা হয়ে যায় ৷ পুরো ফ্লাট টা বাচ্চাদের টয়েস ফুল বেলুন দিয়ে সাজানো , অসম্ভব সুন্দর লাগছে ৷ আবিদ মুন কে কোলে তুলে নেয় সাথে সাথে নিরব সিটি বাজায় ,,, আর আয়ান ফটো ক্লিক করতে থাকে…

“” ওয়াও জিজু আপুর কোলে আমাদের পরী আর আপনার কোলে আমার আপু সাথে পরী দুজনে আপনার কোলে….””(মৃন্ময়),

আবিদ মুনকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে মুন আর মৌর কপালে আলতো করে চুমু দেয়৷ শুরু হয়ে যায় আনন্দ উৎসব৷

তিনমাস পর..

আবিদ মুন আর মৌ কে নিয়ে রিদের বাড়ির কলিং বেল বাজায়, রিয়ানা বেগম বাতের ব্যাথা নিয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে এসে দরজা খুলে মুন আবিদ আর কোলে ছোট্ট শিশুটিকে দেখে প্রচন্ড খুশি হয়৷ রিদ মারা গেছে আজ তিন বছর তিন মাস হলো , সে দিন মুন আবিদ হসপিটালে রিদ কে শেষ দেখে আসে তার কিছুক্ষন পর রিদ না জানা দেশে পারি জমায়…. তাদের প্রতি মুনের বা আবিদের কারো কোন রাগ বা অভিমান নেই ৷ সেদিন রিয়ানা বেগম আর প্রিয়ন্তি মুনের কাছে ক্ষমা চায় ৷ মুন মন থেকে তাদের ক্ষমা করে দেয় ৷ রিদের জানাজা দাফনের কাজ শেষ করে আবিদ মুন বাড়ি ফিরে ৷ তারপর অবশ্য আবিদ মুন সময় করে রিদের বাবা মায়ের সাথে দেখা করে আসে ৷ তবে লাস্ট এক বছর আর আসেনি কারন আবিদ আসতে দেয়নি মুনের প্রেগনেন্সির জন্য…

“” বাহ এতো দিন পর এই বুড়ো বুড়ির কথা মনে পড়লো তাহলে , তা বাইরে কেন দারিয়ে ভিতরে এসো””

মুন বুজতে পারলো রিয়ানা বেগম অভিমান করেছে এতো দিন না আসায়….

“” মা তোমার নাতনি কে দেখবে না?”” ((আবিদ)

মুনের মুখে যতোবার মা ডাকটা শুনে ততোবার মনে হয় রিদ বেচে আছে আর তা আবিদের মধ্যে …. রিদের মৃত্যুর পর রিয়ানা বেগম বেশ ভেঙে পরে আবিদ নিয়ম করে এসে দেখা করে যেত ,

“” আবিদ বাবা তোমার মুখে মা টাকটা শুনে মনে হয় আমার রিদ আমাকে মা বলে ডাকছে ৷ কই দেও আমার নাতনি কে আমার কোলে….””

“” খালি হাতে মুখ দেখবে রিয়ানা?”” রায়হান আহাম্মেদ ড্রইং রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো….

“” তোমাকে কে বললো আমি আমার নাতনি কে খালি হাতে দেখবো ..” রিয়ানা বেগম নিজের গলা থেকে স্বর্নের চেইন টা খুলে মৌর গলায় পরিয়ে দেয় ৷

“” মা এটার কোন প্রয়োজন ছিলো “”(মুন)

“” চুপ আমি আমার নাতনি কে দিয়েছি তোমাকে না ৷ আর তুমি (রায়হান আহাম্মেদ কে উদ্দেশ্য করে) তুমি কি দেবে তোমার নাতনি কে?””

রায়হান আহাম্মেদ সোজা রুমে গিয়ে কিছুক্ষন পর একটা বক্স নিয়ে বেরিয়ে আসে ৷ বক্সটা খুলে স্বর্নের দুটো ছোট চুড়ি নিয়ে মৌর হাতে পরিয়ে দেয়৷ এটা দেখে অবাক হয়ে যায় রিয়ানা বেগম …

“” এতো ছোট চুড়ি বানিয়েছো তার মানে তুমি আগে থেকে জানতে আমার নাতনির কথা তাই তো ?””

“” একদম , আবিদ বাবা আমাকে ফোন করে সুসংবাদ টা আগেই দিয়েছিলো ৷ কিন্তু তখন দেখতে যেতে পারেনি কারন ব্যবসার হাল কেমন ছিলো তুমি তো জানতে , কিছু দিন হলো এটা গড়িয়েছি””

মুনের দু-চোখ যেন ভরে এলো এতো ভালোবাসা দেখে …

“” কাঁদছো কেন মন পাখি ? আমি জানি এদের এতো ভালোবাসা দেখে তোমার চোখে পানি আর তার চেয়েও বড় কথা তুমি তোমার মা বাবা কে মিস করছো তাইতো?”

মুন মাথা নাড়ে , (সেদিন বিয়ে বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার পর আলিয়া বেগম আর আফজাল সাহেব কেউ আবিদ বা মুনের সাথে যোগাযোগ করে না ৷ তবে মনিরা বেগম আর আবির ফোনে আবিদ মুনের সাথে যোগাযোগ রেখেছে আবার সুযোগ পেলে তারা বরিশাল এসে দেখা করে যায়৷ আর মৃন্ময় সেদিনের পর থেকে মুনের কাছে থাকে৷ )

দুপুরে একসাথে খাবার খায় মুন আবিদ রিয়ানা বেগম আর রায়হান আহাম্মেদ ..

“”বাবা প্রিয়ন্তি কেমন আছে ? শশুর বাড়িতে সব ঠিক ঠাক আছে তো?””

প্রিয়ন্তির নাম শুনে রায়হান আহাম্মেদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে লাগলো”” প্রিয়ন্তির ডিভোর্স হয়ে গেছে ছয় মাস আগে…””

“” মানে! কেন ছেলেটাকে তো বেশ ভালোই দেখছিলাম?””(মুন)

“” ভালো তো ছিলো কিন্তু সেটা উপরে ছেলেটার সাথে আরো অনেক মেয়ের সম্পর্ক আছে এটা প্রিয়ন্তি জানতে পারে ৷ পরে ওদের ভিতরে কথা কাটাকাটি হয় ছেলেটা প্রিয়ন্তিকে মারধোর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয় ৷ তারপর প্রিয়ন্তি ফিরে আসে আমাদের কাছে ,””

“” এখন কোথায় আছে প্রিয়ন্তি ?””

“” ওর রিমা খালার বাড়িতে “”

” ওহ…””
.
.
.
বিকেলে দুজনের কাছে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পরে আবিদ মুন আর মৌ কে নিয়ে, পাশা পাশি হাটছে দুজনে , আজ আকাশটা অসম্ভব সুন্দর লাগছে সাত রঙা রং ধনু উঠেছে আকাশে , ঠান্ডা হওয়া বয়ে চলছে চারদিকে ৷ আজ আবিদ নিজেকে পরিপূর্ন লাগছে আর সবটাই মুনের জন্য , ভালোবাসার মানুষ কে নিজের করে পাওয়া সৌভাগ্যের বেপার , আবিদ মুচকি হেসে মৌ কে কোলে নিয়ে মুনের হাতে হাত রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো আবিদ…..

…………..সমাপ্ত…………..