#নীলাবতী
[৮ ও শেষ পর্ব ]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ
মারিয়ার সাথে কথা বলে নীলা চলে গেলো। দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে আসলো। নীলা ক্লাবের ভিতরে বসে আছে। কিছুক্ষণ পরে সেখানে রাসেল আসে।
— রাসেল আমাদের হাতে কিন্তু সময় আর বেশি নেই। যা করার দ্রুত করতে হবে।
— আপু এসব নিয়ে আপনাকে চিন্তা করতে হবেনা আমি আছি তো না-কি? আর ওই দিকে সব ওকে হয়ে গেছে। আপনি ওই বাসায় যাওয়ার রাস্তাও রেডি করা হয়েছে।
— গুড। আমি রাত ১২ টায় বের হবো। আর খেয়াল রাখবে পুলিশ যেনো কোনো কিছুই বুঝতে না পারে।
— ঠিক আছে আপু।
এবার দেখতে দেখতে রাত ১২ টা বেজে গেলো। নীলা একটা কালো ড্রেস পড়ে। নীলা সব ওকে করে বের হবে এমন সময় ক্লাবের দরজার মধ্যে কেউ টোকা দিতে থাকে। নীলা আর রাসেল একটু ঘাবড়ে যায়। কে আসতে পারে এতো রাতে? দুজন দু’জনের দিকে তাকায়। এবার নীলা রাসেলকে হাত দিয়ে ইশারায় বলে সে যাবে। নীলা পিস্তল হাতে নিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে যায়। দরজা খুলেই নীলা হতবাক হয়ে যায়। নীলার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে মারিয়া।
— মারিয়া তুই এখানে কেন এতো রাতে?
— আমি জানি তুই এখানেই থাকবি তাই এখানে চলে আসলাম। তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।
— সারপ্রাইজ! কীসের সারপ্রাইজ?
— আমার সাথে আয়।
নীলা এবার মারিয়ার সাথে চলে গেলো। একটু সামনে যেতেই দেখে একটা কালো গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। নীলার সাথে রাসেল ও গেলো। গাড়ির সামনে যেতেই রাসেলের ফোন বেজে ওঠে।
— হ্যালো,
— রাসেল ভাই হাওলাদার তো এখনও বাসায় আসেনি। আমরা এখনও তার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছি।
— কি বলছ এতো রাত হয়ে গেলো এখনও বাসায় আসেনি? আচ্ছা রাখো আসলে জানাবে।
এই কথা বলে রাসেল ফোন কেটে দিয়ে নীলার কাছে গিয়ে বলল — আপু রবিন হাওলাদার তো এখনও বাসায় যায়নি।
— কি বলছ?
মারিয়া একটা হাসি দিয়ে বলল — রবিন হাওলাদার আর কখনও নিজের বাড়ি যেতে পারবেনা।
মারিয়ার কথা শুনে নীলা অনেক বেশি অবাক হলো — বুঝলাম না কি বলছিস তুই?
— তুই আমার সাথে আয় আগে।
এবার নীলা মারিয়ার সাথে গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো। মারিয়া গাড়ির দরজা খুলে দিতেই নীলা হতবাক হয়ে গেলো। গাড়ির ভিতরে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছে রবিন হাওলাদার।
— নীলা এই নে তোর শিকার। এই জা*নো*য়া*র*কে আগে ভিতরে নিয়ে বেধে রাখ৷ নাহলে কিছুক্ষণের মধ্যেই জ্ঞান ফিরে আসবে৷
মারিয়ার কথা শুনে রাসেল রবিন হাওলাদারকে নিয়ে একটা চেয়ারের সাথে বেধে দেয়। মারিয়ার এমন কাজে নীলা অনেক বেশি খুশি হয়। কিন্তু নীলার মনে একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিলো। সেটা হলো মারিয়া কি ভাবে এসব করলো?
— মারিয়া তুই হাওলাদারকে কি ভাবে নিয়ে আসলি বুঝলাম না।
— নীলা আমি জানি এই হাওলাদার মেয়েদের জন্য পাগল। তাই আমি তার অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম তার অপেক্ষায়। তারপর উনি যখন বের হলো আমি সাহায্য চাইলাম। তারপর আর কি কৌশলে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দিলাম।
কিছুক্ষণ পরে হাওলাদারের ঘুম ভেঙে যায়। সে দেখে তার হাত পাও বাধা। হাওলাদার চিৎকার করতে শুরু করে। আর সে নিজের শক্তি দিয়ে দড়ি খুলে ফেলার চেষ্টা করে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে চেষ্টা করা ছেড়ে দেয়। কারণ সে বুঝতে পারে এখান থেকে দড়ি খোলা সম্ভব না। তাই সে চেয়ারের উপরে বসে বসে চিৎকার করতে থাকে। মুখে মাক্স পড়ে নীলা,মারিয়া আর রাসেল হাওলাদারের সামনে আসে।
— কে তোমরা? আর আমাকে এখানে নিয়ে আসলে কেন?
নীলা বলল — আমাদের চিনতে হবেনা। মনে কর আমরা তোর জম। আজ তোর জীবনের শেষ দিন।
— মানে কি? তোমরা আমাকে এখানে কেন নিয়ে আসলে?
— কতো মানুষের সংসার নষ্ট করলি তুই জানিস সেটা? তোর জন্য কতো মানুষ নিজের সব শেষ করছে।
— আরে তোমরা কারা?
নীলা এবার মুখ থেকে মাক্স সরিয়ে নেয়। নীলাকে দেখে হাওলাদারের চোখ বড় বড় হয়ে যায়।
— নীলা তুমি?
— হ্যাঁ আমি, চিনতে পারছিস তাহলে? তোর জন্য আমার সুখের সংসার ভেঙে গিয়েছে। তুই আজ আমার হাতেই মরবি।
এবার নীলা তার হাতের চাকু নিয়ে হাওলাদারের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। হাওলাদার ভয়ে ভয়ে বলতে থাকে — নীলা আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ। আমি আর কখনও এমন কাজ করব না এই বারের মতো আমাকে ক্ষমা করে দাও নীলা।
— মনে আছে সেইদিন আমি তোর কাছে অনেকবার বলছি আমাকে ছেড়ে দিতে। তুই আমার কথা কানেই তুলিস নি। ওই দিনের কথা মনে পড়লে আমার শরীরে আগুন ধরে যায়।
এই কথা বলেই নীলা চাকু দিয়ে হাওলাদারের উপরে চাকু দিয়ে আঘাত করতে থাকে। চাকুর আঘাতে হাওলাদারের শরীরের রক্ত নীলার মুখে এসে পড়ে। তাও নীলা থামছে না। নীলা একের পর আঘাত করতে থাকে। হাওলাদার কিছুক্ষণের মধ্যেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। তার পরেও নীলার রাগ কমছে না। নীলা এখনো আঘাত করতেই থাকে। মারিয়া এসে নীলাকে ধরে সরিয়ে আনে। নীলা মারিয়াকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কান্না করতে থাকে।
নীলা মারিয়াকে বলল — মারিয়া পুলিশ ইন্সপেক্টর নিহানকে একটা কল দে আমি কথা বলব।
নীলার কথা শুনে মারিয়া নিহানকে ফোন দেয়।
— হ্যালো মারিয়া!
— আমি নীলা বলছি।
— নীলা!
— আপনি একটু আসতে পারেন?
— কোথায় আসতে হবে বলুন। আমি এক্ষনি আসছি।
নীলা এবার নিহানকে ঠিকানা বলে দেয়। নিহান কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে চলে আসে। নীলা নিহানের কাছে গিয়ে বলল — স্যার আমার কাজ শেষ এবার আপনি আমাকে নিয়ে যেতে পারেন।
— কাজ শেষ মানে? কি কাজ করলে তুমি?
নীলা এবার হাত দিয়ে হাওলাদারের লাশেরে দিকে ইশারা করলো। নীহান অবাক হয়ে গেলো। কি ভাবে নীলা হাওলাদার কে মারল!
— এবার আমাকে গ্রেফতার করতে পারেন স্যার। আমার আর কোনো আপত্তি নাই। এবার আমাকে যে শাস্তি দিবে আমি মাথা পেতে নিতে রাজি আছি।
— নীল তুমি আগেও তিনটা মাডার করছো এখন চারটি হলো। এই মাডারের কথা আমরা ছাড়া আর কেউ জানেনা। হাওলাদারের লাশ তার গাড়িতে রেখে গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দাও। তাহলে এই লাশ আমরা এক্সিডেন্ট বলে চালিয়ে দেবো। আর আমি এই হাওলাদারের ব্যাপারে অনেক খোজ নিয়েছি এই লোক ভালো না। পুলিশ ও ওনার কিছুই করতে পারবেনা। আমি যেটা বলছি সেটাই করো। আর তুমি কাল সকালে থানায় আসবে। আর আমি তোমার পাশে আছি। তোমার জন্য আমি সব করব। তোমার সাজা কমানোর জন্য আমি চেষ্টা করব।
এই কথা বলে নিহান চলে গেলো। নিহানের কথা শুনে নীলা অবাক হয়ে গেলো। নিহান কি বলল আর কেন বলল সব নীলার মাথার উপর দিয়ে গেলো। নিহানের কথা মতো সব কাজ সেরে নেয়। পরের দিন সকালে নীলা থানায় যায়। আর সেখানে নীলাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। নীলার হাতে যখন হাতকড়া পড়াবে তখন নিহান গিয়ে বলল — ওনাকে হাতকড়া পড়ানোর দরকার নাই। ওনাকে নিয়ে যাও।
দুই দিন পরে নীলাকে কোর্টে নিয়ে যাওয়া হয়। নিহান নীলার জন্য একটা ভালো উকিল ঠিক করে। আর অনেক কিছু জোগার করে দেয়। যে-সব জিনিস নীলার কাজে লাগবে। নীলার বিরুদ্ধে যখন তিনটি খুনের মামলা আছে সেহেতু নীলাকে ৫ বছরের জেল দেওয়া হয়। নীলার সাজা কমানোর জন্য নিহান অনেক চেষ্টা করে। কিন্তু কোর্ট ৫ বছরেই থাকে।
নিহান নীলার কাছে গিয়ে বলল — নীলা মাত্র ৫ বছর চিন্তা করবেনা দেখতে দেখতে ৫ বছর কেটে যাবে।
— ধন্যবাদ আপনাকে।
— ধন্যবাদ কেন দিচ্ছ?
— আমার জন্য আপনি অনেক কষ্ট করছে স্যার। সেই জন্য।
— ধন্যবাদ দিতে হবে। কারণ আমরা ফ্রেন্ড ওকে?
নীলা একটা মুচকি হাসি। তারপর নীলাকে নিয়ে চলে গেলো থানায়।
দেখতে দেখতে ৫ বছর পার হয়ে গেলো। আজ নীলা কারাগার থেকে মুক্তি পাবে। নীলার জন্য বাহিরে অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে আছে নিহান,মারিয়া,আর রাসেল। নীলা এতোদিন পরে বাহিরের আলোবাতাস দেখে অনেক খুশি হয়ে যায়। নীলাকে দেখে মারিয়া আর রাসেল এগিয়ে আসে। সবাই নীলাকে শুভেচ্ছা জানায়। নিহান দূরে দাঁড়িয়ে আছে। এবান নিহানের চোখে নীলার চোখ পড়তেই নিহান এক গুচ্ছ গোলাপ নিয়ে এসে নীলার সামনে হাটু গেড়ে বসে নীলাকে বিয়ের জন্য প্রস্তাব দেয়।
— নীলা আমি তোমাকে কখন যে ভালোবেসে ফেললাম আমি নিজেও জানিনা। আমি সব সময় তোমার পাশে থাকতে চাই। আমি তোমার সুখদুঃখের সাথী হতে চাই। আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। তুমি এই ফুল গুলো যদি নাও বুঝব তুমিও আমাকে বিয়ে করতে চাও।
নিহানের কথা শুনে নীলা কি বলবে বুঝতে পারছেনা। মারিয়া নীলাকে বলে রাজি হওয়ার জন্য। আসলে নীলাও এতো দিনে বুঝতে পারে নিহান তাকে আসলেই ভালোবাসে। নীলা হাসিমুখে নিহানের হাত থেকে ফুল গুলো নিয়ে নেয়। নিহান অনেক বেশি খুশি হয়ে যায়। নিহান সবার সামনে নীলাকে জড়িয়ে ধরে।
মারিয়া বলল — এই-যে এখনো কিন্তু আপনাদের বিয়ে হয়নি। আগে বিয়ে করুন তারপর এসব করবেন।
মারিয়ার কথা শুনে সবাই খিলখিল করে হেসে দেয়। কিছুদিন পরে নীলা আর নিহান বিয়ে করে নেয়। আর দুজন দুজনের পাশে থাকে। দুজন দু’জনকে অনেক বেশি ভালোবাসে। খুব ভালো ভাবে তাদের দিনকাল কাটতে থাকে।
সমাপ্ত।