#নীল_সীমানার_শেষপ্রান্তে
#Writer_Mahfuza_Akter
||পর্ব_১৯||
;
;
;
—“আগেও প্রয়োজন ছিলাম,
আজও আমি প্রয়োজন আপনার!!
প্রিয়জন হতে পারিনি তবুও!!”
জয় আমার কোল থেকে মাথা তুলে আমার মুখের দিকে তাকালো। তার চাহনি বুঝিয়ে দিচ্ছে যে, সে আমার কাছ থেকে এমন কথা আশা করেনি। আমি তার দিকে একবার তাকিয়ে আবার চোখ ঘুরিয়ে নিলাম। ঠোঁট দুটো চেপে হাসির রেখা টেনে বললাম,
—“কী ভেবেছিলেন? আপনার কথার উত্তরে বলবো, ‘আমি এক পায়ে খাঁড়া ‘? দুঃখিত, আপনার আশানুরূপ উত্তর দিতে পারলাম না। ”
—“তুমি যদি মনে করে থাকো যে, আমি তোমায় নিজের প্রয়োজনের জন্য ব্যবহার করতে চাচ্ছি, তাহলে সেটা তোমার ভুল ধারণা। আমার জীবনটা সুন্দর করার জন্য, সব বাঁধা বিপত্তি কাটিয়ে ওঠার জন্য, একটা সম্মান ও বিশ্বাসের সম্পর্ক তৈরি কীার জন্য আমার তোমায় প্রয়োজন। আর আমি জানি, তুমি আমায় ভালোবাসো।”
আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললাম,
—“কে বলেছে আমি আপনাকে ভালোবাসি? ”
জয় হেসে বললো,
—“সব কথা মুখে বলতে হয় না, কিছু কথা বুঝে নিতে হয়।”
আমি হা করে ওনার দিকে তাকিয়ে আছি। কী মানুষ!! ভাবা যায়!!
—“ওভাবে হা করে তাকিয়ে থেকে লাভ নেই। আমি না জেনে বুঝে কথা বলি না। আর আজ তোমায় ‘আই নিড ইউ ‘ এর জায়গায় ‘আই লাভ ইউ’ বলতে পারতাম। কিন্তু বলি নি কারণ, তোমার জন্য আমার মনে একটা মায়া সৃষ্টি হয়েছে, তবে সেটা ভালোবাসায় এখনো রুপ নেয়নি। আমার সময়ের প্রয়োজন। ”
—“আমায় আপনাকে ভালো-টালো বাসতে হবে না। আপনি তনিমার জন্য আমায় বিয়ে করেছিলেন। এখন যেহেতু তা আর হচ্ছে না, সুতরাং আমি আর আপনার সাথে থাকবো না।”
জয় এবার রেগে বললো,
—“এখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য এক পা বাড়ালে আমি যে তোমার কী হাল করবো, কল্পনাও করতে পারবে না। আমি তোমার হাসবেন্ড, সো আমার কথা মেনে চলতে তুমি বাধ্য। ওয়ার্নিং দিয়ে দিচ্ছি তোমায়, আমায় রাগীও না।”
আমার এবার সত্যিই অনেক বিরক্তি লাগছে। এই লোকটা হুটহাট রেগে এমন লাল টমেটো হয়ে যায় কেন? তবে আমায়ও আপনি চিনেন না।
—“আচ্ছা, আমি যাবো না। তবে আমার একটা শর্ত আছে। সেটা যদি মানেন তবেই আমি আপনার কথা শুনবো।”
—“কী শর্ত বলো। কোনো উদ্ভট শর্ত কিন্তু আমি শুনবো না। তোমার এখানে থাকতে হবে মানে এখানেই থাকবে। এটা ফাইনাল। এখন বলো কী শর্ত??”
—“আজিব তো! আমার শর্তের কোনো দাম নেই? ”
—“না, নেই। তাও বলো যদি ইচ্ছে হয়, তাহলে ভেবে দেখবো।”
আমি ভেংচি কেটে বললাম,
—“আমায় আপনাদের কোম্পানিতে জব দিতে হবে। আমার এভাবে সারাক্ষন বাসায় বসে থাকতে ভালো লাগে না। ”
—“পাগল নাকি! আমার বউ হয়ে আমার কোম্পানিতে চাকরি করবে?? তাছাড়া অফিসে অনেক ছেলে মানুষ আছে। তাই তুমি কোনো জব-টব করতে পারবে না।”
আমি এবার জেদ করে বললাম,
—“আমার বলার কথা বলেছি। শুনলে শুনবেন, না শুনলে আমি আপনার সাথে কথা বলবো না। আর কিছু খাবোও না।”
জয় বিরক্ত হয়ে বললো,
—“ভারি মুশকিল তো! আচ্ছা ঠিকাছে। সামনের সপ্তাহ থেকে তোমায় এপয়েন্ট করে দিব। তবে কোনো ছেলের সাথে কথা বলতে পারবে না।”
আমি উৎফুল্ল হয়ে বললাম,
—“আচ্ছা। ”
____________
রাতে,,,,
নিচে এসে তো আমি পুরাই অবাক। এতো ডেকোরেশন করা হয়েছে কেন? বাড়িতে তো আমরা বাদে বাইরের কেউ আসেনি! তাহলে আয়োজন কিসের জন্য??
আমি সিঁড়ির কাছে দাঁড়িয়ে আশেপাশে দেখছি আর আকাশ-পাতাল ভাবছি এমন সময় কোথা থেকে যেন জয় এসে বললো ,
—“এখানে এমন মুর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন? মা আর ভাবী মিলে সব কিছু সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে, আর তুমি এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চারদিকে চোখ বুলাচ্ছো!! তুমি এ বাড়ির ছোট বউ, ভুলে গেছো মিসেস জয় মাহমুদ?? ”
আমি ঠোঁট ফুলিয়ে বললাম,
—“এ্যাহহহহ, আইসে আমায় বউ বউ করতে। এতো বউ বউ বলে আপনাকে আমায় মনে করিয়ে দিতে হবে না যে আমি আপনার বউ। যত্তসব। ”
বলেই সামনের দিকে হাঁটতে শুরু করলাম। আর জয় আপনমনে হাসতে লাগলো।
কিচেনর দিকে পা চালিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি এমন সময় কোথা থেকে যেন আমার হারামি কলিজা গুলো আমার ওপর এসে হুমড়ি খেয়ে পড়লো। নিজের থেকে অনিতা আর রুহিকে ছাড়িয়ে নিয়ে সবগুলোর দিকে হা করে তাকিয়ে আছি। এরা কোত্থেকে উদয় হলো??
—“কেমন সারপ্রাইজ দিলাম বল??”
চারজন একসাথে বলে উঠলো। আমি অবাকতা কাটিয়ে উঠে বললাম,
—“আরেকটু হলো আমার জান আর আমার ভেতর থাকতো না। কোথায় যেত জানি না!”
—“বইন, তোরর এই ফাউল কথা শোনার জন্য আমরা এখানে আসি নাই। তাছাড়া,,, ”
অর্ণবের কথা শেষ হওয়ার আগেই রাদিফ বলা শুরু করলো,
—“তাছাড়া তোরে না আমি না করসি এই টাইপের কথা বলবি না। তাও তুই এগুলাই কস। এই তোরা তিনজন চলতো, বাড়িত যামু গা।”
আমি হন্তদন্ত হয়ে বলে উঠলাম ,
—“আরে আরে, কোথায় যাচ্ছিস? এত্তগুলা স্যরি। আর বলবো না। এখন বল, তোদের এখানে আসতে বললো কে?”
অনিতা বললো,
—“আরে, বিকেলে জিজু আমায় কল করে বলেছিল আজ নাকি এ বাড়িতে ডিনারের আয়োজন করা হয়েছে। তার কোন ফ্রেন্ড নাকি আসবে। তাই আমাকে বলেছে তোর বাকি সব ফ্রেন্ড দের নিয়ে আসতে। ”
জয়ের ফ্রেন্ড আসবে?? কোন ফ্রেন্ড? জয়ের কোনো ফ্রেন্ডও আছে, জানতাম না তো! কে করেছে এই লাল টমেটোর সাথে ফ্রেন্ডশিপ?
আমি ভাবনার রাজ্যে ডুবে আছি, সেটা দেখে অর্ণব বললো,
—“আবার কী ভাবা শুরু করলি?”
আমি হকচকিয়ে গিয়ে বললাম,
—“না কিছু না। চল ভেতরে।”
আমি সবাইকে নিয়ে রুমে চলে গেলাম।
_________
—-“আরে দোস্ত! এতো বড়সড় আয়োজনের কী দরকার ছিল বলতো? আমি কি তোর পর নাকি!”
জয় আহিলকে জাপটে ধরে বললো,
—“আপনের চেয়েও বেশি আপন তুই। তোর জন্য করবো না তো কার জন্য করবো?”
—“কারো জন্য করতে হবে না। এখন ভেতরে এসো দুজন।”
অদ্রির কথা শুনে দুজনেই ড্রয়িং রুমে এসে বসলো।
—“তা আমাদের মিসেস জয় মাহমুদ কোথায়? অদ্রি ভাবী তো তোর বউয়ের প্রশংসা করতে করতে আমার কান খারাপ করে ফেলেছে। ”
আহিলের কথা শুনে জয় একবুক হতাশা নিয়ে বললো,
—“আর বলিস না! সে তো এখন অনেক ব্যাস্ত! আজ তাকে তার ফ্রেন্ড সার্কেলকে বাসায় এনে দিয়েছি। তাই তার তো কোনো খবরই নাই। ”
—“ছিঃ ছিঃ জয়, তুই তোর বউয়ের ফ্রেন্ড দেরকেও হিংসে করিস!”
—“বউয়ের ছেলে বন্ধু থাকলে কার ভাল্লাগে? যতোই ভাই বলুক না কেন।”
—“একটু আধটু ফাটে!”
বলেই হাসতে শুরু করলো আহিল।
হঠাৎ সিঁড়ির দিকে চোখ যেতেও জয়ের চোখ ছানাবড়া আর মুখ হা হয়ে গেল। জয়ের দৃষ্টি অনুসরণ করে আহিলও সেদিকে তাকালো। দেখতেই সে বুঝতে পারলো, জয় কেন এমন করে তাকিয়ে আছে?
জয় অস্ফুট স্বরে বললো,
“তোমাকে যখন দেখি, তার চেয়ে বেশি দেখি
যখন দেখি না।
শুকনো ফুলের মালা যে-রকম বলে দেয়
সে এসেছে…
চড়ুই পাখিরা জানে
আমি কার প্রতীক্ষায় বসে আছি
এলাচের দানা জানে
কার ঠোঁট গন্ধময় হবে-
তুমি ব্যস্ত, তুমি একা, তুমি অন্তরাল ভালোবাসো
সন্ন্যাসীর মতো হাহাকার করে উঠি
দেখা দাও, দেখা দাও,
পরমুহূর্তেই ফের চোখ মুছি
হেসে বলি
তুমি যেখানেই যাও, আমি সঙ্গে আছি।
(সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়)
-চলবে……….