#নীল_সীমানার_শেষপ্রান্তে
#Writer_Mahfuza_Akter
|| অন্তিম পর্ব ||
|প্রথম অংশ|
সারাবাড়ির পরিবেশ এখন বেশ গমগমে, খানিকটা উৎসবের আমেজ লাগছে। সবাই অনেক বেশি খুশী আজ। আমি মাকে (মালিহা চৌধুরী) ফোন দিয়ে বলে দেই যেন, জ্যোতিকে নিয়ে চলে আসে এখানে।
আমার নিজের বাবা মাও এসেছে, তাদেরকেও অনেক আনন্দিত লাগছে। এতো বেশি খুশী আমি আমার বাবা-মাকে কখনো হতে দেখিনি। তবে বাবার দিকে যখন তাকাই, তখনি নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হয়। আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার পরেই বাবা স্ট্রোক করেন। তারপর থেকে তিনি হুইলচেয়ার ছাড়া চলাচল করতে পারেন না। আজ আমার জন্যই বাবা চলৎশক্তিহীন, ভাবতেই ভেতরটা ছিঁড়ে যায়।
আমি গুটি গুটি পায়ে বাবার সামনে গিয়ে বসলাম। বাবা হাসিমুখে আমার গালে হাত রেখে বললেন,
—কী রে, মা? কাঁদছিস কেন, হুম?
আমি নাক টেনে বললাম,
—আমি অনেক খারাপ, বাবা। আজ আমার জন্য তোমার এই অবস্থা। আমি পারিনি তোমাদের ভালো মেয়ে হতে, তোমাদের সবসময় ভালো রাখতে।
বাবা আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললেন,
—এখানে তোর কোনো দোষ নেই রে, মা। তোর জায়গায় অন্য কোনো মেয়ে থাকলে নিজেকে সামলাতে পারতো না। কিন্তু তুই নিজেকে শক্ত রেখেছিস, সবার সুখের কথা ভেবেছিস। এমনকি আমাদের কথা পর্যন্ত ভুলিসনি। আমাদের যেন কোনো সমস্যা না হয়, সেজন্য জায়েদকে বলে গিয়েছিস। আবার বিদেশে গিয়ে নিজের আরেকটা পরিবার খুঁজে নিয়ে সেখানেও সবাইকে আনন্দে রেখেছিস। কোনো সাধারণ মেয়ের পক্ষে সম্ভব হয় না প্রতিটা মানুষের মনে জায়গা করে নেওয়া। এদিক থেকে তুই স্বার্থক, আর তোকে নিয়ে আমি অনেক খুশি।
—আমিও আজ অনেক খুশি, বাবা।
—কিন্তু যে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছে, তার সাথে কথা বলেছিস? মান ভাঙ্গিয়েছিস?
আমি মাথা নিচু করে বললাম,
—বাবা, আমার খুব ভয় করছে। যদি উনি আমায় ক্ষমা না করে, তখন?
—তাই বলে এভাবে বসে থাকবি? একটা বারও চেষ্টা না করে ভয় নিয়ে পড়ে থাকাটা বোকামি। ছেলেটা তোকে অনেক ভালোবাসে, আমার নিজের চোখে দেখা। আমি বাবা হয়ে বলছি তোকে, তুই যা ও তোকে ফিরিয়ে দেবে না।
আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম,
—হুম।
_______________
ডক্টর নিখিল বাইরের বাগানে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছে। বিকেলে শীতের মৃদুমন্দ হাওয়া গাঁ ছুয়ে দিচ্ছে, কিন্তু ভেতরের যন্ত্রণা কি আর কমাতে পারে? বারবার যারা ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়, তাদের ভেতরের কষ্ট তো পাহাড় থেকে কোনো অংশে কম না! বরং বেশিই।
হঠাৎ কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেতেই সাথে সাথে চোখ মুছে পেছন ফিরে তাকালো ডক্টর নিখিল। মিরাজ ম্লান হেসে বললো,
—নো নিড, নিখিল ভাইয়া। আমার সামনে নিজের সাথে ফাইট করে স্বাভাবিক থাকার কোনো দরকার নেই।
নিখিল সামনে তাকিয়ে বললো,
—সবসময় নিজের সাথে, নিজের মনের সাথে ফাইট করেই এ পর্যন্ত এসেছি। আজও করতে হচ্ছে, আর ভবিষ্যতেও করতে হবে সেটা আমি জানি।
—অনেক ভালোবেসে ফেলেছো আপুমনিকে, তাই না?
নিখিল হেসে বললো,
—জানি না। মালিশাকে আমি অনেক ভালোবাসতাম। ওর প্রতি আমার অনেক বেশি অনুভূতি কাজ করতো। ভাবতাম, ওকে ছাড়া কোনো দিন বাঁচতেই পারবো না। এজন্যই মালিশার হঠাৎ মৃত্যু মেনে নিতে পারিনি আমি! বড্ড বেশি ভালোবাসি ওকে। নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলাম। এমনিতেই ছোটবেলায় মম-ড্যাডের সেপারেশন, তারওপর মালিশার মৃত্যু আমার ওপর প্রচুর ইফেক্ট ফেলে। তাও নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়েছিলাম। কিন্তু কয়েকদিন যেতে না যেতেই আবার এই মালিশার আগমন। প্রথম দেখায় তেমন কিছু ফিল হয়নি, কিন্তু ওর কষ্ট গুলো যখন শুনেছি, ওর প্রতি একটা অন্য রকম মায়া তৈরি হয়। সময়ের আবর্তনে কীভাবে যে ওর মধ্যে বাঁধা পড়ে গেলাম, বুঝতেই পারিনি। ভেবেছিলাম, ওকে হয়তো ভালোবেসে আগলে নিয়ে সব দুঃখ দূর করবো। কিন্তু তা তো আর হলো না! এবারো আমি মালিশাকে হারিয়ে ফেললাম! হয়তো ভালোবাসা নামক জিনিসটা আমার জন্য আসেইনি!
—তুমি জীবনে অনেক কষ্ট করেছো, সেটা আমি জানি। এজন্যই আগেও বলেছি, এখনো বলছি, তুমি ঠিকই সুখী হবে।
—সুখ, একপাক্ষিক ভালোবাসায় কখনো সুখী হওয়া যায় না। সবসময়ই তো সেক্রিফাইজ করে এসেছি, এবারো না হয়। সেক্রিফাইজ নাম শব্দটা মনে হয় তৃতীয় পক্ষের ব্যক্তিদের জন্য তৈরি! তুমি চিন্তা করো না, আমি আবারও নিজেকে সামলে নিবো। মানুষ তো মুখে কত কথাই বলে! আমিও তো ভাবতাম যে, মালিশাকে ছেড়ে বাঁচতে পারবো না। কিন্তু কই, আমি তো ঠিকই বেঁচে আছি! তাই বলে তো আর এটা নয় যে, আমার ভালোবাসা মিথ্যা! সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছু বদলে যায়, কিন্তু অনুভূতি গুলো শেষ হয় না। আমি মালিশাকেই ভালোবাসি, আর আজীবন বেসে যাবো।
_______________
ঘরে এসে দেখি পুরো রুম অন্ধকার, শুধু বাইরে থেকে একটু-আধটু আলো আসছে। হঠাৎ বেলকনি থেকে কেমন একটা খটখট আওয়াজ আসলো। আমি সেদিকে এগিয়ে যেতেই দেখলাম, জয় নিজের রকিং চেয়ারে বসে সিগারেট টানছে আর আপনমনে ধোঁয়া ছাড়ছে।
—একি, আপনি কবে থেকে স্মোকিং করা শুরু করলেন?
আমার আওয়াজ পেতেই জয় পাশ ফিরে তাকালো। শুকনো হাসি দিয়ে আবার সামনে ঘুরে বললো,
—যেদিন থেকে তুমি গুলি ছুঁড়ে মানুষ মারা করেছো, সেদিন থেকে!
আমি কপাল কুৃঁচকে বললাম,
—এভাবে ভাবলেশহীন ভাবে কথা বলছেন কেন? আগে হাত থেকে সিগারেটটা ফেলুন।
—ওকে, ফেলে দিলাম। এবার বলো কী জন্য এসেছো এখানে?
—আপনি এখনো আমার ওপর রেগে আছেন? আমি জানি, আমি ভুল করেছি। শুধু ভুল না, এটা অন্যায়! আমার তখন আপনার সাথে থাকা উচিত ছিল, আপনাকে সাপোর্ট করা উচিত ছিল। কিন্তু আমি সেটা না করেই………
—সেটা না করেই কতোদিন নিজেকে লুকিয়ে রাখলে, তারপর সব ছেড়ে দূরে চলে গেলে। মানলাম, তোমার কাছে আমার বিরুদ্ধে সব প্রমাণ এসেছিল, সবদিক থেকেই আমি দোষী প্রমাণিত হয়েছিলাম। তবুও তুমি নিজের মস্তিষ্ক আর বিবেকটাকে তো একটু খাটাতে পারতে! কেন, তোমায় বিয়ে করার পর কি তোমার ওপর আমার কোনো অধিকার ছিল না? তাও আমি ফলিয়েছি কোনো অধিকার? তোমার জন্য তো নিজের জীবনটাকেও সঁপে দিতে চেয়েছিলাম! কিন্তু তুমি আমায় বিশ্বাসই করতে পারলে না?
আমার চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসছে। সত্যিই, আমি পুরোনো সব কথা ভুলে ওনাকে ছেড়ে কীভাবে চলে গেলাম?
—বিশ্বাস করুন, জয়। আমার কোনো ভাবেই বিশ্বাস হচ্ছিল না যে, আপনি এমনটা করবেন। এজন্য সবাই আপনাকে অবিশ্বাস করার পরেও আমি হসপিটালে গিয়েছিলাম, সেখানেও যে ফাঁদ পাতা ছিল আমি বুঝতে পারিনি। আমার নিজের শরীরের অবস্থা, তারওপর এসব প্রেশারে মাথাটাই কাজ করছিল না।
জয় আমার সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
—তখন প্রেশারে ছিলে, কিন্তু একসপ্তাহ আগেও কি প্রেশারে ছিলে? সেদিন আমি তোমার অফিসে যাওয়ার পর তুমি বলেছিলে, আমায় ঘৃণা করো, আমার চেহারা দেখতে চাও না। ইভেন, আজকে ভিডিওটা না দেখলে তো এখনো আমায় বিশ্বাস করতে না!
আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম,
—প্লিজ, আমার কথাটা একবার বোঝার…..
জয় হাত দিয়ে আমায় থামিয়ে দিয়ে বললো,
—অনেক হয়েছে! আমি জানতাম, আমার অবহেলা তুমি সহ্য করতে পারবে না। তাই এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদার চেয়ে সবকিছু যেভাবে চলছে সেভাবে চলতে দেওয়াটাই বেটার বলে আমার মনে হয়।
আমি চোখের পানি মুছে বললাম,
—ঠিকাছে, আপনি যা চাইছেন, তাই হবে। হয়তো এটাই আমার শাস্তি! আমি মেনে নিলাম সবটা। ভালো থাকবেন, আর কখনো আপনার সামনে আসবো না।
-চলবে……
#নীল_সীমানার_শেষপ্রান্তে
#Writer_Mahfuza_Akter
|| অন্তিম_পর্ব ||
| শেষাংশ |
জয় এখনো পেছন ফিরে আছে, আমার দিকে একবার তাকাচ্ছেও না। এতোটা অন্যায় করে ফেলেছি আমি? হয়তোবা!
আমি আর কিছু না ভেবে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে দরজার দিকে এগিয়ে গেলাম। যখনই দরজার নব ঘুরাতে যাবো, ওমনি জয় আমার হাত চেপে ধরে দরজা লক করে দিলেন। আমি অবাক চোখে ওনার দিকে তাকালে ওনি আমার দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন।
—আমি তোমাকে চলে যেতে বললেই তোমার চলে যেতে হবে, ইডিয়েট?
জয়ের চিৎকারে হালকে কেঁপে উঠলাম আমি। ওনি চলে যেতে বললে চলে যাবো না? কী আজব কথা বার্তা বলছেন উনি?
আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,
—আপনিই তো বললেন, সব কিছু যেভাবে চলছে সেভাবে চলতে দিতে।
—ওহহ, এজন্য তোমায় আমাকে ছেড়ে চলে যেতে হবে?
আমি উত্তর দেওয়ার মতো কোনো কিছু খুঁজে পাচ্ছি না। শুধু ড্যাবড্যাব করে জয়ের দিকে তাকিয়ে আছি আর বোঝার চেষ্টা করছি এই ব্যক্তিটা পাগল-টাগল হয়ে গেল নাকি? কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে উনি হুট করে আমায় ঝাপটে ধরলেন। এমনভাবে চেপে ধরেছেন যেন, আমায় বুকের ভেতর ঢুকিয়ে ফেলবেন। হঠাৎ কাঁধের দিকটায় ভেজা ভেজা অনুভূত হতেই কেঁপে উঠলাম আমি। উনি কি কাঁদছেন?
—আপনি কাঁদছেন কেন?
উনি নাক টেনে ভেঙে যাওয়া গলায় বললেন,
—সেটা জেনে তুমি কী করবে? আমি তো তোমার কেউ হই না! আমার ফিলিংস গুলোর তো কোনো মূল্য নেই তোমার কাছে! একবারো আমার দিকটা না ভেবেই চলে যাচ্ছিলে? এতো সেল্ফিশ কেন তুমি?
আমি হেসে দিয়ে বললাম,
—আচ্ছা, আমি সেল্ফিশ তো আপনি কী? আপনি যে আমায় কতোগুলো কথা শোনালেন?
—আর শোনাবো না, বকাও দেব না। সরি।
আমি অবাক হয়ে বললাম,
—আবার সরি কেন বলছেন? সরি তো আমার বলা উচিত! আমি আপনাকে কষ্ট দিয়েছি।
—বলোনি তো, তাই না? তাই আমিই বললাম।
—আপনি আমার ওপর আর রেগে নেই তো!
—ছিলাম, কিন্তু তোমার চোখে পানি দেখে রাগ সব পানি হয়ে গেছে। একটা সত্যি কথা কি জানো?
—কী সত্যি?
—তোমার জায়গায় আমি থাকলে আমিও দূরে চলে যেতাম।
আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,
—তাহলে আমায় বকলেন কেন?
—ঐটা তো এমনি এমনি ছিল!
হঠাৎ নিচ থেকে কেউ একজন জোরে জোরে চেচিয়ে ডেকে উঠলো,
—মাম্মাম, ও মাম্মাম। কোথায় তুমি?
আমি হেসে দিয়ে বললাম,
—ঐ যে, চলে এসেছে। আপনি তো এখনো দেখলেনই না! আমাদের মেয়েটা কিন্তু দেখতে একদম আপনার মতো!
—কে বলেছে দেখিনি? আমি সব খবর নিয়েছি। তুমি আমার নামের সাথে মিলিয়েই আমাদের পরীটার নাম রেখেছো, তাই না?
—জ্যোতিকে নিয়েই বাঁচতে চেয়েছিলাম। ওর মধ্যেই আমি আপনাকে দেখতে পেতাম।
____________
হলরুমে তো জ্যোতিকে নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে গেছে। জাহিদ মাহমুদ, আয়েশা, জায়েদ, অদ্রি, আহিল, কথা, রাদিফ, রুহি, অর্ণব, অনিতা যে একবার কোলে পায়, সে আর ছাড়তে চায় না। শেষে জ্যোতি বিরক্ত হয়ে নাক মুখ কুঁচকে সবার থেকে দূরে সরে গিয়ে বললো,
—এ্যাহহহ, কী শুরু করেছে আমাকে নিয়ে সবাই!! তোমাদের আশেপাশে আমি আর ঘেঁষছি না। তোমরাও কেউ আমাকে টাচ করবে না বলে দিলাম!
অদ্রি হেসে বললো,
—ওরে আমাদের পরীটা তো ক্ষেপে গেছে দেখছি!
জ্যোতি দু হাত কোমড়ে গুজে বললো,
—আমি কোনো পরী না। আমার একটা নাম আছে। আমার নাম জ্যোতি, বুঝেছো সবাই?
জ্যোতির চিৎকার চেচামেচি শুনে আমি নিচে নামতে নামতে বললাম,
—কী হয়েছে, জ্যোতি? তুমি এভাবে চেচাচ্ছো কেন?
জ্যোতি দৌড়ে আমায় জড়িয়ে ধরে বললো,
—দেখো না, মাম্মাম। সবাই আমাকে নিয়ে কেমন টানাটানি শুরু করেছে!
আমি হেসে বললাম,
—সবাই তোমাকে আদর করছে, মা।
—আদর করলে আমার কোনো প্রব্লেম নেই। কিন্তু এক এক করে করলেই তো হয়!
—আচ্ছা, এক এক করেই করবে। এখন শোনো, তোমাকে আজ একজনের সাথে পরিচয় করাবো।
জ্যোতি কৌতুহলী দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো। আমি আঙুল দিয়ে জয়ের দিকে ইশারা করে বললাম,
—ঐ যে, দেখেছো। ওনার কাছে গিয়ে কথা বলো।
জ্যোতি গুটি গুটি পায়ে জয়ের সামনে দাঁড়াতেই জয় হাঁটু মুড়ে বসে পড়লো। তার চোখ দিয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে। নিজেকে এতোটাই ব্যর্থ মনে হচ্ছে যে, তার নিজের মেয়েকে ও কাছে পেতে পাঁচ বছর লেগে গেল।
জ্যোতি আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
—মাম্মাম, এই আংকেলটা কাঁদছে কেন?
আমি জ্যোতির কাছে গিয়ে বললাম,
—উনি তোমার আংকেল নন, জ্যোতি। তুমি সবসময় তোমার পাপাকে দেখতে চাইতে না? এটাই তোমার পাপা।
জ্যোতি অবাক হয়ে জয়ের দিকে তাকালো। কপাল কুঁচকে বললো,
—তুমি আমার পাপা হলে এতোদিন কোথায় ছিলে? জানো, আমি যখন আমার ফ্রেন্ডস দের তাদের প্যারেন্টস দের সাথে দেখতাম তখন আমার কত কষ্ট হতো! আমার পাশে আমি কখনো আমাী পাপাকে পেতাম না।
জয় জ্যোতিকে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
—আমি সরি, মা। আমাকে এবারের মতো মাফ করে দাও। আর কখনো এমনটা হবে না। আমি অলওয়েজ তোমার সাথে থাকবো।
—প্রমিস।
—ওকে, প্রমিস।
—বাট পাপা, শুধু আমার সাথে থাকলেই চলবে না। তোমাকে মাম্মামের সাথেও থাকতে হবে। মাম্মামও তোমাকে অনেক মিস করতো, জানো?
আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,
—তাই, না? তোমাকে তো আজ আমি! পাকনা বুড়ি একটা!
জ্যোতি ছুটে সবার মাঝে চলে গেল।
আমি তাদের মাঝে যেতে যাবো এমন সময় জয় আমার হাত ধরে বললো,
—দেখেছো, আমার মেয়ে তোমার চেয়েও বেশি বুদ্ধি রাখে। কীভাবে তোমার মনের কথা বুঝে গেছে! তোমার মাথাটা তো পুরোটাই ফাঁকা!
—আচ্ছা? ভালো হয়েছে, আমার মাথা ফাঁকা। আপনারটা ভরা থাক। এবার আমায় ছাড়ুন।
—একবার ছাড়লে কিন্তু আর ধরছি না!
আমি চোখ রাঙ্গিয়ে বললাম,
—কী বললেন?
—আমি তো মজা করছিলাম!
—কেন করবেন এমন মজা? এসব আমার একদম পছন্দ না।
—ওকে ওকে, আর করবো না। এবার যাও।
______________
দুই বছর পর,,,,,,
এখন সবাই বেশ সুখে আছে। একবছর আগে আমার কোল আলো করে আরেকজন ছেলে এসেছে। মিরাজের বিয়ে হওয়ার পরেই সবাই অস্ট্রেলিয়া চলে গেলেও দু তিনমাস পর পর সুযোগ পেলেই আমার কাছে আসে। আহিল ভাই আর কথা একবছর আগে একটা বাচ্চা এডপ্ট করেছে। রাদিফ-রুহি, অর্ণব-অনিতা এখন হ্যাপি কাপল। আর ডক্টর নিখিল অস্ট্রেলিয়ায় ছয় মাস আগে তার ক্লাসমেটকে বিয়ে করেছে। আমি আগেই জানতাম ডক্টর নিখিল আমাকে ভালোবাসে, কিন্তু তবুও আমি কিছু বলিনি। এখন হয়তো উনি মুভ অন করার চেষ্টা করছেন আর এটাই ওনার জন্য ভালো। রাতের বেলা আকাশের দিকে তাকিয়ে এসব ভাবছিলাম এমনসময় জয় এসে আমার কানে ফিসফিস করে বললো,
—কী দেখছেন, ম্যাম?
আমি হেসে বললাম,
—কিছু একটা ভাবছিলাম!
—হ্যাপি অ্যানিভার্সারি।
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে বললাম,
—বারোটা বেজে গেছে।
—হুম।
—আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। হ্যাপি অ্যানিভার্সারি, মশাই।
—থ্যাংকিউ, আমার জীবনটাকে এতো সুন্দর করে তোলার জন্য। যদিও অনেক বাঁধা এসেছে, তাও আমাকে ছেড়ে কখনো যাবে না তো!
আমি ওনার হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম,
—কখনো না।
💖সমাপ্ত💖