#নীল হতে নীলান্তে
#লেখিকাঃ তামান্না
সূচনা পর্ব
-বেড পার্টনার খুজছেন নাকি?
না অন্যকোন ধান্দা আছে? একরাতেরই তো ব্যাপার!
বেড পার্টনার বানাতে চাইলে বানাতে পারেন।সবদিব! টাকা পয়সা, ইভেন আমাকে যদি চান তাও দিবো!! কি লাগবে?
আমার সামনে এখন একজন লম্বাটে ব্যাক্তি দাড়িয়ে আছে । মাস্ক পরে আছে,চোখ জোড়া কেমন যেন,ব্রাউন কালারের ।
আমার দিকে তাকিয়ে থেকে আমার পাশে বসে পরেন সোফাতে।এমনিতেই অসহ্য লাগছে তার উপর এসে আমার পাশেই বসে পরেছে। আমি আর সহ্য করতে পারলাম “ঠাস” করে একটা চড় মেরে দিলাম।
-“একটা মেয়ে বাহিরে বের হয়েও শান্তি পাবে না নাকি?
ও এখন কি ঘরে বাইরে কোথাও বের হওয়া যাবে না আপনাদের জন্য? ”
লোকটি ভয়পেয়ে গেল আমার ধমকানিতে, আশেপাশের উৎসুক লোকজন ও চেয়ে আছে।
লোকটি কিছুবলবে তার আগেই আমি-
“লিমিটেশনের মধ্যে থাকার চেষ্টা করবেন! আপনাকে পরিবার থেকে মেয়েদের সম্মান দিতে না বললেও নিজে শিখে নিবেন,রাস্তায় বেড় হলেই কোন মেয়ে বাজারি মেয়ে হয়ে যায় না!! কিছু কিছু মেয়ে অসহায় হয়ে ঘর থেকে জিবিকার তাগিদে বের হয়!! বেডপার্টনার খুজতে বের হয় না!পতিতা দরকার পরলে পতিতালয়ে যান আবাসিক হোটেলে আসবেন না!!”
এটা বলেই আমি উপরে চলে এলাম।
__________________________________________
হোটেলে বসের সঙ্গে একটা কাজে এসেছিলাম।অনেকটা বাধ্য হয়েই। এসেই এমন রকমের কান্ড দেখবো ভাবতে পারিনি।এখন আবার আরেক কান্ড! নিচে বসে থেকে উপরে এসেছি দেখতে বস কি করছে। এসেই চমকে গেছি পুরো।
একটা মেয়ে বসের গা জরিয়ে দাড়িয়ে আছে, আষ্টেপৃষ্টে লেপ্টে আছে একেবারে! আমার বসের বয়স প্রায় পঞ্চাশ উর্ধ!আর মেয়েটি আরো কম উনার মেয়ের বয়সি হবে হয়তো। ছি! কি রুচি!ঘৃণায় আমার দুচোখ নিচু হয়ে এলো।
বয়স বেড়েছে তবুও এদের মনমানসিকতা নিচু রয়েগেল।
স্যারকে আমি তেমন খারাপ ভাবতাম না।প্রভাবশালী ব্যবসাহীরা এমনই হয় তা আমার আগেই জানা। তবে ওনার কথা বার্তায় আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম।চাকরিতে জয়েন দেওয়ার সময় স্যারের পিয়ে ছিলেন তিনি ও বলেছেন স্যার মাতাল হয় পরে থাকেন। আর তাছাড়া স্যারের ছেলেরা তেমন ভালো নয় ড্রাগস এর মামলায় ওনার ভাই জড়িত আছেন।একদম নেশাগ্রস্ত।আমি ইনফরমেশন পেয়েছিলাম ওনার পরিবারে হয়তো ওনার ছেলেই এমন করে। আর ওনার বিজনেস পার্টনার রা সবাই ও আছে এসবে।
কিন্তূ না উনি ও এমন।আমি অতটা পাত্তা দিইনি। কিন্তু আজ মাতলামির সাথে তার নারীপিপাষু চরিত্র ও ফুটে উঠল।আমি লজ্জায় একদম নিচের তলায় এসে পরলাম।
চাকরি ইন্টারভিউ থেকে শুরু করে যখনই দেখা হয়েছে তখনই খুব আন্তরিক ভাবে কথা বলতেন তিনি।আর আজ তার আচরণ দেখে আমি পুরোপুরি অবাক হয়ে গিয়েছি।
মনে মনে বলছি একবার আমার মিশন সাক্সেসফুল হোক।কাজটা শেষ করে নিয় তারপর এদের একে একে সব কটাকে ধরবো। তারপর বাবারা তোমাদের সবাইকে ধরে নিয়ে জেলে ভরেদিব।
___________________________________
অরুপ-“হ্যালো কাজ কি হলো? পেলি মেয়েটাকে?”
আরাফ-“আরে ভাই এই তুই কার কথা বললি?এই মেয়েতো একদমই সেসব দলের মেয়ে না!”
অরুপ- “তাহলে কোন দলের?”
আরাফ- “আরে তুই বুঝতে পারছিস না মেয়েটাকে আমি আমার প্ল্যান মাফিক কথা বলেছি , উল্টো মেয়েটা আমার গালে চড় বসিয়ে দিল! আর কথার যা ঝাঝ! এত ঝাঝালো কথা তো!”
অরুপ-“আরে গিয়ে দেখ ঐ সেই মেয়ে এখন ভদ্র সাজছে!
রাতের আড়ালে ওরাই ঘুরে ঘুরে ড্রাগস স্পালাই করে।আর এসব মেয়েদের ষোলো আনাই চেনা আছে আমার!”
আরাফ- “আমার মনে হয় না! শোন আজ যদি এই মেয়েটা আর পুরো গ্যাং ধরতে পারি তাহলে আমাদের প্রমোশন পুরোপুরি ভাবে হবে।”
অরুপ- “আর প্রমোশন!”
আরাফ-” এত টেনশন করিস না, হয়ে যাবে!”
অরুপ-“হুম, ভালো করে দেখ কি করে মেয়েটা! আর শোন ফোর্স আমি রেডি করে রেখেছি হোটেলের পিছনে।”
তুই কোন সংকেত পেলে আমাদের জানিয়ে দিবি।
_________________________________
নিচে এসে পুলসাইটের পাশে বসে পরলাম।
কথা-“হ্যালো আমি অর্নিতা আফসারী বলছি।”
অপর পাশ থেকে-” আসসালামু আলাইকুম! ম্যাডাম কোন ইনফরমেশন পেয়েছেন?”
কথা- “এখনো অনেক কিছু জানা বাকি! তবে এটুকু বুঝেছি এই লোক খুব ডেঞ্জারাস! বিভিন্ন নরনের উচুস্তরের লোকদের সাথে এর উঠাবসা!আর তাও প্রভাবশালী ব্যাক্তিথের সাথে।টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া এর লোকে ভর্তি সব জায়গা!তুমি বাবাকে বলেদিও আমার পিছনে হয়তো ওদের কোন লোক লেগেছে! এই পর্যন্ত পাচঁবার আমাকে ফোলো করেছে।”
– “জ্বী ম্যাডাম স্যার কে জানিয়ে দেওয়া হবে। নিশ্চিন্তে থাকুন!”
গলা শুকিয়ে আসছে, মনে মনে নিজেকে বলছি রিল্যাক্স অর্নিতা! সামনে আরো পথ বাকি এটুকুতে ভয় পেলে কি করে সামনে আগাবি?বাবাকে দেওয়া আমার বানী ও তো সত্য করতে হবে।আমি ফোনে কথা বলে জিপিএস চালিয়ে দিলাম।আর অপেক্ষা করতে লাগলাম বস কখন আসবে।
বস ফোন করেছে এর মধ্যেই – “হ্যালো! কথা কোথায় তুমি?”
কথা-“এই তো স্যার নিচে আমি।”
স্যার-“নিচে একদম রিসিপশনে এসে পর যেখানেই থাকো।”
কথা- “জ্বী, স্যার!আসছি। ”
বলে রওনা দিব তারও সময় নেই তাকিয়ে দেখি এখনো সেই লোকটা আছে।পুলসাইট পার হয়ে রেস্টুরেন্টের সামনে দিয়ে আসার সময় আমার নজর পরে সেখানকার কাচেঁর দরজায় স্পষ্ট দেখতে পারছি আমি তাকে।কিন্তু এখন কিছু করা যাবে না।স্যার এসে দাড়িয়েছেন আমার সামনে।
স্যার-“কি কেমন লাগল এখানে এসে? ”
কথা- “জ্বী ভালো স্যার!”
স্যার- “হুম, গুড! শোন আমাদের ক্লাইন্ড একটু পরে চলে আসবে। তৈরী থেকো বুঝেছো!!”
কথা- “জ্বী,”
স্যার- “আগের প্রেজেন্টেশন রেডি করে রেখেছো তো? তারা হয়তো আগের টা নাও দেখতে পারে। প্রেজেন্টশন নাও দেখতে পারে। নতুন টাই বেশি প্রাধান্য দিবে।”
কথা- “সব কিছুই তৈরি করেছি, আপনি মিটিংয়ে এটেন্ড করুন। আচ্ছা আমি সব ব্যাবস্থা করছি।স্যার চলেগেলেন আলোচনা করতে।আমি ফোনে আমার সিম এ ডুকে আব্বুকে কল করলাম।”
জাহিদ আফসারী- “হ্যালো হ্যা মামুনি কি বুঝলে ওদিকের খবর?”
কথা- “বাবা তুমি যা বলেছো মনে হচ্ছে তাই ঠিক!”
জাহিদ আফসারী- “এবার মিলেছে সব? শোন সামনে থেকে সবাই সাধু হয়! আমি তাই তোমাকে বলেছি! কিন্তু তুমি আমার কথা বিশ্বাস করলে না যাইহোক! ওরা ডেন্জারেস পার্সন! বি কেয়ারফুল!আমি তোমার জন্য দুজন চৌকস অফিসার ফাটাচ্ছি!!”
কথা- “জ্বী আব্বু!”
____________________________________
অরুপ -“হ্যালো আরাফ শুন আমি ও আসছি! স্যার আমাকে বলল গোয়েন্দা বিভাগের একজন নতুন কর্মী নাকি এসেছে। তাকে প্রটেক্ট করতে।এখন তুই আমাকে বল তুই কোথায়?”
আরাফ- “আমি এখন তিনতলায়! একটা হলরুমের সামনে এখানে ঐ মেয়ে আর ঐ কোম্পানির মালিক ডুকেছে।”
অরুপ- “আচ্ছা আসছি আমি।”
আরাফের সঙ্গে কথা বলার পরই অরুপ চলে এসেছে হোটেলটিতে। আবাসিক হোটেল নানা ধরনের লোক
প্রতিদিন এখানে আসেন।অরুপ ও ছদ্মবেশেই এসেছে এখানে।চোখে সানগ্লাস আর নকল মুছ লাগিয়ে কোর্ট পরে চলে এসেছে সে।এসেই রেস্টুরেন্ট এসে বসে পরল সে উদ্দেশ্যে আরাফের সঙ্গে যোগাযোগ করা!
অরুপ-“হ্যালো হ্যা আরাফ শোন আমি এখানকার রেস্টুরেন্ট এ আছি। তুই দয়া করে বল মেয়েটা দেখতে কেমন।
আর মেয়েটি কি ড্রেস পরেছে?”
আরাফ-” মেয়েটি একটু লম্বা ভাই প্রায় ৫’৭’ ইন্চি হবে।
গায়ের রং ফর্সাই! এটুকু বলতে পারি এত লম্বা মেয়ে তুই এই হোটেলে ভাই পাবি না!খুব লম্বা মেয়ে, ড্রেস ও পরেছে ছাই কালারের অনায়াসে চিনতে পারবি। অরুপ কানে ব্লুটুথ স্পিকার দিয়ে হেটে হেটে আরাফের কথা শুনছে আর আশপাশ ভালো করে দেখে নিচ্ছে। অফিসার থেকে শুরু করে অনেক গোয়েন্দা পরিদপ্তরের লোক ও জোড়ো হয়েছে এখানে।অরুপ ইশারায় তাদের সঙ্গে কথা বলছে।তবে এখনো তার নজরে নতুন মেয়েটি পরেনি।হয়তো কোথাও দাড়িয়ে আছে। নতুন যারা আসে তারা আর কিই বা বুঝতে পারে!আর এতো একটা মেয়ে!”
অরুপ আরাফের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই উপরে আসছিল সিড়ি দিয়ে। রিসিপশনের সামনে ঘুরোঘুরি করলে ঝামেলা বেধে যেতে পারে তাই।সিড়িদিয়ে উপরে উঠার সময় তার সঙ্গে একটি মেয়ের ধাক্কা লাগলো।
অরুপ- Sorry, extremely sorry! আমি দেখতে পারিনি আপনাকে কিছু মনে করবেন না।
কথা- Its ok আন্কেল! ভুল মানুষেরই হয়।
অরুপ বোকা বনেগেল শেষ পর্যন্ত কিনা আন্কেল ডাক শুনতে হলো তাও আবার এমন একটা সুন্দরী মেয়ের কাছ থেকে।অরুপ মোবাইল নিয়ে ভালো করে তাকিয়ে দেখলো না অত বয়স্ক তো লাগছে না! মেয়েটার কথা মনে হতেই দেখলো মেয়েটির গায়ে ছাই রংের ড্রেস আর বর্নণা ও মিলছে।অরুপ মেয়েটির পিছু নিয়ে নিল।
________________________________________
লেডিস ওয়াশরুমে ডুকেছে কথা।ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে ফোন দিল বাবার কাছে।
কথা-“হ্যালো, বাবা ইমিডিয়েটলি ফোর্সকে ইনফোর্ম করো!
তারা সবাই একসাথে মিটিং করছে।”
জাহিদ আফসারী-“তুমি চিন্তা করো না আমি লোক পাঠিয়েছি তারা সেখানে পৌছে গিয়েছে।তুমি বলো তারা কোথায় মিটিং করছে?”
কথা- “তিনতলায় উঠে ডানপাশে একটা অডিটোরিয়াম আছে সেখানে তাদের মিটিং চলছে। তারাতারি আসতে বল।’
জাহিদ আফসারী-” ওকে,মামনি! খোদা হাফেজ ভালো থেকো।সাবধানে থেকো।’
– কথা, বাবার সঙ্গে সব বলার পর পিছন ফিরেই আৎকে গেলো কারন অরুপ তার পিছনে দাড়ানো।কথা নিজেকে স্বাভাবিক করে অরুপকে উদ্দেশ্যে করে –
কথা-“একি আন্কেল আপনি এখানে লেডিস ওয়াশরুমে কেন জেন্ডস ওয়াশরুম ফেলে?”
অরুপ কথার হাত ধরে টান দিয়ে নিজের কাছে এনে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল-
“তোমায় দেখতে এসেছি সুন্দরী! এমন রুপ নিয়ে ঘায়েল করে দিলে বুকে!!”
চলবে।