নীল হতে নীলান্তে পর্ব-০৪

0
454

#নীল হতে নীলান্তে
#লেখিকাঃ তামান্না
চতুর্থ পর্ব

জাহিদ আফসারী- রাত অনেক হয়েছে, ঘুমিয়ে পর।
এরপর মিশন নিয়ে ভেবো।
পুর্বের স্মৃতি নিয়ে ভেঙ্গে পরোনা।
তোমার জীবন এখনো শুরু হয়নি। আরো পথ বাকি আছে পারি দেওয়ার!! একটা জিনিস মনে রেখো –

“পূর্বের স্মৃতি যে শুধু ব‍্যাথাতুর তা নয়, পূর্বের স্মৃতি ঘুরে দাড়ানোর স্মৃতি!”

“প্রত‍্যেকটা সময় তোমাকে মনে করিয়ে দিবে সামনে এগিয়ে যাবার কথা ” তাই সব সময় পুরোনো স্মৃতি নিয়ে কাদবে না!”

অর্নিতা বাবার কথা মন দিয়ে শুনছে, সত‍্যিই তো! ও যদি ওর পুরোনো বিষাদময় স্মৃতি নিয়ে ভেঙ্গে পরে তাহলে সামনে এগুবে কি করে? অর্নিতা কিছুক্ষন গভীর ভাবে ভেবে বাবাকে বলে উঠল- বাবা, কাল কি করতে হবে?

জাহিদ আফসারী- তেমন কিছুই না! এই কয়েকদিন তোমার তেমন কোন কাজ নেই,
আমি তোমার বদলির ব‍্যাবস্থা করে দিয়েছি, তাই তুমি ঢাকায় এসে এইকাজে যোগদান করেছো, এতদিন ছদ্মবেশে ছিলে তাই অফিসে তোমায় যেতে হয়নি।
তবে কাল থেকে অফিসে জয়েন দিবে।

অর্নিতা মাথা নাড়িয়ে সায় দিল।
_____________________________________

অরুপের বাবা-দুটো বছর! দুটো বছর গেলো তোমার ছেলে এই পেশায় যোগ দিয়েছে!
আমার কি নাই?
কি নাই আমার? বলতে পারো? হ‍্যা!! এতকিছু ফেলে তিনি যোগ দিবেন আর্মিতে,দেশের জন‍্য নিয়োজিত হবেন নিষেধ করেছি? আর্মিতে ডুকতে চেয়েছে আমি খুশিমনে ওকে ক‍্যাডেট এ ভর্তি করিয়েছি!
ইচ্ছে যখন ভর্তি হোক আর্মিতে খারাপ কি?
আমি নাহয় নিজের ব‍্যাবসা নিজে সামাল দিলাম।
কিন্ত কি করল উনি? গোয়েন্দা গিরি করবেন।
এখন বুঝ ঠেলা উনিশ থেকে বিশ হলেই জ্বালা!
ওর জুনিয়র! মেয়ে ওকে ফেলে সিনিয়র হয়ে যায়!

অরুপ – হয়নি এখনো!

অরুপের বাবা- হতে কতক্ষণ!

অরুপ – আমি কি জানতাম এমন হবে?

অরুপের বাবা- “চাপকে সিধে করে দেবো! ”
তোমাকে আমি বলেছি ব‍্যাবসা সামলা ও! একা আছো ভাই নেই বোন নেই! নিজের মত বাচো! তুমি কিনা বারবার আমার কথার অমান‍্য করো! কি হতো ওই সবে না জড়ালে?

অরূপের মা – আহ! কি শুরু করেছো? ছেলেটা এসে ঘরে বসতে ও পারেনা তুমি ওর সাথে শুরু করে দেও যাচ্ছে তাই! অরুপ তুই তোর রুমে যাতো!

অরুপ নিজের রুমে চলেগেল। লজ্জায় তার মাথা কাটা যাচ্ছে! নিজের জুনিয়র তার থেকে সিনিয়র হয়ে যাবে।
এইতো আর কয়েকমাস পরেই প্রমোশন বোর্ড বসবে।
এই লজ্জা কোথায় রাখবে। ভাবতেই তার মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো।
________________________________________

অর্নিতা আজ অফিসে যাচ্ছে, আজ তিনমাস চৌদ্দদিন পর সে এই অফিসে জয়েন দিতে আসলো।
গাড়ি থেকেই সে দেখতে পারছে অফিসের বহুতল বিল্ডিং এ লেখা অফিসের নাম । এসেই সে পুরো অফিস দেখতে লাগলো। অফিসের লোকজন তাকে বিভিন্ন বিষয়ে জানাতে লাগল।
এখানে অনেকগুলো সেক্টর আছে, আছে অনেক তথ‍্য।
অর্নিতা মূলত ক্রাইম কন্ট্রোল ও কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট এ তার প্রধান কাজ।
অর্নিতা অফিসের সব কাজ সম্পর্কে ধারনা নিয়েই গেলো।
অর্নিতার প্রথম জয়েনিং ছিল খুলনা। খুলনায় একবছর থাকার পর সে ঢাকায় চলে আসে।

ছোটবেলা থেকে এই পেশাকে সে খুব ভালোবাসতো।
এখনো তার খুব ভালো লাগে।
অফিসে আজ তাকে সম্মাননা দিয়েই শুরু হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
সম্মাননা পাওয়ার পর পরিচিতি পর্ব।
সবার সঙ্গে পরিচয় পর্ব খুব ভালোভাবে হলেও অরুপের সাথে তার তেমন একটা জমলো না।
কারন অরুপের মুখ দেখে সে যা বুঝলো অরুপ তাকে কল্পনাই করতে পারেনি এখানে।
অর্নিতা অরুপের আইডিকার্ডের দিকে খেয়াল করে দেখল অরুপের আইডি নাম্বার 12345 আর অর্নিতার 12352 অরুপ তার থেকে সিনিয়র। র‍্যাঙ্কে দুজন এক হলেও চাকরিতে সে জুনিয়র।
অর্নিতা ভেবেনিল এটাই হবে। তার উপর হয়তো এমনো হতে পারে কালকের ঘটনায় লজ্জায় মুখ দেখাতে পারছেনা।

অর্নিতা ভাবনার মাঝেই অরুপ সামনে এসে দাড়ালো তার।

অর্নিতা স‍্যালুট দিলো তাকে,
এবং সৌজন‍্যতার খাতিরে বলে উঠলো তাকে –

স‍্যার!কালকের রুড বিহেভের জন‍্য দুঃখিত।

অরুপ- ঠিক আছে, যেকোন মানুষের ভুল হওয়ার কথা।
ঠিক হয়ে যাবে।
তবে আরেকটু সাবধান হবেন আপনি।

অর্নিতা অরুপের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত ভালোভাবে পরখ করছে। তাকে সাবধানতা অবলম্বন করতে বলছে।
নিজেই এদিক দিয়ে পুরোপুরি ভাবে ভঙ্কুর।

অর্নিতা তার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলে চলে এলো।
_______________________________________

অফিসার- অর্নিতা আজ আপনার কাজ আছে।

অর্নিতা – জ্বি,স‍্যার বলুন।

অফিসার- আজ আপনাকে কমলাপুর রেইলস্টেশন যেতে হবে একটা চক্রের খোঁজ করতে।
আমাদের কাছে কয়েকজন নোটিশ পাঠিয়েছেন এ ব‍্যাপারে। তাদের আনাগোনা রাতেই নাকি বারে। তাই আমি চাই আপনি নিজে গিয়ে সে স্থান পরিদর্শন করুন।
আর শুনুন আপনার সঙ্গে যাবে অরুপ রহমান, জামিল, ফরহাদ!

অর্নিতা- জ্বি স‍্যার আমি প্রস্তুত!

অফিসার- ঠিক আছে, আপনারা সবাই তাহলে আজ যাবেন সেখানে।
_____________________________________

একটু আগেই এসেছে ওরা।
অরুপ একটা জ্বালমুড়ি ওয়ালা সেজেছে গায়ে পুরোনো ফতুয়া, লুঙ্গি বেশ দেখে চেনার উপায় নেই,
সঙ্গে জালমুড়ি ওয়ালার মত ঝুড়ি ও জালমুড়ি বানানোর জন‍্য মুড়ি ও মশলা নিয়ে সে হাজির। বোঝার উপায় নেই একটু আগে উনিফর্ম পরা একজন সুদর্শন যুবক ছিল সে।

অর্নিতা আছে পাগলীর ভেসে, খানিকটা পা বাকিয়ে, পেন্সিলে আকা জোড়া ভ্রু গুলো কুচকে জ্বীব বেড় করে হাসছে সে তো কখনো জোরে জোরে বলছে-
সব কটারে মাইরা ফেলমু!
গাইরা ফেলমু কবরে!
হাতে নিয়ে রেখেছে বিশাল লাঠি আর সঙ্গে তাবিজ কবজ! ছেড়া কাপড়ের অভাব নেই!

জামিল বুড়ো বেশে এক যায়গায় বসে আছে। পান খাচ্ছে আর বসে বসে সবাইকে দেখছে।

ফরহাদ ট্রেনের অপেক্ষায় বসে আছে ঘুরছে তো ঘুরছে
অপেক্ষা কখন সেই চক্র আসবে।

অর্নিতার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর একটা লোক অরুপকে এসে জিগ্যেস করল-

– ভাই এই মহিলা কি পাগল?

অরুপ- পাগলই তো মনে হয়,

লোকটি- আহারে কি সুন্দর!
এমন সুন্দর মহিলা পাগল ভেসে ঘুরে।

অর্নিতা তখন হাতের লাঠি দিয়ে ঠাস করে দুটো বারি দিল মাটিতে, সেই লোক সহ অরুপরা সবাই ভয় পেয়েগেল।

অরুপ- ভাই যান তো কাজের মধ‍্যে ডিস্টাব কইরেন না!
চ‍্যাতাইলে মাথায় বারি দিবো!!

লোকটি – উঠে চলে গেলো,
ফরহাদ অন‍্যদিকে উঠে হেসেদিলো ওদর কান্ড দেখে।
ফরহাদ এর চাকরি হয়েছে তিন সপ্তাহ হবে। একদম নতুন তাই ওদের মত এত প্রফেশনাল না।

অর্নিতা কিছুক্ষণ বসে রয়েছিল, তার নজরে পরল অনেকক্ষণ ধরে কিছু লোক একটা মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটি উঠে যাওয়ার পর লোকগুলো ও তার পিছু নিয়েছে। তারপর কি ভেবে সে উঠে পরল, এবং বলতে লাগলো – পাইয়া গেছি তোরে আমি পাইয়া গেছি তোরে!
তোর লগে আইজ আমি যামু তোর ঘরে!
অদ্ভুত কথাটি বলেই হাসতে হাসতে চলেগেলো সে।

অরুপ খেয়াল করলো অর্নিতা সত‍্যি সত‍্যি চলে যাচ্ছে।
এবং কিছুক্ষণের মধ‍্যেই অর্নিতা কোথায় যেন চলেগেল।
অরুপ কিছু বুঝে উঠার আগেই, বাসা থেকে ফোন এলো অনেকক্ষণ কথা বলার পর সে একটু নির্জন যায়গায় এসে ফোন হাতে নিলো অর্নিতাকে ফোন দেওয়ার জন‍্য। একসঙ্গে আসার সময় ফোন নাম্বার নিয়েছিল সে।
অর্নিতার ফোনে কল করার আগেই।

ঠিক তখনই ওয়াকি- টকিতে বেজে উঠলো অর্নিতার কন্ঠস্বর- স্টেশন থেকে একটু ভিতরে আসুন আপনারা! এই এরিয়ার জঙ্গল অনেক বেশি! জঙ্গলি ঘাস দিয়ে ভর্তি।
আমি এখানে কিছু দেখেছি!
প্লিজ আসুন তারতারি নাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।

অরুপ সঙ্গে সঙ্গে ফরহাদ আর জামিলকে ফোন করে জানিয়ে দিল।
তারাও তার সাথে চলে এলো।
অরুপ অর্নিতার ফোন এর জিপিএস ট্রেকার দিয়ে চলছে পিছু পিছু।
কিছুদূর যেতেই অর্নিতা কানে এলো একটি মেয়ের আর্তচিৎকার-

ছাইড়া দেন আমারে! ভাইজান পায়ে পরি আমনেগো ছাইড়া দেন! আমার পোলাপান ঘরে! আমার সর্বনাশ কইরেন না! আমনেরা ভাই হোন!

অর্নিতার চোখ বেয়ে জল ধারা বয়ে চলেছে।
অর্নিতার মনে হচ্ছে এতদিনের জমে রাখা ক্ষোভ সে আজ এই দিনে মিটাবে!

মেয়েটি গগন বিদারী চিৎকার করে উঠলো- আল্লাহ্ গো!
কেউ আমারে বাচান!

চলবে।