নীড়ভাঙ্গা ভালবাসা পর্ব-১৯+২০

0
415

#পর্ব_১৯
#নীড়ভাঙ্গা_ভালবাসা
#লেখকঃমুহাম্মদ_রাফি

পরেরদিন বাসায় ফেরার সময় পুচকোকে শুধু টাওয়েলে ঢেকে না নিয়ে একটা জামা পরিয়ে নিলে ভালো হবে বলে মা ব্যাগ ঘেটে সব জামা বের করে উচু করতেই আমি নীড়ের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে চেয়ে রইলাম,
– একদম ওভাবে তাকাবে না, আমি কি জানতাম নাকি ছেলে হবে!
– তাই বলে সবগুলোই মেয়েদের ফ্রক?
– সব তোমার দোষ৷ আমি মেয়ে চাই বলেই তুমি ষড়যন্ত্র করে আজকে আমাকে ছেলের বাপ বানাইছো। তোমাকে আমি মাফ করবো না৷
– এইটা কোনো কথা! আমি চাইলেই ছেলে হবে? আর কত সময় লাগবে তোমার যে ছেলে হয়েছে এটা মেনে নিতে?তুমি বিনা কারণে বাড়াবাড়ি করছো।

মা আমাদের ঝগড়া থামিয়ে দিয়ে পুচকোকে সুন্দর একটা ফ্রক পরিয়ে নিয়ে বের হয়ে গেলো। আর নীড় আমাকে আস্তে আস্তে ধরে নিয়ে এগোতে থাকলো৷ এর মাঝে দেখি সায়শা ছুটে এসে মায়ের কোল থেকে পুচকোকে কোলে নিলো। আর নাবিল পাশ থেকে বলে উঠলো,
– কিরে মামা, তোর মেয়েতো হেব্বি দেখতে হয়েছে! কিন্তু কাল রাতে কাঁদতে কাঁদতে বললি কেনো ছেলে হয়েছে?
নীড় দাতে দাত চেপে বললো,
– ওকে দেখে তোর মেয়ে মনে হচ্ছে?
– মেয়ে ছাড়া কি এইডা! কি সুন্দর, কিউট!

আমি এবার রাগী চোখে নীড়ের দিকে তাকালাম। আজ বেয়াক্কলটার বলদামির কারণেই আমার ছেলেটাকে সবাই মেয়ে ভাবছে৷ আর আমার মাও নাতির মাথায় পিংক কালারের হেয়ারব্যান্ড লাগায় যেটুকু বাকি ছিলো সে ষোলোকলাও পূর্ণ করেছে৷ দেকলে যে কেউই মেয়ে ভাববে৷ নীড় এবার রেগে বলে উঠলো,
– এই ও একটা ছেলে। তোর মেয়ে কেন মনে হচ্ছে?
– মজা নাও আমার সাথে না মামা?
নীড়ের সিরিয়াস চাহ্নি দেখে ও আবার বলে উঠলো,
-সত্যিই কি তোর ছেলে হয়েছে?? দাড়া মেশিন পত্তর চেক করে দেখি তো!
নাবিল আমার পুচকোর ডায়াপার চেক করার জন্য হাত বাড়াতেই নীড় মস্ত জোরে এক থাপ্পড় দিয়ে হাত সরায় বললো,
– এই তুই আমার ছেলের প্রাইভেট পার্টসে হাত দিচ্ছিস কেনো?
– চেক করবো না?
– কেনো চেক করে কি করবি?
– তোর ছেলেকে মেয়ে দেওয়া যাবে কিনা সেটা চেক করে দেখতে হবে না? আমার হবু মেয়েকে তো আর গাঙের জলে ভাসিয়ে দেবো না!
– তোর মেয়ে যদি তোর বউয়ের মতো খচ্চর হয় তাহলে ডিল ক্যান্সেল।
– এই ছেলেকে কিন্তু আমি নিয়ে যাবো এখনই ঘর জামাই করার জন্য বেশি কথা বাড়ালে।
– চুপ! আমার ছেলেকে ছাড় তুই। সায়শা তুই ওকে নিয়ে গাড়িতে যেয়ে বস আমি পাখিকে নিয়ে আসছি পিছনে।
নাবিল আর সায়শা বাবুকে নিয়ে সামনে যাচ্ছে আর আমরা পিছন থেকে দেখছি বেশ কয়েকজন ওদের দুজনকে মেয়ে হওয়ার জন্য কনগ্রাচুলেট করছে।
– খুব কি দরকার ছিলো আমার ছেলেটাকে মেয়ে বাননোর? আমি যে কাপড়গুলো কিনেছিলাম তার থেকে কি একটা সেট আনা যেতো না?
– আমি কিভাবে বুঝবো যে ছেলে হবে?
– এক্সাক্টলি! তোমার তো বোঝার কথা না যে ছেলে হবে না মেয়ে হবে! এইজন্যই তো আমি জেন্ডার নিউট্রাল ড্রেসগুলো কিনলাম। তা না আমার জলজ্যান্ত ছেলেটাকে আজ তোমার জন্য সবার কাছে মেয়ে সাজিয়ে বাসায় নিতে হচ্ছে৷
– রাগ করছো কেনো? its not a big deal.
– আমি জানি বড় বিষয় না কিন্তু তুমি কেনো এমন করো? একটু বুদ্ধি খাটাতে কি সমস্যা?
– বাদ দিবা তুমি? এমনিতেই আমার মাথা গরম।
– কেনো? ছেলে হওয়ার শোক এখনও পাসর হচ্ছে না তোমার?
– না।
– এইজন্যই ছেলেকে একবারও ছুঁয়ে দেখোনি?

তার চুপ করে থাকা দেখে আমার কান্না চলে এলো। ছেলে হয়েছে তাই বলে নিজের বাচ্চাকে কোলে নিবে না, ছুঁয়ে দেখবে না!
– তুমি একবারও আমার ছেলের কাছে ঘেষবা না বলে দিচ্ছি। আমি ওকে নিয়ে এখন সোজা বাপের বাড়ি যাবো৷
– আমার ছেলে কোথাও যাবে না ওর নিজের বাড়ি ছেড়ে!
তারপর মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো,
– আমি এতো ছোটো বেবি কিভাবে নিতে হয় জানিনা। ওকে নিতে গেলেই যদি পড়ে যায় সেই ভয়ে নিচ্ছি না৷ তুমি এতো ওভার রিয়্যাক্ট করো না প্লিজ।

আমার সত্যিই খুব কষ্ট লাগলো ওর রেসপন্স দেখে৷ কারণ মেয়ের জন্য ওর যে উচ্ছাস ছিলো ছেলের জন্য তার ছিটেফোটাও দেখছি না। কালরাতে হসপিটালেও ছিলো না। জরুরী কাজের কথা বলে চলে গিয়েছিলো৷ আজ যদি ওর মেয়ে হতো তাহলে কি পারতো এমন করতে? ও এমন কেনো করছে বুঝতে পারছিনা। ছেলেকে কোলে নেওয়া তো দূরে থাক তাকিয়ে একবার হাসলো ও না। ইনফ্যাক্ট কাল থেকে তাকে আমি হাসতেও দেখিনি। থাক লাগবে না ওর আদর আমার ছেলের৷
বাসায় আসার পরও সবাই পুচকোকে নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও তার বাপের তাকে নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই।

এভাবেই ৬দিন কেটে গেলো। আজ পুচকোর আকিকা হবে তারপর মা ঐ বাসায় চলে যাবে৷ আজ প্রথম নীড় ওর ছেলেকে কোলে নিলো। ও নিজেই ছেলের নাম রাখল, ” আহিয়ান চৌধুরী নাফি”। আর সত্যি ছেলে বাপের কোলে যেয়ে সেই যে আরামের ঘুম দিছে যতক্ষণ ছিলো তার ঘুম কিছুতেই ভাঙলো না৷ মা চলে যাওয়ার আগে আমাকে কিভাবে কি করতে হবে বুঝিয়ে দিয়ে গেলো। আমার এত শান্ত বাচ্চা হওয়ার পরও যে বাচ্চা সামলানো কত কষ্টের তা এতদিন মা ছিলো বলে বুঝিনি৷ আর নাফির তো মিনিটে মিনিটে খাওয়া লাগে৷ এই ছাড়া আমার ছেলে নিয়ে আর কোনো ঝামেলা নেই৷

আমি রুমে বসে ছেলেকে খাওয়াচ্ছি এমন সময় নীড় এসে আমাদের দুজনকে একসাথে জড়িয়ে ধরলো৷
– কি হচ্ছে এইসব? দেখছো না খাচ্ছে?
– তো আমি কি ওকে খেতে মানা করছি?
– চাপ লাগছে ওর তুমি একটু সরে বসো।
– না আমার ছেলেকে ধরে রাখতে মন চাচ্ছে।
– কার জানি ছেলে হয়েছে বলে মন খারাপ ছিলো?
– মাইন্ড সেটাপ হওয়ার টাইম দিবা তো!
– একটু কোলে নিয়েই টান চলে আসছে?
– তা আসবে না! He is my boy.ok??
-তা এই ৭দিন কি অন্যকারো ছেলে ছিলো?
-তা না৷ কিনৃতু আসলে কোলে নেওয়ার পর থেকে অন্যরকম ফিল হচ্ছে।
-তাই?
ও আমার কোমরের ফাক দিয়ে নাফির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,
-হ্যা। ও একদম আমার mini-me হয়েছে তুমি খেয়াল করেছো সেটা? সবকষ্ট তুমি করেছো কিন্তু আসল জিতটা আমারই হয়েছে।
-তুমি কি জানো মেয়েরা এমন হারতে সবচেয়ে বেশি খুশী হয়?
দুষ্টু হাসি দিয়ে বললো,
-তাই বুঝি! কিন্তু আমার যে একটা তোমার mini-me ও লাগবে!
– সম্ভব না। পরে ভেবে দেখবো।
– কোনো ভাবাভাবি নেই। আমার মেয়ে লাগবে ব্যাস।
– শখ কত!

চলবে???

#পর্ব_২০
#নীড়ভাঙ্গা_ভালবাসা
#লেখকঃমুহাম্মদ_রাফি

নাফির বয়স যখন ১ মাসে পড়লো তখন আমার লেকচারারের জয়েনিং ছিলো। বাসার কাছাকাছি হওয়াতে আমি স্যারদের সবাইকে বলে শুধু ক্লাসটাইমে যেয়ে ক্লাস করাতাম। রহিমাকে সাথে নিয়ে যেতাম, ৪০ মিনিটের ক্লাসটুকু ও আমার রুমেই নাফিকে রাখত। যদিও ছেলে আমার বড্ড শান্ত। মায়ের ক্লাসের সময় ম্যাক্সিমাম টাইমই সে ঘুমিয়ে থাকে। মাঝেমাঝে আমরা ওর আব্বুর অফিসেও যাই লাঞ্চের সময়। নীড় এখন আস্তে আস্তে মেয়ে হওয়ার শোক কাটিয়ে উঠছে। যদিও ছেলে বলতে পাগল বলতে যা বোঝায় এখনও তার মধ্যে তেমন লক্ষণ নেই।

ফারাহ্ আমাদের বাসা থেকেই ক্লাস করে। আমার শাশুড়ী ওর বিয়ের জন্য উঠেপড়ে লাগছে। ওর যেহেতু রিলেশন ছিলো তাই আমি নিজে ওকে জিজ্ঞেস করলাম বাসায় কেনো জানাচ্ছে না ওর পছন্দের ব্যাপারে! ও বললো,
– ভাবি সবাই তোমার মতো লাকি হয়না। অনেক ছেলেই আছে শুধু প্রেমই করতে চায় বিয়ে করতে চায় না৷ তাই বসে থেকে কি করবো, সবাই যখন বিয়ে দিতে চায় আমিও বিয়েটা করে ফেলবো।
– ছেলেটা কি প্লেবয়? প্রেম করার সময় বোঝোনি?
– না তেমন না। ছেলে ভালোই কিন্তু ভীতুর ডিম। বাসায় জানাতে পারবে না।
– কেনো?
– পড়াশুনা শেষ হয়নি বাপ মা কে কোন মুখে জানাবে! তাই আমাকে বলেছে ভালো ছেলে পেলে বিয়ে করে নিতে। সে আমার যোগ্য না, হেনতেন অনেক কথা। তুমি তো জানোই ছেলেরা পিছু ছাড়ানোর জন্য কতকিছু বলে!
– তোমার ভাইয়াও একটা সময় এমন বলেই আমাকে ছেড়ে দিয়েছিলো।
– বাট ফাইনালি তো সে তোমাকে অন্যকারো হতে দেয়নি!
– তাইতো অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, একটু টাইম নাও। ছেলেরা বেকার থাকলে ওমন বলে তাই বলে রাগের বশে ভালবাসার মানুষের হাত ছেড়ো না।
– না ভাবি, এখন সে আসলেও আমি আর তাকে accept করবো না৷ তুমি ভাইয়ার খারাপ সবকিছু মেনে নিলেও আমি তোমার মতো দয়ালু না। যে ছেলে মুখ দিয়ে বের করতে পারে যে আমি যেনো অন্যছেলেকে বিয়ে করে নেই। তার সাথে আমার সব শেষ।

আমি ফারাহ্কে বোঝাতে ব্যর্থ হলাম। তাই আর কথা বাড়ালাম না৷ এরমধ্যে ফারাহকে দেখে একটা ছেলের খুব পছন্দ হলো। আব্বুর বিজনেস পার্টনারের ছেলে। নিজেদের অনেকধরনের ব্যবসা আছে৷ দেখতে শুনতেও খুব স্মার্ট। তাই বাসা থেকেও আর কেউ অমত করনি। নীড়ই শুধু বারবার ফারাহ্কে বলছিলো যে লেখাপড়া শেষ করা পর্যন্ত ওয়েট করতে। কিন্তু ফারাহর এককথা বাসার সবাই রাজি so ওর কোনো আপত্তি নেই এই বিয়েতে। আমিও ফারাহ্কে অনেক বুঝালাম যে জেদের বসে বিয়েটা না করতে৷ কিন্তু ও আমার এবং নীড়ের কারো কোনো কথাই শুনলো না৷ বিয়ের পাকা কথা হয়ে গেলো। এখন engagement করে রাখবে৷ ফারাহর সেমিস্টার ফাইনাল শেষে বিয়ে।
ফারাহর engagement এরদিন রান্নাঘরে সব জোগাড়যন্ত্র করছি। সন্ধ্যায় সব গেস্ট আসবে৷ এমন সময় হন্তদন্ত হয়ে কোথা থেকে তান এসে আমাকে হাত ধরে টানতে টানতে আমাদের বেডরুমে নিয়ে দরজা লাগায় দিয়ে হুট করে আমার পা জড়ায় ধরে হাউমাউ করে কান্না করতে থাকলো। ওর কান্না শুনে নাফির ঘুম ভেঙে গেলো৷ দুই মামা ভাগ্নে একসাথে কান্না করতে থাকলো। কাকে রেখে কাকে ধরবো! হাজার হোক, তান আমার baby brother. প্রথমে তো আমি ওর মা তারপর তো নাফি। কি যে করি! ২ টাই হুদাই কানতেছে। একটারও কান্নার কারণ আমি জানিনা।
তানকে পা ছাড়ায় কোনো রকমে বিছানার উপর বসায়, নাফিকে কোলে নিয়ে কান্না থামাতে থামাতে বললাম,
– কি হলো? বাবা কিছু বলেছে? পরীক্ষায় ফেল করছিস?
– তার থেকেও বড়কিছু।
– কি আমাকে বল? না বললে আমি জানবো কিভাবে?
– আপুনি তুই আমার শেষ ভরসা, বল তুই আমার হেল্প করবি?
– আগে সমস্যা বল।
– না আমার কসম খা, যেভাবেই হোক আমাকে হেল্প করবি বলো!
ছেলেও কান্না থামায় না যতক্ষণ মামা ঘ্যানঘ্যান বন্ধ না করছে তাই বাধ্য হয়ে রাজি হলাম। তারপর বললো,
– আমার গার্লফ্রেন্ডের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে যে করেই হোক তোকে আটকাতে হবে।
– আমি কিভাবে আটকাবো?
– কিভাবে আটকাবি আমি জানিনা, তোকে আটকাতেই হবে।
– তা তোকে যে মেয়ে বাদ দিয়ে অন্য ছেলেকে বিয়ে করতে রাজি হয় সে মেয়ে নিয়ে কিভাবে সংসার করবি?
– দোষ আমার, ও আমার অনেক হাতেপায়ে ধরছিলো। আমি তখন পাত্তা দেইনি। কিন্তু গত ১মাস ধরে সে আমার সাথে সবরকম যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। আমি অনেকবার মাফ চাইছি কিন্তু সে মাফও করেনা।
– তোর কাহিনিটা কেমন জানি পরিচিত পরিচিত মনে হচ্ছে। মেয়েকে কি আমি চিনি?

তান আর কোনো কথা বলে না দেখে আমি একহাতে ওর কান ধরে বললাম,
– অনেক শেয়ানা হয়ে গেছো? আমার কানের নিচে আমার ননদের সাথে প্রেম করো তুমি?
– ভুল হয়ে গেছে তোকে জানিয়ে করা উচিত ছিলো।
– এই তোর গাল টিপলে দুধ বের হয়, তোর কিসের প্রেম?
– তুই কি তাহলে মায়ের পেটে থাকতে প্রেম করছিস ভাইয়ার সাথে?
– আমি আর তুই?
– কেনো! আমি প্রেম করতে পারিনা?
– পারিস। বাট ফারাহ্! তুই বুঝতে পারছিস নীড় আমাকে কি করবে?
– ভাইয়া অনেক আগে থেকেই জানে।
– মানে?
– তোমার শেয়ানা বর তোমাকে এই কথা জানায়? তোমার থেকে এমন কতকিছু লুকায়!
– দাড়া আজ বাসায় আসুক তার একদিন কি আমার একদিন। কথা দিয়েছিলো যে আর কিছু লুকাবে না। ধর তো নাফিকে। এখনই খবর করছি ওর।
– আপুনি প্লিজ তোদের দাম্পত্য কলহ পরে দেখিস যে করেই হোক আজ ফারাহর engagement টা ভাঙতে হবে।
– প্রেম তুমি করছো যা করার তুমি করো। আমি তোমাদের সাতেও নেই পাচেও নেই।
আবার পা জড়ায় ধরে ন্যাকা কান্না শুরু করতেই আমি গলে গেলাম। নিজে থেকেই তানকে নিয়ে ফারাহকে বোঝানোর অনেক চেষ্টা করলাম কিন্তু ও কোনোভাবেই আমাদের কারো কোনো কথা শুনতে চায় না৷ ভীষণ জেদি মেয়ে।

আমাদের রুমে এসে অনেক চিন্তা ভাবনা করে শেষমেষ আমি একটা evil plan বের করলাম। তারপর নীড়কে বাসায় আসার সময় দরকারি কিছু জিনিস আনতে মেসেজ করলাম। তানকে কান্নাকাটি থামাতে বললাম। আমার উপর বিশ্বাস রাখতে বললাম। নীড় বাসায় ফিরে জিনিসগুলো আমার হাতে দিলে আমি নাফিকে শোয়ায় রেখে নীড় আর তানকে নিয়ে আবার ফারাহর রুমে গেলাম। মেয়েটাও কেঁদে কেটে চোখ ফুলায় বসে আছে৷ কিন্তু আমার ভাই হয়তো এমন কিছু বলছে যে ওকে কোনোভাবেই মাফ করতে পারছেনা। কিন্তু জেদের কারণে ওদের ভালবাসা হারিয়ে যেতে দেওয়া কি ঠিক! আজ নাহয় কাল ওদের ভুল বোঝাবোঝি মিটে যাবে কিন্তু একবার অন্যকারো সাথে জড়িয়ে গেলে কি করে জীবন কাটাবে ওরা! ৩ টা জীবন তো ধ্বংস হতে দেওয়া যায় না৷ চোখের জল মুছতে মুছতে ফারাহ্ বললো,
– ভাবি প্লিজ আমাকে তোমরা আর ডিস্টার্ব করোনা৷ আমি তোমার ভাইয়ের কোনো কথাই শুনবো না।
– কিছু বলতে আসিনি, করতে এসেছি আমরা৷
বলেই ওর মুখে ক্লোরোফর্ম মাখানো রুমালটা চেপে ধরতেই ও জ্ঞান হারালে তান আর নীড় হতভম্ব হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো। কিছুসময় পর দুজন ধাতস্থ হলে নীড় বললো,
– ও তান! এই আমার ভোলাভালা বউটা কবে থেকে দস্যুরানি হয়ে গেলো???

চলবে???