নীড়ভাঙ্গা ভালবাসা পর্ব-১৫+১৬

0
286

#পর্ব_১৫
#নীড়ভাঙ্গা_ভালবাসা
#লেখকঃমুহাম্মদ_রাফি

নীড় (POV= Point of View)

আমি জানি সোনাপাখি তুমি অনেক অভিমান করে আছো আমার উপর কিন্তু শুধু আজ রাতটুকু ওয়েট করো। আজকের কাজটুকু শেষ করে সকালেই তোমাকে সারপ্রাইজটা দিয়ে দেবো৷ আর অপেক্ষা করাবো না তোমাকে। আমি জানিতো, আমার সোনা অন্যমেয়ের সাথে আমার সামান্য কথা বলাই সহ্য করতে পারে না সেখানে ফারাহ্ যতই আমার বোন হোক না কেনো তার সাথে একয়দিন এতো ওঠাবসা দেখে আমার লাজুক বউটার যে গা জ্বলে যাচ্ছে। তারপর নানী, ফারাহর যে ছোটোবেলায় আমার প্রতি উইকনেস ছিলো সেটাও আমার বউয়ের কানে দিয়ে গেছে। ৮-১০ বছর বয়সের একটা বাচ্চা মেয়ে একটু আধটু ক্রাশ খায় বড় ছেলে দেখলে সেটা নানী আমার বউটাকে এমনভাবে ইনিয়ে বিনিয়ে বলেছে যে বেচারি ফারাহ্কে ২ চোখেই আর দেখতে পারছে না৷ কিন্তু ফারাহ্কে যে তোমার মেনে নিতে হবে সোনা, ও যে তোমার খুব কাছের একজনের সাথে জড়িয়ে আছে। ওদেরকে সেফ রাখার জন্য যে আমি অনেক স্যাক্রিফাইস করেছি৷ তোমার সাথেও অনেক কিছু শেয়ার করতে পারিনি তুমি প্রেগন্যান্ট বলে। আমি আমার বাচ্চার হেলথ্ এর রিস্ক নিতে পারবো না।

আজকের পর আর তোমার বরকে ফারাহর সাথে দেখা লাগবে না। আমাদের বেবিটা হতে দাও, যার জিনিস তাকেই দিয়ে দেবো। তুমি না চাইলে আমি আর কোনো মেয়ের সাথে কথাই বলবো না দেখো। তুমি যা চাও তাই হবে।

পাখির মাথায় হাত বুলায় ওকে ঘুম পাড়াতে পাড়াতে যখন বুঝলাম ওর ঘুম গাঢ় হয়ে গেছে তখন ঘড়িতে ২.৩০ বাজে। আজ একটু লেট হয়ে গেলো কিন্তু ব্যাপার না অল্প একটু কাজ বাকি আছে৷ আম্মু আর ফারাহ্ জেগে আছে কিনা দেখি, নইলে একাই শেষ করে ফেলবো। ফারাহ্ ইন্টেরিয়র ডিজাইনে অনেক ভালো। তাই আমার আর্কিটেক্ট ফ্রেন্ডের সাথে মিলে ওর হেল্পে একটা নার্সারির ডিজাইন সিলেক্ট করছিলাম। তারপর সে অনুযায়ি আমাদের বেডরুমের পাশের রুমটাকে নার্সারিতে কনভার্ট করছি। আম্মু আর ফারাহ্ অনেক হেল্প করেছে একয়দিন। এটা করতেই অফিস থেকে এসে আম্মুর রুমে বসে আমরা ৩জন মিলে কাজ আগায় রাখি৷ কারণ পাখি আম্মুর রুমে কখনো যাবে না সেটা আমরা সবাই জানি৷ তারপর রাতে পাখি ঘুমায় গেলে আমরা ৩ জন মিলে একটা একটা করে জিনিস দিয়ে ঘরটাকে সাজাচ্ছি।

মেইনলি ওরা সাজাচ্ছে আমি রং করছি। ফারাহ্ আবার আমার রং করার পর চাঁদ, তারা, প্রজাপতি বানিয়ে ডিজাইন করছে। যতটুকু কমপ্লিট হয়েছে এত অস্থির লাগছে বলে বোঝাতে পারবো না৷ ঢুকেই একটা ইজিচেয়ার আর তার পাশে একটা crib রাখা। চেয়ারে বসে বাচ্চাকে ফিড করিয়ে খুব সহজেই crib এ শুইয়ে দিতে পারবে পাখি। জানলার পাশে বাচ্চার একটা ওয়ারড্রবে এযাবতকাল বাচ্চার জন্য কেনা সব কাপড় চোপড় গুছিয়ে রাখা। ডায়পার চেঞ্জ করার জন্য একটা চেঞ্জিং টেবিল, playpen এ শ খানেক খেলনা ছাড়াও নাম না জানা ফা্র্নিচারে ঘরটা সাজিয়েছি। baby blue কালারের মাঝে pale yellow কালারের চাদ, তারা, প্রজাপতিতে ঘরটা পুরাই disney world মনে হচ্ছে। নাহিয়ান চোধুরী নীড়ের first born এর রুম বলে কথা৷ একটু স্পেশালিটি তো থাকবেই।

আমার সোনাপাখিকে আমি বউ হিসাবে তার প্রাপ্য সম্মান দিয়ে লোক জানিয়ে ঘরে তুলতে পারিনি কিন্তু আমার বাচ্চা যেন প্রথমদিন থেকেই বুঝতে পারে, she was very much welcomed at her home. তার আব্বু সে কনসিভড হওয়ার পর থেকেই তার সাথে meet করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। সে তো জানেই না তার জন্য শুধু তার আম্মু না তার আব্বুও কি পরিমাণ স্যাক্রিফাইস করেছে। তার আব্বুর একমাত্র বউটাকে তার সাথে শেয়ার করছে যা কখনো সে কল্পনাও করতে পারত না। অথচ সেই ছোট্ট মানুষটার জন্য আমি কতদিন আমার বউটাকে মন ভরে আদর করতে পারিনা৷ কতরাত আমি জেগে থেকে আদর করে তার লাফালাফি ঠান্ডা করি যেনো তার আম্মু একটু ঘুমাতে পারে৷ আচ্ছা আমি কি এতো দুষ্টু ছিলাম! পাখিতো খুবই নরম শরম, আমার বাচ্চা এই দুষ্টু স্বভাব আমার থেকেই পেয়েছে আমি নিশ্চিত। তুমি যতো দুষ্টুই হও তোমাকে কেউ তোমার দুষ্টুমির জন্য বকবে না৷ আমার আব্বু আমাদের প্রটেক্ট করেনি কিন্তু তোমার আব্বু সারাজীবন তোমাকে প্রটেক্ট করবে। ভাবতে ভাবতে আমি পাখির পেটটা বের করে একটা চুমু খেলাম। এই মেয়েটা এতো ঘুমকাতুরে! রাতে ওর সাথে যাই করি কোনোকিছুতেই ওর ঘুম ভাঙে না৷ ওর ঘুমের সুযোগ নিয়ে যে ওর কতো ফায়দা লুটেছি ও জানলে আমাকে পিটাবে, ভেবে হাসতে হাসতে বের হয়ে গেলাম৷

আমি প্রথমে আম্মুকে ডেকে তারপর ফারাহর রুমে যেয়ে দেখি সে ফোনে প্রেম করায় মশগুল। ওকে বললাম,
– পরে কথা বলিস। এখন আয়, বেশি টাইম থাকতে পারবো না৷ পাখি খুব সন্দেহ করছে আজকাল। ঘুম ভেঙে আমাকে না দেখতে পেলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।
– তুমি আজও ভাবিকে জানালে না! ভাইয়া আমার না মনে হচ্ছে তোমার উচিত হচ্ছেনা ভাবিকে না জানিয়ে রাতে সারপ্রাইজ প্লানের কাজ করাটা।
– আরে ও অনেক চালাক। অন্য কোনো সময় ঐ রুমে কাজ করতে দেখলেই ও সারপ্রাইজটা মাটি করে দেবে। ইংলিশ নভেল পড়তে পড়তে তার শুধু ইংরেজদের জিনিসই পছন্দ। সে সারাদিন আমাকে বেবিদের এটা ওটার ছবি পাঠাবে, বেবি নার্সারির থিম পাঠাবে। জানিসতো ওর খুব শখ একটা বেবি নার্সারির। দেখিস কত্তো খুশি হবে তোর ভাবি। আর আম্মু তো বলেছেই যদি তোর ভাবি ধরে ফেলে সে সামলে নিবে। ভাগ্যিস আম্মু রাতে কজ করার প্ল্যানটা করেছিলে নইলে আমার বাচৃচার নার্সারিটাই তৈরি করতে পারতাম না। কথা না বাড়িয়ে লাস্ট ফিনিশিং দিতে হবে চল্।
– তুমি ফুপিকে এতো বিশ্বাস করছো এখনো? আমার কিন্তু কেন জানি ভয় লাগছে৷
– আম্মুর নাতি হবে সেই খুশিতে সে ভালো হয়ে গেছে। দেখিস না তোর ভাবিকে এখন কতো আদর করে!
– ভালো হলেই ভালো।

আমরা ৩ জন মিলে যার যার কাজ করতে থাকলে কিছুক্ষণ পর দরজায় একটা নক হলে আমি আম্মুকে বললাম একটু দেখতে। কিন্তু আম্মু বললো,
– তোমার আব্বু হবে হয়তো। তুমি একটু দরজাটা খোলো আমি ওয়াশরুমে যেয়ে আসি।
আমি দরজা খুলে পাখিকে দেখেই চমকে উঠলাম। খাইছেরে, এখন সব ছেড়াভেড়া অবস্থায় দেখলে আমার এতেদিনের কষ্ট সব মাটি হয়ে যাবে। নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে হেসে দরজা খুলে বাইরে এসে দরজাটা লাগিয়ে দিলাম যাতে ও দেখতে না পারে। তারপর ওকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে যেইনা বেডরুমের দিকে আগাবো অমনি ফারাহ্টা ভেতর থেকে ডাক দিলো। আর আমার গোয়েন্দা রানি আমাকে ছুটা দিয়ে দরজা খুলে ফারাহ্কে দেখেই ফ্রিজড হয়ে গেলো। ধ্যাত, যা খারাপ ভাবার ভেবে ফেলছে পাখি৷ আম্মুরও এইসময় বাথরুমে যাওয়া লাগলো!

calm down নীড় বলতে বলতে আমি পাখিকে ধরে বার বার বোঝাতে লাগলাম, baby, তুমি যা ভাবছো সেরকম কিছুই না৷ I’m sorry, আমি তোমাকে কিছু জানাতে চাইনি কমপ্লিট হওয়ার আগে৷ প্লিজ ভুল বুঝোনা আমাকে! কিন্তু আমার কোনো কথা ওর কানে ঢুকছে বলে আমার মনে হয়না৷ হঠাৎ করে ও গা ভরে বমি করে দিলে, ফারাহ্ চিত্কার করে ওর কাছে এগিয়ে আসলো, আম্মুও বাথরুম থেকে ততক্ষণে বেরিয়ে এসেছে। কিন্তু আমার প্রাণপাখিটা ততক্ষণে অজ্ঞান হয়ে আমার গায়ে ঢলে পড়েছে।

ভয়ে আমার হাত পা অসাড় হয়ে পড়তে লাগলো৷ আমি একটানে পাখির শাড়িটা খুলে বমি পরিষ্কার করে ওকে কোলে তুলে নিলাম। ফারাহ্কে বললাম তানকে ফোন দিতে আর আম্মুকে বললাম ড্রাইভারকে ফোন দিয়ে উঠাতে। আমি ড্রাইভ করতে পারবো না এই অবস্থায়। বেডরুমে যেয়ে কোনোরকমে পাখির গায়ে একটা শাড়ি পেচিয়ে নিচে নামতেই দেখি ড্রাইভার গাড়ি বের করেছে আর ফারাহ্ও সাথে যাওয়ার জন্য রেডি৷ আমরা গাড়িতে উঠতেই ফারাহ্ পাখির অবস্থা দেখে রীতিমতো কান্না করছে৷ আর বলছে,

– ভাইয়া ভাবির কিছু হবে নাতো! আমি নিজেকে মাফ করতে পারবো না৷ আমি যদি তোমাকে তখন না ডাকতাম ভাবি এইরুমে ঢুকতো না, আর আমাকে দেখে কিছু না বুঝেই ওভাবে রিয়্যাক্ট করতো না৷ ভাইয়া বেবির কিছু হবে নাতো!

– তুই থামবি প্লিজ। প্লিজ একটু চুপ কর।
গলা ধরে আসতে লাগলো আমার। হঠাৎ খেয়াল করলাম আমার সাদা টিশার্টে হালকা রক্তের ছোপ। আল্লাহ আমার বাচ্চার যেনো কোনো ক্ষতি নাহয়। চোখ ২টা জ্বলতে লাগলো। হয়তো কয়েক ফোঁটা নোনাজলও বেয়ে পড়েছে তাইতো ফারাহ্ বলে উঠলো,
– ভাইয়া শক্ত হও প্লিজ৷ ফুপি আর ফুবা পিছনের গাড়িতে আসতেছে।
– হুম।
আমি কিছুই ভাবার মুডে নেই। আল্লাহ্ আমার বউ বাচ্চা সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে আসলে,আমি আর কখনো আমার বউয়ের থেকে কিছু লুকাবো না। সারপ্রাইজের প্ল্যানতো করবোই না, I promise. আল্লাহ তুমি যে সাজা দাও আমি মাথা পেতে নেবো শুধু আমার বউ আর বাচ্চার কোনো ক্ষতি যেনো না হয়।

১৫ মিনিটের মাথায় আমরা সিটি মেডিকেল পৌঁছে পাখির গাইনোকলজিস্টের রেফারেন্সে কেবিন বুকিং নিয়ে ওর ট্রিটমেন্ট শুরু করা হলো। আমি আর ফারাহ্ ওয়েটিং এরিয়াতে বসতেই দেখি আব্বু, আম্মু, তান, বাবা, মা সবাই একসাথে আসতেছে৷ তান তো আমাকে দেখে কান্না করতে করতে বললো,
– ভাইয়া, আপুনির কি হয়েছে? ডাক্তার কি বলছে? বেবি ঠিক আছে?
সবার একই প্রশ্ন আমাকে কুড়ে কুড়ে খেতে লাগলো। আমি বাবা হিসেবেও নিজেকে ব্যর্থ প্রুভ করলাম।

চলবে???

#পর্ব_১৬
#নীড়ভাঙ্গা_ভালবাসা
#লেখকঃমুহাম্মদ_রাফি

# নীড় (POV= Point of View)

– মিসেস পারখা নাহিয়ানের ফ্যামিলির লোক কি আপনারা?

কতক্ষণ ওয়েটিং এরিয়াতে বসে ছিলাম জানিনা। হঠাৎ নার্সের মুখে পাখির অফিসিয়াল নাম শুনে আমি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলাম৷ কি রেসপন্স করবো বুঝতে পারছিলাম না। আমার সিচুয়েশন বুঝে তান হাত ধরে টেনে উঠিয়ে নার্সের প্রশ্নের উত্তরে বললো,
– হ্যা। আমরাই তার ফ্যামিলির লোক। ইনি ওনার স্বামী। আর আমি ওনার ছোটো ভাই। Any problem sister?
– ওনার হাজবেন্ড একটু আসুন আমার সাথে প্লিজ। গাইনোকলজিস্টের সাথে দেখা করতে হবে।

আমার বেহাল অবস্থা দেখে তান নার্সকে রিকুয়েস্ট করে আমার সাথে ডাক্তারের চেম্বারে গেলো। সত্যিই এখন আমার যেরকম মানসিক অবস্থা তাতে ডাক্তারের কোনো কথা আমার কানে ঢুকবে বলে মনে হয়না৷ ডাক্তার আমাদের দেখে বসতে বলেন।

– দেখুন, এতদিন ওনার প্রেগনেন্সিটা নর্মাল থাকলেও আজকের accident টা বাচ্চার উপর খুব খারাপ ইফেক্ট ফেলেছে। আমি এখনই কোনো আশা দিতে পারছি না তবে চেকাপ করে যেটুকু বুঝলাম তাতে বাচ্চাটা হয়তো আমরা সেভ করতে পারবো। ওনার preterm rupture of membrens যেটাকে আমরা সংক্ষেপে PROM বলে থাকি সেটা হয়েছে। এটা নর্মালি ১০% প্রেগনেন্সিতে হয়। বেশি লিকুইড বের হয়নি বলেই বাচ্চার খুব একটা সমস্যা হয়নি। কিন্তু বাচ্চাটাকে ডেলিভারির আগ পর্যন্ত গর্ভে ধরে রাখতে ওর মাকে অনেক কষ্ট করতে হবে। সামান্য ত্রুটি হলে আমাদের আর কিছুই করার থাকবে না৷ রোগীকে ফুল বেডরেস্টে থাকতে হবে৷ ইভেন পারলে বাথরুমও শুয়ে বসেই করতে হবে যদি ব্লিডিং + লিকুইড নিঃসরণ বন্ধ না হয়। ওনার এমনিতেই ৮ মাস চলে, টেনেটুনে আর জাস্ট ২০- ৩০ দিন নিতে পারলেই বাচ্চা নর্মালিই হবে। আপনাদের সবাইকে একটু কষ্ট করতে হবে।
– আমি ইন্জিনিয়ার মানুষ, আপনার এতো এতো ডাক্তারি টার্মিনোলজি বুঝিনা। শুধু এটুকু জানতে চাই আমার বাচ্চাটা কি সেভ?
– হ্যা। এখনকার মতো সেভ বলা যায়। বাকিটা আল্লাহ ভরসা।
– what about my wife?
– she is good বাট ওনাকে ২৪ ঘন্টা পর্যবেক্ষণে রেখে তারপর যদি কন্ডিশন ভালো বুঝি তাহলে আমরা রিলিজ দিবো। নইলে প্রায় ১ মাস এখানে থাকার প্রিপারেশন নিতে হবে। আর বাসায় নেওয়ার পর যদি সামান্যতম সমস্যা দেখা দেয় ইমিডিয়েটলি এখানে এডমিট করতে হবে৷
– ওকে ডক্টর যা যা করা দরকার প্লিজ তাই করুন। আমি শুধু আমার বউ বাচ্চাকে সুস্থভাবে বাসায় নিয়ে যেতে চাই।
– ওনাকে কিন্তু কোনোভাবেই উত্তেজিত করা যাবে না, ওনার অ্যাংজাইটি বাচ্চার জন্য খুব ক্ষতিকর।
– ওকে ডক্টর।

ডাক্তারের রুম থেকে বেরোনোর পর নার্স এসে জানালো পাখির জ্ঞান ফিরেছে। তান আমাকেই প্রথম যেতে বললে,
– আমাকে দেখেই উত্তেজিত হয়ে যাবে৷ আমি বাইরে বসি তুমি দেখে এসো।
– আপুনি সবার আগে তোমাকেই খুঁজবে।
– না কাল যা দেখে আমাকে ভুল বুঝেছে তারপর আমাকে দেখলেই ও উত্তেজিত হয়ে যাবে। আমি আমার বউবাচ্চার হেলথ্ নিয়ে আর রিস্ক নিতে চাইনা। বাচ্চা সুস্থভাবে হোক, তারপর নাহয় যাবো ওর সামনে।
– তোমাকে না দেখে আপুনি ভালো থাকতে পারবে!
– জানিনা।
– তোমাকে দেখে রাগ করলেও না দেখে থাকার চেয়ে কষ্ট কম পাবে।
– না আমি শেষমুহুর্তে আর কোনো রিস্ক নিবো না। তুমি প্লিজ দেখে এসে আমাকে জানাও ওর কি অবস্থা।

তান চলে যেতেই ভাবলাম, আমি নিজে কি পারবো ওকে না দেখে থাকতে? নাহ্ কিচ্ছু করার নেই। এটুকু কষ্ট আমাকে করতেই হবে। আমি আমার বাচ্চাকে হারাতে পারবো না। আর পাখি তো পাগল হয়ে যাবে এখন যদি বাচ্চার কিছু হয়! আমাকে একয়দিন দূরে দূরে থাকতেই হবে। একদমই ওর সামনে যাওয়া যাবে না।

# পাখি (POV)

নাকে ফিনাইলের গন্ধ আসতেই চোখ মেলে নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করলাম। তারপর আস্তে আস্তে যখন সব মনে পড়লো তখন আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না। হুহু করে কেঁদে উঠলাম। আল্লাহ্ আমার বাচ্চাটা ঠিক আছে তো! আমি আর উত্তেজিত হবো না। নীড় যাই করুক আমি আর প্যানিকড হবো না তুমি শুধু আমার বাচ্চাটাকে সুস্থ করে দাও প্লিজ। ভাবতে ভাবতে পেটে হাত দিয়ে বেবির অস্তিত্ব টের পেয়ে একটু আশ্বস্ত হলাম।
– বেবি ঠিক আছে। কিন্তু তোকে ফুল বেডরেস্টে থাকতে হবে।
জানালার পাশ থেকে তান কথাটা বলতে বলতে আমার কাছে এসে ক্যানোলা ছাড়া হাতটা ধরলো।
– তুই কখন এলি!
– রাতে ফারাহ্ ফোন করলে আমরা ৩ জনই চলে এসেছি। আব্বু আম্মু একটু আগে বাসায় গেছে বিকালে আসবে।

ফারাহর কথা শুনেই আমার মুখটা ফ্যাকাসে হতে দেখে তান বললো,
– আপুনি ভাইয়া আর ফারাহকে তুই ভূল বুঝছিস কিন্তু।
– আমি কাউকে কিছু বুঝতে চাইনা৷ আমার প্রায়োরিটি এখন শুধুই আমার পুচকো৷ আর কাউকে আমার লাইফে দরকার নেই।
– আমি সবকিছুই জানি প্রথম থেকে৷ প্লিজ অভিমানটা একপাশে রেখে লজিক্যালি ভাবতো, তুই কি কোনোরকম অপ্রীতিকর অবস্থায় ভাইয়া আর ফারাহ্কে দেখেছিস! আর ফারাহ্ কি কখনো তোর সাথে এমনকোনো আচরণ করেছে যাতে তাদেরকে শুধু একটা রুমের মধ্যে দেখেই তুই worst scenario ভেবে বসবি! ফারাহর কথা বাদ দিলাম তুই ভাইয়াকে চিনিস না? তোর ভালবাসার মানুষটার প্রতি তোর এতটুকু আস্থা নেই যে একবার তার পক্ষের কথাটা শোনার মতো ধৈর্য্য তোর থাকবে না?

আসলেই তো ফারাহ্ আমার সাথে সবসময় ফ্রেন্ডলি বিহেভ করেছে৷ আমাকে চিল করার চেষ্টা করেছে। নানীর কথাটাই আমাকে সবসময় ফারাহকে মেনে নিতে বাধা দিয়েছে। কাল রাতেই শুধু আমি ওদেরকে একসাথে দেখেছি এর আগে কখনো ওরা ২ জন একা থাকার কোনো সুযোগও খোজেনি৷ আম্মু থাকতো সবসময় যখনই ওরা আমাকে ছাড়া আড্ডা দিয়েছে। কিন্তু চোখের দেখা কিভাবে অবিশ্বাস করি?

– নিজের আচরণের সাপেক্ষে যুক্তি খুজে পাচ্ছিস না তাইতো! তুই আসলেই একটা বোকা৷ সবমেয়েই ওমন অবস্থায় খারাপ কিছু ভেবে বসে থাকবে৷ কিন্তু তুই কি একা! তোর পুচকোর কথা না ভেবেই এতটা প্যানিকড হয়ে গেলি! ভািয়া যদি খারাপ কিছুও করতো তার থেকে জবাবদিহিতা না নিয়েই তো সব ভেবে বসে থাকবি? যদি খারাপ কিছু হয়ে যেতো তখন না ভাইয়া নিজেকে মাফ করতে পারতো না তুই। সবকিছু আসলে ভাইয়ার তোকে অতিরিক্ত ভালবাসার ফল। কি দরকার ছিলো সারপ্রাইজ প্লান করার?

– সারপ্রাইজ?
– তোকে ভাইয়া সারপ্রাইজের কথা বলেনি?
– বলেছিলো।
– তাহলে! রুমের মধ্যে ঢুকে কিছু দেখতে পাসনি?
– কি দেখবো?
– অন্ধ তুই? ওই রুমটাই তো তোর জন্য ভাইয়ার সারপ্রাইজ! আর ওই রুমে তোর শাশুড়ীও ছিলো তো!
– নাতো শুধুই ফারাহ আর নীড় ছিলো।
– আমি রোজ রাতে ভিডিও কলে বসে দেখি তারা ৩জন মিলে কি করে সারপ্রাইজ প্লান করছে তোর জন্য। কলও আমি ভিডিও কলে ছিলাম৷ কালও তারা ৩ জনই ছিলো। কোনো একটা কারণে আন্টি ওয়াসরুমে গেছিলো আর তুই তখন যেয়ে শুধু ফারাহকে দেখেই ভুলভাল ভাবছিস। আমার ধড়ে মাথা থাকতে কখনো সারপ্রাইজ প্লান করবো নাকোনো মেয়ের জন্য।
ভাইয়া তোকে কি পরিমাণ ভালবাসে সেটা শুধু আমি না ফারাহও জানে। শুধু শুধু নিজেদের মধ্যে ঝামেলা রাখিসনা আপুনি৷ ভাইয়া এখানে আসলে রিয়্যাক্ট করিস না প্লিজ। সবকিছু তাকে খুলে বলতে বলিস। আর কখনো তাকে লুকোচুরি করতে মানা করিস। তোদের দুজনের মাঝে ঝামেলা হলে যে আমাদের কারোরই ভালো লাগে না।

চলবে???