নেশাক্ত প্রণয়োণী পর্ব-১০+১১

0
399

#নেশাক্ত_প্রণয়োণী
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_১০

‘আই নিড আরভীক। এট এনি কস্ট। ঐ আনজুমা মেয়েটার সাহস দেখে আমি অবাক। মিস শ্রেয়া জাফরের মুখের উপর গা’লি ছুড়লো। ভবিষ্যতে তার জীভ টেনে ছি’ড়ে ফেলবো ব্লা’ডি রা’স’কে’ল।
ফাস্ট আরভীককে পেয়ে নেই,সেকেন্ড ঐ মেয়েটার ব্যবস্থা নেব।’

শ্রেয়া তার রুমের মধ্যে এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত পর্যন্ত পায়চারী করতে থেকে কথাগুলো বলে। হাতে ওয়াইনের গ্লাসটিও চেপে ধরেছে শক্তভাবে। তার সঙ্গে রুমের মধ্যে শায়িত আছে ছেলে গার্ড হিসেবে তার প্রিয় বন্ধু। রাজিব নাম তার। রাগান্বিত রুপে শ্রেয়াকে আবেদনময়ী লাগছে রাজিবের কাছে। লাগবেও না কেনো শ্রেয়ার পরণে রয়েছে হাটু অব্দি শর্ট স্কার্ট ও গায়ে চিকন-পাতলা ছাইবর্ণের শার্ট। যার উপর বুকের ভাঁজ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। রাজিব চোখ বুজে নিয়ন্ত্রণ রেখে শ্রেয়াকে উসকে দিয়ে বলে,

‘ম্যাম ঐ মেয়ে আরভীক স্যারের অফিসের কোনো এমপ্লয় না। স্বয়ং আরভীক স্যারের পার্সনাল সেক্রেটারি। যে পদ আপনার পাওয়ার কথা ছিল সে পদ ঐ মেয়ে পেয়েছে।’

রাজিবের কথা শুনে শ্রেয়া কুটিল রেগে ওয়াইনের গ্লাসটি দেওয়ালে ছু’ড়ে মা’রে। ঠাসস করে ভেঙ্গে গ্লাসের আংশিক টুকরো জোরালো ভাবে লেগে যায় শ্রেয়ার পায়ে। তবে সে শ্বাসরুদ্ধ হলো না। তীব্রভাবে গরম শ্বাস ফেলছে। যেন সে গ্লাসটি দেওয়ালে নয় ঐ আনজুমার মাথা বরাবর ছু’ড়ে মে’রে’ছে। রাজিব রক্ত দেখে ঘাবড়ে গেল। তড়িঘড়ি ফাস্ট এইড বক্স এনে শ্রেয়ার হাত টেনে বসায়। পা তুলে ড্রেসিং করায় মনোবল দেয়। তথাপি শ্রেয়া নিকৃষ্ট বুদ্ধির জাল বুনতে থাকে মনে। ড্রেসিং করাতে রাজিব গভীরভাবে স্পর্শ করতে থাকে শ্রেয়ার হাটুর মধ্যে। ভাব এমন যেন সে ড্রেসিং করার জন্য স্পর্শ করছে। কিন্তু একমাত্র সেই জানে তার অন্তর পুড়ে শ্রেয়াকে তার শয্যাসঙ্গিনী করার তাগিদে। শ্রেয়া ভাবান্তর হওয়ায় স্পর্শের গভীরতা মাপতে পারেনি। ব্যান্ডেজ হয়ে গেলে কুৎসিত নজর আমলে নিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। দৃষ্টিনত করে বলে,

‘ম্যাম ড্রেসিং হয়ে গেছে।’

রাজিবের কথায় মস্তিষ্কের স্নায়ু সজাগ হলো শ্রেয়ার। থুতনী নিচু করে পায়ে করা ব্যান্ডেজের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য ভরা হাসি দিল। রাজিবের দিকে না তাকিয়ে বলে,

‘থ্যাংকস রাজিব। তুই না থাকলে মিথ্যা ফন্দি আঁটকানো শিখতাম না। অনেস্টলি ইউ আর নট অনলি মাই এসপিওয়াই বাট অলসো ক্লোজ ফ্রেন্ড ইন মাই লাইফ।’

শ্রেয়ার কথায় রাজিবের মুখশ্রীতে মৃদুহাসি চওড়া হয়। কিন্তু অন্তরালে সে তার বিদ্রুপের হাসি বজায় রেখেছে। শ্রেয়ার টকটকে সাদা চামড়ার কাধে ঘনভাবে ছুয়ে আলতো করে জড়িয়ে ধরে। হাতজোড়ার নিবিড় বিচরণ দেয় তার পিঠের মধ্যে। উত্তেজনা যেন শরীরে রগড়ে দীর্ঘ হচ্ছে রাজিবের। তবুও সময়সূচি আজ নয়, দীর্ঘক্ষণ লাগবে। বিধেয় ঘন স্পর্শের মাঝেই সীমা বজায় রাখে। শ্রেয়া চোখ বুজে শুধু আরভীক এর স্বপ্ন আর আনজুমার ধ্বংস নিয়ে কল্পনাপ্রবণতায় মগ্ন হলো।

‘ওয়াট’স দিজ রাজিব! আমার মেয়ের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সাহস কে দিল তোকে শু’য়ো’রের বাচ্চা।’

বলেই জাফর শেখ ঘুষি দিল রাজিবের গাল বরাবর। আকস্মিক আক্রমণে দুজনেই অপ্রস্তুত হয়ে যায়। শ্রেয়া তার বাবার মে’রে দেওয়া দেখে হতবাক। কিন্তু জাফর সাহেব কোনো কথাবিহীন রাজিব এর বুকের উপর লা’থি দিয়ে যাচ্ছে। শ্রেয়া রাজিবের করুণ দশা দেখে তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে থামালো। আতঙ্কে ক্রোধান্বিত গলায় বলে,

‘ড্যাড হি ইজ মাই ফ্রেন্ড। এন্ড দিজ হাগ ইজ কমন ফর আস।’

জাফর সাহেব তিক্ষ্ম চোখে শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে রাজিবের দিকে ভস্ম করার মত তাকায়। যা দেখে শ্রেয়া চোখ ঘুরিয়ে তার বাবার চেহারা হাতের আদলে নিয়ে নিজের দিকে ঘুরায়। বাবাকে আশ্বস্ত কণ্ঠে শুধায়।

‘ড্যাড বিলিভ মি হি ইজ জাস্ট মাই ফ্রেন্ড। তুমি জানো আমি শুধু আরভীককে চাই। রাজিব এতে হেল্প করছে। আর তুমি তাকেই মা’রতে লাগলে। শেইম ড্যাড।’

মেয়ের কথায় নিবিড় চাহনী নিয়ে রাজিবের দিকে তাকায়। চোখজোড়ায় লজ্জাবোধ স্পষ্ট হলো। যা রাজিবের মনকে ক্ষুদ্র হলেও প্রশান্ত করল। এতক্ষণ যাবত আক্রমণের কারণে তার বুক জ্বলছিল হিতে বিপরীত আক্রমণ করতে। কিন্তু করেনি শ্রেয়া নিজ মুখে বলে কিনা সে অপেক্ষায়। ঠিক হলো তাই। শ্রেয়া থামিয়ে দিল এবং লজ্জায় ফেলে দিল মিস্টার জাফর শেখকে। রহস্যময়ী হাসি দেয় সে। জাফর সাহেব আমতা আমতা করে রাজিবের কাঁধ ধরে দাঁড় করায়। আলতো করে যন্ত্রণাহীন ছুয়ে দিয়ে বলে,

‘আইম সরি বয়। তোমাকে রেখেছিলাম মেয়ের খেয়ালের বিষয়মতে। আজকে হঠাৎ ঘনিষ্ঠ আইমিন জরিয়ে ধরা অবস্থায় দেখে ভুল ভেবে নিলাম। সরি বয়। করিম এদিক আয়। রাজিবকে মেডিক্যাল নিয়ে যাহ্।’

শ্রেয়াও রাজিবের সঙ্গে যাওয়ার জন্য বায়না ধরে। জাফর সাহেব মৃদুহেসে যেতে বলে। তারা চলে গেলে তার ফোনে আননোন নাম্বার থেকে মেসেজ আসে।

‘সাহেব মনে পড়ে ব্রিজে খুন করার সেই রাত!’

মেসেজটি দেখে আত্মা কেঁপে উঠল জাফর সাহেবের। এমন মেসেজ হঠাৎ কে দিল। নাম্বারটির মধ্যে কল দেয় তিনি। কিন্তু নাম্বার বন্ধ পেল। মেসেজটির উপর গাড় চাহনী নিয়ে নিজের রুমে ফিরে আসে। কপালে মৃদু ঘাম জমে গেল ক্ষণিকে। এই মেসেজটির অর্থ তার জানা, গভীরভাবে জানা। কিন্তু লিখনের বাক্যধারা কার সেটা আন্দাজ করতে পারছে না! কেমনে সে ফিরবে, কেমনে!
ফোনের মধ্যে কল এলো ‘পরম বন্ধু’ লিখা নাম্বার দিয়ে। অশান্ত মনকে ক্ষণিকের জন্য শান্ত করে ফেলে। বিছানায় বসে ফোন কানে ধরে, ‘হ্যালো’ বলে।

‘কি খবর বন্ধু! তোর মেয়ে কোথায়।’

‘আছে সে। আমিও ভালো আছি। তুই বল ব্যবস্থা হয়েছে।’

‘তোর কি মনে হয় ব্যবস্থা ছাড়া বুঝি কল দিয়েছি।’

‘কবে টাইম ঠিক করবি।’

‘ভাবছি শ্রেয়া মামুনির জম্মদিনে তোর বাসায় পার্টি দেব। সেখানেই আসতে বলব। কি বলিস এতে!’

‘হবে এমনি শ্রেয়ার ইচ্ছে বার্থডে পার্টি করার। ম্যানেজ করে তোকে জানাবো।’

‘হুম জম্মদিন কাছেই হাতে পাঁচদিন এই তেমন কি।’

‘হুম শত্রু কে ইনভাইট করে তার বউমার সঙ্গে পরিচয় করানো লাগবে তো।’

‘হাহাহা ঠিক বলেছিস। আমার মেয়েও কম কিসে! সুন্দরীর সেরা সুন্দরী সে। আরভীককে তো প্রেমের জালে ফাঁসতেই হবে।’

‘দ্যাটস ফাইনাল! ডিল মনে রাখিস।’

‘মনে থাকবে না কেন! চার বছরের বন্ধুত্ব যতবার ডিল হয়েছে ততবার ডিলের চূড়ান্ত পর্যায়ে পর্যন্ত গিয়েছি। এবারও তাই হবে। তোর তো আরো আগ থেকে শত্রুতা ফাওয়াজ পরিবারের সঙ্গে। আমি তো নতুন। কি লিয়াকত ঠিক বললাম তো!’

‘হাহাহা দোস্ত হো তো এসা। তোর ক্ষেত্রে বুঝা মুশকিল না। এ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার অব পুলিশ (এসি) বলে কথা।
আর আরাজ সে হলো ফকির নামেমাত্র দোস্ত আমার। ভেতর দিয়ে আমার শত্রু ছিল,আছে আর থাকবে। ব্যস একবার শ্রেয়া মামুনি তাদের ফ্যামিলিতে ঢুকতে পারলে হবে। রাতারাতি হাতিয়ে নেওয়া কোনো ব্যাপার না।’

লিয়াকতের কথায় জাফর সাহেবও কুৎসিত হাসি দেয়। তাদের বুনা জালে আরভীক এর জীবন কোনদিক যায় সেটা একমাত্র আল্লাহ জানেন।

১৮.
‘কি গো সখিনাবানু,ক্লেভ সাহেব! টুনাটুনির সংসার দারুণ চলছে তো। কিন্তু এ কি বাচ্চা পয়দা করিসনি তোরা। ওপস কয়েকদিনে কি আর বাচ্চা হয়। তার চেয়ে বড় কথা বাসরই তো করতে পারিসনি। এটা অন্যায়! অঞ্জয় ওয়াট’স দিজ হুম। টুনাটুনির প্রেম কে ক্লোজ হতে দাওনি কেন হে!’

পিটপিটিয়ে লজ্জাময় চাহনী দিল অঞ্জয়। কথাগুলো শুনতেই কান গরম হয়ে গেল তার। অথচ আশপাশে কালা ভূত সেজে থাকা গার্ডগুলোর মধ্যে এমন ভাব অপ্রকাশিত। কেননা তাদের কানে এসব বাংলা কথা প্রবেশ করলেও অপর কান দিয়ে বেরিয়ে যায়। তার বসই রেখেছে ইংরেজি চামড়ার মালবস্তা। অঞ্জয় নিরলসভাবে চেয়ে রইল। তার ঘুমের দফারফা হয়েছে ক্ষণিকের মধ্যেই। যখন গাড়ি পার্ক করে তার বস বেরিয়ে গিয়ে ছিল। তখন সে স্টেয়ারিংয়ে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে ছিল। কে জানতো সাধের ঘুমে এক মগ জল ঢেলে দিবে। তাও আবার অন্য কেউ নয় তার বস আরভীক স্যারই দিয়েছে। সাধের কাঁচা ঘুম ভাঙ্গায় রাগ পেল অঞ্জয়ের। মুখ ফসকে বলতে নিয়ে ছিল, ‘কে রে কোন কু…’
মুখের কথা শেষ করতে পারল না অঞ্জয়। ‘কু’ এর পরের অংশ বলার পূর্বেই আরভীক এর শান্ত চাহনী দেখে ফেলে। সে ড্রাইভিং সিটের জানালার মধ্যে হাতজোড়া রেখে দৃষ্টিকোণে অঞ্জয়কে দেখছে। মুখ বন্ধ হয়ে যায় তার। ভ্যাবাচেকা খেয়ে হেহেহে করে হেসে বলে,

‘স্যার একটুখানি ঘুম পাচ্ছিল।’

রুগ্ন চাহনী অথচ নিবিড় শরীর আরভীক এর। অঞ্জয় তপ্ত শ্বাস নিয়ে বলে,

‘আসছি স্যার।’

ব্যস কোনো কথাহীন আরভীক সচল পায়ে ভেতরে গেল। অঞ্জয় ধীরস্থীর পায়ে এগিয়ে গেল। ঘুম পরিপূর্ণ হয়নি বিধেয় ঢুলুঢুলু পায়ে হাঁটছে। এক গার্ড অঞ্জয়কে দেখে বলে,

‘স্যার নিড এনি হেল্প!’

বিষন্ন মনে গার্ডের কাঁধে হাত রেখে মনে মনে আওড়ায়।

‘ভাই তুই বুঝবি না আমার কষ্ট। তোর মত সাদা চামড়ার ইংরেজী মাল হলে একরাত ডিউটি মে’রে। দিনের বেলা ঘুম মারতাম। কিন্তু আজ বাঙালি বলে স্যার‍ের আগেপিছে ঘুরা লাগতেছে।’

‘স্যার সেয়ে সামথিংক।’

মনের কথা আকঁড়ে রেখে ঠোঁট চেপে মৃদু হেসে মাথা ডান-বাম নেড়ে না বোঝায়। দ্রুত পায়ে ভেতরে ঢুকে যায়। যদি তার বস তাকে না দেখে , তাহলে এবার ঠান্ডা জলের জায়গায় গরম জল নিশ্চিত ঢেলে দেবে।

‘অঞ্জয় বিছানার ব্যবস্থা কর।’

তার ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে দেয় আরভীক কথাটি বলে। থতমত খেল সে। ঠিক শুনছে তো ! তার বস বিছানার ব্যবস্থা করতে বলল। কিন্তু কেন! টুনাটুনির বাসর দেখতে। চোখ বড় বড় হয়ে গেল তার। আহাম্মকের মত চেয়ে রইল তার বসের দিকে। আরভীক অঞ্জয়কে যেতে না দেখে সরু দৃষ্টি নিয়ে বলে,

‘কি কানে শুনিসনি কি বললাম!’

‘শুনেছি স্যার কিন্তু বিছানা দিয়ে কি করবেন!’

‘আরে টুনাটুনি বাসর করতে না পেরে কাতর। ওদিক মিলবন্ধন করাতে হবে না।’

বসের কথার আগামাথা বুঝল না সে। শুধু মাথা দুলিয়ে ‘করছি’ বলে পিছু মোড়ে চলে যেতে নেয়। কিন্তু মাঝপথে থামিয়ে দেয় আরভীক। শয়তানি কল্পনা এঁটে রেখে অঞ্জয়কে বলে,

‘ওয়াটার বেড আনবি।’

কথাটি শুনে দ্বিরুক্তি করতে চেয়েও করেনি অঞ্জয়। দুজন গার্ড নিয়ে বেরিয়ে গেল। আরভীক আড়চোখে সেদিক দেখে বাকাঁ হাসি দিয়ে ক্লেভের দিকে তাকায়। তার চাহনীতে ভয়ভীতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। সে বুঝছে আরভীক কি করতে চাইছে! বারংবার ক্ষমা চাইতেছে। তবুও আরভীক এককথায় ঘাড়ত্যাড়া ব্যক্তি। ক্লেভের কাছে গিয়ে তার কানে ফিসফিসিয়ে বলে,

‘ডু ইউ রিমেম্বার ওয়ান পার্সন! আজীব ফাওয়াজ।’

নামটি শুনে ক্লেভ চকিত দৃষ্টিতে আরভীক এর দিকে তাকায়। কিঞ্চিৎ পূর্বে যে রসিকতা চোখে দেখা দিয়ে ছিল। এখন তার ছিঁটেফুটোও নেই। আছে একরাশ ক্রোধ, হিংস্রতা। আরভীক হিংস্র চোখে ক্লেভের গলায় আলতো ছুতে থেকে বলে,

‘ডু ইউ অলসো রিমেম্বার দিজ ডে!’

ঢোক গিলে ক্লেভ। বন্দি দশায় হাতের কাছে কোনো জিনিস পায়নি। ফলে সময়,তারিখ জানার কোনো পথ নেই তার। মাথা নেড়ে না বুঝায়। যা পছন্দ হলো না আরভীক এর। ক্লেভের গলায় ছু’ড়ি দিয়ে মৃদু আ’ছ’ড় টেনে দেয়। সখির গলায় যেমন কেঁচো দিয়ে ছিল তেমন ক্লেভের গলায় ইঞ্জেকশন পুষ করে দিল। আছড় দেওয়া জায়গায় ইঞ্জেকশন দেওয়ায় পুরু শরীরে ছটপটানি অনুভব করে ক্লেভ। আতঙ্কিত চোখে আরভীক এর দিকে তাকায়। হাতে থাকা ইঞ্জেকশনকে টেবিলে রাখতে গিয়ে বলে,

‘দিজ ইজ নট ড্রাগ। দিজ ইজ কলড ড্রাগ অফ স্পাইডার এগস। মাকড়সার ডিমের ওষুধ দিয়ে বানানো ইঞ্জেকশন তোর শরীরে দিয়েছি।’

মুখের থেকে ফেনা বের হতে আরম্ভ করে ক্লেভের। ‘উম উমম’ করে চিৎকার করতে থাকে। যা কোনো স্বরই তুলছে না চার দেওয়ালের মাঝে। আরভীক এর আবার উচ্চস্বর পছন্দ নয়। এক গার্ডকে আদেশ করে চেয়ার দিতে।
গার্ড চেয়ার এনে দিলে সন্তপর্ণে বসে পড়ে। সখি বেঁচে থেকেও জিন্দা লাশ হয়ে আছে। কেচোঁ তার শরীরে প্রবেশ করার পর শিরা,উপশিরা ছিঁ’ড়ে কবলে চুষে নিয়েছে। তার শরীর পুরু ফ্যাকাশে নীলচটা হয়ে গেছে। তবুও শ্বাসরন্দ্র চলছে মেয়েটার। কেঁচো সখির শরীরটার পুরু রক্ত না খেয়ে ছাড়বে না। মহিলা গার্ড আজ্ঞা করেছে, কেঁচোটি এখনো সখির শরীরেই আছে। আরভীক সখির হাল শুনে ও দেখে কদর করল না। উল্টো পায়ের উপর পা তুলে পাবজি খেলতে থাকে। নয়জন এনিমিকে মে’রে যেই না দশজন পূর্ণ করবে। তার খেলার মাঝে ব্যাঘাত ঘটিয়ে দেয় একটি অডিও এসএমএস। বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে নোটিফিকেশন চেক করে। এসএমএস বাটন প্রেস করে অডিও ক্লিপ স্টার্ট দেয়। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
অডিও শুনে যে বিরক্তিটা ছিল নিমিত্তে উবে গেল। ঠোঁটের কোণায় ফুটে উঠে প্রাপ্তিময় হাসি। অডিও ক্লিপ শেষ হতেই উঠে দাঁড়ায়। ব্লুটুথ বাটন প্রেস করে অঞ্জয়ের ফোনে ডায়ল করে।

‘ইয়েস বস।’

‘কতক্ষণ লাগবে।’

‘স্যার ঘণ্টা ছয়েক লাগবে। ছোটখাটো দোকানে ওয়াটার বেড নেই। তাই মলে এসে পেয়েছি। তারা বলছে ছয় ঘণ্টা অপেক্ষা করতে।’

‘ওকে তুই অর্ডার কমফার্ম করে রিসিট নিয়ে বাসায় গিয়ে ঘুম দেস।’

বসের আদেশ শুনে খুশিতে টগর হয়ে উঠে অঞ্জয়। ‘স্যা….’ বলে সে তার বলদমার্কা বাণী আওড়ানোর পূর্বেই আরভীক কল কাট করে দেয়। গার্ডের দিকে তাকিয়ে বলে,

‘টেক কেয়ার অফ দেম।’

গার্ডস সায় দিলে সে নিবিঘ্নে বেরিয়ে যায় ফার্মহাউজ থেকে।

১৯.
আজ বিউটিখালা তার ছেলে,নাতী-নাতনীর সঙ্গে আনজুমার বাসায় এসেছে। বিউটিখালার ছেলের স্বভাব ভালো,নম্র,ভদ্র। নাম সৌহাদ্য মুকুল। খুব কম কথা বলে।
আনজুমার সঙ্গে দেখা করে কুশল বিনিময় করে সেই যে নিশ্চুপ ভঙ্গিতে বসেছে। তারপর কোনোরুপ কথা বলতে শুনা যায়নি। শুধু বাচ্চাদের সঙ্গে খেলতে দেখেছে।
যা দেখে আনজুমা মুগ্ধ হলো বটে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
কিচেনে পাতিলের মধ্যে কড়াই নাড়ছে আর কামিজের উড়না দিয়ে ঘাম মুছছে আনজুমা।
বিউটিখালা এতদিন যাবত দেখভাল করেছে আশফির। সচরাচর দাওয়াত দেওয়া হয়নি। ফলে মনের একাকিত্ব দূরীকরণে বিউটিখালাকে দাওয়াতে ডাকে। বাসার মধ্যে নানান বাজার এনে রেখেছে। আরভীক জবের প্রথমদিনই বোনার্স হিসেবে বিশ হাজার টাকা পেমেন্ট দিয়ে ছিল। যা অতি কম সময়ে পাওয়ার কল্পনাও করেনি আনজুমা। তবে পেমেন্ট নিতে ইতস্ততঃবোধ করে। সন্দেহ জেগেছিল কোনো তার উপর দয়া দেখিয়ে পেমেন্ট দিচ্ছে না তো! কিন্তু না তার কল্পনা ভুল ছিল! অঞ্জয়ের ভাষ্যমতে, রুলসে ছিল যে ব্যক্তি প্রথম জয়েন করবে তাকে প্রথমদিন উপলক্ষে বোনাস পেমেন্ট করা হয়।
ফলে সন্দেহকে ঝেড়ে ফেলে খুশিমনে পেমেন্ট গ্রহণ করে ছিল। আজ সেই পেমেন্ট এর আংশিক খরচ করে বাজার আনিয়েছে বাসার দারোয়ানকে দিয়ে।
বিউটিখালা মশলা বাটা করে বাটির মধ্যে রেখে গেল। মুরগী খসতে দিয়ে আনজুমা পেয়াঁজ,রসুন,আলু,আদা ইত্যাদি কাটতে বসে। আশফি কড়া ঘ্রাণের কারণে মাঝমধ্যে হাচি দিচ্ছে। এলার্জি নেই তবে ঘ্রাণ ঝালপূর্ণ হওয়ায় হাচি পাচ্ছে তার। যা কিচেন থেকে শুনতে পাচ্ছে আনজুমা। আশফি ছোট হওয়ায় তার সঙ্গে সৌহাদ্যের ছেলেমেয়ে দুটো মিশে খেলতে থাকে। সৌহাদ্য আড়চোখে কিচেনের দিকে বারদুয়েক স্নিগ্ধ পলক ফেলছে আনজুমার প্রতি। মেয়েটার শ্যামবর্ণী রুপটা মন না চাইতেও সৌহাদ্যকে আকৃষ্ট করছে। মেয়েটি শালীন রুপেই অমায়িক। তার আচরণে সে অতীব মুগ্ধ। বউ চলে যাওয়ার পর কোনো নারীই তার মনে স্থান পায়নি। তবে কেনো যেনো তার আনজুমাকে দেখে ঐ স্থান দেওয়ার উপযুক্ততা মনে হচ্ছে।
ঠোঁট কামড়ে আনমনে হেসে দেয় সৌহাদ্য। তার মনের ছেদ ঘটে বাসায় ডোর বেল বেজে উঠার কারণে। আনজুমা কিচেনে গটগট করে আদা পিষছিল ডোরবেল শুনে আদা পিষা থামিয়ে দেয়। ঠোঁট পাঁকিয়ে ভাবে, ‘কে আসল অসময়ে!’
বিউটিখালাও দরজার দিকে চেয়ে রইল। সৌহাদ সন্তপর্ণে এগিয়ে যায় দরজার নিকট। নিবিড়তা বজায় রেখে দরজা খুলতেই এক ব্যক্তি তড়িৎগতিতে ভেতরে প্রবেশ করে। গানের তালে সুর টেনে উচ্চ আওয়াজে বলে,

‘ও বউ, ও বউউউ তুমি কোথাইই,
আমি তোমাকে চাইই…!’

চলবে…..

#নেশাক্ত_প্রণয়োণী
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_১১

‘থাপ্পড়ে গাল লাল করে দেওয়া উচিৎ আপনার। কারো বাসায় এসে কি ধরনের কথাবার্তা বলতে হয় তাও জানেন না দেখছি। আজব পাবলিক কোথাকার!’

আনজুমা রগরগে কর্কশ গলায় আরভীক এর মুখোমুখি হয়ে বলে। বউকে পেয়ে তার চোখজোড়া চকচকে উঠে। হাতে যেন চাঁদের আলো পেয়েছে, খুশিতে যেনো আত্মহারা। সেই দিকে বউ কি বলেছে, না বলেছে তার ইয়াত্তা নেই। বউয়ের মুখ মানে মিষ্টির ফুলঝুড়ি। তার বউ গা’লি দিলেও মিষ্টি উসুল করে খেয়ে নেওয়া যাবে। তা অবশ্যই আরভীক এর মত ছেলের কাছে স্বাভাবিক বিষয়। মেয়েটার রাগকে উসকে দিতে বলে,

‘আমি আমার বউয়ের কাছে এসেছি হেহে। কই সে!’

ভ্রু কুঁচকে সূক্ষ্ম সূচালো দৃষ্টি দেয় আরভীক এর উপর আনজুমা। কাঠিন্য গলায় বলে,

‘আপনার বউ এখানে কই থেকে আসবে! এটা কি বউ’শা’লা পাইছেন! যে চাইবেন আর এসে যাবে।’

‘কেন এখানে বউ দেওয়া হয় না!’

‘না।’

‘সে কি আমাকে তো ইনফর্ম করা হয়ে ছিল এখানে বউ দেয়। এই আমি একটা বউছাড়া কোলবালিশ নিয়ে আর কত জীবন পার করবো হে। তোমার ন্যূনতম দয়ামায়াও হয় না আমার উপর।’

‘দেখেন আপনার আলগা পিরিত বাহিরে গিয়ে মারেন বের হোন।’

‘না না খুকি মেহমান আসলে গ্রহণ করতে হয়, বের করে দিলে আল্লাহ নারাজ হবে তোমার উপর।’

চুপ হয়ে আনজুমা। তবুও কাঠিন্যতা তার মুখশ্রীতে বিরাজমান। বিউটিখালার পরিবারের দিকে তাকায়। তারা চকিত, অবুঝ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। লজ্জায় শিহরিত হলো সে। দাঁতে দাঁত চেপে আরভীককে ফিসফিসিয়ে বলে,

‘আপনি আর আপনার লাপাঙ্গা ছেলেপেলে খেয়ে যাবেন।’

‘আরে খানার কথা কে বলছে, আমি বলছি বউ, বউ চাই একটা।’

‘আরেকবার বউ বললে এবার ফ্রাইপেন না সোজা পাতিলের বারি দেব। এতই বিয়ের শখ তো যান না। বিয়ে করে বউ নিয়ে পড়ে থাকেন।’

‘এক্সজেটলি এটাই তো পারছি না। আজ যদি বউ রাজি থাকতো। বিশ্বাস করো একদিনে বিয়ে করে তিনমাসে বাচ্চা হওয়ার সুসংবাদ দিতাম পুরু মহল্লায়।’

বাকরুদ্ধ দৃষ্টিতে আরভীক এর দিকে তাকায় সে। ব্যাটা বুঝি পাগল হয়ে গেছে! নিশ্চিত ক্লাবে গিয়ে গিলে আসছে। বিরবির করে আনজুমা চোরাচোখ ঘুরিয়ে কথাগুলো আওড়ায়। তার বিরবিরানো কথাগুলো আরভীক এর কান অব্দি পৌঁছেই গেল। সে ঠোঁট গোল করে আফসোসের সুরে বলে,

‘ছিঃ ছিঃ তুমি কি পাগল হয়ছো! এখন থেকে বউয়ের কথা ভেবে গিলাও ছেড়ে দিছি। বাসর রাতে বাচ্চার প্রসেসিং করলে তার প্রব্লেম হবে তো নাকি!’

আনজুমা মাত্রাতিরিক্ত ক্ষেপে হাত দেখিয়ে থামিয়ে দিল। পরের জটিল বাক্য শুনার সাধ্য নেই তার। অনবরত পটরপটর করে আরভীক বলতে থাকলে সে নিশ্চিত ভাইরাল হয়ে যাবে। বিউটিখালার সামনে মুখ ফসকে তার নামে বাঁদরামী রটিয়ে রঙরমা রমণীর পরিচিতি দিবে। যাকে চিনবে নতুন ডাকনামে বউদেবী। যিনি বউ দান করে। অথচ বউদেবী কি বউ দেবার জোঁ ও নেই তার। সে নিজেকে একা সংসার সামলায়। আর আজাইরা পাবলিক এসে বউ চাই। পাগলে ধরছে না হয় জ্বীনে ধরছে তারে।
আনজুমা কে নিশ্চুপ ভাবতে দেখে আরভীক মৃদু কণ্ঠে ডাক দেয়। থতমত খেয়ে তাকায়।

‘তোমার জ্বলছে!’

‘আমার কেন জ্বলবে। আমি কি আপনার বউ লাগি! যে সতীন খুঁজলে জ্বলে পুড়ে ছাই হবো।’

‘তুমি না জ্বললেও তোমারই জ্বলছে।’

‘দেখেন আপনি আপনার আবুলমার্কা কথা….।’

‘কিছুক্ষণ পর তুমিও টের পাবে তোমারই জ্বলছে, স্বীকারও করবে। স্বীকার না করলে আমি টেনে হিঁচড়ে করে দেব হেহেহে।’

‘মাই গ্যারান্টি আমার জ্বলছে না হাহ্।’

‘রিয়েলি….।’

সুরের টান দিয়ে শব্দটি বলে ঠোঁট বাঁকা করে দুষ্টুমি হাসি দেয় আরভীক। আনজুমার সামনে দুহাত বুকের উপর গুজে দাঁড়ায়। যেমন করে কিঞ্চিৎ পূর্বে আনজুমা দাঁড়িয়ে ছিল। সেও ভাব নিল যেন সে জ্বলবেই না। আরভীক বউ পেলেও তার কি, না পেলেও তার কি হাহ্। আকস্মিক নাকে ঝাঁঝালো পুড়া গন্ধ এসে তীব্রভাবে টনক নাড়ায় তার। পড়ে মনে করার চেষ্টা করে আসলেই কি কিছু পুড়ছে! তখন তার মাথায় আসে সে তো চুলায় শাক বসিয়ে ছিল। কপালে হাত দিয়ে তড়িঘড়ি কিচেনের দিকে দৌড় লাগায়। বিউটিখালা তখন কিচেনে শাকের চুলোয় বন্ধ করে দেয়। পাতিলটা বেসিনে পানির মধ্যে দিতেই ‘শাঁ শাঁ’ করে গরম ঝাঁঝ বেরিয়ে আসে। আনজুমা কান্নার ভাব করে পা ধপাধপ মেঝেতে মে’রে বলে,

‘সব দোষ ঐ খা’টাইশার। বদ’মাই’শ খা’টাশ কুনাইকার।’

আনজুমার চোখের অগোচরে মিটমিটিয়ে হাসে বিউটিখালা। সৌহার্দ্য আহাম্মক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। যেন এখানে চলা দৃশ্য তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। আরভীক কোনো চতুর্থ পুরুষের উপস্থিতি এই মুহূর্ত অনুভব করে। ভ্রু কুঁচকে সন্দেহের চোখে তাকায় সে দিকে। সৌহাদ্য তখনো নিবিড় চোখে চেয়ে ছিল আরভীক এর দিকে। অঞ্জয়,ফাহাদ ও সায়াজ একে অপরকে ইশারায় জানার আগ্রহ পোষণ করে, ‘কে এই ফোর্থ ক্লাস পোলা!’

আরভীক পকেটে দুহাত গুজে এগিয়ে এলো সৌহাদ্যের নিকট। সে স্থীরভাবে দাঁড়িয়ে আছে। ভাব এমন যেন তার কাছে আসায় বিন্দুমাত্র ভয়,ডর নেই। তার মতে সেও মানুষ, এও মানুষ।
আরভীক তার নিজের মত শান্তস্থীর মনভাবের ব্যক্তিকে সামনে পেয়ে মুচকি হাসি দেয়। ব্যক্তিটির কাছে হাত বাড়িয়ে বলে,

‘আইম আরভীক ফাওয়াজ এন্ড বস অফ আনজুমা।’

‘আইম সৌহার্দ্য মুকুল সান অফ মুবাশশেরা মুকুল। সি ইজ মাই মাদার।’

‘নাইস টু মিট ইউ। মিট মাই ফ্রেন্ড’স অলসো।’

একে একে বন্ধুদের সঙ্গে পরিচয় করায় আরভীক। তারাও শান্তনীড় ভাবে কুশল আলাপে মগ্ন হলো। কথার ছলে আরভীক সৌহাদ্য কে প্রশ্ন করে।

‘তোমার ওয়াইফকে দেখছি না। তিনি কই!’

স্ত্রীর কথা বলাতে তার মুখে নেমে এলো একরাশ বিষন্নতার কালো ছায়া। এ প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়ার ছিল। কথায় না কথায় সবাই জানতেই চাইবে। কেননা সে বিবাহিত পুরুষ, দু বাচ্চার বাবা। তথাপি স্ত্রীর সম্পর্কে জানতে চাওয়া স্বাভাবিক বিষয়। কোমল কণ্ঠে মৃদু হেসে বলে,

‘বুড়ো পুরুষের সঙ্গে বিয়ে করে চলে গেছে।’

কথাটি শুনে নিরবতা ছেয়ে যায় রুমে। সৌহাদ্য মাথা নামিয়ে চোখজোড়া বন্ধ করে রাখে। দুঃখ, কষ্ট হচ্ছে হৃদপিন্ডে। যা ব্যক্তিবর্গের নিকট দেখানো অন্যায়। কষ্ট কাউকে দেখানো উচিৎ নয়। নির্মলচিত্তে জড়িয়ে ধরে আরভীক। হঠাৎ আরভীক এর জড়িয়ে ধরায় কি ছিল কে জানে! সৌহাদ্য ভরসার স্পর্শ পেয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আরভীক পিঠে বার’দুয়েক হাত দিয়ে মৃদু ঘা দিয়ে বলে,

‘ব্রেইভ বয় ডাজেন্ট ফেইলার। ইউ আর লয়াল বয়। যে গেল ভুলে যাও। জীবনে যে আসবে তার অপেক্ষায় থাকো। হে তবে ভুলে না যেতে বলতে পারতাম। যদি স্ত্রীর গুণ মনে রাখার মত হতো। তোমার কথায় বুঝেছি আমি। দ্যাটস ওয়াই আই সেয়ে বি কন্টিনিউ ইউর ওয়ে। হাত ধরার কেউ হলে সময় মতো চলে আসবে।’

আরভীক এর কথা শুনে আজ বহু দিন পর হালকা মনে করছে সৌহাদ্য নিজেকে। এতদিন যেন চার দেওয়ালের মাঝে গুমরে মরছিল। মা, বাচ্চার সামনে যতই শক্ত দেখাক না কেনো! দিনশেষে সেও ব্যর্থ হয়ে মরার ইচ্ছে পোষণ করে। শখ করেই বিয়ে করছিল ঐ নারীকে। যে এখন অন্য পুরুষের অধীনস্থ। তপ্ত শ্বাস ফেলে অবিচল হাসি দেয় সৌহাদ্য। কিচেন থেকে আড়চোখে সবটা খেয়াল করেছে আনজুমা। আরভীক এর বলা প্রতিটা কথায় গুরুত্ব,সহানুভূতিতা ছিল। যা আজ প্রথমবার শুনেছে সে। এতদিন যাবত এ ব্যক্তির ফাজলামি,রসিকপূর্ণ কথা শুনে বেঁকে বসে ছিল। অতীব মুগ্ধতা অনুভব করে আনজুমার মন। আনমনে হাসে। বিউটিখালা একপলক আরভীক এর দিকে তাকায় তো আরেক পলক আনজুমার দিকে। তিনি মনে মনে প্রার্থনা করে।

‘আল্লাহ্ এই কেমিস্ট্রি যেন পূর্ণতা পাক আমিন।’

মনের আজগুবি ভাবনাকে ঝেড়ে কপাল চাপড়ে আবাইয়া টান করে পিছু ঘুরে। বিউটিখালাকে মিটমিটিয়ে হাসতে দেখে শরমে মাথানত হলো তার।
চোরের মত পাশ কেটে পুনরায় শাক রাঁধায় হাত দেয়। তিনিও মেয়েটিকে লজ্জা না দিয়ে খুটিনাটি কাজ সেরে ফেলতে ব্যস্ত হলো।
মেয়েকে বলছিল কাজের সময় আবাইয়া না পরতে। তবে মেয়ে পরেই রইল। যাও খুলে ছিল মুরগী কাটতে কেটে পুনরায় পরে নিয়ে ছিল। আবাইয়ার কারণে ঠিকভাবে কাটতে পারছিল না সে। এখন হাতের কাজ থাকায় আর খুলল না আবাইয়া। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
মুরগীর রোস্ট,পোলাও,বিরিয়ানি,পুই ও পালং শাক, সাদা ভাত, ডিমের অমলেট,ভাজা মাছ, ইলিশ মাছ, গরুর মাংসের বুনা, কলিজার বুনা, নানান ভর্তা বানিয়ে পরিবেশন করছে আনজুমা ও বিউটিখালা। রান্না শেষ করতে তিনঘণ্টা লেগেছে বটে। প্রত্যক্ষভাবে সময় মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় হতো। কিন্তু হয়নি কেননা বিউটিখালা নিজ বাসা থেকেও রান্না করে আনজুমার বাসায় আনছিল। এতে কাজ সহজ হয়ে যায়। আরভীক আদর্শ স্বামীর মত বার দুয়েক কিচেনে আসতো। যেন সে সত্যিকার স্বামী! যা আনজুমার কাছে ন্যাকামি ও বিরক্ত লাগছিল। মুখ ফুটে সকলের সামনে বলতেও পার ছিল না। বিউটিখালা যখনি কিচেন থেকে যেতো আরভীক কৌশলে প্রবেশ করবেই করবে। শাকে হাত দিতে নিয়ে ছিল ব্যস আনজুমা গরম খুন্তির মৃদু ছ্যাকা দেয় আরভীক এর হাতে। বেচারা মুখ ফুলিয়ে বলে,

‘ভালাইকা যামানাই নেহি রাহা! ভালো করতে এসেছিলাম। রমণী আমাকে ছ্যাকা দিয়ে কাঁচা বানিয়ে দিল। এখন এ হাতের ছ্যাকা কে দূর করবে শুনি।’

আনজুমা ক্ষেপে যাওয়া গলায় বলে,

‘খুন্তির ছ্যাকা কম হয়েছে! আসেন এবারেরটা মুখে লাগিয়ে দেয়।’

অতএব, লেজ গুটিয়ে তড়িঘড়ি কিচেন থেকে পালিয়ে আসে আরভীক। যাওয়ার পূর্বে আনজুমাকে শুনাতে ভুলেনি।

‘মনে থাকবে রমণী এ ছ্যাকা তোমাকেও দেব হাহ্।’

শুনে মোটেও পাত্তা দিল না আনজুমা। হিতে বিপরীত ভাব নিয়ে ‘ধুর ধুর’ করে তাড়িয়ে দিয়ে দেয়। খাবার প্রস্তুত হওয়ায় খেতে ডাকে সবাইকে। তারা এসে ডাইনিং টেবিলে বসে খাবার মুখে নেই। প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয় তারা। আনজুমা তখন খেল না। প্লেটে সাদা ভাত ও অমলেট নিয়ে আশফিকে খাওয়াতে বসে। আড়চোখে আরভীক মা-ছেলের দিকে ঘোরলাগা নজরে চেয়ে খেয়ে যায়। সৌহাদ্য এ নজরের দৃষ্টিপাত বুঝে মুচকি হেসে তার মনের স্থানকৃত জায়গাটি মুছে দেয়। তার মন বলে, ‘ব্যক্তি রসিক হলেও মন্দ নয়। আনজুমা ভাবীর জন্য উপযুক্ত বটে।’
ধীরস্থির মনে খেতে থাকে। বিউটিখালা গরুর বুনা খাওয়ার ইচ্ছে পোষণ করায় আরভীককে বলে,

‘বাবা তোমার পাশে গরুর বুনার বাটিটা একটু নিয়ে দাও।’

কেউ কোনো কথা বলেছে কিনা তাও কর্ণপাত হলো না আরভীক এর কানে। একধ্যানে মা-ছেলের দিকে তাকিয়ে খাচ্ছে। বিউটিখালা বিষয়টি আমলে নিয়ে নিজেই উঠে দাঁড়ায়। আরভীক এর প্লেটে গরুর বুনা আংশিক দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। ধ্যান ফেরে তার। থতমত খেয়ে প্লেটের দিকে তাকিয়ে বলে,

‘ওহ থ্যাংকস খালু! আমার খেতে মন চেয়ে ছিল।’

‘হুম এতক্ষণ মন অন্যদিকে ছিল।’

বিউটিখালার কথায় আরভীক কিছু মনে করেনি। তবে মাথা চুলকে হাসি দিল। বাকিরা মিটমিটিয়ে হাসে। আনজুমা খাবারের টেবিলে সবাইকে গুপ্তচরের মত ফসুরফসুর করতে দেখে এগিয়ে এলো। মেয়েকে আসতে দেখে চুপ হয়ে যায়। আনজুমা ভ্রু কুঁচকে সন্দেহময় কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে।

‘কি হয়ছে!’

‘বিয়ে হচ্ছে!’

‘এ্যা কার!’

‘তুমি জেনে কি করবা! তুমি তোমার নাকে ঘি দিয়ে ঘুমাও। দিনদুনিয়া উল্টে গেলেও মেয়েটার খবর থাকে না।’

এমুর্হুতে অবস্থানস্থল গরম করার কোনো ইচ্ছে নেই আনজুমার। চুপ করে হজম করে নিল আরভীক এর ঠেসমার্কা কথা। তার দিকে ভস্মীভূত দৃষ্টি রেখে নিজের জন্য প্লেটে খাবার বাড়ে। আশফি খেয়ে সোফায় হাত-পা ছড়িয়ে বসে আছে। ভাব এমন যেন পেটপুড়ে খেয়ে মোটু হয়ে গেছে। আনজুমা প্লেট নিয়ে আশফির কাছে যেতেই আরভীকরা অট্টহাসি দিয়ে কয়েক সেকেন্ডে নিরব হয়ে যায়।

২০.
‘আহ্ অঞ্জয় পেট ভারি হয়ে গেছে। এত খেলাম কেন!’

অঞ্জয় নিশ্চুপে গাড়ি চালাচ্ছে। বেচারাকে ঐ সময় ঘুমানোর জন্য বললেও। পরক্ষণে পল্টে খেয়ে চলে আসতে বলে আনজুমার বাসায়। তাও সঙ্গে ফাহাদ,সায়াজকে নিয়ে। এসে সুস্বাদু খাবার খেল বটে। কিন্তু তার ঘুম মহারাজ অতিষ্ঠ তার উপর! লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
ফ্রন্ট সিটে ফাহাদ, পিছনের সিটে আরভীক ও সায়াজ বসে আছে। আনজুমার বাসা থেকে বেরিয়ে অঞ্জয়কে সোজা ফার্মহাউজে নিতে বলে গাড়ি। যা শুনে আপনাআপনি মুখ হা হয়ে যায় ফাহাদ ও সায়াজের। তারা নিশ্চিৎ বন্ধু তাদের হাঙ্গামা করছে। এ থেকে বাঁচতে তাদেরকে আনছে! আমতা আমতা করে কেটে পড়তে নিল। যা সম্ভব হয়নি আরভীক এর জন্য। শক্ত করে চেপে ধরে দুজনকে বসিয়ে দেয়। ফাহাদ মুখ ফুলিয়ে বলে,

‘ডুড সো টাইয়ার্ড! ঘুম দিমু বাসায় গিয়া।’

‘পুলিশ মানুষের ওত ঘুমাতে নেই।’

কথাটি বলে ফোন বের করে পাবজি খেলায় মন দিল। সায়াজ ঠোঁট পাঁকিয়ে আরভীক এর গলা চেপে ধরে বলে,

‘ডুড তুই দুশমন মইরা যাহ্। শান্তিতে বাঁচতে তো দিবি না মর।’

গলা চাপছে না মালিশ করছে বুঝার চেষ্টা করে আরভীক। ফোনের পাবজি দেখিয়ে বলে,

‘দেখ ঐ পাগল এনিমি গুলি ছাড়া থাপ্পড় মারছে। এখন আমি এক গুলিতে টাই টাই ফিস করে দেব।’

বন্ধুর কথা শুনে সায়াজ গলা ছেড়ে নির্মলচিত্ত ভাব নেই। আরভীক এর দিকে হ্যাবলামার্কা হাসি দিয়ে বলে,

‘ডুড আইম জাস্ট জোকিং!’

‘বাট আইম নট জোকিং হেহে।’

প্রত্যত্তুর পেয়ে সায়াজ গর্দভমার্কা চেহারা করে ফেলে। ফাহাদ আলাপ শুনে সিটে বসা অবস্থায় হাসিতে গড়াগড়ি খেল। সায়াজের মুখটা এটুকুন হয়ে যায়। বাঁশ খেয়েছে বলে কথা। বিপরীতে ফাহাদের হাসি যেন কাটা গায়ে নুনের সিটা দিচ্ছে। ঠোঁট উল্টে ঠাসস করে মাথার মধ্যে বারি দেয় ফাহাদের। সে বারি খেয়ে হাসি থামানোর চেষ্টা করে স্থীর হলো। সায়াজকে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘বল এবার খুব তো উড়ছিলি।’

বাকাঁ হাসে আরভীক। সায়াজের মুখ ফাঁটা বেলুনের মত চুপসে গেল। অঞ্জয় গাড়ি থামালে
আরভীক এর ফোনটা হাত থেকে পড়ে যায়। সে মিছে রাগ দেখিয়ে বলে,

‘তুই আমার এনিমির মিত্র। শেষটারে মারতে গেলেই থামিয়ে দেস। ছেহ্ কোন দিন না জানি তোকেই পাবজিতে ঢুকিয়ে দেয়।!’

ফোনটি নিচ থেক উঠিয়ে পকেটে রাখে। গাড়িতে বেরিয়ে সচল পায়ে ভেতরে প্রবেশ করে তারা। অঞ্জয় বসের কথা শুনে কি হলো বুঝার তাগিদে সময় নেই। মাথা চুলকে ভাবতে নিলে ভেতর থেকে উচ্চস্বরে আরভীক বলে,

‘ভাবনার রাজা পরেও ভাবতে পারবেন। ক্রিপা করিয়া ভেতরে আহিলে খুশি হতাম।’

বসের কথা শুনে তড়িৎবেগে বেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। ফাহাদ ও সায়াজকে ভর্য়াত চোখে তাকাতে দেখে স্বাভাবিক রুপে দাঁড়িয়ে রইল অঞ্জয়। বসের সাথে ভয়ংকর দৃশ্য দেখে অভ্যস্ত। দুবন্ধুর কাঁধে হাত রেখে শান্ত্বনার বাণী ছু’ড়ে দেয়।

‘কি করবেন কাজ সামাল দিতে প্রস্তুত হোন!’

তিনজন চোখ বুজে ব্যর্থ নিরলস শ্বাস ছাড়ে। কান বন্ধ করতে চেয়েও পারল না। রীতি মোতাবেক ক্রি’মি’নাল কে শায়েস্তা করায় চিৎকার সহ্য করা লাগবে। যে কোনো শর্তেই হোক! আরভীক গায়ে এপ্রোন,হাতে গ্লাভস,চোখে সেফটিগ্লাস,মুখে মাস্ক পড়ে নেই।ওয়াটার বেড এর সামনে এসে দাঁড়ায়। ফার্মহাউজে আসার পূর্বে অঞ্জয় গার্ড দুটোকে ওয়াটার বেড নিয়ে আসার আদেশ দিয়ে ছিল। কিন্তু তার অজান্তে আরভীক কল দিয়ে ঠান্ডা বেডকে ফুটন্ত গরম পানির বেডে বদলে দিতে বলে। গরম পানির ছ্যাকা লাগার ভয় হলেও গার্ড’স ধীরস্থিরে রুমে বেড এনে রাখে। বেডের কভারে হাত দিলেই যে কেউ ছ্যাকা খাবে নিশ্চিত!
চেয়ারে বাঁধা অবস্থায় কাতরাচ্ছে সখি ও ক্লেভ! ক্লেভের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দেয় আরভীক। ঠোঁটের কোণায় বাঁকা হাসি বিরাজমান। এপ্রোনের পকেট থেকে ইঞ্জেকশন বের করে। ওয়াটার বেডের মধ্যে পুষ করে দেয়। সখি ও ক্লেভ তাদের মরণ দেখতে পাচ্ছে। মুখ বুজে চিৎকার করতে না পারলেও ‘উম উম উম’ করে কাতরে যাচ্ছে। সখি ইঞ্জেকশন পুষ করার দৃশ্যটি না বুঝলেও ক্লেভ বুঝেছে। আরভীক দুহাত এপ্রোনের পকেটে গুজে। গার্ডকে অর্ডার করে।

‘গার্ড’স প্লিজ টেক দেম দিজ বেড।’

ক্লেভ আতঙ্কিত চোখে মাথা ‘না না’ করে প্রাণ ভিক্ষা চাচ্ছে। যার উপর দয়া দেখায়নি আরভীক। লোভাতুর দৃষ্টিতে হিংস্রভাবে চেয়ে আছে তাদের মরণ দেখার জন্য। যেই না ক্লেভকে বেডে রাখবে তার পূর্বেই আরভীক ‘স্টপ’ বলে। এতে থেমে যায় গার্ডের হাত। ক্লেভ চোখ বুজে ছিল। কিন্তু ‘স্টপ’ শুনে প্রাণআয়ু পেয়েছে ভেবে চকচকে চোখে তাকায়। আরভীক সেই চোখের দৃষ্টি অনুসরণ করে তার ঘনিষ্ঠ হলো। ক্লেভের চোখ জন্ডিস রোগীর মত হলুদ বর্ণ হয়ে গেছে, শরীর কালচে-লাল বর্ণ হয়ে গেছে, পেটের মধ্যে গুড়গুড় শব্দের তীব্রতা চারজনের কর্ণ ভেদ করছে। আরভীক বাদে বাকিরা সেই শব্দের উৎস আর কারণ খোঁজে পাচ্ছে না। ক্লেভের পেটের দিকে তাকিয়ে বাকাঁ হেসে জিজ্ঞেস করে।

‘কেমন লাগছে মাকড়সার বাপ হয়ে! প্রথমবার বাচ্চা জম্মাবে তোর। হাউ ইট’স ফিল ডু ইউ নো দ্যাট! ফিল লাইক এ হেলল!’

শেষাক্ত কথাটি জোরালো ভাবে বলে ক্লেভের পেট বরাবর বারি দেয়। যন্ত্রণায় ‘উমম’ করে উঠে ক্লেভ। সখি জিন্দা লাশের মত চেয়ে থাকে। গার্ডকে হাতের ইশারায় ওয়াটার বেডের উপর ফেলতে বলে। তারা ছু’ড়ে দেয়। সঙ্গেই দুজনের শরীর বেডের উপর ধপ করে পড়ে। পড়লেও বাঁচতো কিন্তু বেডের পানি ছিল সালফিউরিক এসিডযুক্ত। আরভীক সালফিউরিক এসিড ইঞ্জেকশনে করে আনিয়ে রেখেছিল।
দুজনের শরীর গলিয়ে খসখসে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। ছাই ছাই হয়ে যায় তাদের শরীর। ফাহাদ,সায়াজ আর অঞ্জয় চুপচাপ দৃশ্যটি দেখে গেল। ভাগ্যবশত মুখে মাস্ক ছিল তাদের। ফলে তিনজনের নাকে দুর্গন্ধ প্রবেশে বাধা পেল।
তিনজন ঢোক গিলে প্রশান্তির শ্বাস ছাড়ে।
কয়েক মিনিট পর রুমের পারিপার্শ্বিক দশা নিরবচ্ছিন্ন হলো। চোখের কোণায় জমে উঠা অশ্রু হাতের পিঠ দিয়ে মুছে নেই আরভীক। দহনকৃত হৃদয়ে উদ্বেগহীন হলো। যে উদ্বেগ একবছর আগে জমিয়ে রেখেছিল। তা নিমিত্তে ইতি টেনে হাতের ময়লা ঝেড়ে ফেলল।
ফাহাদ আরভীক এর নিরবধি রুপ দেখে বাক্যহীন বন্দোব্যবস্থা করে। তার কাজ কি সেটা সে বুঝে নিয়েছে! সায়াজও বিনা বাক্যে বেরিয়ে যায়। তার হাতের নাগালে আরভীক চাবি দিয়ে ছিল। সকলের অগোচরে গুপ্ত কণ্ঠে বলে ছিল।

‘চাবি দিয়ে তোর কাবার্ড খুললে একটা ডকুমেন্ট পাবি। সেটা স্টাডি করে কালকের মধ্যে হেড নিউজ ছড়িয়ে দিবি।’

কথা মোতাবেক সে চলে যায় তার অফিসে। ফাহাদ গার্ডের সহায়তায় নোংরা বেডকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। একাকিত্বে নিরহ অঞ্জয় কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। আমতা আমতা করে বসের কাছে গিয়ে অনুনয় কণ্ঠে বলে,

‘বস আমি ভাবছি ঘুমা..।’

তার কথা পূর্ণ হতে না দিয়ে আরভীক হাত উচিঁয়ে হামি দিতে থেকে বলে,

‘খেয়ে পেট টাইড হয়ে গেছে। বউ-অবউয়ের রাঁধার হাত দারুণ মাশাআল্লাহ্। ঘুম পাচ্ছে। তুই যাহ্ আমার পদে আজ তুই বসে কাজ করবি।’

চূড়ান্ত বাণীগুলো শুনে ভোঁতা ইঁদুরের মুখ বনে গেল অঞ্জয়ের। সে নিজের মুখে আঙুল চেপে রাখে পণ করে জীবনেও আর মাঝখানে নাক কি, পুরু শরীরও গলাবে না। গলালেই তার বিপদ এমনভাবেই চলে আসে। কোথায় ঘুম দেবে ভেবে ছিল তা দিতেই পারল না। ঢুলুঢুলু পায়ে অফিসের জন্য রওনা দেয়। আরভীক সেদিক তাকিয়ে আনমনে হেসে বলে,

‘ভাই আমার আসলেই বলদ!’

চলবে…..