#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#Season_2
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৪২
আইরাত এখনো হস্পিটালেই আছে। তাকে আরো কিছুদিন এখানেই থাকতে হবে। আব্রাহাম আগে থেকে যেনো এখন আরো কাজ কম করে। নিজের সব সময় টুকু আইরাত কে দেয়। সকালে আইরাত কে ঘুম ভেঙে উঠানো থেকে শুরু করে রাতে আবার ঘুম পারানো পর্যন্ত সব কাজ আব্রাহাম নিজে করে। আইরাত কে এক মিনিটের জন্যও একা ছাড়ে না সে, নিজে থেকে দূরে রাখে না। আজও তার ব্যাতিক্রম নয়। সাজ-সকালেই আব্রাহাম এসে পরেছে হস্পিটালে। এসেই সোজা আইরাতের কেবিনে চলে যায়। গিয়ে দেখে আইরাত আজ উঠে গিয়েছে তার আসার আগেই। আইরাতের পাশে একজন নার্স বসে আছে। ফ্রেশও হয়ে গিয়েছে সে। আব্রাহাম কে আসতে দেখে আইরাত মুচকি হাসে। আব্রাহাম নিজের শার্টের হাতা গুটিয়ে নিয়ে আইরাতের পাশে বসে পরে। নার্স তখন উঠে চলে যায়।
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল!
আইরাত;; আচ্ছা আপনি যে এত্তো সময় এখানে আমার কাছে থাকেন, ওদিকে আপনার কাজ কে সামলায়?
আব্রাহাম;; কাজ বলতে আর কি। এখানে এত্তো গুলো ক্লাইন্ট আছে তারাই সব সামলায়। আর দেশে তো রাশেদ-মেনেজার, অয়ন-কৌশল সবাই আছে। চিন্তা কিসের!
আইরাত;; হুম বুঝলাম।
আইরাতের কেবিনে টিভি লাগানো ছিলো সেখানেই তাকিয়ে তাকিয়ে আইরাত কার্টুন দেখছে। আব্রাহাম তার চোখ অনুসরণ করে সেদিকে তাকায়।
আব্রাহাম;; আচ্ছা খেয়েছো তুমি?
আইরাত;; না
আব্রাহাম;; হুমম।
আব্রাহাম নার্স কে বলে এক বাটি সবজির স্যুপ নিয়ে আসে। স্যুপের বাটি নিয়ে বসতেই আইরাত তা দেখে নিজের নাক-মুখ সব কুচকিয়ে ফেলে৷
আব্রাহাম;; এমন করে লাভ নেই সোনা। হা করো জলদি জলদি।
আইরাত;; আচ্ছা শুনুন না আমি না আসলে খাবো না। মানে সিরিয়াসলি সবজির স্যুপ ইশশশ এগুলো নাকি মানুষ খায়।
আব্রাহাম;; না গরু-ছাগলে খায়।
আইরাত;; আসলেই তাই।
আব্রাহাম;; ত্যাড়ামি বাদ দিয়ে হা করো তো।
আইরাত;; খাবো না।
আব্রাহাম;; এর পর দুধ খাবে এক গ্লাস হা করো।
আইরাত;; 🥴
আব্রাহাম;; এই মেয়ে!
আইরাত;; আমার মাথা ঘোরাচ্ছে এখনই।
আব্রাহাম;; কিন্তু আমি তো তোমার সাথে এখন তেমন কিছু করলাম না। মাথা ঘোরানো, টক খেতে ইচ্ছে তো করবেই কিন্তু কিছুদিন পর।
আইরাত;; চুপ করেন। বেশরম পোলা।
আব্রাহাম;; বেশরম পোলার এখনো অনেক বেশরম গিরি করা বাকি আছে জান তবে তার আগে তুমি জলদি জলদি ঠিক হয়ে যাও। এবার হা করো।
আইরাত;; আমার সত্যি খুব বাজে লাগছে খেতে।
আব্রাহাম এবার তার হাত থেকে স্যুপের বাটি টা রেখে দিয়ে দুহাত ভাজ করে সরু দৃষ্টিতে আইরাতের দিকে তাকায়। আইরাত তো চুপসে গেলো।
আব্রাহাম;; খাবে না তুমি?
আইরাত;; না
আব্রাহাম;; কি বললা?
আইরাত;; না মানে..
আব্রাহাম;; আবার বলো!
আইরাত;; আ আ আসলে..
আব্রাহাম;; কি বললি আরেকবার বল।
আইরাত;; আমি খাবো খাবো, আমি খাবো।
আব্রাহাম;; এইবার এসো লাইনে।
আব্রাহাম চামুচ দিয়ে আইরাত কে খাইয়ে দিতে লাগে। খেতে খেতে হঠাৎ টিভি তে একটা নিউজ ব্রেকিং হিসেবে দেখায়। টিভিতে জার্নালিস্ট এর চিল্লানো তে আইরাত সেদিকে তাকায়। নিজের কথা মনে পরে যায়। সেও তো এই কাজেই নিযুক্ত ছিলো। আব্রাহাম খাইয়ে দিচ্ছিলো আইরাত কে তখনই নিউজ আসে চেলাপেলা সহ তায়াফের জঘন্য রকমের মৃত্যুর। টিভিতে তাদের লাশও দেখানো হয়েছে। আর এগুলো গত ২-৩ দিন যাবত লাগাতার দেখিয়েই যাচ্ছে। টিভিতে এগুলো দেখেই আইরাত তার চোখ সরিয়ে নেয় দ্রুত। ইশশশ কি বিভৎস দৃশ্য। আব্রাহাম জলদি হাতে রিমোট নিয়ে টিভি বন্ধ করে দেয়। তবে আইরাত অবাক তায়াফের লাশ দেখে।
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল জাস্ট ইগনোর দ্যাট।
আইরাত;; আব্রাহাম!!
আব্রাহাম;; হুমম।
আইরাত;; সত্যি একটা কথা বলুন তো!
আব্রাহাম;; হুমম!
আইরাত;; আপনি এদেরকে মেরেছেন তাই না!
আব্রাহাম;; হ্যাঁ
আইরাত;; কেনো মারলেন?
আব্রাহাম আইরাতের দিকে তাকায়।
আইরাত;; না মানে কি করেছিলো তারা আর তায়াফ তো….
আব্রাহাম;; আগে তুমি আমায় বলো যে তুমি কি তায়াফ কে চিনতে?
আইরাত;; আব…হ্যাঁ চিনতাম বলতে হোটেলেই কয়েক বার দেখা হয়েছে এই যা।
আব্রাহাম;; তোমাকে চিনতো?
আইরাত;; হ্যাঁ হয়তো।
আব্রাহাম;; কোহিনূরের আসল চোর সেই ছিলো।
আইরাত;; কিহ?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ, আর তুমি যে তায়াফ নামে কাউকে চেনো তা আমাকে আগে বলো নি কেনো?
আইরাত;; আমি ভেবেছিলাম যে কোন কাজের না তাই আর কি…
আব্রাহাম;; তোমায় আগেই বলেছিলাম আমি যে এখানে কোন এক পিপড়ের সাথেও তোমার দেখা হলে আমাকে আগে বলবে। তুমি বলো নি।
আইরাত;; সরি জামাইজান। আর আসলে মাথা থেকেই বের হয়ে গিয়েছিলো আমার। তো এই কোহিনূরের জন্যই আপনি মেরেছেন ওকে?
আব্রাহাম;; শুধু তাই না।
আইরাত;; তাহলে!
আব্রাহাম;; আমার জিনিসে নজর দিলে মারবোই তো তাই না।
আইরাত বুঝলো ব্যাপার টা।
আইরাত;; তাই এতো বাজেভাবে মারবেন আপনি?
আব্রাহাম;; তাও তো কম হয়েছে।
আইরাত;; কিন্তু আ……
আব্রাহাম;; চুপ।
আব্রাহাম আইরাত কে খাইয়ে দেয়। কিছুক্ষন পর ডক্টর আসে আইরাতের মাথার ব্যান্ডেজ খুলে দিবে বলে। আইরাত সোজা হয়ে বসে আর আব্রাহাম তার পাশে দাঁড়িয়ে পরে। ডক্টর খুব সাবধানে আইরাতের মাথার ব্যান্ডেজের এক পাশে কাচি দিয়ে কেটে ফেলে তারপর তা আস্তে আস্তে করে খুলে ফেলে। হালকা মাথা টা চক্কর দিয়ে ওঠে তবে তা নরমাল ছিলো। ইনশাআল্লাহ কিছুদিনের মাঝেই আইরাত সুস্থ হয়ে যাবে। হালকা পাতলা কিছু ক্ষত থাকবে যেগুলো প্রোপার কেয়ার আর মেডিসিন নিলেই ঠিক হয়ে যাবে।
আব্রাহাম;; ঠিক আছো?
আইরাত;; হ্যাঁ একদম।
আব্রাহাম;; হুমমম।
আইরাত;; জামাইজান আমরা বাড়ি কবে যাবো?
আব্রাহাম;; আগামীকাল ই বেবিগার্ল।
আইরাত;; না আমরা দেশে কবে যাবো?
আব্রাহাম;; কিছুদিন পরই। বাট একটা জিনিস!
আইরাত;; কি?
আব্রাহাম;; আমাদের হানিমুন তো হলো না।
আইরাত চুপ করে বসে থাকে।
আইরাত;; যা যা হলো এইযে এতো দৌড়ঝাপ এর মাঝে আবার হানিমুন!
আব্রাহাম;; হ্যাঁ। আচ্ছা দেশে যাই তারপর দেখা যাবে।
আইরাত;; হুমম।
এভাবেই সেইদিন টা গেলো। রাতে আব্রাহাম আইরাতের পাশেই থেকে যায়। পরেরদিন সকাল হলে আব্রাহাম সব নার্স দের বলে কিছুক্ষণের জন্য বাইরে যায়। কয়েক ঘন্টা পর আবার হস্পিটালে এসে পরে। এসে দেখে আইরাত বসে আছে। নার্স দের সাথে কেমন তেড়ে তেড়ে কথা বলছে সে। ব্যাপার টা আব্রাহাম বুঝতে পারে। আইরাতের ড্রেস চেঞ্জ করতে হবে আর সে নার্স দের হাতে তা করাবে না। আব্রাহাম ইশারা দিয়ে সব নার্স দের কেবিন থেকে বের হয়ে যেতে বলে। তারা বাইরে বের হয়ে আসে। আব্রাহাম গিয়ে আইরাতের সামনে বসে পরে।
আব্রাহাম;; কি হয়েছে বেবিগার্ল?
আইরাত;; কিছু না।
আব্রাহাম;; ড্রেস কেনো চেঞ্জ করছো না। আজ তো আমরা বাসায় যাবো তাই না!
আইরাত;; আমার ভালো লাগে না।
আব্রাহাম এক ক্ষীন দম ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে পরে। কেবিনের জানালার বড়ো পর্দাগুলো ভালোভাবে টেনে দিয়ে আসে। তারপর আইরাতের পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পরে। একটা ব্যান দিয়ে তার চুলগুলো বেধে দেয়। কিছু না বলেই আইরাতের পরনের জামার পেছনের বাটন খুলে দিতে লাগে। ভরকে গিয়ে আইরাত তড়িঘড়ি করে বলে ওঠে…
আইরাত;; আপনি করছেন কি?
আব্রাহাম;; তো বাসায় কি আমি এখন তোমাকে হস্পিটালের ড্রেস পরিয়ে নিয়ে যাবো?
আইরাত;; না।
আব্রাহাম;; তাহলে চুপ করে বসে থাকো আর যা করছি তা আমায় করতে দাও।
আইরাত চুপ হয়ে যায়। আব্রাহাম আইরাতের জামার বাটন খুলে দুপাশে কাধ থেকে নামিয়ে দেয়। আব্রাহামের চোখ যায় আইরাতের কোমল কাধ-পিঠের ওপর। সাদা চামড়ায় কেমন একটা কালচে দাগ রয়েছে। একটাই। আব্রাহাম তার ওপর হাত দিয়ে হালকা ভাবে ছুইয়ে দেয়। আইরাতের কেমন যেনো লাগে। তার ভয় যদি ক্ষত আব্রাহামের হাতে লাগে। সে চায় না তার জন্য আব্রাহামের কিছু হোক।
আইরাত;; আব্রাহাম প্লিজ ধরবেন না।
আব্রাহাম আইরাতের কথা এক কান দিয়ে শুনে আরেক কান দিয়ে বের করে দিয়ে বলে ওঠে…
আব্রাহাম;; আমি ধরবো, আমি ছুবো সব আমিই করবো। তাতে তোমার কি!
এই বলেই আব্রাহাম আইরাতের ক্ষত স্থানে গাঢ় চুমু এঁকে দেয়। আইরাতের ড্রেস চেঞ্জ করে একটা ঢোলাঢুলা লম্বা জামা পরিয়ে দেয়। হাতে সুই লাগানো ছিলো সেটা ডক্টর এসেই খুলে দিয়েছে যদিও কিছুটা ব্লাড বের হয়েছে তাতে। আইরাতের যাবতীয় সব জিনিস গার্ড কে দিয়ে গাড়িতে তুলে নিয়েছে আব্রাহাম। আইরাত ভালোভাবে হাঁটতে পারে না এর জন্য ডক্টর শুধু বলেছিলো যে আইরাত কে হুইল চেয়ারে বসিয়ে তারপর নিয়ে যেতে। আল্লাহ, ডক্টরের এটা বলতে দেরি কিন্তু ডক্টরের গুষ্টি উদ্ধার করতে দেরি না আব্রাহামের। আইরাত খুব কষ্টে আব্রাহাম কে সামলিয়েছে ঝামেলা করতে মানা করেছে। আব্রাহামের মতে “আমার বউ কে হুইল চেয়ারে বসানোর কথা মুখে তো দূর মাথায়ও আনার সাহস হলো কি করে তোর!?”। আইরাত সত্যি খুব কষ্টে সামাল দিয়েছে তাক্ব। আব্রাহাম আইরাত কে পাজাকোলে তুলে নেয়। আইরাতও আব্রাহামের গলা জড়িয়ে ধরে চুপচাপ বসে থাকে। আব্রাহাম যে আইরাত কে এতো বড়ো হস্পিটালের মাঝ দিয়ে কোলে করে নিয়ে আসছে সবাই তাকিয়ে ছিলো তাদের দিকে। তাতে আব্রাহামের কি সে তার মতো করেই যাচ্ছে। আইরাত কে বাইরে এনে গাড়িতে তুলে নেয়। তারপর আবার নিজের বাড়ি। তাদের সেই বাড়ি যা আব্রাহাম শুধুমাত্র তার আর আইরাতের জন্য নিয়েছিলো। তাদের স্বপ্নের বাড়ি। সেখানে টাফি-সফটিও আছে। আজ এতোদিন পর নিজের বাড়ি যাচ্ছে তারা। হয়তো কিছুদিন পর নিজের দেশের মাটিতেও পা রাখা হবে তাদের।
।
।
।
।
চলবে~~
#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#Season_2
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৪৩
সাদা পর্দা ভেদ করে রোদের মিষ্টি আলো মুখের ওপর আচড়ে পরতেই কপাল জোড়া খানিক কুচকে ফেলে আইরাত। চোখ গুলো মেলে তাকায়। নিজের দিকে তাকাতেই দেখে শুধু একটা ফ্রক পরে বুক অব্দি চাদর টেনে শুয়ে আছে সাদা ধবধবে বিছানায়। পাশে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই। হালক বাতাস এসে রুমের পর্দা গুলো নাড়িয়ে দেয়। আস্তে করে একটু উঠে বসতে ধরে কিন্তু পারে না। তখনই আব্রাহাম আসে হাতে একটা ব্রেকফাস্টের ট্রে নিয়ে।
আব্রাহাম;; আরে আরে দাড়াও, আমি আসছি তো।
আব্রাহাম এসে আইরাত কে ধরে আস্তে করে উঠিয়ে বসিয়ে দেয়। তার পিঠের পিছে একটা বালিশ রেখে দিয়ে হেলান দিয়ে বসায়। আব্রাহাম ব্রেকফাস্টের ট্রে টা এনে এক সাইড দিয়ে রেখে দেয়। আইরাতের সামনে আসা খোলা চুলগুলো হাত দিয়ে পেছনে ঠেলে দেয়। সে এক মনে আব্রাহামের দিকে তাকিয়েই আছে৷ আব্রাহাম আইরাতের কাছে এগিয়ে গিয়ে মাথার পেছনে হাত দিয়ে কপালে চুমু দিয়ে দেয়। আইরাতও আব্রাহামের চুল গুলো এলোমেলো করে দেয় হাত দিয়ে। তবে হঠাৎ বসে থাকতে থাকতেই আইরাত কপাল কুচকে মাথার আশে হাত দিয়ে দেয়। আব্রাহাম তো হাইপার হয়ে গেলো।
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল আর ইউ ওকে? মাথায় ব্যাথা করছে?
আইরাত;; না না ঠিক আছি আমি।
আব্রাহাম;; হুমম। আচ্ছা খেয়ে নাও।
আইরাত তাকিয়ে দেখে ট্রে তে ডিম, দুধ, কলা, জুস আর স্যুপ। যা দেখে আইরাত মুখ টা ভেটকিয়ে দেয়।
আব্রাহাম;; মুখের এই অবস্থা কেনো? (গম্ভীর ভাবে)
আইরাত;; জুস আর কলা পর্যন্ত ঠিক আছে আর বাকি গুলো কেনো?
আব্রাহাম;; এগুলো সব মাথায় ঢালবো তো তাই আর কি।
আইরাত;; এহ?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ।
আইরাত;; কিন্তু আমি তো এগুলো…..
আব্রাহাম;; তুমি এগুলো খাও না। কি তাই তো!
আইরাত;; অবশ্যই, আবার জিগায়।
আব্রাহাম;; কিন্তু এগুলো এখন তোমার দরকার বেইবি।
আইরাত;; আব্রাহাম আমি বলতে পারবো না যে আমার এগুলো কি পরিমাণ বিরক্তি লাগে খেতে। আপনি বুঝেন না কেনো? আমার কি কি পছন্দ আপনি জানেন না!?
আব্রাহাম দেখলো আইরাত রেগে যাচ্ছে।
আব্রাহাম;; আচ্ছা আচ্ছা কুল ডাউন। রেগো না। লিসেন ডিম সিদ্ধ খেতে হবে, দুধও খেতে হবে আর স্যুপও। এগুলোতে ক্যালসিয়াম, আয়রন আছে। মোট কথা তুমি শুকিয়ে গেছো এই কয়েকদিনে যা আমার মোটেও ভালো লাগে না। এখন আমি তোমাকে খাওয়াবো আর গোলুমোলু বানিয়ে ফেলবো।
আইরাত;; 😑
আব্রাহাম;; মুখ খুলো।
আইরাত;; আচ্ছা এগুলো কি আপনি রান্না করেছেন?
আব্রাহাম;; অবশ্যই, আবার জিগায়।
আব্রাহাম জাস্ট আইরাত কে হাসানোর জন্য বলেছে আর আইরাতও আব্রাহামের কথা শুনে খিলখিল করে হেসে দেয়।
আব্রাহাম স্যুপ আইরাতের মুখে তুলে খাইয়ে দিচ্ছে আর আইরাত হাতে জুস নিয়ে বসে আছে।
আইরাত;; আপনিও খান।
আব্রাহাম;; হুমম।
আব্রাহাম আইরাত কে অর্ধেক জুস টুকু খাইয়ে দিয়ে তারপর নিজে খেয়ে নেয়। তবে এখানে একটা ব্যাপার হচ্ছে যে আব্রাহাম-আইরাতের এই বাড়িতে কোন স্টাফ নেই। একটা স্টাফও নেই। বাসায় শুধুমাত্র দুইজন। গার্ড প্রচুর পরিমাণে রয়েছে তবে সব বাড়ির বাইরে আর চারিপাশে। আব্রাহাম চায় না যে তার আর আইরাতের এই বাসায় তাদের দুজন ছাড়া অন্য কেউ থাকুক।
খাওয়ানো শেষে ট্রে টা হলরুমে রেখে আসে। তারপর রুমে এসে দেখে আইরাত বিছানাতে থেকে নামার ট্রাই করছে। আব্রাহাম এবার একটু ধমক দেয়।
আব্রাহাম;; আসলেই বেশি বুঝো তুমি।
আইরাত;; 😒
আব্রাহাম;; কি? আমি কি নেই নাকি। বলে যে গেলাম যে আমি আসছি একা নামবে না, মাথা ঘুরে পরে যাবে। ঘাড় ত্যাড়া মেয়ে।
আব্রাহাম এসে আইরাত কে কোলে তুলে নেয়। ওয়াসরুমের কাছে গিয়ে পা দিয়ে দরজা খুলে দেয়। তারপর ভেতরে গিয়ে বড়ো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পরে। আইরাতের ব্রাশে টুথপেষ্ট লাগিয়ে দেয়। আইরাত আস্তে আস্তে ব্রাশ করছে আর আব্রাহাম তার মাথার চুলগুলো ওপরে বেধে দেয়।
অবশেষে ফ্রেশ হয়ে এসে পরে। গায়ে বাথরোব জড়িয়ে রুমে এসে পরে। আব্রাহাম খেয়াল করে আইরাতের চুলের আগাল বেয়ে টপ টপ করে পানি পরছে। একটা টাওয়াল হাতে নিয়ে আব্রাহাম দ্রুত আইরাতের চুলগুলো প্যাচিয়ে দেয়।
আব্রাহাম;; এই মেয়ে!
আইরাত;; কি হইছে?
আব্রাহাম;; আমি বহুত ভালাবাসি তরে।
আইরাত;; আপনি কি শুরু করলেন?
আব্রাহাম;; না মানে অনেকদিন যাবত না গ্রামীণ ভাষায় কথা বলি না তো। সো ভাবলাম যে নিজের বউ এর সাথে একটু ট্রাই করি এই আরকি।
আইরাত;; সত্যি বলতে কি আপনি যখন মাঝে মাঝে আপনার শার্টের হাতা গুটাতে গুটাতে গ্রাম্য ভাষা বলেন না তখন…
আব্রাহাম;; হুমম তখন?
আইরাত;; আপনাকে কি যে ভালো লাগে।
আব্রাহাম;; সিরিয়াসলি?
আইরাত;; হ্যাঁ।
আব্রাহাম;; বলি?
আইরাত;; আচ্ছা আচ্ছা।
আব্রাহাম;; আহাম.. আহাম।
“এইযে মাইয়া হুনো, মুই না তোমারে বহুত ভালাবাসি বুঝঝো নি! মোরে জীবনেও ছাইড়া যাইয়ো না বুঝলা নয়তো মুই টাস কইরা পইরা টুস কইরা মইরা যামু। হের লেইজ্ঞা মোরে থুইয়া কহনো কোনোদিন যাইয়ো না হ্যাঁ!”
আইরাত আর কি বলবে আব্রাহামের কথা শুনে সে হাসতে হাসতে শেষ। আব্রাহাম এতো বেশি সিরিয়াস ভাবে নিয়ে নিবে তার কথা ভাবেই নি। তবে আব্রাহামের মুখে এমন কথা হুট করেই, এটা অবাক করা বিষয়। আইরাত যেনো হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে বিছানার ওপর। আইরাতের অবস্থা দেখে এবার আব্রাহামও ফিক করে হেসে দেয়।
আইরাত;; সত্যি সেই ছিলো। আপনি এভাবে গ্রামের ভাষা পারেন তা জানা ছিলো না আমার।
আব্রাহাম;; এখন জেনে নাও।
আইরাত;; এইযে চৌধুরী!
আব্রাহাম;; হুমমম।
আইরাত;; আলাভুউউউ।
আব্রাহাম;; লাভ ইউ টু। এবার ড্রেস চেঞ্জ করে নাও জলদি।
আইরাত;; হুমম, আচ্ছা আমরা কি আর সেই আগের হোটেলে যাবো না?
আব্রাহাম;; না, আমরা এখানেই কিছুদিন থেকে তারপর দেশে চলে যাবো।
আইরাত;; হুমম। তো চলুন না আজ-কালের মাঝেই চলে যাই।
আব্রাহাম;; মাথা খারাপ নাকি। তোমাকে নিয়ে এখন ট্রাভেল করবো না। আর বড়ো কথা হচ্ছে বাড়ির কাউকেই আমি জানাই নি যে তোমার এক্সিডেন্ট হয়েছিলো। তো আমি সত্যিই কাউকে এটা জানাতে চাচ্ছি না। তা আগে হোক বা পরে।
আইরাত;; ওহ আচ্ছা।
আইরাত কে আয়নার সামনে বসিয়ে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকিয়ে দিচ্ছে আব্রাহাম। তখনই দৌড়ে দৌড়ে টাফি-সফটি আসে। এসেই আইরাতের পায়ের কাছে নিজেদের গা ঘেষতে লাগে। তাদের কোলে তুলে নেয়। আইরাতের কোলে পরম আবেশে তারা শুয়ে থাকে। এভাবেই বেশ সময় চলে যায়। এক সময় বিকেলের বেলা নেমে আসে। আব্রাহাম হাতে একটা বই নিয়ে পরছে। আইরাত আব্রাহামের কোলে হাত-পা গুটিয়ে শুয়ে আছে আর তার কোলেই টাফি-সফটি। তাদের বড়ো বড়ো সাদা লোমগুলোতে আইরাত হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
আইরাত;; এই চৌধুরী!
আব্রাহাম;; হুমমমম।
আইরাত;; আমার….
আব্রাহাম;; ভালো লাগছে না, বোরিং লাগছে তাই তো?
আইরাত উঠে বসে পরে।
আইরাত;; আপনি কি করে জানলেন?
আব্রাহাম;; হুমম আমি জানবো না তো কে জানবে! আচ্ছা এবার উঠো দেখি।
আইরাত;; কোথায় যাবো?
আব্রাহাম;; দুচোখ যেদিকে যায়।
আইরাত;; উফফ আবার!
আব্রাহাম আইরাত কে একটা ছোট বেবি ব্যাগ পরিয়ে দেয়। সেখানে সে টাফি-সফটি কে কোলে তুলে নেয়। মনে হচ্ছে এরাই বেবি। একটা সাদা লম্বা জামা পরে চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে বুকের কাছে একটা বেবি ব্যাগ নিয়ে টইটই করে ঘুরছে আব্রাহামের পেছন পেছন। আর আব্রাহামও একটা সাদা শার্ট পরে নেয়। আশেপাশে সব করিডরের দরজা গুলো খুলে দিয়ে আসে। আইরাত কে নিয়ে বাইরের দরজা খুলে চলে যায়। আইরাত কে বেশি দৌড়ঝাপ বা লাফালাফি করতে মানা করেছে। কিন্তু কে শুনে কার কথা।
আব্রাহাম;; আইরাত একদম লাফাবে না।
আইরাত;; আমি তো লাফাবো।
আব্রাহাম;; পুরোপুরি সুস্থ হওনি তুমি বেবিগার্ল। এর জন্য বলেছি।
আইরাত একটা ফাকা জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়ে পরে।
আইরাত;; এই চৌধুরী কোথায় যাবো আমরা? আর প্লিজ এবার বলবেন না যে যেদিকে দুচোখ যায়।
আব্রাহাম;; ওকে ফাইন।
আব্রাহাম আইরাত কে নিয়ে হাঁটতে লাগে। হেঁটে যেতে যেতেই একদম খোলা একটা জায়গায় এসে পরে। এখানে মাথার ওপরে রয়েছে নীল-সাদার সংমিশ্রণের বিশালতার আকাশ, মাটির ওপরে হরেক রকমের ফুল। বৃহৎ আকারের এক ফুলের বাগান। দেখে এমন মনে হয় যে কেউ আবেশে রঙ তুলি দিয়ে রাঙিয়ে রেখে দিয়েছে যা ফুলের বাগান হিসেবে আমরা দেখতে পারছি। বাগানের ঠিক মাঝেই আব্রাহাম তার আইরাত কে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আব্রাহাম;; পছন্দ হয়েছে?
আইরাত;; নাহ
আব্রাহাম কপাল কুচকে ফেলে।
আব্রাহাম;; আসলেই পছন্দ হয় নি?
আইরাত;; আমার সব পছন্দ, ভালোলাগা/ভালোবাসা সবই তো আপনাকে ঘিরে জামাইজান। তাহলে সেখানে এগুলো কে কীভাবে পছন্দ হবে বলুন।
আব্রাহাম নিজের মাথা আইরাতের মাথার পাশে হালকা করে ঠেকিয়ে দিয়ে হেসে ওঠে। আইরাতের কানের নিচে চুমু এঁকে দেয়। এক দমকা বাতাস এসে আইরাতের চুলগুলো উড়িয়ে নিয়ে যায় আর দিয়ে যায় এক সজীবতার ছোয়া। আইরাতের কোলে কুকুর ছানা দুটো খুশিতে গদগদ হয়ে যায়। তারা আব্রাহাম-আইরাত কে একসাথে দেখলেই হেসে দেয়। আব্রাহাম তার হাত দিয়ে আইরাতের পেটে আর কোমড়ে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে মাথা রেখে দেয়। আইরাতের মুখে ফুটে ওঠে গাঢ় হাসি। এভাবেই তাদের প্রেমময় মূহুর্ত টা কেটে যেতে লাগে।
।
।
।
।
চলবে~~
#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#Season_2
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৪৪
ক্ষনিক আলোকে আঁখির পলকে
তোমায় যবে পাই দেখিতে 🍂
*ওহে, ক্ষনিক আলোকে আঁখির পালকে
তোমায় যবে পাই দেখিতে ~
ওহে, হারাই-হারাই সদা হয় ভয়
হারাই-হারাই সদা হয় ভয় ••
হারাইয়া ফেলি চকিতে
আশ না মিটিতে হারাইয়া •~•
পলক না পরিতে হারাইয়া
হৃদয় না জুড়াতে
হারাইয়া ফেলি চকিতে…
~`মাঝে মাঝে তব দেখা পাই
চিরদিন কেনো পাই না!
~`মাঝে মাঝে তব দেখা পাই
চিরদিন কেনো পাই না! 🌸
*~ওহে কি করিলে বলো পাইবো তোমারে
রাখিবো আঁখিতে আঁখিতে🤎🦋
ব্যাস এইটুকু বলেই নিজের পাশে গিটার টা রেখে দিয়ে আইরাতের দিকে তাকায় আব্রাহাম। আর আইরাত তার ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে। বিকেলের গোধূলি লগ্ন এখন। আকাশে লাল-কমলার মধুর সংমিশ্রণ। যা রাঙিয়ে তুলেছে পুরো আকাশ কে, দিয়েছে এক নতুন রুপ। সেই মুক্ত আকাশে পাখিরা তাদের বড়ো পালক ওয়ালা ডানা ঝাপটে উড়ে যাচ্ছে। তাদের মিষ্টি সুরে কিচিরমিচির ডাক কানে এসে লাগছে। চারিদিকে খোলা হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। যা গায়ে লেগে তরতাজা করে দিচ্ছে। ছাদে হরেক রকমের ফুলের তীব্র সুগন্ধি ছড়িয়ে সবদিক কেমন মৌ মৌ করছে। আর এইসবের মাঝে ছাদে মাঝখান বরাবর খোলা জায়গায় বসে আছে দুই প্রেম পায়রা আব্রাহাম-আইরাত। ছাদের রেলিং এর ওপর দুকাপ গরম ধোঁয়া ওঠানো লাল চা রাখা আছে। একটা লম্বা গোল জামা পরে দুহাত হাটুর ওপর রেখে বসে আছে আইরাত। তার সামনেই গিটারে এতোক্ষণ সুর তুলছিলো আব্রাহাম। আইরাতের দুপাশে চুপটি মেরে গুটিয়ে শুয়ে আছে টাফি আর সফটি। আইরাত কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আব্রাহাম খানিক হেসে বলে ওঠে…
আব্রাহাম;; কি হয়েছে?
আইরাত;; কিছু না।
আব্রাহাম;; এভাবে তাকিয়ে কি দেখো?
আইরাত;; বারে, আমার জামাই আর আমি দেখবো না!
আব্রাহাম;; হুমমম।
আব্রাহাম আইরাতের হাত ধরে টেনে নিয়ে তার কোলে বসিয়ে দেয়। কোন কথা না বলেই সে আইরাতের ঘাড়ের ওপর থেকে চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে কানের নিচে নিজের নাক ঘষতে লাগে।
আইরাত;; ওই চৌধুরী!
আব্রাহাম;; হুমম
আইরাত;; চলুন না বাইরে ঘুরতে যাই!
আব্রাহাম;; আচ্ছা কোথায় যাবে বলো?
আইরাত;; আপনার যেখানে ইচ্ছে।
আব্রাহাম;; ক্লাব?
আইরাত;; একদম না। আমার একটা শান্ত সুন্দর পরিবেশ চাই।
আব্রাহাম;; ওকে তো রেডি হয়ে থেকো সন্ধ্যায়।
আইরাত;; আচ্ছা। আর আমি কিন্তু টাফি আর সফটি কেও নিয়ে যাবো নিজের সাথে করে।
আব্রাহাম;; আচ্ছা।
ছাদের ওপরেই বসে থেকে বেশ সময় পার করে দেয় তারা। অতঃপর নিচে রুমে এসে পরে। আইরাত এখন ভালোই হাঁটতে পারে। শুধু মাঝে মাঝে একটু মাথা ঘোরায় এছাড়া সে একদম সুস্থ। টাফি আর সফটির মাঝে একটা বল দিয়ে রেখেছে তা নিয়েই তারা খেলছে। আর আইরাত রুমের টুকটাক কাজ করছে। আব্রাহাম গিয়েছে ফ্রেশ হতে। ওয়াসরুম থেকে পানি পরার শব্দ স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। হঠাৎ আইরাতের মাথায় একটা শয়তানি বুদ্ধি এসে টুক করে বারি খায়। পেত্নীর মতো একটা হাসি দিয়ে গুটি গুটি পায়ে ওয়াসরুমের দিকে এগিয়ে যায়। ওপরে তাকিয়ে দেখে ভেন্টিলেটর টা বেশ অনেক টাই উঁচু আইরাতের থেকে। তাই আইরাত একটা উঁচু টুলের মতো নিয়ে আসে। তারপর খুব সাবধানে তার ওপর দাঁড়িয়ে পরে। ভেন্টিলেটর দিয়ে ওয়াসরুমের ভেতরে উঁকি দেয়। দেখে আব্রাহাম খালি গায়ে পানির নিচে দাঁড়িয়ে আছে দেওয়ালে এক হাত রেখে। পানি গুলো তার গা বেয়ে বেয়ে পরছে। আইরাত এক টেডি স্মাইল দেয় তাকে দেখে। টাফি আইরাতের দিকে তাকিয়ে দেখে আইরাত টুলের ওপর দাঁড়িয়ে ভেন্টিলেটর দিকে উঁকিঝুকি দিচ্ছে তাই সে আস্তে করে ঘেউ ঘেউ করে ওঠে। আইরাত চট জলদি মাথা ঘুড়িয়ে মুখের কাছে তার এক আঙুল এনে ‘হুসসসসসসসসসস’ করে যেনো সে না চিল্লায়। আইরাত আবার আব্রাহামের দিকে তাকায়। দেখে আব্রাহাম নেই শাওয়ারও বন্ধ। কপাল কুচকে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। তখন দেখে আব্রাহাম মাথায় একগাদা শ্যাম্পু লাগাতে লাগাতে অন্যপাশ থেকে এদিকে আসছে। সে তার মতো করেই আছে। কিন্তু এদিকে তো আইরাত ভেন্টিলেটরে ঝুলে ঝুলে তাকে দেখছে। এভাবে হঠাৎ থাকতে থাকতেই আইরাতের নাকে কেমন যেনো সুরসুরি লাগতে আরাম্ভ করে। সে আর আটকিয়ে রাখতে না পেরে দেয় এক জোরে ‘হেচ্চুউউউউউউউ 🤧’। আব্রাহাম নিজের আশেপাশে দেখতে লাগে কিন্তু কেউ নেই। ভাগ্য ভালো আইরাত জলদি করে নিচে ঝুকে পরেছিলো। সে টুলের ওপর থেকে নেমে পরে। এবার তার নজর যায় ওয়াসরুমের সুইচের দিকে। সোজা সেখানে গিয়ে লাগাতার সুইচে চাপ দিয়েই যাচ্ছে তো দিয়েই যাচ্ছে। যেনো কলিং বেল পেয়েছে। আইরাত তো মজাতেই আছে। কিন্তু ওদিকে আব্রাহাম সেন্টি মার্কা মুখ বানিয়ে দিয়ে শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে আছে। ভেতরের লাইটগুলো বারবার অফ-অন হচ্ছে। এই আকাম গুলা যে আইরাত ছাড়া আর কেউ করছে না তা আব্রাহাম জানে। কিছুক্ষন পর সে টাওয়াল প্যাচিয়ে রুমে এসে পরে। এসেই দেখে রুম ফাকা। বিছানার ওপর টাফি আর সফটি তারা চুপ করে বসে আছে। আব্রাহাম আইরাত কে খুঁজতে লাগে। যখন পায় না খুঁজে তখন দাঁড়িয়ে পরে। কিন্তু এদিকে আইরাত তো আব্রাহামের ঠিক পেছনেই দাঁড়িয়ে আছে। এটা টের পেতেই আব্রাহাম কিছুটা গম্ভীর ভাবে বলে…
আব্রাহাম;; আইরাত কি হচ্ছে এগুলো?
আইরাত মাত্রই প্রস্তুতি নিচ্ছিলো যে সে আব্রাহাম কে চমকে দিবে পেছন থেকে কিন্তু তা আর হলো কোথায়! তার আগেই আব্রাহাম সব বুঝে ফেলে। আইরাতের মুখটা কেমন চুপসে আসে। তাকে ধরে সামনে এনে জিজ্ঞেস করে…
আব্রাহাম;; কি হচ্ছে এগুলো? রেডি না হতে বললাম?
আইরাত;; না আমি ভাবলাম যে আপনি ড্রেস পছন্দ করে দিবেন তাই আর কি।
আব্রাহাম;; আচ্ছা দিচ্ছি।
আব্রাহাম কাবার্ডে গিয়ে নুড কালারের একটা লং হুডি ওয়ালা জেকেট আর একটা প্যান্ট বের করে দেয় আইরাত কে। কেননা এখন এখানে প্রচুর শীত পরে গেছে। শীতকাল এখনো ঠিক ভাবে এসেই সারে নি তাই এখানে হার কাপানো শীত। আর রাতের বেলা তো সোজা কথা ছোট ছোট তুষার পরে। তাই বাইরে গেলে ফুল প্যাকেট হয়ে তারপর যেতে হবে। দিনে শীত কম থাকলেও সন্ধ্যে থেকে শুরু করে সারারাত তীব্র শীত।
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল পরে নাও।
আইরাত নিজে গিয়ে আব্রাহামের জন্য একটা লাইট ওলিভ কালারের জেকেট, আর ফরমাল গেটাপের শার্ট-প্যান্ট বের করে দেয়।
আব্রাহাম;; হুমম।
আইরাত;; আচ্ছা জামাইজান শুনুন না!
আব্রাহাম;; বলো।
আইরাত;; চলুন আমরা ট্রুথ & ডেয়ার খেলি।
আব্রাহাম;; অলরাইট।
আইরাত;; তো বলুন কি নিবেন?
আব্রাহাম;; অবশ্যই ডেয়ার।
আইরাত;; ভেবে বলছেন তো?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ।
আইরাত;; ওকে তো আপনি এখন এভাবে অর্থাৎ টাওয়াল প্যাচিয়েই সোজা বাইরে যাবেন ঠান্ডার মাঝেই।
আব্রাহাম;; হুয়াট? নো ওয়ে আইরাত নো ওয়ে।
আইরাত;; না না এখন তো তা বললে চলবে না আপনি ডেয়ার নিয়েছেন। আব্রাহাম এটা চিটিং কিন্তু।
আব্রাহাম;; আর ইউ চ্যালেঞ্জিং মি 🤨?
আইরাত;; আবার জিগায়।
আব্রাহাম;; আচ্ছা যাচ্ছি তবে মেয়েদের লাইন লেগে গেলে পরে আবার আমাকে কিছু বলো না যেনো।
আইরাত;; এখানে মেয়ে আসলো কোথা থেকে?
আব্রাহাম;; মেয়ে আসে নি তবে আসবে তো। যেই যাবে তার সাথেই ফ্লার্ট করবো। বা যাকেই ভালো লাগবে তাকে দেখি বিয়ে করা যায় কিনা। ছেলেদের তো চার-চারটে বিয়ে করা জায়েজ তাই না।
আব্রাহামের কথা শুনে আইরাত তো পুরো হা। এই ছেলে বলে কি! ছাত করে চটে গেলো আইরাত।
আইরাত;; এই এইই ডেয়ার-এর গুষ্টির তুষ্টি। লাগবো না আমার ডেয়ার এর। এহহহ শখ কতো। বিয়ে নাকি করবো। আহারে কি আয়েস রে। এদিকে আসেন তো দেখি আপনার চাঁদবদনী মুখটা একটু দেখি আমি।
আব্রাহাম;; নাহ ডেয়ার যখন নিয়েছি তখন তো না পূরণ করে আমি আর পারছি না। দেখি যাই আমি।
আইরাত;; এই না না দরকার নেই আমার ডেয়ারের। দরকার নেই। আপনি এখানেই থাকুন।
আব্রাহাম বাইরে চলে যেতে ধরলে আইরাত তার হাত টেনে ধরে থামিয়ে দেয়। আব্রাহাম জানতো যে আইরাত এমম কিছুই করবে তাই সে ইচ্ছে করেই বানিয়ে বানিয়ে এইসব বলেছে।
আইরাত;; চেঞ্জ করেন আপনি, আমি গেলাম ফ্রেশ হতে। এহহ আসছে রে বিয়ে করতে।
আইরাত হাজারো বকা-ঝকা করতে করতে ওয়াসরুমের ভেতরে চলে গিয়ে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দেয়। আরেক দিকে আব্রাহাম হেসে হেসে শেষ। বিছানা থেকে কুকুর ছানা দুটো কে নিজের কোলে তোলে নেয়। কিছুক্ষণ পর আইরাতের বের করে দেওয়া কাপড় গুলো পরে নেয়। নেভি ব্লু কালারের শার্ট পরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বডিতে পারফিউম দিয়ে যাচ্ছে। তখনই ওয়াসরুমের ভেতর থেকে আইরাতের কিছুটা গুনগুন করে গানের শব্দ আসে। আইরাতের মতো আব্রাহামেরও মাথায় শয়তানি বুদ্ধি আসে। সে গিয়ে সোজা আইরাতের ওয়াসরুমের লাইট অফ করে দেয়। আর ভেতরে তো আইরাতের জান বের হয়ে যায় যায় দশা। আলো না পেয়ে ভেতরে এক প্রকার লাফালাফি শুরু করে দিয়েছে সে।
আইরাত;; আব্রাহাম আমি জানি যে এটা আপনারই কাজ। লাইট দিন।
আব্রাহাম ওয়াসরুমের বাইরে পাশের এক দেওয়ালে দুহাত ভাজ করে হেলান দিয়ে দাঁড়ায়।
আব্রাহাম;; হুমম, আমার সাথেও তো ঠিক এগুলোই করেছিলে তাই না।
আইরাত;; আচ্ছা আচ্ছা সরি আর করবো না। এবার প্লিজ লাইট অন করুন।
আব্রাহাম;; পারবো না।
এই বলেই আব্রাহাম হাতে একটা টাওয়াল ঘোরাতে ঘোরাতে আর সিটি বাজিয়ে চলে গেলো। কয়েক মিনিট হয়ে যায় তবুও আলো নেই। আইরাত বুঝলো যে আব্রাহাম তার সাথে এইসব ত্যাড়ামি করছে। আর থাকতে না পেরে আইরাত গায়ে একটা টাওয়াল প্যাচিয়ে বাইরে বের হয়ে এসে পরে। বাইরে এসে উঁকি ঝুকি দিতে দিতে ধীর পায়ে এগিয়ে যায়। তখনই আব্রাহাম তার পেছন থেকে এসে আইরাত কে এক টানে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়। আইরাত দ্রুত চলে যেতে ধরলে আব্রাহাম আবার তার হাতে থাকা টাওয়াল দিয়ে আইরাতের কোমড়ে ধরে নিজের দিকে টেনে আনে। আইরাত লুটিয়ে পরে আব্রাহামের বুকে।
আব্রাহাম;; কোথায় যাও?
আইরাত;; আপনি লাইট অফ করে দিয়েছেন কেনো?
আব্রাহাম;; আচ্ছা জ্বি! আমি লাইট অফ করে দিয়েছি তাই এমন করছো। আর তুমি কি করেছো হ্যাঁ! তুমি যে ভেন্টিলেটরে ঝুলে ঝুলে আমার গোছল দেখছিলে আর লাইট আপ-ডাউন করছিলে তখন? লুচ্চি মাইয়া একখান।
আইরাত;; 😬
আব্রাহাম;; বলো বলো!
আইরাত;; যেতে দিন না।
আইরাতের কথা কানে না তুলে আব্রাহাম একহাত দিয়ে আইরাতের কোমড়ে চেপে ধরে আরেক হাত দিয়ে তার টাওয়ালের বাধন টা আলগা করে দেয়। বুকের ওপরে কাপড় হালকা হতেই আইরাত খপ করে এক হাত দিয়ে তা ধরে আব্রাহামের দিকে চোখ গরম করে তাকায়। আব্রাহাম আইরাত কে ঘুড়িয়ে নিজের পিঠের সাথে লাগিয়ে দেয়। আইরাতের ঘাড়ের চুলগুলো সরিয়ে উন্মুক্ত কাধে নিজের নাক ঘষতে লাগে। কেমন যেনো থেকে থেকে শিউরে উঠছে আইরাত। আব্রাহামের সব খোচা খোচা দাড়িগুলো আইরাতের গলাতে লাগলে হেসে দেয়।
আইরাত;; আমার না কাতুকুতু লাগে।
আব্রাহাম এবার আইরাত কে বিছানাতে হালকা করে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। যতক্ষণে আইরাত উঠে যেত ততক্ষণে আব্রাহাম এসে আইরাতের দুহাত বিছানার সাথে চেপে ধরে। আইরাত ছটফট করতে লাগলে আব্রাহাম ইচ্ছে করেই তার গলায় ঘাড়ে নিজের নাক-ঠোঁট দিয়ে সুরসুরি কাটতে লাগে। আইরাতের তো হাসতে হাসতে চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেছে।
আইরাত;; আব্রাহাম প্লিজ ছাড়ুন। আমার হাসতে হাসতে দম আটকে গেলো।
আব্রাহাম আইরাতের ঠোঁটে চুমু একে দিয়ে উঠে পরে। আইরাত কেও টেনে তুলে বসিয়ে দেয়। তারপর আইরাতের আর কিছু করতে হয় না আব্রাহাম নিজেই তাকে রেডি করিয়ে দেয়। আইরাতের সামনে এক হাটু গেড়ে বসে পরে। নিজের হাটুর ওপর আইরাতের এক পা রেখে তাকে মোজা পরিয়ে দেয়। তারপর জুতোর ফিতা বেধে দেয়। কারণ আইরাত জুতার ফিতা লাগাতে পারে না। অবশেষে আইরাত কে নিয়ে বাইরে বের হয়ে পরে। কি যে একটা অবস্থা। বাড়ির গেটের ওপরে তুষার জমেছে বেশকিছু। আব্রাহাম হাতের ঘড়ি ঠিক করতে করতে একজন গার্ড কে ডাক দিয়ে এগুলো সব ঝেড়ে ফেলতে বলে। জানালা, করিডর সবকিছু থেকেই তুষার গুলো ফেলে দিতে বলে। বাইরে ঠান্ডা অনেক তাই সে আইরাতের মাথার ওপর হুডি টা তুলে দেয়। আইরাত কে এখন ছোটখাটো গোলুমোলু একটা পান্ডা লাগছে। আব্রাহাম আইরাতের দুগাল তার হাত দিয়ে চেপে ধরে তার পুচ্চু ঠোঁটগুলোতে চুমু বসিয়ে দেয়। গাড়িতে বসে পরে৷ কিছুক্ষন পর একটা রেস্তোরাঁর সামনে গাড়ি থামে। দেখে অনেক শান্ত পরিবেশের মনে হচ্ছে। আব্রাহামের যেতেই রেস্তোরাঁর ওনার বিনয়ের সাথে দরজা খুলে দেয়। একটা টেবিলে গিয়ে তারা দুজন বসে পরে। ব্যাকগ্রাউন্ডে একটা সফট মিউজিক দিয়ে রেখেছে। আব্রাহাম নিজের জেকেটের কলার একহাত দিয়ে ঠিক করতে করতে বলে ওঠে…
আব্রাহাম;; পছন্দ হয়েছে?
আইরাত;; হ্যাঁ।
আব্রাহাম-আইরাত খুব সিম্পল কিছু খাবার অর্ডার দেয়। ওয়েটার এসে সেগুলো দিয়ে যায়। আব্রাহাম খাচ্ছে কম আইরাত কে দেখছে বেশি। তাকে কি পরিমাণ যে কিউট লাগছে। খেতে খেতে একটু খাবার আইরাতের ঠোঁটের কাছে লেগে পরে।
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল ওয়েট!
আইরাত তো মুখে খাবার নিয়ে দুগাল ফুলিয়ে বসে ছিলো আব্রাহাম একটা টিস্যু নিয়ে তার মুখটা ক্লিন করে দেয়। এভাবেই বেশ সময় পর তাদের খাওয়া শেষ হয়। এখনো আব্রাহাম কে চুপ করে বসে থাকতে দেখে আইরাত বলে…
আইরাত;; সারারাত কি এখানেই থাকার ইচ্ছে নাকি?
আব্রাহাম;; একদম না।
আইরাত;; তাহলে! আরে বিল টা দিন জলদি।
আব্রাহাম;; দিবো না।
আইরাত;; কি?
আব্রাহাম;; আমরা ট্রুথ এন্ড ডেয়ার খেলছি রাইট?
আইরাত;; হ্যাঁ।
আব্রাহাম;; তখন আমি নিয়েছিলাম কিন্তু এখন তোমার পালা।
আইরাত;; হ্যাঁ।
আব্রাহাম;; কি নিবে?
আইরাত;; ডেয়ার।
আব্রাহাম;; সিরিয়াসলি?
আইরাত;; হ্যাঁ
আব্রাহাম;; সো আই ডেয়ার ইউ যে এখন তুমি হোটেলের কোন বিল না দিয়েই এখান থেকে দৌড়ে পালাবে।
আইরাত;; কিইইইইই? আব্রাহাম না প্লিজ না। এটা না প্লিজ। মান-সম্মান সব জলে যাবে।
আব্রাহাম;; মান-সম্মান আছে?
আইরাত;; কি বলেন এইসব ঘোড়ার আন্ডা। আমি পারবো না এইটা।
আব্রাহাম;; গেইম বেইবি।
আইরাত;; এইটা আবার কেমন! ধুর।
আব্রাহাম;; বলে লাভ নেই। ইউ হ্যাভ টু ডু দিস।
আইরাত আর কোন উপায় পায় না। বুঝে যে এটা করতেই হবে তাকে। আব্রাহাম হালকা করে উঠে বসে।
আব্রাহাম;; আর ইউ রেডি?
আইরাত;; কেমন যেনো লাগছে। এভাবে টাকা না দিয়ে পালাবো আমি। আবার এটা নাকি ডেয়ার।
আব্রাহাম;; করতেই হবে লাভ নেই, পালাও।
আইরাত;; ওকে ওকে।
আব্রাহাম;; হুমম।
আইরাত;; ওকে সো 1… 2… & 3
আইরাতের 3 বলার সাথেসাথেই আব্রাহাম আর সে সব ভেঙেচুরে দ্দে দৌড়। সবদিক ভুলে তারপর দৌড় দিয়েছে। সবাই তাদের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। কেউ আর কি বলবে বুঝতেই পারছে না যে এরা এভাবে দৌড়িয়ে যাচ্ছে কোথায়। যদিও তাদের দেখে মেনেজার এগিয়ে আসে। কিন্তু ততক্ষনে আব্রাহাম-আইরাত হোটেলের বাইরে চলে গিয়েছে। এক মনে দৌড়িয়েই যাচ্ছে। অবশেষে বেশ অনেক টুকু পথ ছুটে এসে দাঁড়িয়ে পরে। আব্রাহাম হাসছে আর কিছুটা হাপাচ্ছে আর আইরাত তো নিজের হাটুতে দুহাত রেখে ঝুকে গিয়ে তারপর হাপাচ্ছে। কোমড়ে একহাত দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পরে। এই শীতেও কিছুটা ঘেমে গিয়েছে। আব্রাহাম আইরাতের থেকে কয়েক কদম এগিয়ে ছিলো। সে ঘুরে আইরাতের দিকে ফিরে আসে। তারা দুজন একে ওপরের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে হঠাৎ ফিক করে একসাথেই হেসে দেয়। দুজনেরই হাসতে হাসতে অবস্থা কাহিল। তারা কেউই ভাবে নি যে এমন কিছু একটা হবে, অর্থাৎ হুট করেই এইটা মাথায় এসেছে। যাই হোক সেই মজা লেগেছে। লাইফে সবকিছুরই টেস্ট নেওয়া ভালো।
আইরাত;; এইটা কোন কাজ না বুঝলেন। এইটা কিছু হলো। ধুর মানুষ গুলো কি ভাববে?
আব্রাহাম;; কি ভাববে?
আইরাত;; ভাববে যে এতো বড়ো একজন মাফিয়া হয়ে একটা রেস্তোরাঁয় খেতে এসে নিজের বউ কে নিয়ে এভাবে পালালো।
আব্রাহাম;; আরে তুমি সবসময় সবকিছুর মাঝে আমার প্রফেশন কে কেনো টানো! তাই কি হয়েছে আমি কি আর পাঁচ দশটা মানুষের মতো লাইফ ইঞ্জয় করতে পারবো না নাকি!
আইরাত;; না বাকি রাখেন তা করার। আর তা তো বলি নি। কিন্তু এভাবে কেউ করে। ইজ্জতের ফালুদা।
আব্রাহাম;; ফালুদা, কাবাব, কাচ্চি কিছুই হয় নি। এবার চলো।
আইরাত;; কোথায়?
আব্রাহাম;; যে…..
আইরাত;; আহা, এবার বলবেন না যে যেদিকে দুচোখ যায় প্লিজ।
আব্রাহাম;; হাহাহাহাহা, সেই রেস্তোরাঁয় যাবো আর বিল প্লাস এক্সট্রা টাকা দিয়ে চলে আসবো চলো।
আইরাত;; হ্যাঁ তাই ভালো হবে চলুন জলদি। আর হ্যাঁ আমি কিন্তু ডেয়ার কমপ্লিট করেছি।
আব্রাহাম;; গুড গার্ল।
আব্রাহাম-আইরাত গাড়িতে উঠে সেই রেস্তোরাঁয় যেতে লাগে। আর হ্যাঁ তারা ছুটে এসে পার্কিং প্লেসেই দাঁড়িয়েছিলো। রেস্তোরাঁয় গিয়ে আব্রাহাম মেনেজার আর ওনারের সাথে সব ক্লিয়ার করে বলে। তারাও শুনে বেশ অবাক হয় সাথে হেসেও দেয়। আইরাতের এখন আরো বেশি হাসি পাচ্ছে। বাইরে আগে থেকে তুষারপাত দ্বিগুণ হারে পরছে। এতোরাতে বাইরে থাকা টা ঠিক হবে না তাই দ্রুত গাড়ি চালিয়ে যেতে লাগে। ওহ হ্যাঁ গাড়ির পেছনে টাফি আর সফটি কিন্তু আছেই। তাদেরও বড়ো বড়ো শীতের জামা পরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এক একটাকে পুরো কিউটের ডিব্বা লাগছে। গাড়িতে আব্রাহাম ড্রাইভ করছে একহাতে। আরেক হাত দিয়ে আইরাত কে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। আইরাত নিজের মাথা আব্রাহামের কাধে রেখে দিয়েছে।
আইরাত;; জামাইজান!
আব্রাহাম;; বলো বেবিগার্ল।
আইরাত;; একটা অনেক বেশি ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে, অনেক বেশিই।
আব্রাহাম;; হ্যাঁ বলো।
আইরাত;; আমি না আপনাকে ভালোবাসি। সেই খবর কি রাখেন?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ আমি রাখবো না তো আর কে রাখবে!
আইরাত;; লাপ্পিউ।
আব্রাহাম মুচকি হেসে আইরাতের মাথায় চুমু দিয়ে দেয়।
আব্রাহাম;; “আমি কারণে ~ অকারণে ~ বিনা কারণে তোমাকেই ভালোবাসি ❤️”
।
।
।
।
চলবে~~