নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব-৬৪+৬৫

0
1003

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৬৪

আইরাতের চলে যাবার পরে আব্রাহাম সোজা তার ঘরে এসে পরে। সে তো শুধু আইরাতকে একটু ঝটকা দিতে চেয়েছিলো, অবশ্য আব্রাহাম আগে থেকেই জানতো যে আইরাত এটা জানার পর অনেক বড়ো সড়ো কিছু একটা করবে। ভাগ্যিস বউ নামে কোন মেয়েকে এখানে পায় নি সে তা নাহলে যে কি করতো আল্লাহ জানেন। তবে আব্রাহামের এবার বেশ রাগ লাগছে৷ খুব বেশি। আব্রাহাম তার এক হাত দিয়ে মাথার চুল গুলো খামছে ধরে সারা ঘরে পায়চারি করে যাচ্ছে। কিন্তু তবুও রাগ থামার নাম নেই। অবশেষে আব্রাহাম তার ফোন টা তুলে একজন কে ফোন দেয়।

আব্রাহাম;; হ্যালো, তনয়া!

তনয়া;; জ্বি স্যার বলুন।

আব্রাহাম;; এই যে এই আহসান আছে না এর পুরো বায়োডাটা আমার চাই পুরো বায়োডাটা ওকে?

অনয়া;; জ্বি স্যার ও আহসান আহমেদ। আইরাতের সাথেই কাজ করে, এক বছর হবে সে আইরাতের সাথে আছে।

আব্রাহাম;; এক বছর তাই না৷

তনয়া;; জ্বি।

এই বলেই আব্রাহাম ফোন কেটে দেয়। এবার একটু বিষয় টা ক্লিয়ার করি। আইরাতের সাথে কাজ করে এই যে এই তনয়া আছে সে আসলে কোন নিজের কোম্পানির সুবিধার্থে আইরাতের সাথে কাজ করে না। এই তনয়া নামে মেয়েটা আব্রাহামেরই পাঠানো একটা মেয়ে। যে বেশ কিছুদিন যাবৎ আইরাতের সাথে আছে। তবে তনয়ার একটা ছোট খাটো কোম্পানি আছে বটে।আর সেটার অজুহাত দিয়েই সে আইরাতের সাথে রয়েছে। আসলে ব্যাপার টা এতো টাই চালাকির সাথে করা হয়েছে যে আইরাত টেরও পায় নি। অবশ্য তনয়া যখন আইরাতের সাথে কাজ করতে শুরু করে তখন আইরাত বেশ ইনফরমেশন নিয়েছিলো তনয়ার নামে। তবে সে এটা জানতো না যে তনয়ার পেছনে আব্রাহাম রয়েছে। আর আব্রাহাম তখন নিখোঁজ ছিলো। আইরাত বুঝতোই বা কি করে যে তার আব্রাহাম আছে আর এই তনয়ার পেছনেও সেই আছে। সো এই যে এই আব্রাহামের কনসার্ট, সেখানে আইরাতকে নিয়ে যাওয়া, আব্রাহামের মুখোমুখি করা আইরাত কে, এগুলো সবই আব্রাহামের প্রিপ্ল্যান ছিলো। তবে এর মাঝে আরো একটু টুইস্ট বাকি আছে।

আব্রাহাম চুপ করে বিছানার ওপর বসে পরে। রাগে হাত-পা কাপছে। আর কেনো রাগে কাপছে সেটাও তার জানা। সেটার কারণ আহসান। আব্রাহাম আহসান কে নিয়ে বেশ ক্ষেপে রয়েছে। আহসানের এতো টা ক্লোজ আসা আইরাতের, স্পেশালি আইরাতের হাত ধরা, এতো কথা বলা সেগুলো যেনো আব্রাহাম সহ্য করতেই পারে না। আর একটু আগেও নিচে আহসান কীভাবে আইরাতকে টেনে বাইরে নিয়ে গেলো তাও আব্রাহাম দেখেছে। আব্রাহাম রাগে হাতে থাকা ফোন টা একটা আছাড় মারে।


আইরাত;; কিন্তু এমন করার মানে কি? কেনো করছে ও। ও কি আমার ক্লিয়ার কথা বুঝে না নাকি আজব।

রাশেদ;; আমি জানি না ম্যাম,, তবে কবির চেয়েছে যে যত জলদি সম্ভব তত জলদি আপনার সাথে দেখা করতে।

আইরাত;; এখন সে কোথায়?

রাশেদ;; ওইযে ম্যাম সামনে আসতাছে।

রাশেদের কথায় আইরাত তার পেছনে তাকিয়ে দেখে কবির আসছে। এই হচ্ছে কবির, বেচারা বেশ ভালোই। গত দুই বছর যাবৎ এই আইরাতের পেছনে পরে আছে, উদ্দেশ্য বিয়ে। এই নিয়ে অনেক ঝামেলাও হয়েছে। না জানি কতো হাজার বার আইরাত তাকে রিজেক্ট করেছে। একবার তো এও হয়েছিলো যে এই কবির পাগলের মতো করে আইরাতকে না বলে কয়েই তাদের বিয়ের এনাউন্সমেন্ট করে দিয়েছিলো। আর মিডিয়ার স্বাভাব তো সবারই জানা। তিল থেকে তাল করতে এদের বেশি একটা সময় লাগে না। এখানেও ঠিই তাই হয়েছে। সবকিছু ভালোই ছিলো কিন্তু যেইদিন আইরাতের লাইফের সর্বপ্রথম এওয়ার্ড ফাংশন ছিলো ঠিক তার একদিন আগেই এই আইরাত আর কবিরের বিয়ের ভুয়া এনাউন্সমেন্ট টা হয়েছিলো যা আইরাত টিভি চ্যানেল থেকে জানতে পারে। আর এটা জেনে তো আইরাতের মাথা প্রায় ঘুড়ে পরে যাওয়ার উপক্রম ছিলো। তাই সব কিছু হ্যান্ডেল করার জন্য আর নিজের এওয়ার্ড শো তে যেনো কোন ন্যাগেটিভ ইফেক্ট না পরে তাই দ্রুত আইরাত কবিরের সাথে কথা বলে। আইরাত তাকে জীবনেও বিয়ে করতে পারবে না, সাফ পরিষ্কার মানা করে দিয়ে আইরাত সেই নিউজ টা ফেইক প্রমাণ করে দেয়। অতঃপর সেই ব্যাপার টা কেটে যায়। কিন্তু ব্যাপার কেটে গেলেও কেটে যায় নি সেই মানুষ টা কবির। কবির ওর মতো করে লেগেইছিলো আইরাতের পেছনে এমনকি এখনো আছেই। এখনো সে আইরাতের পেছনে ঘুড়েই। সে প্রায়ই আইরাতের খোঁজে তার অফিসে আসে। আজও এসে পরেছে। আইরাত কবিরের দিকে চোখ ছোট ছোট করে কঠোর মুখ নিয়ে তাকিয়ে ছিলো আর রাশেদ আইরাতের পেছনে দাঁড়িয়ে তার এক হাত মুখে ঠেকিয়ে মিটিমিটি হাসছে।

কবির;; কেমন আছো আইরু?

আইরাত;; বর্তমানে টক, ঝাল, মিষ্টি সবই আছি। ওহহ না না সরি মিষ্টি না। এটা আমি পছন্দও করি না আর আমায় সুটও করে না।

কবির;; তুমি তো এমনিতেই যে মিষ্টি আরো মিষ্টি হলে ডায়বেটিস হয়ে যবে তো।

কবিরের কথায় রাশেদ ফিক করে হেসেই দেয়। আইরাত চোখ কিছুটা গরম করে দিয়ে রাশেদের দিকে তাকায়।

রাশেদ;; আহাম,,আহাম।

আইরাত;; কবির লিসেন, আমি পারবো না। সম্ভব না। আমি অন্য একজন কে ভালোবাসি। আমি ম্যারিড কবির।

কবির;; কিন্তু আব্রাহাম তো আর বেচে নেই, তাহলে তু…….

আইরাত;; ব্যাস ওখানেই থেমে যাও। যেটুকু বলেছো সেখানেই থেমে যাও আর বলো না। কে বলেছে আব্রাহাম নেই, ও আছে।

কবির;; একটা লাস্ট চান্স দেওয়া যায় না?

আইরাত;; Ohh for god sake stop,, what do you mean by last chance… আমাদের কি আগে কোন সম্পর্ক ছিলো নাকি যে তা মাঝে ভেঙে গিয়েছিলো আর এখন আমি তোমাকে লাস্ট চান্স দিবো। যেখানে কোন কিচ্ছু ছিলোই না সেখানে লাস্ট চান্স মানে কি। এটা আসে কোথা থেকে। আমি তোমাকে ফার্স্ট চান্সই কবে দিয়েছিলাম যে লাস্ট দিবো।

কবির;; কিন্তু আইরাত আমার ভালোলাগে তোমাকে অনেক বেশি।

আইরাত কয়েক কদম কবিরের দিকে এগিয়ে যায়।

আইরাত;; ভালোলাগা আর ভালোবাসা দুইটা দুই আলাদা-আলাদা জিনিস। এদের একসাথে মিশিয়ো না। এর আগেও তুমি আমাকে না বলেই আমাকে নিয়ে এতো বড়ো একটা নিউজ করে দিয়েছিলে। বেশিকিছু বলি নি আমি তোমাকে সেইদিন কিন্তু প্লিজ এইবার না কবির। আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি। আমি অনেক আগেই একজনের নামে লিখা হয়ে গেছি।

কবির;; 😓😓

আইরাত;; আল্লাহ হাফেজ।

এই বলেই আইরাত সেখান থেকে দ্রুত পায়ে কেটে পারে। সত্যি এখন এইসব তার কাছে প্রচুর বিরক্তিকর লাগছে। একে তো আব্রাহামের এমন হঠাৎ বিয়ের কথা শুনে আইরাতের পায়ের রক্ত একদম মাথায় উঠে গিয়েছিলো আর এখন, এখন কিনা তার নিজেরই বিয়ে। ছেলেটা বুঝে না নাকি। আইরাত সেখান থেকে সোজা নিজের কেবিনে চলে যায়৷ তারপর একটা কোল্ড কফি অর্ডার দেয় কেননা এখন তার মাথা খুব বেশিই গরম আর এই মূহুর্তে তার ঠান্ডা কিছু দরকার। আইরাত কিছু ফাইল চেক করছিলো তখন কেবিনে তনয়া আসে।

তনয়া;; আসবো?

আইরাত;; আয়

তনয়া;; কিরে তখন ওভাবে চলে গেলি যে আর কোথায় গিয়েছিলি?

আইরাত;; তা আগামীকাল টের পাবি।

তনয়া;; মানে?

আইরাত;; আগামীকাল সব টিভি চ্যানেলেই দেখাবে তো তুইও দেখে নিস।

তনয়া;; বাই দি ওয়ে, কবির কি বলে আবার?

আইরাত;; বিয়ে।

তনয়া;; হ্যাঁ তো করে নে না।

আইরাত;; কি মাথা খারাপ হয়েছে তোর নাকি কিছু উল্টা-পাল্টা খেয়ে এসেছিস কোনটা?

তনয়া;; আরে না তা হতে যাবে কেনো। আমি বলছি যে যখন তোদের এনগেজমেন্ট টা হয়েই গেছে তাহলে বিয়ে টা জলদি করে নে।

তনয়ার কথায় আইরাত হাত থেকে ফাইল টা ঠাস করে টেবিলের ওপর রেখে এক ঝটকায় বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। কপাল কুচকে অবিশ্বাস্য কন্ঠে বলে ওঠে……

আইরাত;; হুয়ায়ায়ায়ায়াট?

তনয়া;; আস্তে

আইরাত;; এই তুই কি বললি?

তনয়া;; এনগেজমেন্ট??

আইরাত;; কাদের?

তনয়া;; তোর আর কবিরের।

আইরাত;; কানের ঠিক তিন ইঞ্চি নিচে এমন একটা থাপ্পড় খাবি না যে পরে আর কিছু শুনতে পারবি না বলে দিলাম। তিন দিন অব্দি ঝনঝন করবে।

তনয়া;; আমার কি দোষ ☹️

আইরাত;; তো কি বলছিস তুই এসব এনগেজমেন্ট মানে? আরে কবিরের মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো যে সে আমার পেছনে পরেছে। আর সেইদিন ডিরেক্ট বিয়ের কথা সবাইকে জানিয়ে দিয়েছিলো তাও ফেইক, ভুয়া। কিছুই না।

তনয়া;; ওহহ আচ্ছা আচ্ছা।

আইরাত আর কিছু না বলেই কেবিন থেকে বের হয়ে পরে। বাকিদের সবকিছু দেখতে বলে আইরাত নিজে বাসায় চলে আসে। আইরাতকে এখন বিকেলের সময় বাসায় আসতে দেখে ইলা বেশ অবাক হয়। কেননা আইরাত বিকেলে কখনোই বাসায় আসে না। আইরাত এসেই সোফাতে ধপ করে বসে পরে।

ইলা;; কিরে এই সময়ে বাসায় এলি যে? কিছু কি হয়েছে নাকি?

আইরাত;; আবার কবির।

ইলা;; হাহাহা ওইযে ওই ছেলেটা যে তোকে নিয়ে একবার বিয়ের কথা পাবলিক করে দিয়েছিলো?

আইরাত;; হ্যাঁ, তুমি জানো না দাদি আমাকে এই নিয়ে ঠিক কতো টা ঝামেলায় পরতে হয়েছে। সবাই তো সিরিয়াসলি নিয়ে নিয়েছিলো৷ কবির আজও এসেছিলো আর এগুলো বলছে। সত্যি আমার যদি মাথা মুথা খারাপ হয়ে যায় আমি কিন্তু একদম বিনা বাক্যে ওকে ওখানেই শুট করে একদম জ্যান্ত পুতে দিবো। একটা মানুষ কে আর কতো ভাবে, কীভাবে বুঝানো যায় বলো।

ইলা;; আচ্ছা যাজ্ঞে তুই আগে মাথা ঠান্ডা কর।

আইরাত;; রনিত কোথায়?

ইলা;; ড্রোইং করছে।

আইরাত;; আমার একটু ঘুম প্রয়োজন অনেক দৌড়ঝাপ হয়েছে।

ইলা;; আচ্ছা যা যা আগে রুমে যা।

আইরাত দ্রুত পায়ে রুমে চলে আসে। রুমে গিয়ে কোন রকমে নিজের ওপর থেকে জেকেট টা খুলে ফেলে। তারপর মাথার ওপরে টাইট করে বেধে রাখা চুলগুলো খুলে দেয়। ঝরঝর করে সব চুলগুলো আইরাতের পিঠ পেছনে ছড়িয়ে পরে। ধিরিম করে বিছানাতে পরে যায় আইরাত, নিজের গা এলিয়ে দিলো। উপুড় হয়ে বালিশ জড়িয়ে তাতে মুখ গুজে দিয়ে শুয়ে পরে। মূহুর্তেই চোখে ঘুমের রাজ্য নেমে পরে। আইরাত এক গভীর ঘুমের অতলে তলিয়ে যায়।

রাতের মাঝখানে আইরাতের একবার ঘুম ভেঙে ছিলো। তখন আইরাত উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয়। ইলা আর রনিত কে বেশ কিছুটা সময় দিয়ে তারপর আবার নিজের রুমে চলে যায়। পুরো রুমের লাইট অফ করে চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা পরে গভীর মনোযোগ দিয়ে ল্যাপটপে কাজ করে যাচ্ছে। তবে থেকে থেকেই আইরাতের মাথায় শুধু আব্রাহামের কথা আসছে। বহুবার নিজের ফোন হাতে নিয়েও আবার রেখে দিয়েছে। এভাবেই সেই রাত টুকু কেটে যায়।


পরেরদিন সকালে আসলে ভোরে আইরাত আর থাকতে না পেরে আব্রাহাম কে ফোন দিয়েই ফেলে। তবে আব্রাহাম ফোন পিক করে না। আইরাত আর কি ফোন রেখে দেয়। ফ্রেশ হয়ে, রেডি হয়ে একদম অফিসে এসে পরে। অফিসে এসেই দেখে অয়ন আর রাশেদ মিলে আড্ডা দিচ্ছে।

আইরাত;; হে গাইস, এতো ফুর্তিবাজ লাগছে কেনো তোমাদের আজ?

রাশেদ;; ম্যাম দারুন খবর আছে।

আইরাত;; আবার কি?

রাশেদ;; দাড়ান।

এই বলেই রাশেদ টিভি অন করে দেয়। সেখানের আজ ব্রেকিং নিউজ “” মানুষ প্রেংক করে কিন্তু এতো বড়ো প্রেংক কীভাবে। আজ হয়তো অনেক মেয়েরই কলিজার পানি আবার ফিরে এসেছে, আব্রহাম চৌধুরী অর্নীল কোন বিয়ে করছেন না, সম্পূর্ণই ছইলো একটা ভুয়া খবর””।

এটা দেখেই আইরাত হেসে দেয়। হাসতে হাসতে একদম খারাপ দশা। আইরাতের হাসি দেখে রাশেদ আর অয়ন তাকিয়ে আছে তার দিকে। কেননা আইরাত কে এতোদিন পর এই প্রথম এভাবে মন খুলে হাসতে দেখছে তার। আইরাতের হাসতে হাসতে চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে পরেছে। আইরাত খেয়াল করলো যে রাশেদ আর অয়ন তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তা দেখে আইরাত কিছুটা স্বাভাবিক হয়।

আইরাত;; সরি, সরি, সরি গাইস। আসলে ব্যাপার টাই এমন যে না হেসে আর পারলাম না সরি। (এই বলে আইরাত আবারও হেসে দেয়)

আইরাত;; এহহহ আসছিলো বিয়ে করতে। করিয়েছি না জন্মের বিয়ে একেবারে। বিয়ে করবে হাহ।

এই বলেই আইরাত থেমে যায়। রাশেদের উদ্দেশ্যে বলে ওঠে…..

আইরাত;; তনয়া কোথায়?

রাশেদ;; ম্যাম আজ ও অফিসেই আসে নি। ওর নাকি একটু কাজ আছে, বেশ ব্যাস্ত তাই।

আইরাত;; ওহহ আচ্ছা থাক। আচ্ছা আমি একটু বাইরে যাবো। ভালো লাগছে না আমার এখন একটু টাইম নিজেকে দেওয়া প্রয়োজন।

রাশেদ;; জ্বি আচ্ছা ম্যাম।

অফিসে প্রায় ঘন্টা একের মতো থেকেই আইরাত এসে পরে। আব্রাহাম কে কল-মেসেজ দিচ্ছে কিন্তু সে নেই। আইরাত গাড়ি নিয়ে বের হয়ে পরে। কোথায় যাচ্ছে তাও সে জানে না। শুধু নিজের মন মতো করে গাড়ি ড্রাইভ করেই যচ্ছে৷ একবার ভেবেছিলো যে সে সোজা আব্রাহামের বাড়িতে চলে যাবে কিন্তু কেনো যেনো আইরাতের মন বলছে যে আব্রাহাম এখন তার বাসায় নেই। যাই হোক আইরাত এগুলো ভাবছে আর গাড়ি ড্রাইভ করে যাচ্ছে। গন্তব্যহীন ভাবে। দেখতে দেখতেই একসময় হাইওয়ে তে এসে পরে আইরাত। হাইওয়ে রোডের একদম মাঝ বরাবর আছে সে এখন। হঠাৎ আইরাত গাড়ির স্পীড বাড়িয়ে দেয়। নিজ ইচ্ছে করেই গাড়ি একটা জোরে সাই করে টান দেয়। আইরাত ড্রাইভ করতে করতে রাস্তার একটা সাইড দিয়ে বাতাসের গতিতে চলে যায়। কিন্তু তার কিছুদূর গিয়েই আইরাত জোরে ব্রেক কষে। তার মনে হলো সে কিছু দেখেছে। অর্থাৎ গাড়ির দ্রুততার ফলে সে ঠিক সম্পূর্ণ খেয়াল করতে পারে নি কিন্তু আইরাত কাউকে দেখেছে। আইরাত একবার তার মাথা ঘুড়িয়ে পেছনে তাকায় কিন্তু সেখান থেকে স্পষ্ট কাউকে দেখা যাচ্ছে না তাই সে তার গাড়ি পিছিয়ে নেয় আস্তে আস্তে। বেশ খানিক পেছনের দিকে গাড়ি নিতেই আইরাত দেখে যে একটা গাঢ় কালো কালারের গাড়ি হাইওয়ে রোডের একটা সাইডে দাঁড়িয়ে আছে। আর গাড়ির ডিকির ওপরে বসে বসে আব্রাহাম বিয়ার খাচ্ছে। আইরাত আব্রাহামকে দেখে কপাল কুচকায়। আইরাতও নিজের গাড়িটা এক সাইডে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পরে। এখানে বাতাসের বেগও প্রচুর। আইরাত আব্রাহামের সামনে গিয়ে কিছুটা রাগ নিয়েই বলে ওঠে……

আইরাত;; এই আপনি এখানে বসে আছেন। ফোন টা একবার চেক করুন তো আমি আপনাকে ঠিক কতো গুলো কল করেছি আর মেসেজ দিয়েছে। রিপ্লাই তো দূর সিন পর্যন্ত করেন নি আপনি।

আব্রাহাম;; ( এক মনে সামনের দিকে তাকিয়ে বিয়ার খাচ্ছে)

আইরাত;; ওওও হ্যালো আই এম টকিং উইথ ইউ।

আব্রাহাম;; _______________________

আইরাত;; ওমা কি হয়েছে,, আহারে আজ বুঝি সকালে টিভি তে নিজের বিয়ে ভাঙার কথা শুনে ভালো লাগে নি? আরে প্যারা নাই চিল, বিয়ে তো হয়েই গিয়েছে আমাদের তাই না।

আব্রাহাম;; _______________________

আইরাত;; আরে ধুর, কি এটা খেয়ে যাচ্ছেন তো খেয়েই যাচ্ছেন। কিছু বলছি তো আমি আপনাকে নাকি।

আব্রাহাম এবার তার হাত থেকে বিয়ারের কাচের বোতল টা আস্তে করে ছুড়ে মারে নিচে তবুও তা ভেঙে যায়। গম্ভীর মুখে আইরাতের দিকে তাকায়। আব্রাহামের নাক মুখ আর চোখ গুলো কেমন লাল লাল হয়ে আছে। আব্রাহাম হালকা ভাবে লাফ দিয়ে গাড়ির ডিকির ওপর থেকে নেমে পরে। নিজের দুই হাত ঝেড়ে ফেলে। আইরাত কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই আব্রাহাম আইরাতের দিকে এগিয়ে আসে। হুট করেই আব্রাহাম তার এক হাত দিয়ে আইরাতের কোমড় পেচিয়ে ধরে নিজের সাথে ঠেকিয়ে নেয়। আরেক হাত আইরাতের গাল আর গলার মাঝ বরাবর রেখে দিয়ে স্লাইড করতে থাকে। আব্রাহাম আইরাতকে নিজের দিকে কিছুটা টেনে নিয়ে আসে। আইরাত কে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়েছে। আইরাত অবাক করা চোখে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে। তবে আব্রাহাম এভাবে আইরাতকে নিজের সাথে চেপে ধরে তার মুখের কাছে একদম নিজের মুখে নিয়ে আসে। আইরাত কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই আব্রাহাম বেশ নেশাক্ত কন্ঠে আইরাতকে বলে……..

আব্রাহাম;; আইরাত, আজ এসেছো এসেছোই,, এরপর থেকে আর আমার সামনে এসো না। নয়তো একদম জানে মেরে দিবো তোমাকে আমি।

আব্রাহামের এমন কথায় আইরাত শূন্য চোখে তার দিকে তাকিয়ে থাকে।

বেশকিছুক্ষন আব্রাহাম আইরাতকে সেভাবে ধরে রেখে ছেড়ে দেয়।

আইরাত;; মরে তো গিয়েছি সে কবেই আমি। তবে এবার যদি আপনার নিজ হাতে আমাকে মরতে হয় তাহলে সেটা আরো ভালো। সেখানে আর আফসোস টা থাকবে না।

আইরাত কিছুক্ষন চুপ করে থাকে তারপর আবার বলে ওঠে….

আইরাত;; আপনার ভাই রায়হান জেল থেকে পালিয়েছে।

আইরাতের কথায় আব্রাহাম তার দিকে একবার তাকায়।

আইরাত;; এন্ড আই থিংক সেইদিন যে লোকটা আমার ওপর গুলি চালিয়েছিলো সে রায়হানেরই লোক ছিলো।

আব্রাহাম;; এখন না অফিসে থাকার কথা তোমার এখানে কি করো?

আইরাত;; ভালো লাগছিলো না তাই ভাবলাম একটু গাড়ি নিয়ে ঘুড়ে আসি আর দেখুন না কাকতালীয় ভাবে আপনাকেও পেয়ে গেলাম।

আব্রাহাম;; হুমম।

আইরাত;; আজ সন্ধ্যার দিকে একটা ক্লাবে যাবো, আমাদের সাথে আপনিও যাবেন।

আব্রাহাম;; Not interested

আইরাত;; ওও হ্যালো আমি আপনাকে জিজ্ঞেস বা অফার করছি না,, আমি আপনাকে বলছি। আর আপনি যাবেন।

আব্রাহাম;; আমি যাবো না, আমার মুড নেই।

আইরাত;; আপনার মুডকে গুল্লি মারি। যেতে বলছি যাবেন ব্যাস,, একটা টু শব্দও করবেন না।

আব্রাহাম;; আশ্চর্য।

আইরাত;; আর এই এভাবে হাইওয়ে তে বসে বসে বিয়ার খাচ্ছেন,, কেনো বলুন তো। এখানে কি মেয়ে মানুষ কম নাকি এক একটা যেনো চিৎপটাং হয়ে পরে যায় এর জন্য। বাড়ি যান।

আব্রাহাম;; কখন আমাকে নিঃশ্বাস নিতে হবে তাও বলে দাও। তাহলে খুব উপকার হতো আমার।

আইরাত;; না না আমি আবার এতোটাও স্ট্রিক্ট না, তা আপনি আপনার মন মতো নিতে পারেন।

আব্রাহাম;; সিরিয়াসলি আইরাত!!

আইরাত;; হ্যাঁ 😁

অতঃপর আইরাত সেখান থেকে চলে আসে। আইরাত যখন চলে আসছিলো আব্রাহাম তার যাওয়ার দিকে এক মনে তাকিয়ে ছিলো। কেমন যানি এক মায়া কাজ করছিলো নিজের মাঝে।


আইরাত বিকেলের দিকে অফিসে যায়। বেশকিছু পেন্ডিং ফাইল ছিলো সেগুলোই দেখছিলো।

রাশেদ;; ম্যাম ডেকেছেন?

আইরাত;; কিছু জানতে পারলে?

রাশেদ;; জ্বি ম্যাম এবার একদম কনফার্ম, লোকটা রায়হানেরই ছিলো।

আইরাত;; হুমম,, সবাই একদম আমার জানের পেছনে হাত ধুয়ে লেগে পরেছে। পরুক, দেখি কি হয়।

রাশেদ;; কিন্তু ম্যাম একটা জিনিস বুঝলাম না, এই রায়হান তো আপনাকে ভালোবাসতো তাই না,, তাহলে গুলি কেনো চালালো?!

আইরাত;; রাশেদ, প্রেম-ভালোবাসার থেকেও সবচেয়ে খারাপ জিনিস হলো রাগ & জেদ। এই দুইটা জিনিস একদম মানুষকে ধ্বংস করে দেয়। একটা ডায়লগ তো শুনেছোই হয়তো যে Everything is fair in love and war… রায়হান হয়তো আমাকে ভালোবাসতো কিন্তু যখন সে বুঝলো যে আমি মরে গেলেও তার হবো না তাই সে এখন আমারে মেরে ফেলার ওপরেই উঠে-পরে লেগেছে। আগে ভালোবাসা ছিলো তবে এখন তা যুদ্ধ হয়ে গেছে।

রাশেদ;; কিন্তু ম্যাম সত্যি যদি আপনার কিছু করে বসে রায়হান?

আইরাত;; আমি জানি না যে আব্রাহাম এমন কেনো করছে সে এখনো আমাকে ভালোবাসে নাকি ঘৃণা করে। তবে আমি এইটুকু জানি যে এখন যেহেতু আব্রাহাম আছে তো সে এই দুলিয়া উলটে গেলেও আমার কিছুই হতে দিবে না। আব্রাহাম আমাকে সবসময় বলতো যে আমাকে নাকি ভালোবাসার অধিকারও তার আর মেরে ফেলারও। আব্রাহাম আমার কিছু হতেই দিবে না।

রাশেদ;; 😊❤️

আইরাত;; আরে পরের টা পরে দেখা যাবে,, এখন বলো রোদেলা কোথায়, আর অয়ন ভাইয়া, আহসান ভাই সবাই কোথায়। ক্লাবে যাবো না?!

রাশেদ;; জ্বি ম্যাম যাবো তো।

আইরাত;; সবাইকে ডাক দাও,, আর বাইরে গাড়ি বের করো।

রাশেদ;; আচ্ছা।

এই বলেই রাশেদ কেবিন থেকে বের হয়ে পরে। আইরাত তার চোখ থেকে গ্লাস টা খুলে সোজা আব্রাহাম কে ফোন দেয়।

আব্রাহাম;; হ্যালো

আইরাত;; আমার জামাইজান টা কি করছে?

আব্রাহাম;; আব্রাহাম গান শুনছে, কারো জামাইজান না।

আইরাত;; কারো হতে যাবে কেনো আমার, আমার। আচ্ছা কি গান শুনছেন?

আব্রাহাম;; Loving you is a loosing game….

আইরাত;; বাব্বাহ,

আব্রাহাম;; কিছু বলবে?

আইরাত;; Dynamic Drillers,, Road no. 29 জলদি এসে পরুন।

আব্রাহাম;; ওকে ফাইন আসছি।

আব্রাহাম ফোন কেটে দেয়। আইরাতও তার রকিং চেয়ারের ওপর থাকা জেকেট টা কাধে তুলে নিয়ে কেবিন থেকে বের হয়ে যায়। সবাই এসেছে তবে অয়ন আসতে কিছুটা দেরি করে তারপর সবাই গাড়িতে করে ক্লাবে চলে যায়। প্রায় ৩০ মিনিট পর সবাই এসে পরে,, এখন বলতে গেলে রাতই হয়ে গেছে। অনেক মানুষ সবার যার যার মতো করে ব্যাস্ত। ডিস্কো লাইট চলছে সব জায়গায়, গানও আছে। আইরাত সহ বাকিরা গিয়ে একটা জায়গায় বসে পরে।

অয়ন;; বউমনি আব্রাহাম কোথায়?

আইরাত;; আসবে আসবে।

রোদেলা;; আরে এসে পরেছে।

আইরাত মাথা তুলে সামনে তাকায়। দেখে আব্রাহাম তার ভারি ভারি কদম ফেলে এইদিকেই আসছে। আইরাত হেসে দেয় তাকে দেখে। আব্রাহামের আসার সময় সবাই তাকিয়ে ছিলো। এমনকি যেই মেয়েদের পার্টনার ছিলো তারাও তাকিয়ে ছিলো। কিন্তু আব্রাহাম তার জেকেটের হাতা ফোল্ড করতে করতে এসে বসে পরে।

রোদেলা;; এত্তো Attitude আসে যে কোথা থেকে!! (মেকি হেসে)

আব্রাহাম;; হুয়াট?

রোদেলা;; ন ননা ক কিছু না, কিছু না।

তারা সবাই বসে কথা বলছিলো আর আড্ডা দিচ্ছিলো। তখনই আইরাতের একটা কল আসে আর আইরাত কিছুটা দূরে চলে যায় ফোন নিয়ে কথা বলতে। আর সেই সময়ই ক্লাবে এনাউন্সমেন্ট হয় একটা গ্যামের। গ্যাম টা কিছুটা এরকম যে একটা কাচের দেওয়ালে একটা লাভ স্যাপের অর্ধেক অংশ আছে। তার সেই অর্ধেক অংশে একটা হাতের ছাপ আছে। এখন মূল থিম হচ্ছে একপাশে অর্থাৎ যেই পাশে লাভ স্যাপের অর্ধেক অংশে একটা হাতের ছাপ আছে সেখানে একজন হাত রাখবে, আরেক পাশে তার পার্টনার হাত রাখবে। যদি তারা মেড ফর ইচ আদার হয় তাহলে সেই লাভ স্যাপ টা ফুল পূরণ হয়ে যাবে আর তাতে রেড কালারের লাইট জ্বলে উঠবে। আর যদি তারা মেড ফর ইচ আদার না হয় তাহলে লাভ সেপ টা ভেঙে যাবে আর ভেঙে গেলে অবশ্যই কাপলদের মন টাও ভেঙে যাবে। গ্যাম টা বেশ ইন্টারেস্টিং। গ্যামের এনাউন্সমেন্ট হতেই সবাই বেশ Excitement নিয়ে এগিয়ে গেলো। অনেকের টা জোড়া লাগছে আবার কারো কারো ভেঙে যাচ্ছে। ভেঙেছেই বেশি,, জোড়া খুব কম ২-১ টা লেগেছে।

রাশেদ;; স্যার আপনিও যান না।

আব্রাহাম;; কি আমি? না না আমি না।

রাশেদ;; আরে স্যার একটা বার ট্রাই তো করেন।

আব্রাহাম;; আরে না এইসব ফেইক হয় না কিছুই এমন,, বাদ দাও।

রোদেলা;; স্যার একটা বার চেষ্টা করলে কি ক্ষতি যান না স্যার প্লিজ। আমরাও দেখি আপনার পার্টনার কে স্যার প্লিজ যান।

সবাই আব্রাহাম কে একদম খামছে ধরলো যেতে হবে মানে যেতেই হবে। আব্রাহাম আর না পেরে চলে গেলো। আব্রাহাম গিয়ে মনে বেশ কিছু ভেবে চিন্তে লাভ স্যাপের এক সাইডে হাত রেখেই দেয়। তারপর একটা মেয়ে আসে, সে এসে আব্রাহামের হাতের পাশে নিজের হাতটা রাখে কিন্তু হাত রাখার সাথে সাথেই লাভ স্যাপ টা ভেঙে যায়। সবাই ওওওওওওও করে ওঠে। মেয়েটা চলে যায়। তারপর আরেকটা মেয়ে আসে সেও হাত রাখে আর আগের বারের মতো এটাও ভেঙে যায়। আব্রাহামের এবার হাসি পাচ্ছে। এমন ঠিক চার পাঁচ বার হয়। আব্রাহাম তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে চলে যেতে ধরবে তখনই একটা হাত এসে আব্রাহামের হাতের পাশে দাঁড়ায়। লাভ স্যাপ টার ওপরে রেখে দেয় একদম। আর রাখার সাথে সাথে তাতে ফট করে রেড লাইট জ্বলে উঠে। সবাই কিছুটা চিল্লিয়ে ওঠে। লাভ স্যাপ টা ফুল ফিলআপ হয়ে গেছে,, তার মানে তারা মেড ফর ইচ আদার। আব্রাহাম কপাল কুচকে পাশে তাকায় দেখে আইরাত মুচকি হেসে তাদের হাতের দিকে তাকিয়ে আছে। তারপর আইরাত নিজেও আব্রাহামের দিকে তাকায়। আইরাত আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে গাঢ় এক হাসি দিয়ে সেখান থেকে চলে আসে। তারপর আব্রাহাম নিজেও চলে আসে।

রোদেলা;; ইইইই মিলে গেছে তোমাদের টা, হায় কি লাকি কাপল তোমরা।

আইরাত;; আমার সাথে না মিললে আমি হয়তো আব্রাহামের হাত টাই কেটে দিতাম। আর এছাড়াও না মিলে যাবে কোথায়। আমি জানতাম যে মিলবেই।

আব্রাহাম আইরাতের পাশে বসে পরে।

আইরাত;; জামাইইইইইইইই

আব্রাহাম;; কি হয়েছে?

আইরাত;; এই আপনি স্বীকার করেছেন তার মানে যে আপনি আমার জামাই।

আব্রাহাম;; ওহ গড।

রোদেলা;; এই আইরাত চলো।

আইরাত;; কোথায়?

রোদেলা;; আরে চলো একটু ওদিকে যাবো, চলো চলো।

আইরাত;; আরে কিন্তু।

রোদেলা;; আরে চলো না।

আইরাত;; আচ্ছা।

রোদেলা আইরাত কে নিয়ে চলে গেলো। অন্যদিকে রাশেদ আর অয়ন একটা টেবিলে বসে বসে কথা বলছে।

রাশেদ;; কি ভাবছেন?

অয়ন;; ও আমাদের আব্রাহামই তো?

রাশেদ;; হ্যাঁ, অবশ্যই।

অয়ন;; তাহলে এই এতো বছর কোথায় ছিলো, এলো না কেনো আমাদের কাছে? কথা আমার এই একটাই।

রাশেদ;; তা তো স্যার নিজেই ভালো বলতে পারবেন।

অয়ন;; নাকি আব্রাহাম সব ভুলে গিয়েছে?

রাশেদ;; না, কীভাবে সম্ভব এটা?

অয়ন;; না হয়তো আব্রাহাম ভুলে গিয়েছে সব। কম বড়ো এক্সিডেন্ট হয় নি তার। আব্রাহাম কে সবকিছু মনে করাতে হবে।

আব্রাহাম;; মনে তো তখন করবো যখন আমি সবকিছু ভুলে যাবো। যখন আমি কিছু ভুলিই নি তখন সেখানে নতুন করে সবকিছু মনে করার প্রশ্নই আসে না।

রাশেদ & অয়ন তাকিয়ে দেখে আব্রাহাম তাদের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে।





চলবে~~

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৬৫

আব্রাহাম;; মনে তো তখন করবো যখন আমি সবকিছু ভুলে যাব। যখন আমি কিছু ভুলিই নি তখন সেখানে নতুন করে সবকিছু মনে করার প্রশ্নই আসে না।

রাশেদ & অয়ন তাকিয়ে দেখে আব্রাহাম তাদের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। আব্রাহাম কে দেখে না যতটা বেশি অবাক হয়েছে তার থেকে বেশি অবাক হয়েছে আব্রাহামের কথা শুনে। আব্রাহাম একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে রাশেদ আর অয়নের টেবিলে এসে একটা চেয়ার টান দিয়ে নিয়ে বসে পরে। আরেক হাতে এলকোহলের পেগ নিয়ে নেয়। আব্রাহাম তার মতো করে আছেই তবে তার সামনে থাকা দুই জনের অবস্থা খারাপ। বেশ অবাক তারা।

আব্রাহাম;; এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো, তোমরা তো আগে থেকেই মেনে নিয়েছো যে আমিই আব্রাহাম। এখন শুধু আমি নিজেই মুখে স্বীকার করে নিলাম ব্যাস। হ্যাঁ আমিই আব্রাহাম,, আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী।

রাশেদ;; স স স্যার, আপনি……

আব্রাহাম;; অয়ন ভাই চোখ নামিয়ে ফেল, নয়তো তা তোর কোটর থেকে খুলে পরে যাবে।

অয়ন আব্রাহামের কথায় ভেবাচেকা খেয়ে যায়।

অয়ন;; আব্রাহাম ভাই মানে আমি কি বলবো এখন। আমি খুঁজে পাচ্ছি না,, তুই, তুই আসলেই ঠিক আছিস তাহলে। মানে কিছু হয় নি তোর ৷ আমি জাস্ট ভাবতে পারছি না। আর তুই, তুই তাহলে এই এতো গুলো বছর আমাদের সবার থেকে দূরে কেনো ছিলি বল। কেনো আমাদের কারো কাছে আসিস নি। আমাদের কথা কি তোর একটা বারের জন্যও মনে পরে নি। আমাদের কথা ছাড়, আইরাত বউমনির কথা তোর মনে পরে নি। কীভাবে আর কোথায় ছিলি তুই এতোদিন?

আব্রাহাম;; ছিলাম কোথাও না কোথাও তো ছিলামই।

অয়ন;; তুই পাল্টে গেছিস অনেক।

আব্রাহাম;; আহা, আগের আমিই আছি। সামান্য পাল্টাতে বাধ্য ছিলাম এই যা।

অয়ন;; আমি আর কিছুই ভাবতে পারছি না। কি থেকে কি হলো এইসব।

আব্রাহাম;; তুই ভাবিসও। আগে জানতাম না তো। তবে যা হওয়ার তাই হয়েছে।

অয়ন;; সিরিয়াসলি? এখনো লেগ পুল করিস আমার তুই। এতোসব কিছু হয়ে যাওয়ার পরও এতো শান্ত। কীভাবে ভাই?

আব্রাহাম;; মাথা গরম করে সবসময় কাজ করতে হয় না৷

অয়ন;; আই…….

আব্রাহাম;; আইরাতকে আর বলেই বা কি হবে। ও তো এমনিতেই আমাকে আব্রাহাম ভেবেই নিয়েছে৷ ও কারো কথার ধার ধারে না। ওকে হাজার না করলেও ও আমাকে আব্রাহাম ই ভাববে। আইরাত জানে।

অয়ন;; বউমনি তোকে ছাড়া কতো টা নরক যন্ত্রনা সহ্য করেছে তুই জানিস?

আব্রাহাম;; নরক যন্ত্রণা? আমাকে ছাড়া? ওর তো ভালো থাকার কথা।

অয়ন;; হাহ, মুখে বলা টা খুবই সহজ। বউমনি তোকে ছাড়া কি কি সাফার করেছে তা আমরা জানি।

হঠাৎ সেখানে আগমন ঘটে আহসানের ৷ যাকে দেখেই আব্রাহাম কিছুটা বিরক্ত প্রকাশ করে ৷ আহসান অয়নের সাথে কিছু কথা বলে।

আহসান;; আচ্ছা আইরাত কোথায়, দেখছি না যে?

আব্রাহাম;; কেনো ওকে খুব মিস করছো বুঝি?

আহসান;; হ্যাঁ করারই কথা। (হেসে)

আব্রাহাম;; হুমম, করবেই তো। কেউ কি আর সুযোগ ছাড়ে।

আহসান;; হুয়াট ডু ইউ মিন?

আব্রাহাম;; আই মিন ভালোই তো তাই না। তুমিও আইরাতের সাথে আছো আর আইরাতও তোমাকে ভালোই পাত্তা দেয় তো ভালোই তো।

আহসান;; হাহাহাহাহা 😅,, হাসালে। তোমাকে জানিয়ে দেই যে আমি আইরাত কে আমার বোনের চোখে দেখি। আর সেও আমাকে ভাই বলেই ডাকে।

আব্রাহাম;; আচ্ছা??

আহসান;; হ্যাঁ।

আব্রাহাম;; গুড

তাদের কথার মাঝেই রোদেলা আর আইরাত এসে পরে। আইরাত এসে দেখে আব্রাহাম, অয়ন, রাশেদ এরা তিনজনেই বেশ গম্ভীর মুডে বসে রয়েছে। আইরাত এসে আব্রাহামের পাশেই বসে পরে।

আইরাত;; হেই গাইস, কি হয়েছে সবাই এমন সিরিয়াস মুডে কেনো?

অয়ন;; না এমনি।

আইরাত;; হে… (আব্রাহামের উদ্দেশ্যে)

আব্রাহাম;; খাবে?

আইরাত;; এইসব ছাইপাস আপনিই খান। এখন মুড নেই আমার।

আব্রাহাম;; হুমম।

হঠাৎ সেখান থেকে রাশেদ, অয়ন, রোদেলা আর আহসান উঠে চলে যায়। থেকে যায় শুধু আব্রাহাম-আইরাত। আব্রাহাম আইরাতের দিকে তাকায়। এক নয়নে তাকিয়েই থাকে। আইরাত তা খেয়াল করে হালকা হেসে দেয়।

আইরাত;; কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?

আব্রাহাম;; সবকিছু কতো দ্রুত পালটে যায় তাই না।

আইরাত;; হুমম।

আব্রাহাম;; তুমি কীভাবে পাল্টালে বলো তো!!

আইরাত;; যেভাবে আপনি পাল্টেছেন।

আব্রাহাম;; “ভালোবাসা” মানুষ কে জিন্দা মেরে ফেলার মতো ক্ষমতা রাখে।

আইরাত;; হুম, বেশ অভিজ্ঞতা আছে আমার।

আব্রাহাম;; আবার মরতে পারবে?

আইরাত;; না। কষ্ট হয় অনেক।

আব্রাহাম;; তাহলে ভালোবাসা জিনিস টা থেকে দূরে চলে যাও।

আইরাত;; সম্ভব না। এটার ওপর আমার নিজের কোন হাত নেই। আমার ক্ষমতা নেই বের হবার।

আব্রাহাম;; ভা…………

আইরাত;; আমি আপনাকে ভালোবাসি।

আব্রাহাম;; Stop loving me..

আইরাত;; I can”t…

আব্রাহাম;; আইরাত……….

আইরাত;; আব্রাহাম, আমার কাছে সব ছিলো সব। সব ছিলো আমার কাছে। টাকা-পয়সা, প্রোপার্টি, ব্যাংক ব্যালেন্স, পাবলিসিটি, পপুলারিটি সব। কিন্তু এই সবকিছু থেকেও আমার কিচ্ছু ছিলো না। কিচ্ছুই না।
I was a big big zero..

আব্রাহাম;; __________________

আইরাত;; কিন্তু এখন আমার কাছে সব আছে সব। কারণ এখন আমার কাছে আপনি আছেন। এখন যদি কেউ আমার কাছ থেকে আমার জীবন টাও চায় তাহলে আমি হেসে হেসে রাজি হয়ে যাবো।

আব্রাহাম আইরাতের বেশ কাছে এসে পরে।

আব্রাহাম;; তাহলে সেইদিন আমার জীবন কেনো নিয়েছিলে?

আব্রাহামের কথায় আইরাতের মুখের হাসি টা উড়ে গিয়ে কিছুটা কালো হয়ে আসে। বুকের ভেতর টা ধক করে ওঠে।

আইরাত;; ম মা মানে?

আব্রাহাম;; মাঝে মাঝে দেখে মনে হয় যে তুমি এমন টা করতেই পারো না, কখনোই না। এটা মাত্রই আমার ভূল। কেননা তোমার চোখে মুখে আমি নিজের জন্য গাঢ় ভালোবাসা খুঁজে পাই। আমাকে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা খুঁজে পাই। কিন্তু পরক্ষণেই আবার পুরোনো সব কিছু মনে পরে সব এলোমেলো হয়ে যায়।

আইরাত;; আমি ক…………

আব্রাহাম;; বাদ দাও সব প্লিজ আমি আর কথা বলতে চাচ্ছি না।

আইরাত;; ____________________

আব্রাহাম;; তো? নতুন লাইফ পার্টানারের সাথে জীবন কীভাবে কাটাবে ভাবলে কিছু?

আইরাত;; আব্রাহাম কি বলছেন এইসব?

আব্রাহাম;; কবির?

আইরাত;; আরেএএএএএএ,, কবির ফেইক নিউজ বানিয়েছিলো আমার নামে। আমাকে না বলে কয়েই। ওটা ভুয়া। কিসের লাইফ পার্টনার, আমার বিয়ে বছর কয়েক আগে হয়ে গেছে আপনার সাথেই।

আব্রাহাম তার এক হাত কপালের সাইডে ঠেকিয়ে আইরাতের দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে থাকে।

আইরাত;; হাহ, কথা শুনেছো। নিজে বিয়ের আসর অব্দি চলে গিয়েছিলো আমি কিছু বললাম না অবশ্য করে দেখিয়েছিলাম। আর সে আসছে আমার বিয়ের খবর নিয়ে, এহহহহহহ।

আব্রাহাম;; অনেক রাত হয়েছে বাড়ি যাও।

আইরাত;; আর আপনি এখানে একা একা ক্লাবে থেকে কি করবেন। আপনাকে আমি এখানে রেখে যাই যেনো আপনি অন্য মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করতে পারেন তাই না?

আব্রাহাম;; ওও ম্যাডাম, ক্যারেক্টার এতো টাও ঢিলা না আমার ওকে।

আইরাত;; হ্যাঁ জানি আমি। এর জন্যই তো আপনাকে এতো এতো ভালোবাসি আমি।


আইরাত-আব্রাহাম আর বাকিরা সবাই ক্লাব থেকে এসে পরে। সবাই যার যার গাড়িতে উঠে বসে পরে। আব্রাহাম চলে যেতে ধরবে কিন্তু আইরাত তার সামনে এসে পথ আটকে দেয়। আব্রাহাম তার দিকে কপাল কুচকে তাকায়।

আব্রাহাম;; হুয়াট?

আইরাত;; আপনাকে না অনেক কিউট লাগছে।

আব্রাহাম;; থ্যাংক্স গার্ল।

আইরাত;; ফেভারিট।

আব্রাহাম;; কি?

আইরাত;; আপনার চাপদাড়ি গুলো।

আব্রাহাম;; এবার কি আমি যাবো?

আইরাত;; জান।

আব্রাহাম;; ওকে সামনে থেকে সরো।

আইরাত;; জান জান

আব্রাহাম;; সরলে তো যাবো নাকি!

আইরাত;; আরে ওই যান বলি নি আমি বলেছি জান। জায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ান।

আব্রাহাম;; ইয়া খোদা। আইরাত প্লিজ বাড়ি যাও,, অনেক রাত হয়েছে, পাগলামি করো না ওকে। প্লিজ বাড়ি যাও।

আইরাত;; যাচ্ছি যাচ্ছি,, হাহ 😏

তারা সবাই যার যার বাড়ি চলে যায়। আর আব্রাহামও আর বাইরে আজ বেশি একটা থাকে না সেও বাড়ি চলে যায়। তবে বাড়ি গিয়েই আব্রাহাম সোজা নিজের রুমে চলে যায়। ফুল পাওয়ারে এসি অন করে দেয়। ভালো লাগছে না কিছুতেই। সে এক প্রকার কনফিউশনে আছে। একবার মনে হয় আইরাতের সব দোষ আবার মনে হয় যে আইরাতের মতো মেয়ে এমন কিছু একটা করতেই পারে না। আইরাত আব্রাহাম কে মারতেই পারে না। দুই রকম দুই দ্বিধার মাঝে ঝুলে রয়েছে আব্রাহাম। আব্রাহাম তার জেকেট টা খুলে ফেলে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কতোক্ষন নিজের দিকে তাকিয়ে থেকে হুট করেই মাথা অন্য পাশে ঘুড়িয়ে ফেলে। পরনের শার্টের বোতাম গুলো খুলে গায়ের ওপর থেকে শার্ট টা খুলে ফেলে। এক হাত কোমড়ের সাইডে ঠেকিয়ে আরেক হাত ঘাড়ের পেছনে নিয়ে ক্লান্ত ভঙিতে চোখ গুলো বন্ধ করে ফেলে। কতোক্ষন পর নিজের চোখ গুলো মেলে তাকায়। আর তখনই আয়নাতে আব্রাহামের গায়ের একটা জিনিস লক্ষ হয়। আর সেটা হচ্ছে আব্রাহামের বাম পাশের বাহুতে থাকা ডার্ক ব্লেক কালারের ট্যাটু। আব্রাহামের বাম বাহুতে গাঢ় কালো কালার দিয়ে “আইরাত” নামে ট্যাটু করা, আইরাত নামের সাথেই আবার একটা গোলাপ ফুলের মতো গাঢ় নকশা আঁকা। এটা যে ঠিক কতো বছর আগে করেছিলো সে৷ আব্রাহাম হাত দিয়ে তাতে কিছুটা ছুইয়ে দেয়৷ সে ওয়াসরুমে চলে যায়৷ শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে এক হাত দেওয়ালে ঠেকিয়ে মাথা নিচু করে থাকে। ওপর থেকে ঠান্ডা বড়ো বড়ো পানিবিন্দু গুলো সব আব্রাহামের গায়ের ওপর পরছে। ফর্সা গায়ে পানিবিন্দু গুলো সব বেয়ে বেয়ে নিচে পরছে। আব্রাহাম বেশ সময় পর মাথা টা তুলে দাঁড়ায়। হাত দিয়ে সামনে আসা চুলগুলো ঠেলে পেছনে দিয়ে দেয়। আব্রাহাম আর চোখ বন্ধ করে থাকতে পারছে না। কারণ চোখ বন্ধ করলেই আইরাতের সেই হাসিমাখা চেহারা টা বারবার তার সামনে এসে পরে। আব্রাহাম হঠাৎ ফট করেই নিজের চোখ মেলে তাকায়। প্রায় বেশ এক লম্বা শাওয়ারের পর আব্রাহাম বের হয়ে আসে। সাদা টাওয়াল টা দিয়ে নিজের সামনের চুল গুলো মুছেতে মুছতে বের হয়ে পরে৷

একটা এশ কালারের টাওজার আর সাদা কালারের টি-শার্ট পরে নেয়। টি-শার্ট টা যেনো বডির সাথে একদম লেগে ধরেছে। একজন সার্ভেন্ট কে দিয়ে গরম-গরম এক কাপ কফি আনতে বলে। কয়েক মিনিট পর এসেও যায়। আব্রাহামের রুমে ভালো লাগছে না দেখে সে করিডরে চলে যায়। চাঁদের আবছা আলো করিডরের সম্পূর্ণ অংশে পরেছে। সেখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রেলিং এর ওপর হাত রেখে গরম ধোঁয়া ওঠা কফিতে চুমুক দিয়ে যাচ্ছে সে। কিছু সময় সেখানেই কাটিয়ে আবার ফিরে আসে রুমে। বিছানার সাথে গা ঠেকিয়ে ফ্লোরে বসে পরে। ঘাড় টা কিছুটা এলিয়ে দিয়ে ওপরের দিকে একমনে তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ চোখ গুলো বন্ধ করে নেয়।

“” আমি না আপনাকে অনেক ভালোবাসি, অনেক টাই বেশি। জামাইজান আমার। আব্রাহাম প্লিজ কোন মেয়ের দিকে তাকাবেন না। আর আমি জানি আপনি তাকাবেন ই না। আচ্ছা আব্রাহাম, আপনি আমাকে কতোটুকু ভালোবাসেন। শুনুন না আব্রাহাম, প্লিজ আপনি আর কখনো আমাকে ছেড়ে দূরে যাবেন না ওকে। প্রমিস করুন। আব্রাহাম-আইরাতের একটা ছোট্ট দুনিয়া হবে যেখানে শুধু ভালোবাসা থাকবে। একটা ছোট্ট বাড়ি, দুটো মানুষ আর অনেক গুলো ভালোবাসা।
আব্রাহাম, আমি আপনাকে ভালোবাসি। আমি আল্লাহ কে বলবো উনি যেনো আমার হায়াত আপনাকে দিয়ে দেয়, তবুও আপনি আমার কাছে থাকুন। ভালোবাসি তো। “”

আব্রাহাম এক ঝটকায় চোখের পাতা গুলো মেলে ফেলে। চোখের কার্নিশে পানি গুলো জমে ওঠেছে আব্রাহামের। খুব বেশি খারাপ লাগছে তার। কেনো এতো খারাপ লাগছে আজ তা সে নিজেও জানে না। খুব কান্না করতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু এই কান্না যেনো আব্রাহাম কে একদম মানায় না। কেউ এই মূহুর্তে কাছেও নেই যাকে কিছুক্ষন শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজের মনে শান্তু পাওয়া যায়। এখন যদি আইরাত আব্রাহামের কাছে থাকতো তাহলে হয়তো আব্রাহাম সবকিছু ভুলে, সবকিছু ছেড়ে ছুড়ে আইরাত কে এক নিমিষেই নিজের করে নিতো। আব্রাহামের চোখের কার্নিশ বেয়ে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পরে আব্রাহাম তা সাথে সাথেই মুছে ফেলে। দূরে ছিলো কতো বছর। আইরাতের জীবন বেশ খারাপ গিয়েছে কিন্তু তাতে যে আব্রাহাম ভালো থেকেছে তা কিন্তু একদমই নয়। আব্রাহামও কম কিছু সহ্য করে নি,, কম কষ্ট আব্রাহামও পায় নি। কেননা আইরাতের থেকে আব্রাহামও কিন্তু তাকে কম ভালোবাসে না। সে নিজের সাধ্য মতো সব করেছে, এমন কিছু নেই যে আব্রাহাম ট্রাই করে নি। কিন্তু হয়তো ভাগ্যে আব্রাহামের সাথে এতো বছর আইরাতের দূরে থাকা টাই লিখা ছিলো। সিচুয়েশন সবকিছু আইরাতের বিপক্ষে ছিলো। দুটো মানুষ দুই প্রান্তে থেকে সমান কষ্ট-ই পেয়েছে। তফাৎ শুধু এটা যে আইরাতের টা প্রকাশ পেয়েছে আর আব্রাহামের টা পায় নি। (আব্রাহামের ব্যাপারেও সব জানতে পারবেন)

আব্রাহাম আর থাকতে না পেরে তার পাশে থাকা গিটার টা হাতে তুলে নেয়। এটাই যেনো আব্রাহামের বর্তমান সঙ্গী হয়ে গেছে। যাই হোক না কেনো, যে কোনকিছুই হোক না কেনো আব্রাহাম তখন এই গিটার টা হাতে নিয়ে মন খুলে গান গাওয়া শুরু করে দেয়,, ব্যাস মন মূহুর্তেই ভালো হয়ে যায়। অনেক সময় আমাদের মনের কথা গুলো আমাদের মুখে ব্যাক্ত করতে না পারলে তা গানের কলি গুলোতে খুঁজে পাওয়া যায়। গানের লাইন গুলো অনেক সময় আমাদের মনের ভেতরের কথা গুলোকে খুব সুন্দর ভাবে প্রকাশ করে দেয়। গানে বা তার কলিগুলোতে মানুষের মনের ভাব প্রকাশ করার মতো এক অদ্ভুত ক্ষমতা থাকে। ঘরের মাঝে আবছা আলো রয়েছে,, এর মাঝেই বিনা বলেই হুড়মুড়িয়ে মুষুলধারে বৃষ্টি নেমে পরে। বাইরে থেকে শীতল বাতাস সব রুমের ভেতরে প্রবেশ করছে। আব্রাহাম গিটার টা হাতে নিয়ে তার চোখ গুলোতে এক নেশা লাগানো ভাব এনে ছাড়া গলায় গান ধরে….

“শ্রাবণ ধারায় এতো চেনা কি খুজে পাও?
যা আমার মাঝে নেই একবিন্দু পরিমাণু 🤍~

`~আমার সরল রেখার চিন্তা-ধারায়
আড়ারি করে দাগ কাট কেনো?

••নাকি কাঁদিয়ে আমাকে সেই
চোখের জলে ভেজো🍂

তৃষ্ণার্ত হৃদয়ে শুধুই আমি মরিচিকার মতো! 🥀

~`~তবে তাই যদি হয় করি নাকো ভয়
জানি আঁধার রাত ঘনিয়ে হবে সূর্যোদয়— ⛅

**আমি ভেবে নিলাম তুমি সেই লাল গোলাপ 🌹
যার নিরন্তর পাহারা দেয় এক কাটার বাগান💔

~হুমমমম…হুমমমম…হুমমমম…হুমমমম……

*~*পাহাড়-চূড়ায় বেয়ে আকাশ তো ছুতে দেখিনি
স্রোতস্বিনীর হাওয়ায় পাড়ি দাও সমুদ্দুর ❄️

ওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওও~~

`~* আচড়ে পরে সে ঢেউ আমার বুকে দূরন্ত বেগে
নাকি কাঁদিয়ে আমাকে সেই চোখের জলে ভেজো 🍂

“`তৃষ্ণার্ত হৃদয়ে শুধুই আমি মরিচিকার মতো! 🤎🦋

~`~তবে তাই যদি হয় করি নাকো ভয়
জানি আঁধার রাত ঘনিয়ে হবে সূর্যোদয়— ⛅

**আমি ভেবে নিলাম তুমি সেই লাল গোলাপ 🌹
যার নিরন্তর পাহারা দেয় এক কাটার বাগান 💝

~হুমমমম…হুমমমম…হুমমমম…হুমমমম……


মূহুর্তেই বাইরে একটা বিকট বর্জ্যপাতের শব্দ শোনা গেলো। আব্রাহাম আস্তে করে গিটার টা নামিয়ে সাইডেই রেখে দিলো। তখনই দরজাতে কারো কড়া নাড়ার শব্দ আসে। আব্রাহাম তার মাথা ঘুড়িয়ে দেখে দরজার আড়ালে রাত্রি দাঁড়িয়ে আছে।

রাত্রি;; আসবো কি?

আব্রাহাম;; হুমম

রাত্রি;; কি হয়েছে মন খারাপ?

আব্রাহাম;; নাহ এমনি

রাত্রি;; তাহলে থামলি কেনো, গান টা তো সুন্দরই ছিলো।

আব্রাহাম;; ভালো লাগছে না।

রাত্রি আব্রাহামের পাশে এসে বসে পরে। আব্রাহামের কাধে হাত রাখে।

আব্রাহাম;; আসলে না আমরা যা কখনোই নিজেদের লাইফে এক্সপেক্ট করি না বা তার বিন্দুমাত্র ধারণাও থাকে না পরবর্তীতে দেখা যায় কি যে সেগুলোই আমাদের সাথে হচ্ছে। জীবন টা যে এভাবে বদলে যাবে ভাবি না। জীবনের মোড় টা যে এবে ঘুড়ে যাবে সত্যি তা ভাবি নি। আমি তো চাই নি এমন কিছু, কিন্তু দেখ না কি থেকে কি হয়ে গেলো।

রাত্রি;; ___________________________

আব্রাহাম;; রাত অনেক হয়েছে যা ঘুমিয়ে পর।

রাত্রি;; তুই?

আব্রাহাম;; আমি তো আমিই। তুই যা।

রাত্রি;; আচ্ছা।

রাত্রি চলে যায়, তবে যাওয়ার আগে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আরেক বার আব্রাহাম কে দেখে যায়। আব্রাহাম ইচ্ছে করেই ঘরের লাইট অফ করে একটা বড়ো সাদা মোমবাতি জ্বালিয়ে রেখেছিলো। বাইরের দমকা বাতাস এসে তাও ধুপ করে নিভিয়ে দিয়ে যায়। ঘর টা আবছা আলো-আঁধারের ছায়া হয়ে যায়। বাইরে যে বিদুৎ চমক দিচ্ছে তার আলো ঘরের মাঝে থেকে থেকে জ্বলে উঠছে। আব্রাহাম শূন্য দৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকায়। আইরাতের কথা খুব বাজে ভাবে মনে পরছে তার। বড্ড বেশি। আব্রাহাম উঠে গিয়ে একটা কালো মোটা ফ্রেমের ডায়েরি বের করে। কালো কালি দিয়ে তাতে গাঢ় ভাবে লিখে………

“” যত নেশাই করো না কেনো,, সারা দুনিয়া খুঁজেও নারীর চেয়ে তীব্র নেশা কোথাও পাওয়া যাবে না~~
🖤🥀””

এটা লিখে দিয়েই আব্রাহাম টাস করে ডায়েরি টা বন্ধ করে ফেলে। বিছানাতে গিয়ে গা এলিয়ে দেয়। এভাবেই রাত টুকু কেটে যায় তার।


পরেরদিন সকালে~~

আইরাত;; রাশেদ তাহলে ফাইল গুলো নিয়ে আমি যাচ্ছি ওকে, তোমরা এদিক টা দেখো। আর মিস্টার ডিসোজার কোন ক্লাইন্ট যদি এখানে আসে তাহলে সোজা আমার কাছে পাঠিয়ে দিয়।

রাশেদ;; জ্বি ম্যাম।

তনয়ার দুই দিন ধরে কোন খবর নেই যার ফলে কাজের চাপ টা একটু বেশিই পরেছে। আইরাত যদিও তনয়া কে ফোন দিয়েছিলো। আর দুই একদিনের মাঝে সে আবার অফিসে জয়েন করবে। তবে এখন কিছু নতুন ক্লাইন্ট আছে আর তারা আইরাতের সাথে দেখা করার জন্য বাইরেই হয়তো কোন এক হোটেলে সব এরেঞ্জম্যান্ট করেছে তাই আইরাত সেখানে যাচ্ছে। আইরাতের বাইরে বের হতেই অফিসের বেশ কিছু স্টাফ দের সাথে তার দেখা হয়,, তারা সবাই আইরাত কে মর্নিং উইস করে। আইরাত হেসে সবার উত্তর দিয়ে দ্রুত পায়ে গিয়ে তার গাড়িতে ওঠে স্টার্ট দিয়ে চলে যায়। আইরাত আজ নিজেই কিছুটা ব্যাস্ত তাই সে আব্রাহাম কে ফোন দেয় নি। আইরাত গাড়ির স্পীড বেশ বাড়িয়ে দিয়ে আপন গতিতে যেতেই আছে৷ তবে মাঝপথে আচমকাই একটা গাড়ি আইরাতের গাড়ির সামনে এসে পরে,, আইরাত কোন রকমে দ্রুত ব্রেক কষে। অল্পের জন্য সেই গাড়িটার সাথে ধাক্কা লাগে নি তার। আইরাতের মাথায় ধুপ করে আগুন জ্বলে ওঠে। এখন এই গাড়িরও বারো টা বাজাবে আর তার সাথে গাড়ির মালিকেরও। আইরাত গাড়ি থেকে রেগে মেগে আগুন হয়ে নামতে যাবে তার আগেই গাড়ির ওনার আইরাতের গাড়ির উইন্ড-এর পাশে এসে দাঁড়ায়। আইরাত গাড়ির উইন্ড টা নামিয়ে বাইরে তাকায়। আর যে দাঁড়িয়ে ছিলো তাকে দেখে আইরাতের সব রাগ যেনো নিমিষেই পানি পানি হয়ে গেলো। তার মুখে ফুটে ওঠে দীর্ঘ হাসি।

আইরাত;; আরেহহ আমার জামাই টা না এইটা।

আব্রাহাম;; না অন্যের জামাই।

আইরাত;; ওইইয়া ফাইজলামি করেন 😠?

আব্রাহাম;; আইরাত গাড়ি থেকে নামো ফাস্ট।

আইরাত;; কিন্তু কেনো? আর আজ দেখি আমার কথা আপনার আগেই মনে পরেছে। থাকতে না পেরে একা একাই চলে এসেছেন আমার কাছে তাই না।

আব্রাহাম;; আইরাত বেশি কথা বলার সময় নেই এখন প্লিজ জলদি গাড়ি থেকে নেমে পরো।

আইরাত;; কিন্তু আব্রাহাম হয়েছে টা কি বলবেন তো।

আব্রাহাম;; আইরাত, গাড়ি থেকে নামতে বলেছি। সময় নেই হাতে বেশি একটা প্লিজ নামো জলদি।

আইরাত;; কিন্তু…

আব্রাহাম;; ধুত্তুরি, ফাজিল মেয়ে বেশি বকবক করে। ওওও মিসেস. বকবক।

এই বলেই আব্রাহাম আইরাতের ডান বাহু ধরে দেয় এক হেচকা টান। ফলে আইরাত হুমড়ি খেয়ে গাড়ির বাইরে বের হয়ে পরে। আব্রাহাম আর কিছু না বলেই আইরাতের হাত ধরে দৌড় লাগায়। দুজনেই দৌড়িয়ে বেশ কিছু দূরে এসে পরে। আইরাত তো হিল পরে ছিলো যার ফলে একটু অসুবিধা হয়েছে দৌড়াতে আর হাপিয়েও গেছে।

আইরাত;; আমি বুঝলাম না এভাবে টেনে বাইরে আনলেন কেনো, আর আমরা দৌড়ালামই বা কেনো। (কোমড়ে হাত রেখে হাপাতে হাপাতে)

আব্রাহাম তার জেকেটের হাতা গুটিয়ে নিয়ে আইরাতের দিকে কপাল কুচকে তাকায়। আর তার সাথে সাথেই এক গগন ফাটানো আওয়াজ করে আইরাতের গাড়ি টা ব্লাস্ট হয়ে হয়ে যায় অর্থাৎ বিস্ফোরণ। আইরাতের মুখ হা হয়ে গেছে। সে ফাটা চোখে তার গাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। আর আব্রাহাম আইরাতের দিকে তাকিয়েই রয়েছে।

আব্রাহাম;; এর জন্য টেনে এনেছি।

এই বলেই আব্রাহাম চলে আসে। আর আইরাত অবাকের চরম পর্যায়ে এখন। মানে কি তার গাড়িতে কি বোম টোম ফিট করা ছিলো নাকি। আইরাত এইসবের কিছু ভুল করেও জানতো না। অল্পের জন্য আজ বেচে গেছে। ভাগ্যিস আব্রাহাম সময়মতো এসেছিলো। তবে আব্রাহাম এটা জানলো কি করে? আইরাত তার পাশে তাকিয়ে দেখে আব্রাহাম নেই। আইরাত ঘুড়ে তাকায় দেখে যে আব্রাহাম তার গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে ফোন ঘাটছে। এগুলো কোন কথা? মাত্রই একটা এত্তো বড়ো বিস্ফোরণ হয়ে গেলো চোখের সামনে আর আব্রাহাম এখন এমন একটা ভাব ধরছে যেনো এখানে কিছুই হয় নি। এমনকি আব্রাহাম-আইরাতের থেকে কিছুটা দূরেই আইরাতের ওই গাড়ি টা আগুন লেগে জ্বলছে। জ্বলে-পুড়ে একদম ছাই হচ্ছে। আইরাত দ্রুত বেগে আব্রাহামের কাছে চলে গেলো। চিল্লিয়ে বলে ওঠে….

আইরাত;; কি হচ্ছে এগুলো? গাড়িতে বোম এলো কোথা থেকে আর আপনিই বা জানলেন কীভাবে?

আব্রাহাম;; _______________________

আইরাত;; আব্রাহাম!! বেশ রাগ হচ্ছে এবার আমার।

আব্রাহাম;; চলো।

আইরাত;; কোথায়?

আব্রাহাম;; যেদিকে দুচোখ যায়।

আইরাত;; কিহ?

আইরাত আব্রাহামের কথা শুনে হাসবে না কাদবে বুঝতে পারছে না। ত্যাড়া যে ত্যাড়াই রয়ে গেলো। আব্রাহাম আইরাতকে তার গাড়িতে তুলে আইরাতের যেই জায়গায় যাওয়ার কথা ছিলো আব্রাহাম তাকে সেখানে পৌঁছে দিয়ে আসে। অবশেষে আইরাত আব্রাহামের গাড়ি থেকে নেমে পরে। আইরাত ভেতরে চলে যেতে ধরবে কিন্তু কি যেনো একটা মনে করে আবার ঘুড়ে আব্রাহামের কাছে আসে। বেশ ঝুকে আব্রাহামের গাড়ির উইন্ড তে দুই হাত রেখে বলে ওঠে…..

আইরাত;; আপনা টাইম আয়েগা 😏

আব্রাহাম;; 🤨🤨

এই বলেই আইরাত ভেতরে চলে যায় আর আব্রাহাম একজন কে ফোন দেয়।





চলবে~~