#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#Season_2
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ২৩ [বোনাস 🍁]
আসলে কেউ নিজের জায়গায় থেকে অন্যের অবস্থা বা তার সিচুয়েশন কখনোই পরিমাপ করতে পারে না। যার সমস্যা একমাত্র সেই সাফার করে আর সেই বুঝতে পারে। ঠিক তেমনই হয়েছে আইরাতের সাথে। একদিনে নিজের মা আর পরিবার তো আরেক দিকে আব্রাহাম। কাকে রেখে কাকে চুস করবে। আইরাত তো বলে যে সে আব্রাহাম কে ভালোবাসে না তাহলে আজ কেনো নিলয়ের সাথে বিয়েতে রাজি হয়ে তার বুক ফাটছে। কারণ কি! খুব বেশি খারাপ লাগছে। আইরাতের যখন থেকে বুঝার বয়স হয়েছে তখন থেকেই এই বিয়ে নামক জিনিস থেকে দূরে ভেগে এসেছে। বিয়ের নাম টা নিলেই কেমন যেনো লাগতো। আর এখন কিনা নিজেরই ফুপির ছেলের সাথে বিয়ের পিড়িতে বসতে হচ্ছে তাকে। এতোদিন শুধু মানুষ কে দেখে এসেছে যে ‘বিয়েতে মত নেই তবুও নিজের ওপর জোর খাটিয়ে বিয়ে করতে’। আইরাত আগে এগুলো দেখে ভাবতো যে হয়তো কিছুদিন পরই ঠিক হয়ে যাবে বা এমনি। কিন্তু না আজ বুঝতে পারছে যে নিজের সাথে নিজেরই বিরাট বড় এক যুদ্ধ করে তারপর নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে করতে হয়। যদি বিয়েতে মত না থাকে তো। আর এক্ষেত্রে আসলে আইরাত সবার মন-কথা রাখতে গিয়ে বিয়েতে হ্যাঁ বলে দিয়েছে। আজ বাড়ি ফিরে যখন অনামিকা কে বললো যে “মা আমি এই বিয়েতে রাজি আছি” ব্যাস তখন অনামিকার খুশি দেখে কে। তৎক্ষনাৎ সাবিলা কে ফোন দিয়েছে সে কি কথা। আর আইরাত মুখটা শুকনো করে দিয়ে নিজের রুমে এসে পরে। তখন থেকেই বিছানাতে দুহাটু ভাজ করে যে এক বসা দিয়েছে আর ওঠাওঠি নেই। সেই তখন থেকে বসে বসে এগুলোই চিন্তা করে যাচ্ছে। আইরাতের ভাবনার মাঝে ছেদ ঘটিয়ে অনামিকা তার রুমে আসে।
অনামিকা;; আইরু!
আইরাত;; হ্যাঁ
অনামিকা;; এদিকে আয় তো।
অনামিকা রুমের ভেতরে এসে পরে আর আইরাত দাঁড়িয়ে পরে বসা থেকে। অনামিকা হঠাৎ বেশ বড়োসড়ো একটা লেহেঙ্গা আইরাতের গায়ে মেলে ধরে। আইরাত নিজের দিকে এক নজর তাকিয়ে আবার অনামিকার দিকে তাকায়।
অনামিকা;; বাহহ দারুন মানিয়েছে তো। আমি যেমন ভেবেছিলাম তার থেকে হাজার গুণে বেশি ফুটে ওঠেছে।
আইরাত;; বিয়ে না ঘোরয়া ভাবে হচ্ছে!
অনামিকা;; হ্যাঁ
আইরাত;; তো এগুলা করা কি খুব দরকার?
অনামিকা;; ওমা বলিস কি করতে হবে না। ঘোরয়া তাই কি সাজবি না তুই।
আইরাত;; এখন প্লিজ এটা বলো না যে বাইরে থেকে মেয়েদের ডেকেছো তুমি আমায় সাজানোর জন্য।
অনামিকা;; আসলে আমি ডেকেছি।
আইরাত;; যেভাবে ডেকেছো সেভাবে ফিরিয়ে দাও। কোন দরকার নেই রঙ মেখে সং সাজার। আমি নিজে যতটুকু পারি ততটুকুই রেডি হবো।
অনামিকা;; আচ্ছা।
অনামিকা জিনিস গুলো সব হাত থেকে রেখে বাইরে চলে যেতে ধরে তবে আইরাত আবার তার হাত ধরে কিছুটা টান দেয়। অনামিকা পেছনে তাকায়। দেখে আইরাত আগে ছোট বেলা যেভাবে অনামিকার কনিষ্ঠা আঙুল ধরতো ঠিক সেভাবেই ধরে আছে। অনামিকা হাতের দিকে তাকিয়েই হেসে দেয়। আইরাতের দিকে ঘুরে তাকায়।
অনামিকা;; কিছু বলবি?
আইরাত;; দম আটকে আসছে আমার।
অনামিকা;; কেনো শরীর খারাপ লাগছে?
আইরাত;; কেমন এক দমবন্ধ অনুভূতি।
অনামিকা;; ও কিছু না। ঠিক হয়ে যাবে।
অনামিকা আইরাতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে এসে পরে। আর আইরাত বিছানাতে বসে দুহাতে মাথা চেপে ধরে। আব্রাহামের কথা খুব বাজে ভাবে মনে পরছে। তার আর আব্রাহামের একসাথে বাইরে যাওয়া, আব্রাহামের তাকে ধমক দেওয়া, তার আইরাতের গলাতে আইসক্রিম রেখে খাওয়া, রাগি চোখ, এক নেশা লাগানো দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকা, ভ্রু নাচানো, আইরাতের কপালে গালে হুটহাট চুমু বসিয়ে দেওয়া আরো না জানি কতো কি। আইরাতের অজান্তেই আব্রাহামের সাথে তার দিনকে দিন হাজারো স্মৃতি জড়ো হয়ে গেছে। ফোন বেজে ওঠে। আইরাত তাকিয়ে দেখে ফোনের স্ক্রিনের ওপর নিলয়ের নাম ভেসে ওঠেছে৷ আইরাত কয়েক মূহুর্তের জন্য একেবারে থমকে যায়। মাথায় আব্রাহামের চিন্তা আর এদিকে নিলয়ের ফোন। এ কোন এক দোটানায় পরে গেছে সে। ফোন দুবার বেজে কেটে যায়। তৃতীয় বারের মাথায় ফোন রিসিভ করে।
আইরাত;; হ্য হ হ্যালো।
নিলয়;; কিরে বউ ব্যাস্ত নাকি!
আইরাত;; চুপ করো (ধমক দিয়ে)
নিলয়;; _____________________
আইরাত;; এই নামে আমাকে ডাকবে না কখনো।
নিলয়;; আরে কিছু সময় পর তোর আর আমার বিয়ে আর এখন বলছিস যে বউ বলে ডাকবো না। তো কি বলে ডাকবো তুই-ই বল।
আইরাত;; কিছু সময় পর বিয়ে। বিয়ে এখনো হয়নি।
নিলয়;; হতে কতোক্ষণ।
আইরাত;; কি বলবে তাড়াতাড়ি বলো।
নিলয়;; কিছু কি হয়েছে নাকি এভাবে চটে আছিস কেনো?
আইরাত;; আমাকে আমার মা দশ দিন যাবত খাইতে দেয় নাই বুঝলা। তাই ক্ষুদায় পাগল হয়ে গেছি এখন দ্রুত ফোন কাটো নয়তো তোমাকে আস্তো কাঁচা চিবিয়ে খেতে আমার দু মিনিটও লাগবে না।
নিলয়;; এ্যাহ!
আইরাত ফোন কেটে দিয়ে বিছানার ওপর ছুড়ে মারে। পাশেই তাকিয়ে দেখে বিয়ের ওই একশ কেজি ওয়ালা একটা লেহেঙ্গা। এটা দেখে এখনই আইরাতের গরম লাগছে। যাই হোক এভাবেই বেশ সময় চলে যায়। সাবিলা এসে পরেছে, নিলয় ওদিকটার কাজ সেরে তারপরই আসবে। নিলয়ের সাথে হয়তো কাজিও আসবে। বেলা গড়িয়ে বিকেল হয়। বিয়ে সন্ধ্যায় আর আইরাত কে রেডি হতে বলে গিয়ে প্রায় দুঘন্টা আগে। কিন্তু আইরাত সবকিছু বাদ দিয়ে একরাশ বিরক্তি নিয়ে লেহেঙ্গার নিচের অংশ পরে ওপরে একটা শর্ট জেকেট পরে বসে আছে। কেমন যে লাগছে দেখতে। নিচে লেহেঙ্গা ওপরে জেকেট। হাতভর্তি চুড়ি পরে ফোন ঘাটছে। আর ওদিকে অনামিকা দরজাতে জোরে জোরে চাপড়াচ্ছে। আইরাত মুখে বিরক্তির আভা এনে দরজার দিকে তাকায়। ফোন রেখে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দাঁড়ায়। অনামিকা কথা বলছিলো নিচের দিকে তাকিয়ে। আইরাত দরজা মেলে দাঁড়ায়। আর অনামিকা তার আপাদমস্তক স্কেন করে।
অনামিকা;; একটু পরে বিয়ে আর এই কি হুলিয়া বানিয়ে রেখেছিস নিজের। অর্ধেক লেহেঙ্গা বাকি অর্ধেক জেকেট, হাতে চুড়ি। কি এগুলা?
আইরাত;; ডিজিটাল বাংলাদেশের ডিজিটাল বউ।
অনামিকা;; রাখ তোর ডিজিটাল। সামনে থেকে সর দেখি।
আইরাত সরে ভেতরে চলে যায়। আর অনামিকা গিয়ে আইরাত কে বাকি অর্ধেক রেডি করিয়ে দেয়। লাল-মেরুন কালারের কম্বিনেশনে কারুকাজ করা একটা টকটকে বড়ো লেহেঙ্গা। পেছনের দিকে কিছুটা ব্যাকলেস। দুহাত ভর্তি লাল চুড়ি। চুলগুলো বেধে দিয়ে খোপা করে তাতে ভারি ফুলের গাজরা দেওয়া গোল করে। মাথার ওপরে ওরনা বাধা। তার ওপর সাজ। অপ্সরী ❤️। আয়নার সামনে বসে আছে আইরাত।
অনামিকা;; দেখ তো তখন কেমন লাগছিলো আর এখন কেমন লাগছে!
আইরাত;; লিপস্টিক টা এমন নোনতা ক্যান। আমি তো খাইয়া ফেলমু।
অনামিকা;; বিয়ে হচ্ছে, তুই বড়ো হবি কবে?
আইরাত;; ধুর এতো বড়ো হইয়া কি হবো। এতো বড়ো হইয়া আজ পর্যন্ত কে বড়োলোক হইছে।
অনামিকা;; কিছুই বলার নেই আমার।
আইরাত;; ইশশ এত্তো গরম।
আইরাত তার লেহেঙ্গা বেশ খানিক উপরে তুলে পা দুটো টেবিলের ওপর রেখে দেয়। আরেক হাতের উল্টো পাশ দিয়ে কপাল মুছে নেয়।
অনামিকা;; আরে করছিস টা কি?
আইরাত;; ওমা আমি আবার কি করলাম?
অনামিকা;; কিচ্ছু মানিস না, একটু তো লিহাজ কর। বউ তুই।
আইরাত;; কেডায় কইছে, বিয়ে তো হয়নি এখনো।
সাবিলা;; ভাবি, ভাবি কোথায় তোমরা আইরাত কে নিয়ে নিচে নেমে এসো জলদি।
অনামিকা;; ওই দেখ ডাকাডাকি শুরু হয়ে গেছে। এবার চল জলদি।
আইরাত সব ঠিকঠাক করে বসা থেকে দাঁড়িয়ে পরে। অনামিকা আইরাতের সবকিছু ঠিক আছে কিনা দেখে নিজের সাথে করে নিচে নিয়ে যায়। হলরুমে নিলয় এসে পরেছে। সেও পাঞ্জাবি পরেছে, ভালোই লাগছে। সাথে কাজিও রয়েছেন। আইরাত কে নিচে নামতে দেখে নিলয় সেদিকে তাকায়। চোখ যেনো সরাচ্ছেই না সে। একমনে তাকিয়ে আছে তো আছেই। যদিও তা আইরাত খেয়াল করেছে। মাথা তুলে দেখে নিলয় চোখ গোল গোল করে তাকে দেখছে এটা দেখে আইরাত দেয় এক ভেংচি কেটে। নিলয় তারপর মাথা নামিয়ে ফেলে। অনামিকা আইরাত কে বসিয়ে দেয়। আইরাত আর নিলয় একইসাথে সোফাতে বসে আছে। আর সাবিলা-অনামিকা আরেকপাশে দাঁড়িয়ে আছে। আইরাত-নিলয়ের সামনে ঠিক মাঝ বরাবর কাজি হাতে যাবতীয় সব কাগজপত্র নিয়ে বসে আছেন। দোয়া-কালাম যা পড়ার পরে নেয়। নিলয় কে কবুল বলতে বললে নিলয় কবুল বলে। সময় যত যাচ্ছে আইরাতের বুকের ধুকপুকানি যেনো ততই বেড়ে যাচ্ছে। এতো জোরে বুক ধুকপুকাচ্ছে যে মনে হচ্ছে হৃদপিন্ডটা ধপাস করে বাইরেই বের হয়ে পরবে। যেনো চারিদিকের সব মানুষ তার বুকের ধুকপুক ধুকপুক শব্দ টা শুনতে পারছে এমন। আইরাত তার চোখ-মুখ খিচে বন্ধ করে বাম হাত দিয়ে বুকের জায়গায় টায় হাল্কা ভাবে চেপে ধরে। জোরে জোরে কিছু দম নিয়ে আবার চোখের পাতা মেলে দেয়। আইরাত কিছুটা গলা খাকাড়ি দিয়ে ওঠে। অনামিকা গিয়ে আইরাতের পাশে তার কাধে হাত দিয়ে দাঁড়ায়। ইশারাতে আইরাত কে জিজ্ঞেস করে যে সে ঠিক আছে কিনা। আইরাত মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক সম্মতি জানায়। সামনে থাকা কাজি আবারও বলে ওঠে…
কাজি;; বলো মা ‘কবুল’।
ব্যাস এই কথা বলার সাথেসাথেই বাড়ির বাইরে থেকে কানের পর্দা ফাটানোর মতো বিকট আওয়াজ নিয়ে ঢাক-ঢোল বাজানোর শব্দ আসতে লাগে। এ যেনো শব্দ হয়েও শব্দ না। ভাগ্য ভালো এখানে কোন হার্ট প্যাসান্ট নেই নয়তো সোজা পরতো আর মরতো। এত্তো জোরে ঢাকের আওয়াজ কানের পোকা অব্দি নড়ে যাচ্ছে। বাড়ির ভেতরে সবাই নিজেদের দুহাত দিয়ে সর্বশক্তি দিয়ে কান চেপে রেখে দিয়েছে। কাজির অবস্থা খারাপ। উনি বেশ বয়স্ক মানুষ, বুকের পাশে হাত দিয়ে আছে। কেউ আর কিছু বলতে পারছে না। এতো শব্দ কিসের আর কেই বা এভাবে এই সময়ে এমন করে ঢাক-ঢোল পেটাচ্ছে তা জানার জন্য নিলয় উঠে গিয়ে যেই না ড্রইংরুমের দরজাতে যেতে ধরবে তখনই বাড়ির ভেতরে আব্রাহাম আসে উইথ সব ব্যান্ড-বাজা নিয়ে। কালো প্যান্ট পরে আছে, গ্রে কালারের শার্ট আর তার ওপরে কফি কালারের জেকেট, হাতা গুলো গুটানো। আব্রাহাম সোজা কথা নাচতে নাচতে ভেতরে এসেছে। বাড়ির ভেতরে পা রাখার সাথে সাথেই জোরে গান বেজে ওঠেছে…
“Mehendi laga ke rakhna, Doli saja ke rakhna, Lene tujhe oo gori aayenge teri shajnaa”
আব্রাহাম গানের লাইন গুলো যেনো আইরাত কেই ডেডিকেট করছে। তার দিকে আঙুল তুলে দেখিয়ে দেখিয়ে লিপসিং করছে। আর আইরাত তো আব্রাহাম কে দেখে এক ঝটকায় বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পরে। যেনো তার পুরো শরীরে ভূমিকম্প হচ্ছে। রীতিমতো থরথর করে কাপাকাপি করছে সে। আইরাত সত্যি বেশ ঘাবড়ে গেছে আব্রাহাম কে দেখে। এখন এই মুহুর্তে এখানে সে আব্রাহাম কে কখনো আশা করে নি। উল্টো আব্রাহাম এলো তো এলোই তাও আবার এই লুকে, টোটালি আনএক্সপ্যাক্টেড। বাকি সবাই যেনো এইসব কান্ড দেখে সোজা আকাশ থেকে টপকে পরলো। সবাই হা করে কপাল ভাজ করে তাকিয়ে আছে। আর কাজি বেচারা এগুলো তামাশা দেখছে। আইরাত মাথা ঘুরে পরে যেতে ধরলে সোফার এক কোণা ধরে কোন রকমে দাঁড়িয়ে পরে। অতঃপর গান শেষ হলো। সবাই থেমে গেলো। আব্রাহাম ঢাক-ঢোল বাজানো সব হাতের ইশারাতে থামিয়ে দিতে বললো আর তাদের বাইরে চলে যেতে বললো। তারা তাই করে। এবার আব্রাহাম এক ক্ষীণ দম ছেড়ে নিজের জেকেটের কলার ঝেড়ে আইরাতের দিকে ঘুরে তাকায়। খুব সুন্দর করে একটা হাসি দেয় আইরাত কে আপাদমস্তক দেখে।
আব্রাহাম;; হে মাই বিউটিফুল বেবিগার্ল!
আইরাত;; আলা লা হাওলা ওয়ালা কুয়াতা ইল্লা বিল্লাহ,, আলা লা হাওলা ওয়ালা কুয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।
যত দোয়া-দরুদ পারতো সব একনাগারে পড়া শুরু করে দিয়েছে আইরাত। এইসব দেখে আর মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে না থেকে নিলয় বলে ওঠে…
নিলয়;; আপনি আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী নিশ্চয়ই!
আব্রাহাম;; একদম।
নিলয়;; তো জানতে পারি কি যে এইসব কিছুর মানে কি। বলা নেই কওয়া নেই এভাবে হুট করে কারো বাড়িতে এসে এগুলো কি। আপনার মতো এতো বড়ো আর এতো হাই পারসোনালিটির মানুষের কাছে এটা মোটেও আশা করা যায় না।
আব্রাহাম;; কুল ব্রো। বাসা টা যখন নিজেরই শশুড় বাড়ি হয় তখন এখানে আসার জন্য অবশ্যই কারো পারমিশন নিতে হয় না।
সাবিলা;; মানে কি?
আব্রাহাম;; এই যে কন্যা (আইরাতের উদ্দেশ্যে)।
আইরাত ভয়ার্ত চোখ তুলে আব্রাহামের দিকে তাকায়৷
আব্রাহাম;; আরে বলো ওদের যে আমি তোমার কে হই আর এই বাড়ি আমার কি!
আইরাত;; আম, আমি নিজেই কিছুই বুঝতে পারছি না যে আপনি ঠিক কিসের কথা বলছেন।
আব্রাহাম;; কি বলো! আইরাত বেবিগার্ল এইসব আজাইরা প্যাচাল বাদ দিয়ে সত্যি টা বলে দাও না ওদের।
অনামিকা;; কি হচ্ছে কি এইসব? আইরাত
আইরাত;; মা আমি নিজেও বুঝতে পারছিনা যে উনি কিসের কথা বলছেন।
আব্রাহাম;; আচ্ছা ঠিকআছে কাজি সাহেব আপনিই বলেন তো একজন মেয়ে বিবাহিত হওয়া সত্বেও কি আরেকজন কে বিয়ে করতে পারবে?
কাজি;; না কখনোই না। এক নারীর একসাথে দু-দুজন স্বামী থাকতেই পারে না।
আব্রাহাম;; হুমম তাহলে এই বিয়েও হবে না। আর এই বিয়ে অবৈধ। কেননা আইরাত অলরেডি ম্যারিড।
অনামিকা;; কিসব যা তা বলছো তুমি। মানে কি এইসবের। কিসের বিয়ে কিসের স্বামী। আইরাতের তো আজকে বিয়ে।
আব্রাহাম;; মোটেও না শাশুড়ী আম্মু। আপনার মেয়ে অলরেডি আমার বিয়ে করা বউ।
আইরাতের মাথায় পুরো আকাশ ভেঙে পরে আব্রাহামের এই কথা শুনে। অনামিকা অবিশ্বাস্য চোখে আইরাতের দিকে তাকায়। আইরাত তেড়ে আব্রাহামের দিকে এগিয়ে যায়।
আইরাত;; সমস্যা কি আপনার। কি সব যা তা বলছেন। কেনো আমাকে দোষী বানাচ্ছেন বলুন তো। আমাদের বিয়ে কখন হলো? কবে হলো? কীভাবে সম্ভব এটা?
সাবিলা;; ভাবি আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
অনামিকা;; আইরাত কি হচ্ছে এগুলো?
আইরাত;; মা আমি সত্যি কিছু জানি না।
আব্রাহাম;; আহা, শাশুড়ী আম্মু আমি সব বুঝিয়ে বলছি যদিও এখানে এতো বুঝাবুঝির কিছুই নেই। খুবই সোজা। আইরাত আমার বিয়ে করা একমাত্র বউ এইতো।
আব্রাহামের কথা বলার ধরন দেখে অনামিকার সেইদিন আইরাতের রুমে পাওয়া সেই চিঠির কথা মনে পরে গেলো। সেখানেও এই শাশুড়ী আম্মু বলে তাকে সম্মোধন করা হয়েছিলো। নিলয় এবার তেড়ে বলে ওঠে…
নিলয়;; আপনি যে এতো সিওর দিয়ে বলছেন আইরাত আপনার বউ। তা প্রমাণ কি, কোন প্রমাণ আছে আপনার কাছে?
আব্রাহাম;; অবশ্যই আমি প্রমাণ ছাড়া কিছুই করি না আর বলিও না।
আব্রাহাম তার আর আইরাতের বিয়ের কাবিননামা টা নিলয়ের হাতে ধরিয়ে দেয়।
আব্রাহাম;; এই দেখুন আশা রাখছি আমাদের বিয়ের এই কাবিননামা টা দেখলেই বুঝবেন। প্রমাণের জন্য এটাই এনাফ। আর হ্যাঁ আমি একজন অতিমাত্রায় বউ পাগল জামাই হয়ে কি করে আমার বউ কে আরেকজনের হতে দিবো বলুন! (আইরাতের দিকে তাকিয়ে)
আইরাতের চোখে পানি জড়ো হয়ে গেছে। আব্রাহাম যে নিলয়ের হাতে কাবিননামা দিলো তা দেখেই আইরাত অবাকের চরম পর্যায়ে। আরে যখন বিয়েই হলো না তখন এই কাবিননামা টা কোথা থেকে এলো। নিলয় যেনো ভেঙে গিয়েছে তাদের বিয়ের এই কাবিননামা টা দেখে। আইরাত কে সে ভালোবাসতো তো কষ্ট তো হবেই। পুরো চেক করে দেখে যে কাবিননামা টা একদমই আসল। এমনকি এখানে আব্রাহাম-আইরাতের উভয়েরই লিগ্যাল সাইন রয়েছে। তা দেখে নিলয় অবাক হয়ে আইরাতের দিকে তাকিয়ে থাকে। নিলয়ের হাত থেকে সাবিলা কাবিননামা টা নিয়ে নেয় ছো মেরে। সেও দেখে যে এটা সত্যি।
সাবিলা;; ছিঃ আইরাত ছিঃ তোর থেকে এটা কখনোই আশা করি নি আমরা।
অনামিকা সাবিলার হাত থেকে কাবিননামা নিয়ে দেখে। আইরাতের করা সাইন টা যেনো চোখে বাধার মতো। সব দেখে অনামিকা আইরাতের কাছে এগিয়ে যায়। আইরাতের দিকে কাগজ টা এগিয়ে দেয়। আইরাত কাপাকাপা হাতে তড়িঘড়ি করে কাবিননামা টা হাতে নেয়। আইরাতের পায়ের নিচ থেকে জমি সরে গেছে কাগজে নিজের করা সাইন দেখে। প্রচুর মনে করার চেষ্টা করছে কিন্তু মনে হচ্ছে না যে সে কখন এখানে সাইন করেছিলো। নিজের মস্তিষ্কে আরো একটু জোর দিলে আইরাতের মনে পরে যে আব্রাহাম তাকে যখন নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলো তখন আব্রাহাম তাকে দিয়ে একটা কাগজে সাইন করিয়েছিলো। এটা সেই কাগজই হবে না তো! তাহলে কি, তাহলে কি সেদিন রাতেই তাদের বিয়ে হয়ে গেছে নাকি!! এটা ভেবেই আইরাত টলমলে চোখ নিয়ে আব্রাহামের দিকে তাকায়। নিজের সামনে অনামিকার দিকে তাকায়। অনামিকা যেনো এটা নিজের মেয়ের কাছ থেকে কখনো আশাই করে নি। তবে যা কখনো আশা করেনি তা আজ করে দেখিয়ে দিয়েছে।
আইরাত;; মা সত্যি বিশ্বাস করো আমি আ…….
অনামিকা;; তোকে আমি বারবার হাজার বার জিজ্ঞেস করেছি যে আইরাত তুই কাউকে ভালোবাসিস কিনা! কিন্তু তুই প্রত্যেক বার না বলেছিস আমায়। এটা তাহলে কি আইরাত। তুই কবে বিয়ে করেছিস তাও আবার আমাদের কাউকে না জানিয়েই। তুই এতো বড়ো হয়ে গেছিস যে নিজের মা কেও এতো বড়ো ঘটনা টা জানানোর প্রয়োজন মনে করলি না। আমাকে আগেই বলে দিতি তুই তাহলে এইসব বিয়ে আর আয়োজন এগুলো করতামই না। তুই আগে থেকেই বিয়ে করেছিস তাহলে নিলয়ের সাথে এই বিয়েতে রাজি কেনো হলি?
আইরাত;; মা আমি কেনো এমন করবো। আমি তোমায় না জানিয়ে বিয়ে করবো ভাবলে কি করে। আর বিয়ে করার পরেও নিলয় ভাইয়ের সাথে বিয়ে। এটা আমি কখনোই করতে পারি না।
সাবিলা;; তুই করতে পারিস না তাহলে এগুলো কি। তুই এতো টা নিচ এতোটা চরিত্রহীন বের হবি আগে জানতাম না। আমার ভাইয়ের মেয়ে তুই হতেই পারিস না।
আব্রাহাম;; ব্যাস, মুখ সামলে। ভুলে যাবেন না আইরাতের হাসবেন্ড এখানে দাঁড়িয়ে আছে। আমার আইরাত কে কেউ কিছু বললে আমি না-ই তার বয়সের লিহাজ করবো আর না-ই সম্পর্কের। আপনি নিজের ছেলেকে সামলান তাই ভালো হবে। আইরাত কে ভুল করেও জীবনে কিছু বলতে আসবেন না। বিয়ে করেছে আমাকে কোন অপরাধ করেনি। এতো ওভার রিয়েক্টের দরকার নেই এখানে। বিয়েরই তো আসর এখানে তো বিয়েই হবে তবে তা আমার সাথে।
আইরাত;; করবো না আমি বিয়ে। আমি কবে বিয়ে করলাম আমি নিজেই জানি না। কি হচ্ছে এইসব। আমাকে সবাই ভুল ভাবছে। যত দোষ নন্দ ঘোষ। আমি কিছু করি নি। আরে আমি জেনে শুনে কেনো আব্রাহাম কে বিয়ে করবো।
অনামিকা;; তাহলে তোর সাইন কেনো কাবিননামায়? কী করে এলো?
আইরাত;; আমি জানি না।
আব্রাহাম;; আইরাত আমার সাথেই ছিলো সেই তিনদিন। যখন আইরাত নিখোঁজ ছিলো, আমিই আইরাত কে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলাম রাতে৷
নিলয়;; কিহ?
সাবিলা;; মানে আইরাত একটা ছেলের সাথে তিনদিন যাবত বাড়ির বাইরে ছিলো!
আব্রাহাম;; হ্যাঁ তো (রাগে লাল হয়ে)
সাবিলা আর কিছু বলে না। তবে নিলয় সত্যি খুব হার্ট হয়েছে। অনামিকা সোফাতে বসে পরে। তার মানে আইরাত মিথ্যা বলেছে। আইরাত তাদের বলেছিলো কাজের ফলে শহরের বাইরে ছিলো সে৷ আইরাত তার মাথা নিচু করে দুহাতে লেহেঙ্গা খামছে ধরে নীরবে চোখের পানি ফেলছে। কেননা এটা সে অস্বীকার করতে পারবে না। এটা সত্য। সে তো আব্রাহামের সাথেই ছিলো, এটা তো সে সবার থেকে লুকিয়েছেই। মিথ্যা বলেছে। সে জানতো না যে এভাবে একদিন সব সত্য সামনে এসে পরবে তা নাহলে আইরাত আগে ভাগেই সবাই কে সব জানিয়ে দিতো। আব্রাহামের সাথে তার গেস্ট হাউজে থাকা অর্থাৎ আব্রাহাম যে তাকে আঁটকে রেখেছিলো এটা সত্যি হলেও বিয়ে কখন করলো তা আইরাত জানে না, অজানা তার।
কাজি;; বিয়ে কি তাহলে হবে না? আর বিয়ে কাদের পড়াবো?
আব্রাহাম;; আরে আরে বলেন কি কাজি সাহেব। বিয়ের আসরে বিয়ে হবে না এটা কি হয় নাকি। অবশ্যই বিয়ে হবে। আর আমাদের হবে।
আব্রাহাম আইরাতের কোমড় ধরে সাইড থেকে নিজের দিকে টেনে আনে। তারপর আইরাতের হাত ধরে নিয়ে গিয়ে কাজির সামনে সোফাতে বসে পরে। আব্রাহাম নিজের বাম হাত দিয়ে আইরাতের ডান হাত শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছে। এতে আইরাতের হাতের কিছু চুড়ি ভেঙেও গিয়েছে। ছাড়া পাওয়ার জন্য মোচড়ামুচড়ি করছে কিন্তু কোন লাভ নেই। আইরাত চলে যেতে ধরলে আব্রাহাম তাকে টান দিয়ে নিজের কাছে আবার বসিয়ে দেয়। সব শেষে কাজি আব্রাহাম কে কবুল বলতে বলে আব্রাহাম দেরি না করে বার তিনেক কবুল বলে দেয়। আইরাতের পালা এলে আইরাত যেনো তার ঠোঁটে তালা মেরে দেয়। এবার আব্রাহাম আইরাতের এই না না আর নিতে না পেরে জেকেট থেকে রিভলবার বের করে কাচের টেবিলের ওপর রাখে। তা দেখে আইরাত ভেজা চোখে আব্রাহামের দিকে তাকায়। বাকিদের কথা যেমনতেমন তবে রিভলবার দেখে কাজির অবস্থা ঢিলা হয়ে গেছে। সে কাপছে।
আইরাত;; আব্রাহাম প্লিজ…
আব্রাহাম;; তুমি চাইলেই তো আমায় আর এইসব ঝামেলা করতে হয় না বেবিগার্ল। কবুল বলে দাও না। নয়তো নিলয় কে মেরে ফেলতে আমি দু সেকেন্ড সময়ও নিবো না।
আব্রাহামের কথা শুনে সাবিলা চোখ বড় বড় করে তাকায়। আইরাত অনামিকার দিকে তাকায়। দেখে অনামিকা অপলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে। উনি জানেন যে আইরাত এমন করার মতো মেয়েই না তবে এইসব প্রমাণ সব যেনো উলটাপালটা করে দিচ্ছে। আব্রাহাম আইরাতের হাত ধরে টান দেয়।
আব্রাহাম;; Now i”m gonna shoot, Babygirl!
আইরাত;; না না।
আব্রাহাম;; তাহলে জলদি কবুল বলো।
আইরাত;; ______________________
এখনো আইরাত কে চুপ করে বসে থাকতে দেখে আব্রাহাম শূন্যে গুলি চালিয়ে দেয়। ঠাস করে শব্দ হয়। কাজি তো আল্লাহ আল্লাহ শুরু করে দিয়েছে।
সাবিলা ভয়ে শেষ। আর অনামিকা ঠাই বসে আছে। আইরাতের এক হাত এখনো আব্রাহামের আরেক হাতের মুঠোয়। আইরাতের এতো সুন্দর মুখে চোখের পানিগুলো মুক্তোর ন্যায় গড়িয়ে পরে। আব্রাহাম রিভলবার হাতে নিয়েই তার অশ্রুবিন্দু গুলো মুছে দেয়।
আব্রাহাম;; জানপাখি কবুল বলো।
আইরাত এবার প্রায় হাউমাউ করে কেঁদে দিয়েই কবুল বলে।
আইরাত;; কবুল! কবুল! কবুল!
কাজি;; আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ।
কাজি যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচে নয়তো আব্রাহাম কাকে রেখে কাকে মেরে বসতো আল্লাহ মালুম। কাজি মেকি হেসেই বলে…
কাজি;; আমি আমার বাপের জন্মেও এমন জামাই দেখি নি।
আব্রাহাম;; দেখবেন কি করে আপনার বাপের জন্মে তো আমারই জন্ম হয়নি।
আব্রাহামের কথা শুনে কাজি না চাইতেও হেসে দেয়। সবই শেষ হয় তবে এবার নিলয় একবার আইরাতের দিকে কষ্টভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে সোজা বাসা থেকে চলে আসে। সাবিলাও নিলয়ের পেছন পেছন চলে যায়। কাজিও বিদায় নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে পরে। আইরাত এবার ঝটকা দিয়ে নিজের হাত আব্রাহামের থেকে ছাড়িয়ে হাটু বাজ করে অনামিকার কাছে চলে যায়। কেঁদে কেঁদে বলে ওঠে…
আইরাত;; মা মা ও মা বিশ্বাস করো আমি উনাকে আগে বিয়ে করি নি। ওই কাবিননামায় কি করে সাইন এলো জানি না। সত্যি আই সুইয়ার মা। আমি জানি না।
অনামিকা;; বলে লাভ নেই। আগে না হোক এখন তো তোদের বিয়ে হয়েই গেলো। ব্যাপার শুধু এইটুকু যে আমি সাবিলার কাছে ছোট হলাম।
আইরাত;; মা।
অনামিকা;; তুই আমার একটাই মেয়ে। তাও খুব কষ্টের। বিয়ের আট বছরের মাথায় তুই হয়েছিস। আমার নাড়ি ছেড়া ধন। তোকে আমি চিনি। আব্রাহাম তোকে ভালোবাসতো তাও আমি জানতে পেরেছি কিন্তু তোদের যে বিয়ে হয়ে গেছে তা জানতাম না। তাহলে সাবিলাকে আমি কথাই দিতাম না।
আইরাত;; আই এম সরি মা।
অনামিকা আইরাতের থোতাতে হাত দিয়ে খানিক হাসে। অনামিকা উঠে পরে। আইরাতের বাহু ধরে নিয়ে আব্রাহামের কাছে যায়। আইরাত কে আব্রাহামের দিকে দিয়ে বলে…
অনামিকা;; ওকে সবসময় খুশি রেখো বাবা!
আব্রাহাম;; আজকের পর থেকে আমার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আইরাতের চোখে দুঃখের পানি আমি আসতে দিবো না। আজই শেষ। দুনিয়ার সব খুশি আমি আইরাত কে দিবো। শুধু একটাই কথা ওকে আমার হয়ে থাকতে হবে আজীবন। আমার কাছ থেকে দূরে যাওয়া তো দূর তার চিন্তা মাথায় আনলেও আমার থেকে খারাপও আর কেউ হবে না। বড্ড বেশিই ভালোবাসি আমি শাশুড়ী আম্মু আপনার এই মেয়েকে।
অনামিকার কেনো যেনো আব্রাহামের কথা গুলো শুনে বুকে শান্তি এসে পরে।
অনামিকা;; নিয়ে যাও ওকে।
অনামিলা এই বলে আইরাতের দিকে এক নজর তাকিয়ে সিড়ি বেয়ে ওপরে চলে যায়। আর আইরাত কিছু বলার আগেই আব্রাহাম তার বাহু চেপে ধরে টেনে টেনে বাড়ির বাইরে নিয়ে আসে। আর আইরাত কেঁদে কেঁদে মা মা বলেই যাচ্ছে। “আমি যাবো না” বললেই আব্রাহাম এমন ধমক দেয় যাতে আইরাতের অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে।
আব্রাহাম;; শাশুড়ী আম্মু কে তো কোন রকমে বলে এলাম একবার বাড়ি আসো জান। তোমার হাল একেবারে নাজেহাল বানিয়ে তারপর ছাড়বো আমি। মনের কথা মনেই আছে আজ আমার।
আইরাতের মাঝে ভয় আরো চেপে বসে। বেশি নড়াচড়ার ফলে আব্রহাম আইরাত কে এক টান দিয়ে নিজের কোলে তুলে নেয়। আইরাত বাইরে বের হয়ে দেখে অয়ন আর কৌশলও দাঁড়িয়ে আছে। মানে আব্রাহামের সাথে এরাও এখানে এসেছে। আইরাত কিছু বলতে যাবে তার আগেই আবার আগের মতো ঢাক-ঢোল বাজানো শুরু হয়। কান ঝালাপালা। আইরাত কে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে আব্রাহাম কৌশলের দিকে নিজের আরেকটা গাড়ির চাবি কিছুটা ঢিল দেয়। কৌশল ক্যাচ ধরে।
আব্রাহাম গাড়িতে উঠে বসে। দেখে আইরাত তার মুখটাকে একদম বাংলার পাঁচ বানিয়ে রেখে দিয়েছে।
আব্রাহাম;; “বিবিজান, চলো শশুড় বাড়ি”।
এই বলেই আব্রাহাম তার আইরাত কে নিয়ে সাই করে চলে যায়।
।
।
।
।
চলবে~~
#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#Season_2
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ২৪
গাড়িতে করে আসার সময় সম্পূর্ণ রাস্তাতে কেউ একটা ফোটা কথাও বলে নি। আব্রাহাম শুধু ড্রাইভ করে গেছে। মাঝে মধ্যে আইরাতের দিকে তাকাচ্ছিলো। সে গাড়ির জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে আর গাল বেয়ে গড়িয়ে পরছে তার নোনাজল। তা দেখে আব্রাহাম একটা আস্তো টিস্যুর বক্স আইরাতকে দিয়ে দেয়। আইরাত যেনো তেনে বেগুনে জ্বলে ওঠে এবার। রাগি চোখে আব্রাহামের দিকে তাকায় কিন্তু তার তো সেদিকে কোন খেয়াল নেই। অবশেষে প্রায় ঘন্টা খানিকের মতো ড্রাইভ করে আব্রাহাম তার বাসায় আসে। গাড়ি থেমে গেলে গাড়ির ওপরের রুফ টা আপনা আপনিই নেমে আসে। তবে আব্রাহামের বাড়ি দেখে আইরাত অবাক হয়। একটা বিয়ে বাড়ি ঠিক যেভাবে সাজানো থাকে সেইম সেভাবেই সাজানো আছে। বাড়ির দুদিকে বিশাল দেহি কতোগুলো মানুষ দাঁড়িয়ে আছে যাদের গার্ড বলে। তবে তাদের লুকও আজ কিছুটা ব্যাতিক্রম। আজ নিয়ে আইরাত আব্রাহামের বাড়ি তৃতীয় বারের মতো এলো। আগে আব্রাহাম নিয়ে আসতো আর আজ আইরাত কে নিজের বউ করে নিয়ে এসেছে। বাড়ির চারিদিকে নেভি ব্লু আর হুয়াইট কালারের বাতি জ্বলছে যা দেখতে ভারি সুন্দর লাগছে। বাড়ির বাগান, পেছনের অংশ, করিডরগুলো অর্থাৎ সম্পূর্ণ বাড়িই বেশ সুন্দর করে সাজানো। আর আইরাত অবাক হচ্ছে এই ভেবে যে বাড়ি সাজানো তারমানে কি আগে থেকেই সব প্ল্যান করা ছিলো নাকি! আব্রাহামের ডাকে তার ধ্যান ভেঙে যায়।
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল এসো।
আইরাত তাকিয়ে দেখে আব্রাহাম বাইরে নেমে তার সাইডে এসে দাঁড়িয়ে আছে। নিজের ডান হাত টা আইরাতের দিকে মেলে দিয়ে আছে। আইরাত আব্রাহামের হাতে নিজের হাত দেয় না দেখে আব্রাহাম চোখ রাঙিয়ে তার দিকে তাকায়। আইরাত চট জলদি নিজের হাত আব্রাহামের হাতে দিয়ে দেয়। আব্রাহাম মুচকি হেসে আইরাত কে নিয়ে আসে। বাড়ির দুপাশে বাগানের মাঝখানে যে সাদা সরু রাস্তাটা আছে সেখান দিয়ে আসছে। সামনে তাকাতেই দেখতে পায় ইলা হাসিমুখে ড্রোইংরুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তারপরেই আরেক গাড়ি দিয়ে অয়ন-কৌশল এসে পরে। ইলার পেছনেই কতোগুলো স্টাফ দাঁড়িয়ে আছে। আব্রাহাম আইরাত কে নিয়ে ভেতরে যায়।
আব্রাহাম;; নাও তোমার কথাই সই। বিয়ে করে এনেই পরলাম আইরাত কে।
আইরাত আব্রাহামের দিকে তাকায়। এমন ভাবে বলছে যেনো খুব শান্ত-শিষ্টভাবে বিয়ে টা হয়েছে। আর ইলাও কিছু বলছে না। আব্রাহাম তার একমাত্র নাতি। নাতির বিয়েতে থাকবে না। কখন, কীভাবে বিয়ে করলো তাও জিজ্ঞেস করলো না। সোজা মেনে নিলো। ইলা কি ভোলাভালা আর আব্রাহাম হয়েছে একটা কসাই। আব্রাহাম আইরাত কে নিয়ে ভেতরে আসতে ধরবে তখনই ইলা থামিয়ে দেয়…
ইলা;; এই দাঁড়া দাঁড়া আগেই আসিস না।
আব্রাহাম;; আবার কি?
ইলা;; আইরাত কে কোলে তুলে ভেতরে নিয়ে আয়। জানিস না আমাদের পরিবারে এমনই হয়। নববধূ কে ভেতরে কোলে করেই নিয়ে আসতে হয়।
আব্রাহাম;; ওহহ এই কথা।
আব্রাহাম আইরাতের বাহু ধরে টান দিয়ে নিজের কাছে এনে সোজা কোলে তুলে নেয়।
আইরাত;; আ আরে…
আব্রাহাম;; চুপ।
আব্রাহাম আইরাত কে কোলে নিয়েই ভেতরে আসে।
ইলা;; শোন আইরাত কে নিয়ে ওপরে তোর রুমে যা, অনেক ধকল গিয়েছে।
আব্রাহাম;; আচ্ছা।
অয়ন-কৌশল চেয়েও কিছু শয়তানি করতে পারে না, কারণ তারা পুরো ঘটনা টা বেশ ভালো করেই জানে। আব্রাহাম আইরাত কে নিয়ে সিড়ি বেয়ে ওপরে এসে পরে। আইরাতের এখন চেচিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে যে ‘মানি না এই বিয়ে আমি। বন্দুকের মুখের ওপর এই বিয়ে হয়েছে। আমি থাকবো না এখানে, আমি আম্মুর কাছে যাবো।’ কিন্তু মনের কথা মনেই ধামাচাপা দিয়ে রাখতে হয় তাকে। কেননা এখন বলেও লাভ নেই। আব্রাহাম নিজের পা দিয়ে দরজা ঠেলে তার রুমের ভেতরে এসে আবার নিজের পা দিয়েই দরজা লাগিয়ে দেয়। রুমে আবছা আলো আবছা অন্ধকার রয়েছে। আলো-আঁধারির এক অপূর্ব সংমিশ্রণ। তার ওপর সাদা ধবধবে বিছানার ওপর গাঢ় লাল বড়ো বড়ো গোলাপের পাপড়ি। ফুটে ওঠেছে, অনেক সুন্দর লাগছে। আব্রাহাম আইরাত কে নামিয়ে দেয়।
আব্রাহাম;; বাহহ, এই না হলো আমার দাদি। দারুণ সাজিয়েছে।
এই বলেই আব্রাহাম আইরাতের দিকে তাকায়। দেখে আইরাত কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তবুও আব্রাহাম কিছু বলে না। তবে এইবার আইরাত কাদো কাদো সুরে বলে ওঠে…
আইরাত;; আমি, আমি বা ব বাড়ি যাবো।
এইতো আব্রাহামের মাথা টা গেলো ঘুরে। আইরাত আস্তে আস্তে চোখ তুলে আব্রাহামের দিকে তাকায়। আর তাকাতেই যেনো কলিজা টা কেমন ধপাস করে উঠলো। রক্তচক্ষু নিয়ে আব্রাহাম তাকিয়ে আছে তার দিকেই। রাগে যেনো ফুসছে। আইরাতের তো গলা শুকিয়ে যায়। রাগে তার চোখ গুলো কেমন লাল বর্ণ ধারণ করেছে। আব্রাহামের তাকিয়ে থাকা দেখে আইরাত বুঝলো যে আগে থেকে সে আরো দ্বিগুণ হারে রেগে আছে। আইরাতের শুধু “আমি বাড়ি যাবো” এই কথা টা বলার ফলে তো আব্রাহামের হুট করেই এতো পরিমাণে রেগে যাওয়ার কথা না। তাহলে এভাবে রাগ করছে কেনো। মূহুর্তেই আইরাত বুঝলো যে আইরাতের সব কাজের জন্যই আব্রাহাম এখন এভাবে রেগে গেছে। বাইরে সবার সামনে তো আর ওভাবে রাগ দেখাতে পারেনি তাই এখন সব রাগ সে আইরাতের ওপর একেবারে তুলবে। নিলয়ের সাথে বিয়েতে রাজি হওয়া, লুকিয়ে-চুরিয়ে বিয়ের আসর অব্দি চলে যাওয়া অর্থাৎ সবকিছু মিলিয়েই আব্রাহাম এতোটা চটে গিয়েছে। আইরাত সত্যি অনেক ভয় পাচ্ছে এই মূহুর্তে। কেননা আগে থেকে আব্রাহামের বর্তমানের লুক পুরো চেঞ্জ। বাইরে এতোক্ষণ যেভাবে ছিলো তার সাথে এখনের কোন মিল নেই। পুরো আলাদা। আব্রাহাম তার জেকেটের হাতা গুটিয়ে নিতে নিতে আইরাতের দিকে এগোতে লাগে…
আব্রাহাম;; তো আইরাত বেবিগার্ল! কি যেনো একটা বলছিলে না তুমি?
আইরাত;; ___________________
আব্রাহাম;; ওহ হ্যাঁ, তুমি বাড়ি যাবে। এই বিয়ে করবে না, থাকবে না আমার সাথে, এখানে থাকবে না তাই না!
আইরাত;; ন ন না না ম মানে…
আব্রাহাম;; বলো বলো এখন আবার বলো তো।
আইরাত;; না আম আ আমি ত তোহ এ এম এমনি বলেছিলাম।
আব্রাহাম;; হ্যাঁ এখন আবার বলো তো দেখি। আমিও আবার একটু শুনি।
আইরাত;; ন ন না না।
আব্রাহাম এগোচ্ছে আইরাতের দিকে আর আইরাত পেছাচ্ছে। আব্রাহাম তার দিকে এক কদম এগোলে আইরাত তার থেকে দ্বীগুণ কদম পিছিয়ে যায়। পেছাতে পেছাতে একটা সময় পেছনে থাকা সোফাতে পা বেধে ধিরিম করে সোফাতে পরে যায় আইরাত। সামনে তাকায়, যতক্ষণে সে উঠে দাড়াতো ততক্ষণে আব্রাহাম তার একদম কাছে এসে পরেছিলো। এখন আইরাত কিছু বলতেও পারছে না। আব্রাহাম তার এক পা সোফার ওপরে আইরাতের পাশে রেখে দেয়। আরেক হাত দিয়ে আইরাতের থোতাতে হালকা ভাবে ধরে তার মুখটা উঁচু করে ধরে। এই মুখটা, এই মুখটার ওপরেই আব্রাহাম নিজের মন হেরে বসেছে। হাজার রেগে থাকলেও এই মায়াভরা মুখখানার দিয়ে তাকালেই সব রাগ এক নিমিষেই গলে পানি। এছাড়াও আগুন-আগুনে ভালোবাসা বা সংসার কোনটাই হয় না। একজন কে আগুন হলে আরেকজন কে পানি হতেই হয়। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। আব্রাহাম হুট করেই তার মাথা টা আইরাতের মাথার সাথে ঠেকিয়ে দেয়। উভয়েই চোখ বন্ধ করে নেয়। কিছুক্ষণ এভাবে থেকে আব্রাহাম এক হাটু গেড়ে আইরাতের সামনে বসে পরে। আব্রাহাম তার একহাতে আইরাতের দুহাত নিয়ে আরেকহাতে আইরাতের ঘাড়ের পেছনে ধরে নিজের কাছে টেনে আনে।
আব্রাহাম;; অনেক ভালোবাসি রে তোকে, অনেক বেশি। আমি এই দুনিয়া এদিক থেকে ওদিক করে দিতে পারি তোর জন্য। তুই আমার। কেনো তুই রাজি হলি বিয়েতে, আজ যদি আমি না জানতাম আর সময় মতো না যেতাম তো। তাহলে তুই মরতি।
আইরাত আব্রাহামের দিকে তাকায়।
আব্রাহাম;; হ্যাঁ তুই তো মরতি। কারণ বেঁচে থাকতে তো তোকে কখনোই অন্যের হতে দিতাম না আমি। তো আমি তোকে মেরেই ফেলতাম একদম জানে। তোকে মেরে তারপর নিজে মরে যেতাম। আমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে আছো তুই বেবিগার্ল, তুমি এতোটা গাঢ় ভাবে আমার সাথে মিশে আছো যে এখন আমি তোমাকে ছাড়া নিজেকে স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারি না। আমার অস্তিত্ব তুমি।
আইরাত;; তো আপনার কি মনে হয় আমি নিজে স্বাধে বিয়েতে রাজি হয়েছি। আমার ধারণা আছে আপনার ব্যাপারে। আপনি কি কি করতে পারেন তাও জানি। কিন্তু আমি কি করতাম। ফ্যামিলি থেকে প্রেসার দেওয়া হচ্ছিলো আমায় বিয়ের জন্য। মা তো সোজা না ই করে দিয়েছিলো যে বিয়ে না করলে আমার সাথে কথা বলবে না কখনো। তার ওপর নিলয় ভাইয়া আর সাবিলা ফুপি তো আছেই। একদিকে আপনি আরেক দিকে আম্মু আর বাকিরা আমিই বা আর কি করতাম। কোনটা বেছে নিতাম। আপনার কথা বাসায় কাউকে বলতেও পারছিলাম না। এখন সবাই দোষ আমাকে কেনো দিচ্ছেন। আমি নিরুপায় ছিলাম
আব্রাহাম;; দোষ দিচ্ছি না। মোটেও না। তোমার কি মনে হয় যে আমি বদমেজাজি আর রাগি সবসময় থাকি! আমি বুঝি আইরাত, আমি সবই বুঝি। আমি বাইরে থেকে অনেক রাগি আর অনেক বেশি রুড বিহেভ ওয়ালা থাকি তা আমি নিজেও জানি কিন্তু কি করবো আমি এমনই। তুমি জানো আজ পর্যন্ত আমাকে কেউ কাঁদতে দেখে নি। কেউই না আমার দাদিও না। কিন্তু একমাত্র গভীর রাতগুলো, আমার রুম আর আমার একাকিত্বই জানে যে তোমাকে, এই তোমাকে হারানোর ভয়ে আমি ঠিক কতো কেঁদেছি৷ আমার চোখগুলো তার জলজ্যান্ত সাক্ষী। সবসময় ভয় লেগে থাকতো যে এই যেনো তুমি আমার থেকে দূরে চলে গেলে বা এই হয়তো আমি তোমায় হারিয়ে ফেললাম। কিন্তু এটা তো কখনোই হতে দিবো না আমি। তোমাকে হার্টও করতে পারি না কারণ তোমার থেকে হাজার গুণে বেশি কষ্ট আমার নিজের হয় তারপর। আইরাত আমার প্রাণভোমরা তুমি। তুমি আমার সবচেয়ে সবচেয়ে উইক পয়েন্ট আর আমার সবচেয়ে স্ট্রোং পয়েন্টও তুমিই। তুমি আমার লাকি চার্ম। সব কিছুর বিনিমনে আমি তোমাকে পেতে যাই৷ নিজের করে পেতে চাই। আমি অনেক দেখেছি সবাই বলে ‘আমি তোমার জন্য মরতেও রাজি’ কিন্তু সরি আইরাত আমি তোমার জন্য মরতে পারবো না। কারণ আমি তোমার জন্য বাঁচতে চাই, আমি তোমার সাথে বাঁঁচতে চাই। আমার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগ পর্যন্ত। তুমি জানো আগে এইসব কাপল দের দেখে কতোই না হেসেছি আমি। ‘লাভ ইস বুলশিট’ সবসময় এই কথা বলে এসেছি। কখনোই প্রেম-ভালোবাসায় বিশ্বাস করি নি। হেসে উড়িয়ে দিয়েছি। কিন্তু যবে থেকে তুমি আমার জীবনে এসেছো আমি এবং আমার পুরো ধারণা পালটে গেছে। এখন একটা মেয়ের জন্য এই আব্রাহাম বেঁচে থাকে। একটা মেয়ের ওপর এই আব্রাহাম শেষ হয়ে গেছে। তোমার সাথে আমার সেদিন রাতে হাইওয়ে তে প্রথম দেখা আমার জীবন টাকে যে এভাবে একরাতেই চেঞ্জ করে দিবো কখনোই ভাবি নি আমি। আমার জীবনের মোড় ঘুরে গেছে পুরো। আর তুমি এই যে বলো না যে আমি তোমার মাঝেই কি এমন দেখলাম, তোমাকেই কেনো ভালোবাসলাম। সত্যি বলতে এর উত্তর আমি নিজেও জানি না। জীবনে কতো মেয়ের সাথে কথা হয়েছে। কতো মেয়ের সাথে ওঠা-বসা হয়েছে বাট তোমাকে দেখে যে অনুভূতি টা হয় আমার তা আর অন্য কোন মেয়ের ক্ষেত্রেই হয় নি। Whenever i see you my heart say that ”that’s the girl i Love, এই মেয়েটাই যে আমার যোগ্য, আমার ভালোবাসার যোগ্য, এই মেয়েটাই আমার আর শুধুমাত্র আমার জন্যই। আমার নামে লিখা”।
আই লাভ ইউ ড্যাম ইট।
আইরাত বাকরুদ্ধ। কি বলবে বা এখন তার কি বলা উচিত সে জানে না। আব্রাহামের প্রত্যেক টা কথা সোজা চাকুর মতো বুকে গিয়ে লাগছিলো তার। আইরাত চুপ করে বসে শুধু আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে এই কথা গুলোই শুনছিলো। মানুষ মিথ্যা বলতে পারে কিন্তু তার দুচোখ কখনোই মিথ্যা বলে না। আর আব্রাহাম মিথ্যা বলে না, বলছে না। আব্রাহাম উঠে দাঁড়িয়ে পরে৷
আব্রাহাম;; তবে আমার চিন্তা নেই কারণ এখন তুমি আমার বউ। চাইলেও যেতে পারবে না দূরে। আর হ্যাঁ আরেকটা কথা দাদি যেনো ভুল করেও না জানে যে তোমার-আমার বিয়ে এমন একটা পরিস্থিতি তে হয়েছে। উল্টা-পাল্টা কোন কাজ করবে না। দাদি যেনো মনে করে যে সবকিছু ঠিকঠাকই আছে ডু ইউ গেট দ্যাট।
আইরাত ভেজা বিড়ালের মতো মাথা ওপর-নিচ করে।
আব্রাহাম;; এবার চলো।
আইরাত;; কোথায়?
আব্রাহাম;; বেডে।
আইরাত;; কিহহহহ?
আব্রাহাম;; এতে এতো অবাক হওয়ার কি আছে? আরে জানপাখি আজকে আমাদের বিয়ে হয়েছে আর এখন বাসর রাত তো এখন এই কথাই তো বলবো তাই না!
আইরাত;; না একদম না আমার কাছে আসবেন না। মানে আব মানে বলছিলাম কি যে আমার না একটু…
আব্রাহাম;; হুমম একটু
আইরাত;; আম আমার এক এক একটু
আব্রাহাম;; হুমমম হুমমম
আইরাত;; আপনি এভাবে এগোচ্ছেন কেনো?
আব্রাহাম;; হুমমম তোমার একটু
আইরাত;; আমার একটু ফ্রেশ হওয়ার দরকার ছিলো।
আব্রাহাম;; তা পরে হওয়া যাবে তোমার থেকে আমার বেশি কাজ করতে হয়েছে। আমি টায়ার্ড হইনি তুমি এমন করছো কেনো। আজ আর নিস্তার নেই তোমার বেবিগার্ল তো এদিকে এসো।
আইরাত;; না।
আব্রাহাম চোখ-মুখ শক্ত করে আইরাতের দিজে এগোতে ধরলেই আইরাত এক দৌড়ে গিয়ে সোজা বিছানার ওপরে উঠে পরে। আইরাত বিছানাতে আর আব্রাহাম নিচে দাঁড়িয়ে আছে। সে শুধু আইরাতের কান্ড দেখছে।
আব্রাহাম;; এগুলো কি হচ্ছে?
আইরাত;; আপনি সরে যান। আমাকে ধরবেন না বলে দিলাম।
আব্রাহাম;; তুমি বললেই কি আমি শুনবো নাকি। আমি এতোটাও ভালো না যে তুমি বললে আর আমি চুপ করে শুনে নিলাম বেবিগার্ল।
আইরাত;; আপনি দূরে যান নয়তো আমি অন্য রুমে চলে যাবো।
আব্রাহাম;; তুমি কি ভেবেছো আমি তোমাকে ওই জায়গায় গিয়ে ধরতে পারবো না।
আইরাত;; আব্রাহাম প্লিজ না। আমার কাছে আসবেন না আজকে।
আব্রাহাম;; দুঃখীত জান তোমার এই কথাটা আজ আর রাখতে পারলাম না।
এই বলেই আব্রাহাম হুট করেই আইরাতের কোমড়ে ধরে দেয় এক টান। আইরাত আছড়ে পরে আব্রাহামের বুকের ওপর। ভারসাম্য ঠিক রাখতে না পেরে বাধ্য হয়ে এক হাত দিয়ে আব্রাহামের পরনের জেকেট খামছে ধরে আরে হাত আব্রাহামের কাধের ওপরে রেখে দেয়। সামনের চুলগুলো এলোমেলো হয়ে গেছে। মাথার পেছনে বাধা ওরনা টাও এক পাশে এসে পিঠ টুকু উন্মুক্ত হয়ে গেছে। আইরাত মুখ তুলে আব্রাহামের দিকে তাকায়। দেখে আব্রাহাম ঘোর লাগা নয়নে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আইরাত উঠে চলে আসতে ধরলে আব্রাহাম তার কোমড় জড়িয়ে ধরে টান দিয়ে নিচে নামিয়ে আনে। আইরাত কে ঘুড়িয়ে নিজের সাথে ঠেকিয়ে দাঁড়ায়। বর্তমানে আইরাতের পিঠটা আব্রাহামের বুকের সাথে লেগে আছে। আর আব্রাহাম তার এক হাত দিয়ে আব্রাহামের পেট জড়িয়ে রেখেছে। আব্রাহামের চোখ যায় আইরাতের মাথার পেছনে, সে সেখান থেকে কিছু ক্লিপ খুলে দেয় যার ফলে আইরাতের মাথার ওপর থেকে তার ওরনা টা খুলে নিচে পরে যায়। আব্রাহাম সোজা আইরাতের খোলা ঘাড়ে নিজের নাক ডুবিয়ে দেয়। নিজের নাক ঘেষতে লাগে। কিছু মূহুর্তের জন্য তো আইরাতের পুরো শরীর পাথর হয়ে গিয়েছিলো একদম। আব্রাহাম তার হাত দিয়ে আইরাতের বাহুতে ছুইয়ে দিতে লাগে। আইরাত এসে পরে। আব্রাহাম গিয়ে আইরাত কে একটানে নিজের দিকে ঘুড়ে নেয়। আইরাত কিছুটা পেছায়। তবে এবার আব্রাহাম তাকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে। এক হাত দেওয়ালের ওপর রেখে আরেকহাতে আইরাতের কোমড় টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে। আইরাত তার হাত আব্রাহামের হাতের ওপর রাখে। নাড়াচাড়ার ফলে আইরাতের হাতের চুড়ির ঝনঝন আওয়াজ যেনো ঘরের পুরোটা জুড়ে বাজছে।
আইরাত;; আব্রাহ…..
আব্রাহাম নিজের আঙুল আইরাতের ঠোঁটের ওপরে রেখে দেয়। আইরাত কে তুলে বিছানাতে বসিয়ে দেয়। আইরাত আবার নেমে যেতে ধরলে আব্রাহাম এক ধাক্কা মেরে তাকে ফেলে দেয়।
আব্রাহাম;; এই মুড নষ্ট করো না তো।
এই বলেই আব্রাহাম তার গায়ের ওপর থেকে জেকেট টা খুলে ফেলে। আইরাতের চোখ যায় আব্রাহামের বডির ওপর। শার্টের হাতা গুলো গুটানো, ফর্সা হাতে রগগুলো ভেসে ওঠেছে। বুকের দিকে কয়েক বোতাম খোলা, সুঠাম দেহে শার্ট টা খামছে ধরে আছে। বুকটা উন্মুক্ত হয়ে আছে। আইরাত তৎক্ষনাৎ নজর নামিয়ে ফেলে। আব্রাহাম তার কাছে আসতে ধরবে তখনই আইরাত এক চিৎকার দেয়। আর আব্রাহাম আইরাতের দিকে ঝুকে তার মুখ চেপে ধরে।
আব্রাহাম;; করছো কি? এভাবে চেচাচ্ছো কেনো?
আইরাত;; ____________________
আব্রাহাম;; এই মেয়ে সমস্যা কি?
আইরাত;; আমি আম্মুর কাছে যাবো।
আব্রাহাম;; হুয়াট দা…….
আইরাত চুপ করে শুয়েই আছে। আব্রাহাম গালে হাত দিয়ে আইরাতের দিকে তাকিয়ে থাকে।
আব্রাহাম;; ক্যান আমি জামাই আমারে পছন্দ হয় না?
আইরাত;; ____________________
আব্রাহাম;; ধুর।
আইরাত;; এইতো মুড নষ্ট হয়ে গেছে তাই না তাই না। এখন তাহলে আমি দাদির কাছে যাই। দাদির সাথেই থাকবো। ওও দাদিইইইইই।
আব্রাহাম;; চুপ
আব্রাহাম এমন ধমক দিয়েছে আইরাত কে সত্যি আইরাতের এবার কান্না এসে পরেছে। টলমলে চোখ নিয়ে আব্রাহামের দিকে তাকায়।
আব্রাহাম;; হায়রে, কোথায় যাই আমি। আবার কান্না করছো কেনো?
আইরাত;; আপনি বকা দিছেন কেনো?
আব্রাহাম;; Come hare
আইরাত হাতের উল্টো পাশ দিয়ে চোখ ডলছে আব্রাহাম তাকে নিজের দুহাত দিয়ে বুকে জড়িয়ে নেয়। কিছুক্ষণ পর আইরাতের হাত ধরে হাত থেকে চুড়ি গুলো খুলে পাশের টেবিলে রেখে দেয়। ঝুমকা, গলার হার সব খুলে রাখে। আইরাত কে এবার একদম সাদা-মাটা লাগছে দেখতে। আব্রাহাম অপলকহীন ভাবে আইরাতের দিকে তাকিয়েই থাকে। আইরাত তা প্রথমে খেয়াল করে নি। পরে আব্রাহামের দিকে তাকায়।
আইরাত;; আপ…..
আইরাত আর কিছু বলতে পারে না তার আগেই আব্রাহাম তার একহাতে আইরাতের গালের শেষাংশ ধরে তার ঠোঁটজোড়া আকড়ে ধরে নিজের করে নেয়। আইরাত চোখ খিচে বন্ধ করে নিয়ে আব্রাহামের বুকে ধাক্কাতে লাগে তবে কে শুনে কার কথা। আব্রাহাম আইরাত কে নিজের কাছে এনে পরে। তার হাত গুলো একহাতে প্যাচিয়ে ধরে পেছনে মুড়িয়ে নেয়। আইরাতের পেছনের ফিতা টা একটানে খুলে ফেলে। এতে আইরাতের চোখ যেনো তার কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম। তার বুক থেকে কাপড় সরে যেতে ধরলে আইরাত দ্রুত নিজের হাত বুকের অংশে ধরে আটকে নেয়। আব্রাহাম আইরাতের মাথার চুলগুলো একটানে খুলে দেয়। আব্রাহামের হাত যেনো আইরাতের খোলা পেটের সর্বাংশে বিচরণ করে চলেছে। তাকে বিছানার সাথে চেপে ধরে। আইরাতের হাত লেগে বেডের ওপর থেকে গোলাপ ফুলের পাপড়ি গুলোর বেশ কিছু ছিটকে পরে নিচে। আব্রাহাম আইরাতের গলায় ডুবে যায়। এতোদিন অপেক্ষা করার পর আজ সে তার আইরাত কে কাছে পেয়েছে। আর এছাড়াও আব্রাহামের সাথে এমন দশ আইরাতও পেরে উঠবে না। শার্ট টা খুলে ফেললে আইরাত তার নখ দিয়ে হাজারো আচড় কাটে আব্রাহামের বুকে আর পিঠে। আব্রাহাম ঠিক কোথায় কোথায় যে আইরাত কে কামড়ে দিয়েছে বলা বাহুল্য। আইরাত তার হাত দিয়ে বিছানার চাদর শক্ত করে খামছে ধরে। আব্রাহাম ডুব দেয় তার আইরাতের মাঝে। সে আজ তার আইরাতে মগ্ন।
।
।
।
।
চলবে~~