পদ্মফুল পর্ব-৫৩+৫৪+৫৫

0
337

#পদ্মফুল
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
|৫৩|

পদ্ম বসে কী যেন ভাবছিল। আদিদ ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে বললো,

‘ফ্রেশ হয়ে নিন।’

সে উঠে একটা সুতি থ্রি পিস নিয়ে ধীর পায়ে ওয়াশরুমে ঢুকল ফ্রেশ হতে। আদিদ তখন বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখল, চাঁদ উঠেছে। বৃত্তাকার এক চাঁদ। তার গা ছুঁয়ে চলছে জলধর রাশি রাশি।

আদিদ বারান্দায় দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ চাঁদ দেখল। তারপর সে ভেতরে গিয়ে বসলো। রুম’টা তে চোখ বুলালো। কখনো সে ভাবেনি আজকের এই রাত টা সে অন্য কারোর সঙ্গে কাটাবে। ভাগ্য কত অদ্ভুত, কত ভয়নাক!
আদিদ দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তারপর মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে রইল। পদ্ম বেরিয়ে এলো। আদিদ কে এক পলক দেখে সে তার শাড়ি টা বারান্দায় নেড়ে এলো। তারপর কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে সে আদিদের কাছ থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে রইল। আদিদ মাথা তুলে পদ্ম’র দিকে দৃষ্টিপাত করে বললো,

‘কী ব্যাপার, দাঁড়িয়ে আছেন কেন? বসুন।’

পদ্ম বেড়াল পায়ে এগিয়ে গিয়ে আদিদের পাশে বসলো, তবে কিছুটা দূরত্ব রেখে। অনেকক্ষণ দুজন ওভাবে চুপচাপ বসে রইল। দুজনের মনে কী চলছে সেটা কেবল তারা দুজনেই জানে। বেশ কিছুটা সময় পর নিরবতা কাটিয়ে আদিদ বললো,

‘খুব অস্বস্তি হচ্ছে তাই না?’

পদ্ম ফ্যালফ্যাল চোখে তাকাল। কী বলবে ভেবে পাচ্ছে না। আদিদ আবার বললো,

‘আমারও হচ্ছে। অনেক বেশি অস্বস্তি হচ্ছে। এইভাবে হুট করেই এতকিছু হয়ে গেল, আরেকটু সময় নিলে হয়তো ভালো হতো। অন্তত, এতটা অস্বস্তি হতো না।’

আদিদের কথার পদ্ম কোনো প্রত্যুত্তর করলো না। আদিদ চুপ হয়ে বসে রইল কিছুক্ষণ। পদ্মও বসে রইল। যদিও পদ্ম’র মন তখন অনেক কিছু বলতে চাইছিল। কিন্ত কিছু একটা যেন তাকে আটকে দিচ্ছিল বার বার। পদ্ম জিভ দিয়ে তার শুষ্ক ওষ্ঠ্য জোড়া ভিজিয়ে অনেক কষ্টে বললো,

‘আপনি চাইলে এইরুমে একা থাকতে পারেন। আমি রান্নাঘরের সাথে একটা ছোট্ট রুম আছে, সেখানে থাকতে পারবো।’

আদিদ সঙ্গে সঙ্গেই ব্রু কুঁচকাল। বিরক্ত ভঙ্গিতে বললো,

‘আমি কি বলেছি, আমি আপনার সাথে এক রুমে থাকতে পারবো না?’

পদ্ম ইতস্তত কন্ঠে বললো,

‘না মানে, আপনার অস্বস্তি হচ্ছিল বলে বলছিলাম।’

আদিদ গম্ভীর গলায় বললো,

‘এতটাও অস্বস্তি হচ্ছে না যে আপনার সাথে এক রুমে থাকতে পারবো না।’

পদ্ম চুপ হয়ে যায়। আদিদও আর কিছু বলে না। কিছুক্ষণ পর পদ্ম বললো,

‘শুবেন না?’

আদিদ ওর দিকে তাকাতেই পদ্ম লজ্জামাখা কন্ঠে বললো,

‘না মানে, সারাদিন তো অনেক ধকল গিয়েছে; ক্লান্ত নিশ্চয়ই তাই শুয়ে পড়ার কথা বলছিলাম।’

আদিদ অন্যদিকে তাকিয়ে মিনমিনিয়ে বললো,

‘তো আমি কি অন্যকিছু ভেবেছি নাকি?’

পদ্ম বুঝলো না তার কথা। জিজ্ঞেস করলো,

‘কিছু বললেন?’

আদিদ মাথা নাড়িয়ে না করলো। বললো,

‘আপনি শুয়ে পড়ুন। আমি লাইট অফ করে আসি।’

পদ্ম উঠে দাঁড়াল। অস্থির গলায় বললো,

‘না না, আমি লাইট অফ করছি। আপনি শুয়ে পড়ুন।’

আদিদ বিছানায় উঠে একপাশে গিয়ে বসলো। পদ্ম লাইট অফ করে আস্তে আস্তে বিছানার কাছে এলো। হঠাৎ তখন তার মনে পড়ল, দুধের কথা। সে তাড়াহুড়ো করে যেতে গিয়ে টেবিলের সাথে ঠাস করে বারি খেল। শব্দ শুনে আদিদ ফোনের ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে বললো,

‘কী হয়েছে?’

পদ্ম তার হাঁটু ঘষতে ঘষতে আদিদের দিকে তাকাল। বোকা বোকা হেসে বললো,

‘তেমন কিছু না, শুধু একটু বারি খেয়েছি।’

পদ্ম’র মুখটা দেখে আদিদের খুব হাসি পাচ্ছিল। কিন্তু হাসা যাবে না। কোনো ছেলের সামনে কোনো মেয়ে আঘাত প্রাপ্ত হলে সেই ছেলে কোনোভাবেই হাসতে পারবে না, এটা মারাত্মক অন্যায়। আর সেই ছেলে যদি হয় সেই মেয়ের স্বামী, তাহলে তো আরো আগে না। আদিদ তাই সহানুভূতির সুরে বললো,

‘বেশি লেগেছে?’

পদ্ম সোজা হয়ে দাঁড়াল। মুখের হাসি বজায় রেখে বললো,

‘না।’

কথাটা বলে সে গিয়ে রুমের লাইট টা আবার জ্বালালো। তারপর দুধের গ্লাস টা নিয়ে দেখল, দুধ ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে। পদ্ম তাই আদিদ কে উদ্দেশ্য করে বললো,

‘দুধ টা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে, আমি গরম করে আনছি।’

‘কার জন্য?’

পদ্ম জবাবে বললো,

‘আপনার জন্য।’

‘আমি এখন কিছু খাবো না। আপনি খেতে চাইলে খেতে পারেন।’

‘আসলে রাণী দিয়ে গিয়েছিল। আপনি না খেতে চাইলে রেখে আসছি।’

আদিদ বললো,

‘গরম করে নিজে খেয়ে নিন। আপনার শরীরে শক্তি কম, ঠাস ঠুস শুধু বারি খান। আপনার শক্তি প্রয়োজন।’

পদ্ম চোখ মুখ কুঁচকে বললো,

‘লাগবে না আমার শক্তি। আমার গায়ে যথেষ্ঠ শক্তি আছে।’

এই বলে পদ্ম দুধের গ্লাস টা নিয়ে রান্নাঘরে গেল। বিরক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল কিছুক্ষণ। হঠাৎ মনে হলো, কফি বানালে কেমন হয়। যেই ভাবা সেই কাজ। ঐ দুধের সাথে আরো এক কাপ দুধ দিয়ে পদ্ম দু কাপ কফি বানালো। কফির কাপ দুটো নিয়ে পেছনে ঘুরতেই পদ্ম দেখল, আদিদ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। পদ্ম হালকা হেসে বললো,

‘আপনি এখানে?’

‘আপনার কোনো খোঁজ নেই বলে দেখতে এলাম, আবার হাত টাত পুড়িয়ে ফেললেন কিনা?’

পদ্ম এক কাপ কফি আদিদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বিরক্ত গলায় বললো,

‘কফি বানাচ্ছিলাম।’

আদিদ কফির কাপ টা হাতে নিয়ে বললো,

‘চলুন ছাদে যাই।’

পদ্ম চোখ বড়ো বড়ো করে তাকাল। বললো,

‘সত্যি! ছাদে যাবেন?’

‘হ্যাঁ, কফি যখন বানিয়েছেন তখন ছাদে গিয়েই না হয় কফি টা এনজয় করি।’

পদ্ম’র মন খুশিতে নেচে উঠে যেন। সে লকের চাবি টা নিয়ে এসে বললো,

‘চলুন, দরজা টা বাইরে দিয়ে লক করে যাবো।’

.
.

‘আজকে কি পূর্ণিমা?’

‘না।’

পদ্ম ভালো ভাবে চাঁদ টা দেখল। বললো,

‘চাঁদ টা দেখে মনে হচ্ছে, আজ যেনো পূর্ণিমা।’

আদিদ কফির কাপে চুমুক দিয়ে চাঁদের দিকে তাকাল। মৃদু সুরে বললো,

‘আপনি কফি খুব ভালো বানান।’

পদ্ম আদিদের দিকে তাকাল। চাঁদের আলো না রাস্তার সাদা আলো আদিদের মুখে পড়ছে। এই মুখটা এতো সুন্দর কেন? পদ্ম’র কাছে কেন এই মুখ টা এত ভালো লাগে, এত নিষ্পাপ লাগে? পদ্ম কী মনে করে তার হাত টা আদিদের গাল পর্যন্ত নেয়, কিন্তু স্পর্শ করার আগেই হাত আবার নামিয়ে ফেলে। ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সামনে তাকায় সে। আদিদ টের পায়। সে তখন পদ্ম’র হাতটা নিয়ে তার গালে রাখে, আর বলে,

‘আপনার হাসবেন্ড, স্পর্শ করতেই পারেন।’

পদ্ম চোখের পলক ফেলতে ভুলে গিয়েছে যেন। আদিদ আলতো হেসে বললো,

‘কী হলো?’

পদ্ম অস্বস্তি নিয়ে বললো,

‘না, কিছু হয়নি।’

পদ্ম হাত টা সরিয়ে নেয়। আদিদ ছাদের রেলিং এ হেলান দিয়ে বসে। তার পূর্ণ দৃষ্টি এখন পদ্ম’র দিকে নিবেশিত। পদ্ম’র ভীষণ অস্বস্তি লাগছে। তার কফি টা ঠান্ডা হচ্ছে। আদিদ মিহি কন্ঠে বললো,

‘কফি টা ঠান্ডা হচ্ছে তো।’

পদ্ম তাকাল তার দিকে। ইতস্তত কন্ঠে বললো,

‘সমস্যা নেই।’

আদিদ তখন বললো,

‘আপনি নাকি খুব সুন্দর গান গাইতে পারেন?’

পদ্ম কিছুটা অবাক হলো। জিজ্ঞেস করলো,

‘আপনাকে কে বললো?’

‘অভি আজকে বলেছে। ও নিশ্চয়ই আপনার গান শুনেছে, তাই বলেছে। এখন আমাকে একটা গান শুনাতে হবে।’

পদ্ম মুচকি হেসে আদিদের পাশে রেলিং এ হেলান দিয়ে বসলো। তারপর ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলে সুর ধরলো,

ওহে কী করিলে বলো, পাইব তোমারে
রাখিব আঁখিতে আঁখিতে
ওহে কী করিলে বলো, পাইব তোমারে
রাখিব আঁখিতে আঁখিতে,,,,

ওহে এত প্রেম আমি কোথাও পাব না
এত প্রেম আমি কোথাও পাব না
তোমারে হৃদয়ে রাখিতে
আমার সাধ্য কিবা তোমারে
দয়া না করিলে কে পারে
তুমি আপনি না এলে কে পারে
হৃদয়ে রাখিতে….

চলবে…

#পদ্মফুল
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
|৫৪|

সকাল থেকেই আজ পদ্ম আর রাণী ভীষণ ব্যস্ত। অনেক গোছগাছ করে সবেই দুজন একটু গা এলিয়ে বসেছে। একটু পর গাড়ি আসবে। আজ পদ্ম প্রথম বারের মতো বউ হিসেবে আদিদের বাড়িতে পা রাখতে চলেছে। এই কয়টা দিন যেন চোখের পলকে চলে গিয়েছে। আর তার সাথে তৈরি করে গিয়েছে আদিদ আর পদ্ম’র মাঝে একটা সুন্দর সম্পর্ক।
আদিদ আজকাল পদ্ম’র খুব খেয়াল রাখছে। আর তারই সুযোগ নিচ্ছে রাণী। যেমন সেদিন সে আদিদ কে কল দিয়ে বলে যে, “পদ্ম হঠাৎ করে অনেক বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছে, সকাল থেকে নাকি সে খুব বমি করছে, কিচ্ছু মুখে তুলছে না।” আর তা শুনে আদিদ অনেক বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়ে। সে সঙ্গে সঙ্গেই ছুটে পদ্ম’র বাড়িতে আসে। এসে দেখে পদ্ম একদম ঠিক আছে। আদিদ কে দেখে পদ্ম অবাক হয়। পরে জানতে পারে এসব কিছু রাণীর কাজ। খুব বকাও খায় রাণী সেদিন। তবে তার প্রতি আদিদের এত উত্তেজনা দেখে ভীষণ ভালোও লাগে।
.

কিছুক্ষণের মধ্যেই আদিদ চলে আসে। আদিদ কে দেখে রাণী ছুটে গিয়ে ব্যাগ থেকে পদ্ম’র জন্য একটা শাড়ি নিয়ে আসে। সেটা সে পদ্ম’র হাতে দিয়ে বলে,

‘ডাক্তার সাহেব চলে এসেছেন। জলদি শাড়ি টা পরে এসো।’

পদ্ম ব্র কুঁচকে বিরক্ত গলায় বলে,

‘এখন আবার শাড়ি কেন পরবো?’

‘ওমা! তুমি প্রথম বারের মতো তোমার শ্বশুর বাড়িতে যাচ্ছো, আর শাড়ি পরবে না? এভাবে কেউ যায় নাকি। যাও তাড়াতাড়ি শাড়ি টা পরে এসো।’

পদ্ম শাড়ি টা রেখে দিয়ে বললো,

‘এখন আমি শাড়ি পরতে পারবো না, এত এনার্জি নেই।’

রাণী চোখ মুখ শক্ত করে নিল। বললো,

‘উফফ, সবসময়ই তুমি এমন করো। তুমি বোঝোনা, ডাক্তার সাহেবের যে তোমাকে শাড়িতে দেখতে ভালো লাগে? উনার জন্য একটু পরলে কী হয়?’

আদিদ তখন সেখানে উপস্থিত হয়। জিজ্ঞেস করে,

‘কোনো অসুবিধা?’

পদ্ম তাকে বলে,

‘আমাকে কি শাড়ি পরে আপনাদের বাড়িতে যেতে হবে?’

আদিদ বললো,

‘না, আপনার যা খুশি পরতে পারেন।’

রাণী রেগে গেল। বললো,

‘না, শাড়িই পরতে হবে। না হলে তুমি যেতে পারবে না।’

আদিদ তখন বললো,

‘রাণী যখন চাইছেন, তখন পরুন শাড়ি। এমনিতেও শাড়িতে আপনাকে ভালো মানায়।’

পদ্ম মাথা নাড়িয়ে বললো,

‘ঠিক আছে তাহলে, পরছি।’

পদ্ম শাড়ি টা নিয়ে ভেতরের রুমে গেল। আদিদ রাণীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,

‘এভাবেই সবসময় আমার হয়ে বোনকে জ্বালাবেন, বুঝেছেন?’

রাণী দাঁত কেলিয়ে হেসে বললো,

‘আচ্ছা।’

পদ্ম’র বাড়িতে যে অল্প সংখ্যক ফার্ণিচার ছিল তা সে বিক্রি করে দিয়েছে। আর বাকি তার দৈনন্দিন জিনিস পত্র যা ছিল সেগুলো আদিদ তার গাড়িতে তুলে নিয়েছে। সব কাজ শেষ করে আদিদ আর রাণী বাইরে দাঁড়িয়ে পদ্ম’র জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। পদ্ম বাসা তালা দিয়ে চাবি টা মালিকের কাছে দিয়ে এলো। তারপর সে বাইরে বের হয়ে আদিদের গাড়ির কাছে গেল। আদিদ পদ্ম’র দিকে তাকাতেই সে আলতো হাসল। আদিদের চোখে আটকে গেল পদ্ম’র গায়ে মিশে থাকা বেগুনী রঙের সুতি শাড়ি টা। পদ্ম কে আদিদ বিয়ের আগেও শাড়ি পরা দেখেছিল। কিন্তু আগে কখনো তাকে এত সুন্দর লাগেনি। আজকাল তাকে যতটা সুন্দর লাগে, মনে হয় সৌন্দর্য যেন দিন দিন তার বাড়ছেই কেবল। হয়তো আগে কখনো আদিদ পদ্ম’কে ওভাবে খেয়াল করেনি। তাই হয়তো পদ্ম’র সৌন্দর্য তার চোখে ধরা পড়েনি। কিন্তু এখন পড়ছে, পদ্ম’র সৌন্দর্যে একটা পবিত্রতা আছে, একটা শুভ্রতা আছে। এই সৌন্দর্য দেখলেই যেন মনে প্রশান্তি জাগে। পদ্ম এগিয়ে যেতেই রাণী বলে,

‘মাশাল্লাহ, কী সুন্দর লাগছে তোমাকে আপু!’

পদ্ম মুচকি হাসল। বললো,

‘হয়েছে হয়েছে, এবার গাড়িতে উঠ।’

রাণী দরজা খুলে গাড়িতে বসে আবার দরজা আটকে দিল। পদ্ম ব্রু কুঁচকে তাকাতেই তাকে সে বললো,

‘ডাক্তার সাহেবের সাথে সামনে বসো।’

আদিদ তখন ড্রাইভিং সিটে বসে পদ্ম’র জন্য পাশের দরজা টা খুলে দিল।
.
.

রুবি হোসেন বেশ সাদরে তার ছেলের বউকে বরণ করে নিলেন। সেই পুরোনো বাড়িতে নতুন করে পা রাখতেই পদ্ম’র বুকের ভেতর মুচড়ে উঠল। মনে পড়ে গেল সেই ভয়ানক দিনগুলোর কথা। চোখে মুখে বিষন্নতা আর এক অজানা ভয় ঝেঁকে বসলো তার। আদিদ হয়তো বুঝতে পারলো ব্যাপার টা। পদ্ম’র নিরবতা দেখে আদিদ তার হাতটা চেপে ধরলো। পদ্ম বিস্মিত চোখে তাকালে আদিদ বললো,

‘আর ভয় নেই, এখন আমি আছি আপনার পাশে।’

পদ্ম’র মন টা তখন হালকা হলো।
.

বাড়ির অন্যান্য জিনিস পত্র গুলো খুব একটা না পাল্টালেও আদিদের রুমে বেশ কিছু বদল ঘটেছে। আদিদের রুমে যেই দেয়ালে সুজানার অনেকগুলো ছবি রাখা ছিল সেখানে আজ সুজানার কেবল একটি ছবি আর তার পাশেই আদিদ আর পদ্ম’র একটি ছবি বেশ বড়ো ফ্রেম করে টানানো। তাছাড়া তার বিছানাটাও বদলানো হয়েছে। দুই পার্টের একটা আলমারি ছিল, এখন সেখানে তিন পার্টের আলমারি রাখা। ড্রেসিং টেবিলের উপর কিছু মেয়েলী জিনিসপত্র দেখে পদ্ম এবার অনেক বেশিই অবাক হয়। এসব কিছু নিশ্চয়ই আদিদ কিনেনি। কিন্তু সে যে তার ড্রেসিং টেবিল টা এভাবে সাজাতে দিয়েছে সেটাই তো বেশি। তাকে ঘিরে এত আয়োজন দেখে পদ্ম’র মনটা উৎফুল্ল হয়ে উঠে।তার নতুন জীবন, নতুন সংসার। নিজের সবটুকু দিয়ে সে এই সংসার টা আগলে রাখবে। আর আদিদের প্রতি ভালোবাসারও এইটুকু কমতি রাখবে না সে।

তার আর আদিদের ছবিটা ছুঁয়ে দিয়ে পদ্ম মনে মনে ভাবল, এই দেয়ালে যদি সুজানার পাশে তার জায়গা হয়ে থাকে তবে আদিদের মনেও নিশ্চয়ই হবে।

সে এতটাই নিজের ভাবনায় বিভোর ছিল যে, আদিদ কখন এসে তার পেছনে দাঁড়িয়েছে সেই খেয়ালই তার নেই। হঠাৎ পেছন ফিরতেই সে চমকে যায়। আদিদ হেসে বলে,

‘ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এই রুমে আমি ছাড়া আর কেউ আসবে না।’

পদ্ম হালকা হাসার চেষ্টা করে বললো,

‘না না, ভয় পাইনি।’

আদিদ তখন এক পা এগিয়ে পদ্ম’র খুব কাছে গিয়ে দাঁড়াল। নরম গলায় বললো,

‘এখানে আসার পর থেকেই আপনার চোখ মুখ অন্যরকম হয়ে আছে। আমি জানি, আপনার পুরোনো কথা মনে পড়ছে। হয়তো মনের এক কোণে এখনও কিছু ভয় রয়ে গিয়েছে। আমারও আছে। একবার হারিয়ে নিঃসঙ্গ হয়েছি, আরেকবার হারালে নিঃস্ব হয়ে যাবো। আমি আর হারাতে চাই না পদ্ম। ঠিক যতটা শক্ত করে একজনকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে হয়, আমি ঠিক ততটাই শক্ত করে আপনাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাই, পদ্ম।’

আদিদ আরো এক পা এগিয়ে গেল। পদ্ম’র স্পন্দন তখন ক্রমে ক্রমে বাড়ছিল। আদিদ তার কপাল টা পদ্ম’র কপালে ঠেকায়। তারপর চোখ বুজে। বলে,

‘আমাকে ছেড়ে যাবেন না তো, পদ্ম?’

পদ্ম’র ঠোঁট জোড়া কেঁপে উঠে। গলা দিয়ে স্বর আসে না। আদিদ পদ্ম’র কোমরে হাত রেখে তাকে কাছে টেনে নেয়। মিহি কন্ঠে বলে,

‘ভয় পাচ্ছেন? ভাবছেন, আবার কিছু খারাপ হবে না তো? হবে না পদ্ম। আমি আপনার সাথে আর কিছু খারাপ হতে দেব না। সুজানা কে আগলে রাখতে পারেনি। কিন্ত আপনাকে নিজের সবটুকু দিয়ে আগলে রাখবো। এইটুকু আঁচড়ও লাগতে দিব না, প্রমিস।’

পদ্ম’র নিশ্বাস ভারি হয়ে উঠে। আদিদ কপাল সরিয়ে তার ওষ্ঠ্য যুগল পদ্ম’র লালটের কাছে নিতেই সেখানে রাণী চলে আসে। ওদের দুজন কে ঐভাবে দেখে রাণী চেঁচিয়ে উঠে। বলে,

‘সরি সরি, আমি কিছু দেখিনি।’

রাণীর চিৎকারে দুজনেই এক ঝটকায় দূরে সরে যায়। অস্বস্তিতে দুজনেই কাঁচুমাচু করছে। রাণী তখন মিটমিট করে হেসে বললো,

‘একটু তো দরজা টা আটকাতে পারো।’

পদ্ম দাঁতে দাঁত চেপে রাণীর দিকে তাকাতে সে ভেংচি কেটে বলে,

‘পরের বার থেকে দরজা টা আটকে তারপরই…’

‘রাণীইইইই!’

পদ্ম’র চিৎকারে রাণী এবার এক ছুটে নিচে নেমে যায়। আদিদের দিকে ফিরে তাকাতেই আরো বেশি লজ্জা লাগে পদ্ম’র। আদিদ কিছু বলবে তার আগেই সে বলে উঠে,

‘আমি ওয়াশরুমে যাচ্ছি, আপনার কথা পরে শুনবো।’

এই বলে সে বড়ো বড়ো পা ফেলে ওয়াশরুমে চলে যায়। আর তা দেখে আদিদ হাসে আর মনে মনে ভাবে,

“আহারে, মেয়েদের লজ্জা লুকাতে কত কিছুই না করতে হয়।”

চলবে…

#পদ্মফুল
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
|৫৫|

আজ খুব সকাল সকাল পদ্ম ঘুম থেকে উঠে পড়েছে। আর সে ফ্রেশ হয়ে এসেই আদিদ কে ডাকতে লাগে। আদিদের চোখ খুলতে কষ্ট হচ্ছিল। তাও সে কোনো রকমে তাকাল। বললো,

‘কী হয়েছে পদ্ম? এত সকাল সকাল ডাকছেন কেন?’

পদ্ম খুশি খুশি গলায় জবাব দিল,

‘চলুন হাঁটতে বের হই।’

আদিদ চোখ বুজে শুয়ে পড়ে বললো,

‘খুব ঘুম পাচ্ছে আমার।’

পদ্ম কপাল কুঁচকে বললো,

‘উফফ, প্রতিদিন তো আর যাই না। একদিনই তো। একটু কষ্ট করে উঠুন না, প্লীজ।’

আদিদের কান অবধি পদ্ম’র গলার স্বর পৌঁছালেও মস্তিষ্ক অবধি হয়তো পৌঁছাল না। আদিদের কোনো হেলদোল না দেখে পদ্ম তার কাছে গেল। ঘুমে কাতর মুখখানা দেখে পদ্ম’র বড্ড মায়া হলো। কিন্তু বাইরেও খুব যেতে ইচ্ছে করছে তার। আর সবথেকে বড়ো কথা হলো, এখন বাইরে নিয়ে না যেতে পারলে সারপ্রাইজ টা ও আর দেয়া হবে না। পদ্ম তাই আদিদের বাহুতে হাত রেখে তাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বললো,

‘উঠুন না, ডাক্তারবাবু।’

আদিদ অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে আবারও ঘুমে তলিয়ে পড়ল। পদ্ম এবার আদিদের কানের কাছে মুখ নিয়ে চেঁচিয়ে উঠল,

‘ডাক্তারবাবুউউউউউ!’

আদিদ ধরফরিয়ে উঠে বসলো। চোখগুলো লাল হয়ে আছে তার। ফোলা ফোলা মুখ টা কুঁচকে বিরক্ত দৃষ্টিতে সে পদ্ম’র দিকে তাকিয়ে আছে। পদ্ম হেসে বললো,

‘সরি, ঘুমটা নষ্ট করার জন্য। কিন্তু বাইরে যাওয়াটা খুব দরকার। চলুন না প্লীজ।’

আদিদ নাক মুখ ফুলিয়ে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াল। তারপর ওয়াশরুমের দিকে যাওয়া ধরে কর্কশ গলায় বললো,

‘আপনার জ্বালায় একটু ঘুমিয়েও শান্তি নেই।’

সকাল ছয়টা বেজে ত্রিশ মিনিট। এইদিকের রাস্তাটায় খুব একটা মানুষ নেই। অল্প কিছু মিষ্টি রোদের আলো রাস্তার একপাশে জড়ো হয়ে তাদের অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে। পিচ ঢালা সেই রাস্তার মাঝ দিয়ে হেঁটে চলছে পদ্ম। আদিদ বার বার তাকে সাইডে আসতে বলছে। কিন্তু তার বক্তব্য, এত সকালে এই রাস্তা দিয়ে কোনো গাড়ি যাবে না। তাই সে রাস্তার মাঝখান দিয়ে হাঁটতেই পারে। অনেকটা পথ হাঁটার পর তারা একটা চায়ের দোকান পেল। আর সেটা দেখেই পদ্ম’র আত্মা খুশিতে ঝলমলিয়ে উঠল। পদ্ম বলার আগেই আদিদ সেখানে গিয়ে দু কাপ চায়ের অর্ডার দিল। কারণ সে জানে, পদ্ম’র এই চা কত পছন্দ। এই ফুরফুরে ঠান্ডা বাতাসে দু কাপ গরম গরম চা এই মানুষ দু জন খুব উপভোগ করলো। চায়ের দোকানের টাকা মিটিয়ে আদিদ বললো,

‘চলুন, এবার ফেরা যাক।’

পদ্ম ব্রু উঁচিয়ে বললো,

‘ওমা, এত তাড়াতাড়ি।’

‘আরো হাঁটতে ইচ্ছে করছে আপনার, পায়ে ব্যথা করে না?’

পদ্ম মাথা নাড়িয়ে বললো,

‘উহু, না তো। চলুন, আরো সামনে যাবো।’

পদ্ম হাঁটা ধরলো। তার পেছন পেছন বাধ্য হয়ে আদিদ কেও ছুটতে হলো। কিছুটা পথ যাওয়ার পর হঠাৎ আদিদের পা থেমে গেল। সে আশ্চর্য চোখে এদিক ওদিক দেখতে লাগল। প্রথমে বিশ্বাস হলো না কিছু। কিন্ত পরক্ষণেই বুঝতে পারলো এই সবকিছুই সত্য। তারা যেই জায়গাটাই এসেছে সেখানে আশে পাশে অনেকগুলো সুপারি গাছ। আর সেই সারি সারি গাছগুলোতে আজ অনেকগুলো ব্যানার টানানো। আর সবগুলোই ব্যানারেই ছিল আদিদের ছবি আর নিচে লেখা, “শুভ জন্মদিন, ডাক্তারবাবু।” আদিদ বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ল। মেয়েটা কী ভয়ানক কান্ড করে বসেছে!। সে আপ্লুত চোখে পদ্ম’র দিকে তাকায়। পদ্ম মুচকি হেসে তার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,

‘শুভ জন্মদিন, ডাক্তারবাবু। আপনাকে অনেক ভালোবাসি।’

আদিদ পদ্ম’কে তার কাছে টেনে নিল। কপালে ওষ্ঠ্য জোড়া ছুঁইয়ে বললো,

‘আমিও আমার পদ্মফুল কে অনেক বেশি ভালোবাসি।’

পদ্ম আদিদ কে জড়িয়ে ধরে। আদিদ তাকে নিজের বুকের মাঝে মিশিয়ে নেয়। শীতল কন্ঠে বলে,

‘এসব কী করে বসেছেন, বলুন তো? আর এত কিছু করলেনই বা কখন?’

‘করেছি, আমি আর রাণী মিলে। আহামরি কিছু করতে পারবো না বলে এই ছোট্ট সারপ্রাইজ। তবে আপনার জন্য আরো একটা সারপ্রাইজ আছে, ডাক্তারবাবু।’

‘আরো সারপ্রাইজ?’

অবাক হয় আদিদ। পদ্ম বলে,

‘হ্যাঁ, তবে সেটা বাসায়। এখন চলুন আমরা ঐ দিকটাই বসি। আজ আপনার সাথে সুন্দর একটা সকাল কাটাবো।’

আদিদ আলতো হাসে। পদ্ম তাকে ছাড়তেই সে হুট করে পদ্ম কে কোলে তুলে নেয়। বলে,

‘চলুন, সুন্দর একটা সকাল আপনার আমার অপেক্ষা করছে।’

আটটার দিকে আদিদ আর পদ্ম বাড়ি ফিরলো। তখনও বাড়ির সবাই ঘুমাচ্ছে। জেগে ছিল কেবল রাণী। পদ্ম বাসায় ফিরতেই রাণী তার প্রশ্নের ঝুলি নিয়ে বসে। পদ্ম তার সব প্রশ্নের একে একে জবাব দেয়। এক এক করে সকল প্রশ্নের জবাব পেয়ে তবেই রাণী ক্ষান্ত হয়। পদ্ম কে বলে,

‘আর ঐ কথা টা?’

পদ্ম ফিসফিসিয়ে বলে,

‘রাতে কেক কাটার পর বলবো। তুই কিন্তু আগে থেকে কিছু বলিস না।’

রাণী দু গালে দুবার হাত লাগিয়ে বলে,

‘তওবা তওবা, আমি কাউকে কিচ্ছু বলবো না।’

সকালের নাস্তা খেয়ে আদিদ তার হসপিটালে চলে যায়। পদ্ম তখনও নাস্তা খায়নি। আদিদ অনেকবার তাকে জোর করেছিল খাওয়ার জন্য। কিন্তু সে তখন খায়নি, রাণীর সাথে পরে খাবে বলে আদিদ কে বুঝিয়েছে।

রাণী আর রুবি হোসেন খেতে বসেছেন। পদ্মও বসেছে। তবে সে খাচ্ছে না। রুবি হোসেন ব্যাপার টা খেয়াল করে বললেন,

‘কী হলো, পদ্ম? তুমি কিছু খাচ্ছো না কেন?’

পদ্ম ছোট্ট করে একটা রুটির টুকরা মুখে দিয়ে বললো,

‘এই তো খাচ্ছি মা।’

রুবি হোসেন তখন পদ্ম’র দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,

‘আজকাল তোমার শরীর টা ভালো যাচ্ছে না, তাই না?’

পদ্ম হালকা হাসার চেষ্টা করে বললো,

‘না না মা, তেমন কিছু না। শুধু খাবার খেতে গেলে একটু কষ্ট হয়।’

‘বমি বমি পায়?’

পদ্ম রাণীর দিকে তাকায়। রাণীও খাবার ফেলে তার দিকে তাকিয়ে আছে তার জবাব শোনার জন্য। পদ্ম তখন আমতা আমতা করে বললো,

‘হালকা একটু বমি বমি লাগে।’

রুবি হোসেন মুচকি মুচকি হেসে বললেন,

‘বিয়ে হয়েছে এক বছর হতে চললো, এখন তো একটু আধটু বমি বমি পাবেই। সময় তো হয়েছে, তাই না?’

রুবি হোসেনের কথায় পদ্ম লজ্জা পেল। সে খাবার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,

‘আমি পরে খেয়ে নিব মা। আপনারা খান।’

রুবি হোসেন আর রাণী ঠোঁট চেপে হাসে। পদ্ম তার রুমে গিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। নিশ্বাস বাড়ছে তার। ডান হাত টা পেটের উপর রাখতেই অদ্ভুত এক শান্তি পায় মনে। সে ভেবে পায় না এই কথাটা আদিকে কে কীভাবে বলবে। লজ্জায় তো ম*রে যাবে তখন। উফফ, কী ভয়ানক অবস্থা!

রাতে আদিদের জন্মদিন উপলক্ষে অভির পরিবার আর তার কাজিন অনিক এলো। আর অনিক আসার পর থেকেই রাণী বার বার এটা ওটার বাহানা দিয়ে ড্রয়িং রুমে যাচ্ছে। পদ্ম আরো আগ থেকেই কিছু একটা সন্দেহ করছিল তবে আজ যেন তার সন্দেহ টা আরো গাঢ় হচ্ছে। রাণী আজ অনেক বেশি সেজেছে। অযথাই আজ সে শাড়ি পরেছে। একটু খাটো হওয়ায় সাজুগুজু করার পর তাকে দেখতে কেমন যেন পুতুল পুতুল লাগে। যেন ব্যাটারি চালিত একটা পুতুল সারাক্ষণ এদিক ওদিক ছোটাছুটি করে।

পদ্ম আজ সারাদিন রান্না করেছে আর ওয়াশরুমে দৌড়া দৌড়’ই করেছে। বেশিক্ষণ রান্না ঘরে থাকলেই তার বমি চলে আসতো। খুব কষ্টে আজ সে রান্না করছে। রাণী অবশ্য তাকে সাহায্য করেছিল। তবে আদিদের জন্মদিন বলে সে নিজেই সবটা করার চেষ্টা করেছে।

কেক কাটা হলো। আদিদ সবাই কে কেক খাইয়ে দিল। রাণী সেখান থেকে এক পিস এক নিয়ে অনিকের কাছে গিয়ে বললো,

‘নিন।’

অনিক কেক টা হাতে নিতে চাইলে রাণী আবার বললো,

‘আমি খাইয়ে দেই।’

অনিক আলতো হেসে বললো,

‘ঠিক আছে।’

রাণী তাকে খাইয়ে দিল। অনিকও তাকে কেক খাওয়ালো। আর বললো,

‘বাচ্চা মেয়েদের শাড়ি পরতে নেই। কারণ তাদের শাড়ি পরলে ছোট্ট পুতুল মনে হয়।’

অনিকের সেই কথায় রাণী প্রচন্ড লজ্জা পেয়ে পদ্ম’র পেছনে গিয়ে দাঁড়াল। তারপর রাতের খাওয়া দাওয়া হলো। খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই গল্প করতে বসলো। সেখানে তখন সবার সামনেই অনিক বললো,

‘আমার কিছু কথা বলার আছে।’

সবাই আগ্রহ সহকারে তার দিকে তাকাল। অভি বললো,

‘কী কথা, অনিক?’

অনিক রাণীর দিকে এক পলক তাকিয়ে ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলল। বললো,

‘আমি আর রাণী এক জন অন্য জনকে ভালোবাসি। আমরা বিয়ে করতে চাই।’

অদ্ভুত ভাবে কেউই সেখানে অবাক হলো না। সবাই উল্টো বলে উঠল, “আলহামদুলিল্লাহ।”

রাণী তো পারছে না সেখানেই নাচতে আরম্ভ করবে। খুশিতে যেন প্রাণপাখি উড়ে যাচ্ছে তার। সেখানে বসেই রাণী আর অনিকের বিয়ে ঠিক হয়ে গেল। আগামী সপ্তাহে অনিকের মা বাবা আসলেই বিয়ের কার্যক্রম শুরু করা হবে। আহা, রাণীর খুশি দেখে কে। সে তো জেগে জেগে এখন থেকেই স্বপ্ন দেখা শুরু করে দিয়েছে।

বারোটার দিকে সকলে চলে যায়। সব কাজ সেরে প্রচন্ড ক্লান্ত হয়ে পদ্ম রুমে ফিরে। আদিদ তখন মাত্র ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়েছে। তাকে দেখা মাত্রই পদ্ম’র ধুকধুকানি বেড়ে যায়। এখন তো কথাটা বলতেই হবে। আর দেরি করা যাবে না। পদ্ম আস্তে আস্তে আদিদের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। আদিদ তাকে দেখে জিজ্ঞেস করে,

‘খুব ক্লান্ত নাকি? চোখ মুখ যেন কেমন হয়ে আছে।’

পদ্ম জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজাল। বললো,

‘একটা কথা বলার ছিল।’

‘হ্যাঁ, বলো।’

পদ্ম হাঁসফাঁস করছে। কীভাবে শুরু করবে বুঝতে পারছে না। কিছুটা সময় নিয়ে সে আস্তে আস্তে বললো,

‘আপনি বাবা হতে চলছেন, ডাক্তারবাবু।’

আদিদ ব্রু কুঁচকে বললো,

‘শুনিনি। আরেকবার বলুন।’

পদ্ম তার দিকে তাকাল। ধীর গলায় বললো,

‘আপনি বাবা হতে চলছেন।’

আদিদ কথা বলছে না। চোখের পলকও ফেলছে না। কিছুক্ষণ নিরব থেকে বললো,

‘সত্যি!’

পদ্ম উপর নিচ মাথা নাড়াল। আদিদ চোখ বুজে ছোট্ট একটা নিশ্বাস নিল। জড়িয়ে ধরলো পদ্ম কে। বললো,

‘এই দিন টা দেখার জন্যই হয়তো, সুজানার মারা যাওয়ার পরও আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। আজ মনে হচ্ছে, সত্যিই আমার বেঁচে থাকাটা স্বার্থক হয়েছে। পদ্ম জানেন, এই এত এত ঝামেলার পরও আপনি আমার জীবনের সাথে জুড়ে গিয়েছিলেন বলেই আজ আমি এতটা সুখী হতে পেরেছি। আমাকে এতটা সুখ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ পদ্ম। অনেক ভালোবাসি আপনাকে, পদ্মফুল’

চলবে…