পদ্ম ফুলের অভিমান পর্ব-০৫

0
161

#পদ্ম_ফুলের_অভিমান (পর্ব 5)
#লেখনীতে_নাফিসা_আনজুম

শুপ্তি ঘরে এসে বিছানায় বসলো।
পদ্ম দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে আসো, তুমি আমার চেয়ে ছোট তাই তুমি করেই বলছি।তারপর যা যা বললো প্রথমে শুনে কষ্ট লাগলেও পরে হাসিঁ পেলো।

আমি কিছু না বলে দরজা লাগিয়ে দিয়ে আসলাম।

দেখো পদ্ম, আমি জানি একসময় অভ্র আর তোমার প্রেম ছিলো।

আমি কিছু বললাম না, মনে মনে ভাবলাম এই কথাটা তাহলে বলেছে।

আর আজকে তোমার আর অভ্রের অনেক কথাই আমি শুনেছি, হ্যাঁ অভ্রের সাথে আমি আগে কথা বলেছি কেনো জানো,

অতীত,
আমি তখন ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার এ পরি অভ্র অনার্সে, একদিন জানতে পারি আমর বেস্ট ফ্রেন্ড অর্পিতা একটা ছেলের সাথে রিলেশন করে।

অর্পিতা- শুপ্তি শোন না আমার না একটা ছেলের সাথে ফেসবুকে সারাক্ষণ কথা হয়।

শুপ্তি-তা প্রেমে ট্রেমে পরলি নাকি

অর্পিতা-ধুর কি যে বলিস না,আমি আর প্রেম

আসলে অর্পিতা ছিলো একটু লাজুক স্বভাবের মেয়ে, আমি প্রেম করলেও ও ছিলো একদম ভিন্ন।ও কখনো প্রেম এর আশেপাশে ছিলো না। সেই মেয়ে কারো সাথে সারাক্ষণ কথা বলে এটা আমার কাছে অনেক কিছু। আমি বললাম যে আচ্ছা ছেলের ছবি দেখা। তারপর ও আমাকে অভ্রের ছবি দেখায়,

বাহ্ অর্পিতা, এই জন্য বুঝি প্রেমে পরছিস।ছেলে তো মাশাআল্লাহ দেখতে। তা কই থেকে পাইলি

ফেসবুকেই পরিচয় এই বলে লজ্জায় মুখ ঢাকলো মেয়েটা।

এভাবেই কিছুদিন গেলো,কিন্তু ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে ওঠার পর আমরা আর কলেজ বেশি করি নি।আমাদের দেখাও খুব কম হতো। কথা হতো মাঝে মাঝে।আসলে দেখা না হলে কথা বলাও অতোটা ঠিকভাবে হয় না।আর আমাদের বাড়ি খুব একটা কাছাকাছিও ছিলো না।
তার প্রায় চার/পাঁচ মাস পর হটাৎ একদিন অর্পিতার আম্মু আমার কাছে ফোন করে,

-শুপ্তি অর্পিতা কি তোমার বাড়িতে আছে

-না আন্টি ও তো আমার কাছে নেই,কেনো কি হয়েছে

-মেয়েটা সেই সকালে বের হয়েছে কিন্তু এখনো বাড়িতে আসছে না,ফোন রিং হচ্ছে কিন্তু রিসিভ করছে না। আমার খুব চিন্তা হচ্ছে মা । আমার মেয়েটা তো কখনো এমন করে না। আজ কেনো ফিরছে না মা

-কি বলছেন কি, সকালে বের হয়েছে আর এখন রাত দশটা বাজতে চলেছে।

-হ্যাঁ মা এজন্যই তো আমার খুব চিন্তা হচ্ছে, আমি তো অনেকের বাড়িতেই খোঁজ নিচ্ছি,কেউ কেউ আবার বড় কথাও বলতেছে যে আমার মেয়েটা নাকি খা*রাপ। আমি এখন কি করবো মা। চারদিকে যত ধ*র্ষ*ন খু*ন হচ্ছে আমার যে খুব ভয় করছে মা। আমার একটা মাত্র মেয়ে।আমি মানুষের কথার ভয় করছি না,আমার মেয়েটা যেনো সুস্থ থাকে। ওর বাবা বিদেশ থেকে ফোন দিলে কি জবাব দেবো আমি।

আমার জানামতে অর্পিতা এমন মেয়েই না। শুধু অর্পিতা না আমিও কখনো বাড়িতে না বলে রাত দশটার পর বাহিরে থাকি নি। আর অর্পিতা তো আমাকে ছাড়া একা একা কোথাও যায় এ না। আন্টিকে বললাম,আন্টি আপনি চিন্তা করিয়েন না আমি দেখছি কি করা যায়।

আসলে সন্তানদের কিছু হলে, মায়ের মন অল্পতেই ভেঙে পরে। তাতে অর্পিতা মেয়ে মানুষ,বাড়িতে কাউকে কিছু না বলে রাত দশটার পর বাহিরে থাকার মতো মেয়ে অর্পিতা না। আমি নিজেও কয়েকবার অর্পিতার নম্বর এ কল করলাম,কিন্তু রিসিভ হলো না। এখন তো আমারো খুব টেনশন হচ্ছে। অর্পিতা ভালো আছে তো। ওর কিছু হয় নি তো।

তারপর হটাৎ অভ্রের কথা মনে পরে। যে অভ্রের সাথে কোথাও যায় নি তো আবার। কিন্তু অভ্রের সাথে যোগাযোগ করার উপায় তো আমার কাছে নেই। আবারো ব্যর্থ হলাম। আন্টি বার বার ফোন দিচ্ছে আমি শুধু শান্তনা দিয়ে যাচ্ছি। কি করবো আমি কিছুই করার নেই। আমাদের কলেজের অনেকের কাছেই কল দিয়ে জিজ্ঞেস করেছি কারো বাসাতেই নেই। এদিকে রাত যত গভীর হচ্ছে চিন্তা ততো বেশি হচ্ছে। আন্টি বাড়িতে একা। অর্পিতাও এক বাবার এক মেয়ে।ওর বাবা বিদেশ থাকে। বাড়িতে অর্পিতা আর আন্টি। আন্টি কথা বলতে বলতে হটাৎ চুপ হয়ে গেছে,মনে হচ্ছে সেন্স*লেস হয়ে গেছে। আমি এখন কি করি। আন্টির পাশে তো থাকতে হবে। তাই আব্বুকে বলে অর্পিতাদের বাড়িতে চলে আসি।ড্রাইভার গাড়িতে করে রেখে যায়। এসে দেখি আন্টি এখনো সেন্স*লেস। রাত বারোটা বাজতে চললো এখন ডাক্তার ডাকা সম্ভব না। আব্বু থাকলে ডাকা যেতো কিন্তু আব্বু কাজের জন্য চট্টগ্রাম গেছে। পানির ছিটা দেওয়ার কিছুক্ষণ পর আন্টির ঙ্গান ফেরে। বারোটা পার হয়ে গেছে এখনো অর্পিতার কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। এতোক্ষন না চাইলেও এখন মনে হচ্ছে পুলিশে খবর দিতে হবে। তখনি অর্পিতার নম্বর থেকে কল আসে। সাথে সাথে রিসিভ করে আন্টি কান্না করে বলতে শুরু করে,
মা অর্পিতা তুই কোথায় মা।কোথায় গেছিস আমাকে বলে যাবি না। আমি সকাল থেকে টেনশন করতেছি।

ওপাশের কথা শুনে আমার কিছুটা মনে হচ্ছে যে এটা অর্পিতা না। অন্য কেউ কিছু একটা বলতেছে কিন্তু আন্টির কান্না আর কথার কারনে কিছুই বুঝতে পারতেছি না। আন্টি থামলে আমি ফোন কানে ধরতেই অপাশ থেকে বলে ওঠে,

আপনারা আগে আমার কথাটা শুনুন। আমি অর্পিতা না। আমি একজন নার্স।অর্পিতা অসুস্থ,আমি ওর ব্যাগ থেকে ফোন নিয়ে কল করেছি, আপনি কে বলছেন।

-আমি আমি রোগীর বাড়ি থেকে বলছি, কি হয়েছে আর এটা কোন হসপিটাল।

আপনারা আসেন তারপর সব বলছি।তারপর হসপিটালের নাম বলে শুনে তখনি চলে যাই সেখানে। আন্টি পুরোপুরি ভেঙে পরেছেন।একটা মাত্র মেয়ে। আন্টি এখন অর্পিতার পাশেই বসে আছি,অর্পিতাকে ঘুমের ঔষধ দেওয়া হয়েছে।

আন্টির এই অবস্থা দেখে, নার্স আমাকে একপাশে ডেকে যেসব কথা বললো তা শুনে আমি নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছি না। অর্পিতা এমন একটি কাজ করতে পারলো।

নার্স-আপু আপনি যেহেতু রোগীর বান্ধবী তাই কথাটা আপনাকেই বলি,রোগী এখানে এবর্সন করাতে এসেছিলো।কিন্তু সেটা অনেক দেরি হয়ে গেছে,বাচ্চার চার মাস পার হয়েছে,ডাক্তার বলেছিলো খুব রিস্ক হয়ে যাবে,কিন্তু উনি কথা শোনে নি।বলেছে আমার যা হয় হোক এই বাচ্চা আমি রাখবো না। তারপর আমরা বাড়ির লোককে খবর দিতে বলি,তখন বলে যে আমার বাড়িতে মা ছাড়া কেউ নেই,আর আমার এখনো বিয়ে হয় নি। আমরা ব্যাপারটা বুঝতে পারি, একবার করে রা*গ ধরে এসব মেয়ের ওপর যারা দুইদিনের ভালোবাসার প্রমান দিতে গিয়ে নিজের সতীত্ব বিলিয়ে দেয় । কেনো রে রোন,বিয়ের আগে তোমাকে তোমার সতীত্ব দিয়ে কি বোঝাতে চাও তুমি সত্যি তাকে ভালোবাসো, আর সে, সে তোমাকে কেমন ভালোবাসে যে বিয়ের আগেই তাকে প্রমান দিতে হবে তুমি ভার্জিন,যেসব ছেলে বিয়ের আগে তোমাকে বিছানায় চাবে সে কখনোই তোমাকে ভালোবাসে নি, আর যে তোমাকে সত্যি ভালোবাসবে সে কখনোই তোমাকে বিছানায় চাবে না।
ভালোবাসবা না কেনো, এখন যুগটাই যখন এমন। ভালোবাসো কিন্তু সেটা যেনো লিমিটের মধ্যে থাকে। যাকে ভালোবাসবে তার কাছে নিজেকে সতি প্রমান করার জন্য সতীত্ব বিলিয়ে দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। যে তোমাকে সত্যি ভালোবাসবে তার কাছে তোমার ভার্জিনিটির থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ থাকবে তোমার ভালো থাকা, আর যে তোমিকে বিয়ের আগে বিছানায় চাবে, ক*ষ্ট হলেও তাকে ভূলে যাও,এমন ভালোবাসা থাকার থেকে না থাকাই ভালো।

নার্সের কথা শুনে আমি পুরোপুরি হতভম্ব। অর্পিতা তো এমন মেয়েই না।

ভোরের আগে আগে অর্পিতার ঘুম ভাঙে, উঠে আমাদেরকে দেখে কান্না শুরু করে, আন্টি যা বোঝার বুঝে গিয়েছে,এসব সময় ওনারা পার করে এসেছে তাই একটুতেই অনেক কিছু বুঝে যায়। আন্টির চোখেঁ এখন পানি নেই,কেমন যেনো চুপচাপ বসে আছে,,

অর্পিতা উঠে আমাকে সরি বলে,দেখ শুপ্তি আমি তোকে বলতে চেয়েছিলাম সবকিছু,কিন্তু এসব যে লজ্জার কথা। তোরা সবাই আমাকে ভালো জানতিস সেখানে নিজের ভূলের কথা বলার সাহস আমি পাই নি।
আমি ভেবেছিলাম অভ্র আমাকে বিয়ে করবে,আমাকে স্ত্রীর মর্যাদা দেবে,কারন ওর কথার ধরন দেখে আমি বুঝতে পারি নি ও আমাকে ঠকাবে।

আমি জানি অর্পিতা খুব বেশি ভালো আর একটুতেই সবাইকে বিশ্বাস করে নেয়। অভ্র ওর জীবনে প্রথম মানুষ যাকে ভালোবেসে ও নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছে, আর সেই অভ্র ওকে এমনভাবে ঠকিয়েছে, তখন থেকে অভ্রের প্রতি ক্ষোভ জমা হয়।

তারপর আমি অভ্রের ফেসবুক আইডি নিয়ে ওর সাথে কথা থাকি। আমার এর আগে এক জায়গায় বিয়ে হয়েছিলো, কিন্তু ছেলেটা বিয়ের সাতমাস পল প্রবাস চলে গেছে আর ফিরে আসে নি। কিংবা যোগাযোগ করে নি আমার সাথে। তাই আমার ইচ্ছা ছিলো যে অভ্রকে বিয়ে করে বুঝিয়ে দেওয়া যে ও যেমন বিয়ের আগে অর্পিতার জীবন ন*ষ্ট তেমনি আমিও আমার বিয়ের কথা চেপে গিয়ে ওকে বিয়ে করবো।
তারপর আমার প্লান মতো সব এগোতে থাকে, বান্ধবী ফ্লাটে গিয়ে আমার কথাতেই আমদের বিয়ে হয়ে যায়। আমি ওর সাথে কথা বলে বুঝেছিলাম যে ভালোভাবে বললে ও আমাকে কখনোই বিয়ে করবে না,তাই এই প্লানটাই কাজে লাগাই।

বিয়ের পর ও সবটা জানতে পারে,যে আমার আগে বিয়ে হযেছিলো, এছাড়া আমি অনেক ছেলের সাথে রিলেশন করি, কিন্তু ওর কোনো উপায় নেই আমাকে ছাড়ার। আমাকে ছাড়লে ওকে পথে বসতে হবে, এমনকি জীবনের ঝুঁকিও আছে। কিন্তু দুইবছর অনেক হয়েছে। আমিও যেনো প্রতি*শোধ নিতে নিতে ক্লান্ত। তারপর থেকে আমি ভালো হতে থাকি, এজন্য বাচ্চা নেই। একদিন ইচ্ছে করে ও আমার দিকে তেল ছুড়ে মারে। আমি সেদিন আনেক কষ্টে নিজেকে সামলাই যে,আমি এখন থেকে ভালো হবো। তবে যদি আবারো ওর মাঝে কোনো খারা*প লক্ষন দেখি তাহলে আমার থেকে খা*রাপ আর কেউ হবে না।

আমি এখানে এসেছি,আমি অন্য কারো সাথে খা*রাপ ব্যবহার করবো না।কারন আমার রাগ ওর ওপর আর সবাইকে আমি ক*ষ্ট দেবো না। ও এখন এটা বুঝতে পেরেছে যে আমি ছাড়া আর উপায় নেই ওর।

এই বলে শুপ্তি থেমে গেলো,এদিকে আমার প্রচন্ড হাসিঁ পাচ্ছে। অভ্র ভাইয়া এত্তো চালাক হয়েও ঠকে গেছে, প্রচন্ড ভাবে ঠকেছে, একদম খুব ভালো হয়েছে,এই মানুষটার জন্য এটাই ঠিক ছিলো। উচিৎ জবাব। আমি হাঁসছি,প্রান খুলে হাঁসছি। কেনো জানি না মনটাতে শান্তি অনুভব হচ্ছে। আমাকে ঠকানোর শাস্তি উনি পেয়ে গেছে।

নানু বাড়িতে তিনদিন চলে গিয়েছে, আমি এই দুইদিনে একবারো কান্না করিনি।আজকে বাড়িতে যাবো। মামা আমাকে বাড়িতে রেখে আসবে। আমি রেডি হয়ে শুপ্তির ঘরের দিকে এগোলাম।

চলবে,,