পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ পর্ব-২৫+২৬

0
5818

#পবিত্র_বন্ধনে_আবদ্ধ
#পর্ব- ২৫ ( কাহানী মে টুয়িস্ট)
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ইরিনা নিজের ফোন বের করে বার বার অজানা ব্যক্তিকে ফোন করে যাচ্ছে। কিন্তু একবারও ধরছে নাহ। কি করতে চাচ্ছে কি লোকটা? কালকে যে কিছুতেও অই লোকটা এন্গেজমেন্ট টা হতে দিবেনা তা ভালো করেই জানে ইরিনা। কিন্তু কী করবে? কেন এই অভিশাপ তার জীবনে প্রবেশ করলো। কত ভালোই ছিলো সে ফারহাজ এর সাথে। ফারহাজ কে ভালোবাসে সে। একটা অভিশাপ তার জীবন থেকে ফারহাজ কে অনেক অনেক দূরে সরিয়ে দিবে। কালকে তাদের এন্গেজমেন্ট। আদোও হবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সংদেহ প্রকাশ করছে ইরিনা।কত স্বপ্ন দেখতো এই দিন টি নিয়ে ইরিনা। কিন্তু অই লোকটার জন্য সব কিছু শেষ হয়ে গেলো। ইরিনা ভাবতে ভাবতে অজানা ব্যক্তির নাম্বার থেকে ফোন আসে। ইরিনা তাড়াতাড়ি ফোনটা রিসিভ করলে সে বলে উঠে-
ইরিমনি কয়েকদিন ধরে লক্ষ করছি আমাকে তুমি একটুও বেশি মিস করছো যা আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি। তাহলে কি তুমিও আমার প্রেমে পড়ে গেলে। যেমনটা আমি হয়েছিলাম।

ইরিনা কপাট রাগ দেখিয়ে বলে উঠে-
আপনার এইসব আজেবাজে কথা বাদ দিবেন। আপনার মতলাব টা কী হ্যা?

অজানা ব্যক্তি ঠোটের হাঁসি চওড়া করে বলে উঠে-
তা দেখতেই পারবে!
এই বলে সে ফোন কেটে দেয়।

ইরিনা কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো নাহ।

দাদুন কিছুক্ষন ব্রেসলেট টা পর্যবেক্ষন করলো। হ্যা সেই সোনা ও ডায়মন্ডের মিক্সড করা রুবি পাথরের ব্রেসলেট। যা শুধু ফারহাজ আর আরেকজন এর হাতে ছিলো। এই ব্রেসলেট তাহলে ফিহা পেলো কোথায়? তার মানে কি ফিহা ই? মিঃ রাইজাদা নিজের চেয়ারে বসে নিজের মনে প্রথম থেকে সব কিছুর হিসাব মিলাতে শুরু করে। ফিহার সেই চাহুনি বড্ড চিনা লাগছিলো। মিঃ রাইজাদা তার এসিস্টেন্টকে ডেকে পাঠায়।।।

–জ্বী স্যার বলুন!

দাদুন ঃ ফিহার সম্পর্কে সব ইনফরমেশন কালেক্ট করো কুইক আর ফিহার আম্মুকে আমার অফিসে ডেকে পাঠাও।

—-ওকে স্যার!

ফিহার মা মনোযোগ দিয়ে রান্না করে যাচ্ছে। ফিহা কোনোরকম ভয়ে কাচুমাচু হয়ে বাড়িতে ঢুকে।

ফিহার মা ফিহার কাছে গিয়ে বলে উঠলো-
কিরে ফিহা কেমন কাটলো আজকের দিন টা।

ফিহা কোনোরকম হেঁসে বলে উঠলো–
ভালোই হয়েছে।

ফিহার মা আচ্ছা বলে নিজের কাজে মনোযোগ দিলো।

এদিকে ফিহা বার বার বলার চেস্টা করছে তার মাকে সে ব্রেসলেট টা হারিয়ে ফেলেছে কিন্তু বলতেই ভয় করছে মা যদি শুনে তাহলে তাকে আর আস্ত রাখবে নাহ।

ফিহা তার মাকে আমতা আমতা করে বলে উঠে-
মা একটা কথা ছিলো।

ফিহার মাঃ হ্যা মা বল।

ফিহা বলতে নিলেই তাদের বাড়ির কলিং বেল বেজে উঠে।

ফিহার মা উঠে দাঁড়িয়ে বলে উঠে-
আমি দেখছি কে এসেছে। ফিহা তুই রুমে গিয়ে স্কুল ড্রেস পালটে নে। আমি তোকে খেতে দিচ্ছি।

ফিহা আর কি করবে? সে মাথা নাড়িয়ে নিজের ঘরে চলে যায়।

এই বলে ফিহার মা দরজা খুলে দেখে একজন ব্যক্তি ফরমাল ড্রেসাপ এ দাঁড়িয়ে আছেন।

ফিহার মাঃ জ্বী কাকে চাই?

—-আসলে আমাকে রাইজাদা স্যার পাঠিয়েছেন।
মির্জা ইন্ডাস্ট্রির মালিক। তিনি আপনাকে আমার সাথে এখন তার সাথে অফিসে যেতে বলেছেন

ফিহার মা বুঝতে পারছে নাহ রাইজাদা মির্জা কেন তাকে ডেকে পাঠিয়েছে। উনি কি কিছু আন্দাজ করতে পেরেছেন।

ফিহার মা আর কিছু ভেবে বলে উঠে-
আপনি অপেক্ষা করুন আমি আসছি।

—-ঠিক আছে।

ফিহার মা আকাশ -পাতাল ভাবতে ভাবতে ফিহার ঘরে ফিহার খাবার টেবিলে রেখে বলে উঠে–
ফিহা তুমি খেয়ে নাও। তারপর ইরিনাদের বাসায় যেও
আমি একটু বাইরে যাচ্ছি। দরকারী কাজে।

ফিহাঃ ঠিক আছে মা!

।।।।

ফিহা ইরিনাদের বাড়িতে ঢুকে দেখে ইরিনার সব আত্বীয় চলে এসেছে। ইরিনার বাড়িতে এতো মানুষ দেখে ফিহার বেশ ভালোই লাগছে। কিন্তু সে কোথাও তার ইরিনা আপুকে দেখছে না কোথাও গেলো সে?

ফিহা ইরিনার ঘরের দিকে যায়। ঘরে ইরিনা ঘুমিয়ে আছে। তাই ফিহা ইরিনাকে ডিস্টার্ব না করে চলো যায়।

মিঃ রাইজাদার সাম্নের চেয়ারে খুব শান্ত ভাবে বসে আছে তার সামনে মিসেস ফাতেমা।

মিঃ রাইজাদার হাতে ফিহার সেই ব্রেসলেট।

মিঃ রাইজাদাঃ তোমার কি আর কিছু বলার আছে?
( শান্ত কন্ঠে)

ফাতেমা এক পলক মিঃ রাইজাদার দিকে তাঁকিয়ে বলে উঠলেন-

আমি আর কি বলবো আংকেল। আপনি তো ফিহার হাতে এই ব্রেসলেট দেখে সব কিছুই বুঝেই গেছেন।

মিঃ রাইজাদা উঠে দাঁড়িয়ে বলে উঠে–
হ্যা আমার বুঝতে বাকি নেই যে ফিহা আমার সেই ছোট্ট নাতনি। যার জন্য আমি বছরের পর বছর চোখের জল ফেলেছি
সে বেঁচে আছে এইটা জেনে যে আমি কত খুশি হয়েছি তা তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো নাহ ফাতেমা। কিন্তু ফিহার সত্য তুমি কেন আমাদের থেকে লুকিয়েছো?

মিসেস ফাতেমা চোখের জলটুকু মুছে বলে উঠে-
তার পিছনে একটা কারন আছে। কিন্তু আপনি দয়া করে কাউকে ফিহার আসল পরিচয় বলবেন নাহ। এমনকি ফারহাজকেও নাহ। আপনি তো জানেন ফিহার আসলে পরিচয় জানলে শ্রত্রুরা তাকে মেরে ফেলার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়বে।

মিঃ রাইজাদা অবাক হয়ে বলে উঠে–
ফারহাজ কে আমি বলবো নাহ?
কিন্তু কেন? ফারহাজকে জানানো খুবই জরুরী।কালকে যা হবে তা সত্যি অন্যায়। এই এন্গেজমেন্ট কিছুতেই হতে দেওয়া যাবেনা।

মিসেস ফাতেমাঃ আমার মনে হয় ফারহাজ কে জানালে এতে ক্ষতি ছাড়া কিছুই হবেনা। তাছাড়া ইরিনা আর ফারহাজ একে অপরকে ভালোবাসে।
শুধু শুধু মাঝখান দিয়ে ফিহার জীবনটা নস্ট হয়ে যাবে। ও তো এখনো ছোট।

মিঃ রাইজাদা কিছুক্ষন কথাগুলো ভাবলেন সত্যি ফিহার জীবন নস্ট করার কোনো মানেই হয়না।

(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)

কিন্তু মিঃ রাইজাদা গভীরভাবে ভাবতে থাকেন।
কালকে যদি কোনো চমৎকার হতো। আল্লাহ চাইলে সব কিছুই সম্ভব।

।।।।।।সকালে মির্জা বাড়িতে সব আত্বীয়- স্বজন চলে আসলো। মির্জা বাড়ির বড় ছেলের এন্গেজমেন্ট বলে কথা!

মিসেস প্রিয়া তার বান্ধুবিদের নিয়ে পার্লারে চলে গেছেন।

তানহা( ফারহাজ এর কাকি) ও ফারহাজ এর দাদি আত্বীয়-স্বজন দের সব সামলাচ্ছেন।

ফারহাজের কাকা- বাবা পার্টি সেন্টারে সব তদারকি করতে চলে গেছে

দাদুন নিজের ঘরে বসে আছেন। একবারের জন্যও বের হোন নি। সবাই জিজ্ঞাসা করলে অসুখের বাহানা দিয়ে কাটিয়ে দিয়েছেন।

ফারহাজ নীচে নেমে এসে দেখে সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত তা দেখে সে মুচকি হাঁসে। আজকের দিনটার জন্য সে কবে থেকে অপেক্ষা করছিলো। ফারহাজ নীচে নামার সাথে সাথেই নিলয়ের আম্মু ফারহাজ এর হাতে একটা কফি দিয়ে বলে উঠে–
এইযে তোর কফি!

ফারহাজঃ থ্যাংকু কাকি। আমার এই মুহুর্ত যা মাথা ধরেছিলো তোমাকে এক্সপ্লেন করতে পারবো নাহ।
সারাদিনের থানায় প্রচন্ড কাজের প্রেশার ছিলো।

তানহাঃ হুম তা তো থাকবেই। আচ্ছা ফারহাজ বাবা তোর মা পার্লারে যাওয়ার আগে বলে দিয়েছে। আজকে তুই থানায় যাবিনা।

ফারহাজ ঃ হ্যা আজকে আমি ছুটি নিয়েছি।

ইশিকা আপনমনে ফোন টিপে যাচ্ছে আর নিলয় তাকে বিভিন্ন ভাবে বুঝিয়ে যাচ্ছে।

নিলয়ঃ আপাই বাইরে চল নাহ। কত আয়োজন কত আত্বীয় এসেছে।

ইশিকা ঃ নিলয় তুই যা তো।

নিলয়ঃ আচ্ছা আপাই তুই আজকে সাঁজবি নাহ?তোকে সাঁজলে কত সুন্দর লাগে তুই জানিস?
আগে তো তুই সাঁজতে কত্ত ভালোবাসতিস।

ইশিকা তাচ্ছিল্যের হাঁসি দেয়।

—আগে তো কত কিছুই ভালো লাগতো।
এখন এইসব আমার কিচ্ছু ভালো নাহ।

ফারহাজ পিছন থেকে ইশিকার মাথায় টুকা মারে।

ইশিকা পিছনে তাঁকিয়ে বলে উঠে–
ভাইয়া তুই.?

ফারহাজঃ বুড়ি আজকে তুই সাঁজবি আমার জন্য তোর ভাইয়ের জন্য। তোর এই বদল আমরা মেনে নিতে পারছিনা রে।

ইশিকা চুপ হয়ে যায়।

ফারহাজ ঃ কিরে বুড়ি বল নাহ সাঁজবি তো আজকে।

ইশিকা কেনো যেনো তার বড় ভাইকে মানা করতে পারছে নাহ তাই মুখে হাঁসি ফুটিয়ে বলে উঠে-
হুম!

ফারহাজ ইশিকা নিলয় রুম থেকে বেড়িয়ে দেখে

সবার মুখ থমথমে।

ফারহাজ ঃ কি হয়েছি কি?

মিঃ রাইজাদা ঃ আজকে সকাল থেকে ইরিনা কে কোথাও পাওয়া যাচ্ছেনা ।

ফারহাজ ওয়াট বলে পিছিয়ে যায় তার মাথা কাজ করছে নাহ। ফারহাজ আর কিছু না ভেবে দৌড়ে গিয়ে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে। তার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে । কোথায় গেলো ইরি।

ইরিনার বাড়িতে,,,

ফিহা এক কোনায় বসে কাঁদছে। মিসেস রিহা একেবারেই ভেজ্ঞে পড়েছে। রিক একেবারেই দিশেহারা হয়ে গেছে।

মিঃ রাইজাদা, রাইহান রাহাত ও এসেছে।

ফারহাজ ফোন করে নিজের ফোর্স লাগিয়ে দিয়েছে তার ইরিকো খুঁজতো।

রাইজাদাঃ এইসব কীভাবে হলো?

ফিহা উঠে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো-

দাদুন সকালে আমাকে মামনি ইরি আপুকে ডাকতে পাঠায় আমি ইরি আপুর ঘরে গিয়ে দেখি ইরি আপু নেই। ( কাঁদতে কাঁদতে)

রিকঃ আমরা ইরিনার সব বন্ধু বান্ধুব এর কাছে ফোন করেছি সেখানেও নেই।

রিহা রিকের কাছে গিয়ে বলে উঠলো-
আচ্ছা আমার মেয়েটার কোনো ক্ষতি হয়ে গেলো নাহ তো।

রিকঃ এইসব কি বলছো?

রাহাত( ফারহাজ এর কাকাঃ) আচ্ছা ফারহাজ তো ফোর্স দের পাঠিয়েছে। আমার মনে হয় আমাদের একটু অপেক্ষা করা উচিৎ।


তখনি ফারহাজ প্রবেশ করে। ফিহা এক পলক ফারহাজ এর দিকে তাঁকায় তার লাটসাহেবের মুখটা কেমন যেনো ফ্যকাশে হয়ে গিয়েছে।

রিকঃ বাবা কোনো খবর পেলে?

ফারহাজ ঃ নাহ। কিন্তু পেয়ে যাবো। আমার কথা হয়েছে ফোর্সদের সাথে। কিচ্ছু হবে নাহ আমার ইরির
আমি এখুনি যাচ্ছি।

তখনি পিছন থেকে কেউ বলে উঠে–

ফারহাজ!

সবাই অবাক হয়ে পিছনে তাঁকায়। ইরিনা দাঁড়িয়ে আছে তাও বিয়ের কনে হয়ে।

ফারহাজের মুখে ফুটে উঠে হাঁসি। সে দৌড়ে গিয়ে ইরিনাকে জড়িয়ে বলে উঠে–

ইরিনা কোথায় ছিলে তুমি? তুমি জানো আমি কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম ।

সবাই বুঝতে পারছেনা। ইরিনা কেন বিয়ের বেনারসিতে।
ফারহাজ ইরিনাকে জড়িয়ে ধরলেও ইরিনা ফারহাজ কে জড়িয়ে ধরেনি ।

ফারহাজ ইরিনাকে ছেড়ে বলে উঠে-

কি হয়েছে ইরিনা আমাক বলো? তুমি কোথায় ছিলে আর তোমার পড়নে এই সাঁজ কেন?

ইরিনা চুপ হয়ে আছে।

তখনি লম্বা চওড়া সুদর্শন একজন ব্যক্তি প্রবেশ করে বলে উঠে–

সেই উত্তর টা না হয় আমি দিচ্ছি।

ফারহাজ ঃ মানে? আর কে আপনি?

ব্যক্তিটা ঠোট টা বাঁকা করে বলে উঠে-
সেইটা একটু পর জেনে যাবেন। কিন্তু মিঃ ফারহাজ আজকে থেকে ইরিনা আপনার ইরি নয় আজকে থেকে সে মিসেস আহান।

চলবে।

#পবিত্র_বন্ধনে_আবদ্ধ
#পর্ব -২৬ ( এ কেমন বন্ধন)
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
সবাই স্তব্ধ হয়ে আছে। পরিবেশ টাও কেমন থমথমে।ইরিনা বিয়ে করেছে তাও অজানা একটা ছেলেকে যাকে আজ পর্যন্ত কেউ দেখেনি। আহানের গাঁয়েও বিয়ের পোষাক। ফারহাজ এইবার আহানের কলার চেপে ধরে বলে উঠে– সাহস কী করে হয়?এইসব বলার? ইরি শুধু আমার। আজকে আমার আর ইরির এন্গেজমেন্ট আর আপনি কোথাকার না কোথাকার কে আমার ইরিকে নিজের স্ত্রী বলে দাবি করবেন আর আমি তা মেনে নেবো। আহান হাঁসতে হাঁসতে বলে উঠে– আমি মিথ্যে বলছি? ওকে ওয়েট এই বলে আহান নিজের পকেট থেকে একটা কাগজ ফারহাজ এর দিকে এগিয়ে দেয়। ফারহাজ আহান কে ছেড়ে কাঁপাকাঁপা হাতে কাগজ টা নেয়। ফারহাজ এক মুহুর্তের জন্য নিজের ভাষা হারিয়ে ফেলে। দাদুন এগিয়ে ফারহাজ এর হাত থেকে কাগজ টা নিয়ে পড়তে থাকেন।এইটা একটা রেজিস্ট্রি পেপার। স্পষ্ট দেওয়া আছে এখানে আহান ও ইরিনা আইনত ভাবে স্বামী- স্ত্রী।
ফারহাজ কিছুক্ষন চুপ থেকে ইরিনার দিকে শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে উঠে— ইরি আমার কাছে জানতে চাই। মিঃ আহান যা বলছে তা সত্যি না তাইনা? বলোনাহ ইরি সব মিথ্যে সব।

ইরিনার চোখ থেকে টুপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে।

আহান নিজের কলার ঠিক করতে করতে বলে উঠে-
মিঃ ফারহাজ একজন আইনের লোক হয়ে আপনি এই রেজিস্ট্রি পেপার দেখেও বুঝেন নাহ। ইরিনা আমার লিগালি ওয়াই। মিসেস আহান আহমেদ।

ফারহাজ চিৎকার করে বলে —
মানি না আমি এই বিয়ে। এই বিয়ের কোনো মুল্য নেই।

ফারহাজ এর চিৎকারে ফিহা কেঁপে উঠে।

ফিহা একবার আহানের দিকে তাঁকায়। সেদিনের লোকের সাথে কেমন যেনো একটা মিল আছে।
লোকটাকে ফিহার কাছে কেমন একটা আপন মনে হচ্ছে।

আহানঃ আপনি না মানলে আর কি করার আছে মিঃ ফারহাজ?
এইটাই সত্যি।

ফারহাজ ইরিনার কাছে ইরিনার হাত দুটো নিয়ে বলে উঠ—

ইরিনা এই ইরিনা কিছু তো বলো ( চিৎকার করে)

ইরিনা নিজের হাত দুটো ফারহাজ এর থেকে ছাড়িয়ে নেয়।

ইরিনাঃ ফারহাজ নিজেকে সংযত করো। আমার স্বামীর সামনে আমার হাত ধরার কোনো রাইট তোমার নেই।

ফারহাজ ইরিনার হাত ছেড়ে দেয়।

রিহা এইবার এগিয়ে বলে উঠে–
এইসব কি বলছিস ইরি?

কে উনি?। তুই বিয়ে করেছিস তার মানে কি?
ভুলে গিয়েছিস আজকে তোর এন্গেজমেন্ট । বাড়িতে আত্বীয়-স্বজন সবাই চলে এসেছে। আমরা মুখ দেখাতে পারবো নাহ

ইরিনাঃ আমি যখন ক্যানাডায় পড়তে যাই তখন সেখানে আহানের সাথে আমার পরিচয়। আমরা একসময় একে অপরকে ভালোবেসে ফেলি।
কিন্তু ফারহাজ এর সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়ায় আমি আর কাউকে আহানের কথা বলতে পারেনি। কিন্তু যখন দেখলাম আমি আহানকে ছাড়া থাকতে পারছিনা তখন আমি সিদ্বান্ত নিয়ে নিয়েছিলাম
আমি আমার ভালোবাসা আহানকেই বিয়ে করবো।

ইরিনা কথাটি বলার সাথে সাথেই মিঃ রিক সকলের সামনে ইরিনাকে ঠাসসস করে চর লাগিয়ে বসে।

ইরিনাঃ বাবা!

রিকঃআমার সব মান- সম্মান তুমি কিচ্ছু রাখলে নাহ।
সকলের সামনে আমাকে ছোট করলে।

ইরিনা নিজেকে সামলিয়ে বলে উঠে-
আমি আর কি করতাম আমি ভালোবাসি আহানকে

কথাটি বলতেই ফারহাজ কিছুটা জোড়ে হেঁসে ইরিনার দিকে তাঁকিয়ে বলে উঠে-

আজকে এই লোকটা তোমার ভালোবাসা হয়ে গেলো?বিদেশে গিয়ে তোমার ভালোবাসার রং বদলে গেলো। তাহলে আমার ভালোবাসা টা কি এন্সার মিঃ ইরিনা সরি মিসেস আহান আহমেদ

ফারহাজ কথাটি হেঁসে বললেও সেই কথাতে রয়েছে কে এক প্রকার বিষাদ। ফারহাজ প্রচন্ড পরিমানে রেগে আছে।

ইরিনা মাথা নিচু করে ফেললো।

রিকঃ সত্যি এই মেয়েকে আমরা এতোদিন বড় করেছে। যার মধ্যে একটুও লজ্জা নেই ছিহ।

মিসেস রিহাও কেঁদে দিলেন।

আহান ঃ এখন আর কি করার আছে। মেয়ে -জামাইকে মেনে নিন। শ্বশুড় জ্বী!

রিক ঃ মেনে নিবো? কখনোই নাহ আজ থেকে
আমি জানবো আমার কোনো মেয়ে নেই।

ইরিনা কান্নামাখা কন্ঠে বলে উঠে-
বাবা।

রিকঃ চলে যাও ( গম্ভির কন্ঠে)

আহান এক পলক ফিহাকে দেখে নেয়। সে অবাক চোখে আহানের দিকে তাঁকিয়ে আছে। বড্ড ইচ্ছে করছে বোনটার কাছে যেতে। কিন্তু সে নিরুপায়।

ফারহাজসহ সবাইকেই সে এক পলক দেখে নিলো। এই মির্জা প্রত্যেক মানুষকে সে ঘৃণা করে। এখন তো সবে শুরু আগে আগে আরো কত কিছু আহান করবে তার কোনো হিসাব নেই আপতত আহানের কাছে।
আহান ইরিনার উদ্দেশ্যে বলে-

আহানঃ চলো!

ইরিনা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে।

ফারহাজ এক পলক ইরিনাকে দেখে নিলো। কিন্তু আজ ইরিনা ফারহাজ এর চোখে চোখ রাখার সাহস পাচ্ছে নাহ।

এইবার রাইহান মিঃ রাইজাদার উদ্দেশ্যে বলে উঠে-
আর কতক্ষন এইসব নাটক সহ্য করতে হবে বাবা?
আমাদের মির্জা বাড়ির সব সম্মান শেষ হয়ে গেলো।

রাহাতঃ আজকে আমাদের বাড়িতে এতো বড় একটা অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিলো।
গেস্ট দের কি জবাব দিবো? সব বড় বড় নামি দামি মানুষেরা আজকের অনুষ্টানে আসবে।

(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)

রিক এইবার মিঃ রাইজাদার কাছে গিয়ে বলে উঠলো–
পারলে আমাকে ক্ষমা করবেন আংকেল! আমার মেয়ের জন্য আপনাদের যেই অসম্মান হবে কিংবা হলো তার জন্য সত্যি ক্ষমাপ্রার্থি!

ইরিনাঃ বাবা! ( অসহায় চোখে)

রিকঃ খবরদার আমায় বাবার বলার অধিকার তুমি হারিয়েছো।

মিঃ রাইজাদা এইবার মুখ খুললেন –
যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে। এখন একটাই পথ বাকি আছে এই অসম্মানের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার!

রাইহানঃ কি পথ বাবা?

মিঃ রাইজাদা মিসেস ফাতেমার কাছে গিয়ে বলে উঠলেন–
আজ এই মুহুর্তে আমার নাতির বিয়ে দিবো আমি ফিহার সাথে।
ফাতেমা আমি তোমার কাছে তোমার মেয়ের হাত চাইছি আমার নাতির জন্য দিবে আমায়?

মিঃ রাইজাদার এরুপ কথা শুনে সবাই চমকে উঠে।

রাইহানঃ এইসব কি বলছো কি বাবা?

রাইজাদাঃ এই মুহুর্তে নিজের সম্মান রক্ষা করতে
এই ছাড়া আমার কাছে কোনো পথ নেই। আমার মনে হয় ফিহা যথেষ্ট ভালো মেয়ে।

ফিহা ভাবছে এইসব কি হচ্ছে। তার বিয়ে? তাও লাটসাহেব এর সাথে। এ কি করে সম্ভব। নাহ নাহ সে বিয়ে করবে নাহ। তার ভালো বাবা তার মা তার মামনি কাউকে ছেড়ে সে যাবে নাহ। আচ্ছা লাটসাহেব তো তাকে নাহ ইরি আপুকে ভালোবাসে তাহলে সে কী করে তার লাটসাহেব কে বিয়ে করতে পারে। ফিহা এক পলক ফারহাজ এর দিকে তাঁকালো। এক কোনো অনুভুতি শুন্য হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ করেই রাগি মানুষটা কেমন যেনো শান্ত হয়ে গেলো।

রাহাতঃ কিন্তু বাবা এই বিয়ে কী করে সম্ভব? ফিহা যথেষ্ট ছোট। ফিহা ও ফারহাজ এর বয়সের তফাতও কম নাহ।

দাদুনঃ এইসব এক্সকিউজ আমাকে দিতে এসো নাহ। তোমার মা আর আমার বয়সের তফাৎ ১৬ বছরের। ফিহার আর ফারহাজের ১১ কিংবা ১২ বছরের তফাৎ হবে।

ফাতেমা কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো–

আমি রাজি! আংকেল আপনি যা চান তাই হবে।

রাইজাদা ঃ এইতো হয়েই গেলো রিক তুমি কি বলো?

রিক এইবার বলে উঠলো-
আপনি একজন বিচক্ষন ব্যাক্তি যা সিদ্বান্ত নিবেন তা নিশ্চই ভুল হবেনা। ফিহা আমার বড্ড আদরের।তার খেয়াল রাখবেন।

রাইহানঃ কিন্তু বাবা ফারহাজের কি রাজি এই বিয়েতে?

রাইহান বলার সাথে সাথে ফারহাজ শান্ত কন্ঠে বলে উঠে–।দাদুন যা সিদ্বান্ত নিয়েছে তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই।

ফারহাজের কথাতে ফিহা চমকে তাঁকায়।

ইরিনা ফারহাজ এর সামনে গিয়ে বলে উঠলো–
ফারহাজ তুমি ফিহাকে কীভাবে বিয়ে করতে পারো?

ফারহাজ এর সোজা উত্তর —
তুমি পারলে আমি কেনো পারবো নাহ?

ইরিনা আস্তে করে বলে উঠে–
তুমি যা করছো জেদের বশে করছো ফারহাজ। তুমি আমাকে দেখিয়ে দেওয়ার জন্য এই বিয়েটা করছো
এতে মাঝখান থেকে ফিহার জীবন টা নস্ট হয়ে যাবে।

ফারহাজ ইরিনার কথা না শুনে এগিয়ে বলে উঠে–
বিয়ের আয়োজন করুন!

রিক এইবার রিহা আর ফাতেমা কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো- ফিহাকে তাড়াতাড়ি রেডি করে আনো।

ফিহা কিছু বলবে তার আগেই মিসেস ফাতেমা বলে উঠে–
ফিহা উপরে চলো

এই বলে ফিহার হাত ধরে উপরে নিয়ে যায়।

আহানের হিসাবে এইবার সব এলোমেলো হয়ে যায়।
তার আদরের বোন কিনা অই মির্জা বাড়িতে বউ হয়ে যাবে যেই মির্জা বাড়ির সকলকে সে ঘৃনা করে।কিন্তু এখন তো কিছু করতেও পারবে নাহ আহান।
রাগে নিজের হাত দুটো মুষ্ঠিবদ্ব করে ফেললো। নিজের জন্য বোনের জীবনটা নস্ট হয়ে যাচ্ছে।

এদিকে,,
ফিহা বার বার তার মাকে বুঝানোর চেস্টা করছে

ফিহাঃ নাহ দেখো এই বিয়েটা করবো নাহ। তোমাকে
ছাড়া আমি কী করে থাকবো??

ফিহার মাঃ যা হচ্ছে তা ভালোর জন্যই হচ্ছে এখন শাড়িটা পড়ে নে আমি তোকে কোনোরকম সাঁজিয়ে দেয়।

ফিহা অবাক পানে তার মায়ের দিকে তাঁকায় তার মা কেমন যেনো পালটে গেলো।

তখনি রিহা এসে বলে উঠলো–

বাহ আমার ফিহা মাকে তো এই সামান্য শাড়ি গহনাতে কি মিস্টি লাগছে। চোখ যেনো জুড়িয়ে যায়।

ফিহা উঠে দাঁড়িয়ে রিহার কাছে গিয়ে বলে উঠে–
মামনি মাকে একটু বুঝাও নাহ। আমি এই বিয়ে করবো নাহ।

রিহা ফিহার চোখের জলটুকু মুছিয়ে বলে উঠে–
আমার কি করার আছে রে মা? তোর ইরিপু যা করেছে এখন তোর ভালো বাবার সম্মান টুকু রাখতে হলেও এই বিয়েটা করতে হবে। আমি জানি তুই আমাদের স্বার্থপর ভাবছিস কিন্তু এ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

ফিহা ফুপিয়ে কেঁদে উঠে।

ফিহাকে ফারহাজের পাশে বসানো হলো।

কাজি সাহেবও চলে এসেছে।

ফিহা নিজের পাশে ফারহাজ এর দিকে তাঁকায়।

একটা মেরুন কালারের শার্টেও কত সুন্দর লাগছে তার লাটসাহেবকে। কিন্তু লাটসাহেব একবারও ফিহার দিকে তাঁকায়নি তার দৃস্টি নীচে।

আহান ভালো করে ফিহাকে দেখে নিলো হাল্কা মেরুন কালারের শাড়ি হাল্কা গয়না কি অপুর্ব লাগছে। পুর্ন একজন নারী লাগছে ফিহাকে। আফসোস এই বিয়ে আজকে আটকাতে পারছে নাহ আহান।

ইরিনার বড্ড কস্ট হচ্ছে তার ভালোবাসার মানুষটি তারই চোখের সামনে অন্য কারো হয়ে যাচ্ছে।

তখনি কাজি সাহেব ফারহাজ কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠেন–
আপনি কি এই বিয়েতে রাজি? বলুন কবুল!

ফারহাজ কিছুক্ষন স্হীর থেকে ইরিনার চোখে গভীর দৃস্টি নিক্ষেপ করলো যেখান আছে শুধুই অভিমান রাগ আর ঘৃনা।

ফারহাজঃ কবুল কবুল কবুল।

ইরিনার বুকে যেনো বার বার কেউ ছুড়িঘাত করছে।
আপনমনে চোখে জল চলে আসে।

কাজি সাহেব এইবার ফিহাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো–বলো মা কবুল
ফিহা সকলের দিকে একবার তাঁকালো্। কথা থেকে কেনো যেনো কথা বের হচ্ছেনাহ। কান্না পাচ্ছে ভীষন

ফারহাজ এর তাঁকিয়ে বলে উঠলো–
কবুল।।
কবুল।
কবুল।

সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলল।

কাজি সাহেব ঃ এখন থেকে আপ্নারা বিয়ে নামক
#পবিত্র_বন্ধনে_আবদ্ধ হয়ে গেলেন


।চলবে