পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ পর্ব-২৯+৩০

0
5620

#পবিত্র_বন্ধনে_আবদ্ধ
#পর্ব -২৯
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ফারহাজ থানায় চলে আসে। আজকের রাত টা সে এখানেই কাটিয়ে দিবে। কিছু ডেটা কালেক্ট করতে হবে। কাজের মধ্যে থাকলেই ফারহাজ খুব সহজেই ইরিনাকে ভুলতে পারবে। ফারহাজ পকেটে হাত ঢুকিয়ে নিজের কেবিনে চলে যায়। কন্সটেবলরা এই সময় ফারহাজ কে দেখে কিছুটা অবাক হলেও কিছু বলেনা।
এদিকে,,
রাইজাদা মির্জা মিসেস ফাতেমার সাথে ফোনে কথা বলছে,,

রাইজাদাঃ আমি জানি! আজকে যা হয়েছে তা হয়তো ফিহার মনে কিছুটা প্রভাব ফেলবে। কিন্তু আমি জানি আমার নাতি এমন কোনো কাজ করবে নাহ যাতে ফিহার কোনো অসুবিধা হয়। কোনো প্রকার অসম্মান ফিহার সে করবে নাহ।

🌹🌹🌹🌹🌹🌹
ফাতেমাঃ ফারহাজ বাবার উপর আমার ভরসা আছে।
আল্লাহর ইচ্ছে ছাড়া গাছের একটা পাতাও নড়ে নাহ। সেখানে বিয়ে তো আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছে ছাড়া কোনোদিন ও হয়না। যে যার তকদিরে আছে সে শুধু তাকেই পাবে। একদিন না একদিন ফারহাজ ফিহার পরিচয় ঠিকই পাবে। তখন সব কিছুই ঠিক হয়ে যাবে।

রাইজাদাঃ হুম কয়েকটা বছর যাক! ফারহাজ ঠিক ফিহাকে মেনে নিবে। সময় হলে ফারহাজ নিজেই ফিহার আসল পরিচয় বের করতে পারবে।

সকালে,,,
ফিহ ঘুম থেকে উঠেই মনটা বড্ড খারাপ হয়ে যায়।নিজেকে ফারহাজ এর রুমে আবিষ্কার করে
প্রতিদিন নিজের মায়ের মুখখানা দেখে ঘুম থেকে উঠতো কিন্তু আজ! তখনি নীচ থেকে চিল্লাচিল্লির আওয়াজ শুরু হয়ে গেলো। ফিহার কোনোরকম হাই তুলে পামকিন কে রেখে নীচের দিকে এগোতে নিলো।
একজন ভদ্র মহিলা গাঁয়ে বেশ দামি শাড়ি মুখটাও বেশ রাগি রাগি।

সোফায় বসে এর ওর উপর চিল্লাপাল্লা করে যাচ্ছে।

মিসেস ইরা ( ফারহাজ এর দাদি) ঃ আচ্ছা রেনু আপা তুমি একটু শান্ত হও!

রেনুঃ শান্ত কী করে হবো ইরা?এমন একটা ঘটনা ঘটে গেলো আর তোমরা সবাই মেনে নিলে। আর আমাকেও কেউ কিচ্ছু বললে নাহ। আমাকে বড় বউমার ( ফারহাজ এর মা) থেকে সব জানতে হলো।
এমন একটা মেয়েকে এই বাড়ির বউ করে আনলে যার কোনো বংশ পরিচয় নেই। আমাদের হিরের টুকরো ছেলে ফারহাজ তার সাথে একজন আশ্রিতার মেয়ের বিয়ে আমি কিছুতেই মানতে পারছিনা।

ফারহাজ এর মাঃ আমরা কি আর ইচ্ছে করে মানতে চেয়েছি? বাবা যে এইভাবে সম্মান রক্ষা করার জন্যে
এই মেয়েকে বাড়ির বউ করে আনবে। তা আমরা কী করে জানবো!

ফারহাজের দাদিঃ রেনু আপা। এতো সব কিছু এতো তাড়াতাড়ি হয়ে গেলো যে বলতে পারেনি। একপ্রকার বলা হয়নি

রেনু বেগম রাইজাদা মির্জার একমাত্র বড় বোন।

গ্রামের বাড়িতেই তিনি থাকতে পছন্দ করেন।তার ছেলে-মেয়ে সবাই বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে।
ফারহাজ তার বড্ড আদরের নাতি।

🌹🌹🌹🌹🌹🌹

কথাগুলো শুনে অজান্তেই ফিহার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়লো। বিয়ের দ্বিতীয় দিন ই তাকে বলা হচ্ছে সে একজন আশ্রিতার মেয়ে যার কোনো বংশপরিচয় নেই। আচ্ছা এতে কি তার বিন্দুমাত্র দোষ আছে। ফিহা ফুপিয়ে কেঁদে উঠে। ফিহা দৌড়ে চলে যায় তার ঘরে। আজ এই বাড়ির লোকেরা তার জায়গা টা তাকে বুঝিয়ে দিলো।

মিঃ রাইজাদা এইসব শুনে ভিষন রেগে যান। তিনি কিছু বলবেন তার আগেই

তখনি কেউ বলে উঠে–

আমার বউ কেমন সেইটা না হয় আমার উপরেই ছেড়ে দাও দিদা! আমার বউ এর বংশপরিচয় নিয়ে কথা বলার রাইট আমি কাউকে দেইনি।

ফারহাজ এর কন্ঠস্বর শুনে সবাই পিছনে তাঁকায়।
ফারহাজ সবে থানা থেকে ফিরেছে। দরজা ঢুকার সাথে সাথেই এইরকম কথা শুনে সে আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারে নাহ।

🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
রেনুঃ বাহ ফারহাজ দাদাভাই এই বয়সে আমাকে এইটাও শুনার বাকি ছিলো? এখন তুমি আমাকে অধিকার শিখাবে? কালকে মাত্র তোমাদের বিয়ে হলো আর কালকেই অই দুইদিনের ছুকড়ি তোমাকে হাত করে ফেললো?

মিসেস প্রিয়া কিছুটা কান্নার সুরে বলে উঠে—
ওই মেয়েটা নিশ্চিত জাদু জানে।

ফারহাজ এইবার নিজের রাগ টুকু দমিয়ে বলে উঠে–
মা রেনুদিদা নাহয় সেকালের মানুষ কিন্তু তুমি তো শিক্ষিত। এইসব কি ভাষা? জাদু হাত করা। কেউ আমাকে নাহ হাত করেছে আর না কেউ আমাকে জাদু করেছে। নিজেদের মন-মানষিকতা একটু উন্নত করো। দেখবে এইসব বাজে চিন্তা আর আসবে নাহ

এই বলে ফারহাজ গটগট করে উপরে চলে যায়।

মিঃ রাইজাদা সব কিছু দেখে মুচকি হাঁসলেন। সত্যি তাকে আর ফিহার জন্য ফাইট করতে হবেনা। তার নাতি একাই যথষ্ট।

মিঃ রাইজাদা উপরে যাওয়ার আগে বলে উঠলেন–

ফিহার বংশপরিচয় তা সময় আসলেই আমরা জানতে পারবো কিন্তু সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ সে এখন মির্জা বাড়ির বউ! তাকে আমি এই বাড়ির বউ করে এনেছি। সুতরাং তার কোনো অসম্মান হোক তা আমি সহ্য করবো নাহ।

রেনু বেগম মুখটা কিছুটা রেগে সোফায় বসে বলে উঠে—
সত্যি বাপু! এক রাতেই এই ছেলে বউ পাগল হয়ে গেলো। বাকি জীবন তো পরেই রইলো।
আমাকে অপমান করতে ছাড়লো নাহ পর্যন্ত। আমার ভাইটাও আমাকে কথা শুনিয়ে গেলো

মিসেস প্রিয়া ঃ কি আর বলবো ফুপু! আমাকে এই ছেলে বলছে মন-মানষিকতা ঠিক করতে?
তাইতো আপনাকে ফোন করেছি এখন আপনিই সব ভরসা!

রেনুঃ দেখো নাহ কি করি আমি। আমাকে অপমান করা!

ইরা ( ফারহাজ এর দাদি)ঃ সেসব নাহয় পরে দেখা যাবে আগে পান টুকু মুখে দাও আর মাথা টা ঠান্ডা করো।

—পুচকি দেখি এখন আবার কাঁদেও! শুধু আমার সাথেই পারে ঝগড়া তিড়িং বিড়িং করতে। আর অন্যরা কেউ কিচ্ছু বললে কেঁদে সাগর ভাসিয়ে দেয়
(গম্ভির কন্ঠে)

ফারহাজ এর কথায় ফিহা বলে উঠে–

আমি মোটেও তিড়িং বিড়িং করি নাহ। ফিহা তো গুড গার্ল তাইনা?
আর আমি কই কাঁদছিলাম? আমি একটুও কাঁদছি নাহ।

ফারহাজ ফিহার দিকে এগিয়ে ধমকে বলে উঠে–
আবারোও কাঁদছো কেন??

ফারহাজ ধমকে ফিহা আবারোও কেঁদে দেয়।

ফারহাজ নিজের রাগ টাকে কনট্রল করে বলে উঠে–
ফিহা আমি তোমাকে কাঁদতে মানা করেছি আর তুমি আরো জোড়ে কেঁদে যাচ্ছো??

ফিহাঃ কাঁদবো নাহ তো কী করবো? আপনিই তো আমাকে শুধু বকা দেন। ধমক দেন
পচাঁ লাটসাহেব বর!

ফারহাজ ফিহার চোখের পানি মুছিয়ে বলে –
ডোন্ট ক্রাই! জাস্ট ডোন্ট।
একদম কাঁদবে নাহ।
এইসব তিড়িং বিড়িং না করে। প্রতিবাদ করতে শিখো। নিজের ঝগড়ার টেকনিক গুলো ইউজ করো। তুমি তো ঝগড়াই ভাড়ি এক্সপার্ট!

এই বলে ফারহাজ একটা টাওয়াল হাতে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় তখনি নয়না এসে বলে উঠে–

মিস্টি ভাবি কই আপ্নে?রেনু দিদা আফনারে ডাক পাড়ছে! হে নাকি আফনাকে দেখবার চায়।

ফিহা কিছুটা ভিতু স্বরে বলে উঠে–
অইযে অই ভয়ংকর দিদা টা? নাহ বাবা আমি যাবো নাহ আমি কোথাও যাবো নাহ।

তখনি দাদুন এসে বলে উঠে-
তুমি যাবে দিদিভাই!

ফিহাঃ কিন্তু দাদুন ( কিছুটা সংকচ নিয়ে)

দাদুনঃ নয়না তুমি যাও! ফিহা দিদিভাই আসছে।

নয়না মাথা নাড়িয়ে চলে যায়।

দাদুনঃ দিদিভাই! আমি কিন্তু জানি তুমি যথেষ্ট স্ট্রং একটা মেয়ে। এইভাবে হারলে কী চলে? যেখানে আমার এতো বদমেজাজী নাতিকে ঠিক করতে পেরেছো সেখানে এই বাড়ির লোক তো কিছুই নাহ! মনে রেখো দিদিভাই এইটা তোমার শ্বশুড় বাড়ি। এখানে তোমার অধিকার রয়েছে। নিজের অসম্মান হলে তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে শিখতে তোমাকে।

দাদুনের কথা শুনে ফিহার মনে পড়ে গেলো তার মায়ের কথা।

ফিহা নিজের ঘরে বসে কাঁদছে। একটু আগে ফারহাজ এর সাথে তার বিয়ে হয়েছে। সে কিছুতেই মানতে পার ছেনা তার মা এইরকম একটা সিদ্বান্ত নিয়েছে।

তখনি ফিহার মা ফিহার কাঁধে হাত রাখে। নিজের মাকে দেখে ফিহা মুখ ঘুড়িয়ে নেয়।

ফিহার মাঃ আমার উপর রাগ করেছিস? কিন্তু দেখবি তুই একদিন আমাকে এসে ধন্যবাদ জানাবি আমার এই সিদ্বান্তের জন্যে। আমি এইটাও জানি সেই দিন টা বেশি দূরে নাহ!

ফিহা চুপ!

🌹🌹🌹🌹🌹🌹

ফিহার মাঃ এইভাবে রাগ করে থাকিস না মা! আমি যে সহ্য করতে পারিনা। আমার মেয়েটা আমার উপর রেগে থাকলি! আর তুই কী ভাবছিস? আমার কস্ট হচ্চে না? আমার কলিজার টুকরো টা আজ শ্বশুড় বাড়ি চলে যাচ্ছে

ফিহা তার মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়। ফিহার মায়ের চোখেও জল তিনি পরম যত্নে ফিহার কপালে চুমু খেয়ে বলে উঠে–
শুন মা!
শ্বশুড় বাড়িতে যাচ্ছিস। মনে রাখবি এখন থেকে অই বাড়ি তোর। নিজের অধিকার টা ভুলে যাবিনা। সবাইকে আপন করে নিবি। মানুষের
বিয়ের মতো বিয়ে একবার ই হয়। বিয়ের মতো পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিস ফারহাজ এর সাথে। ফারহাজ এখন তোর বর। বুঝেছিস?

দাদুনের ডাকে ফিহা হুশে ফিরে…

দাদুনঃ দিদিভাই?

ফিহা এইবার চোখের জলটুকু সম্পুর্ন মুছে বলে উঠে–
আমি বুঝে গিয়েছি দাদুন! এখন সব কিছু আমার উপর ছেড়ে দাও! এখন থেকে দেখবা ফিহা থুড়ি ফিহা মির্জার নতুন রুপ!

।।।।।চলবে!
(পর্ব -২৮ এ একটা ভুল করি। সেইটা হলো গাজর গাছ থেকে পাড়ছে। আসলে এইটা আমি ইচ্ছেকৃত ভাবে লিখিনি। যখন পর্ব টা লিখছিলাম তখন আমাকে একেবারেই রোজায় ধরেছিলো এন্ড আমার সামনে আমাদের বাসার বজ্জাত খড়গোশটা গাজর খাচ্ছিলো তাই শশার জায়গায় গাজর লিখে আসছি সরি 🐸 তার মধ্যে রিচেক ও দেয়নাই)

#পবিত্র_বন্ধনে_আবদ্ধ
#পর্ব -৩০
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ফিহা গালে হাত দিয়ে পামকিন কে নিয়ে বসে আছে।
ফারহাজ ওয়াশরুম থেকে বেড়োনের সাথে সাথে ফিহা চিৎকার দিতে গিয়েও দিলো নাহ সে শুধু চোখ বন্ধ করে নিলো।কেননা ফারহাজ খালি গাঁয়ে। ফিহা আবারোও সে ভুল করতে চলেছিলো। কিন্তু এখন তো ফারহাজ তার বর। সে এক পলক ফারহাজ কে দেখে নেয়। ফর্সা শরীরে বিন্দু বিন্দু জল রয়েছে। ফিহার আজকেও বড্ড লজ্জা লজ্জা পাচ্ছে। ইচ্ছে করছে ছুটে রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে। আচ্ছা লাটসাহেব এইরকম কেন? নির্লজ্জ টাইপ। বুঝে নাহ? তার এইরকম রুপে ছোট্ট ফিহার বুক টা কেমন করে উঠে।
ফারহাজ ফিহাকে গুরুত্ব না দিয়ে আয়নায় সাম্নের গিয়ে চুল গুলো টাওয়াল দিয়ে ঝাড়তে থাকে। আজকে সে কিছুটা হ্যাপি । একটা বড় ক্লু সে পেয়েছে।

জেল নিয়ে চুল গুলো সেট করে বলে উঠে–
কি হলো? এইভাবে বসে আছো কেন?দেখছো নাহ আমি রেডি হচ্ছি? তাও এই রুমে থাকার মানে কি?

ফারহাজ এর প্রশ্নে ফিহা কিছুটা থতমত খেয়ে যায় সে কোনোরকম বলে উঠে–
আসলে আমিও চেঞ্জ করবো। কতক্ষন আর এই কালকের শাড়ি পড়ে থাকবো?

ফারহাজঃ তো? আমি কী তোমাকে ধরে রেখেছি? ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার নিয়ে চেঞ্জ করে আসো।

ফিহা নয়নার দেওয়া শাড়িটার দিকে একবার তাঁকায়
কাকিমনি পাঠিয়েছে আবার ফারহাজ এর দিকে তাঁকায়।

ফারহাজ তিক্ন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে উঠে–
কিহ? এখন বলো নাহ তুমি শাড়ি পড়তে পারো নাহ?

ফিহাঃ কী করে পারবো? আমি কি কখনো শাড়ি পড়েছি নাকি? কালকে মা পড়িয়ে দিয়েছিলো।

ফারহাজ একটা শার্ট বের করে পড়তে পড়তে বলে উঠে–
ওকে আমি মিলি বা নয়না কাউকে পাঠিয়ে দিচ্ছি
আপতত আজকের জন্য শাড়ি পড়ে নাও। আমি কালকে তোমাকে নিয়ে শপিং এ নিয়ে যাবো। সেখানে গিয়ে যেসব জামা পড়তে সেসব জামা ই পড়িও। শাড়ি-টারি পড়ার দরকার নেই।

এই বলে ফারহাজ বেড়িয়ে যায়।

তখনি মিলি এসে বলে উঠে–

মিস্টি ভাবি! আমাকে ডেকেছেন?

ফিহা পামকিন কে বেডে রেখে বলে উঠে–

আমাকে একটু শাড়ি পড়িয়ে দাও তো মিলি আপু! আমি তো পড়তে পারেনা!

মিলি হেঁসে বলে উঠে–
আইচ্ছা ভাবি! আপনি বরং গোসল টা কইরা আসেন তারপর আমি পড়াইয়া দেই।

ইরিনা বেডের এক কিনারে বসে আছে। সাম্নেই এক গাঁধা খাবার। কিন্তু সে কিছুতেই খাবে নাহ। খাবে নাহ মানে খাবে নাহ। আহান চোখ গুলো ছোট করে ইরিনার দিকে তাঁকিয়ে আছে।

আহানঃ খাচ্ছো না কেন?

ইরিনাঃ আমি খাবো নাহ! আমি এখান থেকে যান তো। ( বিরক্ত নিয়ে)

আহানঃ আমার বাড়ি আমার ঘর আর তুমি আমাকেই আমার ঘর থেকে থেকে বেড়োতে বলছো? চুপচাপ খেয়ে নাও বলছি। কী ভেবেছো? তুমি না খেয়ে অসুস্থ থাকবে আর আমি তোমার পাশে বসে সেবা করবো? এমন বর আমি নই
( ধমক দিয়ে)

ইরিনাঃ আপনার মতো লোকের কাছে সেবা পাওয়ার আশা করবো আমি? যে লোক নিজের স্বার্থের জন্য সবার জীবন নস্ট করতে দুইবার ভাবে নাহ।

আহান এইবার উঠে দাঁড়িয়ে খাবারের প্লেট টা হাতে নিয়ে ইরিনাকে কিছু বলতে না দিয়ে ইরিনার মুখে খাবার পুড়ে দেয়।

(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)

ইরিনা কেঁশে উঠে।

আহান প্লেট টা রেখে গ্লাস ইরিনার দিকে এগিয়ে বলে উঠে–
আমি বাইরে যাচ্ছি এসে যেনো সব কিছু ফিনিশ চাই!

এই বলে আহান নিজের গাড়ির চাবি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে।

আহান গাড়িতে উঠার সাথে সাথে কেউ তাকে ফোন করে।

আহানঃ হ্যা বলো?

—স্যার ফারহাজ মির্জা আমাদের বিরুদ্বে অনেক ইনফরমেশন কালেক্ট করছে। হয়তো আমাদের ফিফথ ডেরার খবরও পেয়ে গেছে। কালকে রাতেও থানায় এসেছিলো।

আহান কিছুটা চিন্তিত হয়ে বলে উঠে-
ওকে। তুমি রাখো এন্ড

ফারহাজ মির্জাকে সবসময় ফলো করবে। ও মোটেও সুবিধার নাহ।

—ওকে স্যার।

আহান ফোনটা রেখে ড্রাইভিং করা শুরু করে। সব কিছুই উল্টো হচ্ছে। ফারহাজের তো ইরিনার শোকে ঘরে ঘাপটি মেরে থাকার কথা। ফারহাজ মির্জা সত্যি প্রশংসার যোগ্য।

আহান ঠোটের হাঁসিটা বাঁকা করে বলে উঠে–
গেম টা ইন্টারেস্টিং হচ্ছে। আমিও দেখতে চাই। ফারহাজ মির্জা কতদূর যেতে পারে।

আহান বের হওয়ার সাথে সাথে ইরিনা খাবারগুলো রেখে দেয়।এই লোকটা চায় কী? বড্ড অদ্ভুদ প্রকৃতির লোক। আচ্ছা উনি কোথায় গেলো? ফারহাজ এর ক্ষতি করতে। ইরিনা উঠে নিজের ফোন টা খুঁজতে থাকে। কিন্তু কোথাও পাচ্ছে নাহ।
তখনি একটা ছোট্ট চিরকুট সে পেলো। সেখান লেখা আছে। —
আগেই বলে রাখি চালাকি করতে এসো নাহ। খাবার টা ভালো মানুষের মতো খেয়ে ওষুধ টা খেয়ে নাও। না খেয়ে থাকলে তুমি অসুস্হ হয়ে যাবে। ক্ষিদে তো সহ্য করতে পারো নাহ্।

ইরিনাঃ এই লোকটা কী করে জানলো? না খেয়ে থাকলে আমি অসুস্হ হয়ে যাই। ক্ষিদে সহ্য করতে পারিনা।

রেনু বেগম পান টা মুখে তুলে বলে উঠে-
কি বউ করে এনেছো? হ্যা? এতে দেমাগ সেই কখন ডেকে পাঠানো হয়েছে আর এখনো তার দেখে নেই।
হায় আল্লাহ। রক্ষে করো।

তখনি তানহা বলে উঠে–

আসলে ফিহাকে আমি শাড়ি পাঠিয়েছি। বোধহয় রেডি হচ্ছে ।

মিসেস প্রিয়াঃ তুই আবার অন্তত অই মেয়ে হয়ে সাফাই দিস নাহ।

তখনি কেই বিরক্ত সুরে বলে উঠে–

আচ্ছা এই বাড়ির সবাই এতো চিল্লাপাল্লা করেন কেন? এতে পরিবেশ এর কতোটা ক্ষতি হয় জানেন?

সবাই উপরে তাঁকিয়ে দেখে। ফিহা তার পামকিন কে নিয়ে নীচে নামছে। চোখ-মুখে বড্ড বিরক্তির ছাপ।

ইরাঃ মানে?

ফিহাঃ মানেটা হলো এতে শব্দ দুষণ হয়। কেন পড়েন নি?

রেনু ঃ এই মেয়ে আমাদের ফারহাজ এর বউ? এই পুচকি মেয়ে আমার নাতিকে জাদু করেছে?

ফিহা এইবার দৌড়ে নীচে নেমে বলে উঠে–
আমি জাদু পারি? ওয়াও আর আমি এতোদিন জানতাম নাহ।

এই বলে ফিহা খুশিতে লাফাতে লাফাতে থাকে।

ইরাঃ ( ফারহাজ এর দাদি) এই মেয়ে এই এইসব কি করছো? বড়দের সামনে কেউ নাঁচে?

মিসেস৷ প্রিয়াঃ কাকে কি বলছেন মা? এই মেয়ে বড্ড অসভ্য।

ফিহা জোড়ে জোড়ে চিৎকার করে কেঁদে দেয়।

ফিহার চিৎকারে সবার কানে হাত।

রেনুঃ এই মেয়ে এই থামো!

ফিহা ঃ আমাকে আজ পর্যন্ত কেউ অসভ্য বলেনি আর আমার মাদার ইন লো ( শ্বাশুড়ি)
আমাকে আজকে অসভ্য বললো? আমি কী করছি?
কত কস্ট করে শাড়ি পড়লাম তাও অসভ্য বলে
😭

ইরাঃ আরে বইন থাম! আচ্ছা আচ্ছা তুমি নাঁচো কিন্তু৷ থামো এতো জোড়ে চিৎকার করে কাঁদলে মানুষ ভাব্বে আমরা তোমাকে অত্যাচার করছি।

ফিহার চিৎকারে নিলয়ও নীচে চলে আসে।

ফিহা এইবার সোফায় উঠে বলে উঠে–

নাহ নাহ দিদুন ফিহুকে অপমান? আমি কিছুতেই মানবো নাহ। এইবার আমি সত্যিকারের নাঁচবো। তায়াও আবার সোফায়।

ফিহার কান্ডে সবাই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়।

রেনু ঃ এই মেয়ে এই তোমার কি মাথা ঠিক আছে? নামো বলছি। বেশি বাড়াবাড়ি করলে বাড়ি থেকে বের করে দিবো।

ফিহাঃ ভয়ংকরী স্টার জলসার দিদা আমাকে বাড়ি থেকে বের করবে তুমি? হুহ এইটা আমার শ্বশুড় বাড়ি আমার বরের বাড়ি আর আমাকেই বের করে দিতে চাও? আমিও দেখবো কী করে পারো হুহ।

রেনুঃ এই মেয়ের সাহস দেখলে আমি অবাক হয়ে যাই? আমাকে ভয়ংকরী স্টার জলসার দিদা বলা।

ফিহার কথা শুনে তানহা ( ফারহাজ এর কাকি) হেঁসে দেয়।

সবাই তার দিকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাঁকায়।

তানহাঃ আসলে হাঁসি কন্ট্রোল করতে পারি না তো সরি 😅

ফারহাজ এর মাঃ ফারহাজ কোথায়? দেখে যাক তার এই বউয়ের কান্ড কলাপ।

ফিহাঃ আমার লাটসাহেব বর অনেক ভালো মাদার ইন লো আমাকে আগে থেকেই পারমিশন দিয়ে দিয়েছে ঝগড়া করার হি হি হি ( বিড় বিড় করে)

নিলয়ঃ লিটেল প্রিন্সেস এইসব কী করছো?
নামো প্লিয?

ফিহাঃ কল মি ভাবি ওকে দেবরজ্বী?

নিলয়ঃ দেবরজ্বী( ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে)

ফিহা ঃ এইবার একটা ভালো দেখে গান ছাড়ো তো আমি আর আমার পামকিন নাঁচবো। দেবরজ্বী গান ছাড়ো তো
তাইনা পামকিন

পামকিনও নিজের কান দুটো নাড়ায়।

মিসেস প্রিয়াঃ এই মেয়ে তুমি কী এখন সত্যি নাঁচবে?

ফিহাঃ সংদেহ আছে? আমাকে যদি নাঁচতে না দেন আমি এতো জোড়ে কাঁদবো আর সবাইকে বলবো
আমাকে আপ্নারা বধু নির্যানত করেছেন।

ইরাঃ এইসব বুদ্বি কই পাও? নাত বউ?

ফিহাঃ আমি সেই ছোট বেলা থেকেই বুদ্ধিমান 😎
ফারহাজ এর দাদির মাথায় হাত।

ফিহাঃ আর এই দেবরজ্বী গান ছাড়ো। আমার পছন্দের গান ছাড়বা অকে? আর তুমি নিজেও নাঁচবা

নিলয়ঃ অ্যা?

ফিহাঃ অ্যা নয় হ্যা। তাড়াতাড়ি করো।
( রেগে)

এই বলে ফিহা কোমড়ে শাড়ি গুজে নেয়।

নিলয় কোনোরকম মাথা নাড়ায়।

মিউজিক বক্সে বেজে উঠে–
বাবা তোমার দরবারে সব পাগলের মেলা ,,,,,,,
🐸 ( ফিহার ফেভারিট গান)

রেনু বেগমের এইসব কান্ড দেখে মাথা চক্কর দিয়ে উঠে।
চলবে??
(কেমন হয়েছে জানাবেন কিন্তু)