#পবিত্র_বন্ধনে_আবদ্ধ
#পর্ব -৩১
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ফিহা সোফায় শাড়ি গুজে উড়াধুরা তার পামকিন এর সাথে নেঁচে যাচ্ছে। ফারহাজ নিজের ঘরে বসে কিছু ফাইল দেখছিলো। এইরকম গান শুনে সে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়। নিলয় বেঁচারাও বাধ্য হয়ে ফিহার সাথে তাল মিলিয়ে যাচ্ছে। ফারহাজ বাবাও কাকা নীচে নেমে জাস্ট থ হয়ে যায়। মিসেস ইরা রেনু বেগম এবং মিসেস প্রিয়া মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে সোফায়।
উপর থেকে ফারহাজ এর দাদুন সব কিছু দেখে বেশ মজা নিচ্ছেন। ফারহাজ নিজের ঘর থেকে বেড়িয়ে এসে বলে উঠে– এইসব হচ্ছে টা কী দাদুন?
দাদুনঃ নাতি এতো কিছু ভাবতে যেয়ো নাহ। যা হচ্ছে হতে দাও।
তিনি আর কিছু না বলে নিজের ঘরে চুপচাপ চলে যায়। ফারহাজ কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো নাহ তার আগেই তার ফোনে কল চলে আসে। রুপ ফোন করেছে। সে কিছু না ভেবে ফোনটা রিসিভ করে নিজের ঘরে চলে যায়।
তানহা নিজের হাঁসি থামাতেই পারছে নাহ। মিঃ রাইহান( ফারহাজ এর বাবা) এইবার কিছুটা ধমকের সুরে বলে উঠলো–
কি হচ্ছে কি এইখানে?
ফারহাজের বাবার ধমকে ফিহা থেমে যায়।
রাহাত( ফারহাজ এর কাকা) ঃ এইটা কি বাড়ি নাকি অন্যকিছু? সকাল সকাল এতো জোড়ে কেও গান বাজায়।
মিসেস প্রিয়াঃ কেন তোমরা দেখতে পারছো নাহ। বাড়ির নতুন বউ বাড়ির বড়দের সামনে ঢেং ঢেং করে নেঁচে যাচ্ছে।
রাইহানঃ মানে কি এইসব এর? এই বাড়ির দেখি আর সম্মান থাকলো নাহ।
রেনুঃ আমি আর এই বাড়িতে থাকছি নাহ। আমি আজকেই গ্রামে চলে যাবো।
তখনি রাহাত বলে উঠে-
এইসব কি বলছো ফুপু? তুমি এতোদিন পরে আমাদের বাড়িতে এসেছো কেন চলে যাবে.?
রেনুঃ তাহলে কী করবো তুই ই বল? এইসব কান্ড দেখবো? কি অসভ্য বউ রে বাবা
ফিহা ঃ অ্যা? আমাকে আবার অসভয় বলা।
কান্না করতে গেলে মিসেস ইরা তড়িঘড়ি করে ফিহাকে থামিয়ে বলে উঠে—
বাপুরে থাম! বইন। এই তোমরা সবাই আপদত চুপ করো। নাহলে এই মেয়ে কেঁদে পুরো পাড়া জড়ো করবে।
ফিহাঃ দিদুন? তুমি কী বললে আমি পুরো পাড়া জড়ো করি? কিন্তু যখন এই স্টার জলসার ভয়ংকর দিদা এতো চিল্লাপাল্লা করে শব্দ দুষণ করছিলো তার বেলায় কিচ্ছু নাহ? বাহ ভাই বাহ। যত দোষ নন্দঘোষ।
নিলয়ঃ লিটেল প্রিন্সেস থুড়ি ভাবি এইসব ডায়লগ কোথা থেকে পাও বলো তো?
ফিহাঃ আসলে আমার মামনি আছে না? প্রচন্ড সিরিয়াল দেখতে ভালোবাসে বিশেষ করে ভারতের সিরিয়াল। অইখান থেকেই শুনেছি। আচ্ছা দেবরজ্বী তোমরা কেউ দেখো নাহ???
নিলয়ঃ নাহ আসলে আমি সারাদিন ভিডিও গেম ই দেখি। কিন্তু তুমি কোন সিরিয়াল এর কথা বলছো?
ফিহাঃ অইযে কুটনিদের সিরিয়াল স্টার জলসায় দেখানো হয়। অইসব সিরিয়াল দেখলে প্রচন্ড কুটনামি শিখা যায়।
তখনি তানহা বলে উঠে–
আমি দেখি তো। কিন্তু ভাবির থেকে( ফারহাজ এর মা) কুটনি আমি কোনোদিন হতেই পারলাম নাহ।
(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)
মিসেস প্রিয়াঃ ছোট তুই আমার কুটনি বললি? এতো বড় সাহস? মা দেখুন আপনার ছোট বউমার কান্ড।
ফারহাজ বাবা তুমিও দেখো।
সিরিয়াল এর এইসব চর্চা শুনে রেনু বেগম এক পলক ইরাকে দেখে নেয়।
রেনুঃ এইটা কি সেই মির্জা বাড়ি? যেখানে সারাদিন গম্ভীরতা বহাল থাকতো? যা অবস্হা দেখছি এইটা মির্জা বাড়ি নাহ ঝগড়া বাড়ি লাগছে।
মিসেস ইরা পান টা মুখে দিয়ে বলে উঠে–
সবই নাত বউয়ের কারিস্মা।
মিঃ রাহাত (ফারহাজ এর কাকা)
মিঃ রাইহান এর কাঁধে হাত রেখে বলে উঠে–
ভাই যা দেখছি এই ঝগড়া থামার নয়?চলো অফিসে যাই। সেখান গিয়েই নাস্তা করেনি।
রাইহানঃ হুম তাই ভালো।
এই বলে রাইহান আর রাহাত চলে যায়।
তানহা আর মিসেস প্রিয়া একে অপরের সাথে ঝগড়া করে যাচ্ছে।
ফিহা পামকিন কে নিয়ে বসে ফ্রিতে বিনোদন নিচ্ছে।
ছোট বেলা থেকেই তার ঝগড়া দেখতে বেশ ভালো লাগে।
নিলয় বেঁচারা আর না পেরে নিজের ঘরে চলে যায়।
রেনু বেগম সব কিছুর মধ্যে একটা জিনিস বেশ খেয়াল করেন। ফিহার সব কর্মকান্ড কার সাথে যেনো বেশ মিল আছে।
মিসেস ইরা আর না পেরে বলে উঠলেন—
সবাই চুপ। আর কোনো ঝগড়া নাহ। কি শুরু করেছো কী তোমরা? বড় বৌমা তুমি নিজের ঘরে যাও আর ছোট বউমা নিজের কাজে যাও।
মিসেস প্রিয়া ও তানহা চুপ হয়ে যায়।
মিসেস ইরা ফিহার দিকে তাঁকিয়ে বলে উঠে-
তুমি আপাতত নিজের ঘরে যাও দয়া করে দেখো ফারহাজ দাদাভাই এর কিছু লাগবে কিনা।
ফিহা আর কিছু না বলে চুপচাপ
পামকিন কে নিয়ে চলে যায়।
ফ্রিতে বেশ ভালোই বিনোদন নিয়েছে আজ । আপতত তার লাটসাহেব বরটা কী করছে সেইটাই দেখার পালা।
ফিহার ছুটাছুটি করে রুমে ঢুকতে গিয়ে পড়তে গিয়েও পড়লো নাহ। কেননা ফারহাজ তাকে ধরে ফেলেছে।
ফিহা একেবারে ফারহাজ এর বুকে লেপ্টে আছে।
ফারহাজ এর বুক টা কেমন করে উঠলো। মেয়েটা তার কাছে আসলে সে যেনো নিজেকে নিয়ন্রন করতে পারে নাহ। সব কিছু উল্টোপালটা হয়ে যায়। এ কেমন অনুভুতি। আরে ফারহাজ এইসব কি ভাবছিস তুই। ফিহা একটা পুচকি মেয়ে। ওকে নিয়ে এইসব ভাবনা তোকে মানায় নাহ।
নিজেকে নিজেই বকা দেয় ফারহাজ। নিজেকে সামলে নিয়ে
ফারহাজ ধমকে বলে উঠে-
আচ্ছা পুচকি তুমি কি একটু শান্ত থাকতে পারো নাহ?এখুনি তো পরে যেতে নাকি?এই মেয়ে যে কবে বড় হবে। হু নউস?
ফিহা সেসবে কোনো খেয়াল নেই সে তো তার লাটসাহেব কে দেখতে ব্যস্ত। নেবি ব্লু ব্লেজার সাথে সাদা শার্ট চুল গুলো সেট করে। একেবারে যেনো সাহেব। নাহ নাহ লাটসাহেব ফিহার লাটসাহেব।
ফারহাজ এইভাবে ফিহাকে তাঁকিয়ে থাকতে দেখে —
কি হয়েছে তোমার এইভাবে তাঁকিয়ে আছো কেন?
মেজাজ টা বিগড়ে যায় ফিহার। কেমন একটা নিরামিষ বর। ফিহারই তো বর আর সে তাঁকাতে পারবে নাহ কেমন কথা। ফিহার এখন খুব করে বলতে ইচ্ছে করছে–
আমার বর আমি দেখবো তাতে কার কি?
আমার বরটা এতো সুন্দর যে তাকে সারাদিন শুধুই দেখতে ইচ্ছে করে।
কিন্তু মনের কথা মনেই রয়ে গেলো কিছু বলতে পারলো নাহ। ফারহাজও কিছু না বলে ওয়ালেট টা নিয়ে চুপচাপ বেড়িয়ে পড়ে।
ইরিনা কোনোরকম ফ্রেশ হয়ে খাবার টা খেয়ে নেয়।
কি আর করার বজ্জাত লোকটা যখন বলে দিয়েছে খেতে তো হবেই। ইরিনা রুম থেকে বেড়িয়ে পড়ে। ডুপ্লেক্স একটা বাড়ি। বাড়িতে কেউ তেমন একটা থাকে নাহ।
বাড়িটা দেখেই বুঝা যাচ্ছে শহর থেকে কিছুটা দূরে। গ্রাম্য এলাকায়।
হঠাৎ ইরিনার চোখ যায়। একটা ছোট্ট ফ্রেমে একটা ছোট ছেলে ১১ বা ১২ বছরের হবে তার কোলে ছোট একটি বাচ্ছা মেয়ে। ছেলেটাকে দেখে কেমন যেনো চিনা চিনা লাগছে ইরিনার।
এদের কোথায় যেনো দেখেছে সে ইরিনা হাত বাড়াতে যাবে ফ্রেমটার দিকে। তখনি কেউ কেড়ে নেয় ফ্রেমটা। ইরিনা তাঁকিয়ে দেখে আহান।
আহানঃ এখানে কি করছো?
ইরিনাঃ আপনি ফ্রেমটা কেড়ে নিলেন কেন?
দিন বলছি আমি দেখবো।
আহান কোনোরকম কথা কাটানোর জন্য বলে উঠে—
এই ফ্রেম দিয়ে তুমি কী করবে? কি অধিকার আছে তোমার হ্যা?
ইরিনা এইবার কিছুটা জোড় গলায় বলে উঠে–
আমি আপনার স্ত্রী তা কি আপনি ভুলে যান?
আহান কিছুটা বাঁকা চোখে ইরিনার দিকে তাঁকিয়ে বলে উঠলো-
তুমি আমাকে নিজের স্ত্রী বলে দাবি করছো? তার মানে আমাকে নিজের স্বামী ভাবো রাইট?
আহানের কথায় চমকে উঠে ইরিনা।
এদিকে,,
একটা মধ্য বয়স্ক লোক সিড়ি দিয়ে নামার সাথে সাথে একজন গার্ড এসে বলে উঠে—
স্যার আহান স্যার এর ফোন এসেছিলো তার আপনার সাথে জরুরী কথা আছে।
।।।।।।।।চলবে!
#পবিত্র_বন্ধনে_আবদ্ধ
#পর্ব -৩২+৩৩
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ফিহা পা টিপে টিপে ইশিকার ঘরে প্রবেশ করে। মহারানী এখন ঘুমে। ফিহা পামকিনকে ফিসফিস করে বলে- চিনতে পেরেছিস? পারবি কী করে? একে তো বাড়িতে দেখাই যায়না। দুপুর ২টা বাজে এখনো অবধি ঘুমাচ্ছে। একেবারে আমাদের মটু স্যার এর মতো। দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা। এই বলে ফিহা ইশিকার কাছে গিয়ে জোড়ে একটা চিল্লানি মারে। ঘুমের মধ্যে এমন হওয়ায় ইশিকা ধরফরিয়ে উঠে পড়ে। ইশিকা ফিহাকে দেখে কিছুটা রাগান্বিত সুরে বলে উঠে-
তুমি? এই কাজ টা তোমার রাইট?
হাও ডেয়ার ইউ? আমাকে এইভাবে ডেকে তুলার রাইট তোমাকে কে দিয়ে? । কে তুমি হ্যা কে?
ফিহা মাথাটা চলকে বলে উঠে—
!ভুলে গেলে? তোমার ভাইয়ের সাথে আমার বিয়ে হয়েছে।
ওহ ভুলতেই পারো তুমি তো আবার অমাবস্যা চাঁদের মতো যাকে খুব কমই দেখা যায়। তো ভুলে গেলে মনে করিয়ে দেই আমি তোমার অন-এন্ড অনলি বড় ভাবি।
তোমাকে ডেকে তুলার রাইটা আমার সম্পুর্ন আছে।
ইশিকাঃ ভাবি? ভাবি মাই ফুট। জাস্ট গেট লস্ট মাই রুম। আমার ঘুমের বারোটা বাজিয়ে দিলে জানো ভোর ৬টায় আমি ঘুমিয়েছি। ভালো করে ঘুম টাও হলো নাহ।
ফিহা এইবার তেড়ে এসে বলে উঠলো—
তোমার সাহস এর যথেষ্ট তারিফ করতে হয় তো ননদজ্বী! তুমি মিসেস ফারহাজ মির্জাকে বেড়িয়ে যেতে বলো? হুহ । এখুনি যাও ফ্রেশ হয়ে খেতে বসবে চলো।
ইশিকাঃ আমি যাবো নাহ। এখন কি তোমার মতো পুচকির কথা শুনে আমাকে চলতে হবে নাকি?
তখনি দাদুন এসে বলে উঠে–
হ্যা ফিহার কথা শুনেই তোমাকে চলতে হবে।
দাদুন কে দেখে ইশিকা থেমে যায়।
দাদুন আবারোও বলে উঠে—
ফিহা হয়তো তোমার থেকে বয়সে ছোট কিন্তু সম্পর্কে তোমার থেকে যথেষ্ট বড়। সুতরাং ভাবিকে সম্মান দিতে শিখো।
ফিহাঃ হুম দাদুন দেখুন নাহ ননদজ্বীকে বলছি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে খেতে আর উল্টো আমাকেই ধমাকয় হুহ 😒। যাও যাও তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসো।
ইশিকার ইচ্ছে করছে ফিহা একটা রাম ধমক দিতে কিন্তু দাদুন থাকা বিধায় সে চুপচাপ উঠে পড়ে। কিন্তু এই পুচকিকে দেখে নিবে সে।
ইশিকা চলে যেতেই ফিহা আর দাদুন একে অপরের হাতের সাথে তালি দেয়।
দাদুনঃ সত্যি আমার এই ফিহা দিদিভাই পারবে সকলকে টাইট করতে।
ফিহাঃ হুম দাদুন আর এই মিশনের নাম হচ্ছে
টাইটিং মিশন। আর আমার মিশনের পার্টনার হবে তুমি দাদুন।
দাদুনঃ আমি পার্টনার? তার মানে তো আমি ধন্য হয়ে গেলাম দিদিভাই।
ফারহাজ থানায় ঢুকতেই একটা জিনিস বেশ লক্ষ করলো সকলেই তাকে কেমন করে যেনো দেখছে।
ফারহাজ এর বুঝতে অসুবিধা হয়না যে সকলেই তার বিয়ের খবরটা জানে। এতে আশ্চর্য হওয়ার কোনো কারনেই নেই। খবর বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত সময়ে। মির্জা বাড়ির খবর তো আরো দ্রুততয় সময়ে ছড়িয়ে পড়ে।
ফারহাজ বিষয়টা নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে কেবিনে বসে পড়ে।
তখনি রুম ঢুকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ফারহাজ তাকে থামিয়ে বলে উঠে—
আমার বিয়ে নিয়ে যদি কোনো কথা থাকে তাহলে তুমি যেতো পারো। পার্সোনাল লাইফ আর প্রফেসোনাল লাইফ আমি মাঝখানে আমি আনতে পছন্দ করিনা তা তুমি জানো!
রুপ বলে উঠে–
ওকে স্যার! অই ব্যাপারটা আমি স্কিপ করে যাচ্ছি।
কিন্তু স্যার আপনি যে বললেন যারা বা যে খুন করে যাচ্ছে তারা নিশ্চই বড় কোনো গ্যাং। তাদের ড্যারার ঠিকানা টা কি আপনি পেয়েছেন? মানে তাহলে তো আমরা অনায়েসেই তাদের বের করতে পারবো।
ফারহাজঃ প্রথমত তাদের খুন গুলো করার পিছনে যে কারন সমুহ রয়েছে তার মধ্যে একটি হলো বিসনেজ।
রুপঃ কিন্তু কীভাবে স্যার?
ফারহাজঃ অবশ্যই খুনী একজন বিসনেস ম্যান। তাই সে বেছে বেছে বিসনেজ ম্যান দের ই টার্গেট করছে।
আর মেইন পয়েন্ট আমি যতটুকু ইনফোরমেশন কালেক্ট করলাম বডিগুলোতে যে বিষ পাওয়া গেছে তা আমাদের দেশীয় প্রডাক্ট হতেই পারে নাহ। বিষ গুলো বিদেশের ইন্ড্রাস্টিতে বানানো হয়।কিন্তু গোপন ভাবে। আর আমাদের দেশেও তৈরি করা হচ্ছে বলতে গেলে আমাদের শহরের আশেপাশে। আর যারা খুন গুলো করছে তারাই তৈরি করছে।
রুপঃ কিন্তু কোথায় তৈরি করা হচ্ছে?
ফারহাজ ঃ সেইটা জানলে তো এখুনি ফোর্স নিয়ে হামলা করতে যেতাম। কিন্তু আন্দাজ করতে পারছি এখন শুধুই সুযোগের অপেক্ষা।
শেষের কথাটা ফারহাজ বিড়বিড় করে বলাতে রুপ শুনেনি।
রুপঃ স্যার কিছু বললেন?
ফারহাজঃ নাহ আপদত তুমি বাকি বডিগুলোর ময়নাতদন্তের রিপোর্ট চেক করো।
রুপঃ অকে।
রুপ আর কিছু না বলে বেড়িয়ে যায়।
এদিকে ফারহাজ ভাবতে থাকে যে করেই হোক। এই কেসের সুরাহা করতে হবে। প্রচন্ড প্রেশার আসছে। খুনিকে আর বাইরে থাকতে দেওয়া যাবে নাহ।
তখনি ফারহাজ এর ফোনে ফোন আসে।
ফারহাজ ফোনটা তুলে দেখে তার এডভোকেট বন্ধু এশাদের ফোন।
ফারহাজঃ হ্যা এশাদ বল!
এশাদঃ দোস্ত তুই বলেছিলি নাহ কালকে ডিভোর্সের জন্য এপ্লাই করবি। কালকে আমার চেম্বারে চলে আয় আর হ্যা ভাবি আই মিন তোর ওয়াইফ আসলেও বেটার হয়। কেননা ডিভোর্সের ব্যাপারে তোর ওয়াইফের মতামতও সমান গুরুত্ব দেয়।
ফারহাজঃ আমার মনে হয়না এখানে ফিহার মতামতের কোনো প্রয়োজন আছে। আমি ওকে এইসব বিষয়ে এখন আপদত আনতে চাইছি নাহ।আমি জানি আমার সিদ্বান্ত ফিহা মেনে নিবে। আমি কালকে একাই তোর চেম্বারে যাবো।
এশাদ ঃ ওকে যা ভালো বুঝিস কর। কিন্তু ডিভোর্স টা কী ছেলে পক্ষ থেকে।
ফারহাজঃ বলতে পারিস দুই পক্ষ থেকেই। এতে ফিহাও মুক্তি পেয়ে যাবে।
এশাদঃ সব সম্পর্ক ছিন্ন করে কী মানুষের মুক্তি মেলে? এমন যেনো না হয়ে যায়। এ সম্পর্ক ছিন্ন করতে গিয়ে এই সম্পর্কের মায়ায় পড়ে গেলি।
ফারহাজ গলাটা কিছুটা পরিষ্কার করে বলে—
কি বলতে চাইছিস কি? আচ্ছা তুই ই বল এই বিয়েটা তো ঠিক নয়। এক প্রকার অন্যায় হয়েছে ফিহার সাথে। বলতে গেলে এই অন্যায় টা আমিই করেছি।
এখন ফিহার সংসারের মায়াজালে বেঁধে থাকার বয়স নয়। এখন তার মুক্ত থাকার বয়স।
এশাদ কিছুক্ষন থেমে বলে উঠে-
ফারহাজ তোর কথা শুনে মনে হচ্ছে ফিহার প্রতি তোর কিছু তো একটা আছে। মায়া কিংবা ভালোবাসা। এতোটা ভাবিস ফিহাকে নিয়ে।
ফারহাজ ঃ কিসব আবল- তাবল বকছিস হ্যা?
এশাদঃ আমি আবল-তাবল বকছি নাহ তোকে আমি সেই ছোট বেলা থেকেই চিনি ফারহাজ।
ফারহাজ কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে উঠে-
আমি শুধু অনুতপ্ত আর কিছুই নয়।
এশাদ কে কিছু বলতে না দিয়ে ফারহাজ কট করে ফোনটা কেটে দেয়।
আসলে এশাদের কথা টা কিছুটা হলেও সত্য। ফারহাজ যতই এড়িয়ে যাওয়ার চেস্টা করে।
ফারহাজ চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে পড়ে আসলে আজকের থেকে বা কালকের থেকে নাহ যখন ফিহাকে সে দেখেছিলো তখনি হঠাৎ করেই তার হার্টব্রিট বাড়তে শুরু করে। আস্তে আস্তে ফিহার মায়ায় অদ্ভুদ ভাবে ফেঁসে যায় ফারহাজ কিন্তু ফারহাজ তা তেমন গুরুত্ব দেয়নি। কালকের বিয়েটার পরে ফিহার প্রতি ফারহাজ যেনো দুর্বল হয়ে পড়েছি। ফারহাজ যত চেস্ট করে তার দুর্বলতা লুকিয়ে রাখতে তা ঠিকই বের হয়ে যায়। ইরিনার প্রতি সে আর্কষিত ছিলো কিন্তু আদোও ইরিনাকে সে ভালোবাসতো কিনা তা নিয়ে এখন যথেষ্ট সংদেহ প্রকাশ করছে ফারহাজ। নাহলে এতো বড় ধোকা ইরিনা দেওয়ার পরেও সে কী করে নিজেকে ঠিক রাখতে পারছে? প্রশ্ন জটিল প্রশ্ন জাগছে ফারহাজ এর মনে।
।।।।।।।।।
ইরিনা মুখটা ভেংচি দিয়ে বলে উঠে—
আমি আপ্নাকেও নিজের স্বামী বলে মানি নাহ।
আহানঃ ওহ আচ্ছা তাই নাকি? (পকেটে হাত রেখে)
আহান ইরিনার দিকে এগিয়ে ইরিনার মুখে আস্তে করে ফু দেয়। ইরিনা চোখ-জোড়া বন্ধ করে ফেললো। ইরিনার বুক টা ধুক করে উঠলো। কেননা এই কাজ ছোট বেলা শুধু একজনই করতো।
আহান জানেনা সে কেন করলো কিন্তু করতে বড্ড ইচ্ছে করলো।
আহান মুচকি হেঁসে চলে যেতে চলে যেতে নিলে ইরিনা খপ করে তার হাত ধরে ফেলে।
আহান তাঁকিয়ে দেখে ইরিনা প্রশ্নবোধক চাহনিতে তার দিকে তাঁকিয়ে আছে।
ইরিনাঃ কি আপনার পরিচয়?
আহান ইরিনার থেকে নিজের হাত জোড়া ছাড়িয়ে বলে উঠে–
কে আবার তোমার বর। আহান আহমেদ।
ইরিনাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে আহান চলে যায়। আহান নিজের রুমে গিয়ে যত্ন সহকারে ছবির ফ্রেম টা রেখে দেয়। এইটা ফিহা ও আহানের ছোটবেলার ছবি। এইটা এক মাত্র শেষ ছবি আহানের তার আদরের ছোট বোনের সাথে। আহান ছবিটায় চোখ বুলিয়ে নেয় । চোখ থেকে এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে তার।
আর এদিকে,,
ইরিনা ডুব দেয় অতীতে কীভাবে তাদের দেখা হয়েছিলো।
✨✨
ইরিনা যখন ক্যানাডায় ইঞ্জিয়িয়ারিং পড়তে যায়৷ সেখানেই আহানের সাথে তার দেখা। একদিন ইরিনাকে কয়েকজন মিলে ডিস্টার্ব করছিলো সেখানে আহান ই ইরিনাকে সেফ করে। সেখান থেকেই তাদের পরিচয়। আস্তে আস্তে তাদের মাঝে বন্ধুত্বের সৃষ্টি হয়। কিন্তু আহানের মধ্যে ইরিনা খেয়াল করতো আহান তাকে পছন্দ করে তাই সে আহান কে এভোয়েড করতো মুলত ফারহাজেই জন্যে। ফারহাজকে সে ভালোবাসে। কিন্তু আহানের অজান্তেই ইরিনা জেনে যায় আহান একজন ক্রিমিনাল। বিভিন্ন খুনের সাথে সে জড়িত। তাই আহান ইরিনাকে সবসময় চুপ থাকার জন্যে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিতো। ইরিনাকে সে বুঝাতো সে ইরিনাকে ভালোবাসে। তাই ইরিনা এক প্রকার বাধ্য হয়েই বাংলাদেশে চলে যায়। বাংলাদেশও বিভিন্ন ভাবে আহান তাকে হুমকি দিতো। এমনকি এন্গেজমেন্ট এর দিন ও তাকে জোড় করে বিয়েটা করে ফেলে।
✨✨✨✨
কিন্তু ইরিনা এখন বুঝে গিয়েছে আহান তাকে শুধু গুটি হিসেবে ব্যাবহার করেছে। যাতে ফারহাজ ভেজ্ঞে পড়ে এবং মির্জা বাড়ির সম্মান নস্ট হয়ে যায়
কিন্তু ফারহাজ এর সাথে বা মির্জা বাড়ির সাথে কীসের শত্রুতা আহানের।
ইশিকার থেকে ফিহার কাহিনী শুনে তানহা হাঁসতে হাঁসতে শেষ।
ইশিকাঃ মা তুমি অই মেয়ের কথা শুনে হেঁসে যাচ্ছো???আমাকে মজা দেখাবে তাইনা?? আমি ওকে এমন শিক্ষা দিবো তুমি দেখে নিও। এই ইশিকা মির্জার সাথে পাজ্ঞা নেওয়ার মজা বুঝবে।( রাগে ফুশতে ফুশতে)
এদিকে,,
ফিহা গাল ফুলিয়ে বসে আছে কেননা এখন সে শপিং মলে ফারহাজ এর সাথে। ফারহাজ থানা থেকে আসার সাথে সাথেই ফিহাকে নিয়ে চলে এসেছে শপিং এ। কেননা ফারহাজ বুঝতে পেরেছে ফিহা শাড়িতে একদমই কনফর্টেবল নাহ। এর জন্যে বেশ কথা শুনতে হয়েছে মিসেস প্রিয়ার কাছে। রেনু বেগমও কম কথা শুনাইনি। কিন্তু ফিহা উল্টো ঝগড়া করে এসেছে।
ফারহাজ এক কোনে দাড়িয়ে ফোন টিপে যাচ্ছে। ফিহা বলেছিলো তাকে জামা চুজ করে দিতে কিন্তু ফারহাজ সাফ সাফ মানা করে দিয়েছে। তার ভাষ্যমতে মেয়েদের জামা চুজ করা অন্তত্য জটিল একটা ব্যাপার।
ফিহা চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়। কত হাজবেন্ড তার স্ত্রীর ড্রেস চুজ করে দিচ্ছে। ফারহাজ কেন পারবে নাহ ?
ফিহা গাল টা ফুলিয়ে ফারহাজ এর কাছে গিয়ে বলে উঠলো–
শুনুন না?
ফারহাজ ফোনের দিকে তাঁকিয়েই বলে উঠে-
হয়ে গেছে কেনাকাটা? ওকে আমি বিল গুলো পে করে আসি। আর শুনো দাদুন বলে দিয়েছে কালকের থেকে কালকের থেকে তুমি স্কুলে যাবা প্রতিদিন সুতরাং স্কুলের প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসও কিনে নাও।
ফিহাঃ আমি কিছুই কিনিনি। আমি তো কিছুই চুজ করতে পারছি নাহ। আপনি একটু করে দিন নাহ।
ফারহাজঃ আমি আগেও বলেছি ফিহা আমি এইসব পারি নাহ।
ফিহাঃ উফফ দেখুন নাহ সবাই তার স্ত্রীকে চুজ করে দিচ্ছে।
ফারহাজ কিছুটা বিরক্তি সুরে বলে উঠে–
ফিহা তোমাকে আমি আগেও বলেছি এখনো বলছি নিজেকে আমার স্ত্রী ভাবতে আসবে নাহ।
ফিহা মুখটা ফুলিয়ে বলে উঠে—
ভাবার কি আছে টা কী? আমরা কি মিথ্যে মিথ্যে স্বামী- স্ত্রী? আপনি আমার অন – এন্ড অনলি বর।
আপনি ই পছন্দ করে দিবেন।
ফারহাজ কে কিছু বলতে না দিয়ে ফিহা তার হাত ধরে স্টোরের দিকে নিয়ে যায়।
।।।।।।।চলবে!
(ঘটনমুলক কমেন্ট চাই হুহ 😓)