#পবিত্র_বন্ধনে_আবদ্ধ
#পর্ব -৩৬
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
লাটসাহেব এই লুকে যে শুধু আমিই নাহ অন্যান্য লুচু মেয়েরাও ঘায়েল হয়ে যায় তা কী বুঝেন নাহ?? ফিহার এমন কথায় কিছুটা ভ্যাব্যাচ্যাকা খেয়ে ফারহাজ বলে উঠে– এইসব কি বলছো? পুচকি?
ফিহা আবারোও ফারহাজ এর ঘেসে দাঁড়িয়ে বলে উঠে-একটু নিজের দিকে আর আশেপাশের লুচু মেয়েদের দিকে খেয়াল করে দেখুন তাহলেই বুঝতে পারবেন। ফিহার কথায় ফারহাজ আশেপাশের দিকে তাঁকায়। সব মেয়েরাই তাকেই ঘুড়ে ঘুড়ে দেখছে। আসলে এইটাই স্বাভাবিক। কেননা ফারহাজকে প্রায় সবাই চিনে। একজন সৎ পুলিশ অফিসার হিসেবে। তার থেকে বড় কথা মেয়েদের বর্তমান ইয়াং অফিসার ক্রাশ আইডল সে। ফারহাজ এইবার কিছুটা ত্যারা উত্তর দিয়ে বলে উঠে- হ্যান্ডসাম ছেলেদের দেখলে মেয়েরা একটু ঘুড়ে ঘুড়ে দেখবেই এইটা তো কমন ব্যাপার! ফিহা এইবার তেড়ে এসে ফারহাজ দিকে রাগান্বিত কন্ঠে বলে উঠে-
দেখবে মানে? কেনো দেখবে? আমার বরকে কেনো দেখবে? ১০ টা না ৫ টা একটা মাত্র বর আমার।আপনি কি বুঝেন না লাটসাহেব আপনি আর মা ছাড়া আমার আমার কেউ নেই।
কথাটি বলতে গিয়েও
গলা ধরে আসছিলো ফিহার। ফারহাজকে অবাক করে দিয়ে ফিহা আবারোও বলে উঠে-
আমি স্কুলে সবাইকে বলে দিবো হু আপনি আমার বর। এইটা বলে ফিহা ছুটে যায়।
ফারহাজ শুধু ভাবতে থাকে ফিহার কথাটি
—আপনি কী বুঝেন নাহ??
হয়তো ফারহাজ সত্যি বুঝেই নাহ। ফারহাজ জানে ফিহার মনে একটু হলেও সে জায়গা করে নিয়েছে.। যেমনিভাবে ফারহাজ এর মন জুড়ে এখন ফিহার অবস্হান। ফারহাজ এর মুখে অজান্তেই এক চিলতি হাঁসি ফুটে উঠে। আচ্ছা আপনা আপনি ভেবে উঠে ফারহাজ। এইটুকু মেয়ের এতো ক্ষমতা? ফারহাজ মির্জাকে নিজের মায়াজালে জড়াতে পারে। ফারহাজ কি যে ভাবছে সে নিজেও জানে নাহ। সে তো ফিহাকে মুক্তি দিতে চায় এখন তো সে আরো গভীরভাবে ফিহার মায়ায় জড়িয়ে যাচ্ছে। সে কি আদোও পারবে ফিহাকে মুক্তি দিতে?
ইরিনা আয়নায় দাঁড়িয়ে চুল গুলো মুছে যাচ্ছে। আহান কারো সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে হঠাৎ করেই ইরিনাকে দেখে থেমে যায়। শাড়ি পরিহিতা ভেজা চুলে রয়েছে তার স্ত্রী। আহান নিজেকে কন্ট্রোল করতে গিয়েও পারছে নাহ। কেনোই বা কন্ট্রোল করছে সে নিজেকে?
যেখানে ইরি তার স্ত্রী।
আর কিছু না ভেবে ইরিনার দিকে এগিয়ে যায়।
আহান কে এগিয়ে আসতে দেখে ইরিনা কিছুটা ঘাবড়ে যায়। ইরিনা কিছু বলতে যাবে তার আগেই সে তার কাঁধে আহানের গরম নিশ্বাস অনুভব করে। আহান তাকে গভীরভাবে পিছন জড়িয়ে ধরেছে। ইরিনা সর্বচ্চ চেস্টা করছে আহানকে সরানোর কিন্তু
বদ লোকটা এক চুলেও সরাতে পারছে নাহ।
ইরিনাঃ ছাড়ুন বলছি!
হঠাৎ আহান নরম সুরে বলে উঠে—
ডোন্ট মুভ!
ফিহা ক্লাসে ঢুকার সাথে সাথেই সিমি,পটকা ও টিউপ ফিহাকে ঘিড়ে ধরে।
সিমিঃ এইটা কি শুনলাম রে ফিহা?? অফিসার ফারহাজ স্যার এর সাথে।
ফিহাঃ আমার বিয়ে হয়ে গেছে তাইতো??
সিমিঃ কিন্তু কীভাবে?
পটকা এইবার ন্যাকামির সুরে বলে উঠে–
আমরা তোকে নিজের বেস্টফ্রেন্ড মনে করতাম রে ফিহু! আর তুই আমাদের এইভাবে ধোঁকা দিলি?
হ্যা আমরা জানি আমরা একটু বেশি খাই তাই বলে আমাদের নিজের বিয়েতে দাওয়াতও দিলি নাহ?
টিউপ তো ভ্যা ভ্যা করে কেঁদেই দেয়।
টিউপঃ আমরা তো আর ফিহার কিছুই নাহ।
আমাদের দাওয়াত ই দিলো নাহ।
ফিহা এইবার ধমক দিয়ে বলে উঠে—
তোরা থামবি? তখন থেকে আমাকে কিছু বলতে না দিয়ে তোরাই সব বলে যাচ্ছিস। আর তোরা দুইজন মেয়েদের এতো ন্যাকামি না করে আমাকে বলতে তো দে আসলে কী হয়েছে।
সিমিঃ সত্যি পটকা আর টিউপ সবসময় বেশি করে। আমি কিন্তু বুঝতে পেরেছি এই বিয়েটা স্বাভাবিক ভাবে তো হয়নি যেখানে তোর লাটসাহেব এর সাথে তোর ইরিপুর বিয়ে ঠিক ছিলো।
তখনি কেউ বলে উঠে-
বাহ ! ফিহা দেখি ভালোই চাল চাললো।
লিজার কন্ঠস্বর শুনে সবাই পিছনে তাঁকায়।
লিজা হলো স্কুলের প্রিন্সিপাল এর মেয়ে। সবসময় নিজের রুপ নিয়ে বড়াই করে সে। ছেলেদের নিজের পিছনে ঘুড়াতে পছন্দ করে। ফিহাকে সবসমই হিংসা করে।
ফিহাঃ মানে কি বলতে চাইছিস?
লিজাঃ সব খবরই আমরা পাই! কীভাবে তুই টাকার লোভে বড়লোকের ছেলেকে ফাঁসিয়ে বিয়ে করেছিস। যে কিনা তোর থেকে গুনে গুনে ১২ বা ১৩ বছরের বড়।
বিশ্বাস করা যায়? অফিসার ফারহাজ মির্জা নাকি ফিহার বর। হাও? তোমাকে কখনো মানায় নাহ ফারহাজ মির্জার সাথে। কোথায় সে আর কোথায় তুই? গাইয়্যা একটা!
লিজার কথা শুনে সিমি, পটকা টিউপ প্রচন্ড রেগে যায়।
ফিহা শুধু কিছুটা হেঁসে বলে উঠে–
টাকার লোভে আমি বিয়ে করেছি রাইট? তা আমি তো টাকার লোভে বিয়ে করেছি তোর মতো পরপুরুষের ছেলেদের সাথে এই বয়সেই রাত কাটাইনি।
ফিহার কথা শুনে লিজা কিছুটা দমে যায়। কেননা ক্লাসের সবাই এখানে আছে। সবাই অবাক পানে লিজার দিকে তাঁকায়। লিজা ভাবতেও পারেনি ফিহা এইভাবে হাটে হাড়ি ভাজ্ঞবে।
ফিহা আবারোও বলে উঠে—
আর কি বললি? বয়স? বয়স ফ্যাক্ট নাহ একটা সম্পর্কে একটা পবিত্র সম্পর্কে বয়স কখনো বাঁধা হয়ে আসেনা।
যেখানে আমি ও আমার হাজবেন্ড একে অপরকে সম্মান করি। এই সম্পর্কে সম্মান এর থেকে আর কি বড় হতে পারে?
ফিহার কথা শুনে ক্লাসের সকলে হাত তালি দিতে থাকে।
(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)
এদিকে,
থানার টর্চার রুমে চারপাশে হেটে যাচ্ছে ফারহাজ। হাতে তার লম্বা লাঠি। টর্চার রুমের মধ্যখানে টেবিল দুই যুবক ভয়ে জোড়োসরো হয়ে বসে আছে। তাদের আজকেই হাতেনাতে ধরেছে ফারহাজ। প্রচন্ড মেরেছে তাদের ফারহাজ। দুই তিনবার কারেন্ট এর শকও দেওয়া হয়েছে।
ঠোট ফেটে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে তাদের। কিন্তু ফারহাজ এর মনে বিন্দুমাত্র মায়া জন্মাচ্ছে নাহ। সে পারলে এদের মেরেও ফেলতে পারে।
সেদিন
ক্লাবে যারা ফারহাজ এর উপর এ্যটাক করেছিলো তার মধ্যে এই দুইজনও ছিলো।
ফারহাজ ঃ এইবার তোরাই বল! কার কথায় তোরা এইসব করিস? এতোক্ষন শুধু তোদের আমি নিজের ট্রেইলার দেখিয়েছি!
তবুও তারা কিছু বললো নাহ। ফারহাজ এইবার একজন এর চুল গুলো মুষ্ঠিবদ্ধ করে এতে সে ব্যাথায় চিৎকার করে উঠে।
ফারহাজ ঃ
কতক্ষন চুপ করে থাকবি আমিও দেখবো!
এই বলে ফারহাজ বেড়িয়ে যায়। যাওয়ার সময় সে বলে কন্সটেবলকে বলে যায়। আজকে রাতে যেনো অই দুইজনকে যেনো খাবার তো দূরে থাক পানি পর্যন্ত দেওয়া না হয়।
ফারহাজ বের হওয়ার সাথে সাথেই কেউ আহান কে ফোন করে।
এদিকে,,,
টিউপঃ
আজকে তুই কি দিলি রে! ফিহা লিজা তো সেই জব্দ হয়েছে।
পটকাঃ বেশ হয়েছে ফাজিল মেয়েটা আমাদের ফিহাকে সবসময় হিংসা করে। ফিহা যে ভালো স্টুডেন্ট তাই। সব টিচার রা ফিহাকে ভালোবাসে
সিমিঃ কিন্তু ফিহা তুই যখন প্রতিবাদ টা করছিলি সিরিয়াসলি তোকে একেবারে অন্যরকম লাগছিলো। তোর এই রুপ দেখে আমি জাস্ট হা!
ফিহা আনমনে বলে উঠে—
জানি নাহ আমি কীভাবে প্রতিবাদ টা করলাম কিন্তু আমার লাটসাহেব বরের নামে কেউ একটা বাজে শব্দ বললে আমি ফিহা মির্জা সহ্য করবো নাহ।
সিমি মুচকি হেঁসে ফিহাকে আলতো করে ধাক্কা দিয়ে বলে উঠে—
সত্যি ফিহা তুই প্রেমে পড়ে গিয়েছিস তোর লাটসাহেব বর এর!
ফিহা অবাক হয়ে বলে উঠে–
প্রেমে? দূর কি যে বলিস নাহ??
সিমিঃ লজ্জা লাচ্ছিস তার মানে সামথিং সামথিং!
দেখ বরের প্রেমে পড়াতে নেই কোনো বারন।
।।।।।।।।।।
মিঃ রাইজাদা নিজের ঘরে বসে কিছু ক্লাইন্টের সাথে কথা বলছে। তখনি রেনু বেগম এসে বলে উঠে—
ভাই!
রেনু বেগমকে দেখে মিঃ রাইজাদা ফোনটা কেটে বলে উঠে–
আরে রেনু আপা আসো নাহ!
রেনু বেগম গম্ভির মুখ করে বলে উঠে–
আসলে একটা প্রশ্ন করতে এসেছিলাম
আশা করি সেই প্রশ্নের সঠিক উত্তর তুই দিবি!
রেনুঃ ফিহার আসল পরিচয় কী? কে ফিহা?
প্রশ্ন টা শুনে চমকে উঠে মিঃ রাইজাদা। সে বুঝতে পেরেছে রেনু বেগম কিছুটা হলেও আচ করতে পেরেছেম
ফারহাজ রুমে যাওয়ার সময় সে তার কানে ভেসে উঠলো কিছু কথা—-
নয়নাঃ মিস্টি ভাবি! মাছ ভাত টা খেয়ে নাও তো।
ফিহাঃ নাহ বাপু! আমি খেতে পারবো নাহ নিয়ে যাও! মাছ আমার একটুও ভালো লাগে নাহ হুহ।
নয়না আর কি করবে সে প্লেট নিয়ে বেড়োতে যাবে তার আগেই ফারহাজ এসে বলে উঠে—নয়না প্লেট টা রেখে যাও ফিহা খাবে।
ফিহা কিছুটা কাচুমাচু হয়ে বলে উঠে–
নাহ নাহ আমার ভালো লাগেনা ! আমি খাবো নাহ!
ফারহাজ এইবার রামধামক বলে উঠে–
পুচকি বেশি কথা বলো কেন?? আমি বলেছি খাবে মানে খাবে।
ফিহা মুখ ফুলিয়ে ফেলে।
নয়না আর কিছু না বলে প্লেট টা চুপ্টি করে রেখে
চলে যায়।
নয়না চলে যেতেই ফারহাজ ফিহার কাছে গিয়ে বলে উঠে–
কি হয়েছে? মাছ খেতে চাওনা কেন?
ফিহাঃ আমি তো মাছের কাটাই বাছতে পারিনাহ। মা খায়িয়ে দিতো ( ইনোসেন্ট ফেস করে)
ফারহাজ ঃ মাছের কাটা বাছতে পারো নাহ।অকে
আমি খায়িয়ে দিচ্ছি চলো!
ফিহাঃ আপনি?( অবাক হয়ে)
ফারহাজ ঃ হ্যা তো অবাক হওয়ার কী আছে?
এই বলে ফারহাজ ফিহার হাত ধরে তাকে বেডে বসিয়ে প্লেট টা নিয়ে মাছ বাঁছতে থাকে।
ফারহাজ এক লোকমা ফিহার দিকে তুলে ধরে।
ফিহাও খেয়ে নেয়।
ফিহা শুধু নিস্পলক চেয়ে থাকে ফারহাজ এর কাছে।
সবেমাত্র ফিরেছে ফারহাজ থানা থেকে। নিজেও খায়নি এখনো। দেখেই বুঝা যাচ্ছে বেশ ক্লান্ত। তাও সে কোনো রাগ না করে ফিহাকে খায়িয়ে দিচ্ছে।
এমন ভাগ্যও কি ফিহার কপালে ছিলো? আল্লাহ তাকে ফারহাজের মতো স্বামী দিয়েছেন। যে নিজের স্ত্রীকে সম্মান করতে পারে। তাকে কখনো অযত্ন করেনা। অজান্তেই ফিহার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে।
চলবে।।।।।।
#পবিত্র_বন্ধনে_আবদ্ধ
#পর্ব – ৩৭
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ফিহা ভাবনার মাঝেই ফারহাজ আরেক লোকমা তুলল ফিহার দিকে। এইবার ফিহা ফারহাজকে থামিয়ে বলে উঠে– আমি তো খেলাম কিন্তু আপনি তো সবেমাত্র থানা থেকে ফিরলেন,কিছুই খান নি! তাই আগে আপনি খাবেন তারপর আমি। ফারহাজ হেঁসে বলে উঠে– পুচকি কি এখন আমাকে খায়িয়ে দিবে? যদি খায়িয়ে দেয় তাহলে খেতেই পারি।ফারহাজ এর কথা শুনে ফিহা বলে উঠে–ফিহা তার লাটসাহেব বরকে খায়িয়ে দিতেই পারে।
এই বলে ফিহা ফারহাজ এর থেকে প্লেট নিয়ে। ভাত টুকু মেখে এক লোকমা ফারহাজ এর দিকে এগিয়ে দেয়।
ফারহাজ খেয়ে নেয়। ফিহা লজ্জায় নয়ে পড়ে। কেননা ফারহাজের গোলাপি ঠোট জোড়া বার বার ফিহার ছোট্ট আজ্ঞুল গুলোকে স্পর্শ করছে। ফারহাজও তার ছোট্ট মায়াবিনী বউয়ের হাতে খাচ্ছে। সে যে তার এই ছোট্ট বউটার মাঝে তার নীলাঞ্জনাকে খুঁজে পায়। সত্যি হলো এইটাই ফারহাজ ইরিনার মাঝে সবসময় তার নীলাঞ্জনা খুঁজে বেড়ানোর চেস্টা করতো।
হালকা আলোয় দুজনে এক ঘরে একই প্লেট ই একে অপরকে খায়িয়ে দিচ্ছে। পুরো ঘরটায় যেনো অন্যরকম সুখময় পরিবেশ তৈরি হয়ে গেছে।
ইসলামে রয়েছে স্বামী- স্ত্রী একই পাত্রে খাওয়ার অভ্যাস করুন!
এই সুন্দর মুহুর্তের একটা ছবি না তুললেই নয়
বলে মুচকি হাঁসলো নয়না ও মিলি।
দুজনেই দরজায় লুকিয়ে ছিলো।
মিলিঃ হ্যা তাড়াতাড়ি ছবি তুল দেহি! আমাগো মিস্টি ভাবি আর বড় সাহেব এর এতো ভালো মুহুর্ত কিন্তু সবসময় পাওয়া যাইবো নাহ
নয়না আর এক মুহুর্ত দেরী না করে লুকিয়ে ছবিটা তুলে ফেলে।
মিঃ রাইজাদাকে চুপ থাকতে দেখে আবারোও রেনু বেগম বলে উঠে—
চুপ থাকার মানে টা কী? আমার থেকে অন্তত লুকানোর চেস্টা করবি নাহ। ফিহার সাথে আরিশার হুবুহু মিল। চালচলন বল কিংবা হাতের রান্না। কেউ খেয়াল না করলেও আমি ভালো করে খেয়াল করেছি। বিষয়টি আমার নজরে কালকেই পড়েছে।
এই বাড়িতে অনেকেই আমার আরিশাকে দেখতে পারতো নাহ বলেই সময়ের সাথে সাথে আরিশাকে সবাই ভুলে গিয়েছে। কিন্তু আমি তো ভুলেনি। ভুলবোই বা কেমন করে? যেমন ছিলো তার রুপ গুন তেমনি ছিলো তার রাগ। সারাদিন আমার সাথে ঝগড়া করতো। বলতে বলতে চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়লো রেনু বেগমের।
মিঃ রাইজাদা এইবার বলে উঠেন—
এখন তাহলে আমি কি বলবো? তুমি তো আন্দাজ করতেই পারছে ফিহা আমাদের আরিশার মেয়ে। ওরফে আমাদের নীলা দিদিভাই! আমাদের ফারহাজ এর নীলাঞ্জনা! আমার মা যা চেয়েছিলো তাই হলো। ফারহাজ ফিহাকে পেয়েই গেলো।
কথাটা শুনে কিছুক্ষন থম মেরে বসে রইলো রেনু বেগম তারপর আবারোও বলে উঠে–
তুই কেন এইটা আমাকে আগে বলিসনি ভাই?
তাহলে আমি আমার দিদিভাই এইসব বলতে পারতাম নাহ। আমি শেষে কিনা তার বংশপরিচয় কথা তুলেছি ছিহ ছিহ।
মিঃ রাইজাদাঃ আমি এখন চাইনি ফিহার পরিচয় কেউ জানুক। কিন্ত তোমার এইরকম কথা বলা ঠিক হয়নি। তোমরা কাকে বংশপরিচয়হীন বলেছিলে? যার শরীরে মির্জা বাড়ির রক্ত বইছে।
রেনুঃ আমাকে আর এইসব কথা বলে লজ্জায় ফেলিস না ভাই! তুই দেখবি আমি আমাদের বড় নাত বউকে তার সঠিক মর্যাদা দিবো।
মিঃ রাইজাদা ঃ যা করবা ঠিক আছে কিন্তু কেউ যেনো ফিহার আসল পরিচয় না জানতে পারে।
।।।।।।।।।।
আহান বসে ল্যাপটপে কিছু কাজ করছিলো তখনি কেউ দরজায় কলিং বেল বাজে।
আহান উঠে দাঁড়িয়ে দরজা টা খুলে রহস্যময়ী এক হাঁসি দিয়ে বলে উঠে–
কি খবর রুপ??? তোমার মুখ টা এমন লাগছে কেন?
ওহ হ্যা তোমাকে বলেছিলাম ফারহাজ যে ডেটা গুলো কালেক্ট করেছে তা নিয়ে এসেছো তো?
রুপঃ জ্বী হ্যা! (কিছুটা দিদ্বা নিয়ে)
আসলে এতোদিন রুপ ই সব ইনফরমেশন আহান কে দিতো। যার কারণে ফারহাজ যেকোনো ক্লু পেলেই তা হারিয়ে যেতো।
এই বলে একটা প্রেন্ড্রাইভ এগিয়ে দেয় রুপ আহান এর কাছে।
(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)
আহান ঃ গুড ( বাঁকা হেঁসে)
রুপ ঃ স্যার ফারহাজ স্যার এর উপর আপনার যেই লোক গুলো এট্যাক করাছিলো তাদের থেকে যেই দুজন কে ফারহাজ স্যার ধরে ফেলেছে।
আহানঃ তা তো আমি জানিই! আমি আমার লোকদের দিয়ে ওদের মেরে দিবো যাতে ওরা মুখ না খুলতে পারে।
রুপঃ কিন্তু ওদের তো পাওয়াই যাচ্ছে নাহ। ওরা নাকি পালিয়েছে
আহানঃ ওয়াট?? ( চিল্লিয়ে)
আড়াল থেকে সব কিছুই শুনে ফেলে ইরিনা। সে বুঝে গেছে আহান একটা ভযংকর চাল চেলেছে যা ফারহাজ এর জন্যে ক্ষতিকর। কিন্তু আহান তো তাকে কথা দিয়েছিলো সে ফারহাজের কোনো ক্ষতি করবে নাহ। নাহ নাহ ফারহাজ এর সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
এদিকে,,
কিং স্যার নিজের গবেষনার ঘরে বিভিন্ন বিষ নিয়ে গবেষণা করছেন। পেশাতে সে একজন বিজ্ঞানি। তার নিজের তৈরি বিষ দিয়েই সে সব খুন গুলো করছে।
তখনি কেউ বলে উঠে—
কিং স্যার আহান স্যার এর ফোন এসেছে বিডি থেকে
কিং স্যার কিছুটা বিরক্ত হোন। বিরক্তি নিয়ে ফোনটা তিনি রিসিভ করে বলে উঠেন—
হ্যালো আহান বলো!
—————
কিং স্যার চোয়াল টা শক্ত করে বলে উঠে–
সত্যি তোমাকে দিয়ে এইটা আশা করেনি আহান! তুমি থাকতে ওরা পালালে কি করে? এখন যদি ওরা মুখ খুলে ফেলে
আহানঃ আমি নিজেও সেইটা বুঝতে পারছি নাহ। কিন্তু আমি যতটুকু আন্দাজ করতে পারছি এই কাজ ফারহাজ এর,
কিং স্যারঃ ঠিক আছে! এই ফারহাজ এর একটা ব্যবস্হা আমি করছি! আমি খুব তাড়াতাড়ি বাংলাদেশে আসছি।
এই বলে কট করে ফোনটা কেঁটে দেয়।
এদিকে,
অন্ধকার একটা ঘরে হাত বাঁধা অবস্হায় সেই দুই যুবক বসে আছে। হ্যা ফারহাজ ই তাদের এখানে এনেছে আর থানায় প্রচার করেছে তারা পালিয়ে গেছে। তখনি ফারহাজ প্রবেশ করে।
ফারহাজঃ দেখ ভালোই ভালোই বলে দে তোরা এইসব এর পিছনে কার হাত রয়েছে। এখনো সময় আছে।
—স্যার আমরা যদি তার নাম তাহলে সে আমাদের মেরেই ফেলবে!
(কিছুটা ভয়ে)
ফারহাজঃ আমি জানি তোদের বস এম্নিতেও তোদের মেরেই ফেলবে। কেননা সে খুব ভালো করেই জেনে গেছে ফারহাজ মির্জা যখন তোমাদের ধরেই ফেলেছে তার মানে তোদের পেট থেকে কথা বের করিয়েই ছাড়বে। তাই তোদের থানা থেকে দূরে নিয়ে এসেছি যাতে তোরা সেফ থাকিস। এখন তাড়াতাড়ি আমাকে এইসব এর পিছনে কে আছে তার নাম টা বলে দে। আমি কথা দিচ্ছি তোদের কিচ্ছু হবেনা।
লোক গুলো একে অপরের দিকে তাঁকায়।
ফারহাজঃ কি হলো এন্সার মি ( চিল্লিয়ে)
লোকগুলো ভয়ে ভয়ে বলে উঠে—
আহান!
প্রায় অনেক রাত হয়ে গেছে নিজের গাড়ির ছাদে বসে ইশিকা একের পর এক ওয়াইনের বোতলে এক চুমুক দিয়ে যাচ্ছে।
তখনি পুরুষকন্ঠে কেউ বলে উঠে—
এক্সকিউজ মি! আপনার গাড়িটা একটু সাইডে রাখুন!
কন্ঠস্বর টা শুনে ইরিনার বুক টা মোচর দিয়ে উঠে।
ইশিকা গাড়ি থেকে নেমে যায় আর যাকে দেখে তাকে দেখে এক মুহুর্তের জন্যে থমকে যায় ইরিনা
এতো নেহাল।
ফিহা জানালায় দাঁড়িয়ে কিছু একটা ভেবে যাচ্ছে।
অন্যরকম একটি অনুভুতি হচ্ছে ফিহার মাঝে। বার বার সেই খাবার খাওয়ার দৃশ্য ভেসে উঠছে। কেমন যেনো প্রেম প্রেম পাচ্ছে তার। একটা গান আছে নাহ
প্রেমে পড়া বারন কারনে অকারনে। আজকে ফিহার বড্ড প্রেমে পড়তে ইচ্ছে করছে। তার বরের।
বাড়ন্ত বয়সে এইরকম অনুভুতি হওয়াটাই স্বাভাবিক।
পামকিন সারা ঘর ছুটে ভেড়োচ্ছে।
ফিহা ফারহাজ এর ছবির একটা ফ্রেম নিয়ে নিজে নিজেই বকবক করে যাচ্ছে।
ফিহাঃ এইযে লাটসাহেব আচ্ছা আপনাকে ছবিতেও এতো সুন্দর লাগে কেন?? আমার নাহ আপনাকে ব্ড্ড হারানোর ভয় হয় জানেন কি? আজকাল লুচু মেয়েদের তো ভরসা নেই। কি হলো কথা বলছেন না কেন? কথা বলবেন ই বা কী করে সারাদিন তো পারেন রাগ করতে। রাগি লাটসাহেব একটা! কিন্তু আপনি বড্ড ভালো।
আপনমনে হেঁসে উঠে ফিহা। তার কাছে সবকিছু যেনো স্বপ্নের মতো সুন্দর লাগছে।
তখনি তাদের রুমের টেলিফোনটা বেযে উঠে।
ফিহা ফোনটা রিসিভ করার সাথে সাথে ইরিনা বলে উঠে —
ফারহাজ! ফারহাজ আমি ইরিনা প্লিয ফোনটা কেটো নাহ। অনেক জরুরী কথা আছে তোমার সাথে। তোমাকে অনেক কথা বলার আছে।
তখনি কেউ ইরিনার থেকে ফোনটা কেড়ে নেয়।
ইরিনা তাঁকিয়ে দেখে আহান। রক্তচক্ষু নিয়ে তার দিকে তাঁকিয়ে আছে।
ফিহা ঃ হ্যালো ইরিপু!
অইপাশ থেকে আর কিছু না শুনে ফিহা ফোনটা কেটে দেয়। তার মানে ভয়ংকর একটা ভয় ঢুকে যায়। বিয়ের এতোদিন পরে তার ইরিপু কেন ফোন করেছে আর ফারহাজ কেই বা কেনো চাইছে? তাহলে কি
সে তার লাটসাহেব কে কেড়ে নিবে তার কাছ থেকে
এদিকে ফারহজ ঘরে ঢুকতেই দেখে ফিহা এক কোনো জোড়োসোড়ে বসে কেঁদে যাচ্ছে। ফারহাজ এর বুকে যেনো ছিন ছিন ব্যাথা শুরু হয়ে যায় ফিহার কান্না দেখে।
ফারহাজ ফিহার কাছে ছুটে যায়।
ফারহাজ ঃফিহা এই ফিহু কাদছো কেন? বলো নাহ এই বাড়ির কেউ তোমাকে কিছু বলেছে? ( উত্তেজিত হয়ে)
ফারহাজ কে দেখেই ফিহা ফারহাজ এর বুকে ঝাপিয়ে পড়ে কেঁদে দেয়। এতোক্ষন যেনো সে ফারহাজ ই অপেক্ষাই করছিলো। ফারহাজ কে সে কোথায় যেতে দিবে নাহ
চলবে!