পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ পর্ব-৫০+৫১

0
6091

#পবিত্র_বন্ধনে_আবদ্ধ
#পর্ব -৫০+৫১ ( রহস্য সমাধান)
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
একলা রাস্তায় ফিহা হেঁটে যাচ্ছে। চারদিকে অন্ধকারে ছেঁয়ে গেছে। সন্ধ্যা হলো বোধহয়। চারদিকে মানুষের আনাগোনাও তেমন একটা নেই।। ফিহা ঠিক করেছে সে কিছুতেই তার মায়ের বাড়িতে যাবে নাহ। ফারহাজ তার কাছে মুক্তি চাই তো? ঠিক আছে সে অনেক দুরেই চলে যাবে। যেখানে চাইলেও ফারহাজ ফিহাকে খু্ঁজে পাবে নাহ।
ভাবতেই ফিহা দ্রুত পা চালালো।
ফিহার মনে কস্টটা যেনো গভীরভাবে দাগ করে দিলো। লাটসাহেব তাকে ভালোবাসে নাহ। ইরিনা আপুকে এখনো ভালোবাসে। আচ্ছা তার মধ্যে কি নেই? এমন যে লাটসাহেব তাকে ভালোবাসলো নাহ। সে ছোট বলেই কি ফারহাজ তার ভালোবাসা কে গুরুত্ব দিলো নাহ?

ফারহাজের কানে গান টি ভাঁসতেই ফারহাজ এর চোখ টলমলে হয়ে উঠে.। নিলয় গিটার হাতে নিয়ে গান টা গেঁয়ে যাচ্ছে। ফারহাজ গান টি মন থেকে অনুভব করে বিড়বিড় করে বলে উঠে-
আমি তোমার বিরহে রহিব বিলীন, 💔

মিঃ রাইহান এইবার উঠে দাঁড়িয়ে বলে উঠে-

কিং স্যার তুমিও শুনে রাখো! তুমি আমার ছেলের ক্ষতি করতে চাইবে আর আমি চুপচাপ বসে থাকবো
তা কখনোই হবে নাহ আমি এখনি সবাই সব সত্যিটা বলে দিচ্ছি।

এই বলে রাইহান উঠে যেতে নিলে কিছু লোক রাইহানকে ঘিরে ফেলে।

রাইহানঃ কি হচ্ছে কি? আমাকে যেতে দাও!

কিং স্যারঃ তুমি জানো আমি কোনো কাঁচা কাজ করিনা। তোমাকে এইখানেই বন্ধী হয়ে থাকতে হবে রাইহান। ভুলে যেও নাহ শুধু আমি নাহ তুমিও ফেঁসে যাবে এতে। ( বাঁকা হেঁসে)

এদিকে,,,

ফারহাজের দিকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছেন মিঃ রাইজাদা এবং রেনু বেগম। তারা এখন ড্রইং রুমে
তারা বাড়িতে এসে যখন ফিহা নেই।তখন ফারহাজকে কারণটা জিজ্ঞাসা করে ফারহাজও সোজাসোজি উত্তর দিয়ে দেয়। এতে সব থেকে বেশি মিসেস প্রিয়া ( ফারহাজের মা)ও মিসেস ইরা বেগম ( ফারহাজ এর দাদি) বেশ খুশি। রাহাত ও তানহা দর্শকের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছেন

রাইজাদাঃ তোমার সাহস কী করে হলো? আমাদের বাড়ির বড় বউকে বাড়িতে থেকে চলে যেতে বলার??

রেনু বেগমঃ আমি এইটাই বুঝতে পারছি নাহ। তুই কী করে পারলি? বাড়ির কারোর সাথে কথা না বলে ডিভোর্স এর মতো একটা পদক্কেপ নিতে

ফারহাজ ডোন্ট কেয়ার একটা ভাব নিয়ে হাতে থাকার সিগারেট ফেলে দিয়ে বলে উঠলো–

আমি যা করেছি ভালোই করেছি এতে নিশ্চই কোনো কারণ আছে তাই নয় কী? আর এতে ফিহারোও ভালো।

রাইজাদাঃ আমরা তো সেই কারণটাই জানতে চাইছি। কি এমন কারণ? ( খানিক্টা রেগে)

মিসেস প্রিয়াঃ আমার ছেলে এডাল্ট। আমার মনে হয় ওর বিষয় ওকেই বুঝে নিতে দেওয়া ভালো।

নিলয়ঃ আমার মনে হয় ভাইয়া কাজ টা ঠিক করেনি। ফিহা মানে ভাবির এতে খারাপ ইফেক্ট পড়তে পরে। তোমার যদি এতোই ভাবিকে নিয়ে সমস্যা ছিলো তাহলে আমাদের বলতে পারতে ভাই..!

ইশিকাঃ আমারো সেই একি কথা। তুমি কি একটু ভেবেছো? ফিহা যদি কোনো খারাপ স্টেপ নিয়ে ফেলে তখন? কিশোরী বয়স এখন তার।

ফারহাজ কিছুটা সোজা হয়ে বলে উঠে-
ফিহা যথেষ্ট স্ট্রং। সে এমন কাজ কখনো করবে নাহ।

ফারহাজের দাদিঃ আচ্ছা বাপু! তোমরা একটু থামবে। আমার মনে হয় দাদুভাই ঠিক ই করেছে। এমনিতেও অই মেয়ের বংশপরিচয় এর ঠিক নেই।

এই কথাটি দেখে ধপ করে ফারহাজ এর মাথায় আগুন ধরে যায়।

ফারহাজ ফুলের বাস্ক লাথি মেরে ফেলে দেয়। যা ভেজ্ঞে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।

ফারহাজঃ দাদি একদম ফিহার সম্পর্কে বাজে কথা বলবে নাহ। আমি আগেও বলেছি আমার বউয়ের বংশপরিচয় সম্পর্কে কেউ কথা বলুক তা মোটেও আমি পছন্দ করিনা।

মিসেস ইরাঃ বাবা এই ছেলের এখোনো নিজের বউয়ের প্রতি কি দরদ ( মনে মনে)

ফারহাজঃ দাদুন তুমি তো আমাকে চিনো তাইনা বলো? তোমার নাতি নিশ্চই কারণ ছাড়া কাজ করবে নাহ।

ফারহাজের কথা শুনে দাদুন কিছুটা থেমে গেলো।
সত্যি তো তার নাতি কারণ ছাড়া কোনো কাজ করে নাহ।

রেনু বেগমঃ তুই কি জানিস? ফিহার আসল পরিচয়? জানলে হয়তো এইরকম একটা স্বীদ্বন্ত নিতে পারতি নাহ।

ফারহাজ কিছুটা হেঁসে বলে উঠে-

ফিহা ই আমার সেই নীলাঞ্জনা। আমার নীলাঞ্জনা বেঁচে আছে।

রেনু বেগম ও রাইজাদা ছাড়া বাকি সকলেই স্তব্ধ হয়ে যায়। নীলা( ফিহা) বেঁচে আছে।

প্রিয়াঃ কিহ? ( চিল্লিয়ে)

রাইজাদাঃ কি ইরা? বড় বউমা? এখন কি বলবে? যার বংশপরিচয় নিয়ে তোমাদের এতো মাথাব্যাথা ছিলো এখন তার বংশপরিচয় জানা হয়েছে তো?

ফারহাজঃ কাদের কি বলছো? দাদুন এদের কাছে বংশপরিচয় টাই সব ( দাঁতে দাঁত চেপে)

রাইজাদার কথা শুনে মিসেস ইরা ও মিসেস প্রিয়া কিছুটা লজ্জাবোধ করেন। কার বংশপরিচয় নিয়ে তারা কথা বলছিলো সে তো এই বাড়ির ই মেয়ে।

ইশিকাঃ সিরিয়াসলি? ফিহা আমাদের সেই ছোট্ট নীলা??

রেনুঃ হ্যা রে তাইতো ফিহার রান্না তে আরিশার রান্নার স্বাদ পেতাম আমি। যতই হোক ফিহা আরিশার মেয়ে। আরিশার সব গুনেই সেই গুনান্বিত।

ফারহাজঃ এইটাই সত্যি এইটা আমি সেইদিন ই জেনে গিয়েছিলাম যেদিন
ফিহা এই বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলো। তখন সে তার রুবির ব্রেসলেট আমার ঘরে ফেলে দিয়েছিলো।

আর এই রুবির ব্রেসলেট বড় দাদি( রাইজাদার মা) শুধু আমাকে আর নীলাঞ্জনাকেই দিয়েছিলেন। স্পেশাল ব্রেসলেট।
দাদী সবসময় বিশ্বাস করতেন এই স্পেশাল ব্রেসলেট নাকি বড় হয়ে আমাদের ঠিক এক করে ফেলবে। তিনি সবসময় চাইতেন আমরা দুজন যেনো বড় হয়ে বিয়েটা করে নেই। সেকালের মানুষ তো। যদিও দাদুন ও রেনু দিদি এই তোমরা দুজন ছাড়া বাড়ির সকলের অমত ছিলো। কেননা আমাদের বয়সের পার্থক্যটা অনেক। তার মধ্যে আমিও বিয়ে তেমন একটা বুঝতাম নাহ আর নীলাঞ্জনাও বড্ড ছিলো। কিন্তু এই ব্রেসলেট দুটো সবসময় আমরা আমাদের হাতে পড়ে থাকতাম।
কিন্তু হঠাৎ করে জানতে পারলাম নীলাঞ্জনা আদ্র কাকাই কাকি সবাই মারা গিয়েছে সরি তারা মারা যায়নি তাদের মেরে ফেলা হয়েছিলো। আর এইসব কাজ অই কিং স্যারের যে কিনা দিনের পর দিন একটার পর একটা খুন করেই যাচ্ছে।
কিন্তু কোনোভাবে নীলাঞ্জনা বেঁচে গিয়েছিলো।
আমি জানি দাদুন তুমি সব টাই জানো কিন্তু কেনো ফিহার আসল পরিচয় কোনো একটা কারণে লুকিয়েছো
তাই আমি ভেবেছি সঠিক সময় এলে নিশ্চই সেই কারণটা তুমি বলে দিবে।

দাদুনঃ ফাতেমার কাছে আমি সবটাই শুনেছি। কীভাবে নিবিড়ের পুরো পরিবারকে মেরে ফেলার একটা ভয়ংকর খেলায় মেতে উঠেছিলো। ফিহার পরিচয় জানাজানি হলে শত্রুপক্ষ হয়তো ফিহাকেও মেরে ফেলবে।
কিন্তু কিং স্যার নিবিড়কে মেরে ফেলতে পারলেও

দাদুনের বাকি কথাটা বলার আগেই কেউ বলে উঠলো–

কিন্তু কিং স্যার আদ্র মির্জা নীলা মির্জা( ফিহা) এবং আরিশা মির্জাকে সেদিন মেরে ফেলতে পারেনি।

এই বলে ইরিনা আহান ও রুপ বাড়িতে ঢুকলো ।

এই সময় আহান ইরিনা ও রুপকে দেখে কিছুটা অবাক হলো ফারহাজ।

ফারহাজঃ তোমরা এখানে??

ইরিনা ঃ ফারহাজ তুমি জানতে চাইছিলে না? আহানের আসল পরিচয়?
আজকে তোমাকে আহানের আসল পরিচয় বলবো।
আহান হলো আদ্র মির্জা। আমাদের সেই ছোটবেলার
আদ্র ।

ফারহাজঃ আদ্র ( অবাক হয়ে)

আহান ও মাথা নাড়ায়।

বাড়ির সকলে যেনো আরেকদফা স্তব্ধ হয়ে যায়।

নিলয়ঃ ওয়াও! আদ্র ভাইয়াও বেঁচে আছে।

আহান গিয়ে ফারহাজকে জড়িয়ে ধরে। ফারহাজও নিবিড়ভাবে তার বন্ধু তার ভাইকে জড়িয়ে ধরে।
এতোদিন পরে দুই বেস্টফ্রেন্ড এক হয়েছে বলে কথা। সবাই মুগ্ধ হয়ে তাঁকিয়ে আছে। তাদের দিকে।

দাদুন ও আহানকে জড়িয়ে ধরে।।

রেনু বেগমঃ আদ্র দাদুভাই! তার মানে কি? আমার আরিশাও বেঁচে আছে।

আহানঃ হ্যা দিদা। অনেক টা জীবন্ত লাশ হয়ে।

রেনুঃ মানে?

আহানঃ একসময় বলবো।

ফারহাজঃ কিন্তু! আমি একটা জিনিস বুঝতে পারছি নাহ

আহানঃ সব কনফিউশন আমি ক্লিয়ার করে দিচ্ছি ফারহাজ। এতোদিন আমাকে শুধু ভুল বুঝানো হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে। আর তা করেছে কিং স্যার। কিং স্যার আমাকে মির্জা বাড়ির বিপক্ষে দাঁড় করিয়ে আমাকে খারাপ পথে চালানো করতে চেয়েছিলেন। কারণ কিং স্যার এর বাবার প্রতি একটা ক্ষোভ ছিলো যা এখনো রয়েছে। তাই আমাকে কিং স্যার ইউস করেছে। আর এই সত্যটা আজকে চোখ আজ্ঞুল দিয়ে আমাকে রুপ দেখিয়ে দিয়েছে। তাও নিজের জীবনের ঝুকি নিয়ে
ধন্যবাদ রুপ।

(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)
রুপঃ স্যার প্লিয। আমি তো শুধু নিজের পাপের প্রাশ্চিত্ত করেছি শুধু।

ফারহাজঃ ধন্যবাদ তো তোমার সত্যি পাওনা রুপ!
তুমি যদি সত্যটা আহানকে না বলতে তাহলে হয়তো আহান এখনো আমাদের শত্রু ই মনে করে যেতো।

ফারহাজ আবারোও বলে উঠে-
হ্যা আমি রিসার্চ করে জানতে পেরেছিলাম। কাকাই কিং স্যারকে ধরে ফেলেছিলে এন্ড এইটাও প্রমাণ করে ফেলেছিলো যে এইসব খুন এর পিছনে কিং স্যার আছে আর তার জন্যে কিং স্যারের ৫ বছরের জেলও হয়।

এইবার রুপ বলে উঠে-
এই ৫ বছরের জেলের জন্যে নিবিড় স্যার এর প্রতি কিং স্যার প্রতি ক্ষোভ তৈরি হয়। কিং স্যার চেয়েছিলেন নিজেকে নির্দোশ প্রমান করে নিবিড় স্যার এর উপর প্রতিশোধ নিবে। আর সেইটাই হয়
কিং স্যার নিজেকে নির্দোশ প্রমান করে এবং
প্রতিশোধ নেয়। আর এর পিছনে আমাদের কমিশনার স্যারেরে ও হাত আছে স্যার। তিনি সাহায্য করেছিলেন বলেই কিং স্যার নিজেকে নির্দোশ প্রমাণ করতে পেরেছিলো।

ফারহাজঃ ওহ আই সি তাই কমিশনার স্যার ইচ্ছে করে আমাকে এই কেস থেকে সরিয়ে ফেলেছিলেন।
যাতে এই কেস নিয়ে আমি বেশি ঘাটাঘাটি না করি।

আহানঃ আর এই কাজে আরেকজন
সাহায্য করেছিলো আর সে হলো
রাইহান মির্জা।

ফারহাজঃ বাবা( অবাক হয়ে)

মিসেস প্রিয়াঃ কিসব? আবলতাবল বকছো??

ইরাঃ আদ্র! মুখ সামলে তুইও জানিস আমার ছেলে এইসব কাজ কিছুতেই করতে পারে নাহ।

আহানঃ অতীত টা বড় কঠিন দাদী! তুমি যদি সেদিন শুনতে তাহলে বুঝতে পারতে সেদিন কি কি অবিচার করা হয়েছিলো আমাদের প্রতি,,,,

অতীত,,

আজ নিবিড় আরিশা, আদ্র ও ছোট্ট নীলা(ফিহা) গাড়ি করে
আজ সাংসাইন রেস্টুরেন্টের দিকে যাচ্ছে। রাইহান নাকি কোনো একটা সারপ্রাইজ দিবে তাদের। নিবিড় গাড়ি ড্রাইভ করছে। পাশে আরিশা বসে আছে।
পিছনের সিটে আহান এবং ফিহা।

তখনি হঠাৎ করে নিবিড় খেয়াল করে তাদের গাড়ির ব্রেক কাজ করছে নাহ ফলে গাড়ি যখন- তখন উল্টো যাওয়ার চান্স রয়েছে।

আরিশাঃ কি হয়েছে নিবিড়?

নিবিড়ঃ জানি নাহ আরিশা! কিন্তু গাড়ির ব্রেক কাজ করছে নাহ আরিশা!

আরিশাঃ সে কি? কি বলছো? এখন কী হবে???

ছোট্ট ফিহাও ভয়ে কেঁদে দিচ্ছে। আহানও বুঝতে পারছে নাহ সে কি করবে??

তখনি চারপাশ থেকে কিছু লোক গুলি ছুড়ছে।

আরিশাঃ নিবিড় দেখো??

নিবিড় যতসম্ভব চেস্টা করছে গাড়িটাকে ঘুড়িয়ে হলেও গুলি থেকে বাঁচতে।

নিবিড়ঃ তুমি বাচ্ছাদের নিয়ে বেড়িয়ে পড়ো আরিশা।
এইসব কিছু প্রিপার করা মার্ডার করার প্লান।

আরিশাঃ কি বলছো কি? আমি কিছুতেই তোমাকে ছেড়ে যেতে পারবো নাহ।

তখনি একটা গুলি এসে নিবিড়ের হাতে এসে লেগে যায়।

হ্যা গুলি টা কিং স্যার করেছে তাও মুখোশের আড়ালে। আদ্র জানালা থেকে পিছনে ঘুড়ে তাঁকায় সে আদ্রকে না দেখলেও আদ্র স্পষ্ট দেখতে পেলো
রাইহানের চেহারা। কিং স্যার এর মুখে মুখোশ ছিলো বিধায় আদ্র( আহান) তাকে দেখতে পায়নি।

আদ্রঃ কাকাই ( স্তব্ধ হয়ে)

আরিশাঃ নিবিড়! ( কাঁদতে কাঁদতে)

নিবিড় ব্যাথায় কুকড়িয়ে উঠে।

নিবিড়ঃ তোমাদের কি বললাম আমি? তাড়তাড়ি বেড়িয়ে যাও।

আরিশাঃ তোমাকে ছাড়া আমরা কেউ কোথাও যাবো নাহ।

নিবিড়ঃ আরিশা বুঝার চেস্টা করো। আমাদের বাচ্ছাদের একটা ফিউচার আছে। তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে পড়ে।

আদ্রঃ কিন্তু বাবা! তোমাকে ছেড়ে আমরা কী করে যাবো?
( কেঁদে)

নিবিড় ভাবলো এদের বুঝিয়ে লাভ নেই। সে সব দরজা খুলে দিলো। তারপর কিছুটা লেপ্ট টার্ন করলো। এতে আরিশা আদ্র ও ফিহা গাড়ি থেকে পড়ে গেলো আর গাড়িটাতে বিশাল একটা ব্লাস্ট হলো।

আরিশা নিবিড় বলে চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে গেলো। আদ্র শুধু স্তব্ধ হয়ে রয়েছে। ছোট্ট ফিহা কেঁদে যাচ্ছে। গাড়িটা ধপ করে জ্বলছে।
ছোট্ট আদ্র ও এইবার কেঁদে উঠলো। একদিকে তার মা অজ্ঞান অবস্হায় অন্যদিকে তার ছোট্ট বোনটি কেঁদে যাচ্ছে। সে কী করবে কিচ্ছু বুঝতে পারছে নাহ।

সে রাস্তা দিয়ে ফাতেমাও যাচ্ছিলো। ফাতেমা ছিলো
আরিশার ছোট্ট বেলার বান্ধুবি।
ফাতেমা আদ্রদের এই অবস্হায় দেখে তাদের কাছে ছুটে আসে।

ফাতেমাঃ আদ্র বাবা! তুমি এখানে??
তোমার মায়ের এই অবস্হা কেনো?

(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)

আদ্রঃ আন্টি আমার বাবাকে কেউ মেরে ফেলেছে। আপনি দয়া করে আমার বোনটিকে সামলান।
ও অনেক ছোট্ট

ফাতেমাঃ কি বলছো কি?

আদ্রঃ দয়া করুন আন্টি! আমার মাকে আমি দেখে নিবো। আপনি প্লিয আমার বোনটাকে নিয়ে যান। যদি কোনোদিন পারি তাহলে আপনার সাথে যোগাযোগ করবো।

ফাতেমা আর না ভেবে ফিহাকে কোলে তুলে নেয়। তার স্বামী মারা গেছে। একটি ইঞ্জিওতে সে চাকরী করতো।
ফিহাও কাঁদতে কাঁদতে ফাতেমার কোলে ঢোলে পড়ে। ফাতেমা আর কিছু না ভেবে ফিহাকে কোলে করে নিয়ে যায়।

বর্তমানে,,

আহানঃ বোনুকে ফাতেমা আন্টি নিয়ে যায় নিজের সাথে। তখন একেবারেই আমি অসহায় হয়ে পড়ি। একদিকে বাবা মারা যাওয়ার শোক অন্যদিকে মায়ের জ্ঞান ফিরছিলো নাহ। রাস্তায় পাগল-প্রায় হয়ে গিয়েছিলাম আমি। তখন অই কিং স্যার ভালো সেজে আমার মাথায় হাত রাখে। বার বার আমাকে বুঝানোর চেস্টা করে রাইহান কাকা বাবাকে খুন করেছে। আমার মাথায় প্রতিশোধ এর নেশা ধরিয়ে দ দেয়। আমাকে বানিয়ে দেয় তার গ্যাং এর লিডার।
আমাকে এইটাও বলে তিনি মায়ের সমস্ত চিকিৎসার দায়-ভার নিবে। তখন মা পাগল-প্রায়। আমাদের ক্যানাডায় নিয়ে যায় কিং স্যার। সেখানে নাকি মায়ের ভালো চিকিৎসা হবে
আমিও কিং স্যারকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করা শুরু করে দেই। তার কথা মতো নিজেকে আহান আহমেদ তৈরি করি কিন্তু বনুর কথা কিং স্যার জানতেন নাহ।

আহান কিছুক্ষন থামলো। সবার দিকে তাঁকালো। ইতিমধ্যে সকলের চোখেই জল চলে এসেছে। আহান আবারোও বলে উঠে-

ফাতেমা আন্টির সাথে আমার প্রায়-ই যোগাযোগ হতো। বনুর খবর নিতাম। বোনু দিনের পর দিন বড় হচ্ছিলো আর ছোটবেলার সব স্মৃতি সব ভুলে যাচ্ছিলো। ফাতেমা আন্টি থাকতো গ্রামে
বোনুর যখন ৮ বছর তখন গ্রামের কিছু বাজে লোক বনুর দিকে কু-নজরে তাঁকাতো। তাই আমিই আন্টিকে বলেছিলাম বনুকে নিয়ে ইরিনাদের বাড়িতে আশ্রয় নিতে। তারা যথেষ্ট ভালো মানুষ।
তারা বনুকে চিনবেও নাহ কেননা ততদিনে বনুর চেহারাও খানিক্টা পাল্টে যায় সময়ের সাথে সাথে।

আহান আবারোও বলে উঠে-
হ্যা আমি ভুল বুঝেছিলাম সেদিন। রাইহান কাকু হয়তো বাবাকে মারেনি কিন্তু কিং স্যারকে সাহায্য করেছিলো সেদিন।

ফারহাজের দাদী চুপ হয়ে যায়।

মিসেস প্রিয়াঃ নাহ নাহ যে যাই বলুক। আমি জানি উনি কিচ্ছু করতে পারেন নাহ।

আহানঃ আমি এখুনি প্রমান করে দিচ্ছি।

এই বলে আহান রুপের দেওয়া সেই ভিডিও ক্লিপ টা সবাইকে দেখায়। সবাই স্পষ্ট ভিডিও ক্লিপে রাইহান ও কিং স্যার এর সব কথা শুনে ফেলে।

ফারহাজ ভাবতেও পারছে নাহ তার বাবা এমন কাজ করেছে। ফারহাজ একজন আইনের লোক আর তার বাবাই কিনা সেদিন একজন ক্রিমিনালকে সাহায্য করেছিলো তাও কিনা নিজের ভাইকে মারার জন্যে

রাইজাদা ঃ আমার ছেলেটার এতো লোভী। হ্যা হ্যা রাইহান জানতো আমার অর্ধেক সম্পত্তি আমি নিবিড়ের নামে লিখে দিবো ঠিক করেছিলাম। এ নিয়ে রাইহানের সবসময় অমত ছিলো। আমার সাথে এই নিয়ে ঝগড়াও করেছিলো। তাই বলে সম্পত্তির লোভে নিজের ভাইকে মেরে ফেলতে চাইলো।

এই বলে তিনি বুকে হাত দিয়ে বসে পড়েন। রাইহান ও তানহা তাকে সামলায়। মিসেস ইরা কি বলবেন কিচ্ছু বুঝতে পারছেন নাহ।

মিসেস প্রিয়াও ভেজ্ঞে পড়েন।

ফারহাজ কিছু বলতে যাবে তখনি তার ফোনটা বেজে উঠে।

ফারহাজ ফোনটার দিকে তাঁকিয়ে দেখে মিসেস ফাতেমা….

ফারহাজঃ এক্সকিউজ মি!

এই বলে ফারহাজ আড়ালে গিয়ে ফোনটা রিসিভ করে।

ফারহাজঃ হ্যালো আন্টি ( কিছুটা ধরা গলায়)

ফাতেমাঃ ফারহাজ! তুমি বলেছিলে ফিহা আজকে আমার বাড়িতে আসবে কিন্তু ফিহা তো এখনো আসেনি।

ফারহাজঃ কিন্তু ফিহার তো অনেক আগেই পৌছে যাওয়ার কথা!

ফাতেমাঃ কিন্তু ফিহা তো এখনো পৌছোওনি!

ফারহাজঃ ওকে আন্টি আপনি চিন্তা করবেন নাহ।
আমি দেখছি।

এই বলে ফারহাজ ফোনটা কেটে দেয়।

ফারহাজ এইবার কিছুটা চিন্তিত হয়ে ড্রাইভার কাকুকে ফোন দেয়।

ফারহাজঃ হ্যালো ড্রাইভার কাকু? কোথায় আপনি? ফিহা এখনো পৌছায়নি কেনো?

ড্রাইভারঃ কি বলছেন সাহেব? এখনো পৌছয়নি? ফিহা ম্যাম তো আমাকে বললেন মাঝরাস্তায় গাড়িটা থামিয়ে দিতে। তারপর নিজে নিজে চলে গেলেন।

ফারহাজঃ ওয়াট?? আপনি কি কীরে এতোটা রিসপন্সিবল হতে পারেন? ফিহা বললো আর আপনি যেতে দিলেন ( চিল্লিয়ে)

—সাহেব আমি কী করবো? ম্যামকে মানা করেছিলাম কিন্তু।

ফারহাজঃ আপনি তো আর কিছুই বলিয়েন ই নাহ। রিডিউকিউলাস! ফিহার যদি কোনো ক্ষতি হয় আপনার চাকরী কী করে থাকে আমিও দেখে নিবে

এই বলে ফারহাজ রাগে ফোনটা ফেলে দিয়ে। তাড়াতাড়ি হন্তদন্ত হয়ে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো
। সবাই বুঝতে পারছে নাহ ফারহাজ কোথায় গেলো?

এদিকে।।

ফিহাএকবার চিরকুটের দিকে তাঁকালো। ফিহা এইটাই বুঝতে পারছে নাহ ফারহাজ তাকে নীলাঞ্জনা বলে কেনো ডাকলো? কিন্তু নীলাঞ্জনা এই নামটায় যেনো কিছু একটা ছিলো। ফিহার মনে হচ্ছে এর আগেও এই নামটি সে শুনেছে.। ফিহা কিচ্ছুক্ষন ভাবলো নাহ সে আবারোও ফারহাজকে নিয়ে কেনো ভাবছে?
চারদিকে অন্ধকারও হয়েছে বেশ ভয় করছে ফিহা
ফিহা এই বিষয়টা গুরুত্ব না দিয়ে এগোতে নিলে হঠাৎ করে কিছুর সাথে ভেজে সে পড়ে যায় ফিহা। পিছডালা রাস্তা কিছুটা ব্যাথা পায় ফিহা। তখনি ফিহা খেয়াল করে কিছু লোক তার দিকে এগিয়ে আসছে। সকলের মুখেই মুখোশ। তাদের চোখ গুলো কেমন ভয়ংকর। তার ফিহার দিকে কীভাবে তাঁকিয়ে যেনো এগোচ্ছে। ফিহাও ভয়ে ভয়ে পিছোচ্ছে। ফিহা ভয়ে ঢুক গিললো।

চলবে….!