পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ পর্ব-৫২+৫৩

0
1886

#পবিত্র_বন্ধনে_আবদ্ধ
#পর্ব – ৫২
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ফিহা কোনোরকম উঠে দাঁড়ায়। সে বুঝতে পেরেছে লোকগুলো সুবিধার নয়। সে তাড়াতাড়ি উঠে দৌড় দিতে নিলেই একজন মুখোশ পড়া লোক একটি ধারওয়ালা চিকন ছূড়ি ফিহার পায়ের দিকে ছুড়ে মারে। ছুড়িটা সোজা ফিহার পায়ে গেঁথে যায়। ফিহা ব্যাথায় মা গো বলে আবারোও নীচে বসে পড়ে। ফিহার আর্তনাদে লোক গুলো হেঁসে উঠে।
ফারহাজ দ্রুত গাড়ি ড্রাইভ করে যাচ্ছে।ফিহার কোনো বিপদ হলো নাহ তো?নানারকম বাজে চিন্তা ভীর করছে ফাযরহাজের মস্তিষ্কে। ফিহু চিন্তা করো নাহ তোমার লাটসাহেব খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবে।
তখনি ফারহাজ এর ফোনটা বেজে উঠলো। ফারহাজ দ্রুত ফোনটা রিসিভ করে তখনি অইপাশ থেকে কেউ কুৎসিত হাঁসি হেঁসে বলে উঠে- আমাকে চিনতে পারছো তো?
ফারহাজ দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে- তোকে চিনতে আমার তেমন একটা সময় লাগে নাহ কিং স্যার-!
কিং স্যারঃ ভালো ভালো খুব ভালো!
ফারহাজ মির্জা! আজকাল দেখি নিজের বউয়ের থেকে আমার খবর বেশি রাখছো তা বউয়ের খবর জানো তো? সে এখন কোথায় কার সাথে কি অবস্হায় আছে?
নোংরা কথাটি শুনেই ফারহাজের মাথা রক্ত উঠে গেলো সে চিল্লিয়ে বলে উঠলো-
Hey Don’T Talk about my wife with your dirty mouth. Otherwise I will sew your darty face
You Don’t know how horrible i can be
(তোর নোংরা মুখে আমার স্ত্রী সম্পর্কে কোনো কথা বলবি নাহ)

(নাহলে আমি তোর অই নোংরা সেলাই করে দিবো)

(তুই জানিস নাহ আমি কতটা ভয়ংকর হতে পারি)

কিং স্যারঃ রিলাক্স মাই বয় এতো উত্তেজিত হলে চলে? তুমি হয়তো জানো এই কিং নিজে কতটা ভয়ংকর হতে পারে এর প্রমানও আমি দিয়েছি। তোমার বাবা তোমার বউ দুজনেই এখন আমার কাছে বন্ধী। নিজের বাবা আর বউয়ের খারাপ না চাইলে চুপ থাকো

এই বলে কিং স্যার ফোনটা কেটে দেয়।

ফারহাজ গাড়ির হ্যান্ডেলে একটা পাঞ্চ মারে। কিং স্যার ডেরায় যেতে হবে। হ্যা সেই আশ্রম টাই হবে সেখানেই গেলেই ফারহাজ কিং স্যার এর ডেরা পাবে।

এদিকে,,

ফিহা একটি রুমে বন্দী হয়ে আছে তার পা থেকে অনবরত রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। সে চিৎকার করে কেঁদে যাচ্ছে। ফিহা এইটাও জানে নাহ তাকে কেনো বন্ধী করে রেখেছে। এই মুহুর্তে ফারহাজকে প্রচন্ড প্রয়োজন ফিহার। ফিহার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। ঠোট জোড়াও কাঠ কাঠ হয়ে শুকিয়ে গেছে। মৃদু আওয়াজে বললো–

লাটসাহেব কোথায় আপনি?

ফারহাজ মির্জা ডেরায় আক্রমণ করে ফেলেছে কথাটি কানে ভাঁসতেই বাঁকা হাঁসে কিং স্যার।

তিনি ওয়াইনে চুমুক দিয়ে নীচে নেমে পড়েন। কিং স্যার এর চারপাশে সবাই বন্ধুক হাঁতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে– উদ্দেশ্য কিং স্যার এর আদেশ এলেই সরাসরী ফারহাজকে শুট করে দিবে।

এদিকে কিং স্যার এর লোকেরা ফারহাজের দিকে এগিয়ে এলেই ফারহাজ সব গুলোকে উত্তমমাধ্যম মেরে যাচ্ছে। প্রচন্ড রেগে আছে সে। সব কয়টা হাপিয়ে উঠিয়েছে ফারহাজ এর সাথে পারছে নাহ পারবেও বা কী করে? যেখানে ফারহাজ এখন ট্রেনিং অফিসার। মারামারিতে সে সবসময় -ই পারদর্শী।

হঠাৎ ফারহাজকে পিছন থেকে কেউ আঘাত করে ফারহাজ পড়তে গিয়েও পড়লো নাহ সে পিছনে ঘুড়ে দেখে– কিং স্যার। হাতে বন্ধুক এর তাক ফারহাজ এর দিকে মুখ করে আছে।

ফারহাজ ও বন্ধুকের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে–

ফারহাজঃ ফিহা আর বাবা কোথায়? ( রেগে)

কিং স্যার বন্ধুকের মেইন পয়েন্টটা হাত দিয়ে কিছুটা চেপে বলে উঠে-
এতো কিসের তাড়া! ফারহাজ মির্জা আগে আমাদের মধ্যে বোঝাপড়াটা তো করতে দাও।

ফারহাজ এইবার বন্ধুকের মুখটা ধরে ফেলে। সজ্ঞে সজ্ঞে বাকিরা তার দিকে বন্ধুক তাক করে। ফারহাজ বাঁকা হেঁসে ফারহাজ বন্ধুকের মুখটা নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে বলে উঠে-
এইবার ঠিক আছে
এইবার বল কী বলবি

কিং স্যারঃ সাহস আছে বলতে হবে!

ফারহাজঃ তোর এই কিং নাম টা বৃথা! তোর মতো ভিতুর সাথে একদম-ই যায়না নামটা তুই তো একটা বিড়াল। জানিস তো সিংহ সবসময় ই তার বুকের পাঠা এগিয়ে রাখতেই পছন্দ করে কেননা সে বনের রাজা আর তোর মতো কিছু বিড়াল যারা শুধু মিউ মিউ ই করতে পারে তারা যখন সিংহের সাথে দেখা করতে আসে তখন নিজের সাথে এইসব চামচাদেরও নিয়ে আসে যদিও এতে তেমন একটা লাভ হয়না।
বলেই বাঁকা হাঁসে ফারহাজ.

তখনি অই পাগল মহিলাটি আসে। তিনি হাঁসতে হাঁসতে বলে-
হ্যা হ্যা আমি দেখছি কি করে এই বদ সবাইকে খুন করতো বলেই হু হা করে হেঁসে পাগল বুড়ি মহিলাটি দৌড়ে পালিয়ে গেলো।

কিং স্যারঃ সত্যি তোমার বুকের পাঠা আছে ফারহাজ মির্জা। বাংলায় আরেকটা কথা আছে তো জানো তো ফারহাজ মির্জা পিপিলিকার পাখা গজায় মরিবার তোরে। তোমারাও মরণ এখন আমার হাতে এই মুহুর্তে হবে এই বলে কিং স্যার ফারহাজকে শুট করতে যাবে তখনি কেউ পিছন থেকে কিং স্যার এর দিকে বন্ধুক তাক করে কিং স্যার পিছনে তাঁকিয়ে দেখে আহান।

আহানঃ কে মরবে আজ সেইটা তো সময়ই বলে দিবে।

কিং স্যারঃ আহান তুমি !

আসলে আহানের লোকেরা আহানকে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছিলো। কিং স্যার ফিহাকে বন্ধী করে রেখেছে তাই সেও চলে এসেছে।

আহানঃ কেনো কী ভেবেছিলি তুই? আমার বাবার খুনি হয়ে আমার সামনেই ভালো সেঁজে থাকবি আর আমি কিচ্ছুটা জানবো নাহ?? আজকে তোকে মেরেই ফেলবো ( চিৎকার করে)

(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)

কিং স্যার হু হা করে হেঁসে উঠে-
আমাকে মারা এতো সোজা?

তখনি চারপাশ থেকেগুলি ছুড়তে শুরু করলো কিং স্যার এর লোকেরা। ফারহাজ ও নিজের গান বের করে পালটা আক্রমন করতে শুরু করলো।

কিং স্যার জানে পরিস্হিতি সুবিধার না তাই তিনি দ্রুত উপরের দিকে যেতে নিলে আহান গিয়ে তাকে খপ করে ধরে ফেলে এবং উত্তমমাধ্যম মারা শুরু করে। কিং স্যার পালটা আক্রমন করতে শুরু করে কিন্তু যেহুতু বয়স হয়ে গেছে। তাই তিনি হাপিয়ে উঠেন।

। রাইহান ও কোনোরকম বেড়িয়ে আসে।

তখনি রুপ ফারহাজের কথামতো পুরো পুলিশ ফোর্স নিয়ে এসে পড়ে।

চারদিকে পুলিশ ফোর্স ঘেরাও করে ফেলে। কিং স্যারের লোকেদের ধরে ফেলে।

মিঃ অফিসার রয় এবং ওসি স্যার ও এসেছেন-!

ফারহাজঃ স্যার আপ্নারা চলে এসেছেন

ওসিঃ হ্যা ফারহাজ আর
আহান আহমেদ! আপনি উনাকে ছেড়ে দিন। আমরা এখন বুঝে নিবো।

আহান কিং স্যারকে ছেড়ে দেয়। পুলিশরা কিং স্যারকে ধরে ফেলে।

ফারহাজঃ স্যার,!

ওসিঃ হ্যা ফারহাজ কিং স্যার এর বিরুদ্বে যেসব ড্যাটা তুমি কালেক্ট করেছো তা রুপ আমাকে দিয়েছে। কমিশনার এর বিরুদ্বেও আমি যথাযথ সেপ্ট নিবো। ধন্যবাদ এই সিরিয়াল কিলারকে ধরানোর জন্যে।

ফারহাজঃ স্যার এইটা তো আমাদের ডিউটি..! এখন শুধু আপনি এইটা দেখবেন এইবার যেনো এই কিলার টা ছাড় না পায়।

আহানঃ এই কিং স্যার আমাদের থেকে আমার বাবাকে কেড়ে নিয়েছে। উনাকে ছাড়বেন নাহ অফিসার ( রেগে)

ওসিঃ চিন্তা করবেন নাহ! যথাযথ ব্যাবস্হা গ্রহণ করা হবে আর ফারহাজ তো আছেই কালকে এসেই না হয় এই কেস কোর্টে ফারহাজ- ই নিয়ে যাবে।

রুপঃ কিন্তু আমি এইটুকুই বুঝতে পারছি নাহ উনি কেনো এইসব বিষের ব্যাবসা করতেন হ্যা টাকার জন্যে করতেন কিন্তু সব বিসনেজম্যান দের ই বা কেনো টারগেট করতেন?

কিং স্যার এইবার মুখ খুললেন…
বেশ করেছি যা করেছি। আমি আবারোও বের হবো কেউ আটকাতে পারবে নাহ এই বলে কিং স্যার
হু হা করে হেঁসে উঠে

ফারহাজঃ আমার মনে হয় উনি সত্যি একটা সাইকো।
তখনি রাইহান এসে বলে উঠে-
কিং স্যার না হয় সাইকো কিন্তু আমি তো সুস্হ
আমি কী করে পারলাম কিং স্যারকে সাহয্য করতে তাও লোভের জন্যে ছিহ। আমাকেও এরেস্ট করে নিন।

ওসি সাহেবের কথামতো রাইহানকেও এরেস্ট করা হয়।

রাইহানকে দেখে ফারহাজ মুখ ঘুড়িয়ে ফেলে।

রাইহানঃ পারলে তোমার এই খারাপ বাবাকে আমাকে ক্ষমা করো!

ফারহাজঃ বাবা ডাক শুনার অধিকার আপনি হারিয়েছেন।

হঠাৎ কিছু একটা মনে পড়তেই ফারহাজ কিং স্যার কলার চেপে ধরে বলে উঠে-

তার আগে এইটা বল আমার ফিহু কোথায়? ওর সাথে কিছু খারাপ করেছিস নাকি বল( চিৎকার দিয়ে)

কিং স্যার ঃ নাহ ওকে উপরের রুমে আটকিয়ে রেখেছি।

ফারহাজ আহানের দিকে একবার তাঁকিয়ে বলে উঠে-

তুই এখানে থাক! আমি দেখি ফিহু ঠিক আছে কি না

আহানঃ ওকে

ফারহাজ দৌড়ে উপরে চলে যায়।

কিং স্যার আবারোও বলে উঠে-

এইটাই তো ভাবছো তাইনা? আমি সাইকো? হু হু হু হ্যা আমি সাইকো।
আমার বিষ তো তৈরি ই হয় বড় বড় বিসনেজম্যানদের মারার জন্যে। তাদের প্রতি শুধুই আমার ঘৃণা কাজ করে বুঝেছো?
আমার আজোও মনে পড়ে আমার বাবা ছিলো একজন বড় বিজ্ঞানি। এক বিষাক্ত বিষ প্রয়োগ করার সময় বাবা একটা এক্সিডেন্টে মারা যায়।
আমার বাবা মারা যাওয়ার পর আমার মাকে আর আমাকে অসহায় পেয়ে কিছু বিসনেজ ম্যান আমার মাকে ধর্ষন করে। ওরা সবাই খারাপ সবাই খারাপ।
কাউকে ছাড়বো নাহ! আমি আবারোও বের হবে আবারোও খুন হবো।

ওসিঃ এ বলে কী? এতো সত্যিই সাইকো।

আহানঃ হয়তো তারা আপনার সাথে অন্যায় করেছিলো কিন্তু তাই বলে আপনি সবাইকে খুন করবেন? একজন খারাপ ছিলো বলে সবাই কি খারাপ হবে? অফিসার একে আগে চিকিৎসা করান।

রুপঃ ঠিক বলেছেন।

এদিকে,,,

ফারহাজ রুমে এসে দেখে চারদিকে রক্ত ছড়িয়ে আছে। ফিহা কোথাও নেই। ফারহাজের মাথা হ্যাং হয়ে যায়।

ফিহা পা খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটছে বহু কস্টে তা পা কেটে গেছে। রক্ত বেয়েই পড়ছে। ফিহা কোনোরকম পালিয়ে গেছে। ফিহা এখন কোথায় সে জানে নাহ।

পায়ের ব্যাথায় সে মাটিতে আবারোও বসে পড়ে।

ফিহাঃ লাটসাহেব আমাকে শুনতে পাচ্ছেন ( কাঁদতে কাঁদতে)
আপ্নার ফিহু আপনাকে এখন খুব প্রয়োজন!

আল্লাহগো এই যন্ত্রনা আমি সহ্য করতে পারছি নাহ।

ফিহা ব্যাথায় চিৎকার করে যাচ্ছে। পা বেয়ে এখনো রক্ত গড়িয়ে যাচ্ছে।

চলবে।।।

#পবিত্র_বন্ধনে_আবদ্ধ
#পর্ব – ৫৩ (বোনাস) (এ কেমন মোড়)
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ফারহাজ রুমে ঢুকে ফিহাকে দেখতে না পেয়ে পাগলপ্রায় হয়ে যায়। তারমধ্যে চারদিকে রক্তের ছড়াছড়ি। ফারহাজ ভয় পেয়ে যায় তার ফিহুর কিছু হলো নাহ তো? ফারহাজের চোখ পাশে থাকা দড়ি আর সাইডে থাকা ছোট্ট দরজার দিকে যায়। তার মানে ফিহা অই ছোট্ট দরজা টুকু দিয়েই হয়তো কৌশলে পালিয়েছে। ফারহাজ দৌড় দেয় সেদিকেই।

এদিকে ফিহা কোনোরকম কস্ট করে নিজের পায়ের থেকে সেই ধারওয়ালা ছুড়িটা বের করে নেয়।
এতে আরো কিছু রক্ত বেয়ে পড়ে। ফিহা উঠে দাঁড়ায়।কাকে ডাকছিলো সে তার লাটসাহেব কে? যে কি তাকে ভালোবাসেই নাহ। তার কাছে মুক্তি চায়।
ফিহা একজব স্ত্রী হলেও সে প্রেমিকার ন্যায় তার বরের প্রতি অভিমানের পাল্লা ভারি করে ফেলেছে। আসলে মেয়েরা এমনই হয় তারা কিছুতেই তার ভালোবাসার মানুষের অবহেলা কিংবা ভালোবাসা মানুষটির তার প্রতি যদি কোনো অনিহা চলে আসে সেইটা কখনো সহ্য করতে পারে নাহ। যেমনটি ফিহা পারছে নাহ।
ফিহা জোড়ে জোড়ে শ্বাস নেয়। শরীরটা দুর্বল লাগছে ভীষন৷ এম্নিতেই আজ সারাদিন তার খাওয়া-দাওয়া কিচ্ছু হয়নি। ফিহা শাড়িটা কেমন এলোমেলো হয়ে গেছে। ফিহা বিদ্রুপ হাঁসি হাঁসে। যার জন্যে শাড়িটা পড়েছিলো সে যেমন তাকে প্রতাক্ষান করে তার জীবনটা করে দিলো এলোমেলো শাড়িটা কেমন যেনো জীবনের ন্যায় এলোমেলো হয়ে গেলো। ভাবলো ফিহা।
কিন্তু ফিহা তো ফারহাজকে কথা দিয়েছিলো দূরে চলে যাবে সে অনেক দূরে যেখানে চাইলেও ফারহাজ আসতে পারবে নাহ। ভাবতে ভাবতেই ফিহা রেলওয়ে বাস স্টেশের দিকে পা বাড়ালো।

মিঃ রাইহান কিং স্যারকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে নিয়েছে। রাইহান মির্জা সত্যি লজ্জিত। পাপ পাপ কখননি ছাড়ে নাহ প্রবাদ বাক্যটি একেবারেই ফলে গেলো রাইহান মির্জার জীবনের সাথে। এদিকে কিং স্যার এর মধ্যে কোনো ভাবান্তর নেই। যে একজন নিজেই সাইকো সে আর কী বা বলবে? কমিশনার স্যারকেও তার পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং এরেস্ট করা হয়েছে।

আহান বার বার ফারহাজকে ফোন করার চেস্টা করছে কিন্তু ফারহাজ ফোন ধরছে নাহ। আচ্ছা তার বনুর কোনো ক্ষতি হলো নাহ তো? আবার

এদিকে ফারহাজ পাগলের মতো সারা রাস্তায় জুড়ে ফিহাকে খঁজে যাচ্ছে। ফারহাজ দেখতেও কেমন যেনো উস্কখুস্কো লাগছে। ফিহু বলে সে চিৎকার করে যাচ্ছে। রাস্তার লোকেরা কেমনভাবে যেনো ফারহাজের দিকে তাঁকিয়ে আছে। ফারহাজ সেসব এর চিন্তা না করে রাস্তায় দৌড়ে যাচ্ছে। কিন্তু কোথাও ফিহাকে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে নাহ। বার বার শুধু ফারহাজের কানে ফিহার সেই কথাটি ভেসে উঠে।অনেক দূরে চলে যাবো আমি যেখানে আমাকেও কেউ পাবে নাহ।
ফারহাজ এইবার হাটু গেড়ে বসে প্রায় কেঁদেই দেয়। ছেলেরা সহজে কাঁদে নাহ কিন্তু যখন তার ভালোবাসা নিয়ে বিষয়টি হয় তখন সে কাঁদতে বাধ্য হয়। হ্যা আজ সেই বদ মেজাজী রাগি ফারহাজ তার পুচকি নীলাঞ্জনার জন্যে কাঁদছে ।

বাতাসে একটি গান খুব করে ভেসে উঠছে—
Paas aaye
Dooriyaan phir bhi kam naa hui
Ek adhuri si hamari kahani rahi
Aasmaan ko zameen, ye zaroori nahi
Jaa mile… jaa mile
Ishq saccha wahi
Jisko milti nahi manzilein… manzilein

Rang thhe, noor tha
Jab kareeb tu tha
Ek jannat sa tha, yeh jahaan
Waqt ki ret pe kuch mere naam sa

Likh ke chhod gaya tu kahaan

Hamari adhuri kahani
Hamari adhuri kahani 💔💔

এদিকে ফিহা দৌড়াতে দৌড়াতে বাস স্টেনে চলে আসে। এখান থেকে কোনো বাস পেয়ে সে অনেক দূরে চলে যাবে কিন্তু তার কাছে তো এখন টাকাও নেই। এক কাপড়ে মির্জা বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসেছে সে। তখনি ফিহা খেয়াল করে–

কোথা থেকে পামকিন দৌড়াতে দৌড়াতে আসছে। পামকিনকে দেখে নিজের অজান্তেই মুখের হাঁসি ফুটে উঠে ফিহার। পামকিন দৌড়ে ফিহার কোলে ঝাপিয়ে পড়ে। যেনো ফিহার৷ এই কোলে একটু অবস্হান পাওয়ার জন্যেই সে ছটফট করছিলো।
ফিহাও পরম মমতায় তার পামকিনকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠে-
পামকিন আমার বাচ্ছা! আমার দিকে তাঁকা!

পামকিন ড্যাভড্যাভ করে ফিহার দিকে তাঁকিয়ে আছে।

ফিহাঃ তোকে কি বলে এসেছিলাম? হুহ আমার অনুস্হিতে আমার পরিবারের সবার খেয়াল রাখবি। আমার লাটসাহেব বড্ড জেদি খালি জিনিস ভেজ্ঞে ফেলে উনার দিকেও খেয়াল রাখতে হবে নাহ বল? তুই ছাড়া কে রাখবে আমার বাচ্ছা?
বলতেই বলতেই ফিহা কেঁদে উঠে।

পামকিন অসহায় দৃষ্টিতে ফিহার দিকে তাঁকিয়ে আছে।

ফিহা পামকিনকে নামিয়ে ফেলে।

ফিহাঃ যাহ পামকিন। মির্জা বাড়িতে যাহ। সকলের দায়িত্ব তোর উপরে কিন্তু।

পামকিন মাথাটা নিচু করে দৌড়ে চলে যায়। ফিহা জানে তার পামকিন ঠিক তার কথা শুনবে।

তখনি চট্টগ্রামের একটি বাস এসে তার সামনে থামে।

ফিহা আর কিছু না ভেবে চট্রগ্রামের বাসে উঠে পড়ে। কত স্মৃতি রয়েছে এই শহরে তার। তার বন্ধু তার মা।
তার লাটসাহেব। লাটসাহেব এর কথা মনে পড়তেই হু হু করে কেঁদে উঠে। ফিহা। বাস ছেড়ে দেয় তার গন্তব্যের উদ্দেশ্য…
Khushbuon se teri yunhi takra gaye
Chalte chalte dekho na hum kahaan aa gaye

Jannatein agar yahin
Tu dikhe kyun nahin
Chaand suraj sabhi hai yahaan
Intezar tera sadiyon se kar raha
Pyaasi baithi hai kab se yahaan

Hamari adhuri kahaani
Hamari adhuri kahaani

Hamari adhuri kahaani
Hamari adhuri kahaani

ফারহাজ আবারোও উঠে দাঁড়ায় নাহ তাকে তার ফিহু খুঁজতেই হবে মেয়েটার ভালো করতে গিয়ে সে বোধহয় অন্যায় ই করে ফেললো। ফিহা বলা প্রত্যেকটা খারাপ কথা ফারহাজের মনে পড়ে যাচ্ছে। একটা মানুষ তখনি তার ভুলের জন্যে অনুতপ্ত হয় যখন তার হাতে একদম- ই সময় থাকে নাহ।

ফারহাজ ফিহা বলে চিল্লাতে চিল্লাতে বাস স্টেশের দিকে এগোতে থাকে। কিন্তু কাউকে দেখতে পেলো নাহ।

ফারহাজ কি সত্যি তার পুচকি বউটাকে হারিয়ে ফেললো? হয়ে গেলো সে একেবারেই শুন্য।

ফারহাজ জোড়ে ফিহা বলে চিৎকার দিলো। ফারহাজ এর চিৎকারে পুরো বাস স্টেশেনের মানুষ তার দিকে অবাক পানে তাঁকিয়ে রকাহানি

Pyaas ka ye safar khatam ho jayega
Kuch adhura sa jo tha poora ho jayega

Jhuk gaya aasmaan
Mill gaye do jahaan
Har taraf hai milan ka samaa
Doliya hain saji
Khushbuein har kahin
Padhne aaya Khuda khud yahaan

Hamari adhuri kahani
Hamari adhuri kahani

ফারহাজ একেবারে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে তখনি একটি গাড়ি এসে ফারহাজকে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। ফারহাজ ছিটকে পড়ে যায়। মুহুর্তের মধ্যে কি হলো সবার বুঝতে কিছুটা অসুবিধা হলো। আহান ফারহাজকে রক্তাক্ত অবস্হায় দেখে তাড়াতাড়িচ ছুটে গেলো। রাস্তার সকলেও জড়ো হলো। ফারহাজ মাথা তুলতে পর্যন্ত শুধু একবার মৃদু কন্ঠে ফিহু বলে জ্ঞান হারালো।

Hamari adhuri kahani 💔💔

চলবে…