#পবিত্র_বন্ধনে_আবদ্ধ
#পর্ব- ৫৪ ( নতুন মোড়)
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
মানুষ বড্ড অভিমানে প্রানী। অভিমানে সে সবসময় দুরে চলে যায় আর বুকে পুষে রাখে এক সমুদ্র ভরা আক্কেপ। পাওয়া জিনিসগুলো না পাওয়ার আক্ষেপ। ফিহা ভাবে ইসস আজকে আজকে তার জীবনের গল্পটি কী অন্যরকম হতে পারতো নাহ? ভাবতে ভাবতেই ফিহার পিঠে কেউ চাপড় মারে। ফিহা পিছনে তাঁকিয়ে দেখে আদিয়া। ফিহার বেস্টফ্রেন্ড। আদিয়া ফিহা সিমি পটকা ও টিউপের সাথেই পড়তো। কিন্তু যখন তার বাবার বদলি হয়ে যায় তখন আদিয়া চট্টগ্রামে চলে আসে। ফিহা চট্টগ্রামে এসে আদিয়ার বাড়িতেই প্রথমে উঠেছিলো। আদিয়ার বাবা- মাও ছিলেন যথেষ্ট ভালো। তারাও নির্দিদায় ফিহাকে তাদের বাড়িতে থাকতে দিয়েছিলেন। ফিহা আদিয়ার দিকে বিরক্তি চাহনি নিক্ষেপ করে বলে উঠে-
তুই এখানে?
আদিয়াঃ সারাদিন কি এতো ভাবিস বলতো? কলেজে যাওয়ার সময় হচ্ছে তো মা কিন্তু সেই কখন থেকে ডেকে যাচ্ছে তোকে খেতে আয় জলদি।
এই বলে আদিয়া তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে পড়ে।
হ্যা সময় কখনো থেমে থাকেনি। তেমনি থেমে থাকেনি ফিহার জীবন। ফিহা এখন কিশোরী বয়স থেকে ১৮ বছরের তরুনীতে পা দিয়েছে। লাজ-লজ্জা সব কিছুই যেনো যেনো তার তরুনী বয়সে ভর করে ফেলেছে। সাথে অভিমান ও
কিশোরী বয়সের অভিমান গুলো এতোটাই দাগ কেটে গেছে তার মনে যে এখন তা পাহাড় সমান আকার ধারণ আছে। কিন্তু সত্যি এইটাই ফারহাজকে সে এখনো মনেপ্রানে ভালোবাসে। ফিহা চায় ফারহাজ যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক। ফারহাজের মুক্তির জন্যেই তো ফিহা তাকে ছেড়ে চলে এসেছে। যাতে ফারহাজ ভালো থাকে।
আগে থেকে সে চুপচাপও হয়ে গেছে বটে।আদিয়ার বাড়িতে সে অনির্দিষ্টকালের জন্যে থাকতে চেয়েছিলো। ভেবেছিলো টিউশিউনি করিয়ে হোস্টেলেই থাকবে। কিন্তু আদিয়ার বাবা -মার এতে ঘোর আপত্তি। তারা থাকতে ফিহা কেনো হোস্টেলে থাকবে? তারা কি ফিহার কেউ নয়? ফিহা তাদের সব ই খুলে বলেছে তারা ফিহাকেই সাপোর্ট করে। ফিহা ইচ্ছে করেই এতো বছরে কারো সাথে যোগাযোগ করেনি। ভাবতে ভাবতেই ফিহা ও আদিয়া কলেজের গেটে আসে। ফিহা এখন ইন্টার ২য় বর্ষের ছাত্রী।
🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁
হসপিটালে করিডোরে মিঃ রাইজাদা, রাহাত ও আহান ও বাড়ির সকলে ডক্টরের জন্যে অপেক্ষা করছে।
এতো বছরে সবকিছু যেনো কেমন বদলে গেছে। ইরিনা নেহাল বিয়ে করে ফেলেছে। যদিও ছোটখাটো করেই করা হয়েছে। রাইহানের ১ বছরের জেল হয়েছিলো। বাড়ির প্রতিটা লোক তাকে ঘৃণা করে বলেই সে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে। কিং স্যারের আজীবন কারাদন্ড হয়েছে। মিঃ রাইজাদার বয়স হয়েছে। আহান আর নিলয় ই আপতত ব্যবসা সামলায় রাহাতের সাথে। নিলয় পড়াশোনার পাশাপাশি সামলায়। ফারহাজের দাদু ও ফারহাজের মা ও নিজেদের ব্যাবহারে লজ্জিত।
আহান ও ইরিনা সম্পর্কে টা স্বাভাবিক হলেও আহান প্রতিরাতে তার বনুর জন্যে ঢুকরে কেঁদে উঠে। এতোবছর পর তার বনুকে পেয়েও হারিয়ে ফেললো সে। আহানের মায়ের চিকিৎসা এখনো চলছে ক্যানাডায়।
অপেক্ষার অবসান করে ডক্টর বেড়িয়ে এলো। সকলে যেনো তার কাছে একেবারে গিয়ে হুমড়ি খেলো।
🍁🍁🍁🍁🍂🍂🍂🍂🍂🍁
মিসেস প্রিয়াঃ ডক্টর ডক্টর আমার ছেলে কেমন আছে?
মিসেস ইরাঃ দাদুভাই ঠিক আছে তো?
রেনু বেগমঃ কিছু তো বলুন!
রাইজাদাঃ তোমরা একটু থামবে? আগে বলতে তো দাও!
ডক্টরঃ আপনাদের চিন্তা করার কোনো কারণ নেই।
মিঃ ফারহাজের পা আপতত ঠিক আছে। উনি এখন ভালো করে চলাফেরা করতে পারবেন। কিন্তু দেখবেন উনাকে কিন্তু সাবধানে থাকতে হবে।
ইশিকাঃ চিন্তা করবেন নাহ ডক্টর আমরা ভাইয়ার পুরো খেয়াল রাখবো।
(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)
আসলে সেদিনের এক্সিডেন্ট এর পরে ফারহাজ এর এক পা প্যারালাইজড হয়ে যায়। দীর্ঘ ৩ বছর পর তার পা ঠিক হয়েছে।
আহানঃ ডক্টর এখন কী? আমরা কেবিনের ভিতরে যেতে পারি?
ডক্টর ঃ অবশ্যই!
সবাই কেবিনের ভিতরে ঢুকেই অবাক হয়ে যায়। কেননা ফারহাজ নিজের প্রপার গেট-আপ নিয়ে রেডি হয়ে গেছে।নিজের সু টাও পড়ে নিয়েছে। ফারহাজ কিছুটা গম্ভীর দেখা যাচ্ছে। ফারহাজ আগের থেকেও বেশি সুন্দর হয়ে গেছে। ফারহাজকে এতো বছর পর দাঁড়াতে দেখে সকলের মুখে হাঁসি ফুটে উঠে। মিসেস প্রিয়া তো কেঁদেই দেয়। ইশিকাও কেঁদে দেয়। নেহাল ইশিকার মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত হতে বলে।
ফারহাজঃ উফফ তোমরা এতো মরা কান্না কাঁদছো কেন?
আহানঃ ফারহাজ!
ইরিনাঃ আমি তো বিশ্বাস ও করতে পারছি নাহ। ফারহাজ তুমি ঠিক হয়ে গেছো
নিলয় ঃ ব্রো
এই বলে নিলয় ফারহাজকে জড়িয়ে ধরে আহান ও গিয়ে জড়িয়ে ধরে। ফারহাজও তাদের সান্নিধ্যে তাদের জড়িয়ে ধরে।
রেনু বেগম ফারহাজের কপালে চুমু খায়।
ফারহাজ মিসেস প্রিয়াকে কাঁদতে দেখে বলে উঠে-
মা প্লিয কেঁদো নাহ! আমি তো ঠিক আছি তাইনা? ( গম্ভীর কন্ঠে)
মিসেস প্রিয়াঃ আমার কস্টটা যে তুই বুঝবি নাহ রে বাবা!
ফারহাজের দাদিঃ আচ্ছা এইবার এইসব বাদ দে। ঘরের ছেলে আগে ঘরে ফিরে আসুক।
ফারহাজ ঘড়িটা পড়তে পড়তে বলে উঠে-
আমি তো মির্জা বাড়িতে যাবো নাহ দাদি।
মিঃ রাইজাদাঃ কি বলছো দাদুভাই?
ফারহাজঃ হ্যা দাদুন..!
So far my birds have flown a lot becouse of my illness. Now It’s time for the bird to return to It’s nest.
(আমার অসুস্হতার সুযোগ নিয়ে আমার পাখি অনেক উড়েছে এইবার সময় হয়েছে পাখির তার নিজের নীড়ে ফিরে আসার)
সবার বুঝতে অসুবিধা হলো নাহ পাখি বলতে ফারহাজ ফিহাকে বুঝিয়েছে।
আহান কিছু বলবে তার আগেই ফারহাজ আহানের কাঁধে হাত রেখে বলে উঠে-
চিন্তা করবি নাহ তোর বোনকে ফিরে নিয়ে আসবো।
ফারহাজ এইবার বাকি সবাইয়ের দিকে তাঁকিয়ে বলে উঠে-
জাস্ট দুইদিন জাস্ট দুইদিনের মধ্যেই মির্জা বাড়ির বউকে তোমাদের সামনে এনে হাজির করবো। তোমরা সবাই বাড়ির বড় বউয়ের স্বাগতম এর ব্যবস্হা করো।
মিসেস প্রিয়াঃ কিন্তু বাবা! তুই একবারও যাবি নাহ বাড়িতে?
ফারহাজঃ ফারহাজ মির্জা তার বউ ফিহা মির্জাকে নিয়েই মির্জা বাড়িতে যাবে তার আগে নয়।
এই বলে ফারহাজ বেড়িয়ে পড়ে। সবাই বুঝতে পারছে নাহ তারা এতোদিন ধরে ফিহাকে খু্ঁজে পেলো নাহ তাহলে দুইদিনের মধ্যে ফারহাজ কীভাবে ফিহাকে পাবে।
🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁
এদিকে ফারহাজ গাড়ি ড্রাইভ করছে উদ্দেশ্য চট্টগ্রাম।
আদিয়া ও ফিহা কলেজের ক্যান্টিনে বসে আছে। আদিয়া বলে উঠলো-
ফিহা চল নাহ আজকে সিনেমাতে যাই …
ফিহাঃ নাহ রে আজকে একটা ক্লাস আছে সময় নেই।
আদিয়াঃ এমন করিস কেন? সিনেমা হলে নতুন সিনেমা মুক্তি পেয়েছে!
ফিহাঃ কিন্তু!
আদিয়াঃ কোনো কিন্তু নয় চল তো ভালো লাগবে
এই বলে আদিয়া ফিহার হাত ধরে টেনে বের করে যেতে লাগলো।
ফিহা বের হতেই একজন পিচ্ছি দৌড়ে একটি বিশাল বড় গাড়ির সামনে এসে বলল–
ভাই ভাই ভাবি বের হয়েছে।
পিচ্ছির কথা শুনেই ফারহাজ তার জানালার কাচ খুলে দিলো। ফিহার কলেজের গেটের থেকে বেশ দুরেই ফারহাজ এর গাড়ি।
নিজের নীলাঞ্জনাকে দেখে এতো বছর পর দেখে ফারহাজ এর বুকে ঝড়ের ন্যায় তলপাড় শুরু হয়ে গেলো। মুখে ফুটে উঠলো হাঁসি। কতবছর আজ ফারহাজের মুখে হাঁসি ফুটেছে। এই অনুভুতি তো ফারহাজ বলেই বুঝাতে পারবে নাহ।
তার পুচকি বউটি আর পুচকি নেই। সে এখন নারীতে পরিনত হয়েছে। সব রুপ যেনো তার কাছে ধরা দিয়েছে এই তরুনী বয়সে। ফারহাজ মুগ্ধ হয়ে তার ফিহুকে দেখতে লাগলো তারপর পিচ্ছিটার কানে কিছু একটা বললো।
পিচ্ছিঃ চিন্তা করবেন নাহ ভাই–! আপনার কথামতো কাজ হয়ে যাবে।
এই বলে পিচ্চিটা দৌড় দিলো। ফারহাজ বাঁকা হেঁসে বলে উঠলো-
পিচ্ছি ছিলে বলে আমার সেই ভয়ংকর রুপ সম্পর্কে তোমার ধারণা হয়নি কিন্তু এইবার থেকে হবে। এতোদিন আমার থেকে দূরে থেকে আমাকে কস্ট দেওয়ার প্রত্যেকটা হিসাব নিবো ডার্লিং।
আদিয়া ও ফিহা রিশ্কার জন্যে ওয়েট করছে। তখনি সে পিচ্ছিটা এসে বলে উঠে-
আপু আফনের একটা জিনিস ক্যান্টিনে ফেলে গেছেন।
আদিয়াঃ আমার? ( অবাক হয়ে)
–হু আফনের।
আদিয়া একবার ফিহার দিকে তাঁকিয়ে বলে উঠলো-
ঠিক আছে ফিহা তুই বরং থাক আমি গিয়ে দেখি।
ফিহাঃ ঠিক আছে। আমি এখানে অপেক্ষা করছি।
আদিয়া চলে যায়।
ফিহা দাঁড়িয়ে থাকে তখনি একটা চলন্ত গাড়ি চলে থামলো এবং গাড়ির ডোরটা খুলে সজ্ঞে সজ্ঞে ফিহাকে হেচকা টান দিলো কেউ। ফিহা সোজা গিয়ে তার বুকে পড়লো। সজ্ঞে সজ্ঞে অটোমেটিক গাড়ির সব ডোর অফ হয়ে গেলো।
চলবে…. 😉
#পবিত্র_বন্ধনে_আবদ্ধ
#পর্ব- ৫৫
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
এক মুহুর্তে কি হয়ে গেলো বুঝতে ফিহার বড্ড অসুবিধা হলো। সে এখন কারো বুকে লেপ্টে আছে।পরিচিত ঘ্রান নাকে আসতেই ফিহার স্পন্দন থেমে যাওয়ার উপক্রম । সে যা ভাবছে তা কি আদোও সম্ভব? ফারহাজ এর শরীরের সেই নেশাক্তঘ্রান সে এতোবছরেও ভুলেনি। ফিহার ভাবনার মাঝে ঘোর কন্ঠে তার কানে আস্তে করে বলে উঠে- ফিহু তুমি যা ভাবছো ঠিক তাই,তোমার লাটসাহেব বর এসেছে।
এই বলে ফারহাজ ফিহার কানে আস্তে করে চুমু খায়। সজ্ঞে সজ্ঞে ফিহা ছিটকে সরে আসে ফারহাজ এর কাছ থেকে। এতোবছর নিজের লাটসাহেব কে দেখে ফিহার ইচ্ছে করছে খুব করে কাঁদতে। খুব করে। ফারহাজ এর অই বুকটাই, সেই আগের মতো। ফিহা গলাটা ভিজিয়ে নিলো, সে এমন কাজ কিছুতেই করবে নাহ কিছুতেই ফারহাজ এর কাছে সে নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করবে নাহ। সে তো এতোবছর নিজেকে সামলিয়ে নিয়েছিলো তাহলে কেনো? কেনো, এলো? ফারহাজ তার জীবনে?
ফিহা ঃ কেনো এসেছেন আপনি এইখানে? চলে যান বলছি।
ফারহাজ শান্ত কন্ঠে ফিহার দিকে তাঁকিয়ে থাকে।
ফিহা আবারোও কিছুটা রাগান্বিত কন্ঠে বলে উঠে-
এইটাই দেখতে এসেছিলেন তাইনা? আপনার দেওয়া আঘাতে বোধহয় আমি একেবারেই ভেজ্ঞে পড়েছি কিন্তু এইটা ভাবলে আপনি পৃথিবীর সব থেকে বড় বোকা।
এই বলে ফিহা গাড়ির দরজা খুলতে নিলে ফারহাজ আবারোও ফিহার হাত খপ ধরে নিজের একেবারে কাছে টেনে নেয়।
(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)
ফারহাজঃ হুসসস! একেবারে চুপ!
ফিহা এইবার দ্বিগুন চেচিয়ে বলে উঠে-
আপনি কি আমাকে সেই আগের ফিহা পেয়েছেন হুহ? ছাড়ুন বলছি আমাকে এইভাবে গাড়িতে আটকিয়ে রাখা কোন ধরনের অসভ্যতা? যেতে দিন বলছি।
ফারহাজঃ ডোন্ট সাউট! গাড়ি সাউন্ড প্রুফ।
ফারহাজ আবারোও বলে উঠে-
ফিহু এই নো এতো বছরে যেমন আগের থেকে সুন্দরী হয়ে গেছে তার থেকে দ্বিগুন তোমার গলার আওয়াজ বেড়ে গেছে। ডোন্ট ওয়ারী গলার আওয়াজ নিচু করার টেকনিক আছে আমার কাছে।
অসভ্যতামী বলছিলে নাহ? এইবার সত্যি সত্যি অসভ্যতামী হবে
বলেই বাঁকা হাঁসলো ফারহাজ। ফিহা কিছুটা ঢোক গিলল।
ফিহাঃ মা….নে
পরের টা আর বলতে পারলো নাহ ফিহা। তার আগেই ফিহার ঠোটজোড়া ফারহাজ এর দখলে। ফিহা একেবারে স্হীর হয়ে গেলো। আসলে রিরকম রিয়েক্ট করার উচিৎ ফিহা বুঝতে পারছে নাহ। একে তো এতোবছর পর ফারহাজের সাথে তার দেখা অপরদিকে ফারহাজ এর গভীর স্পর্শ। ফারহাজ এর আগে তার এতো কাছে আসেনি। এই প্রথম কোনো পুরুষের স্পর্শ পাচ্ছে। ফারহাজ একবার ফিহার দিকে তাঁকিয়ে আবারো ফিহাতে মগ্ন হয়ে গেলো। টানা অনেকসময় পর ফারহাজ ফিহাকে ছাড়লো। ফিহা জোড়ে জোড়ে হাপাতে লাগলো।
ফারহাজ হেলান দিয়ে বাঁকা চোখে ফিহাকে দেখে যাচ্ছে।
ফিহা নিজের ঠোটে হাত বুলায়। ঠোটের অবস্হা খারাপ। ভাবতেই কেঁদে দেয়। ফারহাজ ফিহার দিকে একটা টিশু এগিয়ে দিয়ে বলে–
উফফ এতে ছিচকাঁদুনি কান্না করছো কেন? তোমার বর ই তো আদর করেছো অন্য কেউ তো নয়। আগে তো শুধু বলতে লাটসাহেব আপনি শুধু আমাকে বকেন আদর করেন নাহ। এখন তো আদর ই করছি তাইনা?
ফিহা অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে উঠে-
লজ্জা করে নাহ? এইভাবে এইরকম একটা কাজ করতে? এতো বছরে আপনার বেশ ভালোই উন্নতি হয়েছি দেখছি। কিরকম অসভ্য হয়েছেন দেখছি।
ফারহাজঃ এইভাবে নিজের নীল মনি বিশিষ্ট চোখজোড়া দিয়ে আমার দিকে তাঁকিয়োও নাহ। আমি যে কন্ট্রোল করতে পারবো নাহ গো। গাড়িতেই তারপর সব শুরু করে ফেলবো।
কথাটা বলতেই ফিহা বলে উঠে-
ছিহ..!
—-আগে ছোট পুচকি ছিলে বলে আমার এই রুপ দেখোনি কিন্তু এখন থেকে দেখবে।
বলতে বলতে ফারহাজ এর হাত ফিহার জামার পিছনে চলে যায়। ফিহা চোখে বন্ধ করে ফেলে।
ফারহাজ জামার পিছন থেকে সেফ্টপিন টা সরিয়ে ফেলে।
ফারহাজ ফিহার দিকে ঝুকে বলে উঠে-
ভয় পেয়ো নাহ। জামাতে সেফ্টিপিন টা আটকে ছিলো। যখন তখন ঢূকে যেতো ব্যাথা পেতে তুমি তাই আমি খুলে দিলাম।
সজ্ঞে সজ্ঞে ফিহা চোখে খুলে ফেলে। ফারহাজ টিসু দিয়ে ফিহার চোখের জল মুছে দেয়। তারপর ফিহার চোখজোড়ায় চুমু খায়।
—- অভ্যাস করে নাও পুচকি! সামনে আরো অনেক কিছু সহ্য করতে হবে। এখন তো তেমন কিছুই করিনি।
কথাটা বলেই ফারহাজ ফিহার থেকে দূরে সরে এসে গাড়িটা স্টার্ট দেয়। ফিহা বুঝতে পারছে নাহ ফারহাজ এর এরুপ আচরন এর মানে কি? কি মতলবে এসেছে সে চট্টগ্রামে।
ফিহা চিৎকার করতে গিয়েও করলো নাহ কিছুক্ষন আগের সেই ভয়ংকর ঘটনা মনে পড়তেই আস্তে করে বলে উঠে-
কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে? আদিয়া আমার জন্যে ওয়েট করছে যেতে দিন নাহ প্লিয।
ফারহাজঃ চুপ থাকো। যেখানে নিয়ে যাচ্ছি সেখানে গেলেই দেখতে পাবে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঠাকুরদীঘি বাজার থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার পূর্বে মহামায়া ইকো পার্ক। এখানে রয়েছে একটি বিশাল লেক। ছোট ছোট ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও একটি ঝর্ণা। বর্তমানে এটি স্থানীয় এক ইজারারদারের কাছে ইজারা দেয়া হয়েছে। মহামায়া কৃত্রিম লেক ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের রূপে ও মাধুর্যে মুগ্ধ করেছে। মহামায়া লেক বাংলাদেশের অন্যতম একটি পর্যটনস্থান। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদ মহামায়া লেক। পাহাড়ের কোলঘেঁষে আঁকাবাঁকা লেকটি অপরূপ সুন্দর। ছোট-বড় অসংখ্য পাহাড়ের মাঝখানে অবস্থিত মহামায়া লেকের অন্যতম আকর্ষণ পাহাড়ি ঝরনা। স্বচ্ছ পানির জলাধারের চার পাশ সবুজ চাদরে মোড়া। মনে হয়, কোনো সুনিপুণ শিল্পীর কারুকাজ।
)
আপতত ফিহা ও ফারহাজ রয়েছে মহামায়া ইকো পার্কে।
ফিহার ইচ্ছে করছে লেকের কাছে গিয়ে একটু পানি গুলোকে ছুতে। কিন্তু এই অসভ্য লোকের জন্যে তো আর পারবে নাহ। ফিহা ভেবেই পায়না এই লোকটা এইরকম অসভ্য হলো কী করে? ফিহার খেয়াল আবারো চারপাশে যায় প্রতিবারের মতো এইবারও কিছু মেয়েদের নজর ফারহাজের উপর। হবে না বা কেন? ফারহাজ আগের থেকে দ্বিগুন সুন্দর হয়ে গেছে। চুল গুলো কেমন খাঁড়া খাঁড়া হয়ে গেছে। গালে চাপ দাঁড়ি। ব্রাউন মনিযুক্ত চোখজোড়া যেনো দ্বিগুন উজ্জ্বল হয়ে গেছে। ফিহার বড্ড রাগ হলো। কিন্তু সে দেখালো নাহ।
ফারহাজ আপনমনে ফোন টিপে যাচ্ছে। নিরবতা ভেজ্ঞে ফিহা ই বলে উঠে-
আমি চট্টগ্রামে আপনি জানলেন কী করে?
ফারহাজঃ আমার পাওয়ার সম্পর্কে তোমার ধারণা ই নেই। আরে আমি তো সেই তিন বছর আগেই তোমার খোজ পেয়ে গিয়েছিলাম। পৃথিবীর এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে তুমি ফারহাজ মির্জার চোখের আড়াল হয়ে থাকতে পারবে। তুমি কী ভেবেছো? তোমার কোনো খবর আমি নেইনি উহু ভুল সব খবরই আমি পেতাম।
ফারহাজের কথা শুনে ফিহা দমে গিয়ে আবারোও বলে উঠলো-
তাহলে তিন বছর আগে কেনো আসেন নি?
ফিহার অভিমানি কন্ঠে শুনে ফারহাজ বলে উঠে-
যদি অইসময় আমি অসুস্হ
কথাটা বলতে গিয়ে থেমে গেলো ফারহাজ।
ফিহাঃ অসুস্হতা? মানে কার কি হয়েছিলো?
ফারহাজঃ বাদ দাও নাহ! আমি শুধু দেখতে চেয়েছিলাম পাখি কতদূর উড়তে পারে
ফিহাঃ কি বুঝলেন?
ফারহাজঃ তা আর নাই বা বলি
—-কিন্তু একটা জিনিস তো আমি কিছুতেই বাদ দিতে পারবো নাহ। আপনি তো আমার থেকে মুক্তি চাইছিলেন তাইনা লাটসাহেব তাহলে কেনো? আবার ফিরে এলেন? আমাকে কস্ট দিতে
এতোই যখন আমার চিন্তা তাহলে তিন-বছর আগে আসেনি নি কেন?
বলতে বলতে ফিহার চোখে আবারো জল চলে আসে। এই জলে ছিলো ফারহাজ এর প্রতি এক রাশ অভিমান মিশ্রিত অভিযোগ।
ফারহাজঃ এমন কিছু পরিস্হিতি হয় যা আমাদের হাতে থাকেনাহ। ইচ্ছের বিরুদ্বে অনেক কিছু করতে হয়।
তোমার সব প্রশ্নের উত্তর ই দিবো কিন্তু সময় হলে।
এই বলে ফারহাজ ফিহাকে কিছু বলতে না ফারহাজ ফিহার হাত ধরে লেকের কিছুটা কিনারে নিয়ে যায় এখানে লোক তেমন নেই বলতে গেলা।
ফিহা ফারহাজের দিকে অবাক পানে তাঁকিয়ে আছে।
ফারহাজ ফিহার হাত দুটো নিজের মুঠোয় নিয়ে লেকের কিনারে ফিহাকে নিয়ে বসে পড়ে।
ফারহাজ ঃ ফিহু একটি চারপাশ টা চোখ বোলাও তো।
ফারহাজের কথা ফিহা লেকের অপরুপ সৌন্দর্যে নিজের দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। সত্যি মনমুগ্ধকর। এই মুহুর্তে ফারহাজের প্রতি প্রচন্ড রাগ করতে ইচ্ছে করছে ফিহার কিন্তু সে রাগ করবে নাহ। পরিবেশ টা ইঞ্জয় করবে।
ফারহাজ ফিহার কাঁধে নিজের থুত্নি রাখে ফিহার গালের নিজে দাঁড়ি দিয়ে ঘসা দিতে থাকে। ফিহা কেপে উঠে।
ফারহাজঃ এতো নরম কেনো? তোমার গাল?
ফিহা চুপ হয়ে থাকে।
ফারহাজ ফিহার হাতে হাল্কা নিজের ঠোটের উষ্মতায় ভরিয়ে দেয়।
এতো বছর পর নিজের ভালোবাসার মানুষকে পেয়ে লেকের পাশে নিজের ভালোবাসার মানুষের গভীর উষ্মতার পরশ এক অন্যরকম অনুভুতি হচ্ছে ফিহার।
—-ফিহু তুমি জানো কী? তুমি এখন আপতত আমার কাছে স্ত্রী নও আমার ভালোবাসার মানুষ। এইযে আমার ভালোবাসার আমার কাছে আছো
মনে হচ্ছে জীবনের সুখ গুলো এখন বোধহয় ধরা দিচ্ছে…
চলবে