#পবিত্র_বন্ধনে_আবদ্ধ
#পর্ব – ৫৬
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ফারহাজের কথা শুনেই শরীরের আলাদা শিহরন বয়ে গেলো ফিহার। ভালো লাগার শিহরন। ফারহাজের কথা ফিহা আগে না বুঝলেও এখন ফিহা বুঝতে পারে। ফারহাজ কি বললো? ফিহা তার ভালোবাসার মানুষ? তার মানে ফারহাজ ফিহাকে ভালোবাসে? কিন্তু কী করে তা সম্ভব? ফারহাজ যদি ফিহাকে ভালোবাসতো তাহলে তো মুক্তি চাইতো নাহ। ফিহার ভাবনার মাঝেই ফারহাজ ফিহাকে নিজের দিকে আরেকটু টেনে নিলো। ফিহা ফারহাজের বুকে ঢলে পড়লো। ফারহাজ ফিহার থুতনিতে চুমু খায়। তারপর ঠোটে। ফিহা ফারহাজকে কিছু বলতে যেও পারছে নাহ। ফারহাজ ফিহার হাত জোড়াও চুমু খেয়ে বলে উঠে- ফিরে চলো ফিহু… আমি আর পারছি নাহ।
ফিহা শুধু বলে উঠল- অনেকক্ষন তো হলো আমার মনে হয় এখন আমাদের যাওয়ার উচিৎ। আদিয়া অপেক্ষা করছে। ফারহাজ জানে ফিহাকে এখন কিছু বলে লাভ হবে নাহ সে তো অভিমান নিয়ে বসে আছে। ঠিক আছে ফারহাজের কাছে ও টেকনিক আছে। ফারহাজ ফিহার হাত ধরে উঠে দাঁড়িয়ে গাড়ির কাছে নিয়ে গিয়ে বলে উঠে- ঠিক আছে চলো! তোমাকে পৌছে দিয়ে আসি। গাড়িতে উঠো।
ফিহাও কিছু না বলে গাড়িতে উঠে বসে। ফারহাজ ফ্রন্ট সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়।
এদিকে,,,
ইরিনা সবার জন্যে চা বানিয়ে ড্রইং রুমে নিয়ে আসে। মিসেস প্রিয়া ও তানহা রান্নাঘরে। মিঃ রাইজাদা গভীর মনোযোগ দিয়ে খবর পড়ছেন আর ফারহাজের দাদী ও রেনু বেগম নিজেদের মধ্যে কথা বলছে। রাহাত অফিসে।
দাদীঃ আরে নাতবউ তুমি কেনো, চা বানিয়ে আনতে গেলে? তোমার না অফিস আছে, আজকে?
ইরিনাঃ আরে দাদী, প্রতিদিন তো আমিই চা বানায় আর আমার কোনো সমস্যা হয়না এতে। আমার ভালোই লাগে আর আজকে অফিসে যাবো নাহ।
রেনু বেগমঃ আহান দাদুভাই কোথায়, নাতবউ?
ইরিনাঃ ও মনে হয় স্ট্যাডি রুমে বসে কিছু ফাইল চেক করছে।
দাদীঃ বুঝেছি বাপু! তাহলে আজকে আহান দাদুভাই ও অফিসে যাচ্ছে নাহ। উনি তো আবার বউ অফিসে না গেলে নিজেও যায়না কত মহাব্বত বউয়ের প্রতি ( কিছুটা হেঁসে)
মিসেস ইরার কথা শুনে বাকি সবাই হেঁসে দিলো। ইরিনা লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে।
রেনু বেগমঃ ইরা বাপু তোমার সত্যি কান্ড-জ্ঞান নেই।
দেখছো না? নাতবউ লজ্জা পাচ্ছে হুহ
সবার কথার মাঝেই নিলয় নীচ থেকে নাম নামতে বলে উঠলো-
ইরিপু আমার ব্লাক কফি কোথায়? আমাকে এখুনি ভার্সিটি যেতে হবে।
ইরিনাঃ তোমার ব্লাক কফি রেডি করে রেখেছি।
দাদুন কে চা টা দিয়ে তারপর দিচ্ছি।
এই বলে ইরিনার দাদুনের কাছে চায়ের কাপ ধরিয়ে দেয়।
(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসী রিমি)
দাদুন চা টা খেয়ে বলে উঠে-
সত্যি চা টা ধারুন হয়েছে ইরি দিদিভাই। কিন্তু চায়ের
কাপ টা হাতে নিলেই ফিহু দিদিভাই আমাদের নীলার কথা মনে পড়ে যায়। প্রতিদিন আমার জন্যে চা বানিয়ে তারপর সে স্কুলে যেতো।
বলতে বলতে দাদুনের চোখে জল চলে আসলো।
সবার ও মন টা খারাপ হয়ে গেলো।
রেনু বেগম বলে উঠে-
ওহ আচ্ছা ভালো কথা, আহান দাদুভাই এর কথা হয়েছে ফারহাজ দাদুভাই এর সাথে? মানে ফিহু দিদিভাই এর কোনো খবর পাওয়া গেছে নাকি?
তখনি আহান এসে বলে উঠে-
ফারহাজকে আমি কল করেছিলাম, কিন্তু মহাজন বললো আপতত সে কিচ্ছু বলবে নাহ সে নাকি যা বলার অনুষ্ঠান এর দিনেই বলবে। শুধু বলেছে
সবকিছুর ব্যাবস্হা যেনো খুব ভালো করে হয়।
ইরিনা খুশি হয়ে বলে–
ফারহাজ এই কথা বলেছে? তার মানে তো ফারহাজ নিশ্চই ফিহার খবর পেয়েছে।
ফারহাজের দাদি বলে উঠে-
তোমার মুখে ফুলচন্দন ফুটুক নাত-বউ!
দাদুনঃ তাই যেনো হয়।
মিসেস প্রিয়া ও সাথে যোগ দিয়ে বলে উঠে-
এমন হলে তো এইবার আমার বাড়ির বউয়ের বরনে কোনো ত্রুটি রাখবো নাহ আমি। এমনিতেও তো অন্যায় করিনি আমি।
মিসেস ইরাঃ আমারোও কি কম দোষ ছিলো নাকি বউমা?
তানহাঃ আচ্ছা মা ভাবি আপ্নারা এইসব বিষয় বাদ দিয়ে ভাবুন অনুষ্ঠান এর দিন ঠিক কি কি করা যায়।
দাদুন উঠে দাঁড়িয়ে বলে উঠে-
মির্জা বাড়ির অনুষ্টান বলে কথা। কোনো কিছুর কমতি থাকবে নাহ। আর ফারহাজ দাদুভাই তো সব বলেই দিয়েছে।
নিলয়ঃ ওয়াও আমি তো সেইরকম এক্সাইটেড….!
লিটেল প্রিন্সেস ভাবি আসবে।
আহানঃ কতবছর পর আমি আমার বোনুকে কাছে পাবো। ভাবতেই কান্না চলে আসে।
আমার বোনুর এই দিনটি স্পেশাল করার জন্যে যা যা করার লাগে সব করবো। পৃথিবীর সব সুখ ওর পায়ে ঢেলে দিবো একবার শুধু ওকে পাই।
বলতে বলতে আহানের চোখে জল আসলেও সে তাড়াতাড়ি মুছে ফেলে।
ইরিনাঃ আহান নিজেকে সামলাও! আমরা সবাই খুব ভালোভাবে ফারহাজ ও ফিহার জন্যে দিনটি স্পেশাল করে তুলবো।
—–দিনটি শুধু ফারহাজ ভাইয়া কিংবা ফিহার জন্য ও নয় তোমাদের জন্য ও কিন্তু স্পেশাল ইরি ভাবি।
বলতে বলতে ইশিকা ও নেহাল বাড়িতে প্রবেশ করে।
নিলয় ঃ আপু তুমি এসেছে?
নেহালঃ তোমার আপুকে তো আসতেই হতো শালাবাবু! এতো বড় আয়োজন করতে হবে তাইনা।
ইশিকা ঃ হ্যা আমাদের জন্যেও স্পেশাল কিন্তু এইবার ফিহা আর ফারহাজের জন্যে একটু বেশি স্পেশাল হতে চলেছে….
ফারহাজ গাড়িটা ফিহার কলেজের সামনে থামায়।
ফিহা ঃ আমি তাহলে যাই
এই বলে ফিহা বলে তাড়তাড়ি নেমে পড়ে। ফারহাজ ও নেমে পড়ে। ফিহা কিছুটা এগিয়ে আসতেই সেই পিচ্ছি টা ফিহার সামনে এসে বলে উঠে-
কি ভাবি? ভাইয়ের সাথে দেখা হয়েছো তো?
ফিহা কিছুটা ভ্রু কুচকে বলে উঠে-
এই পিচ্ছি আমি তোমার কোন জন্মের ভাবি?
পিচ্ছিটা দাঁত কেলিয়ে বলে উঠে-
কেন আবার এই জন্মের। আর আমাকে পিচ্ছি বলবেন নাহ ভাবি আমার একটা ভালো নাম আছে আমার নাম রাফিদ।
ফিহাঃ তোমার ভাই কে?
রাফিদ এইবার পিছনে ফারহাজের দিকে ইশারা করে। ফিহা ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখে ফারহাজ গাড়িতে হেলান দিয়ে তার দিকে বাঁকা হেঁসে তাঁকিয়ে আছে।
ফিহাঃ মানে টা কী?
ফিহার কথার মাঝেই ফারহাজ এগিয়ে এসে বলে উঠলো-
মানে টা খুবই সিম্পল! রাফিদ খুব ভালো ছেলে। আমাকে নিজের বড় ভাইয়ের জায়গা দিয়েছে। আর তাই তোমাকে ভাবি বলে ডাকছে। তোমার খবর তো আমাকে রাফিদ ই দিতো। তোমাকে যেদিন প্রথম চট্টগ্রামে দেখেছিলো তখনি চিনে ফেলেছে।
রাফিদঃ বড় ভাই মানবো নাহ? জানেন ভাবি?
ভাই কত্ত ভালো?
ফারহাজঃ এইসব কথা বাদ দে।
রাফিদ ঃ কেন থামবো কেন?
জানেন ভাবি? আমি তো গরীব ঘরের ছেলে। বাপ নাই মাও মেলা অসুস্হ। মায়ের জন্যে আমি রাস্তায় বসে চা বিক্রি করতাম
ভাই যখন চট্টগ্রামে আইছিলো একটা কেসের লেইগা তখন আমাকে রাস্তায় দেখছিলো তারপর আমার কাহিনী শুইনা আমাকে স্কুল ভর্তি করাইয়া দিছিলো এমনকি আমার মায়ের চিকিৎসার টাকাও দেয় প্রতিমাসে। ভাই এর মতো মানুষ হয়না। আপনার ছবি তো সবসময় ভাইয়ের সাথে থাকতো। তাই আমিও আপনাকে চিনে ফেলছিলাম আর ভাই রে কইয়া দিছিলাম।
ফিহা শুধু অবাক ই চ্ছে রাফিদ এর কথা শুনে। সে জানে তার লাটসাহেব ভালো কিন্তু এতোটা ভালো মনের অধিকারী।
ফারহাজঃ উফফ থাম এইবার। তোর স্কুল নেই? যাহ স্কুলে যাহ।
রাফিদঃ আইচ্ছা ভাই। তাইলে আসি। আফনে তো আপতত চট্টগ্রামেই আছেন তাইনা?
ফারহাজঃ হুম পরে দেখা করবো নে। তোর মায়ের সাথে.
রাফিদ ঃ আইচ্ছা ভাই কিন্তু আপনি আর ভাবির ঢাকায় যাবেন কবে?
ফারহাজ কিছু বলবে তার আগেই ফিহা বলে উঠে-
মানে কি? আমি কোথাও যাচ্ছি নাহ ওকে? আমি এখানেই থাকবো আমাকে কেউ নিতে পারবে নাহ।
রাফিদঃ কি বলে কী ভাই ভাবি?
ফারহাজ বাঁকা হেঁসে বলে-
তোর ভাবির কথা এতো ধরতে হয় নাকি বোঁকা? অইসব অভিমানের কথা।
——ঠিক আছে ভাই আমি এখন স্কুল যাই।
এই বলে রাফিদ দৌড় দেয়।
ফিহা মুখটা ভেংচি দিয়ে সামনের দিকে পা বাড়ায়।
আর পিছনে তাঁকায় ও নাহ। ফারহাজ ও নিজের গাড়ি করে চলে যায়।
ফিহা জানে আদিয়া ফিহার জন্যে এতোক্ষন অপেক্ষা করে নিশ্চিত বাড়ি চলে গেছে। ফিহার ফোনেও বেশ কয়েকটা মিসড কল আদিয়ার।
তাই ফিহা ভাবলো বাড়িই চলে যাবে।
বাড়ি ফিরতেই আদিয়া তাকে চেপে ধরলো সে কোথায় ছিলো কার সাথে ছিলো ঠোটের এই অবস্হা কেন? আদিয়ার এসব প্রশ্নে ফিহা যথেষ্ট লজ্জা পেয়েছিলো ফিহা। কোনোরকম আদিয়াকে সামলে নিজের রুমে এসেছে।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের ঠোটে হাত বুলাচ্ছে ফিহা। গাড়িতে ঘটা সেই ভয়ংকর ঘটনা মনে পড়তেই ফিহা ভয়ে ঢুক গিলল। ফারহাজের এরুপ রুপের সাথে সে বড্ড অচেনা। ফিহার নিজের ভাবনার মাঝে ডুবে আছে তখনি ফিহার নিজের কাঁধে কারো ঠোটের গভীর স্পর্শ পেতে থাকে। ফিহা চমকে পিছনে তাঁকিয়ে দেখে……..
চলবে….কি?
#পবিত্র_বন্ধনে_আবদ্ধ
#পর্ব – ৫৭
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ফিহা চমকে তাঁকিয়ে পিছনে ঘুড়ে ফারহাজকে দেখে আরেকদফা অবাক হয় সে। ফারহাজ এই বাড়িতে কী করে এলো? কেনো এলো? উনাকে আমার রুমে ঢুকার পারমিশন কে দিয়েছে। ফিহা কিছুটা রাগি কন্ঠে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ফারহাজ ফিহার ঠোটে আজ্ঞুল দিয়ে হুসসস করে চুপ করিয়ে দেয়। ফারহাজ বলে উঠে- একটু চুপ করো নাহ , আমি জানি অনেক প্রশ্ন তোমার মধ্যে একটু সাইডে রেখে যে কাজে এসেছে সেই কাজ টা করে নেই। ফিহা ভ্রু কুচকে বুঝার চেস্টা করে ফারহাজ ঠিক কোন কাজের কথা বলছে.? ফিহা বলে উঠে-
কোন কাজ?
ফারহাজঃ বুঝাচ্ছি
এই বলে ফারহাজ ফিহার হাত ধরে টেনে একেবারে নিজের বুকে ফিহাকে নিয়ে ফিহার কানে আস্তে করে বলে উঠে- রোমান্স….! বলেই ফারহাজ ফিহার কানে লতিতে আস্তে করে কামড় দেয়। সজ্ঞে সজ্ঞে ফিহা চোখ বড় বড় করে বলে উঠে-
দেখুন আপনার এইসব অসভ্যতামি কিন্তু দিন দিন বেড়ে যাচ্ছি আমি কিন্তু আর সহ্য করবো নাহ, হুহ। কী ভেবেছেন টা কী হুহ?
বলেই ফিহা ফারহাজের বুক থেকে উঠে যাওয়ার চেস্টা করলে ফারহাজ ফিহাকে নিজের সাথে আরো চেপে ধরে। ফিহা রাগান্বিত কন্ঠে বলে উঠে-
ছাড়ুন বলছি অসভ্য লোক….
ফারহাজঃ ছাড়বো কেন? এখন বউ বড় হয়ে গেছে।
এখন শুধু রোমান্স চলবে.. বউ ছাড়া এক রাত ও বাইরে থাকবো নাহ। তাই আমি এখানে চলে এলাম আর তুমি আমাকে তাড়িয়ে দিচ্ছো বউ??
ফিহার এইসব কথা শুনে লজ্জায় কান লাল হয়ে গেছে। বউ কথাটা শুনে আলাদা ভালো লাগা কাজ করছে ফিহার।
ফিহাঃ আমি কিন্তু এইবার চিৎকার করবো…
ফিহা ফারহাজের বুকে এলোপাথারি মারতে থাকে। কিন্তু ফারহাজের থেকে নিজেকে একটুও সরাতে পারে নাহ। সত্যিই তো? ফিহার মতো পুচকি কি আর ফারহাজের মতো বিশাল দেহী যুবকের সাথে পারবে?
ফিহার কান্ড দেখে ফারহাজ হু হা করে হেঁসে উঠে–
আগে ও পুচকি ছিলে এখনো পুচকিই আছো…
শুধু বয়স টাই একটু বেড়েছে। সমস্যা নেই পুচকি বউ দিয়েই চালিয়ে দিবো।
বলেই ফারহাজ ফিহাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয়। ফারহাজ ঠোটের স্পর্শ ফিহা তার গলায় পেতে থাকে।
ফারহাজ এর নিশ্বাস ফিহার মুখে পড়ছে। ফিহা বুঝি এইবার দম বন্ধ হয়ে মরেই যাবে।
আদিয়া ফিহার রুমের সামনে এসে দেখে ফিহার রুমের দরজা বন্ধ। আদিয়া একবার ফিহা বলে ডাকে।
আদিয়ার কন্ঠস্বর পেয়ে ফিহা এইবার ছটফট শুরু করে দেয়। ফারহাজ তত ফিহার হাতজোড়া চেপে ধরছে।
আদিয়া আবারোও ফিহা বলে ডাকতে গিয়েও দিলো নাহ। কিছু একটা ভেবে মুচকি হেঁসে চলে গেলো।
ফারহাজ ফিহার অবস্হা বেগতিক দেখে ছেড়ে দিলো। পুচকি মেয়ের একদিনে এতো ডোজ দিলে সহ্য করতে পারবে নাহ। ভেবেই মুচকি হাঁসি দিলো ফারহাজ। ফিহার হাত-জোড়া আলগা করে ছেড়ে দিতেই, ফিহা তাড়াতাড়ি সরে ওড়না টা ভালোভাবে জড়িয়ে নিয়ে.। ফারহাজ বাঁকা হেঁসে বলে উঠে-
চিন্তা করো এখুনি বাসর করছি। সময় মতো ঠিক মতো করে নিবো (বলেই ফারহাজ ফিহাকে চোখ টিপি দিলো)
ফিহার এইবার বলে উঠে-
আপনার এইসব অসভ্যতামী এখুনি বের করছি আমি আদিয়া আর আন্টি আংকেলকে ডেকে আনছি।
এই বলে ফিহা দরজার কাছে ফারহাজ গিয়ে ফিহাকে পাজকোলে নিয়ে বেডে নামিয়ে ফিহার মাথায় আস্তে করে থাপ্পড় দিয়ে বলে উঠে-
সত্যি.. তোমার কমনসেন্স কখনো হবে নাহ..
আংকেল আন্টিকে এখন নিয়ে এসে কি দেখাবে নাকি? তোমার গলার দাগ?
ফিহা ছিহ বলে মুখ ঘুড়িয়ে ফেলে। ফারহাজ বাঁকা হেঁসে ফিহার দিকে ঝুকে বলে উঠে-
অনেক ঘুম পেয়েছে চলো এখন ঘুমিয়ে পড়ি।
এদিকে,,,,,
ইরিনা রুমে এসে দেখে আহান বারান্দায় দাঁড়িয়ে গভীরভাবে কিছু ভেবে যাচ্ছে। ইরিনা আহানের কাছে গিয়ে আহানের কাঁধে হাত রেখে বলে উঠে-
কি ভাবছো?
আহানঃ ভাবছি… আমার বোনটা কবে আসবে?
কবে তাকে একটু জড়িয়ে ধরে বলবো- বোনু দেখ…
তোর একটা বড় ভাই আছে।
ইরিনাঃ তুমি একটুও চিন্তা করো নাহ। ফারহাজ সুস্হ হয়ে গেছে। আমার অনুমান ঠিক থাকলে সে ফিহাকেও পেয়ে গেছে। ফারহাজকে আমি যতটুকু চিনি সে সবকিছু কনফার্ম না করে কোনো কথা বলবে নাহ।
আহানঃ তা ঠিক বলেছো….
ইরিনা বলে উঠে-
আর তো মাত্র একদিনের অপেক্ষা। তারপরেই দেখবে সবকিছুর নতুন শুরু হবে। বলেই ইরিনা মুচকি হাঁসি দেয়।
আহান মুগ্ধ হয়ে সেই হাঁসি দেখে….!
ইরিনাঃ কি দেখছেন মি.ঃ..( ভ্রু কুচকে)
আহান এইবার ইরিনার হাতজোড়া নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে চুমু খেয়ে বলে উঠে-
আমার মিসেস এর মনোমুগ্ধকর হাঁসি। সত্যি বলতে কী ইরিমনি আমি জানি আমি তোমরা প্রতি অন্যায় করেছিলাম
(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসী রিমি)
ইরিনাঃ আবার সেই পুরনো কথা, তুলছো কেন?
তুমি জানো নাহ? আমার এইসব মোটেও পছন্দ নাহ
আহানঃ সব তো আর ভুলে যেতে পারি নাহ। আমি তোমার প্রতি অন্যায় করেছি।
কিন্তু তাও তুমি আমার পাশে ছিলে। কতটা কঠিন সময়ে আমি ছিলাম বনুটার খবর পাচ্ছিলাম নাহ অন্যদিকে মা অসুস্হ এমন সময় যদি তুমি পাশে না থাকতে তাহলে আমার কী হতো?
ইরিনা কিছুক্ষব চুপ থেকে বলে উঠে-
পাশে থাকবো নাহ? আমি তো তোমার স্ত্রী, তোমাকে ইচ্ছে করে কেউ ভুল বুঝিয়ে খারাপ পথে চালিত করেছে। স্ত্রী হিসেবে তো আমার কর্তব্য আমার স্বামীর ভুল টাকে ধরিয়ে দেওয়া, তার পাশে সবসময় থাকা। তাছাড়া তোমাকে ছেড়ে কোথায় যাবো আমি? ভালোবাসি তোমাকে আমার আহান আহমেদ আদ্র মির্জা।
আহান ইরিনাকে জড়িয়ে ধরে বলে-
আমিও অনেক ভালোবাসি তোমাকে মিসেস আহান আহমেদ আদ্র মির্জা।
দুইজনেই হেঁসে ফেলে।
আরেকদিকে,,,
সিমি ( ফিহার বান্ধুবি) নিজের বাসার নীচে নিলয়কে দেখে কিছুটা রেগে যায়।
সিমি তাড়াতাড়ি নিলয়কে ফোন করে বলে উঠে—
এই এই তুমি আমার বাসার নীচে কি করছে? যাও বলছি? বাবা যদি দেখে ফেলে বুঝবে মজা–!
নিলয়ঃ ইসস তোমার বাবাকে বুঝি এই নিলয় মির্জা ভয় পায় এখুনি তোমার বাবার সামনে থেকে তোমাকে তুলে নিয়ে বিয়ে করার ক্ষমতা রাখি আমি। ভুলে যেও নাহ রাইজাদা মির্জার নাতি আমি।
সিমিঃ কি বললে? তুলে নিয়ে যাবে আমাকে? ( রাগারান্বিত কন্ঠে)
নিলয়ঃ নাহ মানে তুমি না চাইলে কীভাবে পারবো জান? আমার সবটুকু দুর্বলতা তো এই তুমি ই। নাহলে কবে বিয়ে করে ফেলতাম। তুমি জানো নাহ তোমাকে কতটা ভালোবাসি আমি। তোমাকে এক পলক দেখার জন্যে ছুটে চলে আসি আমি।
(হ্যা নিলয় সিমিকে ভালোবাসে.. তাদের তিন বছরের রিলেশন। নিলয় জানে ফিহা শুধু মাত্র তার মোহ। এইটাও জানে ফারহাজের থেকে ফিহাকে কেউ বেশি ভালোবাসতে পারবে নাহ)
সিমিঃ আমি কী তোমাকে ভালোবাসি নাহ?
নিলয়ঃ উহু বাসো নাহ।
সিমিঃ কী করলে বিশ্বাস হবে আপনার জনাব?
নিলয়ঃ আমাকে বিয়ে করে ফেললে ( হেঁসে)
এদিকে।,,
ইরিনা এইবার বলে উঠে-
ওহ মনে পড়েছে,, আহান তুমি একটু ফারহাজকে ফোন করে দেখো তো মহাশয় ধরে কিনা। ফিহার খবর নিতে হবে তো।
আহান ফোনটা হাতে নিয়ে বলে উঠে-
ঠিক আছে…
আমি ফোন করছি ফারহাজকে। আই হোপ এইবার তিনি ধরবে..।
………
ফিহা মুখটা বাঁকা করে বলে-
আপনার সাথে এক বিছানায়? কখনো নাহ?
এখুনি চলে যান বলে দিচ্ছে আর সব থেকে বড় কথা
আপনি আমার রুমে এলেন কী করে?
ফারহাজ কিছুটা শয়তানী হাঁসি দিয়ে বলে উঠে-
ওহ আচ্ছা! বুঝেছি তুমি এখন ঘুমাতে ও চাও নাহ। তোমার আরো আদর চাই বললেই তো পারো।
ফিহা শুকনো ঢুক গিলল।
ফিহাঃ দেখুন….(কিছুটা তোতলিয়ে)
ফারহাজ ফিহাকে শুয়িয়ে নিজের ফিহার দিকে নিচু হয়ে বলে-
হুম.. দেখতেই তো চাই…
ফিহা চোখ বন্ধ করে ফেলে। ফারহাজ ফিহার দিকে আরেকটু ঝুকে যায় তখনি তার ফোনটি বেজে উঠে।
ফারহাজ বিরক্ত হয় ফিহাও চোখ জোড়া খুলে ফেলে। এতো রাতে কে ফোন করলে ভেবেই ফারহাজ ফোনটা তুলে দেখে আহান।
ফারহাজ উঠতে উঠতে কিছুটা বির বির করে বলে উঠে-
শালা যদি এইভাবে রোমান্সে ব্যাঘ্ন ঘটায় তাহলে কেম্নে কী?
ফারহাজ ফোনটা রিসিভ করে বলে উঠে-
হ্যা বল! এতো রাতে ফোন দিয়েছিস কেন?
আহানঃ হ্যালো ফারহাজ তুই কী বোনুর খবর পেলি নাকি এই আর কি আর কিছু নাহ।
ফারহাজঃ তোকে বললাম নাহ পরশুদিন ওয়েট করতে। (বিরক্ত হয়ে)
আহানঃ আরে এইভাবে কথা বলছিস কেন?মনে হচ্ছে আমি তোর কোনো ইম্পোর্টেন্ট কাজে ব্যাঘাত দিয়েছি
ফারহাজঃ হুম দিয়েছিস ই তো। এখন রাখ শালা
এই বলে ফারহাজ কট করে ফারহাজ ফোনটা রেখে দেয়।
আহানঃ যাহ বাবাহ!
ইরিনাঃ কি হলো?
আহানঃ কি জানি শালা বলে কেটে দিলো
ইরিনা হেঁসে দেয়।
এদিকে ফিহা অবাক হয়ে বলে উঠে-
এই আপনি কাকে শালা বললেন? ( ভ্রু কুচকে)
ফারহাজ বিছানায় গিয়ে শুয়ে ফিহাকে একেবারে নিজের বুকে টেনে নিয়ে বলে উঠে-
সব উত্তর পেয়ে যাবে কিন্তু এখন আর কোনো প্রশ্ন নয়। একটু ঘুমাতে দাও তো। অনেকদিন ধরে ঘুমাতে পারিনা। আজকে একটু তোমাকে জড়িয়ে শান্তিতে ঘুমাতে চাই বলেই ফারহাজ চোখ বন্ধ করে ফেলল।
ফিহাও কিছু বললো নাহ। সে ও ফারহাজের বুকে মাথা রেখে ফারহজের হার্টব্রিট গুনতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
চলবে কি?
(কেমন হয়েছে জানাবেন কিন্তু)🙂