#পরিণীতা
#পর্ব_১১
#লেখনীতে_সাবরিনা_সিদ্দিকা_তাবাচ্ছুম
“বিহি!”
আমি গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম বিহিকে। হ্যাঁ এটাই বিহি। বিহি বেঁচে আছে!
“কেমন আছো আদিব?”
“আলহামদুলিল্লাহ এখন খুব ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?”
“আলহামদুলিল্লাহ”
পাঠকরা ভাবছেন যে এগুলো কী হচ্ছে! এই লেখিকা তো সব প্যাঁ”চিয়েই যাচ্ছে। তবে চলুন ফিরে যায় ফ্ল্যাশব্যাকে…
আদিবের সাথে দেখা করতে আসা মেয়েটা আদিবকে সাথে যেতে বলে। তখন আদিব তার পরিচয় জানতে চাইলে সে বলে তাকে আদিব চিনবে না। এই কথা শুনে আদিব বলল সে যাবে না। তখন মেয়েটি বলল,
“আপনার ওয়াইফ বিহি আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।”
“বিহি!”
“হ্যাঁ”
“বিহি বেঁচে আছে?!”
“হ্যাঁ একটু অসুস্থ আর বাড়িতে ও একা তাই তাড়াতাড়ি যেতে হবে”
“চলুন আমি যাবো।”
আশেপাশে আদিবের মা বোন সবাই ছিলো বলে তাদের আর আলাদা করে কিছু জানাতে হয়নি। আদিবের বোনের চোখে খুশি দেখা গেলেও আদিবের মায়ের হাবভাব কিছু বোঝা যাচ্ছে না। আদিবের বের হয়ে যাবার পর আদিবের বোন বলে,
“আম্মু! বিহি বেঁচে আছে শুনেছো?”(খুশি হয়ে)
“হুম”
“কী হুম বলছো তুমি খুশি না?”
“তোর সুমি খালাকে আমি কী বলবো?”
“আম্মু ওরা তো জানে ভাইয়া বিবাহিত! তাদেরকে বললেই হবে যে বিহি এসেছে।”
“হুম”
নিজের ছেলেকে বিহির অবর্তমানে এভাবে কষ্ট পেতে দেখেই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কেই বা চাই ছেলেটা এভাবে ভেঙে পড়ুক। এমন নয় যে তিনি বিহিকে পছন্দ করেন না। তিনি বিহিকে নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসেন। কিন্তু ছেলের কষ্ট তো মায়ের সহ্য হয় না। এই ভেবেই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। (গত পর্বে অনেকে আদিবের মাকে ভুল বুঝেছেন তাই ক্লিয়ার করে দিয়েছি।)
আদিবের মা এখন খুব খুশি হয়েছেন। তিনি রান্না রান্না করছেন বিহি আসবে বলে। আর যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছিল তাদের মানা করে দিয়েছে সব।
বর্তমান,
আদিব পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে। মাটির ছোটো একটা ঘর। ভেতরে আরো রুম আছে মনে হচ্ছে। ওপাশে রান্নাঘর যা দেখা যাচ্ছে। এসব মাথা থেকে ফেলে বিহিকে বলল,
“বিহি তুমি এতোদিন কোথায় ছিলে? তোমাকে কত খুঁজেছি আমি জানো!”
“বুশরা আপু( যিনি আদিবকে নিয়ে এলো) আমাকে তার সাথে এখানে রেখেছেন।”
আদিব বুশরার দিকে তাকিয়ে,
“আচ্ছা ওকে কোথায় পেলেন? ও তো খাদের পড়ে গিয়েছিল!”
বিহি বলে উঠলো,
“আমি বলছি! আমি খাদে পড়িনি। গাড়ি এক্সি’ডে-ন্টের পর আমি ছিটকে গিয়ে খাদের গড়া-গড়ি খেয়ে পড়ছিলাম হঠাৎ শিকড়ের মতো কিছু জিনিসের সাথে আমার পা বেজে যায় ফলে আমি ওখানেই ঝুলে যায়। আমি তখন নিজেকে কন্ট্রোলে আনতে পারি তাই পা ছাড়ানোর চেষ্টা করি কিন্তু আমি ব্যর্থ হই। গড়াগড়ি খাওয়ার কারণে আমার হাত পায়ে প্রচন্ড ব্যথা হয়। আমার সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে চেষ্টা করি কিন্তু পরবর্তীতে কোনো কাজ হয়না। তারপর আমার আর কিছু মনে নেই।”
“বুশরা…”
“আমি ওকে অ/জ্ঞান অবস্থায় পেয়েছি। আমি একা থাকি নিজের জীবিকা নির্বাহের জন্য অনেক দূর পর্যন্ত যেতে হয়। সেদিন খাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম তখন দেখি উপরে একটু একজন রয়েছে। সচরাচর এখানে কারো থাকার কথা নয়। পরবর্তীতে কয়েকজনের সহায়তায় আমি ওকে উদ্ধার করি।”
“আমাকে কোনো খবর দেওয়া হয়নি কেন?”
কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
“বিহি একমাস অ_জ্ঞান ছিল”
“কী!”
“হুম ডাক্তার বলেছে কো”মায় রয়েছে। ওর মাথায় প্রচন্ড আঘাতের কারণে এমন হয়েছে। একমাস পর যখন জ্ঞান ফিরলো তখন ওকে সুস্থ করতে লেগে যায় তাই তখন ওর বাড়িত খোঁজ করিনি। তাছাড়া ও একবার বলেছিল আমি ওকে বলেছি সুস্থ হলে বাড়ি ফিরিয়ে দিবো আমি। কিন্তু দু’মাস হয়ে যাওয়ার পরও ওর পা এখনো সুস্থ হয়নি। তাই হয়তো দেরি হয়ে যাবে ভেবে আমি আপনাকে নিয়ে আসি।”
“তোমার পায়ে কী হয়েছে বিহি?”
“তেমন কিছু না”
“তেমন কিছু না মানে কী,!”
“ও এখন হাঁটতে পারবে না। তবে ডাক্তার বলেছে কয়েকদিন পর সুস্থ হয়ে যাবে।”
আদিব বিহিকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলো।
“আপনারা বসুন; আমি নাস্তা আনছি তারপর এসে ডাক্তার কী বলেছে সব বলছি”
“আচ্ছা”
“বিহি! তুমি তো একবার ফোন করতে পারতে!”
“আমার ফোন তো নেই। ওটা পড়ে গিয়েছিল”
“ওহ সেটাও ঠিক”
“তোমার তো পায়ের অবস্থা ঠিক নেই। তুমি যাবে কী করে বাড়িতে?”
“আজ এখানে থেকে যান কাল যাবেন।”
বুশরা আসতে আসতে কথাটা বলল।
“হ্যাঁ তুমি তাই করো আদিব”
“কিন্তু বাড়িতে!”
“বাড়িতে জানিয়ে দাও; আর এমনিতেও একটু পর সন্ধ্যা নামবে”
“আচ্ছা”
“বিহি তুমি খেয়ে নাও আমি ওষুধগুলো আনছি।”
সবাই খাওয়া শেষ করে বসে আছে এমন সময় বুশরা বলল,
“ভাই বিহিকে এখন সম্পূর্ণ রেস্টে থাকতে হবে এট লিস্ট এক মাস তো লাগবেই পুরোপুরি সুস্থ হতে!”
আদিব চুপ করে আছে।
“ও জার্নি করবে কী করে? এই পা নিয়ে জার্নি করাটা রি’স্কি হয়ে যাচ্ছে না?”
“এখন কী করা যায়?”
“এক কাজ করতে পারেন। বিহি এখানে থাকুক। সুস্থ হলে ফিরে যাবে।”
“তা কী করে হয় বুশরা! বাড়ির সবাই ওকে দেখার জন্য পা-গল হয়ে আছে!”
“তাই বলি কী রি’স্ক নেওয়া যায়?”
আদিব চুপ করে আছে।
“তোমার এখানে কেউ থাকে না?”
“না আমি একা”
“পরিবার?”
“নেই!”
“তোমার মা বাবা কোথায় তারাও নেই?”
“না!”
“তুমি একা এখানে থাকো কেন? এমনিতেই জ”ঙ্গল কখন কোন জ”ন্তু বা কত কিছুর ভ/য় পাশে আবার বড় একটা খাদ!”
“অভ্যাস হয়ে গেছে”(তাচ্ছিল্য হেসে)
“তুমি তো চাইলে চাকরি করে শহরে থাকতে পারো!”
“আমাকে চাকরি কে দিবে? শহরে কিছু চিনি না কী করে যাবো বলুন তো। একবার গিয়েছিলাম শুধু। তখন অবশ্য সাথে মানুষ ছিল।”
“এখন যাও না কেন?”
“এখানে তো শুধু জ-ন্তুর ভয়। শহরে তো মানুষের ভ”য় ও আছে”
“মানে?”
“না তেমন কিছু না”
“তোমার জীবনে কী হয়েছিল? একা থাকো! তার পর এমন এমন কথা! তোমার কী কেউই নেই?!”
“এক সময় ছিল। সবাই ছিল। কিন্তু ওই যে বললাম! মানুষের ভ”য়। আমার ও সব ছিল। আমার একটা বড় পরিবার ছিল। কিন্তু মানুষের বাইরে দেখে যে ভেতরটা বোঝা যায় না!”
“তোমার মা বাবা?”
“মে-রে ফেলেছে”
“কিহ! কে মে-রেছে? আর কেন?”
“সেটা সেই জানে!”
“সে মানে? তোমার হাসবেন্ড ছিলো?”
“হুম”
“কেন মে’রেছে?”
” জানি না হয়তো তার কর্মকলাপ মা বাবা জেনে গিয়েছিল।”
“সে কোথায় এখন?”
বুশরা চুপ থেকে আদিবের দিকে কেমন করে যেন তাকালো। যা সবার চোখ এড়ালেও বিহি ঠিকই দেখলো কিন্তু বলল না কিছুই। সে এভাবেই আদিবের দিকে তাকিয়ে বলল,
“সে এখন আমাকে ছেড়ে অন্য একজনকে ধরেছে। আমাকে এখন চিনে না সে! হাহা”
বিহি বলল,
“কোথায় থাকে সে?”
“জানি না”
এইটুকু বলে বুশরা চলে গেলো। বিহির মনে কিছু একটা নিয়ে খটকা লাগলো। তবুও চুপ করে রইলো।
রাতে বিহিকে জোর করে খাওয়াচ্ছে আদিব। ওষুধগুলো এখন আদিব দিচ্ছে। সারা সময় বিহির খেয়াল আদিব রাখছে। বুশরাকে এখন ছুটি দিয়েছে। কম তো করেনি বিহির জন্য। ওর জন্যই তো বিহি বেঁচে আছে!
“আদিব আমি আর খাবো না। এত্তো খাবার আমি কীভাবে খাবো?”
“না খেলে সুস্থ হতে পারবে না”
“তুমি এসেছো আর শুরু করে দিয়েছো”(মুখ ফুলিয়ে)
“আমি যতদিন আছি ততদিন এইসব বেয়ারিং সহ্য করতে হবে”
দুজনেই হেসে দিলো। বুশরাও পাশে বসে ছিল। সে উঠে যেতে নিলে বিহি বলল,
“কই যাও আপু?”
“একটু কাজ আছে। তুমি খেয়ে নাও। তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যেও। আর কিছু লাগলে আমায় বলো। আমি পাশের ঘরেই আছি।”
“তোমাকে এখন ছুটি দিয়েছে। আদিবকে তো দেখছোই। তুমি নিশ্চিন্তে থাকতে পারো”
বুশরা হেসে পাশের ঘরে চলে গেলো। তার চোখের কোণে পানি জমেছে। চাইলে তার জীবনচিত্র ও এমন সুন্দর হতে পারতো। কিন্তু না তার বদৌলতে অন্য কেউ!
চলবে….?