পরিণয় পর্ব-১৫

0
1585

#পরিণয়
#লেখিকা- শরমিন আঁচল নিপা
#পর্ব- ১৫

সাহিলকে দেখেই পল্লবী থেমে গেল। এ দিকে সাহিল পল্লবীকে দেখে একটু চমকালো। কারণ পল্লবীকে দেখেই তার মনে হচ্ছে পল্লবী মা হতে চলেছে। তবে সাহিল এটা বুঝছে না পল্লবী আবার মা হলো কী করে। কারণ ইতোমধ্যে পল্লবীর বিয়ে হয়েছে এমন কোনো সংবাদ সাহিল পায়নি। কিছুটা বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করল

– তুমি কি মা হতে যাচ্ছ?

– তুমি করে বলার অধিকার অনেক আগেই হারিয়েছেন সুতরাং আপনি করে বলেন। আর হুট করে এমন প্রশ্ন কেন করছেন? আমি কী হতে চলেছি সেটা শুধু আমার ব্যপার। এটা কাউকে বলতে আমি বাধ্য নই।

– ওহ তাই? আমি তো জানি তোমার..

পল্লবী সাহিলের কথাটা আটকে দিয়ে বলল

– বলুন আপনার।

সাহিল কিছুটা বিরক্ত হলো পল্লবীর এমন আচরণে। কিছুটা বিরক্ত হলেও বিরক্তিটা তেমন প্রকাশ করল না। চাপা সুরে বলল

– আপনার তো বিয়ে হয়েছে এমন কোনো সংবাদ পায়নি তাহলে প্র্যাগনেন্ট হলেন কী করে?

– বাহ! আজকাল কী আমার সংবাদ নেওয়াও শুরু করেছেন? যাইহোক আপনার বাজে বাজে বকবক শুনার আমার কোনো ইচ্ছা নাই। পথ ছাড়ুন।

– ওহ আমার কথা আপনার কাছে বাজে বাজে বকবক মনে হচ্ছে।

– আমার উত্তর শুনে বুঝে যাওয়ার কথা।

– তা বাচ্চাটা কার?

– সেটার জবাব আপনাকে দিতে বাধ্য না। আপনি পথ ছাড়ুন।

– ইদানীং নাকি অফিসের বসের সাথে অনেক রঙঢঙ করতেছেন? বাচ্চাটা কী সে পাপের ফসল নাকি? এতটা অধঃপতন যে আপনার হয়েছে মানুষের মুখে শুনে বিশ্বাস করেনি এখন নিজের চোখে দেখে বিশ্বাস করলাম।

সাহিলের কথা শুনে পল্লবীর ভেতরটা কম্পিত হলো। সাহিল মনের অজান্তেই নিজের বাচ্চাকে পাপের ফসল বলছে। পল্লবীর একটু কষ্ট হলেও সেটা দমিয়ে নিয়ে বজ্র কন্ঠে জবাব দিল

– আপনার মন যেমন নোংরা আপনার চিন্তাধারাও তেমন নোংরা। আমার ব্যপারে কথা বলার অধিকার আপনাকে দেইনি। সুতরাং আমার পিছে না লেগে রুশির সাথে ভালো থাকুন। পথ আটকে দাঁড়িয়ে না থেকে পথ ছাড়ুন।

সাহিল পল্লবীর কঠোর জবাবে কিছুটা স্তব্ধ হয়ে গেল। কিছু বলার আর সাহস পাচ্ছে না। নিজেকে সামাল দিয়ে পল্লবীর পথটা ছেড়ে দিয়ে উল্টো পথে হাঁটতে লাগল। হাঁটার সময় বারবার সাহিল ভাবতে লাগল পল্লবীর পেটের বাচ্চাটা কার? প্রশ্নটা যেন বারবার তার মনে ঘুরপাক খেতে লাগল। এদিকে পল্লবীর মনটাও হালকা আনমনা হয়ে গেল সাহিলকে দেখে। নিজের অজান্তেই নিজের পেটের বাচ্চাটার পরিচয়হীনতায় ভুগছে সে। আজকে সাহিল না অনেকেই পল্লবীর নামে মিথ্যা অপবাদ রটাচ্ছে। এ পৃথিবীর মানুষগুলো বড়ই আজব। যাচাই বাছাই না করে একটা মানুষকে আঘাত করতে তাদের বিবেকে বাঁধে না। অথচ কথা বলার আগে যে হাজার বার চিন্তা করে কথা বলা উচিত যাচাই করে বলা উচিত এটা কত জনেই বা মানে। মানুষের কাজেই হলো কুৎসা রটানো। মাঝে মঝে একটা সুস্থ স্বাভাবিক মানুষকে শেষ করে দিতে এ সমাজের এমন অসুস্থ মস্তিষ্কের মানুষের কথায় যথেষ্ঠ।

পল্লবী তার মাথায় থাকা সকল চিন্তা সামনে এগুতে এগুতে বাদ দিল। বাসায় গিয়েই সবাইকে খুশি হয়ে বলতে লাগল সব। নিজের অর্জন টা মাঝে মাঝে প্রকাশ করতে বড্ড ভালো লাগে৷ পল্লবীর এ খুশিটার কাছে অতীতে পাওয়া সকল কষ্ট যেন মলিন হয়ে গেল। নিজের ভেতরে একটা শক্তি পাচ্ছে সে। সত্যি বলতে প্রতিটা মেয়ের উচিত নিজের মাটিটা শক্ত করা। নিজের উপর ভরসা রাখা। সর্ব প্রথম নিজেকে ভালোবাসা। কারণ নিজেকে ভালোবাসতে যে জানে না তাকে অন্য কেউ ভালোবাসবে না। নিজের মূল্য নিজেকেই দিতে হবে তাহলেই অন্যের মূল্য পাওয়া যাবে।

বাসায় যেন একটা খুশির আমেজ বইছে পল্লবীর এ সফলতায়। রাতে বিছানায় শুয়ে পল্লবী ভাবতে লাগল মাঝে মাঝে কষ্ট পাওয়া দরকার তা না হলে নিজের ভেতরের শক্তিটা কখনও প্রকাশ পায় না। কষ্টগুলোই মানুষের ভেতরের শক্তিগুলোকে প্রকাশ করে।

অপরদিকে সাহিল বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে। অস্থিরতা বিরাজ করছে তার মনে। রুশির সাথে বিয়ের প্রথম দিকে সম্পর্ক বেশ ভালো কাটলেও ইদানীং আর সেটা হচ্ছে না। কারণ রুশি প্রায়ই কারও সাথে কথা বলে যেটা সাহিলকে অনেক যন্ত্রণা দেয়। এসব নিয়ে তাদের মধ্যে ঝামেলা চলছেই। মনমালিন্য হচ্ছে। কেন জানি না সাহিলের চোখে পল্লবীর মুখটা ভেসে আসছে। বারবার মনে হচ্ছে পল্লবীর পেটে কার বাচ্চা। পল্লবী কোনো খারাপ করতে পারে এটা সাহিলের বিশ্বাস হচ্ছে না। পল্লবীর প্রতি করা অন্যায়ের কড়া জবাব যেন প্রতি মুহুর্তেই পাচ্ছে সে। নিজেকে আজকে অনেক অপরাধী মনে হচ্ছে। তবে সে অপরাধ শুধরাবার কোনো উপায় সাহিলের নেই। এর মধ্যেই রুশির কন্ঠস্বর ভেসে আসলো। সাহিল দৌঁড়ে বাইরে গিয়ে দেখল রুশি সাহিলের বাবা মায়ের সাথে কী নিয়ে যেন চিৎকার চেঁচামেচি করছে৷ সাহিল কিছুটা রাগান্বিত হয়ে বলল

– মা বাবার সাথে এভাবে চেঁচাচ্ছ কেন? বাবা মা এর সাথে এমন করলে আমি তোমাকে বাসা থেকে বের করে দিতে বাধ্য হব।

রুশি হালকা হেসে বলল

– সাহিল ভুলে যেও না বিয়ের সময় তুমি আমাকে সব লিখে দিয়েছ। এখানে যে আমি থাকতে দিয়েছি এটাই তো অনেক বড়। তার উপর এতগুলো কথা বলছো কোন সাহসে। তোমার বাবা মাকে আমার একদম সহ্য হচ্ছে না। কালকে নিয়ে বিদ্যাশ্রমে রেখে আসবে। আর আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিলে আমারেই লাভ। সুতরাং আমার কথায় চলো নাহয় ডিভোর্স দিয়ে দাও।

বলেই রুশি মুখটা বাঁকিয়ে ঘরে চলে গেল। সাহিলের বাবা মা দুজনেই বেশ কাঁদতে লাগল। তাদের ভেতেরেও একটা চাপা কষ্ট ভ্যাবসা হয়ে বের হচ্ছে। নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে। পল্লবীর কথা মনে হচ্ছে তবে ক্ষমা চাওয়ার মুখ এখন তাদের নেই। সাহিল স্থির দাঁড়িয়ে আছে।রুশির ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে এ বাড়িটা রুশির নামে কাবিন করার দিন দেনমোহর হিসেবে দিছিল। এখন না পারছে ডিভোর্স দিতে না পারছে সইতে। নিজের ভুলের চরম খেসারত পেতে হচ্ছে তার।

পরদিন সকালে পল্লবী রোজকার মতো ঘুম থেকে উঠে অফিসে যাওয়ার জন্য রওনা হলো। এর মধ্যেই সাদেক সাহেব কল দিল। পল্লবী কলটা ধরতেই সাদেক সাহেব বলে উঠল

– আপাই সরাসরি অফিসে না গিয়ে আশালতার সাথে দেখা করতে আসো। আমি গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি তোমার বাসার নীচে। তুমি গাড়িতে উঠে চলে আসো।

– আচ্ছা ঠিক আছে তুই ফোন রাখ। আমি আসতেছি।

বলেই ঘর থেকে বের হয়ে বাসার নীচে গাড়িতে উঠল। গাড়িটা আপন গতিতে গন্তব্যের দিকে এগুচ্ছে। প্রায় একঘন্টা পর ব্যস্ত শহরের জ্যাম পার হয়ে গাড়িটা গন্তব্যে পৌঁছাল। গাড়ি থেকে নেমেই পল্লবী সাদেক সাহেবকে দেখতে পেল। সাদেক সাহেবের কাছে গিয়ে বলল

– কী রে তোর আশালতা কোথায়?

সাদেক সাহেব পল্লবীকে হাতে ইশারা দিয়ে সামনের দিকে একটা মেয়েকে দেখাল।পাশ দিক দিয়ে পল্লবী মেয়েটার পুরো মুখটা দেখতে পারছিল না তবে মেয়েটাকে কেন জানি না তার বেশ পরিচিত মনে হচ্ছে। তাই খানিকটা এগিয়ে মেয়েটার সামনে গেল। মেয়েটাও পল্লবীকে দেখল আর পল্লবীও মেয়েটাকে দেখল। দুজন দুজনকে দেখে চমকে গেল।কারণ