#পুতুল_বউ
#Afxana_Junayed
#পর্ব_২৪
জানালা ভেদ করে রোদের তিব্র আলো মুখে পড়তেই ঘুম হালকা ছুটে যায় পুতুলের।দু হাত দিয়ে মুখ কিছুক্ষণ চেপে ধরে।আড়মোড়া হয়ে উঠে দেখে পাশে মারজিয়া নেই।কিছুক্ষণ ওভাবেই বসে থেকে আলসেমি ছেড়ে বিছানা ছেড়ে উঠে ফ্রেশ হয়ে ঢুলতে ঢুলতে নিচে যায়।সিঁড়ির নিচে আসতেই তার ভ্রু কুঁচকে যায়।দেখে গুটি গুটি পায়ে স্নিগ্ধা দড়জা দিয়ে ভেতরে ঢুকেই এক দৌড় দেয়।তার হাতে অনেকগুলো চকলেট যেটা সে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে আছে।পুতুলের সামনে দিয়ে দৌড়ে যাওয়ার আগেই পুতুল খোপ করে স্নিগ্ধাকে ধরে দাড় করিয়ে দেয়।স্নিগ্ধা একটা চিৎকার দেয়।পুতুল তাকে ধমক দিয়ে বলে,
-এই চুপ চিল্লাস কেন,এমন দৌড়ে কই যাচ্ছিলিস সকাল সকাল।আর তোর হাতে কি?
-কেন চোখে দেখোনা চকলেট!
-কে দিছে?
স্নিগ্ধা এইবার চকলেট গুলো আরো শক্ত করে ধরে পুতুলের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বলে,
-তোমাকে কেন বলবো?আমি জানি তুমি আমার সব চকলেট খেয়ে ফেলবে।
বলে স্নিগ্ধা আবার দৌড় দিতে নেয়,কিন্তু তার আগেই পুতুল আবার ধরে নেয়।
-আমি জানি এগুলো তোর পাপা দেয় নি,তাই সত্যি করে বল কে দিয়েছে না হয় তোর পাপাকে বলে দিবো তুই অচেনা মানুষের কাছ থেকে চকলেট নিয়ে খাস।
-উপফ ফুপ্পি অচেনা মানুষ হতে যাবে কেনো আমাকে তো এই চকলেট গুলো সামির আঙ্কেল দিলো।
সামিরের কথা শুনে পুতুলের বুক ধুক করে উঠলো।সামির!সামির এখানে এসেছে?কই সেতো দেখতে পারছে না,
-সামির!মিথ্যা কথা বলছিস কেনো স্নিগ্ধা।
-হুম সামির আঙ্কেলি তো,একটু আগে আমি দারোয়ান নানুকে নিয়ে দোকানে যাচ্ছিলাম তখন সামির আঙ্কেলকে দেকেচি,আমাকে কোলে নিয়ে চুমু খেয়েছে তারপর এত্তো গুলা চকলেট দিয়েছে।
সামির এই টাইমে এই গ্রামে?তাও আবার তাদের বাড়ির সামনে, কি কারণে এসেছিলো।জিজ্ঞেস করবো?না থাক আবার কি না কি মনে করবে,আসতেই পারে হয়তো কোনো কাজে এসেছিলো।
ভাবতে ভাবতেই স্নিগ্ধা দৌড়ে চলে যায়।পুতুল আর বেশি ঘাটে না,আরেকটু সামনে গিয়ে দেখে মারজিয়া আর শ্রেয়া রান্না ঘরে কিছু করছে।’তার মানে মারজিয়া এখনো যায় নি?উপপ ভালোই হলো।
পুতুল দৌড়ে রান্না ঘরে যায়।দেখে শ্রেয়া আর মারজিয়া মিলে কিছু রান্না করছে,পুতুল যেয়ে বেসিনের উপর বসে তাদের কাজ দেখতে থাকে।রান্না শেষ হলে এক এক করে টেবিলে সব খাবার রাখতে থাকে পুতুল আর মারজিয়া।সকালের নাস্তা করা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রণয় সবাইকে তাড়া দিয়ে বলে,
-তোমরা সবাই জলদি করে রেডি হয়ে নাও। হাতে বেশি সময় নেই।
পুতুল স্নিগ্ধার সাথে চকলেট নিয়ে ঝগড়া করছিলো।ভাইয়ার এতো তাড়া দেখে বলে,
-কেন ভাইয়া কই যাবো আমরা।
-আরে ফায়াজ আঙ্কেল দের বাড়ি আজকে আমাদের দাওয়াত রয়েছে বাবা তোদের বলে নি?
বলে বাবার দিকে তাকায় প্রণয়।তখনি সে জ্বিভ কেটে বলে,
-যা বলতেই ভুলে গেছি তুই একবার আমাকে মনে করিয়ে দিবিনা?
-যাই হোক।এখন তো সবাই যেনে গিয়েছো?সো কেউ একদম লেট করবে না,আমি একটা কাজ সেরে আসছি তারপর তোমাদের সবাইকে নিয়ে যাবো।
শ্রেয়া এইবার চিন্তিত স্বরে বলে,
-এই তোমরা না সবসময় এমন করো।হুট করে বলে ফেললেই কি আর সাথে সাথে যাওয়া যায়?ঘরে কত কাজ পরে আছে,আগে জানলেতো সব কিছু ঘুছিয়ে রাখতাম।এখন এইটুকু সময়ে কি করবো?
প্রণয় শ্রেয়ার কথার পালটা জবাব দিয়ে বলে,
-এখন এখানে বক বক না করে কাজ করলে তোমার একটা কাজ হলেও আগাবে,সো তাড়াতাড়ি করো।
শ্রেয়া গুটিগুটি চোখে প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে ভ্যাঙচি কেটে চলে যায়।মারজিয়া একবার পুতুলের দিকে তাকিয়ে মিন মিন স্বরে বলে,
-আন্টি আঙ্কেল আমি তাহলে আসি আজ,মা আমার জন্য অপেক্ষা করছে।
বলে যাওয়ার জন্য এক পা বাড়ানোর আগেই প্রণয় সোফায় বসে তার জুতা ঠিক করতে করতে বলে,
-আপনি আবার কই জান মেডাম।আপনাকেউ আমাদের সাথে যেতে হবে।
-না না ভাইয়া আমি যাবো কি করতে আমি বরং বাসায় যাই।আর পুতুল তুই আমাকে কল করিস কালকে স্কুলে যাবো আমরা।
শেষের কথাটা পুতুলের কাধে হাত রেখে বলল মারজিয়া।কিন্তু তার আগেই প্রণয় দ্রুত জবাব দিলো।
-নাহ আপনার আমাদের সাথেই যেতে হবে কোনো কথা নেই।আর তোমার মাকে আমি বলে দিয়েছি।সো নো টেনশন এখন তুমিও বক বক না করে জলদি রেডি হও বেশি সময় নেই।পুতুল ওকে নিয়ে যা তোরা রেডি হ যা।
বলে প্রণয় চলে গেলো।পুতুল খুশি হয়ে মারজিয়ার হাত ধরে টেনে উপরে নিয়ে যেতে যেতে বলল,
-সবাই এতো ভালো হলো কীভাবে বল তো!আমার অনেক খুশি খুশি লাগছে,আবার কতদিন পর ও বাড়িতে যাবো সামিয়া আন্টি আলিয়া উফফ আমি অনেক এক্সাইটেড।
খুশিতে লাফাতে লাফাতে কথা গুলো বলে মারজিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে যায়।মারজিয়ার মুখের ভঙ্গি বুঝতে চেষ্টা করে বলে,
-কিরে তোর মুখ এমন করে রেখেছিস কেনো?গরুর মতো নাক ফুলাচ্ছিস কেনো?এমা আবার দেখি নাক দিয়ে ধুয়াও বেড় হচ্ছে,তোর বান্ধুবির খুশিতে তুই খুশি নোস?
বলে মারজিয়ার গালে হাত ছোয়ায় পুতুল।মারজিয়া এক ঝটকা মেরে পুতুলের হাত ফেলে দিয়ে বলে,
-তোর ভাই কি হ্যা?মানুষ নাকি গন্ডার,সবসময় আমার পিছে পরে থাকে।কি সুন্দর বউ বাচ্চা থাকতে সেই আমার সাথেই কীভাবে ফ্লার্ট করে গেলো।তোর ভাই কি কখনো ভালো হবে না হ্যা!
পুতুল চুপ মেরে যায়,কিছুক্ষণ মারজিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে হুট করে হো হো করে হেসে দেয়।হাসতে হাসতে বলে,
-ও এই ব্যপার?আরে গাধি ভাইয়া মজা করে তোর সাথে।
-হু মজা না ছাই সেই ছোট বেলা থেকেই করে আসছে,যখন ভাবিপুর কাছে বিচার দিবো তখন বুঝবে, হু।
-আচ্ছা দিস এখন চল রেডি হই,সামির ভাইয়াদের বাসায় যেতে হবে না?ইয়েএএএ
মারজিয়া পুতুলের দিকে তাকিয়ে একটা ভেঙচি কেটে বিড়বিড় করে বলে,
“এদিকে ছাইয়্যা হয়ে প্রেমের নদীতে হাবুডুবু খাচ্ছে,আবার ভাইয়া মারায় হু। কি মনে করেছে আমি কিছু জানিনা?”
পুতুল রেডি হচ্ছে কম লজিকহীন কথা বার্তা বলে মারজিয়ার মাথা খাচ্ছে বেশি।মেয়ে প্রেমে পড়ে এইসব আবুল তাবুল কথা বলছে এটা মারজিয়া নিশ্চিত,নাহলে এরকম ভাবনা কেউ ভাবে?এইযে এখন যেমন বলছে,
-আচ্ছা মারজিয়া ভাইয়ারা এমন হুট করে আমাদের নিয়ে ও বাড়িতে যাচ্ছে কেনো?আমি কিন্তু কোনো সন্দেহ সন্দেহ গন্ধ পাচ্ছি।আচ্ছা এমনো তো হতে পারে,যে ওখানে নিয়ে আমাদের অজান্তেই সামির ভাইয়া আর আমার বিয়ে দিয়ে দিলো!
-কেন এমন মনে হলো কেন?
-আরেহহ হয়না কত গল্প সিনেমায়।
-ওইসব গল্প সিনেমাতেই হয়।
পুতুল আরো কিছু বলতে যাবে তার আগেই মারজিয়া পুতুলকে থামিয়ে চুপ করিয়ে দেয়।
কিছুক্ষণ পর চেয়ারম্যান বাড়ির সবাই রওনা দেয় এমপিদের বাড়ির উদ্দেশ্য। এখন পর্যন্ত কেউ ঠিক করে জানেনা তারা কেনো যাচ্ছে,শুধু বাবা আর ভাই সব ঠিক করেছে।
এদিকে পুতুলের কেমন লজ্জাও লাগছে আবার ভালোও লাগছে,লজ্জা লাগার কারণ হচ্ছে কালকের সেই মেসেজটা।আর ভালো লাগার তো কারণের অভাব নেই।
গাড়ি দিয়ে যাওয়ায় বেশিক্ষণ সময় লাগে নি তাদের।গাড়ি থেকে বেড় হয়ে পুতুল বেশ অবাক হয়।অনেকদিন পর বাড়িটা দেখে সে,কিন্তু আজকে কেমন যেনো নতুন নতুন লাগছে,বাড়িটা কেমন সজ্জা সজ্জা লাগছে যেমনটা বাড়িতে কোনো রকম অনুষ্ঠান থাকলে হয়।শুধু কি তারা আসবে বলে এরকম নাকি অন্য কিছু?
ভেতরে যায় তাড়া!সবার সাথে কুশল বিনিময় করে বসে।সবার সাথে হেসে হেসে কথা বললেও পুতুলের কেমন যেনো অস্থির লাগছে,দু চোখ শুধু সামিরকে খুঁজছে,কেনো যেনো মনে হচ্ছে সামনে কিছু একটা হবে,আর যা হবে বেশি একটা ভালো কিছু হবেনা।নেহাত এগুলো পুতুলের আজেবাজে চিন্তা হলেও তার ভেতরে ঝড় তুলছে ভাবনা গুলো।
পুতুল মাথা নিচু করে টেনশন করছে,আচমকা হাতে কারো খামচি অনুভব করে,পাশে তাকিয়ে দেখে মারজিয়া তার হাত খামচে ধরে সামনের দিকে ইশারা করছে।পুতুল তার চোখে অনুসরণ করে সামনে তাকিয়ে দেখে,’সেদিনের ওই মেয়েটা।সামির যার হাত ধরে ছিলো।এই মেয়ে এখানে কি করে?’
ধুক করে উঠে পুতুল।মারজিয়ার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকায়।মারজিয়াও তার দিকে একি ভাবে তাকিয়ে আছে।
সামিয়া আন্টি তাদের সামনের সোফাতে বসেই গল্প করছিলো সবার সাথে,ওই মেয়েটা একটা রুম থেকে বেড় হচ্ছে,চোখে চশমা সেটা স্টাইলের জন্য পড়েছে নাকি কি সে জানেনা,পড়নে লেডিস টি শার্ট আর টাওজার।দেখে খুব মর্ডান মনে হচ্ছে,তাহলে সে যা ভেবেছিলো তা কি ঠিক?
ড্রয়িংরুমের এতোগুলা মানুষকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে মেয়েটা সামিয়ার সামনে এসে বলল,
-মনি আমি গেলাম ভালো থেকো।
সামিয়া হালকা কাধ ঘুরিয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
-কে রাকি?চলে যাচ্ছিস, আচ্ছা যা সাবধানে যা!
ধুপধাপ পা ফেলে গেইট দিয়ে বেড় হয়ে গেলো মেয়েটা।পুতুল আর মারজিয়া হা করে তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো।তার মানে মেয়েটার নাম রাকি সামিয়া তাদের দিকে তাকিয়ে খেতে বলল,আর কিছু বলল না।পুতুলের বাবা জিজ্ঞেস করলো।
-কই সামির কই তাকেই তো দেখছিনা।
সামিরের কথা উঠতেই পুতুল এইবার ফুল এটেনশন দিলো তাদের উপর।সামিয়া আবার পুতুলের দিকে তাকিয়ে তার বাবার উদ্দেশ্য বলল,
-উপরেই আছে,আসলে একটু স্ট্রেঞ্জের মধ্যে আছে তো তাই একাই রয়েছে।
-আচ্ছা কোনো সমস্যা নেই,আমরা নাহয় পরে কথা বলে নিবো নি এখন একটু একা থেকে নিজেকে গুছিয়ে নিক।তা ছাড়া আপনারা যা করেছেন আমাদের জন্য বিশেষ করে সামির বাবা!
ফায়াজ এইবার মুখ খুলল পুতুলের বাবার হাত ধরে বলল,
-আরে কি বলিস না,তোর বিপদে আমরা পাশে দাড়াবো না তাকি হয়?আর সামিরও যা করেছে তার জন্য আমাদেরব খুব ভালো লেগেছে,ছেলেকে ভালো মতো মানুষ করতে পেরেছি এটাই অনেক।আর তার পেছনে কিন্তু তোর ও অবদান রয়েছে।
বলে তাড়া হাসতে লাগলো আবার গল্প জুরে দিলো।এদিকে পুতুলের চিন্তা যেনো আরো দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেলো,কিসের ঝামেলা কি গুছিয়ে নিবে?
-আচ্ছা ওইযে আমি হসপিটালে থাকা কালিন সামিরের সাথে আরেকটা ছেলে ছিলোনা কি জানি নাম,সে কোথায়?তাকেও কিন্তু আমার অনেক ধন্যবাদ দেওয়া দরকার।
-ও হ্যা সিজান,ওকে ফোন করে বলেছি আসতেছে হয়তো।
বলার আগেই সিজান দৌড়ে ড্রয়িং রুমে এসে হাজির। দেখে মনে হচ্ছে খুব তাড়াহুরো করে এসেছে,এসেই সবার আগে মারজিয়ার দিকে তাকিয়ে একটা স্বস্তির নিশ্বাস নিলো,তারপর এগিয়ে এসে সবার সাথে কুশল বিনিময় করলো।তারপর উপরে চলে গেলো।
কিছুক্ষণ পর এখন তাদের যাওয়ার পালা।পুতুলের মন অস্বস্তিতে ভুগছে,একটিবারো সামিরের সাথে তাদের দেখা হয়নি।এই সিজানটাকেও হাতের নাগালে পাচ্ছে না যে কিছু জিজ্ঞেস করবে।
তখন পুতুল খেয়াল করলো।করিডরের আড়ালে লুকিয়ে লুকিয়ে সিজান তাদের ইশারা ডাকে,পুতুল বলে কিভাবে যাবে।তারপর একটা উপায় পেয়ে সামিয়ার উদ্দেশ্য বলে,
-আন্টি যাওয়ার আগে মারজিয়া একটু আপনাদের বাড়ি ঘুরে দেখতে চাচ্ছে নিয়ে যাই?
মারজিয়া চোখ বড় বড় করে তাকায় সে কখন বলল এ বাড়ি ঘুরে দেখবে?
সামিয়ার অনুমতি পেয়ে পুতুল মারিয়াকে টেনে উপরে করিডরের এক কোনায় নিয়ে যায়।যেখানে সিজান দাঁড়িয়ে আছে,তার সামনে এসে দাড়াতেই মারজিয়া পুতুলকে জিজ্ঞেস করে,
-এখানে নিয়ে এসেছিস কেনো আর আমি কখন বললাম যে এ বাড়ি ঘুরে দেখবো?
পুতুল মারজিয়ার কোনো কথার উত্তর দেয় না।সিজানকে সামিরের কথা জিজ্ঞেস করতে উদ্যোগ হতেই পেছন থেকে হাতের টান পড়ে,পুতুল তাকিয়ে দেখে সামির।কিন্তু কিছু বলার আগেই সামির ঝড়ের গতিতে পুতুলকে টেনে নিয়ে যেতে থাকে।মারজিয়া আৎকে উঠে,পুতুলকে ধরতে যাবে তার আগেই সিজান তাকে ধরে আটকে রাখে,মারজিয়া নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলে,
-কি হচ্ছেটা কি?পুতুলকে নিয়ে কই যাচ্ছে!আমাকে আটকালেন কেনো ছাড়ুন ছাড়ুন বলছি।
সিজানের সাথে লড়াই করে মারজিয়া প্রায় ছুটেই যাচ্ছিলো।পরিস্থিতি বুঝতে পেরে সিজান মারজিয়াকে একটা ঘরে নিয়ে ভেতর থেকে আটকে দিয়ে তাকে কিছু একটা বলে।কিছুক্ষণ ভাবার পর পুরো দমে যায় মারজিয়া।খাটে বসে পরে সাথে সিজানও!
_______
সামির পুতুলকে টেনে ছাদে নিয়ে বাহিরের সিঁড়ি দিয়ে বাগানে নেমে যায়।এই পর্যন্ত পুতুল অনেক প্রশ্ন করে সামিরকে কিন্তু সামির এর একটারো উত্তর দেয় না।হাত ধরে টেনে কালো গোলাপ গাছের সামনে দাঁড়ায় তারা দুজন।পুতুল অনেকদিন পর এই গাছটার সামনে এসে দাড়ালো।কিন্তু সামির তাকে আবার এখানে কেনো নিয়ে আসলো?
-সামির ভাইয়া কি হয়েছে আপনার?আমাকে এখানে নিয়ে আসলেন কেনো,কিছু বলবেন?
এইবারো কিছু বললনা সামির,কিন্তু একটা কান্ড ঘটালো যেটাতে পুতুল খানিকটা ইতস্তত বোধ করলো একটু লজ্জাও পেলো বধোয়।
সামির খানিকটা প্রসারিত হয় পুতুলের দিকে।পুতুলের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে কিয়ৎক্ষণ পুতুল মাথা নত করে নেয়।সামির আরো একটু কাছে গিয়ে পুতুলের দু হাত নিজের দু হাতে পুরে নেয়।এভাবে অনেক্ষণ দুজন চুপ থাকে,পুতুল মিন মিন স্বরে শুধু এইটুকু বলে,
-সামির ভাইয়া!
চট করে সামির পুতুলের হাত ছেড়ে দেয়।তার কাছ থেকে অনেকটা দূরে গিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস নেয়।কালো গোলাপ গাছের সামনে গিয়ে ফুল ছিড়তে থাকে,পুতুল শুধু অবাক হয়ে দেখতে থাকে।প্রায় আটটার মতো কালো গোলাপ ছিড়ে এনে পুতুলের হাতে গুজে দিয়ে বলে,
-তোমার জন্য!
এইবার সত্যি সত্যি পুতুল হার্ট ফেল করবে।সব সপ্ন সব!এ কি কখনো হতে পারে?নাতো সে তো নিজের স্ব চোক্ষে দেখছে তার হাতে তার এতো বছরের আশা করা কালো গোলাপ!
মুখ প্রায় দু ইঞ্চির মিতো ফাক হয়ে যায় পুতুলের।সামির জানতো পুতুলের রিয়াকশন এমনি হবে,তাই একটু হাসলো!আবার থম মেরে পুতুলের দিকে তাকিয়ে রইলো।মনে হচ্ছে চোখ দিয়েই অনেক কিছু বলছে সে,কিন্তু এই মুহুর্তে পুতুল তা কানি কোনাও বুঝতে পারছে না।সামির আবার দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলে,
-আজ থেকে এই গাছের অর্ধেক মালিক তুমি,পুরোটা তোমাকে আমি দিতে পারবোনা।তাই অর্ধেকি দিলাম।কিন্তু এই গাছের অর্ধেক মালিক তুমি বলে যে যখন মন চায় ফুল ছিড়বে তা একদমি হবে না।এই গাছটার অর্ধেক তোমার থাকলেও ছেড়ার ক্ষমতা শুধু একজনের থাকবে,সেটা আমি না অন্য কেউ।কে সেটা কখনোই জানতে চাইবে না কখনোই না।
চলবে..!
#পুতুল_বউ
#Afxana_Junayed
#পর্ব_২৫
ফুরফুরে মনটাকে মুহুর্তেই কালো আধারে ঘিরে দেওয়ার জন্য তার শোনা একটা কোথাই যথেষ্ট ছিলো।বার বার কেনো তার সাথে এমন হয়।একবার কাছ এসেও দুরত্ব হয়ে গেলো আবার যখন একটু গুচালো ওমনি আবার দূরে চলে যাচ্ছে।
তখন,কথা গুলো বলে সামির পুতুলের সাথে আর কোনো বাক্য বিনিময় না করে পেছন ফিরে চলে গিয়েছিলো।পুতুল যেনো খানিক্ষনে জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলো,যে ফুলের জন্য সামির তাকে বাধতে চেয়েছিলো সে ফুলের গাছের অর্ধেক মালিক সে?তার হাতে এতোদিনের সপ্নে ছোয়া কালো গোলাপ যেটা কিনা সামির শয়ং নিজে তার হাতে দিয়েছে।এটা ভেবেই তো খুশির শেষ নেই,আর কথা গুলো আপাতত মাথায় নেই তার।
ফুলগুলো যত্ন করে লুকিয়ে রেখে পুতুল বাড়ির ভেতরে যায়।পুতুল ভেবেছিলো উপর দিয়ে গিয়ে আবার মেইন ডর দিয়ে ভেতরে ঢুকলে হয়তো সবাই অনেক প্রশ্ন করবে,কিন্তু না কেউ কোনো রকম কিছু বলে নি।একটু চোখ বুলাতেই মারজিয়াকে সোফায় মাথা নত হয়ে বসে থাকতে দেখা যায়।পুতুল বুঝতে পারে হয়তো মারজিয়া বলেছে,পুতুল মুখে মুচকি হাসি নিয়ে মারজিয়ার পাশে গিয়ে বসে।পেটে আর জমা রাখতে পারছে না পুতুল তবুও আপাতত চুপ রইলো বাসায় গিয়ে মারজিয়াকে সব বলবে,মারজিয়া জানলে খুশি হবে নিশ্চয়ই!
ভেবে ভেবেই পুতুলের মুখ থেকে হাসি যেনো আর থামছেই না।কিন্তু এদিকে সিজান মারজিয়াকে এমন থম মেরে বসতে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকায় পুতুল।তখন পাশ থেকে বাবা বলতে থাকে,
-এটা কি হলো ফায়াজ,আমি আরো ভেবেছিলাম সামির হয়তো পড়ালেখা শেষ করে একেবারের জন্য দেশে এছে।
অপর পাশ থেকে ফায়াজ ঠিক মতো বসে বলল,
-আমরাও তো তাই জানতাম রে,কিন্তু পরে শুনি গ্রেজুয়েশন কমপ্লিট করে সব কাজ গুছাতে আরো দু বছর লাগবে তাই আবার ইতালি ব্যাক যাচ্ছে,তারপর একেবারের জন্য বিডিতে!
-যাক ভালোই হলো কয়দিন এসে ঘুরে গেলো এটাই অনেক!আবার দু বছর পর নাহয় দেখা হবে।আচ্ছা অনেকক্ষণ রইলাম এইবার নাহয় আমরা উঠি।
-হ্যা হ্যা কালকে কিন্তু মনে করে সকাল সকাল এসে পড়বি কিন্তু।
স্তব্ধ নগরীর মতো বসে রইলো পুতুল।নিজের কানকে যেনো বিশ্বাস করাতে পারছে না সে।শুক্ন বড় বড় আঁখি জোড়া নিয়ে তাকালো পাশে বসা মারজিয়ার দিকে।তার অবস্থা স্বাভাবিক মাথা সেই আগের নেয় নত!তার মানে কি সে আগের থেকেই সবটা জানতো?
এইবার তাকালো সামনে বসা সিজানের দিকে সেও একি ভাবে চোখের দৃষ্টি ফ্লোরে রেখে বসে আছে।
এইবার প্রণয় মুচকি হেসে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ফোন পকেটে পুরে নিয়ে বলল,
-জ্বী আঙ্কেল অবশ্যই আমরা কালকে আসবো।আর বাবা মা তোমারা শ্রেয়া পুতুল আর মারজিয়াকে নিয়ে বাসায় যাও।আমার একটু কাজ আছে, সিজান তুমি একটু আমার সাথে আসো।
সিজান উঠে পুতুলের দিকে একবার অসহায় ন্যয় চায়!তারপর প্রণয়ের সাথে বেড়িয়ে যায়।
তারপ তারা সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় উদ্দেশ্য রওনা দেয়।পুতুল সারা রাস্তা চুপটি মেরে ছিলো।মারজিয়াও কিছু বলার জন্য কথা খুজে পায় নি।তারও মন খারাপ!সিজান যখন তাকে ঘরে নিয়ে যায় তখন সবটা বলে,সামির বিডিতে একেবারের জন্য আসে না তার পড়ালেখা এখনো শেষ হয় নি হঠাৎ করে তার ফ্লাইট পরে যায় সেও কিছু বুঝে উঠতে পারে নি।
মারজিয়াদের বাড়ির সামনে গাড়ি থামাতেই মারজিয়া নেমে যায়।একবার পুতুলের দিকে চায় কিন্তু পুতুল তাকায় না।একটা দীর্ঘ শ্বাস টেনে চলে যায়।পুতুলরাও বাসায় আসে পরেরদিন সামিরকে সবাই এয়ারপোর্টে দিতে যাবে।বিষন্ন মন নিয়ে ঘরে গিয়ে কালো গোলাপ ফুলগুলোর দিকে একবার তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে ফুলগুলো যত্নে রেখে দিয়ে ফ্রেশ হতে যায়।
এদিকে পুতুলের বাবা গাড়ি থেকে নেমে ড্রয়িং রুমের সোফাতে একটু হেলান দেয়।শ্রেয়া শরবত এনে দিতেই তা কয়েক মিনিটে শেষ করে খালি গ্লাসটা তার হাতে ধরিয়ে দেয়।হালকা বুকে ব্যথা করছে,সেদিনের এক্সিডেন্টের পর যেনো অসুখ আর কমছেই না একটার পর একটা লেগেই আছে।হাপানির রোগটাও দেখা দিচ্ছে একটু একটু।এই অবস্থায় আর উপরে যাওয়ার সাহস জুটলো না তার!তাই সোফাতেই মাথা ঠেকিয়ে রইলো।কিন্তু মুহুর্তেই বাড়ির মেইন ডর দিয়ে প্রবেশ করলো বেশ নেতনেতা একটা ছাপা কাপড় পরিহিত এক মহিলা।তাকে এভাবে ভেতরে ঢুকতে দেখে শ্রেয়া থেমে যায়,কিন্তু কোনো কথা বলে না।মহিলাটা দ্রুত পায়ে ভেতরে এসেই বাবার পায়ে পড়ে যায়।পা জড়িয়ে ধরে আজহারি স্বরে বলতে থাকে,
-চেয়ারম্যান সাব চেয়ারম্যান সাব দোয়া করে আমার পোলাডারে জেল খানা থাইকা বাইর কইরে আনেন।আমার পোলাডার হনে বহুত কষ্ট হইতাছে,একমাত্র আপনি পারবেন ওরে আবার ফিরা আনতে নাইলে ওর ফাঁ’সি হইবো।
তিনি হয়তো একটু বিরক্ত প্রকাশ করলেন।তবুও কিছু না বলে মহিলাটাকে হালকা ধমক দিয়ে পা ছাড়তে বলে।মহিলাটা তার পা ছেড়ে দাঁড়িয়ে মাথার কাপড় ঠিক করে দাড়ালেন,পুতুলের বাবা এইবার বেশ রাগ চটা কন্ঠে বলল,
-কার জন্য আমার পা ধরছো তুমি?একটা কু’লা’ঙ্কা’র ছেলের জন্য!যে কিনা রাস্তায় রাস্তায় গুন্ডামি করে বেড়ায়।যে ছেলে আমার মেয়ের ক্ষতি করতে চেয়েছে আমার পরিবারটাকে ঝুকিতে ফেলেছে তার সামনে এসেই নিজের ছেলের শাস্তির মাফ চাচ্ছো?
-আমার পোলার কোনো দোষ নাই সাহেব সব ওই বন্ধুগো লগে থাইকা হইছে।দেহেন না পোলার চিন্তায় ওর বাপটাও কয়দিন ধইরা বাড়িত আয়তাছেনা।
-কি বললে ইমনের চিন্তায় ইয়াসিন বাড়িতে আসছে না?তোমার স্বামী যে কয়দিন ধরে বাসায় না এসে তার দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে ফষ্টিনষ্টি করছে সেটা কি আমি জানিনা মনে করেছো?
এইবার মহিলাটি একেবারে চুপসে গেলো।এভাবে ধরা খেয়ে যাবে বুঝতে পারে নি।এখানে তারো তো কোনো দোষ নেই,তার স্বামীর দ্বিতীয় বউ আছে সেটা সে জানে আপাতত সে ওখানেই আছে সেটাও সে জানে।কিন্তু হাজার হোক ইমন তার পেটের ছেলে সে কি করে নিজের ছেলেকে এই অবস্থায় দেখতে পারে?
-ধরা খেয়ে এমন চুপসে যেয়ে লাভ নেই।ইমনের ব্যপারে আমরা নেয়,তোমরা যদি টাকা দিয়ে তাকে জামিন করাতে পারো তাহলে করিও!আর দ্বিতীয় বার যদি আমাদের বাড়ির আশেপাশে চোখ রাখে তাহলে আমি ওর চোখ উপরে নিবো।
এইবার হয়তো একটু প্রশান্তি মিলল।যত টাকা লাগুক নিজের ছেলেকে তো ওই নরক থেকে বেড় করতে পারবে।
-না না সাহেব ও আর এদিকে চায়বো না জেল থাইকা বেড় হওয়ার লগে লগে ওরে বিদেশ পাঠায় দিমু!
-হুম মনে থাকে যেনো,এখন যাও।
__________
আবার সকাল সকাল এমপিদের বাড়ি যায় চেয়ারম্যান বাড়ির পরিবার।আজ আর পুতুলের অজানা নেই তারা কেনো এ বাড়িতে আবার এসেছে।আজি হয়তো এ বাড়ির তার শেষ দিন।আর আশা হবে না হয়তো আসতে চায়েও না পুতুল!
সামির আজ আবার চলে যাবে দু বছরের জন্য!যেখানে অনেক বছর থেকে স্মৃতি রেখে এসেছিলো।বিডিতে আসার কোনো আগ্রহ ছিলোনা তার,তবুও বাবা মার চাপে আসতে হয়েছে,কিন্ত প্রথম দিন এমন কান্ড ঘটে একটা স্মৃতি একে দিয়েছিলো।মাঝরাস্তায় তাকে ভুল মানুষ ভেবে গলা টিপ দিয়ে ধরেছিলো পুতুল।সামির তখন অবাকের চেয়ে মুগ্ধ হয়েছিলো বেশি।এরকম একটা পুতুলের মতো দেখতে মেয়ে এইখানেও আছে,বেশ অবাক করা বিষয়।সেদিন সামির ভেবেছিলো মেয়েটা হয়তো পাগল,তাই তো সেদিন যেভাবে পেরেছে ওখান থেকে পালিয়েছে।কিন্তু আকস্মিক আবার তাদের দেখা হয়ে গেলো তারি ফুল বাগানের প্রিয় কালো গোলাপ গাছের নিচে।অদ্ভুত ব্যপার পুতুল ভুলবসত তাকেই বাগানের চোর বলে দাবি করেছিলো এবং ফুল চুরি করায় তাকে সাহায্য করতে বলেছিলো।কি আশ্চর্য ব্যপার!এভাবেই দিনকে দিন দেখা হওয়ার পর হুট করে পরিস্থিতির চাপে তাকে তাদের বাসায় আসতে হলো।আস্তে আস্তে মেয়েটার কথার ধরণ দেখে মনে হয়েছিলো নাহহ,মেয়েটা পাগল না খুব চুপচাপ আর শান্তশিষ্ট!পুতুলের গুলুমুলু গালের সাথে গুলুমুলু বোকা বোকা কথা গুল আস্তে আস্তে তার ভীষণ ভালো লাগতে থাকে।তারপর যখন পুতুলের বাবার অসুস্থতার খবর শুনে পুতুল ভেঙে পড়েছিলো তখন থেকেই অস্থির হয়ে পড়লো তাকে কীভাবে খুশিতে রাখা যায়।উম্মাদের মতো সব কিছুর পেছনে ছুটলো বের করার জন্য,সে ব্যর্থ হয় নি।তাই তো এখন নিশ্চিন্তে এ দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে পুতুলটাকে ছেড়ে।
গাড়ি চলছে এয়ারপোর্টের দিকে।দুজন আপন মনে তাদের সাথে হয়ে যাওয়া স্মৃতি গুলো স্বরণ করছে,এদিকে সামিরের সাথে সবাই এতো কথা বলছে কিন্তু কোনোটারি উত্তর ঠিক মতো দিচ্ছে না সে।সবাই ভাবলো হয়তো একটু মন খারাপ তাই!
পুতুল জানালার বাহিরে মাথা ঠেকিয়ে বসে ছিলো।সামির লুকিং গ্লাসের দিকে তাকায়,ফলস্বরূপ তাদের চোখাচোখি হয়।পুতুল দ্রুত চোখ সরিয়ে নেয়।প্রণয় পুতুলের মাথা ভেতরে এনে ধমক দিয়ে জানালা বন্ধ করে দেয়।এভাবে জানালার বাহিরে মাথা দিয়ে রাখলে রিস্ক আছে,
অবশেষে সামিরের বিদায়ের পালা শেষ।সে হয়তো ভেতরে চলেও গিয়েছে,সামিয়া আন্টি এখনো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছে।কয়দিনের জন্য এসেছিলো ছেলেটা আবার কত দিন পর দেখা হবে খোদা জানে।
পুতুল এয়ারপোর্টের দুই নাম্বার কক্ষে দাঁড়িয়ে আছে,বাকি সবাই একটু সামনে। সে শুধু একা,হঠাৎ মনে হলো কেউ তার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে,হ্যা সামনে সিজান।কিন্তু আবার তাকে কই নিয়ে যাচ্ছে?
-কি সিজান ভাইয়া কই নিয়ে যাচ্ছেন?
-সামির তোমাকে ডেকেছে পাঁচ মিনিটের জন্য প্লিজ না করো না।
-সামির ভাইয়া মানে উনি তো ওখান দিয়ে চলে গেলো ভেতরে।
সিজান আর কিছু বলে,তারা একটু ভেতরে যায়।কিন্তু পুতুল স্পষ্ট দেখেছে সামির ঠিক তাদের উল্টো দিক দিয়ে ভেতরে ঢুকেছে,তাহলে এখানে আসবে কি করে?
হাঠতে হাঠতে তারা একটা নির্জন যায়গায় গিয়ে পৌছায়।অন্য সব যায়গায় এক দুজন করে আর্মি পুলিশরা থাকলেও এখানে একটা কাঁক পক্ষিরো কোনো দেখা নাই।সিজান পুতুলকে নিয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে যায়,দু মিনিটের মধ্যেই সামিরকে দেখা যায় কিছুটা দৌড়ানোর মতো হেটে হেটে তাদের কাছেই আসছে।সিজান পুতুলকের কাধে হালকা চাপড় দিয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করে আশ্বাস দিয়ে সে ওখান থেকে চলে যায়।পুতুল মাথা নত করে চোখের দৃষ্টি নিচের মাটিতে রাখে,কিন্তু সে না দেখেও অনুভব করতে পারছে সামির তার নিকটে এসে পড়েছে,এইবার কি বলবে সে বুঝতে পারছে না চুপ মেরে থাকে।
এভাবেই কিছুক্ষণ সময় কেটে যায়।সামির হাতে থাকা ঘড়ির দিকে একবার চোখটা বুলিয়ে একটা বড় করে শ্বাস নেয়।
-কিছুতো বলো।
এক অজানা ভাবনার মাঝে ছিলো পুতুল!এখন সামিরকে কি বলবে সামির তাকে কি বলবে এগুলোই ভাবছিলো সে।হুট করে সামিরের কথায় আৎকে উঠে,মুহুর্তেই বুঝতে পারে এটা একটা সামান্য বাক্য।না চাইতেই সঙ্গে সঙ্গে পুতুল নত মাথা উঠিয়ে সামিরের দিকে তাকায়।সামির এক মায়া ভরা দৃষ্টি নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে ছিলো,ফলস্বরূপ পুতুলের চোখের সাথে সামিরের চোখ আটকে যায়।সামির তার ধূসর রঙের মনি ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে পুতুলের সারা মুখে চোখ বুলাচ্ছিলো।বিষয় টা বুঝতে পারার সাথে সাথে চারো দিকদিয়ে সব লজ্জা ঘিরে ধরে পুতুলের!চোখ নামিয়ে নিয়ে আমতা আমতা করে বলতে নেয়।
-ধন্যবাদ ভাইয়া আমাদের খারাপ সময়ে পাশে থাকার জন্য।আপনি না থাক,,,
আর কিছু বলতে পারলোনা পুতুল,থমকে গেলো মুহুর্তেই শরীর যেনো বরফের মতো জমে গেলো।চোখগুলো রসগোল্লা হয়ে গেলো।
কথা বলার মাঝেই সামির তাকে হুট করে জড়িয়ে ধরে।তাও যেমন তেমন ভাবে না,একটা অজগর যেভাবে তার শিকারকে চেপে ধরে ঠিক সেই ভাবে।মনে হচ্ছে একটু আলগা হলেই যেনো ছুটে পালাবে।
-Please putul hug me!
পুতুল ওভাবেই একটা জড় বস্তুর মতো দাঁড়িয়ে থাকে,নিজের অজান্তেই দুই হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরে সামিরের পিঠ।এইবার পুতুল টের পাচ্ছে কি হারাচ্ছে সে,
সামির পুতুলকে একটু আলগা করে কপালে একটা গাড় চুমু একে আর কোনো ধরণের বাক্য বিনিময় না করে।আগের মতো দৌড়ে চলে গেলো যেখান দিয়ে এসেছিলো।একটি বারো আর পেছন মুখি তাকালো না।
চলবে..!