পূর্ণতা পর্ব-২২

0
474

পূর্ণতা❤️
তানজিলা তাবাচ্ছুম❤️

২২.

চাঁদ দেখে হকচকিয়ে গেল। তার অবস্থা এখন কেমন। সে দ্রুত আঁচল টেনে মাথায় দেয়। আর সাথে সাথে নাহিদ বলে উঠে,

‘ ইয়াক! আমি এই মেয়ের জন্য নিজের এত সময় নষ্ট করলাম? সিরিয়াসলি?’

চাঁদ মাথা নিচু করে জোরে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে। এমন কিছু হবে সে ভাবতে পারে নি। নাহিদ দু’পা এগিয়ে বললো,

‘ আমি তো ভেবেছিলাম আলোকের বউ অনেক অনেক অনেক সুন্দরী হবে! যেভাবে আলোক কথা বলছিল আর দেখাচ্ছিল না। বাট হেয়ার ইট ইজ কমপ্লিটলি ডিফারেন্ট। ‘

চাঁদের হাত পা মৃদু আকারে কাঁপতে শুরু করছে। সে তাড়াতাড়ি করে নাহিদের পাশ কেটে যাবে নাহিদ তার হাত ধরে তারপর বিশ্রী ভাবে হেসে বলে,

‘ আরে ভাবি জি! আপনার জন্য আমার সময় নষ্ট হলো! আর আপনি এভাবেই চলে যাচ্ছেন?’

চাঁদ হাত ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে। কিন্তু একটা ছেলে মানুষের শক্তি মেয়ে মানুষের তুলনায় অনেক। তাই তার থেকে ছাড়াতে পারছে না। নাহিদ ব্যাঙ্গ ভাবে বললো,

‘ চাঁদ কে যখন পেয়েছি ! না ছুঁয়ে যাই কিভাবে? চাঁদ কে ছোঁয়ার সৌভাগ্য কি আর সবার থাকে?’

বলে মাথা থেকে আঁচল টা সরিয়ে জড়িয়ে ধরলো। এমন কিছু হবে চাঁদ কল্পনাও করতে পারে নি। চাঁদের কাঁদতে শুরু করে আর ছাড়া পাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। নাহিদ এক হাত দিয়ে চেপে কোমর ধরেছে আর আরেকটা হাত দিয়ে চাঁদের চুল গুলো সরিয়ে চাঁদের গালে হাত দিয়ে বললো,

‘ awww…সফট ‘

চাঁদ তার হাত সরাতে চেষ্টা করেও পারে না। নাহিদ তার হাত দিয়ে চাঁদের কোমরে খামচে ধরে। ব্যাথায় কুকড়ে উঠে চাঁদ। আস্তে আস্তে হাঁপাতে শুরু করে। তার যেনো আবার শ্বাসকষ্ট হতে শুরু করে। কিন্তু নাহিদের সে দিকে কোনো খেয়াল নেই। সে আবারো কেমন বাকা হেসে বলে,

‘ না এভাবে ছুয়ে ভালো লাগছে না। আরো একটু কাছ থেকে ছুঁতে ইচ্ছে করছে। ‘

বলে চাঁদের মুখের সামনে ঝুঁকে পরে কিস করার জন্য। চাঁদ শেষমেশ নিজের পা দিয়ে নাহিদের পায়ে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে লাঠি মারে। আর সাথে সাথে নাহিদ কিছু দূরে সরে যায়। নাহিদ কিছুটা সরতেই চাঁদ তড়িৎ বেগে তার পাশ কেটে আশার চেষ্টা করলে নাহিদ পিছন থেকে আঁচল টেনে ধরে। চাঁদ যেমন তেমন করে ছড়িয়ে নিয়ে দরজা খুলে বের হয়। তাড়াহুড়া করে দৌড়াতেই সামনে তার কারো সাথে ধাক্কা লাগে। ছিটকে সরে যায় চাঁদ। সামনের ব্যক্তিটিকে দেখতেই তড়িৎ বেগে তাকে জড়িয়ে জাপটে ধরে। চাঁদ জোরে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে সাথে হাপাচ্ছে। আচমকা চাঁদ এভাবে জড়িয়ে ধরায় আলোক মুচকি হাসে। সে তো কিছুই জানে না । হটাৎ আলোকের মনে হলো চাঁদের আচরণ তার অস্বাভাবিক লাগছে। আলোক চাঁদের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

‘ চাঁদ কি হয়___

নাহিদ কে তাদের রুম থেকে বের হতে দেখেই আলোক চুপসে গেল। নাহিদ হতভম্ব হয়ে বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে।চোখ মুখে ভয়ের ছাপ তার। আলোক চাঁদ কে ছাড়িয়ে তার দু গালে হাত দিয়ে চোখের পানি মুছলো। আলোক দেখলো চাঁদ হাপাচ্ছে। তার মানে চাঁদের আবার শ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছে। আলোক নাহিদের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাড়াতাড়ি ঘরে গিয়ে চাঁদের ইলেহেনার নিয়ে আসে।তারপর চাঁদের মুখে দেয়। তারপর বেশ কিছুক্ষণ পর কিছুটা হাপানো থামে। আলোক চাঁদকে লক্ষ্য করলো মাথার চুল গুলো এলেমেলো, শাড়িটাও কেমন অগোছালো,আর চাঁদ তো সবসময় মাথায় কাপড় দিয়ে রাখে কিন্তু এখন নেই। মুখ ঘেমে গেছে সাথে মুখে ভয়ভীতির ছাপ। আর চাঁদ তো কখনো এভাবে দৌড়োয় না। আর হাঁপানি ও তো এমনি এমনি উঠে না। চাঁদ দীর্ঘ শ্বাস নিচ্ছে। এখন কিছুটা ভালো আছে সে। আলোক চাঁদের শাড়ি ঠিক করে দিয়ে আঁচল টা মাথায় আর পুরো গায়ে ভালো করে দিলো। তারপর তাকে সাইডে রেখে নাহিদের সামনে আসতেই নাহিদ ইতস্তত হয়ে বললো,

‘ ভা_ ভা_ ভাই_আমার কথ_কথা শুন।’

আলোক হাসলো। তারপর তাচ্ছিল্য করে বললো,

‘ তোর স্বভাব এখনো চেঞ্জ করলি না? আগের মতন এখনো চরিত্র হীন ই আছিস?’

নাহিদ ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করে বলতে লাগে,

‘ ন_না !না ভাই _শু__

আলোক নিজের সর্ব শক্তিতে একটা চড় মারলো। নাহিদ কিছুটা হেলে গেলো। আলোক কর্কশ কন্ঠে বলে উঠলো,

‘ তোকে আজ সকালেই মানা করেছিলাম আমার চাঁদের থেকে দূরে থাকবি! তবুও তোর সাহস কিভাবে হলো রে ওকে টাচ করার? কোথা থেকে পেলি এত সাহস? ‘

নাহিদ উঠে তবুও হেসে বলছে ,

‘ আর_আরে ভাই_ আম_ আমি তো ভাবির সাথে পরিচিত হতে এসেছিলাম জাস্ট। হেহে __

সাথে সাথে আরেকটা চড় মারলো আলোক। তারপর ওর মাথা কলার ধরে জোরে চেঁচিয়ে বললো,

‘ বের হ বাড়ি থেকে এখনি।’

বলে টানতে টানতে নিচে নিয়ে আসলো। এত চেঁচামেচি শুনে আশা আর তাসলিমা আসলো বাহির থেকে। নাহিদ কে এভাবে টানা দেখে তাসলিমা বলল,

‘ ওকে এভাবে টানছিস কেনো আলোক?’

আলোক কোনো কথাই শুনছে না। বাড়ির বাহিরে টানতে টানতে নিয়ে আসলো। সাথে পিছু পিছু আশা তাসলিমা ও আসলো। আলোক নাহিদ কে ঝটকা মারলো। নাহিদ মাটির উপরে পড়লো। তারপর আলোক মারতে যাবে তাসলিমা গিয়ে আশা কে বললো,

‘ ভাবি দেহেন কি করতেছে। ওরে থামান। আমার ছেলে ডারে শেষ কইরা ফেলবে। ‘

বলে আশার হাত ধীরে ঝাঁকাতে শুরু করলো। আশা জানে নিশ্চয়ই নাহিদ কিছু করেছে যার কারণে আলোক এইরকম করছে। কিন্তু তবুও তাসলিমা কথা রাখতে বলে উঠলো,

‘ আলোক? কি হয়েছে?’

আলোক শুনলো না। এই মুহূর্তে আলোক যে কি পরিমান রেগে আছে তা ধারণার বাহিরে। আশা এগিয়ে আলোকের হাত টেনে তাকে ধমক দিয়ে বললো,

‘ আলোক কি হয়েছে? ওর সাথে এমন করছিস কেনো?’

সাথে সাথে আলোক রাগান্বিত কন্ঠে চেঁচিয়ে বললো,

‘ মা ও চাঁদের গায়ে ব্যাড টাচ করেছে! ওর সাথে খারাপ কিছু করার চেষ্টা করছে।’

ব্যাস আশা সরে গেলো। সে আর কিছু বললো না। আশা জানত এমন কিছুই হবে। কারণ আলোক এমন মানুষ নয়। আশেপাশের মানুষের কেউ টিনের ফুটা দিয়ে দেখছে। কেউবা বাড়ির দরজা খুলে দেখছে। আলোক অগ্নিফুর্তি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আশা কে বললো,

‘ মা এই ছেলে কে এখান থেকে যেতে বলো! নাহলে আমি কি করবো আমি জানি না।’

আশা তীক্ষ্ম চোখে নাহিদের দিকে তাকিয়ে তাকে যেতে বললো। নাহিদ উঠলো তারপর একটা ভাব নিয়ে নিজের কলার ঠিক করলো।সবার সামনে এমন অপমানিত হলো সে! আলোকের দিকে কড়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে সে চলে যেতে লাগলো। আশেপাশের মানুষ কানাকানি শুরু করে দিয়েছে।তাসলিমা রাগে ক্ষোভে কেঁদে কেঁদে ভিতরে গেলো। বলার মতন কিছুই তার কাছে নেই। আশেপাশের মানুষ গুলো তাকিয়ে আছে!

__________________

অপরাধীর মতন চাঁদের সামনে হাঁটু মুড়ে বসলো আলোক। চাঁদের ভয়ার্ত হয়ে কাদঁছে। আলোক চাঁদের হাত ধরে নরম কন্ঠে বলে উঠে,

‘ আমাকে মাফ করো। আমি আমার দায়িত্ব ঠিক মত পালন করতে পারি নি। তোমাকে সেফটি দিতে পারিনি নিজের ফ্যামিলি মেম্বার থেকে! সরি!’

চাঁদ ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকালো। চোখ মুখে কষ্টের ছাপ। আলোক একটা হাফ ছেড়ে বললো,

‘ তুমি রেস্ট করো। ঘুমাও।’

বলে দাড়িয়ে চাঁদ কে শুয়ে দিল।দেখলো চাঁদ কোমরের এক সাইড চেপে ধরে আছে। শাড়ীটা একটু সরতেই দেখতে পেলো খামচানোর দাগ। আলোক দেখা মাত্রই চোখ জোড়া বন্ধ করলো। এই মুহূর্তে তার যে কেমন অনুভূতি হচ্ছে তা বলতে পারছে না। আলোক খামচানো জায়গায় একটু টাচ করতেই চাঁদ ব্যাথায় কুকড়ে উঠে। নাহিদ অনেক গভীর ভাবেই খামচে ধরেছিল। আলোক মলম এনে লাগিয়ে দিলো।তারপর চাঁদ ঘুমানোর পর আলোক বেরিয়ে এলো কারণ তার ফোন কল এসেছে।বাহিরে এসে আলোক বললো,

‘ হ্যাঁ নিরব বল।’

‘ আলোক রিপোর্ট কাল সন্ধ্যার দিকে দিবে ইরা বললো।আমি তোকে কল করে জানবো। পরে তুই এসে নিয়ে যাস।’

‘ আচ্ছা।’

আলোকের কণ্ঠের স্বর নীরবের কাছে কেমন লাগলো।সে দ্রুত আলোক কে প্রশ্ন ছুড়লো,

‘ আলোক তুই ঠিক আছিস? কি হয়েছে? তুই এভাবে কথা বলছিস কেনো?’

আলোক বললো,

‘ আরে না তেমন কিছু না।আচ্ছা রাখি পরে কথা হবে।’

বলে রেখে দিল আলোক।নীরবের কেমন লাগলো এভাবে কেটে দেওয়ার জন্য।

_____________

এখন প্রায় রাত বারোটা বাজতে চলেছে। আলোকের চোখে ঘুম নেই। সে বিছানায় খালি নড়াচড়া করছে। তার ভিতর কেমন দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। আলোক আর পারলো না উঠলো। পাশে তাকাতেই দেখে চাঁদ ঘুমোচ্ছে। আলোক একটু উঠে একটু কাছে গিয়ে চাঁদের কপালে ভালোবাসার পরশ ছুঁইয়ে দিল। তারপর দরজা খুলে বের হয়ে তার মায়ের ঘরে ঢুকলো। ঢুকতেই দেখে তার মা হাতে তাসবিহ গুনছে। দরজা খোলার শব্দ শুনে আশা চোখ খুলে তাকায়। আশা ইশারায় আলোক কে ডাকলো। আলোক যেতেই প্রশ্ন ছুড়লো,

‘ বাবা আসে নি মা?’

আশা মলিন মুখে হাসি টেনে বললো,

‘ তোর বাবা যে কোথায় থাকে ! কখন আসে, কখন যায় আল্লাহ্ জানে। তার ভাই আসার পর থেকে তার কোনো পাত্তাই পাওয়া যায় না।’

আলোক ভ্রু উচুঁ করলো। তারপর তার মায়ের পাশে বসলো।আশা ছেলেকে টেনে তার মাথাটা নিজের কোলে নিল তারপর হাত বুলাতে লাগলো। আলোক নিরাশয় কন্ঠে বলল,

‘ মা তোমার মনে আছে? আগে স্কুল থেকে এসে আমি তোমাকে সব বলতাম?’

‘ হ্যাঁ বাবা সব মনে আছে সব! তোর ছোট বেলার সব কিচ্ছুই আমার মনে আছে।’

আলোক অনেকটা হতাশা নিয়ে বললো,

‘ নাহিদ এখনো বদলায় নি মা। ও আগের মতোই আছে। স্কুল এ থাকতে মেয়েদের দিকে খারাপ নজর দিত। তাদের খারাপ খারাপ কথাবার্তা বলত। সুযোগ পেলেই তাদের গায়ে হাত দিত। ওর এই স্বভাব এখনো আছে মা।’

আশা সহজলভ্য ভাবে বললো,

‘ আলোক প্রবাদে একটা কথা আছে, “কুকুরের লেজ কখনো সোজা হয়না। বাঁকা বাঁকাই থাকে।” ঠিক তেমন তাই।’

আলোক নিরন্তরতা হয়ে বললো,

‘ মা ও অনেক খারাপ। ও চাঁদের কোমরে খামচে দিয়েছে। অনেক কষ্ট দিয়েছে।’

‘ থাক বাবা তুই এইসব ভাবিস না। অনাথ মেয়েটাকে ভালো রাখার চেষ্টা করিস। ওকে কষ্ট দিস না। শুধু একটা কথা মনে রাখিস, ” আল্লাহ অনাথ ,এতিম দের প্রতি জুলুম সহ্য করেন না “।

আলোক ধীর কন্ঠে বলল,

‘ হুম__’

বেশ কিছুক্ষণ আশা ছেলের মাথায় হাত বুলাচ্ছে।এমন সময় আলোক প্রচন্ড আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বললো,

‘ মা চাঁদ কোন অনাথ আশ্রমে থাকতো?’

‘ আ*** এই আশ্রমে। রাস্তার বা দিকে তারপর ১-২ ঘণ্টার পথ হবে। আলোক ছোট মুখে বললো ‘ আচ্ছা’ তারপর আলোক উঠলো যাওয়ার জন্য।আলোক পিছন থেকে বললো,

‘ কেনো আলোক?’

আলোক তাকিয়ে হেসে বললো , ‘ না মা এমনি আরকি!’

তারপর আলোক ঘরে চলে এলো।

#চলবে….
#তানজিলা_তাবাচ্ছুম

[রি-চেক হয়নি।ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]