#পূর্ণতা❤️
#Writer_তানজিলা_তাবাচ্ছুম❤️
২৩ & ২৪
‘ আসতে পারি?’
বৃদ্ধ মহিলা টি চোখ তুলে তাকানোর চেষ্টা করলেন। কিন্তু বোধহয় খালি চোখের দৃষ্টিতে ঠিক মত দেখতে পাচ্ছেন না। তাই চশমা টা উঠিয়ে পড়লেন। তারপর আস্তে আস্তে হেঁটে গিয়ে আলোকের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন,
‘ ক্_কে তুমি বাবা?
‘আসো। ভিতরে আসো।’
আলোক হাতের তালু দ্বারা মুখ টা মুছে ভিতরে ঢুকল তারপর কোমল কন্ঠে বললো,
‘ আসসালামুয়ালাইকুম। আমার নাম আলোক। আমি আপনার সাথে একটু কথা বলতে চাই।’
বৃদ্ধ মহিলা টি বসলেন। ইশারায় আলোক কে বসতে বললেন। তারপর বৃদ্ধ মহিলাটি নিজের কাপাকাপি কন্ঠে বললেন,
‘ তোমাকে তো ঠিক চিনলাম না। কে তুমি ? কি চা_চাও?
আলোক এবার সিরিয়াল হয়ে বললো,
‘ জ্বি আসলে আমি কিছু জানতে চাই। যেটা আপনি ভালো জানবেন কারণ আপনি এই ‘___’ আশ্রমে দীর্ঘ বছর ধরে আছেন।’
মহিলাটি মৃদু কন্ঠে বললেন,
‘ কি জানতে চাও ?’
আলোক অনেক প্রত্যাশা নিয়ে বললো,
‘ চাঁদ! চাঁদ কে চিনেন?’
বৃদ্ধ মহিলাটি চশমা টা ঠিক করতে করতে মনে করতে লাগলেন তারপর অনেকক্ষণ ভেবে বলে উঠলেন,
‘ চাঁদ কোন চাঁদ?’
আলোক মহিলাটির কথা শুনে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরলো। তারপর ধীর কন্ঠে বলল,
‘ চাঁদ! গায়ের রং উজ্জল শ্যামলা। কথা বলতে পারে না। ওর বয়স এখন ২২ বছরের মতন হবে।’
কালকে রাতে আলোক তার মায়ের থেকে জেনে নেওয়ার পর বিকালের দিকে এখানে এসেছে। কারণ সে জানতে চায় চাঁদ কে? কি তার আসল পরিচয়! ওর বাবা মা কোথায়? আর ও অনাথ আশ্রমে কেনো ছিল? কেনই বা অনাথ! আর চাঁদ ওইদিন ঐরকম ব্যবহার করল কেনো? আর নাহিদের নামই বা কেনো লিখলো! এতসব প্রশ্ন জানতে চায় আলোক। তাই তার উত্তর খুঁজতে এখানে এসেছে।
‘ হ্যাঁ ওইযে বোবা মেয়েটা?’
মহিলাটির কথায় আলোক ভাবনা কেটে গেলো। তারপর মাথা নাড়াতে নাড়াতে করুন কন্ঠে বললো,
‘ হ্যাঁ ও। আসলে আমি ওর অতীত জানতে চাই। ও বোবা কেনো? ওর বাবা মা কোথায়? ও এখানে কিভাবে এসেছে?প্লিজ বলুন!’
‘ কিন্তু তুমি?’
আলোক তাড়াহুড়া করে বললো,
‘ আমি! আমি ওর হাসব্যান্ড।’
মহিলাটি হাসলেন।তারপর মিষ্টি কন্ঠে বললেন,
‘ যাক মেয়েটার তাহলে বিয়ে হয়েছে। ভারী মিষ্টি মেয়ে ছিল একটা।’
মহিলাটির কথায় আলোক একটু হাসলো।তারপর মহিলাটি বলতে শুরু করলেন,
‘ আমি যতটুকু জানি মেয়েটা যখন সাড়ে তিন বছর তখন এখানে নিয়ে এসেছিলেন তার এক প্রতিবেশী মহিলা। মেয়েটা যখন এসেছিল তখনও কোনো কথা বলত না! চুপচাপ থাকতো। কিন্তু আমার মেয়েটা অদ্ভুত লাগে।তাই আমি জানার প্রচেষ্টা চালাই। তারপর জানতে পারি, চাঁদের বাবা ছিলেন একটা গ্রামের প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক আর মা ছিলেন গৃহিণী। তার বাবার নাম “রেজাউল” আর মায়ের নাম “চাঁদনী”। চাঁদ রা গ্রামেই থাকতো। চাঁদ রা দুই ভাই বোন।চাঁদের থেকে পাঁচ বছরের বড়ো তার ভাই ছিল। যার নাম ছিল “নাহিদ্রিয়ান”। চাঁদ ছিল তার বাবা-মার কলিজার টুকরো মেয়ে। আর ভাইয়ের আদরের বোন। তাদের ফ্যামিলি ছিল একটা সুখী পরিবার। আর চাঁদ কথা বলতেও পারত। অনেক কথা বলতো সে। কিন্তু কোনো এক কারণে তার কথা বলা চিরজীবনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। চাঁদ রা যে গ্রামে থাকত সে গ্রামের চেয়ারম্যানের ছিল অবৈধ ব্যবসা। ছোট ছোট বাচ্চাদের অপহরণ করে তাদের পাচার করতো। একদিন চাঁদের বাবা রেজাউল তাদের দু’ভাই বোনকে নিয়ে বাহিরে ঘুরতে গেল । ছেলের ক্ষুদা পেয়েছিল তাই তুমি ছেলে মেয়েকে রেখে তাদের জন্য কিছু খাবার আনতে গেলেন। চাঁদ আর নাহিদ্রিয়ান একসাথে খেলছে। নাহিদ্রিয়ান দৌড়চ্ছে আর চাঁদ তার পিছে দৌড়াচ্ছে। হঠাৎ চাঁদ হচট খেয়ে পড়ে যায় আর কাঁদতে শুরু করে তখন তার ভাইকে ডাকে,
‘ নাদিয়ান ভাইয়া। আমার লাগছে।ভাইয়া’
নাহিদ্রিয়ান পিছনে ঘুরে চাঁদের কাছে যায় তারপর তার ব্যাথা লাগার জায়গায় হাত বুলিয়ে বলে,
‘ কাদিস না মুন ঠিক হয়ে যাবে।’
নাহিদ্রিয়ান চাঁদ কে ভালোবেসে ‘মুন’ বলে ডাকে।চাঁদের কান্না কিছুটা কমে। কারন ছোট বাচ্চা রা এমন ই হয়। তাদের ব্যাথা লাগার জায়গায় যদি কেউ হাত বুলিয়ে দেয় তাহলে তারা ভাবে তাদের ব্যাথা কমে।নাহিদ্রিয়ান চাঁদকে উঠিয়ে বলল,
‘ মুন তুই আমাকে নাদিয়ান বলিস কেনো? আমার নাম নাহিদ্রিয়ান। নাহিদ্রিয়ান বল!’
চাঁদের ‘হা’ করে তাকিয়ে আছে। নাহিদ্রিয়ান আবার বলল,
‘ না-হি-দ্রি-য়া-ন! [ টেনে টেনে]
চাঁদ মনোযোগ সহকারে শুনে বলে উঠলো,
‘ নাদিয়ান।’
নাহিদ্রিয়ান বাক্যলংকারে বললো,
‘ না হি দ্রি য়া ন ।’
কিন্তু তবুও চাঁদ বলতে পড়লো না। তারপরে অনেক বার বলল কিন্তু চাঁদ সঠিক উচ্চারণ করতে পারলো না। শেষমেশ সে বলল,
‘ তুই এটা উচ্চারণ করতে পারছিস না। তাই তুই সংক্ষেপে আমাকে ‘নাহিদ’ বলিস। আচ্ছা?’
চাঁদ ছোট মুখে উওর দিলো ‘ ঠিক আছে না-হি-দ ভাইয়া’। তখন থেকে চাঁদের মনে এই ‘নাহিদ’ নাম টা গেঁথে গেছে। চাঁদ বার বার মুখস্ত করছে আর বিড়বিড় করে ‘নাহিদ নাহিদ ‘ বলছে। তারপর কিছুক্ষণ পর দুই ভাইবোন আবারো দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দেয়। কয়েকটা জনের চোখ লেগে আছে মিষ্টি চাঁদের উপর। তারা অপেক্ষায় আছে সুযোগ পেলেই তাকে উঠিয়ে নেবে। নাহিদ চাঁদের থেকে অনেকটা দূরে চলে যেতেই তারা এসে পড়ে। চাঁদকে নিজেদের কাছে ডাকে । ছোট চাঁদ তো আর এইসব ফাঁদ বুঝে নি তাই সে তাদের ডাকে সাড়া দিলো। তারপর লোক গুলো চাঁদের হাতে একটা চকলেট ধরিয়ে দিয়ে তাকে খেতে বলে। ছোট মেয়ে সে তো এইসব বুঝে না চকলেট খেতে যাবে তখনি তার বাবা ডেকে উঠে। বাবার ডাক শুনে চাঁদ হাসি মুখে ওনার কাছে দৌঁড়ে যায় তারপর গিয়ে কোলে উঠে। আর রেজাউলও তার আদরের মেয়েকে কোলে নেন। তারপর চাঁদ তার বাবা কে বলে,
‘ বাবা ঐ আঙ্কেল রা দেখো আমাকে চকলেট দিয়েছে।’
রেজাউল সামনে তাকাতেই দেখে ওই লোক গুলো নেই। তার কেমন সন্দেহ হয়। তারপর তিনি নাহিদ্রিয়ান আর চাঁদ কে নিয়ে বাসায় চলে আসেন। রাতে উনি এইসব নিয়ে ভাবতে লাগেন। চাঁদের হাত থেকে চকলেট টা নিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। বাড়ির সামনে কয়েকটা কুকুর ঘুরঘুর করছিল। তখন তিনি একটা কুকুর কে চাঁদ কে দেওয়া সেই চকলেটটা দেন। তারপর কিছুক্ষণ পরেই সেই কুকুর টা লুটিয়ে পরে মাটিতে। উনি বুঝতে পারেন চকলেট এ কিছু ছিল। আর বেশ কয়েকমাস আগে গ্রাম থেকে অনেক বাচ্চা গায়েব হয়ে গেছে। কেউ বলে বাচ্চা খেলতে গিয়ে তাদের শিয়ালে খেয়ে ফেলেছে আর নানান রকমের কথা। কিন্তু রেজাউল বুঝতে পারে আর পিছনে হয়তো অন্য কিছু আছে। আর সেই থেকে উনি এগুলো উপর খোঁজে লেগে পড়েন আর শেষে জানতে পারেন এই গ্রামের ই একজন ব্যাক্তি।তারপর উনি গ্রামের চেয়ারম্যানদের এইসব জানায় আর তখন আরো জানতে পারেন এইসবের পিছনে রয়েছে এই চেয়ারম্যান। চেয়ারম্যানের লোক তাকে অনেক বুঝাই কিন্তু রেজাউল বলেন উনি এইসব সবাইকে বলে দিবেন। সবার সামনে আনবেন এইসব। আর আজ থ্রেট দিয়ে উনি চলে যান। বাড়িতে আসে তিনি চাঁদের মা চাঁদনী কে সব বলেন। চাঁদনী শুনে অনেক চিন্তিত হয়ে পড়েন। সেইদিন চাঁদের বাবা অনেক তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লেন। চাঁদের মা চাঁদকে গল্প শুনলেন তারপর তাদের দু’ভাই বোন কে ঘুম পাড়িয়ে দিলেন।
_____________
২৪.
মাঝ রাত। চারিদিকে নিস্তব্ধ। কোথায় কোনো শব্দ নেই। হটাৎ চাঁদ কে কেউ ঝাঁকিয়ে উঠে। চাঁদ ধড়পরে উঠে বসে তারপর কিছু চেঁচানো শুনতে পায় তার বাবা মার রুম থেকে। চাঁদ নিজের মায়ের দিকে তাকাতেই দেখে ওনার মুখে ভয়ের ছাপ। মুখে পানিতে ভেজা। চাঁদ ভয়ার্ত কন্ঠে তার মাকে বলে,
‘ আম্মু কি হয়েছে? বাবার ঘর থেকে কিসের শব্দ হচ্ছে?’
চাঁদের মা জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বললেন,
‘ মামনি ঘরে না চোর ঢুকেছে।’
চাঁদ শুনে ভয়ে কেঁপে উঠে।
‘ মামনি ভয় পেও না। মা আছে তো সাথে।আসো আমার সাথে আসো।’
তারপর চাঁদ কে নিজের সাথে নিয়ে। বাড়ির আরেকটা দরজা দিয়ে বের হয়ে বলেন,
‘ মামনি এখানে এই গাছের পিছনে থাকো। মা ভাইয়া কে নিয়ে আসছে।ঠিক আছে?’
চাঁদ ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে সম্মতি প্রদান করে। চাঁদের মা ভিতরে গেলো। চাঁদ তাকিয়ে আছে ভিতরে। এখান থেকে দেখা যাচ্ছে। চাঁদ দেখলো তার মা অনেকক্ষণ ধরে ভিতরে গেছে কিন্তু আসছে না তাই সে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে দেখলো তার মা মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে আছে। আর তার সামনে তার ভাইয়ের গলায় ছুরি ধরে আছে একটা লোক। তার মুখ দেখা যাচ্ছে না কারণ তাদের সবার মুখে মাস্ক পড়া। চাঁদনী মেঝে তে থেকে আস্তে আসতে বলছে,
‘ না্- নাহি__নাহিদ্রি__নাহিদ্রিয়ান!!
‘ ওক_ওকে ছেড়ে দি_দিন।’
চাঁদ সামনে তার মা ভাইয়ের কাছে এগোতে যাবে তখনি তার ভাইয়ের গলায় ছুরি ধরে থাকা লোকটা গলা কেটে দেয়। আর নাহিদ্রিয়ান লুটিয়ে পড়ে মেঝে তে।সাথে সাথে চাঁদনী জোরে চেঁচিয়ে উঠে, ‘ নাহিদদ__
নিজের সন্তান কে নিজের চোখের সামনে মরতে দেখা কোনো মায়েই পারবেন না। চাঁদনী চেঁচানোর সাথে সাথে আরেকজন লোক তার মাথায় লোহা দিতে জোরে মারলো। আর মেঝেটা রক্তে রঞ্জিত হয়ে গেলো। আর এদিকে ছোট চাঁদ নিজের মা আর ভাইয়ের নৃশংস মৃত্যু দেখলো। তারপর লোক গুলো একে অপরকে বলছে, ‘ এর বাপ ভিতরে মরছে ‘ বলে লোক গুলো হাসলেন। তারপর একজন আরেকজনকে বলল, ‘আগুন লাগা।আগুন লাগা।’
কিছুক্ষন পর হাতে আগুন নিয়ে একটা লোক আসলো আর বললো,’ আগুন।’ আরেকজন তাকে বললো, ‘ আগুন লাগা।আগুন লাগা। চাঁদের কানে কানে খালি তাদের বলা শব্দ গুলো বাজছে।চাঁদ ভয়ে কয়েক পা পিছিয়ে দৌড়ে যেতে লাগলো তারপর সে মাটিতে সেন্সলেস হয়ে লুটিয়ে পড়লো। অপরদিকে তার বাবা, মা, ভাই এর মৃত্যুর রহস্য যাতে কেউ জানতে না পারে তাই তাদের পুরো বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিল। তারপর সেই লোক গুলো চলে গেলো। ভাগ্যবশত শুধু চাঁদ বেচেঁ গেলো।
সকালে চাঁদ উঠতেই নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করলো। সে উঠতেই তার প্রতিবেশী এক মহিলা আরফিন নামে এক মহিলা বলে উঠলেন,
‘ মামনি ‘
বলে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলেন। পরে সবাইকে যেভাবে ছড়ানো হয়েছে সেভাবেই সবাই জানলো দুর্ঘটনা বসত তাদের বাড়িতে আগুন লেগে যায় আর সেই আগুনেই তাদের পুরো পরিবার মারা যায়। এভাবে কেটে যায় এক সপ্তাহ। চাঁদ যার কাছে আছে উনি লক্ষ্য করলেন চাঁদ কোনো কথা বলেন না। একদম চুপসে গেছে। আরফিন ভাবলেন হয়তো এত বড় ঘটনা ঘটেছে তাই চাঁদ সেটা মেনে নিতে পারে নি। আর যেহেতু তার বয়স টাও অনেক কম তাই অনেক শকড হয়েছে। কিন্তু উনি তো জানেন না যে চাঁদ নিজের প্রিয় জন নিজের মা, ভাই এর নৃশংস মৃত্যু দেখেছে। চাঁদের তার বাবার সাথে তার লাস্ট দেখাও হয়নি। এভাবেই হয়ে গেলো চাঁদ অনাথ। প্রায় এক মাসের মতন হয়ে যায় চাঁদ কথা বলে না। তখন আরফিনের কেমন লাগে। তাই সে চাঁদকে ডক্টর দেখান। আর তখনকার যুগে ডক্টর অনেক কম ই ছিল আর চিকিৎসার খরচও থাকতো অনেক। তবুও তিনি চাঁদ কে ডক্টর দেখান। চাঁদ কে ডক্টর দেখানোর পর ডক্টর বলেন, চাঁদ অনেক ছোট। আর হয়তো সে অনেক ভয়ংকর কিছু দেখেছে যেটা এই বয়সে তার ব্রেন সেটাকে নিতে পারছে না। চাঁদের মনে অনেক ভয় আর সে অনেক শকড হয়ে আছে। যার ফলে সে কথা বলছে না। কিন্তু ট্রিটমেন্ট করালে সে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু ট্রিট মেন্ট এর জন্য লাগবে টাকা। আর আরফিন অন্যের সন্তানের জন্য টাকা দিবেন কেনো? এমনিতেই তার সংসার ই ঠিক মতন চলে না সেখানে কিভাবে দিবেন তিনি? এরপর কেটে যায় এক সপ্তাহ। তারপর সবার পরামর্শে তিনি ডিসিশন নেন চাঁদ কে অনাথ আশ্রমে রাখবেন। কারণ এভাবে নিজেদের কাছে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। আর কোনো মানুষ কেনই বা অন্যের সন্তানকে নিজেদের কাছে রাখবেন? তাই উনি রাখলেন না চাঁদ কে দিয়ে আসলেন অনাথ আশ্রমে। আশ্রমে যখন দেয় তখন আশ্রমের অনেকেই আরফিনকে বলেছিল কেনো চাঁদ কথা বলে না।উত্তরে তিনি বলেছেন ,চাঁদ ছোট থেকেই বোবা।’
____________
চোখের কোণ থেকে গড়িয়ে পড়ল অশ্রু। আলোক মুছে নিলো। সাথে বৃদ্ধ মহিলাটি ও কেঁদে ফেলেছেন ।তারপর আবার বলতে লাগলেন,
‘ তখন যদি সেই মহিলাটি আমাদের বলতেন তাহলে হয়তো আমরা ওর ট্রিটমেন্ট করাতাম। কিন্তু যখন আমরা জানতে পারি তখন দেরি হয়ে গেছিলো। আমি বুঝতে পড়ার পরে এইসব সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে সব জানতে পারি। চাঁদ কে ডক্টর ও দেখাই। কিন্তু ডক্টর বলেছেন অনেক দেরি হওয়ার কারণে চাঁদ তার বাক শক্তি চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলেছেন। তাই আর কিছু করা সম্ভব নয়।’
আলোক মাথা নিচু করে দু হাত দিতে নিজের মুখ চেপে ধরলো। সে কখনোই ভাবে নি চাঁদের অতীত টা এতটাও ভয়ানক হবে। এতটা কম বয়সে চাঁদ কতো কিছু সাফার করছে। ভেবেই তার কষ্টে বুকে মোচড় দিচ্ছে। আলোক উঠলো তারপর বললো,
‘ ধন্যবাদ বলার জন্য। আমি চলি।’
বৃদ্ধ মহিলাটি পিছন থেকে ডেকে উঠে,
‘ বাবা শুনো।’
আলোক তাকিয়ে বললো,
‘ জী বলুন।’
মহিলাটি সামনে এসে বললেন,
‘ তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি অনেক ভালো , সৎ ছেলে। শুধু এতটুকু বলবো মেয়েটা দেখো। অনেক কষ্ট পেয়েছে মেয়েটা।’
আলোক মুখে হাসি টেনে বললো,
‘ জি ইন শা আল্লাহ্। নিজের সাধ্যের মধ্যে যতটুকু আছে আমি আমার বেস্ট ট্রাই করবো ওকে হ্যাপি রাখার ইন শা আল্লাহ্।’
বৃদ্ধ মহিলাটি হেসে বললেন,
‘ আল্লাহ তোমাদের উপর রহম করুক।’
আলোক হেসে বিদায় নিয়ে আসলো। আলোকের মন সত্যি অনেক খারাপ। সে ভাবে নি তার চাঁদপাখির ছোট বেলা এতটা কষ্টের হবে। আলোক এবার বুঝতে পারছে সেদিন রাতে চাঁদের জ্বর কেনো আসছিল? কেনো চাঁদ ঐরকম ব্যবহার করেছিল। কারণ আলোক বলেছিল ‘আগুন’ এই শব্দটা অনেকবার বলেছিল যেটা চাঁদের মনে এক ভয়ঙ্কর শব্দ হয়ে আছে। তারপর যখন তারা তাদের মেয়ের নাম ‘চাঁদনী’ রাখার জন্য বলেছিল তখন চাঁদের মন খারাপ হয়ে গেছিল।কারন তার মায়ের নাম ‘চাঁদনী’ ছিল। তারপর খাতায় ‘নাহিদ্রিয়ান ‘ লেখার কারণ টাও আলোক এবার উপলব্ধি করতে পারছে।
___________________
অনেকক্ষণ যাবত ফোনটা বেজে উঠছে। চাঁদ ধীর পায়ে এগিয়ে দেখলো আলোকের ফোন। আলোক ভুলবশত ফোন টা রেখেই বাহিরে গেছে। ফোনটা চাঁদ উঠল, দেখলো স্ক্রিনে নিরব নামটি লেখা। চাঁদ ফোন চালাতে পারে না কিন্তু আলোক কে দেখেছে চালাতে। তাই সেভাবেই কল টা রিসিভ করলো। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে যা বললো টা শোনার জন্য চাঁদ মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। তার হাত থেকে মৃদু আওয়াজে ফোনটা পরে গেলো। সে ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়লো।
#চলবে…