পূর্ণিমাতিথি পর্ব-২৩+২৪

0
557

#পূর্ণিমাতিথি
#লেখিকা-তাসনিম জাহান রিয়া
#পর্ব-২৩

আমি রুনার মুখের দিতে তাকাতে পারছি না। রুনার দিকে তাকালেই অপরাধবোধে তাড়া করে। ও যখন বলেছিল ইলানকে ফিরিয়ে আনার কথা নিজেকে তখন অক্ষম মনে হচ্ছিল। আমার তো সাধ্য নেই ইলানকে ফিরিয়ে আনার। আমি ওর সামনে দাঁড়াতে পারছিলাম না। অসহ্যকর এক অনুভূতি তাড়া করছিল ইচ্ছে করছিল নিজেকে শেষ করে দেই। দুজন কতো খুশি ছিল বাবা-মা হবে বলে। একটা এক্সিডেন্ট জীবন থেকে সকল সুখ, আনন্দ কেড়ে নিল। ও কতোটা খুশি ছিল। এখনি বাচ্চার জন্য শপিংয়ের প্লেন করে নিয়েছিল।

আমি ইলানের মৃত্যুটা মেনে নিতে পারছি না। সেখানে রুনা কীভাবে মেনে নিবে? এই সময় রুনার হাসিখুসি থাকা দরকার। কিন্তু ইলান চলে গিয়ে যে রুনার সারাজীবনের সাথী করে দিল দুঃখকে। ওর মুখের হাসি চিরতরে মুছে গেলো। ওদের সম্পর্কটা আমার চোখের সামনে গড়ে ওঠেছিল। দুজন দুজনকে কতোটা ভালোবাসতো। হাই স্কুল লাইফ থেকে ওদের ভালোবাসাটা। রাগারাগি হয়েছে, ঝগড়া হয়েছে। কিন্তু কেউ কাউকে কোনোদিন ছেড়ে যায়নি। ইলানের একটু কিছু হলেই রুনা পাগলের মতো বিহেইভ করতো। রুনাকে একেবারে একা করে দিয়ে ইলান চলে গেলো। ওদের দুজনের ভালোবাসা দেখে সবাই হিংসে করতো। স্কুল লাইফ, কলেজ লাইফ সব জায়গায় ওরা বেস্ট কাপল ছিল। ইলানের অনাগত সন্তান যে বাবা হারা হয়ে গেলো। পৃথিবীতে আসার আগেই এতিম হয়ে গেলো। বাবার আদর ভালোবাসা পাবে না।

______________

সকালের সূর্যের আলো চোখে পড়তেই ঘুমটা ভেঙে গেলো। হাত দিয়ে রোদ আটকানোর বৃথা চেষ্টা করলাম কিছুক্ষণ। আড়মোড় ভেঙে সোজা হয়ে বসলাম। রাতে রুদ্রের হালকা জ্বর এসেছিল। আমি উনাকে ধরে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে মেডিসিন খাইয়ে দিয়েছিলাম। রুমের লাইট অফ করে দিয়ে বেলকনির লাইট জ্বালিয়ে পড়তে বসেছিলাম। পড়তে পড়তে বেলকনিতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।

সূর্যের আলোর প্রখরতা জানান দিচ্ছে বেশ বেলা হয়ে গেছে। আমি ঝটপট চেয়ার ছেড়ে ওঠে পড়লাম। রুমে আসতেই নজর পড়ে বিছানার দিকে। বিছানার ওপরে হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে রুদ্র। আমি দ্রুত ওয়াশরুমে চলে গেলাম ফ্রেশ হওয়ার জন্য। ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিলাম। উনি এখনো ঘুমাচ্ছেন। আমি আর উনাকে ডাক দিলাম না। খাওয়ার জন্য নিচে চলে এলাম। ব্রেকফাস্ট শেষ করে চেয়ার ছেড়ে ওঠে দাঁড়াতে কারো বুকের সাথে গিয়ে মাথা ঠেকে। মুখ তুলে দেখি রুদ্র।

উনি একেবারে ফ্রেশ হয়ে ড্রেস চেইন্জ করে নিচে আসছেন। স্বাভাবিক ভাবেই আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

চলো।

চলো মানে কী? কোথায় যাব?

কোচিংয়ে যাবা না?

আমি নাহয় কোচিংয়ে যাব আপনি কোথায় যাবেন?

তুমি একা যেতে চাইছো নাকি? এটা কল্পনাও করো না। আমি তোমাকে আমি একা কিছুতেই ছাড়ব না।

আপনি সব সময় নিজের মতামত আমার ওপর চাপিয়ে দেন। আপনার সব কথা আমাকে শুনতে বাধ্য করান। কিন্তু আপনি আমার একটা কথাও শুনেন না। আজকে আপনাকে আমার কথা শুনতেই হবে। আপনি এখন কোথাও যাবেন না। আপনি অসুস্থ। এখন ব্রেকফাস্ট করে মেডিসিন নিয়ে রেস্ট নিবেন।

একদম না। তোমাকে আমিই দিয়ে আসবো। তোমাকে আমি একা এই বাসার বাইরে এক পাও রাখতে দিব না। জেদ করবা না একদম। তোমাকে আমি কিছুতেই একা ছাড়ব না। একজনকে হারিয়েছি আমি আরেকজনকে হারাতে পারবো না।

লাস্টের কথাগুলো উনি বিড়বিড় করে বলতে বলতে চলে গেলেন। উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আমি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম। উনি যে আমার কথা শুনবেন না সেটা আমার আগেই বুঝা উচিত ছিল উনাকে উনার ডিসিশন থেকে সরানো আর ঘোড়ার ডিম দেখা এক বিষয়। আমার বুঝা হয়ে গেছে উনি আমাকে একা ছাড়বেন না। অগ্যতা উনার পিছু পিছু আসলাম।

________________

কোচিংয়ের সামনে উনি গাড়ি দাঁড় করিয়ে আমার হাত চেপে ধরে বলেন,

আমি তোমার কথা শুনবো। এখান থেকে গিয়ে ব্রেকফাস্ট করে মেডিসিন নিয়ে রেস্ট নিব। তুমি প্লিজ একা একা কোথাও যেয়ো না। কোচিং শেষে তুমি একদম বাইরে বের হবা না। আমি এসে তোমাকে নিয়ে যাব। তুমি আমার কথা শুনবা না?

আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানাই যে আমি উনার কথা শুনবো। আমি গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম। আমি যতক্ষণ না কোচিংয়ে ঢুকলাম ততক্ষণ উনি দাঁড়িয়ে ছিলেন।

_____________

কোচিং শেষ উনি আমাকে নিয়ে ইলান ভাইয়াদের বাসায় এসেছেন। দুই দিন ধরে রুনা আপু কারো সাথে একটা কথাও বলেননি। টু শব্দও করেননি। সারাদিন মূর্তির মতো বসে থাকেন। আমি উনার সামনে বসে বকবক করেই যাচ্ছি কিন্তু উনি ইলান ভাইয়ার ছবির দিকে তাকিয়ে আছেন। রুদ্র ইলান ভাইয়ার আম্মুকে বলেন,

আন্টি আমি তোমাদের এখানে একা থাকতে দিব না। আজকেই তোমাদের দুজনকে আমাদের বাসায় নিয়ে যাব।

আন্টি মলিন গলায় বলে, এটা হয় না রুদ্র। আমি তোর সাথে যেতে পারবো না।

কেনো হয় না আন্টি? তুমি না বলো আমি তোমার আরেক ছেলে। তাহলে আমার সাথে যেতে তোমার কী অসুবিধা?

এই বাসা ছেড়ে আমি কোথাও যেতে পারবো না।

হঠাৎ করে বাসায় পুলিশ আসায় রুনা আপু একটু ভয় পেয়ে যান। ভয়ে আমার হাতটা জুড়ে চেপে ধরেন।

পুলিশ এসেই বলে, বাহ মিস্টার রুদ্র ভালোই তো এক্টিং করতে পারেন। মিস্টার ইলানকে হত্যা করে এখন তারই পরিবারকে দয়া দেখাতে আসছেন।

রুদ্র অবাক হয়ে বলে, আপনি এসব কী বলছেন? আমি ইলানকে মেরে ফেলছি?

আমাদের তো তাই ধারণা। মিস্টার ইলান শেষ বারের মতো আপনাকে ফোন করেছিল। আপনি যদি মিস্টার ইলানকে খুন না করতেন তাহলে এক্সিডেন্টের পর পরই এক্সিডেন্ট স্পটে পৌছালেন কী করে?

রুদ্র চুপ চাপ দাঁড়িয়ে আছে। হয়তো কিছু বলার মতো ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। ইলান ভাইয়ার মৃত্যুর জন্য উনাকে দায়ী করা হবে সেটা হয়তো উনি কল্পনাও করতে পারেননি। উনি ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়েন। এর মাঝে বাসার উপস্থিত অন্যরা কানা ঘুষা শুরু করে দিয়েছেন। অনেকে অনেক কথা বলছেন। অনেকই বলছে রুদ্রই খুন করেছে। তাই তো এতো নাটক করে কান্না-কাটি করেছে।

আপনি যদি খুন করে না থাকেন তবে এমন করছেন কেনো? আমরা তো এটাও জানতে পেরেছি আপনি এক্সিডেন্টের দুই দিন আগে মিস্টার ইলানকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন।
ইলান সাহেবের এক্সিডেন্টের পরে আপনি কর্পূরের মতো উদাও হয়ে গেলেন। দুই দিন আপনার কোনো খোঁজ খবর নেই।

রুদ্র চুপ করে থাকলেও রুনা আপু চুপ করে থাকতে পারলেন না। আজ দুই দিন পর রুনা আপু মুখ খুললেন। উনার হয়ে প্রতিবাদ করার জন্য রুনা আপু কথা বললেন। রুনা আপু চিৎকার করে বলেন,

আপনারা কী মানুষ? আপনাদের মাঝে কী কোনো মনুষ্যত্ব নেই? আপনারা নিজের চোখেই দেখেছিলেন রুদ্রের অবস্থা। সেদিন রুদ্রকে শান্ত্বনা দিচ্ছিলেন আর আজকেই রং রং বদল করে ফেলেছেন। আপনারা তো গিরগিটির থেকেও বেশি রং পাল্টান। আপনাদের মতো আত্নীয়দের কোনো দরকার নেই। বেরিয়ে যান এই বাসা থেকে।

রুনা আপু একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলেন,

আপনার চাকরিটা কী ঘুষ দিয়ে পেয়েছিলেন? ফোনের লাস্ট কল দিয়ে আপনি বিচার করছেন খুনি কে? এখন যদি প্রমাণিত হয় রুদ্র নির্দোষ তখনি কী আমাকে খুনি বলবে? কারণ রুদ্রের আগে তো আমাকেই কল করেছিল ইলান। আপনি হয়তে ভাবতেও পারছেন না রুদ্র কতোটা ইলানকে ভালোবাসে। রুদ্র ইলানকে নিজের ভাইয়ের মতো দেখতো। আপনি তাকেই ইলানের খুনি প্রমাণ করতে চাইছেন।

চলবে…………

#পূর্ণিমাতিথি
#লেখিকা-তাসনিম জাহান রিয়া
#পর্ব-২৪

আপনার চাকরিটা কী ঘুষ দিয়ে পেয়েছিলেন? ফোনের লাস্ট কল দিয়ে আপনি বিচার করছেন খুনি কে? এখন যদি প্রমাণিত হয় রুদ্র নির্দোষ তখনি কী আমাকে খুনি বলবে? কারণ রুদ্রের আগে তো আমাকেই কল করেছিল ইলান। আপনি হয়তে ভাবতেও পারছেন না রুদ্র কতোটা ইলানকে ভালোবাসে। রুদ্র ইলানকে নিজের ভাইয়ের মতো দেখতো। আপনি তাকেই ইলানের খুনি প্রমাণ করতে চাইছেন। ইলান রুদ্রকে ফোন করেছিল উনি বাবা হবেন সেই খবরটা দিতে। আর ইলানকে হুমকি দেওয়ার কথা। রুদ্র ইলানকে খুন করার হুমকি দিয়েছিল সেটা একটা ডেয়ার ছিল।

বিষ্ময়ে পুলিশ অফিসারের চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেছে। পুলিশ নিজের বিষ্ময় কাটিয়ে ওঠতে না পেরে বলে ওঠেন,

এসবের মানে কী? আপনি এসব কী বলছেন?

অনেক দিন পর আমরা কলেজের সব ফ্রেন্ডরা একসাথে হই। একসাথে হওয়ার উদ্দেশ্য ছিল একটু আনন্দ আর হই হুল্লোড় করা। একজন ট্রুথ অর ডেয়ার গেইম খেলার কথা বলে। খেলা শুরু হলে রুদ্রের ট্রান আসলে রুদ্র ডেয়ার নেয়। রুদ্রকে ডেয়ার দেওয়া হয় ইলানকে খুন করার হুমকি এমন ভাবে দেয় যেনো মনে হয় এটা কোনো অভিনয় নয় সত্যি সত্যিই ঘটনাটা ঘটছে। আমরা জানতাম রুদ্র এটা করবে না এবং পারবেও না। বাস্তবে তো অনেক দূরের কথা অভিনয়েও রুদ্র এই কাজটা করতে পারবে না। রুদ্র নাকোচ করে দেয় সেটা এটা পারবে না। আমাদের অনেক জুড়াজুড়িতে রুদ্র রাজি হয়। রুদ্র নিজের ডেয়ার সম্পূর্ণ করতে পারে না। ইলানের কলার ধরে অর্ধেক ডায়লগ বলার পরই হুট করে রুদ্র ইলানকে জড়িয়ে ধরে। পেয়ে গেছেন আপনাদের উত্তর? এখন আপনারা আসতে পারেন। তদন্তের কোনো দরকার নাই। তদন্তের নামে বাংলা সিনেমা করার কোনো দরকার নাই। চলে যান এখান থেকে।

রুনা আপু এবার চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। বাধ্য হয়ে পুলিশ চলে যায়। রুনা আপু কাঁদতে কাঁদতে পড়ে যেতে নিলে আমি ধরে ফেলি। রুনা আপু গিয়ে রুদ্রর সামনে বসে পড়ে।

রুদ্র ইলান কেনো এমন করলো? কেনো আমাকে ছেড়ে চলে গেলো? ও জানে না আমি ওকে ছাড়া কতোটা অসহায়। ওকে ছাড়া আমার নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হয়। আমি আর পারছি না ওকে ছাড়া থাকতে। ও তো জানতো আমি ওকে ছাড়া থাকতে পারি না। সত্যিই আমি আর পারছি না।

রুনা আপু রুদ্রর হাত দুটো চেপে ধরে বলে, রুদ্র তুই তো জানিস আমি ইলানকে কতোটা ভালোবাসি। দে না ভাই ইলানকে আমার কাছে ফিরিয়ে। ইলানকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিলে আমি তোর কাছে সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো। তুই তো বলিস আমি তোর বোন। বোনের কাছে….

রুনা আপু অঙ্গান হয়ে পড়ে যেতে নিলেই রুদ্র ধরে ফেলে। আমি আর রুনা আপুর আম্মু দুজন মিলে রুনা আপুকে রুমে নিয়ে যায়। রুদ্র ডক্টরকে ফোন করে।

______________

কেটে গেছে এক সপ্তাহ। রুনা আপু এখন মোটামুটি স্বাভাবিক। কিন্তু অস্বাভিক হয়ে গেছে রুদ্র। সারাদিন বাসায় থাকে না। রাত করে বাসায় ফিরে। মাঝে মাঝে ফিরেও না। বাসায় ফিরলেও রুম থেকে বের হয় না। প্রয়োজনের বাইরে কারো সাথে ঠিক করে কথাও বলে না। উনি এখন আমাকে আর কোচিংয়ে দিয়ে আসেন না। কিন্তু একাও ছাড়েন না। আমার জন্য দুটো গার্ডস নিযুক্ত করেছেন। উনারা সব সময় আমার পিছনে আটার মতো লেগে থাকে।

গার্ডস সাথে থাকা সত্ত্বেও উনি আমাকে কোচিংয়ের বাইরে কোথাও যেতে দেন না। বাসা থেকে কোচিংয়ে যাবা, কোচিং থেকে সোজা বাসায় আসবা। বিরক্ত হয়ে গেছি আমি। উনি আমাকে খাঁচায় বন্দি পাখির মতো বন্দি করে রেখেছেন। এরকম জীবন যাপনে তো আমি অভ্যস্ত নই। আমি বাধন ছাড়া পাখির মতো উড়তে চাই। খোলা আকাশে ডানা ঝাপটাতে চাই। বন্দিত্ব আমার কাম্য নয়। আমি চাই স্বাধীনতা। নিজের ইচ্ছে মতো লাইফ লিড করতে। যেটা উনার সাথে থেকে সম্ভব না। খাঁচায় বন্দি পাখি যেমন খাঁচা ভেঙ্গে পালায় তেমন আমারও এখান থেকে অনেক দূরে চলে যেতে ইচ্ছে করে। উনার দায়িত্বের বেড়াজালে বন্দি হয়ে থাকতে চাই না।

______________

নোট নিয়ে নড়াচড়া করছিলাম। নোটটা মুখস্থ করা শেষ এখন রিভিশন দেওয়ার পালা। প্রথম পেইজটা শেষ করে যখন দ্বিতীয় পেইজ পড়তে যাব ঠিক তখনি উনি আমার নোটটা কেড়ে নিলেন। বিরক্তিতে দাঁত কিড়মিড় করে উনার দিকে তাকালাম। উনার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বললাম,

সমস্যা কী আপনার? নোট নিয়ে এমন টানাটানি কেনো করছেন? দেখতে পাচ্ছেন না আমি পড়ছি? অন্ধ হয়ে গেছেন?

উনি আমাকে ধমক দিয়ে বলেন,

প্রশ্নটা আমার করা উচিত। কী সমস্যা তোমার? তোমার মনে হয় না তুমি একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করছো। কিছু বলি না দেখে দিনকে কী দিন সাহস বেড়ে যাচ্ছে।

আমি এবার বিছানা থেকে নেমে উনার সামনে দাঁড়িয়ে রেগে গিয়ে বললাম, আমি কী করেছি? আপনি আমার সাহস কোথায় দেখলেন?

উনি এবার বেশ জুড়ে ধমক দিয়ে বলেন, কী করোনি তুমি? তোমার সাহস হয় কী করে বাসায় একা ফেরার? তোমাকে আমি বলেছিলাম না তুমি একা একা কোচিংয়ের বাইরে এক পাও রাখবে না। গার্ডসরা তোমাকে কোচিংয়ের ভিতর থেকে নিয়ে আসবে। আর সেখানে তুমি একা একা বাসায় চলে আসছো। শুধু যে বাসায় এসেছো তা না রাস্তায় রাস্তায় টো টো করে ঘুরে বেড়িয়েছ। মাথায় বুদ্ধি বেশি হয়ে গেছে? গার্ডসদের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে এসে এসব করো। তোমাকে এতো সাহস কে দিলো? আন্সার মি।

উনি কথাগুলো বলতে বলতে আমার দিকে দুই পা এগিয়ে আসলাম। আমি বরাবর মতো দু কদম পিছিয়ে গেলাম না। নিজের জায়গায় অনড় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। আচমকা নিজের রাগটা কনট্রোল করতে না পেরে উনার কলার চেপে ধরলাম। চিৎকার করে বললাম,

আপনার কী আমাকে মানুষ হয় না? আমাকে কী আপনার হাতের পুতুল মনে হয়? যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে নাচাবেন। আমি পুতুল বা যন্ত্র নই আমি একজন মানুষ। একটা মানুষ এভাবে বাঁচতে পারে না। আমি বিরক্ত হয়ে গেছি নিজের জীবনের ওপর আপনার ওপর। আপনি কী বুঝতে পারছেন না আপনি আমার ব্যক্তি স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিছেন। ক্রমে ক্রমে আমার জীবনটা দুর্বিষহ করে তুলছেন। আমাকে আপনার খাঁচার বন্দি পাখি বানিয়ে দিয়েছেন। আমি আপনার বন্দিনী হয়ে থাকতে
চাই না। আমি খোলা আকাশে মুক্ত পাখির নেই উড়তে চাই। নিজের জীনটাকে উপভোগ করতে চাই। এই রুমে, এই বাসায় থাকতে থাকতে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। মনে হয় এই বাসায় আমার জন্য বিষাক্ত গ্যাস ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। নিশ্বাস নিলেই আমি মারা যাব। আমি হাপিয়ে গেছি প্লিজ আমাকে মুক্তি দিন আমি মুক্তি চাই।

উনি আমার বাহু খামছে ধরেন। উনার আঙ্গুলগুলো জেনো আমার শরীরের ভিতর ঢুকে যাচ্ছে। উনি দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

মুক্তি? মুক্তি চাই তোমার তাই না? আমার কাছ থেকে মুক্তি চাও। যেটা কোনোদিনও পাবে না। আমার কাছ থেকে তোমার কোনো মুক্তি নেই। জোড় করেই তোমাকে আমার সাথে রেখে দিব। আমার বন্দি খাঁচার পাখি হয়ে থাকবে তুমি। আজকে থেকে তোমার টোটালি বাসা থেকে বের হওয়া বন্ধ। কোচিংয়েও যাওয়া বন্ধ। কোচিংয়ের সমস্ত নোট আমি তোমাকে এনে দিব।

কথাগুলো বলেই উনি চলে গেলন। আমি স্তব্ধ হয়ে উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। উনি এসব কী বলে গেলেন? সে যাই হোক আমি তো বন্দি হয়ে থাকব না।

চলবে…….