পূর্ণিমাতিথি পর্ব-২৯+৩০

0
537

#পূর্ণিমাতিথি
#লেখিকা-তাসনিম জাহান রিয়া
#পর্ব-২৯

জীবনের এতোগুলো বছর পার করার পর মনে হলো তোমার চোখে আমার জন্য ঘৃণা দেখার চেয়ে সহানুভূতি দেখাও শান্তি। জীবনের ২৭ টা বছর কাটানোর পর এক বাচ্চা মেয়ের প্রেমে পড়ে গেলাম। তার চোখের গভীরে হারিয়ে গিয়েছিলাম। মেয়েটার মুখ আমি দেখিনি। আমি মেয়েটার চোখের প্রেমে পড়েছিলাম। মেয়েটার চোখ দুটো দেখার পর মনে হয়েছিল এই মেয়েটাকে ছাড়া আমার চলবে না। সারাজীবনের জন্য এই মেয়েকে আমার পাশে চাই। নিউজফিড স্ক্রল করতে করতে হঠাৎই মেয়েটার আইডির ওপর আমার দৃষ্টি আটকে গিয়েছিল। মেয়েটার আইডির নামটা ছিল অদ্ভুত। আমার এক ফ্রেন্ডকে বলি তার সমস্ত ইনফরমেশন আমাকে এনে দিতে। মেয়েটার সাথে আমার বিয়েও ঠিক হয়ছিল। কিন্তু আমার ……….

আমি হাত দিয়ে উনাকে থানিয়ে দিলাম। তারপর গম্ভীর গলায় বললাম,দেখুন এগুলো
আমি জানি। আপনার অন্য কিছু বলার থাকলে বলতে পারেন।

তুমি কীভাবে জানো?

ছবিটা আমার হলেও আইডিটা প্রীলিয়া আপুর ছিল। আমাকে যেদিন আপনারা দেখতে আসেন সেদিন প্রীলিয়া আপু আপনাকে দেখে ভালোবেসে ফেলে। যাকে বলে লাভ এট ফাস্ট সাইড। কিন্তু প্রীলিয়া আপু সেই কথা কাউকে বলে নাই। প্রীলিয়া আপুর চোখ আর আমার চোখ প্রায় এক রকম। আর সেটারই সুযোগ প্রীলিয়া আপু নেয়। প্রীলিয়া আপুর এক বন্ধু নিয়ে আপনার কাছে যায় আর প্রমাণ করে আসে ঐ আইডির মেয়েটাই সে। আইডিটা প্রীলিয়া আপুর হওয়ায় তার প্রমাণ করতে বেশি কষ্ট করতে হয়নি। আপনারা দুজনেই অপরাধী। প্রীলিয়া আপু আপনার সাথে প্রতারণা করেছে। আর আপনি আমার সাথে অন্যায় করেছেন। এতো অতো মানুষের সামনে আমাকে অপমান করেছেন। এ্যাংগেইজমেন্টের দিন একটা মেয়ের বিয়ে ভেঙে গেলে বা তাকে রেখে তার মামাতো বোনকে রিং পড়িয়ে দিলে এটা সেই মেয়েটার জন্য কতোটা অপমানজনক সেটা আপনি বুঝেন? সমাজের মানুষ সেই মেয়েটার সাথে কেমন আচরণ করে আপনি জানেন? আপনি তো পারতেন আগেই বিয়েটা ভেঙে দিতে। কিন্তু আপনি কী করলেন এ্যাংগেইজমেন্টের দিন সবার সামনে আমাকে অপমান করে বিয়েটা ভেঙে দিলেন। আপনার উদ্দেশ্যই হয়তো ছিল আমাকে অপমান করা।

হয়তো আমি ক্ষমার অযোগ্য। তোমার সাথে যে অন্যায়টা করেছি তার জন্য ক্ষমা চাওয়ার মুখ আমার নেই। প্রীলিয়া আমাকে এমন ভাবে সবটা বলেছিল যে আমি সবটা বিশ্বাস করতে বাধ্য হই। প্রীলিয়ার কথায় আমার মনে তোমার জন্য ঘৃণার সৃষ্টি হয়। তোমার কর্মকান্ড ভীষণ রাগ হয়। তুমি সত্যিটা বলে দিলে। এসব হতো না। প্রতি…

প্লিজ এসব কথা বন্ধ করুন। এগুলো আপনিও জানেন আমিও জানি। এসব কথা শুনতে আর ভালো লাগে না। আমি অতীত নিয়ে ভাবতে চাই না। বর্তমানে যা আছে তা নিয়েই থাকতে চাই। আপনার আর কিছু বলা থাকলে বলুন নাহলে আমি চলে যাচ্ছি।

জোর করে কিছু হয় না জানি। এখন তুমি বিবাহিত। তোমার ওপর অন্য কারো অধিকার। ড. রুদ্র তোমার হাজবেন্ড। ড. রুদ্র তোমার ভীষণ খেয়াল রাখে আমি জানি। তোমার প্রতি কোনো দায়িত্বই সে অবহেলা করে না। তার দায়িত্ব পালনে কোনো ত্রুটি রাখে না। কিন্তু ড. রুদ্র কী তোমাকে ভালোবাসে? নাকি শুধু তোমাকে নিজের দায়িত্বই মনে করে। আমার জানা মতে উনার একজন প্রাক্তন ছিল।

আমি নির্বিঘ্নে সেই স্থান ত্যাগ করলাম। বিহান আরো কিছু বলতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি শোনার প্রয়োজন মনে করলাম না। বিহান পিছন থেকে অনেক বার ডেকেছিল। আমি নিশব্দে চলে এলাম। সবার মুখে দায়িত্ব, দায়িত্ব, দায়িত্ব শব্দটা শুনতে শুনতে আমার কান ব্যথা হয়ে গেছে।

ক্যাফে থেকে বেরিয়ে একটা চড়ে বসলাম। নিজের বাসায় যাব না। রুদ্রের কাছে যাব। আজকে আমার উত্তর চাই। আমি কী শুধুই উনার কাছে দায়িত্ব?

_______________

বাসায় এসে কলিংবেল বাজাতেই মামুনি দরজা খুলে দিল। মামুনিকে দেখেই জড়িয়ে ধরলাম। মামুনির সাথে কৌশল বিনিময় করলাম। মামুনির কাছ থেকে জানতে পারলাম রুদ্র আজকে হসপিটালে যাননি। পা বাড়ালাম রুমের উদ্দেশ্যে। রুমে যাওয়ার আগে স্টাডি রুমের সামনে যেতেই আমার পা দুটো থেমে যায়। স্টাডি রুম থেকে হাসাহাসির শব্দ আসছে। আমি ঘাড় ঘুরিয়ে স্টাডি রুমের দিকে তাকালাম। স্টাডি রুমের দরজা খোলা থাকায় আমার দেখতে অসুবিধা হলো না স্টাডি রুমে কারা আছে। স্টাডি রুমে রুদ্র আর ইলান ভাইয়া বসে আছে। দুজনের মাঝে হাসি প্রতিযোগিতা চলছে। স্টাডি রুমে যেতে গিয়েও আমি থেমে গেলাম। ইলান ভাইয়া হাসি থামিয়ে বলে,

রিয়া পারেও বটে। এসব দুষ্টুমি বুদ্ধি শুধু ওর মাথায়ই আসে। এই মেয়েটা সবাইকে হাসি খুশি রাখতে চায়। দেখ তোকেও কেমন চেইন্জ করে দিল। আচ্ছা তুই কী রিয়াকে ভালোবাসিস?

ইলান ভাইয়ার কথা শুনে বুঝতে পারলাম তাদের হাসাহাসি বা আলোচনার মূল বিষয়বস্তু আমাকেই ঘিরে। আমি অপেক্ষা করছি রুদ্রর উত্তর শোনার জন্য। উনি আমাকে ভালোবাসেন নাকি না?

রিয়া নিতান্তই ছোট। এই বয়সটা ছেলে মেয়েদের আবেগের বয়স। এই বয়সী ছেলে মেয়েদের আজকে একজনকে ভালো লাগে তো কালকে আরেকজনকে। রিয়া যখন আবেগের বয়সটা পার করে যাবে। ওর মাঝে ম্যাচিরিউটি আসবে। তখন তার আর আমাকে ভালো লাগবে না। রিয়া ফিল করবে সে আমার থেকেও বেটার কাউকে ডিজার্ভ করে। আমি রিয়াকে বিয়ে করে ওর লাইফের অনেকটাই ক্ষতি করে দিয়েছি। এখন আমার দায়িত্ব ওর লাইফটা গুছিয়ে দেওয়া। আমি রিয়াকে ভালোবাসি না ও শুধুই আমার দায়িত্ব।

আর কিছু শোনার মতো শক্তি বা ধৈর্য আমার নেই। চোখ থেকে টুপ টাপ অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। দ্রুত পা ফেলে রুমে চলে এলাম। আমি শুধুই উনার লাইফের বুঝা এছাড়া আর কিছুই না। নিজের জীবনের ওপর বিতৃষ্ণা চলে এসেছে। ইচ্ছে করছে সবকিছু ছেড়ে ছুঁড়ে অনেক দূরে চলে যাই। উনাকে সারাজীবনের জন্য আমি নামক বোঝা থেকে মুক্ত করে দেই। দেয়াল ঘেষে মেঝেতে বসে পড়লাম। সবকিছু অসহ্য লাগছে।

_______________

আমি কী বলেছিলাম তোমাকে?

এবারও আমার কাছ থেকে কোনো রূপ সারা শব্দ না পেয়ে উনি রেগে গেলেন। উনি বেশ কিছুক্ষণ যাবত কথা বলে যাচ্ছেন। কিন্তু আমি উনার কথার প্রতিত্তরে কিছু বলি নাই। উনার সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছে আমার নেই। উনি নামক ব্যক্তিটাকেই অসহ্য লাগছে। উনি আমাকে মেঝে থেকে টেনে তুললেন। আমার দুই বাহু ধরে ঝাকিয়ে বলেন,

কী হলো? তুমি আমার কথা শুনতে পারছো না? আমি যা বলছি তা কি তোমার কর্ণগোচর হচ্ছে না? তুমি একা এই বাসায় আসছো কেনো? তোমাকে একা একা এতোটা পথ আসার অনুমতি কে দিয়েছে? তোমাকে বলেছিলাম না বাসা থেকে একা না বের হতে? বলেছিলাম না।

আমি এবারও নিশ্চুপ।

আমাকে বললে আমি তোমাকে নিয়ে আসতাম না? বলো আসতাম না তোমাকে নিয়ে?

আমি শুধু চোখ তুলে উনার দিকে তাকালাম। উনি আরো কিছু বলতে চেয়েছিলেন কিন্তু আমার অশ্রু সিক্ত চোখ দুটো দেখে উনি থেমে গেলে। আমার সিক্ত চোখ দেখে উনি অস্থির হয়ে পড়লেন। আমার হাত ছেড়ে উনি আমার দুই গালে হাত রাখেন।

হোয়াট হ্যাপেন রিয়া? তুমি কাঁদছো কেনো? আমি তোমাকে কী বকা দিয়েছি? বলো দিয়েছি বকা? তাহলে কাঁদছো কেনো?

আমি মলিন কন্ঠে বললাম, আমি কী শুধুই আপনার দায়িত্ব?

উনি হয়তো আমার প্রশ্নটা শুনে থমকে গেছেন। কয়েক সেকেন্ড আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। অতঃপর থেমে থেমে বললেন,

হঠাৎ এই প্রশ্ন? কিছু কী হয়েছে?

চলবে……..

#পূর্ণিমাতিথি
#লেখিকা-তাসনিম জাহান রিয়া
#পর্ব-৩০

উনি সেদিন খুব সূক্ষ্ম ভাবে আমার প্রশ্নটা এডিয়ে গিয়েছিলেন। তারপর থেকে উনাকে কোনোদিনই এই প্রশ্নটা করি নাই। কিন্তু উনার সাথে কথা বলা কমিয়ে দিয়েছি। যে আমার হবে না তার প্রতি মায়া বাড়িয়ে তো লাভ নেই। প্রয়োজনের বাইরে একটা কথাও উনার সাথে বলি না। এতে উনারও কোনো হেলদুল নেই। আমি যে উনার সাথে কথা বলি না এতে হয়তো উনার কিছু আসে যায় না বা উনি লক্ষই করেননি বিষয়টা। উনি আগের মতো আমাকে বাসায় আটকে রাখেন না। আমাকে আমার নিজের মতো ছেড়ে দিয়েছেন। উনি উনার মতো থাকেন আর আমি আমার মতো।
আমার যখন ইচ্ছে তখন বাসা থেকে বের হয়ে যায়। রুদ্র এখন আর এসবের খোঁজ খবর রাখেন না।

মেডিক্যালে চান্স হয়েছে। যেদিন খবরটা জানতে পারি সেদিন আমার অনুভূতি কেমন হয়েছিল বলে বুঝানো সম্ভব না। আনন্দ আমি কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলাম। কেঁদেছিলাম সেদিন খুব কেঁদেছিলাম। আব্বুকে জড়িয়ে ধরে। আব্বুর চোখের কোণে অশ্রু কণা ভীড় জমিয়েছিল। তবে সেটা দুঃখের নয় আনন্দের।

_________________

গাড়ি থেকে নামতেই শত শত ছাত্রের সমাবেশ দেখতে পেলাম। কেউ গেইট দিয়ে ঢুকছে আবার কেউ বের হচ্ছে। সবার গায়েই সাদা এপ্রোন। আমার গায়েও আছে। আরেকবার কলেজটায় চোখ বুলিয়ে নিলাম। ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকালাম। এক পলক রুদ্রের দিকে তাকালাম। রুদ্রের সাথেই আমি এসেছি। রুদ্রও এই মেডিক্যালের ডক্টর। রুদ্রের মুখে অমায়িক হাসি। রুদ্রের গায়েও সাদা এপ্রোন।

কোথা থেকে ত্রয়ী এসে আমার হাত ধরে গেইট দিয়ে প্রবেশ করে। ত্রয়ীর চোখে মুখে উচ্ছ্বাস। আমাদের খুশিটা তো তখনি দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছিল যখন জানতে পেরেছিলাম আমরা দুজন একই মেডিক্যালে চান্স পেয়েছি। আমরা দুজন বরাবরের মতো এক সাথে থাকতে পারবো।

______________

আজকের দিনটা বেশ ভালোই কেটেছে। এতো এতো অপরিচিত মুখের মাঝে একটা অর্ধ পরিচিত মুখ দেখতে পেয়েছিলাম। দীর্ঘ সময় পার করার পর ইফাদের সাথে দেখা। উনি এখন আমার টিচার। উনাকে প্রথম দেখে যেমন আমি চমকে গিয়েছিলাম, ঠিক তেমনি উনিও চমকে গিয়েছিলেন। চমকা চমকির পালা শেষ হতেই আমরা দুজনেই হেসে ফেলি।
ইফাদ স্যার হেসে বলেছিলেন,

আপনার সাথে আবারও দেখা হয়ে গেলো। তখন আমাদের পরিচয়টা একরকম ছিল এখন আরেক রকম। তখন আমাদের পরিচয়টা ছিল এই ব্যস্ত শহরে ব্যস্ত রাস্তায় হঠাৎই দেখা হয়ে যাওয়া দুই মানব মানবী। এখন আমাদের সম্পর্কটা টিচার স্টু়ডেন্ট।

পড়ার টেবিলে বসে বই নড়াচড়া করছি। নতুন বইয়ের গন্ধ আমার বরাবরই ভালো লাগে। সেটা পাঠ্য বই হোক বা গল্পের বই। তবে আগের মতো বই হাতে পাওয়ার আনন্দটা আর হয় না। সবাই মিলে এক সাথে বই আনার অনুভূতিটাই অন্য রকম।

দরজায় খট করে আওয়াজ হতেই ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকালাম। উনি অলস ভঙ্গিতে দরজাটা বন্ধ করে এসে বিছানায় শুয়ে পড়লেন। উনি বাসায় এসেছেন মিনিট বিশেক হয়েছে। এসে শাওয়ার নিয়েছেন ডিনার করছেন। উনাকে এই রাতের বেলায় শাওয়ার নিতে দেখলে আমারই শীত শীত লাগে। উনার মতে ফ্রেশ হলেই সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।

একদিনেই সবার সাথে বেশ ভাব হয়ে গেছে।

আচমকা উনার কথা শুনে একটু ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম,

হুম। সবাই অনেক ভালো। প্রত্যেকটা স্যারই অনেক ফ্রেন্ডলি। ইফাদ স্যার একটু বেশিই ভালো। আমাদের দুজনের মাঝে অনেক মিল আছে। উনিও যেমন আমিও তেমন।

উনি আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলেন, একদিনের মাঝেই বুঝে গেলে ড. ইফাদ অনেক ভালো? ওখানে পড়াশোনা করতে গিয়েছিলে নাকি ড. ইফাদ আর তোমার মাঝে মিল খুঁজতে গিয়েছিলে।

একদিনে বুঝবো কেনো? উনার সাথে আমার আরো দুই বার দেখা হয়েছে। মনে আছে ঐ দিন আমার এক্সিডেন্ট হতে যাচ্ছিল। ঐ দিন তো উনিই আমাকে বাঁচিয়ে ছিলেন। ভালো বা খারাপ বোঝার জন্য একদিনই যথেষ্ট আর আমি মানুষের মুখ দেখে বুঝতে পারি কে ভালো আর কে খারাপ।

উনি ঠাট্টার সরে বলেন, আসছে জ্যোতিষি। মুখ দেখে মনে কথা বলে দিতে পারে। নিজের মন কি চায় সেটাই বুঝতে পারে না আবার অন্যেরটা।

আমি রেগে বললাম, দেখুন একদম মজা করবেন।

উনি সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলেন, তুমি বললে ড. ইফাদের সাথে তোমার দুই বার দেখা হয়েছে। ঐ ঘটনার দিন একবার। আরেকদিন কবে দেখা হয়েছিল?

উনার প্রশ্ন শুনে আমি দমে গেলাম। রাগী দৃষ্টি শীতল হয়ে এলো। পরে গেলাম অথৈয় সাগরে। উনাকে যদি কলেজের ঘটনা বলি তাহলে উনি রাস্তা থেকে ইট তুলে এনে আমার মাথা ফাটিয়ে দিবেন। ঐদিন উনাকে না বলে একা একা কলেজে যাওয়ার জন্য উনি আমার ওপর রেগে ছিলেন। এখন যদি বলি ঐদিন কলেজে আমাকে একটা ছেলে হ্যারাস করছিল ইফাদ স্যার আমাকে ঐ ছেলেটার কাছ থেকে বাঁচিয়ে ছিলেন। তাহলে উনি আর আমাকে আস্ত রাখবেন না। আমি আমতা আমতা করে বললাম,

ঐ তো একদিন কোচিংয়ে দেখা হয়েছিল।

উনার হয়তো আমার উত্তরটা বিশ্বাস হয়নি। তাই উনি ধীর গলায় বললেন,

তুমি সত্যি বলছো তো? এখানে অন্য কোনো কাহিনী নেই তো?

আমি তাড়াহুড়ো করে বলে ওঠলাম, আমি একদম সত্যি কথা বলছি। আর কোনো কাহিনী নেই।

উনি আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চোখ বন্ধ করে ফেললেন। উনার মুখ দেখে মনে হচ্ছে না উনি আমার কথা বিশ্বাস করেছেন। আপাতত এই টপিক অফ করেছেন এটাই অনেক।

____________________

রুদ্র ড্রাইভ করছে আর আমি রুদ্রের পাশে বসে আছি। রুদ্রকে দেখে অনেকটা চিন্তিত মনে হচ্ছে। মনোযোগ দিয়ে ড্রাইভ করছেন না। কেমন জানি অন্যমনস্ক। জিঙ্গেস করেও লাভ নেই। কারণ উনি বলবেন না। আমি রুদ্রের চিন্তা বাদ দিয়ে বাইরে তাকালাম। একটা ফুলের দোকানের সামনে ভাইয়াকে একটা মেয়ের সাথে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আমি অবাক হলাম। মনে ঘুরপাক খাচ্ছে অনেক প্রশ্নই। ভাইয়ার তো এ সময় অফিসে থাকার কথা তাহলে এখানে কী করছে? ভাইয়া মেয়েটার সাথে এখানে দাঁড়িয়ে আছে কেনো? মেয়েটা কে?
আমি তাড়াহুড়ো করে বলে ওঠলাম,

গাড়ি দাঁড় করান।

আচমকা আমার বলা কথায় রুদ্র থতমত খেয়ে গেলেন। দ্রুত দক্ষ হাতে গাড়ি দাঁড় করালেন। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলেন,

এভাবে হুট করে কেউ চিৎকার করে গাড়ি দাঁড় করাতে বলে? এখনি তো এক্সিডেন্ট হয়ে যেতো। কবে একটু ঠিক হবা?

উনার কথা শুনে চট করে মাথাটা গরম হয়ে গেলো। উনি সব সময় নিজের দোষ আমার ওপর চাপিয়ে দিবেন আর আমিও বাধ্য মেয়ের মতো মেনে নিবো। তাতো হবে না। আমি উনার দিকে চোখ রাঙিয়ে বলি,

আপনার স্বভাবই নিজের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া। এক্সিডেন্ট এমনিতেই হতো। আপনি অমনোযোগী হয়ে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। আর আমি চিৎকার করে গাড়ি দাঁড় করাতে বলিনি। আপনি অন্যমনস্ক ছিলেন তাই মনে হয়েছে আমি চিৎকার করে বলেছি।

উনি আরো কিছু বলতে চেয়েছিলেন কিন্তু তার আগেই আমি গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম। ঐ দোকানটার সামনে গিয়ে আর ভাইয়াকে ধরতে পারলাম না। ততক্ষণে ভাইয়া মেয়েটাকে নিয়ে গাড়িতে ওঠে চলে গেছে। আমি হতাশ হয়ে ফিরে এলাম।

_______________

ক্লাস শেষে গাড়িতে এসে বসলাম। আজকে উনার হাফ ডিউটি থাকায় আমার সাথেই যাবেন। আমি গাড়িতে বসা মাত্রই উনি আমাকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন ছুড়ে দেন,

ড. ইফাদের সাথে এতো কীসের হাসাহাসি হ্যাঁ? তোমার বরের কী টাকা অভাব পড়ছে যে বাইরের লোকের কাছ থেকে তোমাকে খেতে হবে? ওখানে তো আমিও ছিলাম। তাহলে তুমি ড. ইফাদের সাথে কেনো লাঞ্চ করলে?

আমি কাঠ কাঠ গলায় বললাম, আপনাকে উত্তর দিতে আমি বাধ্য নই।

উনি আমার প্রশ্নে অতিরিক্ত মাত্রাই রেগে গেলেন। রেগে গিয়ে উনি হিতাহিত ঙ্গান শূন্য হয়ে পড়লেন। এক টানে উনি আমাকে সিট থেকে উনার কোলে বসিয়ে দিলেন।

চলবে…………