পূর্ণিমাতিথি পর্ব-৪৯+৫০+৫১

0
607

#পূর্ণিমাতিথি
#লেখিকা-তাসনিম জাহান রিয়া
#পর্ব-৪৯

সারাদিন উনি বাসায় ফিরলেন না। রাতের দিকে বাসায় ফিরলেন। তখন আমি বিছানায় বসে বসে পড়ছিলাম। উনি নিঃশব্দে রুমে প্রবেশ করলেন। উনি আমাকে কিছু বললেন না। উনি এপ্রোনটা সোফার ওপর রাখলেন। ড্রেসিংটেবিলের সামনে গিয়ে ঘড়িটা খুলে রাখলেন। সোফায় বসে পায়ের মোজাগুলো খুললেন। আমি নিরবে উনার প্রতিটি পদক্ষেপ পর্যবেক্ষণ করলাম। কিন্তু উনাকে কিছু বললাম না। উনি কাবার্ড থেকে টি-শার্ট আর টাউজার নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলেন।

মিনিট পাঁচেক পড়েই উনি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলেন। উনি ওয়াশরুম থেকে বের হতেই উনার ফোনটা বেঁজে ওঠলো। উনি টাওয়ালটা গলায় ঝুলিয়ে ফোনটা হাতে তুলে নিলেন। ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে চুল ঠিক করতে করতে ফোনে কথা বলছেন।

আমি আস্তে করে বিছানা থেকে নেমে নিঃশব্দে উনার ঠিক পিছনে গিয়ে দাঁড়ালাম। উনি ফোনে কথা বলা শেষ করে পিছনে ঘুরতেই চমকে ওঠলেন। উনি হাতের ফোনটা পকেটে পুরে আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলেন, কী?

এই প্রশ্নটা তো আমার করা উচিত। এসবের মানে কী? এখন রিসেপশন আপনার মাথা কী খারাপ হয়ে গেছে?

আমার মাথা একদম ঠিক আছে। আমাদের বিয়ের কোনো অনুষ্ঠান হয়নি। ঘরোয়া ভাবে আমাদের বিয়ে হয়েছিল। এই রিসেপশন পার্টির মাধ্যমে আমি সবাইকে আমাদের বিয়ের ব্যাপারটা জানাব। সবাই জানবে আমি আর তুমি হাজবেন্ড ওয়াইফ।

এটা হয় না।

কেনো হয় না?

কলেজের সবাই জানে আমি অবিবাহিত।

এখন জানবে তুমি বিবাহিত।

সবাই ভাববে আমি মিথ্যাবাদী।

ভাববে না। আমরা আমাদের ব্যক্তিগত কারণে আমাদের বিয়ের ব্যাপারটা সবার আড়ালে রেখেছি। কেনো রেখেছি এটা নিশ্চয়ই কেউ জানতে চাইবে না। এটা সম্পূর্ণই আমাদের পার্সোনাল মেটার।

কিন্তু …..

হুসসস। আর কোনো কথা নয়।

হুট করেই বেলকনি দিয়ে দমকা হাওয়া আসতে লাগলো। বাইরে প্রচণ্ড বাতাস বইছে। ঝড় আসার পূর্ব লক্ষণ। উনি দ্রুত গেলেন বেলকনির দরজা লাগানোর জন্য। উনি বেলকনির দরজাটা লাগিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসতে নিলেই কারেন্ট চলে গেলো। রুম জুড়ে ঘুট্ঘুটে অন্ধকার। কেউ কাউকে দেখতে পাচ্ছি না। বাতাসে জানালার পর্দাগুলো উড়ছে। উনি উনার ফোন বের করে ফ্ল্যাশ অন করলেন। উনি জানালাগুলো বন্ধ করে দিলেন। আজকে দুপুরেই জেনারেটর নষ্ট হয়ে গেছে।

উনি জানালাগুলো বন্ধ করে দিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসলেন। বাতাসের বেগ কমে গেছে। বৃষ্ট পড়া শুরু হয়ে গেছে। বৃষ্টি পড়ার শব্দ আমি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি। ঘড়ির কাটা ১২ টার ঘরে পা দিতেই উনি ফোনের ফ্ল্যাশ অফ করে দিলেন। প্রায় সাথে সাথেই ঠাস ঠুস বেলুন ফাটানোর শব্দ কানে এলো। হুট করে বেলুন ফাটানোর শব্দে আমি ভয় পেয়ে গেলাম। সাথে কিছু কণ্ঠস্বর কানে ভেসে আসলো।

হ্যাপি বার্থডে। হ্যাপি বার্থডে ডিয়ার রিয়া।

চারদিকে আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠলো। আমাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে সবাই। সবার হাতে রঙে বেরঙের বেলুন। আজকে তো আমার জন্মদিন। আমার তো মনেই ছিল না। কী অদ্ভুত ব্যাপার নিজের জন্মদিনের কথা নিজেরই মনে নেই।

পিছন থেকে কেউ একজন আমার চোখ বেধে দিল। আমি চোখের ওপর হাত রেখে কিছু বলতে যাব তার আগেই কেউ একজন আমাকে পিছন থেকে কোলে তুলে নিল। আকস্মিক ঘটনায় আমি ভয়ও পেয়ে গেলাম, চমকেও ওঠলাম। আমার মাথা ঠেকল ঐ ব্যক্তির বক্ষে। শরীর থেকে আসা মনোমুগ্ধকর মাতাল করা ঘ্রাণ আমাকে জানান দিচ্ছে এই ব্যক্তিটা রুদ্র ছাড়া আর কেউ না। আমি ভয় পেয়ে রুদ্রর বাহুর কাছে শার্ট খামছে ধরলাম।
আমি অস্থির হয়ে বলে ওঠলাম,

আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?

গেলেই দেখতে পারবা। এখন চুপ থাক।

উনি আমাকে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামচ্ছেন আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি। উনি আমাকে একটা জায়গায় নিয়ে এসে কোল থেকে নামিয়ে দিলেন। প্রায় সাথে সাথেই একটা ধমক দিয়ে বলে ওঠলেন,

এই তুমি কী খাওয়া দাওয়া কর না? নিজের স্বাস্থ্য দেখছ? একটা ক্লাস ফাইভের বাচ্চার ওজনও তোমার থেকে বেশি।

আমি উনার কথা শুনে গাল ফুলিয়ে বলে ওঠলাম, একদম অপমান করবেন না। আমার ওজন একদম ঠিক ঠাক আছে। আপনি স্লিম ফিগারের কী বুঝেন? নিজে তো দিন দিন ভুঁড়িওয়ালা হয়ে যাচ্ছেন।

রিদি আপু আমাদের দুজনকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, তোরা একটু চুপ করবি। নে রিয়া এবার চোখের বাধনটা খুল।

আমি গিট খোলার চেষ্টা করছি। কিন্তু পারছি না। আমি গিট খুলে দেওয়ার জন্য রিদি আপুকে ডাক দিলাম কিন্তু রিদি আপু প্রতিত্তর করলো না। আশেপাশে কারোও সাড়া শব্দ পাচ্ছি না। অনেক চেষ্টা করে গিট খুলতে সক্ষম হলাম। চোখের ওপর থেকে কাপড় সরাতেই আমি হালকা ভয় পেলাম। চারদিকে অন্ধকার। কেউ কোথায় নেই। হুট করে চারদিকে লাইট জ্বলে ওঠলো। বাজি ফাটানোর মতো শব্দ কানে এলো। চারদিকে বেলুন রঙ বেরঙের লাইট দিয়ে সাজানো।
ড্রয়িংরুমের মাঝখানে একটা টেবিল। টেবিলের ওপর বেশ বড় সাইজের একটা কেক।

আমি অবাক হয়ে চারদিক দেখছি। এভাবে বাসা কে সাজাল আর কখনই বা সাজাল? আমি তো কিছু টেরই পেলাম না। আমার অগোচরে এতকিছু ঘটে গেলো। আমার মনোভাব হয়তো নিয়াম ভাইয়া বুঝতে পারল। নিয়াম ভাইয়া হালকা হেসে বলে,

এসব কিছু তোমার বর মহাশয় করেছেন। আমরা তো শুধু সাহায্য করেছি। সেই সন্ধ্যা থেকে ডেকোরেশন করা হচ্ছে।

আশ্চর্যজনক ভাবে আজকে সন্ধ্যা থেকে আমি একবারের জন্যও রুম থেকে বের হয়নি। আমি রুদ্রর দিকে তাকালাম। রুদ্রর ঠোঁটের কোণে ঝুলে আছে অমায়িক হাসি। এই হাসিটা দেখার জন্য আমি এক জনম পার করে দিতে পারি।

__________________

সকাল ৯ টা বাজে। কলিংবেলের কর্কশ আওয়াজে ঘুমটা ভেঙে গেলো। গতকাল কেক কাটা, বার্থডে সেলিব্রেশন, খাওয়া-দাওয়া করে আড্ডা দিয়ে রাত ৩ টার দিকে ঘুমানোর জন্য সবাই সবার জন্য বরাদ্দকৃত রুমে গিয়েছিল। এতো রাত অব্দি জেগে থাকার জন্যই হয়তো এখনো কেউ ঘুম থেকে ওঠেনি। কলিংবেলের আওয়াজটা আমার বিরক্ত লাগছে। বিরক্তি নিয়ে ওঠে দাঁড়ালাম।

এলোমেলো চুলগুলো হাত দিয়ে খোপা করে। মাথায় উড়না দিয়ে ভালো করে ঘোমটা দিয়ে নিলাম। ড্রয়িংরুমে এসে আশেপাশে তাকালাম। কিন্তু কাউকে দেখতে পেলাম না। আমিই দরজা খোলার জন্য এগিয়ে গেলাম। দরজা খুলতেই দরজার সামনে দুইটা ছেলেকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আমার ভ্রু কুচকে। ছেলে দুটোকে আমি চিনি না। আগে কোনো দিন দেখেছি বলেও মনে পড়ছে না। মামুনিদের আত্নীয় হলে তো আমি চিনতাম। ছেলে দুটো আমাকে দেখেই সালাম দিল।

আসসালামু আলাইকুম ভাবি।

আমি চমকে ছেলে দুটোর দিকে তাকালাম। এর আগে কেউ কখনো আমাকে ভাবী ডাকেনি। আমি একটু বিব্রত হলাম। তবু হালকা হেসে বললাম,

ওয়ালাইকুম আসসালাম।

কেমন আছেন ভাবী?

আশ্চর্যজনক ভাবে ছেলে দুটো যা বলছে দুজন একসাথে। জমজ ভাইদের মতো না না জমজ ভাইয়েরা তো আর এক সাথে কথা বলে না। মনে হচ্ছে আমি উনাদের টিচার আর উনারা আমার স্টুডেন্ট। আমি কিছু বলার সাথে সাথে উত্তর না দিলে উনাদের কানে ধরে দাঁড় করিয়ে রাখব।

আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনারা আমাকে ভাবি ডাকছেন কেনো? আমরা কী পূর্ব পরিচিত? আমাদের কী আগে কোথাও দেখা হয়েছিল?

না ভাবি। আজকেই আমাদের প্রথম দেখা হলো ভাবী। ভাবী আমরা রুদ্রর ফ্রেন্ড।

উনাদের কথা বলার স্টাইল দেখে অবাক হচ্ছি। প্রতি লাইনে লাইনে ভাবি ডাকছে। অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ। আজকে রুদ্রর ফ্রেন্ড আসবে আমাকে তো রুদ্র আগে বলেনি।

আপনারা যে আসবেন রুদ্র তো আমাকে কিছু বলেনি। রুদ্র কী জানে না আপনারা আজকে আসবেন?

না। আমরা রুদ্রকে না বলে এসেছি। আমরা রুদ্রকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য সোজা এয়ারপোর্ট থেকে এখানে চলে এসেছি। আমরা রুদ্রর বন্ধু হওয়া সত্ত্বেও আপনি আমাদের চিনেন না কারণ আমরা এতোদিন দেশে ছিলাম না।

রুদ্রর বন্ধুদের পিছনে এসে একটা মেয়ে দাঁড়াল। মেয়েটাকে দেখে আমি চমকে ওঠলাম। মেয়েটা দেখতে হুবহু অরি আপুর মতো।

চলবে…..

#পূর্ণিমাতিথি
#লেখিকা-তাসনিম জাহান রিয়া
#পর্ব-৫০

হ্যালোসেলুশন হচ্ছে। রুদ্রর দুই বন্ধুর পিছনে অরি আপু ছিল না। কিন্তু আমি স্পষ্ট অরি আপুকে দেখেছিলাম। অরি আপুর ঠোঁটের কোণে ছিল আলতো হাসি। সবটাই হ্যালোসেলুশন। এরকম অদ্ভুত একটা কান্ড আমার সাথে ঘটছে।

মাথা যন্ত্রণায় এক সাইড ছিঁড়ে যাচ্ছে। কী অসহ্যকর অনুভূতি। চুল টেনে ধরে চোখ বন্ধ করে নিলাম। চোখ বন্ধ করতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠলো অরি আপুর মুখটা। আমি ঝটফট চোখ খুলে ফেললাম। এসব কী হচ্ছে আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। এমন অদ্ভুত অনুভূতি কেনো হচ্ছে। সব জায়গায় অরি আপুকে দেখতে পাচ্ছি।

রুদ্র হাসতে হাসতে রুমে আসলো। আমার পায়ের কাছটায় উনি বসেন। আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলেন, তুমি তখন এভাবে চলে এলে কেনো?

আমি উনার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বললাম, আপনি জানেন হাসলে আপনাকে কতোটা সুন্দর লাগে? কিন্তু আপনি তো হাসেন না। যেনো হাসলে আপনাকে টাকা দিতে হবে। আপনি কী জানেন আপনার হাসি মুখটা দেখার জন্য আমি চাতক পাখির ন্যায় অপেক্ষা করি?

এই তুমি এভাবে কথা বলছো কেনো? তোমার কী হয়েছে? শরীর খারাপ লাগছে? জ্বর আসছে নাকি?

আমি মাথা নাড়িয়ে না বললাম। মনে হল না উনি আমার কথা বিশ্বাস করেছেন।

আমাকে একদম মিথ্যা বলার চেষ্টা করবে না। তোমাকে দেখে আমার একদম ঠিক লাগছে না তোমার কী মাথা ব্যথা করছে?

উনার কথা শুনে আমি আলতো হাসলাম। উনার কাছ থেকে আমি কিছু লুকাতে পারি না। আমি মুখ ফুটে না বললেও উনি আমার সব সমস্যার কথা বুঝে যান। আমার মুখ দেখেই বুঝে যান আমার কী প্রয়োজন।

মেডিসিন খেয়োছো?

না।

তা খাবেন কেনো? আপনার তো মেডিসিন খাওয়ার প্রয়োজন নেই। আপনি তো এলিয়েন।

উনি রাগে গজগজ করতে করতে গিয়ে মেডিসিন নিয়ে আসলেন। পানির গ্লাসটা আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন।

ম্যাডামের সব দিকেই খেয়াল আছে শুধু নিজের দিকেই খেয়াল নেই।

আমি আলতো হেসে বললাম, আমার খেয়াল রাখার জন্য আপনি আছেন তো।

যখন আমি থাকব না তখন কী করবেন?

আমি উনার ঠোঁটের ওপর আঙ্গুল রেখে চুপ করিয়ে দিলাম। হুশশশ। এমন কথা আর বলবেন না। আপনিহীনা আমি নিজেকে কল্পনা করতে পারি না। সেই দিন যেনো কখনো না আসে। আল্লাহ যেনো আপনার আগে আমার মৃত্যু দেন।

রাগে উনার চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। উনি পেইন কিলারটা আমার মুখে ঠুসে দিলেন। হাত থেকে টান দিয়ে গ্লাসটা নিয়ে নিলেন। গাল চেপে ধরে আমাকে পানি খাইয়ে দিলেন। আমি অবাক নয়নে উনার কার্যকলাপ দেখে যাচ্ছি। উনি হঠাৎ এতো রেগে গেলেন কেনো সেটা আমার বোধগম্য হচ্ছে না। পরক্ষণেই মনে পড়লো আমি একটু আগে মৃত্যুর কথা বলেছিলাম। এটার জন্যই কী উনি রেগে গেছেন? আমার ঠোঁটের কোণে প্রাপ্তির হাসি ফুটে ওঠলো।

উনি চলে যেতে নিলে আমি উনার হাত টেনে ধরে বিছানায় বসিয়ে দিলাম। উনি বিছানায় বসতেই আমি উনার বুকে মাথা রাখলাম। উনার হাতটা আমার মাথার ওপর রাখলাম।

একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দিবেন। মাথা প্রচণ্ড ব্যথা করছে। দিন না একটু বিলি কেটে।

উনি এক হাতে আমাকে জড়িয়ে ধরে আরেক হাতে মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছেন। আমি আবেশে উনাকে দুই হাতে জড়িয়ে ধরলাম। উনি কপালে পর পর তিনটা চুমু খেলেন। গালে আলতো করে ছুঁয়ে দিতে দিতে বলেন,

আমি নিজের অনুভূতি প্রকাশে বরাবরই ব্যর্থ। নিজের অনুভূতিগুলো আমি কখনোই গুছিয়ে অন্য কারো সামনে প্রকাশ করতে পারি না। তাই কেউ আমার অনুভূতি বুঝতেও পারে না। তুমিও আমার অনুভূতি বুঝতে ব্যর্থ। তোমার মুখ থেকে মৃত্যুর কথা শুনলে আমার বক্ষঃস্থলে চিন চিন ব্যথা হয়। মনে অদ্ভুত ভয়ের অনুভূতি হয়। আমি তোমাকে হারাতে পারবো না। তোমার থেকে একটুখানি দূরত্বও যে আমার সহ্য হয় না।

উনার কথাগুলো শুনে আমার বুকের ভিতরে মুচর দিয়ে ওঠে। আমি কী সত্যিই উনার অনুভূতি বুঝতে ব্যর্থ। উনাকে বুঝতে দিলাম না যে আমি সজাগ। এসব ভাবতে ভাবতেই এক সময় উনার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেলাম।

_________________

ঘুম থেকে ওঠে আর উনাকে পেলাম না। এলোমেলো চুলগুলো খোপা করতে করতে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম। হাত মুখ ধুয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এলাম। রিসেপশন উপলক্ষ্যে আমাদের এবং রুদ্রর অনেক রিলেটিভসই বাসায় এসেছে। তাই নিজেকে একটু ঠিক ঠাক করে রুম থেকে বের হলাম।

রুম থেকে বের হয়ে ড্রয়িংরুমে আসতেই কেউ একজন ফটাফট মুখে মিষ্টি ঢুকিয়ে দিল। মুখের মিষ্টিটুকু গিলে চোখ তুলে তাকাতে না তাকাতেই আরেকটা মিষ্টি ঢুকিয়ে দিল আমার সামনে থাকা ব্যক্তিটা। আমার সামনে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে ইলান ভাইয়া। আমাকে উনার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকাতেই বলে ওঠলেন,

নিজের বিয়ের মিষ্টি খাও। তুমি বিয়ের কনে তুমি মিষ্টিমুখ না করলে তো মিষ্টিমুখের অনুষ্ঠানটাই ইনকম্পলিট থেকে যাবে।

ইলান ভাইয়ার কথা শুনে আমার গলায় মিষ্টি আটকে গেলো। আমি কাশতে কাশতে শুরু করলাম। ইলান ভাইয়ার আম্মু আমার দিকে দ্রুত এক গ্লাস পানি বাড়িয়ে দিলেন। পানি দিয়ে উনি আমার পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। আমার কাশি থামতেই আন্টি ইলান ভাইয়ার কান টেনে ধরেন।

তোর বাদরের মতো স্বভাব কোনো দিন যাবে না। না? এভাবে কেউ মিষ্টি খাওয়ায়? হুট হাট এভাবে কাউকে খাওয়াতে নেই জানিস না?

উফ আম্মু ছাড় তো। রিয়া তো অবাক হয়ে গিয়েছিল। তাই গলায় মিষ্টি আটকে গিয়েছিল। এখন তো রিয়ার অবাক হওয়ার দিন। রিয়া মিনিটে মিনিটে ঝটকা খাবে।

রুনা আপু সোফা বসেছিলেন। উনি চিৎকার দিয়ে বলে ওঠলেন, আম্মু জুড়ে টেনে ধরো কান। পারলে কান টেনে ছিঁড়ে ফেলো। এই গরিলাটা খাবার নিয়ে আমার ওপর কী অত্যাচারটায় না করে।

________________

পড়ার টেবিলে বসে কলম ঘুরাচ্ছি আর ভাবছি। এট লাস্ট নিজের মনস্থির করে ফেললাম। এখন থেকে আমিও উনার ছোট ছোট ইচ্ছেগুলো পুরণ করার চেষ্টা করবো। উনার ভালো লাগা খারাপ লাগা সব অনুভূতি বুঝার চেষ্টা করবো।

উনার ডায়েরীর ছিঁড়া এক অংশ পাতায় পড়েছিলাম। উনার প্রেয়সী লাল পাড়ের সাদা শাড়ি পড়ে এসে উনার সামনে দাঁড়াবে। হাতে থাকবে এক মুঠো লাল রঙের কাঁচের চুড়ি। এলোমেলো চুলে উনার সামনে এসে দাঁড়াবে। উনি নিজ হাতে খোপা করে দিয়ে খোপায় বেলি ফুলের মালা জড়িয়ে দিবে। উনি নিজ হাতে আলতা পড়িয়ে দিবেন। উনার প্রেয়সীর রক্তিম গাল জোড়ায় চুমু এঁকে দিবেন।

উনি কখনো উনার এই ইচ্ছেগুলো আমাকে বলেননি। কারণ উনি জানেন আমার শাড়ী পড়তে ভালো লাগে না। বিয়ের পর় থেকে তেমন একটা শাড়ী পড়া হয়নি। আলতা পড়তে আমার বেশ লাগে। উনি আমার প্রিয় অপ্রিয় জিনিসের এতো খেয়াল রাখেন আমারও উচিত উনার অনুভূতিগুলোর খেয়াল রাখা। উনার খুশির জন্য একদিন না হয় নিজের খারাপ লাগা সরিয়ে এক সাইডে রেখে দিলাম।

বাগান থেকে এক মুঠো বেলি ফুল নিয়ে এলাম। বেলি ফুলগুলো দিয়ে খুব সুন্দর করে মালা গেথে নিলাম। কাবার্ড থেকে লাল পাড়ের সাদা শাড়ী বের করে নিলাম। এই শাড়ীটা ত্রয়ী আমাকে গিফট করেছিল। উনার মনের মতো করে আজকে নিজেকে সজ্জিত করে নিলাম। এখন অপেক্ষা উনার আসার।

উনার আসার শব্দ শুনেই বেলকনিতে চলে এলাম। আমি জানি উনি ফ্রেশ হয়ে আমার খোঁজে এই বেলকনিতেই আসবেন। অল্প কিছুক্ষণ পরেই নিজের কাধে রুদ্রর ছোঁয়া পেলাম। হুট করে লজ্জায় আমায় ঘিরে ধরলো। লজ্জায় উনার দিকে তাকাতে পারছি না। লজ্জায় মাথা নিচু করে উনার দিকে ফিরলাম। উনার দিকে আলতা বাড়িয়ে দিলাম।

উনি আমাকে দেখে অবাক হয়েছেন ঠিকই। হয়তো বুঝতে পেরেছেন আমি উনার ডায়েরীর অংশ বিশেষ পড়ে নিয়েছি। উনি ফ্লোরে বসে পড়লেন উনার সাথে সাথে আমিও বসে পড়লাম। উনি মনোযোগ দিয়ে আলতা পড়িয়ে দিচ্ছেন। মৃদু বাতাস বইছে। বাতাসে উনার চুলগুলো কপালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছে। উনি খুব সুন্দর করে হাতে পায়ে আলতা পড়িয়ে দিলেন। আমি উনার দিকে বেলি ফুলের মালাটা এগিয়ে দিলাম। কিন্তু উনি নিলেন না বরং উনি আমার খুব কাছে চলে এলেন। পর পর দুটো চুমু খেলেন কপালে। উনি সরে গেলেন না আমাকে দুই হাতে আগলে নিলেন। কানের কাছে ফিসফিস করে বললেন,

তোমাকে যদি একটু ভালোবাসি তাহলে কী খুব বেশি অন্যায় হয়ে যাবে? আমার আলতো স্পর্শ যদি তোমার সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে কী খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে?

আমি উনার কথার প্রতিত্তর করলাম না বরং লজ্জাবতী গাছের ন্যায় উনার বুকে মুখ গুঁজে দিলাম। উনি আলতো হেসে আমাকে কোলে তুলে নিলেন। আমাকে বিছানায় শুইয়ে দিলেন। লাইট অফ করে দিয়ে আমার কানে ফিযফিস করে বার কয়েক বার বললেন, ভালোবাসি। আমি আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলাম। দু হাতে খামছে ধরলাম উনার টি-শার্ট।

চলবে…….

#পূর্ণিমাতিথি
#লেখিকা-তাসনিম জাহান রিয়া
#পর্ব-৫১

ফোনের কর্কশ আওয়াজে ঘুমটা ভেঙে গেলো। চরম বিরক্তি নিয়ে বেড সাইড টেবিল থেকে ফোনটা হাতে নিলাম। ফোনের স্কিনের নামটা দেখেই ভয় আমার গলা শুকিয়ে আসছে। রুদ্র যদি এখন দেখে ইফাদ স্যার আমাকে কল দিচ্ছে। এই ফোন দিয়ে বারি মেরে আমার মাথা ফাটিয়ে দিবে। আমি ভয়ে ভয়ে রুদ্রর দিকে তাকালাম। উনি গভীর ঘুমে আচ্ছন। ফোনটা বাজতে বাজতে কেটে গেলো। জানি আবার ফোন দিবে। এদিকে আমি এক চুল নড়তেও পারছি না।

রুদ্র নিজের সাথে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে। রুদ্র ঘুমের ঘোরে একটু নড়ে চড়ে ওঠতে হাতের বাধন আরো দৃঢ় হলো। আবার ফোন বেজে ওঠলো। আমি দ্রুত ফোনটা সাইলেন্ট করে ফেললাম। কিন্তু ততক্ষণে রুদ্র সজাগ হয়ে গেছে। উনি ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললেন, কে ফোন দিয়েছে?

আমি উত্তর দিলাম না। আমি যদি বলি ইফাদ স্যার ফোন দিয়েছে। উনি আমার সম্পূর্ণ কথা না শুনেই রাগারাগি শুরু করে দিবেন। উনি আমাকে ছেড়ে দিতেই আমি ওঠে বসলাম। উনি দুই হাতে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরলেন। পেটে মুখ গুঁজে দিয়ে বললেন, বললে না তো কে ফোন দিয়েছে?

উনার এমন স্পর্শে আমার শরীর অসাড় হয়ে আসছে। আমার হাত থেকে ফোনটা বিছানায় পড়ে গেলো। উনি নিজেই বিছানার ওপর থেকে ফোনটা হাতে নিলেন। ফোনের স্কিনের নামটা দেখেই উনি আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। আমি ভয়ে ভয়ে উনার দিকে তাকালাম। আমি কিছু বলার প্রয়াশ করার পূর্বেই উনি ফোনটা রিসিভ করে নিলেন। ফোন স্পিকারে দিয়ে আমাকে কথা বলার জন্য বললেন। আমি ভয়ে ভয়ে বললাম,

আসসালামু আলাইকুম স্যার।

ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছো রিয়া?

আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপনি?

আলহামদুলিল্লাহ ভালো। কথাটা বলে উনি একটু থামলেন। বুঝতে পারছি উনি কিছু বলার প্রয়াশ করছেন। উনি আমতা আমতা করে বললেন,

রিয়া তোমাকে আমি ঐদিন কিছু কথা বলেছিলাম। তুমি তো সেই ব্যাপারে কিছু বললে না। আমি তোমার কথা শোনার জন্য অপেক্ষাই আছি।

রুদ্র দাঁতে দাঁত চেপে বলেন, এই সত্যি করে বলো তো ও তোমাকে প্রোপোজ করেনি তো?

আমি হাত দিয়ে রুদ্রর মুখ চেপে ধরলাম। হালকা কেশে বললাম, স্যার ঐ ব্যাপারে আমি কী বলবো আমি নিজেও বুঝতে পারছি না? ত্রয়ীকে ব্যাপারটাকে কীভাবে বলবেন?

ত্রয়ীকে প্রোপোজ করি।

রুদ্র আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকায়।
হয়তো উনি এতক্ষণে সবটা বুঝতে সক্ষম হয়েছেন। ইফাদ স্যার আমাকে নয় ত্রয়ীকে পছন্দ করেন। আমি উনার মুখের ওপর থেকে হাত সরিয়ে নিলাম।

প্রোপোজ করার বিষয়টা একদমি ঠিক হবে না। যদি ত্রয়ী পুরো বিষয়টা ভালো ভাবে না নেয়। আমি ত্রয়ীকে যতটুকু চিনি ত্রয়ী বিষয়টা এতো ইজিলি নিবে না। পরিস্থিতি হিতে বিপরীত হবে। দেখা যাবে ত্রয়ী রেগে গিয়ে আপনাকে দু চার কথা শুনিয়ে দিবে। ত্রয়ী শিক্ষকদের ভীষণ সম্মান করে। ত্রয়ী হয়তো একটু ফাজিল কিন্তু এই বিষয় নিয়ে অনেক পসেসিভ। প্রোপোজ করাটা মোটেও ঠিক হবে না। রেগে গেলে ত্রয়ীর হুশ থাকে না। দেখা যাবে ত্রয়ী রেগে গিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিবে। এটা আপনার ক্যারিয়ার জন্য মোটেও শুভ হবে না।

তাহলে আমি কী করবো? নিজেকে কেমন হেল্পলেস লাগছে। ত্রয়ীকে হারিয়ে ফেলার ভয় হয়। ত্রয়ীকে হারিয়ে ফেলার ভয় আমাকে প্রতিমুহূর্তে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। ওকে কোনো ছেলের সাথে কথা বলতে দেখলেও ভয়ে আমার বুক কাঁপে। মনে হয় এই বুঝি আমি ত্রয়ীকে হারিয়ে ফেলছি। আমি কতোটা মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছি সেটা আমি তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না। ত্রয়ীকে প্রথম দিন দেখেই আমি ভালোবেসে ফেলি। যাকে বলে লাভ এট ফাস্ট সাইড। তাই তো তোমাদের কাছাকাছি থাকতে চাইতাম। এতগুলো দিন নিজের মনের কথা নিজের মাঝেই চেপে রেখেছিলাম। কিন্তু পরে ভেবে দেখলাম নিজের মনের কথা নিজের মনে চেপে রাখলে হয়তো আমি ত্রয়ীকে হারিয়ে ফেলবো। তাই তো হেল্পলেস হয়ে তোমার কাছে সাহায্য চাইছি। প্রথমে অনেক দ্বিধাগ্রস্ত ছিলাম নিজের ছাত্রীর কাছ থেকে হেল্প নিব বলে। ত্রয়ীর যদি আমার প্রফেশন নিয়ে প্রবলেম থাকে। তাহলে আমি চাকরি ছেড়ে দিব।

চাকরি ছেড়ে দেওয়া তো কোনো কিছুর সমাধান হতে পারে না। আপনি যদি কারো জন্য নিজেকে পরিবর্তন করেন। তাহলে তো সে আপনাকে নয় আপনার পরিবর্তনটাকে ভালোবাসবে। ত্রয়ীকে অন্যভাবে বুঝাতে হবে।

কী করবো আমি? ত্রয়ীকে না পেলে আমি পাগল হয়ে যাব।

ইফাদ স্যারের কথা শুনে আমার ভীষণ হাসি পাচ্ছে। কিন্তু এখন হাসা যাবে না। সিরিয়াস টাইপ কথা বার্তা চলছে। আমি নিজের হাসি চেপে রেখে বললাম,

স্যার আপনি একটাই কাজ করতে পারেন। আপনি ত্রয়ীকে ডিরেক্ট বিয়ে করে ফেলুন। ওর বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠান। এছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

ত্রয়ী রাজি নাহলে তো ওর বাবা-মা তো আমার কাছে বিয়ে দিবে না।

হয়তো দিবে না। কিন্তু বুঝাবে তো। কারণ নিজের মেয়ের জন্য এমন সুপাত্র হাতের কাছে পেয়ে কেউ নিশ্চয়ই হাত ছাড়া করতে চাইবে না। যদি ত্রয়ী নিজের বাবা-মার কথা শুনে যদি কনভেনস হয়ে যায়।

আচ্ছা তাহলে আমি আজকেই ত্রয়ীদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠাচ্ছি। এখন তাহলে রাখি। তোমাকে এই সময় বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত।

না না স্যার সমস্যা নাই। আচ্ছা তাহলে রাখি স্যার। আসসালামু আলাইকুম স্যার।

ওয়ালাইকুম আসসালাম।

রুদ্র বেডে হেলান দিয়ে বসতে বসতে বললেন, ড. ইফাদ তো নিজের ছাত্রীর প্রেমে মজনু হয়ে গেছে। কিন্তু লাইলি তো মজনুর মনের দুঃখ বুঝে না।

আমি উনার দিকে ঠোঁট বাঁকিয়ে তাকালাম। উনি চোখ দিয়ে আমার ঠোঁটের দিকে ইশারা করে বললেন,

সুইট টেস্ট।

_________________

রুমের দিকে আসতে নিলেই রুদ্র আর ইলান ভাইয়ার কিছু কথা আমার কর্ণগোচর হলো।

কীরে রুদ্র তুই বিড়াল টিড়াল পোষা শুরু করেছিস নাকি? আমি তো জানতাম তুই বিড়াল পছন্দ করিস না। কিন্ত তোর হাতে বুকে বিড়ালের খামচির মতো দাগ। কী ব্যাপার?

ইলান ভাইয়ার কথা শুনে আমার কাশি ওঠে গেলো। আমি নিজের মুখ চেপে ধরলাম। রুদ্র ইলান ভাইয়ার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকান।

থাপ্পড় খাবি হারামি।

বাহবা আমাদের রুদ্র বাবু ব্লাশ করছে। লজ্জায় গাল দুটো লাল টমেটো হয়ে গেছে। মামা তোমার বউ এখানে থাকলে নিশ্চয়ই এটা বলতো,

আপনি এতো লজ্জা পাচ্ছেন কেনো? লজ্জায় আপনার গাল দুটো টমেটোর মতো লাল হয়ে গেছে। ইচ্ছে করছে কামড়ে কুমড়ে খেয়ে ফেলি।

ইলান ভাইয়ার কথা বলার স্টাইল দেখে রুদ্র না চাইতেও হেসে দিল। আস্তে করে ইলান ভাইয়ার পিঠে থাপ্পড় মারল। নাইম ভাইয়া আর এনাম ভাইয়াকে আসতে দেখে আমি দরজার কাছ থেকে একটু সরে দাঁড়ালাম। রুমে ঢুকেই নাইম ভাইয়া বলল,

আমাদের বাদ দিয়ে কী এতো কথা হচ্ছে হুম?

ইলান ভাইয়া রুদ্রর দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিয়ে বলল, রুদ্রর বাসর নিয়ে কথা হচ্ছে।

এনাম ভাইয়া চোখ টিপ দিয়ে বলেন, ইলান তোর মনে আছে তোর বাসর রাতে আমরা কী করছিলাম?

তা আবার মনে থাকবে না। আমার স্মরণীয় বরণীয় দিনটা আমার আলাভোলা বউকে উল্টা পাল্টা বুঝিয়ে নষ্ট করে দিয়েছিল। বাসর রাতে বসে বসে লুডু খেলছি। এই কথা মনে হলে এখনো বুকে চিন চিন ব্যথা হয়।

ইলান ভাইয়ার কথা শেষ হতেই নাইম ভাইয়া, এনাম ভাইয়া রুদ্র উচ্চস্বরে হেসে ওঠে। হুট করে নাইম ভাইয়া রুদ্রর হাত দুটো চেপে ধরে।

তুই নিজের লাইফে মুভ অন করেছিস এটা দেখার পর নিজেকে অনেকটা হালকা লাগছে। মনে হচ্ছে একটা অপরাধবোধ থেকে মুক্তি পেলাম। তুই ভাবির সাথে ভালো আছিস, সুখে আছিস এটা জানার পর আমাদের থেকে বেশি খুশি হয়তো কেউ হয়নি। এতোদিন ধরে একটা অপরাধবোধ আমাদের কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিল।

চলবে……