পূর্ণিমা পর্ব-০৪

0
433

#পূর্ণিমা🍂
#পর্ব_৪
#Sanchita(Writer)

” বলি মা-বাবা কি শিক্ষা দিক্ষা দেয়নি তোমাকে!নতুন বউ হয়ে এভাবে বেশরমের মতোন ঘোমটা ফালাইয়া বড়-ভাসুর,শ্বশুড়ের সামনে দিয়ে ঢেং ঢেং করে নাচঁতে নাচঁতে নিচে আসছো?(তীন্ক্ষ স্বুরে)

মিসেস মৌমি রায় চৌধুরির কথা শুনে ভ্রু কুচঁকালো নিদিয়া।ইচ্ছে তো করছে তার বুড়ির সামনে থাকা গ্লাস টার মধ্যে বুড়িরে চুবিয়ে ধরে মে*রে ফেলতে।বড় ছেলে,বাপের সামনে ছোট ছেলে আর বড় বৌ চক্কর চালাচ্ছে সেটার দিকে বুড়ির খেয়াল নেই।কি এক ঘোমটা দেয়নি বলে ফটরফটর করছে।
এবাড়ির মানুষ গুলো আসলেই একেকটা কুটনি,জা*নো*য়া*রের চেয়েও অধম।
নিদিয়া রাগে বড় বড় শ্বাস ফেলে মনে মনে বলে উঠলো।

“কন্ট্রোল নিদু কন্ট্রোল এই বাড়ির মানুষ যে একেকটা ক্যারেক্টার লেস তা তোর ভালো করেই জানা আছে।তুই কিভাবে তোর মিশন কমপ্লিট করবি তা ভাব?এখানে আসার একমাত্র উদ্দেশ্যে হলো তোর প্রতিশোধ নেওয়া!(মনে মনে)

নিদিয়া মাথায় ঘোমটা দিলো।নিদিয়া যেই নির্ঝরের পাশে চেয়ার টেনে বসতে যাবে ঠিক তখনি মিসেস মৌমি কর্কশ কন্ঠে বলে উঠলেন।

” আমাদের বাড়ির নিয়ম নতুন বউরা তার বৌ-ভাতের দিন সকালে সবাইকে নিজ হাত খাবার বেড়ে দেয়!এটাই আমরা আদি-যুগ থেকে পালন করে আসছি!ঠিক তুমিও নতুন বউ হিসেবে এখন সবার প্লেটে খাবার দিয়ে, সবার শেষে খাবে!(কর্কশ গলায়)

নিদিয়া পারছেনা বুড়ির মুখে কচস্টেপ লাগিয়ে বৃন্দাবনে পাঠাতে।মিসেস কণা বিরক্তিত চোখে তার শ্বাশুড়ি মায়ের দিকে তাকাচ্ছে।

“বলি এই যুগে কি নতুন বউরা এইসব ক্ষ্যাতমার্কা নিয়ম কানুন পালন করে নাকি আজব আদিকালের‌ লোকজন যত্তসব!(মনে মনে)

” এই বুড়িরে আমি পারছিনা খাবারের মধ্যে ঠেসে ধরতে!বুঝছিনা রিভেন্জ টা কি আমি নিচ্ছি নাকি এই বুড়ি রিভেন্জ নিচ্ছে?যত্তসব চিপ টাইপ নিয়ম-কানুন!(মনে মনে)

নিদিয়া নিজের রাগকে কন্ট্রোল করে একে একে সবাইকে খেতে দিলো।
.
.
প্রায় আটটার দিকে ঘুম ভাংলো পূর্ণির। ঘুম থেকে উঠে আসে-পাশে তিথিকে না দেখতে পেয়ে কিঞ্চিৎ চমকালো পূর্ণি।নিজের পাশে তাকিয়ে দেখলো একটা কাগজ পড়ে আছে পূর্ণি কাগজটা তুলল।

“প্রিয় পূর্ণিআপু,,

আমার অফিসের জরুরি কাজ আছে তাই‌ আমি অফিস চলে যাচ্ছি।কিচেনে তোমার জন্য সামান্য খাবার বানিয়েছি খেয়ে নিও‌ আর ফ্রিজে ফল+দুধ এইসব ভিটামিন জড়িত জিনিস রাখা আছে খেয়ে নিও।সাবধানে থেকো‌‌ আমার ফিরতে হয়তো একটু দেরি হতে পারে সাবধানে থেকো!

ইতি,,
তিথি।

পূর্ণির কপালে ভাজ পড়লো।কাগজটা পাশে থেখেই বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়ালো। কাল থেকে এখানেই এই এক রুমেই ‌আছে সে।ফ্ল্যাট টা একটু ঘুড়ে দেখা দরকার।
পূর্ণি রুম থেকে বের হলো সব ঘুড়ে ঘুড়ে দেখতে লাগলো সে।
হঠাৎই পূর্ণি দেখতে দেখতে একটা রুমের সামনে চলে আসলো। সেখানে দেয়ালে টাঙানো বেশ কয়েকটা ছবি তার নজর কেড়ে নিলো।

তিথি একগাল হেসে দোলানার নিচে বসে আছে আর দোলনায় একটা ছেলেও একগাল হেসে তিথির বেনুণি করে দিচ্ছে।

পূর্ণি ভ্রু কুচকে আশেপাশে তাকালো এখানে আরও অনেক ছবি আছে সবগুলোর মধ্যে একটাকে সে মনোযোগ সহকারে তাকালো।

তিথি আর একটা ছেলে পাশাপাশি হেসে ক্যামরার দিকে তাকিয়ে আছে আর সামনেই চেয়ারে একজন বৃদ্ধ মহিলা ও একজন বৃদ্ধ লোক মুচকি হেসে ক্যামরার দিকে তাকিয়ে আছে।
দেখে মনে হচ্ছে একটা প্রানচ্ছ্বল পরিবার।
পূর্ণির মাথায় ঘুড়ছে যদি এইগুলো তার পরিবারের লোকজন হয় তাহলে তিথি একা কেনো থাকে?

পূর্ণি আর ভাবলো না সিধা কিচেন রুমের দিকে চলে আসলো।কিয়ৎক্ষণের মধ্যেই সে পুরো ফ্ল্যাট টাকে ঘুড়ে ঘুড়ে দেখেছে।ফ্ল্যাটটা বেশ বড়ো তবে এই এত বড় ফ্ল্যাটে তিথি একা কেনো,কিভাবে থাকে?
ভাবতে ভাবতে পূর্ণি হালকা-পাতলা কিছু খেয়ে নিলো। আজ প্রায় দু-তিন ধরে সে কিছুই খায়নি।

পূর্ণি রুমে চলে আসলো পুনরায়। এতক্ষণে ভালো করে খেয়াল করলো রুমটাকে।
রুমে একটা আলমারি,দুনজনের একটা সোফা,পড়ার টেবিল,বেড,ছোট্ট একটা বইয়ের তাক আর একটা ওয়ারড্রব। রুমটা বেশ গোছালো আর বড়।

পূর্ণি তিথির ওয়ারড্রবের দিকে তাকালো।কিছুক্ষণ ভেবে সেদিকে অগ্রসর হলো। ৩য় ওয়ারড্রব টা খুলল। সেখানে তিথির অনেক জামা কাপড় আছে তবে সব গুলো ভালো মতো গোছালো না অগোছালো ভাবে কোন মতো পেচিয়ে রেখে দেওয়া হয়েছে।
পূর্ণি সব গোছানোর জন্য কাপড়-চোপড় গুলো বের করতে লাগলো।

তার মধ্যেই একটা নিয়ন রঙের ডায়েরী তার‌ পায়ের পাশে ধুপ করে পড়লো। পূর্ণির কপালের ভাজ আরও দৃঢ় হলো।
কাপড়-গুলো বেডের মধ্যে রেখে ডায়েরীটা ফ্লোর থেকে তুলল।
ডায়েরীর মলাটে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা।

“অন্তিথির প্রেমকাহিনী”

পূর্ণি সব বাদ দিয়ে বেডে গিয়ে বসলো ডায়েরীটা নিয়ে।
যতবারই ডায়েরীটার দিকে নজর যাচ্ছে কৌতূহল তার বেড়েই চলেছে ক্রমশ।
কৌতূহল না দমিয়ে ডায়েরীটা খুলেই ফেলল পূর্ণি।
প্রথম পৃষ্ঠায় লেখা।

“আজ প্রথম দেখেছি তারে,,
“আমার প্রেমের তৃষ্ণার্থ শহুরে,,
~সঞ্চয়িনী

পৃষ্ঠাতে আর কিছুই লেখা নেই।এরপর পরের পদষ্ঠাতে আর কিছু লেখা নেই।পূর্ণির কৌতূহল যেনো ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরপর আঠারো পৃষ্ঠা উল্টানোর পর উনিশ পৃষ্ঠাতে তারিখ দিয়ে লেখা।

১২.০৩.২০২০

” আজ আমি আবার দেখেছি তারে,,,
“ঠিক আমার মনের প্রেমালয়ে,,,
~সঞ্চয়িনী

এইটুকুই লেখা আর কিছু লেখা নেই।
পূর্ণি পরের পৃষ্ঠাতে গেলো সেখানে‌ পরের দিনের তারিখ দিয়ে লেখা।

” আজকে তৃতীয় বারের মতো তার সাথে দেখা!বোধহয় ভালোটা আমিই প্রথম বেসে ফেলেছি!ইসস তার কি নেশাক্ত‌ হাসি,মায়াবী চাহনি যাতে আমি আসক্ত হয়েছি ভিষণ বাজে ভাবে আসক্ত হয়েছি।
“সে এক নেশাক্ত আসক্তি,,
” আমি যে তার প্রেমে তৃষ্ণার্থ প্রেয়সী,,
“নেশাক্ত তার হাসি-চাহনী,,
“তার প্রেমে আমি সম্মোহনী,,
~সঞ্চয়িনী।

পূর্ণির সির দ্বারা এক শীতল ঠান্ডা শিহরণ বয়ে গেলো।পূর্ণি আশফাঁস করতে করতে পরের পৃষ্ঠাতে গেলো।
পরের পৃষ্ঠাতে আর কিছুই লেখা নেই পরপর বাইশ পৃষ্ঠা উল্টানোর পর লিখা আছে।

০৪.০৪.২০২০

“আজকে প্রথম বুকে সাহস নিয়ে সপ্নকুমার কে ভালোবাসার কথা বলেই দিলাম!ভেবেছিলাম সে আমাকে না করে দিবে তবে আমাকে সম্পূর্ণ ভুল প্রমান করে আমায় অবাক করে দিয়ে আমার ভালোবাসাকে গ্রহন করে নিলো।তবে সবচেয়ে অবাক করা বিষয় সে নাকি আমাকে আরও‌ তিনমাস আগে থেকে ভালোবাসে।আমি অবাকের শেষশীর্ষে পৌঁছে গেছিলাম তবে সে সত্যটা খুলে বলে‌ আমাকে।আমাকে আমার ফ্রেন্ডের ভাইয়ের জন্মদিনে প্রথম দেখে আর তখনই‌ আমায় ভালোবেসে ফেলে।প্রতিদিন আমায় ফলো করে আমার সকল কাজ-কর্ম দেখেই প্রথম সে আমার সামনে আসে।
সেতো জানতো না তার সাথে প্রথম দেখাতেই মারাত্বক ভাবে তার নেশাক্ত প্রেমে আসক্ত হয়ে যাবো।

পূর্ণি পরের পৃষ্ঠাতে গেলো সেখানে কতশত একটা ছেলেকে নিয়ে প্রেমের লেখা রয়েছে।
ডায়েরীটার মাঝ খান পর্যন্ত এসে গেছে পূর্ণি।
একটা পৃষ্ঠা উল্টাতেই সেখানে একটা ছেলে আর তিথির বেশ কয়েকটা ছবি দেখতে পেলো।
ছেলেটা আর কেউ না ওই ছবিতে তিথির চুলে বেনুণি করে দিচ্ছিলো ওই ছেলেটাই।
পূর্ণি ছবি গুলো হাতে নিয়ে পাশে রেখে ভ্রু কুচঁকে পৃষ্ঠাটা পড়তে লাগলো

১৯.০৪.২০২০

আমি অন্তিক কে অনেক ভালোবাসি!এখন তো মনে হয় একটা মুহূর্তই তাকে না দেখে আমার চলবে না।তার প্রেমে আমি একদম পাগল হয়ে গেছি।আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি খুব শীঘ্রই অন্তিক আর আমার ভালোবাসার কথাটা মা,বাবা ভাইয়াকে বলে দিবো।আমাদের ভালোবাসার আরেকটা নাম দিবো তা হলো “পবিত্র বিবাহ বন্ধন” ।

পূর্ণি বুঝতে পারলো এটাই সেই অন্তিক যার কথা কাল রাতে তিথির ব্যালকনিতে বলেছিলো।তবে তিথি একা কেনো কথা বলছিলো তার কথার ধরণ ছিলচলবে,,নো অন্তিকের সাথে সে কথা বলছিলো। যদি অন্তিকের সাথে তিথির ভালোবাসার গভীর সম্পর্ক,বন্ধন থেকে থাকে আর এই ভালোবাসাটা যদি দু হাজার বিশের হয় তাহলে বর্তমানে অন্তিক কোথায়!
পূর্ণির আগ্রহ বাড়ছে। পরের পৃষ্ঠা উল্টাতেই পূর্ণির বুকে ধুক করে উঠলো। জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো সে।

#চলবে,,

[ রি-চেইক দেওয়া হয়নি।ভুল-ক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ]