পূর্ণিমা পর্ব-০৬

0
392

#পূর্ণিমা🍂
#পর্ব_৬
#Sanchita(Writer)

নদীর ধাড়ে নিশ্চুপ হয়ে দাড়িয়ে শব্দবিহীন কান্না করছে তিথি।কখনো ভাবেইনি এইরকম একটা মুহুর্তের মাঝে সে নিজেকে উপলব্ধি করবে। তিথি ভারসাম্যহীন ভাবে এক স্থানে সেই কুড়ি মিনিট ধরে দাড়িয়েই আছে।দূপুর গড়িয়ে বিকাল,বিকাল গড়িয়ে এখন সন্ধ্যা হতে লাগলো।
তিথির মস্তিষ্ক ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। নিজেকে এই পৃথিবীতে একা একা লাগছে। আচ্ছা তার তিথি নামক অধ্যায়টা কি অন্যরুপ নিতে পারতোনা! যেই মানুষ গুলোকে সে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবেসেছিলো। সেই মানুষ গুলোই তার ভালো থাকার স্নিগ্ধ ফুল টাকে জ্যান্ত পুঁতে দিয়েছে।
তিথি এবার ডুকরে কেদেঁ উঠলো। এখন সন্ধ্যা দ্রুত নেমে যাওয়াতে অনেকেই নদীর ধাড় থেকে নিজ গন্তব্যে চলে যাচ্ছে নিজের মতো করে। শুধু তারাই রয়ে গেছে যা পৃথিবীতে বাচাঁর সুন্দর আশা রেখেছিলো যাতে কারো কু-নজর পড়ে সেই‌ আশা টুকুকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিয়েছে। যাদের নিজের আপন জনই নিজের পিঠে ছুড়ি বসিয়েছিলো,যারা ভালোবেসে ঠকে গিয়েছিলো,মৃত্যুকে আপন করতে গিয়েও কোন মতে বেচেঁ আছে।
হ্যাঁ শুধু তারাই নদীর ধাড়ে বসে আছে।আর কিছুক্ষণ পর পর নদীর উথাল ঢেউয়ের সাথে সাথে নিজের দুঃখ দের এক করে মিশ্রিত করে দিচ্ছে।
তিথির পূর্ণির কথা মনে পড়লো মেয়েটা তো বাড়িতে একলা।
তিথি অশ্রুজল মুছে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
.
.
“নির্ঝর তোর হাত কাটঁলো কিভাবে?(চিন্তিত গলায়)

নির্ঝর মিসেস কণার প্রশ্নের প্রতিউত্তরে কিছু না বলে হনহন করতে করতে সিড়িঁ বেয়ে নিজের ঘরের দিকে যেতে লাগলো।
ড্রয়োংরুমে সবাই বসে ছিলো নির্ঝরকে ঘিড়ে। নির্ঝরের হাত কাটঁলো কিভাবে,কি হয়েছে?‌ইত্যাদি ইত্যাদি প্রশ্ন করেছিলো।
সবার মুখে চিন্তার রেশ থাকলেও ছিলোনা শুধু নিদিয়া মুখে।
তার মুখে কেমন একটা আলাদা বাঁকাকৃত হাসি ঝুলে ছিলো।

চোখে ছিলো এক ভয়ংকর প্রতিশোধের সূচনা।নিদিয়াও নির্ঝরের পিছু পিছু রুমে চলে গেলো।
এদিকে নির্ঝর রুমে গিয়েই ওয়াশরুমে ডুকে গেলো। আর নিদিয়া বাঁকা হাসতে হাসতে ব্যালকনিতে চলে গেলো।
ব্যালকনির রেলিং ঘেষেঁ ব্যাস্ত শহরকে দেখছে ঠোঁটে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে রেখে নিদিয়া।প্রতিশোধের সবেমাত্র সূচনা ঘটলো।

আজকে নিদিয়াই নির্ঝরকে রেস্টুরেন্টের ওয়াশরুমে এইরকম ভাবে কড়াঘাত করেছিলো। নিদিয়ার মনে প্রতি নিয়ত হিংস্রতা,ভয়ংকর প্রতিশোধের নেশা জেকেঁ বসছে।
নিদিয়া নির্ঝরকে শাস্তি,শেষ করতেই তার স্ত্রী হয়ে এবাড়িতে এসেছে।

নিদিয়া সেদিনের নির্ঝরের জঘন্য কাজগুলোর কথা ভাবছে।
.
.
নিজের চোখের সামনে নিজের প্রাণপ্রিয় ছোট বোনকে গণ ধ*র্ষ*ণ হতে দেখেছে নিদিয়া।কখনো কল্পনা করেনি নিজ চোখের সামনে নিজের কলিজার টুকরোকে জা*নো*য়া*র দের কাছে এভাবে সতিত্বহ*র*ণ হতে দেখতে হবে।নিদিয়ার পৃথিবী তখনি থমকে দাড়ালো,নড়ার সাহস টুকুও পাচ্ছেনা সে। হাত-পা অবশ হয়ে যাচ্ছে তার।ভেজা চোখে সব ঝাপসা দেখছে সে,মাথাটাও তার কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছে সাথে প্রচন্ড রকম ভাবে বুক কাঁপছে তার।
নিদিয়া আর কিছু ঠাওর না করতে পারলেও এতটুকু ঠাওর করতে পেরেছে আর নিজ কানে শুনেছে।

“একে আরও যন্ত্রণা দিবি,যাকে বলে মৃত্যুযন্ত্রণা আর শোন এর কিডনি,চোখ গুলোও নিয়ে নিবি ভালো দামে বিক্রি করতে পারবো আর সবশেষে এর লাশ টাক ড্রেনের সামনে ফেলে আসবি!(হাসতে হাসতে)

নিদিয়া স্পষ্ট দেখলো এটা আর কেউ না নির্ঝর।নিদিয়া চোখ মেলে রাখতে পারছেনা ওই নির্ঝরের মুখের বাক্য গুলো শুনে তার কান দুটো জ্বলে যাচ্ছে।
নিদিয়ার আর কিছুই দেখতে পারলোনা।
.
জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিস্কার করলো নিদিয়া।একজন বয়স্ক মহিলা তার পাশেই টুল পেতে চিন্তিত মুখে তার দিকে তাকিয়ে ছিলো।

” তুমি কি নিজের সর্বনাশ ঘটাতে ওই জায়গায় গিয়েছিলো!ওই জায়গায় কোন মেয়ে গেলে আর ফিরে বাচেঁনা গোও ওখানে থাকা কিছু নর-পশু বাচঁতে দেয়না।তুমি বেচেঁ গেছো তবুও ওই নিষ্পাপ মেয়েটা বাচঁলোনা!ওই নর-পশু গুলো তাকে মেরে ফেলল কিডনি,চোখ সব তুলে নিলো উ*ল*ঙ্গ অবস্থায় ড্রেনের সামনে ফেলে গেলো।এভাবে যে কত নিষ্পাপ মেয়ের জীবন নিয়েছে ওই নর-পশু গুলো তার হিসেব নেই?ভগবানের কাছে শুকরিয়া জানাও যে তোমার কিছুই হয়নি?(চিন্তির কন্ঠে)

বয়স্ক মহিলার কথা শুনে নিদিয়া পাথরে পরিণত হলো।তার দুনিয়া উলোট-পালোট হয়ে যেতে লাগলো।হঠাই নিজের দু-কান চেপে ধরে জোরে কেদেঁ উঠলো নিদিয়া।
নিদিয়ার এমন আচমকা কান্না করাতে ভরকে গেলো সেই বয়স্ক মহিলাটি। তিনি হন্তদন্ত হয়ে উঠলেন।

“আমার বোনকে মেরে ফেলেছে ওরা!আমি কি নিয়ে বাচঁবো এখন আমার রাত-দিন,প্রতিটাক্ষণ আমার বোন ছিলো।তাকে নিয়েই আমার এত সেক্রিফাইস করা,তাকে নিয়েপ আমার ছোট্ট পৃথিবী?আমাকে এভাবে একা করে দিলো।আমার বোনটাকে মেরে ফেলল ওরা আমি কিভাবে বাচঁবো এখন?(জোরে জোরে)

নিদিয়ার কথা শুনে বয়স্ক মহিলাটি হতবাক হয়ে গেলো।ওই মেয়েটা নিদিয়ার বোন ছিলো।তিনি হতবাক হয়ে নিদিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।এদিকে নিদিয়া সমানতালে পাগলামী করেই যাচ্ছে।একটা সময় নার্সরা সবাই মিলে নিদিয়াকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে শান্ত করলো।
বয়স্ক মহিলাটির কাছে এখন সব পরিস্কার হলো
মহিলাটি নির্বাক হয়ে নিদিয়ার মুখের দিকে চেয়ে আছে।মেয়েটাকে ঘুমন্ত অবস্থায় কতটা নিস্পাপ লাগছে।মিসেস রিতির নিদিয়ার প্রতি খুব মায়া লাগলো,মেয়েটা আজ নিজ চোখে তার বোনের সর্বনাশ দেখেছে।তিনি গভীর দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করলেন এমনি একদিন তার নিস্পাপ ছোট্ট পরিটাও তার চোখের সামনে ঠিি একই ভাবে ইজ্জত খুইয়ে ছিলো।
তার পরিটা তার সব মায়া,ভালোবাসা কাটিয়ে পৃথিবীর কিছু নর-পশুকে জিতিয়ে সেও চোখ বন্ধ করে নিজের নিশ্বাস ত্যাগ করেছিলো। চোখ-দুটো ভিজে উঠলো মিসেস রিতির।নিদিয়ার ঘুম ভাংগে যখন তখন সে আরেক দফা পাগলামী করে তবে তার সব পাগলামী থেমে যায় মিসেস রিতির কথা শুনে।
রিথির মতো তার মেয়েও এভাবেই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করার কথা শুনে।
মিসেস রিতির কেউ নেই তিনি একা বাড়িতে থাকেন।নিদিয়ারও পৃথিবীতে কেউ‌ নেই একমাত্র বোনই তার শেষ স্বম্বল ছিলো তবে এখন নিষ্ঠুর মানুষ নামে কলঙ্ক লোকগুলো তাকে নরক যন্ত্রণা দিয়ে মেরেছে
রিথির যন্ত্রণা গুলো যেনো নিদিয়ার হচ্ছে।
সেদিন থেকেই নিদিয়া মিসেস রিতির সাথে থাকে আর তখন থেকেই সে প্রতিশোধ নেওয়ার দহনে পুড়ছিলো।

বাস্তবে ফিরে এলো নিদিয়া আজকে নির্ঝরকে একটু হলেও আঘাত করে মনটা তার চরম প্রশান্তি পাচ্ছে।তবে এটুকুতেই তার প্রশান্তি মিলবে না যত ক্ষণ না নির্ঝরকে ভয়ংকর মৃত্যু না দিতে পারছে।এই বাড়ির প্রতিটা মানুষ নামক জা*নো*য়া*দের মৃত্যু যন্ত্রণা না দিচ্ছে ততক্ষণে নিদিয়ার ক্রোধ বেড়েই চলছে।

“তুমি অনেক গুলো মেয়ের জীবন নস্ট করেছো মি.নির্ঝর রায় চৌধুরি!তাদেরকে ধ*র্ষ*ণ করিয়েছো,চোখ-কিডনি সব তুলে নিয়েছো।সেগুলো পাচাঁর করে তুমি কোটি-কোটি টাকা বানিয়েছো,রাজমহল তৈরি করেছো নিজেকে এখন সুখি মনে করছো তাইনা।তোমার সুখের রাজমহলে আমি আগুন লাগিয়ে দিবো,এমন যন্ত্রণা দিবো না যাতে জমও তোমার চেহারা দেখলে ভয় পাবে!(রাগ জড়িত কন্ঠে)
.
.
রাত গভীর।
প্রতিদিনের মতো আজকেও অন্তিক তিথির সাথে আলাপণ করতে এসেছে।তিথি নিশ্চুপ চোখে অন্তিককে দেখছে।অন্তিক কে একবার ছুঁতে ইচ্ছে করছে তিথির।অন্তিকের সারা শরীর থেকে উজ্জল আলো বের হচ্ছে।
তিথি অন্তিকের দিকে হাত বাড়াতেই অন্তিক হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো।
তিথি হাত গুটিয়ে নিলো,অন্তিক আবারো এলো আর মুচকি হেসে বলে‌ উঠলো।

” আমাকে তুমি ছুঁতে পারবেনা তিথি!আমি‌ তোমাকে ধরা দিবোনা!আমিও তোমায় ছুঁতে পারবোনা!
কারন আমিতো‌ এখন শুধু মাত্র তোমার কল্পনা-ভ্রম।ভ্রমকে কখনো স্পর্শ করা যায়না!(একগাল হেসে)

তিথি সেই হাসির দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলো।অন্তিকের কথা জেনো তার অন্তরে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে,কেউ ছুঁড়ি দিয়ে যেনো তার হৃদয়ে কড়াঘাত করছে।
নিশ্বাস ভারি ভারি লাগছে তার।তিথির চোখ দিয়ে জল বেড়িয়ে আসতে লাগলো।কস্টগুলো জেনো দলা পাকিয়ে চোখের বৃষ্টি হিসেবে বেড়িয়ে আসছে।তিথি তার যথাযথ ভাবে আটকানোর চেস্টায় আছে তবে প্রতিবারের মতোই ব্যার্থ হচ্ছে।

“অন্তিক আমি আর পারছিনা!আমার বেচেঁ থাকা বড্ড দায় হয়ে পড়ছে;আমি তো তোমাকে আমার ভ্রমে চাইনি চেয়েছিলাম বাস্তবে?তবে নিয়তি কেনো তোমাকে আমার ভ্রম করে দিলো?আমি পারছিনা আর বেচেঁ, থাকতে নিশ্বাস নিতে!প্লিজ আমাকে তোমার সাথে নিয়ে চলো,আমি এই নোংরা,নিষ্ঠুর,চরিত্রহীন লোকদের মাঝে নিজেকে কল্পনা করতে পারছিনা।শান্তি চাই‌ আমি,শান্তি চাই আর কতদিন এভাবে আমি বেচে থাকবো!

#চলবে,,