প্রজাপতি উৎসব
#প্রেমের_গল্প #প্রজাপতি_উৎসব
পর্ব 20
আমি ফিলোসফি পড়ছি। কিন্তু ভেবে দেখলাম আমার জীবনে বড় কোন দর্শন নেই। এমনকি মানুষ হিসেবে আমি ভীষণ আটপৌরে। শিমুল তুলোর মত হাল্কা পল্কা শুভ্র আমার চাওয়া। আমি চাই কেউ আমাকে খুব ভালোবাসুক, আমার বিরহে কেউ ভীষণ কষ্ট পাক। আমি একদিন বাড়ি না থাকলে কেউ যত্ন করা টবের গাছগুলোয় পানি ঢেলে দিক, আমাকে খুশী করবার জন্য কোন রকমে আনাড়ি হাতে ঘরটা গুছিয়ে রাখুক, বাহাদুরি করে ডাল বাগাড় দিতে গিয়ে কড়াইয়ের কোণা লেগে হাত পুড়াক, আমি কষ্ট পাবো দেখে সেই পোড়া দাগ শার্টের হাতা দিয়ে ঢেকে রাখুক।
এমন কেউ এলে তার বিনিময়ে আমি সমস্ত জীবন দিতে রাজি আছি। টিটু ভাই কি সেই মানুষ? আমার তো এখন তাই মনে হচ্ছে। আবার কখনো মনে হয় যতই আবেগ দেখাক, সংসারের মন্দ্রসপ্তকে বিহবল হবার মানুষ টিটু ভাই না। টিটু ভাইয়ের যে কোন কাজে উদ্দেশ্যই হলো সমাজ বিপ্লবের সৈন্য নিয়োগ। সংসারের লোভ দেখিয়ে কাছে টেনে প্রিয়তমাকেও উনি শ্রমিক শ্রেণীর মুক্তির সৈনিকে রূপান্তর করবেন। তবু টিটু ভাইয়ের মনের ছায়া আমার মনকে শান্ত করে।
আজ ভেবে দেখলাম রঞ্জনের কাছে আমি কখনো শান্তি চাইনি, চেয়েছি মোহময় উত্তেজনার উদ্বেল স্রোত। রঞ্জনের ঈশান কোন থেকে মত্ত বাসনার মোহমেঘ এসে আঁধারে ঢেকে দিয়েছে আমার সব বাছবিচার। কী এক নিষিদ্ধ আকর্ষণ আমাকে টেনে নিতে চাচ্ছে রঞ্জনের বলিষ্ঠ বাহুর দিকে। টিটু ভাইকে ভালোবেসেও রঞ্জনকে আমি না বলতে পারছি না। রঞ্জনের ধোঁয়াশার চুম্বকে আমার মন লোহার গুঁড়োর মত লেপটে যাচ্ছে। নিজেকে নিজেই বুঝ দিচ্ছি, রঞ্জনকে কথা দিয়ে কীভাবে এখন সরে দাঁড়াই?
কিন্তু সত্য হলো মোহ এমন এক সর্বনাশা জল, ডুব না দিলে ও থেকে মুক্তি মেলে না। আগুন ভয়ংকর জেনেও পতঙ্গ তাই নিষ্ঠুর আগুনের দিকেই ধায়। কিন্তু বিয়ে না করে রঞ্জনের স্রোতে আমি কোনভাবেই গা ভাসবো না।
আমার মনে যে এত ঝড় বইছে তা একমাত্র অতন্দ্রিলা জানে। গাঁজায় টান দিতে দিতে অতন্দ্রিলা বললো,
-আমি আগেও বলেছি, এখনো বলছি, তোর এই রঞ্জনটা একটা খেলারাম, প্লেবয়। এদের আমার ভালোমত চেনা আছে। এরা হলো হাড্ডচেড়া শয়তান। তোকে বিয়ে করার কদিন পর দেখবি এত মেয়ে নিয়ে লোফালুফি করছে, তোর জীবনটাই ছারখার হয়ে যাবে।
-তাহলে তুই বলছিস টিটু ভাইকে হ্যাঁ বলতে?
-সে তোর ইচ্ছে, কিন্তু টিটু ভাইয়ের অন্য সমস্যা।
-কী সমস্যা?
-টিটু ভাই একটু টিচারমার্কা।
-মানে?
-মানে বিয়ের পর ওনার ভালো ভালো উপদেশের ঠ্যালায় বাঁচবি না। দেবতার সাথে কি ঘর করা যায়?
-তাহলে কী বলছিস?
-একদম সাধারণ মানুষ খুঁজে বের কর, যার সঙ্গে দিন আনবি আর দিন খাবি।
-কী বলছিস?
-সংসারের তেল ভরবি আর চালাবি।
আমি হেসে বললাম,
-সংসার একটা মোটর সাইকেল নাকি যে তেল ভরবো আর চালাবো?
অতন্দ্রিলা গাঁজার ঘোরে মেঝেতে শুয়ে পড়ে বললো,
-হ্যাঁ সোনামণি, সংসার একটা মোটর সাইকেল, যন্ত্রণার দ্বিচক্রযান। আমি সেই মোটর সাইকেলে জীবনেও চড়বো না। আই হেইট মেন।
পরদিন দুপুরে বাবার ঠিক করা ছেলের সঙ্গে দেখা করতে টিএসসির ক্যাফেটেরিয়ায় এলাম। ছাত্রদের ভিড়ের মাঝে কর্পোরেটের মত দামী ফর্মাল পোশাক পরা একটা ছেলেই বসে আছে। তাই চিনতে অসুবিধা হলো না। ছেলেটার নাম মোহন, একটা বড় মোবাইল ফোন কোম্পানির অ্যাকাউনট্যান্ট। আমি কাছে যেতেই মোহন উঠে দাঁড়িয়ে আমার চেয়ারটা টেনে ধরলো। আমি বসতেই সেও চেয়ারে বসে বললো,
-আপনার বাবা বললেন আপনি এখানে ছাড়া আর কোথাও দেখা করবেন না।
-জি আব্বু ঠিকই বলেছেন।
-তা না হলে আপনাকে ভালো কোন রেস্টুরেন্টে ইনভাইট করতাম।
-আমি এখানেই বেশী আরাম পাই, অন্য কোথাও গেলে আমার নার্ভাস লাগে।
-আমার সম্পর্কে আপনার কিছু জানবার আছে?
-জি।
-বলুন।
-আমাকে আপনি কোথায় দেখেছেন?
-এখানেই, আমি ছুটির দিনে প্রায়ই আসি। আপনাকে বেশ কবার দেখেছি।
-আর দেখেই ভালো লেগে গেছে।
-ভালো লাগলে এক দেখাতেই লাগে, না লাগলে একশ বার দেখলেও লাগে না।
-আমি একটা ছেলেকে পছন্দ করি। না, একটা না, দুটো ছেলেকে পছন্দ করি।
-একটা শুনে ভয় পেয়েছিলাম, দুটো শুনে আশ্বস্ত হলাম।
-মানে?
-মানে আপনি টানাপড়েনে আছেন আর আমি সময় মতই প্রস্তাব পাঠিয়েছি।
মোহন সাহেবের কথায় আমার হাসি চলে এলো। উনিও হেসে ফেললেন, হাসলে ওনাকে মিষ্টি লাগে। কিন্তু তাতে আমার কী? আমি বললাম,
-আপনি ভুল বলেননি, আমি টানপড়েনে আছি, এর মাঝে তৃতীয় আরেকটা ঝামেলায় জড়াতে চাচ্ছি না।
-আমি তো এখুনি কোন সিদ্ধান্ত চাচ্ছি না। আপনি ঠান্ডা মাথায় ভাবুন, ভেবে সিদ্ধান্ত নিন। শুধু এটুকু জানিয়ে রাখছি, আমি আপনাদের পাশে আছি।
-পাশে আছেন মানে?
-আপনার আম্মুর শরীর ভালো যাচ্ছে না, ওনাকে শুধু ডাক্তার দেখালেই হবে না, নার্সিং প্রয়োজন। আমি সেটার ব্যবস্থা করছি। আপনার সঙ্গে আমার সম্পর্ক হোক না হোক, এটা আমি করবো।
আমি অবাক হয়ে বললাম,
-কী বলছেন? আপনি কেন করবেন?
-আসলে আপনাদের বাসায় দু তিবার গিয়েছি। আমার মা নেই, মানে সৎ মা আছেন। আর আমার বাবা প্যারালাইজড। আপনার মা দেখতে অনেকটা আমার আসল মায়ের মত। একটা মায়ার টানে পড়ে গেছি।
আমি সামান্য আবেগাক্রান্ত হয়ে বললাম,
-আসলে সেটা আপনার ব্যাপার। এখন বলুন আমাকে কেন আপনার ভালো লেগেছে।
-ওই যে বললাম প্রথম দেখায় ভালো লেগে গেছে কারণ ছাড়াই। তারপর খোঁজখবর করলাম, সবাই আপনার প্রশংসা করলো, বললো আপনি খুব শক্ত চরিত্রের মানুষ।
-দেখুন আব্বু চাপ দিচ্ছেন আম্মুর স্মৃতি হারিয়ে ফেলবার আগেই যেন বিয়ে করি। আব্বুকে খুশী করবার জন্যই আপনার সঙ্গে দেখা করলাম। এটাকে অনুগ্রহ করে পজিটিভলি নেবেন না।
-আমি আপনার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকবো।
মোহন সাহেব চলে যাবার পর ভাবলাম, এই লোকটা অন্যরকম। এর চেহেরায় রঞ্জনের মত একটা ক্যারিশমা আছে, অন্যদিকে কথাবার্তায় মনে হলো টিটুর মত মানবিক উদারতাও এর চরিত্রের অংশ।
আমাদের পরিবারে হঠাৎ একটা বিপর্যয় নেমে এসেছে। আব্বু যেভাবে চাপ দিচ্ছেন, শেষ পর্যন্ত আমাকে কী করতে হয় কে জানে।
(চলবে,)
প্রজাপতি উৎসব
#প্রেমের_গল্প #প্রজাপতি_উৎসব
পর্ব ২১
কাল অনেকদিন পর মিতি ফেসবুকে স্ট্যাটাস পোস্ট করেছে
এক সপ্তাহ হলো উপসালায় পৌঁছেছি। ক্লাস আরম্ভ হয়ে গেছে। উপসালা যেন রূপশালা, পুরো শহরটা ছবির মত সাজানো।
স্ট্যাটাসের নীচে মিতি একটা ছবি দিয়েছে। ও একটা ব্রীজের উপর দাঁড়িয়ে আছে। ব্রীজের নীচ দিয়ে নর্দমার মত সরু কিন্তু সুন্দর একটা নদী বয়ে যাচ্ছে। মিতি নীল জিন্স আর লাল সোয়াটার পরেছে। ওর খোলা চুল বাতাসে উড়ছে। মিতিকে আগের চেয়ে নির্ভার লাগছে।
আমি স্ট্যাটাসের নীচে লাভ রিয়েক্ট দিয়ে লিখলাম, আমি বর দিনু দেবী তুমি সুখী হবে, ভুলে যাবে সর্বগ্লানি বিপুল গৌরবে।
একটু আগে টিটু ভাই একটা ইমেইল করেছে,
প্রিয় রূপা,
রাশিয়া ইউক্রেইন আক্রমণ করেছে। কাজটা নিঃসন্দেহে ভুল।
কিন্তু ঘাড়ের কাছে ন্যাটোর নিঃশ্বাস ফেলা বন্ধের জন্য রাশিয়ার আর কোন উপায় ছিল কি? আমি জানি না।
ইউক্রেইন অনেক দিক থেকে ইউরোপ এবং পৃথিবীর শীর্ষে। ইউরেনিয়াম উৎপাদনে ওরা ইউরোপের এক নম্বর। অ্যামোনিয়া উৎপাদনেও তাই। লোহার এবং ম্যাঙ্গানিজ খনির রিজার্ভে ওরা পৃথিবীতে দ্বিতীয়। সূর্যমুখী তেল উৎপাদনে ওরা পৃথিবীর এক নম্বর, বার্লি উৎপাদনে পৃথিবীতে দুই নম্বর, পারদ উৎপাদনেও তাই।নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট রফতানিতে ওরা পৃথিবীতে চার নম্বর।
ওদের এত এত সম্পদের দিকে নিঃসন্দেহে পশ্চিমাদের নজর ছিল কারণ লোভই ওদের অর্থনীতির চালিকাশক্তি। ওরা বলে গ্রিড ইজ গুড।
কিন্তু ইউরেনিয়াম, অ্যামোনিয়া আর সূর্যমুখী তেল দিয়ে কী হবে যদি তোমাকেই না পেলাম এ জীবনে?
ইতি
রূপামুখী টিটু
চিঠি পড়ে বুঝলাম টিটু ভাইও আমার মতই দোদুল্যমান, একবার ভাবছেন দূরে থাকাই ভালো, আবার আমাকে প্রচন্ডভাবে মিস করছেন। কিন্তু আমার সব সিদ্ধান্তের চালিকাশক্তি এখন আম্মুর অসুস্থতা। টিটু ভাই সবে পিএইচডি সেকেন্ড ইয়ারে। রাশিয়া এমন কোন স্কলারশিপও দেয় না যা দিয়ে ছাতজীবনে সংসার চালানো যাবে। কোন দায়িত্বের কথা বলে টিটু ভাইকে আমি বিব্রত করতে চাই না।
আম্মুর শরীর আগেই খারাপ ছিল, সব কিছুতে সন্দেহ করতো। ডিমেনশিয়ার লক্ষণ দেখা দেবার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। ডাক্তার বলেছে আর্লি স্টেজ ডিমেনশিয়ায় বাসায় কেইয়ারটেকার রেখে ম্যানেজ করা যাবে। কিন্তু ধীরে ধীরে ডিমেনশিয়া খারাপের দিকে যাবে। আম্মু কথা কম বলবে, খাবার খেতে সমস্যা হবে, ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে প্রায়ই ইনফেকশনে আক্রান্ত হবে। যে কোন সময় নিউমোনিয়া বেঁধে গেলে জান নিয়ে টানাটানি। এরকম অবস্থায় মাকে ঘরে রাখা যাবে না, তখন কোন ক্লিনিকে ভর্তি করতে হবে। মোহন বাসায় নার্সের ব্যবস্থা করেছে, যে কোন সময় হাসপাতালে নিতে হলে সেটাও সে করবে। মোহন আব্বুকে বলেছে, রুপার মা’কে আমার নিজের মা’র মত লাগে। আপনার মেয়ে আমাকে বিয়ে না করলেও আমি ওনার সেবা করে যাবো।
কাল লাঞ্চ ব্রেকে ক্যাফেটেরিয়া বসে রঞ্জনকে মার কথা বললাম। সব শুনে রঞ্জন বললো,
-তোমার আম্মু তো মনে হচ্ছে মরেই যাবে।
-এভাবে বলছো কেন? ইট সাউন্ডস রুড। কিন্তু আব্বু চাইছেন আম্মু সব কিছু ভুলে যাবার আগে আমি যেন বিয়ে সেরে ফেলি। আম্মু অন্তত আমার বিয়েটা স্মৃতি থাকতে দেখে যাবে।
রঞ্জন আমার মরিয়া ভাব আঁচ করে বললো,
-রুপামনি, এতদিন যা বলেছ শুনেছি। এখন আমি একটা কথা বলতে চাই।
-কী কথা?
-আমি তোমাকে ভালোবাসি সত্য, এর উপরে বা নীচে কোন সত্য নাই।
-জানি, তো কে হলো?
-কিন্তু স্যাম্পল টেস্ট না করে তো আমি মাল খরিদ করবো না।
-বুঝিনি, মাল খরিদ মানে?
এই প্রথম রঞ্জনের অন্য একটা রূপ প্রকাশ পেলো, রঞ্জন বিশ্রী হাসি দিয়ে বললো,
-সারা জীবন যার সঙ্গে এক বিছানায় শুতে হবে, সে বিছানায় কেমন তা আগে জেনে না নিলে চলবে? স্যাম্পল টেস্ট করতে হবে না?
-কী বললে?
-প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড । আমি ফিজিক্সের ছাত্র, বুঝতেই পারছো আমার কথার বৈজ্ঞানিক যুক্তি আছে।
আমার কান গরম হয়ে গেলো, আজ আমি বিপদে পড়েছি দেখে রঞ্জনের লোলুপ চেহারা বেরিয়ে গেছে। কোন রাখঢাকেরও প্রয়োজন বোধ করেনি। হয়তো এতদিন ধরে সে এরকম একটা ভঙ্গুর মুহূর্তের অপেক্ষায় ছিল। আমার চোখমুখ লাল করে উঠে দাঁড়িয়ে বললাম,
-আমি এতদিন বুঝতে পারিনি কেমন ছেলের সাথে মিশছি। একটু আভাস পেলেও নিজেকে বুঝিয়েছি এটা আমার ভাবার ভুল, মানুষকে অবিশ্বাস করতে নেই।
-হোয়াটেভার।
-তুমি আর কোনদিন আমার সঙ্গে কথা বলবে না।
আমি গটগট করে হেঁটে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে এলাম। রঞ্জন পেছন থেকে চিৎকার করে বললো,
-আরে পাগল নাকি, আমি তো জাস্ট জোক করেছি।
কিন্তু আমি জানি রঞ্জনের সঙ্গে আমার বন্ধন ছিঁড়ে গেছে। এরকম একটা নোংরা ছেলেকে কীভাবে এতদিন সহ্য করলাম? নিজের উপরেই রাগ লাগছে। আমি বাইরে বেরিয়েই উত্তেজিতভাবে আব্বুকে ফোন করে বললাম,
-আব্বু, তোমার ওই ছেলের সঙ্গে আমার দুবার কথা হয়েছে।
-কোন ছেলে? মোহন?
-নয় তো কে?
আব্বু নার্ভাস কন্ঠে বললেন,
-তো কী মনে হলো? আমি কিন্তু তোকে কোন চাপ দিচ্ছি না।
-আমি ওই ছেলেকে বিয়ে করবো । তুমি জানিয়ে দাও।
আব্বু একটু চুপ করে রইলেন, মনে হয় খুশী চাপার চেষ্টা করছেন, তারপর বললেন,
-তাহলে তো আমাদের সবার জন্য খুব ভালো হয়। এস্টাব্লিশড ছেলে, ঢাকায় বাড়ি আছে, কাল সিভি দিয়ে গেছে, খুব রিচ প্রোফাইল, সিএ পড়তে বিদেশ যাবে নাকি কয়েক বছর পর। তুইও যাবি।
বাবার সঙ্গে কথা শেষ করে আমি ক্লাসে গেলাম। কুদ্দুস স্যারের লেকচার। মিলি প্রেগ্ন্যান্সির শেষ স্টেজে, বেঢপ পেট নিয়ে ক্লাসে করছে। আমি মিলিকে আস্তে করে বললাম, হাজবেন্ডের ক্লাস তো না করলেও চলে। মিলি বললো, ওর এই রূপটা আমার সবচেয়ে ভালো লাগে। কুদ্দুস স্যারকে দেখে মনে হয় ওনার মত সুখী মানুষ আর নেই। অথচ কুদ্দুস স্যারকে নিয়ে আমরা কত হাসাহাসি করেছি।
লেকচার শুরুর একটু আগে কোত্থেকে রঞ্জন এসে আমার পাশে বসলো। পুরো লেকচারের সময়টা আমার অস্বস্তিতে কাটলো। লেকচার শেষে আমি রঞ্জনকে দেখেও না দেখার ভাণ করে তাড়াতাড়ি ক্লাস থেকে বেরিয়ে এলাম। রঞ্জন পেছনে পেছন এসে বললো,
-রূপা, এতদিন আমাকে ঘুরিয়ে এখন হুট করে সরে যেতে পারবে না। এত সোজা না।
আমি বললাম,
-কেন, কী করবে?
-তুমি আমার আসল চেহারা দেখোই নাই।সোজা হল থেকে উঠিয়ে নিয়ে যাবো।
আমি আহত স্বরে বললাম,
-কী বলছো এসব। আর ইউ ক্রেজি।
রঞ্জন সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
-স্যরি, স্যরি, আমি উত্তেজিত হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু তুমি আমাকে ডাম্প করতে পারো না, কেই কখনো আমাকে ডাম্প করেনি, আমিই ওদের ডাম্প করেছি।
-ওহ, তাহলে তোমার আরও অনেকে ছিল?
-আমার মত একটা হ্যান্ডসাম পেছনে কত মেয়ে ঘুরে তুমি জানো?
-তাহলে ওই মেয়েদের থেকে কাউকে বেছে নাও।
হৈচৈ শুনে আরও দুজন ক্লাসমেট আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। অবস্থা খারাপ হবার আগেই রঞ্জন আমাদের ডিপার্টমেন্ট ছেড়ে চলে গেলো।
অতন্দ্রিলা জটলা দেখে আমার কাছে এসে বললো,
-কী হয়েছে? রঞ্জনকে হৈচৈ করতে শুনলাম।
-হুম, ও চেঞ্জ হয়ে গেছে।
-শয়তানটা মুখোশ খুলেছে?
-হ্যাঁ।
-তুই একটা বাচ্চাই রয়ে গেলি। আমি তো ওর চোখ দেখেই বুঝেছি ও একটা এক নম্বর হারামি। শুধু তোর ইমোশনের কথা ভেবে বেশী কিছু বলতে পারিনি। ব্রেকআপ করে ফেলেছিস?
-হুম।
-বড় বাঁচা বাঁচলি। এখন কী করবি?
-মোহনকে বিয়ে করবো।
অতন্দ্রিলা অবাক হয়ে বললো,
-মোহন আবার কে?
(চলবে,)