প্রণয় পর্ব-২৭+২৮

0
223

#প্রণয়
#পর্বঃ২৭
#তনিশা সুলতানা

হুর তোলা রিকশায় পাশাপাশি বসে আছে তানহা সূচক। কি দারুণ একটা মুহুর্ত। চারপাশে বিকেলের ফুরফুরে বাতাস বইছে। সেই বাতাস ছুঁয়ে দিচ্ছে দুজনকেই। রাস্তায় কতোশত কাপল দেখা যাচ্ছে।
সূচক এক মনে ফোন দেখে যাচ্ছে। ব্যাপারটা একদম ভালো লাগলো না তানহার। ফোন কেনো দেখবে?
তানহার সাথে কথা বলবে। তানহার গা ঘেসে বসবে। কাঁধের ওপর দিয়ে হাত দেবে। মুহুর্তটা অনুভব করবে।

তা না?

মনে মনে রেগে যায় তানহা। সূচকের থেকে একটু দুরে গিয়ে একদম কিনারা ঘেসে বসে। মুখটা রাস্তার দিকে ঘুরিয়ে নেয়। কথাও বলবে না এই লোকটার সাথে। আস্ত একটা হনুমান লোকটা।

রাস্তা উঁচু নিচু হওয়াতে রিকশা ঝাঁকি দিয়ে ওঠে তানহা পরে যেতে নেয়। সূচক ফোনের দিকে চোখ রেখেই তানহার সামনে দিয়ে হাতটা নিয়ে রিকশার হুর ধরে। তানহা সূচকের হাতের সাথে বাঁধা পড়ে পড়ে না।

চোখ দুটো বড় বড় হয়ে যায় তানহার। দেখছে ফোন মনোযোগটা তানহার দিকে? কি করে পারে লোকটা? ম্যাজিক ট্যাজিক জানে না কি?

তানহা মুখ বাঁকিয়ে সূচকের থেকে চোখ সরিয়ে নেয়।

“হাত সরান।

মুখ বাঁকিয়ে বলে তানহা।
সূচক সাথে সাথে হাত সরিয়ে নেয়।

” মামা আস্তে রাস্তা দেখে চালান। আমাদের তাড়াহুড়ো নেই। আর আপনাকে একশত টাকা বেশিই দেবো।

মুচকি হেসে বলে সূচক। তারপর আবার ফোন দেখতে থাকে। একদম গায়ে লাগে তানহার। এই লোকটা তো রীতিমতো ইগনোর করছে ওকে। এই ইগনোর মেনে নিতে পারছে না।
কেনো ইগনোর করবে? তানহা তো ওনার গার্লফ্রেন্ড না। বউ হয়। ভুলে যায় না কি?
ভুলে গেলে যাক। তানহা মনে করিয়ে দেবে না। আর কথাও বলবে না। আসার সময় তোহার সাথে আসবে।

“দেখতো কোনটা পছন্দ হয়?

সূচক তানহার সামনে ফোন এগিয়ে দিয়ে বলে। তানহা আড়চোখে এক পলক তাকায় ফোনের দিকে। সাথে সাথে চোখ দুটো বড়বড় হয়ে যায়। নাক ফুল দেখাচ্ছে সূচক।

” আমি এটা চুজ করছি।

ছোট একটা নাক ফুল দেখিয়ে বলে সূচক। আসলেও নাক ফুলটা সুন্দর। একদম ছোট। নাকে পড়লে দুরে থেকে কারো চোখে পড়বে না।
তাহলে সাহেব এতখন এইসবই করছিলো মনোযোগ দিয়ে?

“হুমম ভালো।

ছোট করে বলে তানহা।

” হুমম হতেই হবে।
আর এই আংটিটা দেখ?

এবার একটা আংটি দেখিয়ে বলে। আংটিটাও সুন্দর।

“হুমম ভালোই।

” ভালো না হলেও এটাই পড়তে হবে। কারণ এতোখনে অর্ডার কনফার্ম হয়ে গেছে।

বলতে বলতে ফোনটা পকেটে পুরে নেয় সূচক। এবার সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে তানহার দিকে তাকায়। একদম মিশে বসেছে তানহার সাথে।
তানহার অস্বস্তিতে পড়ে যায়। এতোখন মনে মনে এটা চাইলেও এখন নিতে পারছে না। এভাবে কেউ তাকিয়ে থাকে?
এভাবে চিপে বসলে রাস্তার লোকজনই বা কি ভাববে?
কিন্তু এতখন এসব মাথায় আসে নি কেনো?

তানহা মাথা নিচু করে এদিক সেদিক মাথা ঘোরাচ্ছে। ঘনঘন ঢোক গিলছে।

“কি হলো? হাওয়া ফুসসসস?
এতোখন তো খুব চাইছিলি। এখন কি হলো?

তানহার কোমরে হাত রেখে আটও একটু চিপে বসে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে সূচক। তানহা বুকের ভেতরে কেউ হাতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছে এমন শব্দ হচ্ছে। চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে।

” প্লিজ একটু সরে বসুন
সসবাই দেখছে

তানহা থেমে থেমে বলে।
সূচক তানহার মুখের ফু দিয়ে একটু সরে বসে। কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে নেয়।

“রোমান্স করার জন্য অনেক জায়গা আছে। এই রিকশায় বসে রাস্তায় শতশত মানুষদের মাঝে রোমাঞ্চ করা টা ঠিক নয় বলে আমি মনে করি।

তানহার হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় পুরে নিয়ে বলে সূচক।

” আপনি আবার রোমাঞ্চের কিছু বোঝেন না কি?

তানহা বিরবির করে বলে। সূচক ওর দিকে তাকাতেই

“বলছিলাম জায়গাটা সুন্দর।

একটু হাসার চেষ্টা করে বলে সূচক।

” বাড়ি ফিরি তারপর বোঝাবো।

🥀🥀
তোহা ইমনের পাশে বসে একদম অনইজি ফিল করছে। ভাইয়ের প্রতি ভীষণ রাগ হচ্ছে। বলতে তো পারতো বৃষ্টি বা বিহানের সাথে আসতে।
অবশ্য বলবেই বা কি করে? বৃষ্টি আর বিহানকে বিশ্বাস করতে পারে না সূচক। ওর মনে হয়েছে ইমনই সেভ তোহার জন্য। সূচক চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করে ইমনকে।

তবে অবাক করা বিষয় হচ্ছে ইমন একদম অসব্ভতামী করছে না তোহার সাথে।
শান্ত হয়ে এক পাশ ঘেসে বসে আছে। একটা কথা পর্যন্ত বলে নি। এতে মনে মনে ভীষণ খুশি হয়েছে তোহা। এখানে খারাপ কিছু করলে একদম সূচকের কাছে নালিশ দিতো তোহা। মনে মনে ভেবে ফেলেছিলো।

🥀🥀

সমুদ্রের পাড়ে এসে রিকশা থামে। তানহা বড়বড় চোখ করে চারপাশটা দেখছে। এতে সুন্দর জায়গা আগে কখনো দেখেনি ও। বিশাল সমুদ্র। বড়বড় ঢেউ আসছে একটু পর পর।

সূচক প্রথমে নেমে তারপর তানহার হাত ধরে নামিয়ে দেয়।
পরপর ওদের রিকশাও এসে থামে।
সূচক তোহাদের রিকশার কাছে যায়। তোহার হাত ধরে ওকে নামিয়ে দেয়।

“আমাকেও নামিয়ে দাও

বৃষ্টি হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে।

” বিহান বোনকে নামতে সাহায্য করো।

সূচক মুচকি হেসে বলে। বিহান থমথমে খেয়ে যায়। ও তো আগেই বৃষ্টিকে নামতে সাহায্য করতে গেছিলো। কিন্তু বৃষ্টি নামে নি।
বিহান কাচুমাচু হয়ে আবার বৃষ্টির দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়। বৃষ্টি হাত না ধরে নিজেই নেমে পড়ে।

ইমন ফোন কানে দিয়ে সমুদ্রের একদম কাছে চলে যায়। পানিতে পা ভিজিয়ে হাঁটছে আর কথা বলছে।

“তোহা চল ইমন ভাইয়ার সাথে হাঁটি।

তানহা তোহার হাত ধরে টেনে ইমনের কাছে চলে যায়। সূচক ভাড়া মেটাচ্ছে।
ওদের দেখে সূচক কান থেকে ফোন নামিয়ে নেয়। পাড়ে জুতো খুলে রেখেছে ওরা।
সূচকও ওদের দেখাদেখি জুতো খুলে ওদের কাছে যায়। যাওয়ার আগে বৃষ্টিকে বলছিলো যেতে। বৃষ্টি যাবে না। বিহান এসেছে সূচকের সাথে।

পাশাপাশি হাঁটছে সূচক তানহা।

” হেই তোহা

তোহা আগে আগে হাঁট ছিলো। ইমনের ডাকে থামে।
ইমন বড়বড় পা ফেলে তোহার পাশাপাশি হয়।

“বিয়ে করবে আমায়?

ইমনের কথায় ভ্রু কুচকে ইমনের দিকে তাকায় তোহা। কি বললো বুঝতে কয়েক সেকেন্ড সময় লেগে যায়।

” এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?
লিসেন আমি জানি তুমি আমায় পছন্দ করো। তো বিয়ে করতে পবলেম কোথায়? বিয়ে করে নিলে পবলেম সলভ।

ইমন বলে। তোহার ইচ্ছে করছে ইমনকে ঠাটিয়ে একটা থাপ্পড় মারতে। কিন্তু সেটা করলে খারাপ দেখায়।

তাই কোনো কথা না বলে বড়বড় পা ফেলে সূচকের পাশে চলে যায়।
সূচক বাম হাতে তোহার হাত ধরে আছে ডান হাতে তোহার হাত ধরে পায়ের পাতা পর্যন্ত পানিতে হাঁটছে।
দারুণ লাগছে ওদের।

ইমনের ডিএসএলআর ক্যামেরা আছে। সেটা ও নিয়েও এসেছে।
সূচক ওর থেকে ক্যামেরা নিয়ে তানহা আর তোহার কিছু পিক তুলে দেয়। তারপর তোহা তানহা আর সূচকের কিছু পিক তুলে দেয়।

বৃষ্টি পাড়ে দাঁড়িয়ে দেখছে ওদের। স্বাভাবিক ব্যবহার করলে বৃষ্টিও পারতো ওদের সাথে মিশতে।
বিহান বৃষ্টির পাশে দাঁড়িয়ে আছে। ইমন একটা খেজুর গাছের গোঁড়ার ওপর বসে আছে।

ঘুরাঘুরি করতে করতে সন্ধা লেগে যায়। সূচক ভেবে রেখেছে আজকে নানা বাড়ি ফিরবে না। ইমনদের ওই বাড়িতে গিয়ে থাকবে। এটা শুনে তানহা ভীষণ খুশি হয়। ওই বাড়িতে একদম যেতে ইচ্ছে করে না ওর। বড়মাও কেমন করে তাকায় ওর দিকে।

বৃষ্টি যাবে না ওদের সাথে। তাই বাধ্য হয়ে বিহান বৃষ্টিক নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়। আর ওরা চারজন চলে যায় ইমনের বাড়িতে।
খাবার না কিনে চাল ডাল মাংশ আর মশলাপাতি কিনে নিয়ে যায়। আজকে নিজে হাতে রান্না করে খাবে ওরা।

তোহা আর তানহাকে রান্না শেখাবে সূচক। তানহার খুশি বেরে যায়। তোহাও খুশি হয়। রান্না শিখবে চারটিখানি কথা?

সমুদ্রের পার থেকে ওই বাড়িতে যেতে দশ মিনিট সময় লাগে।
ওদের বাড়ি পৌঁছে দিয়ে সূচক বের হয়।

তানহা তোহার আর ইমন সবজি কাটতে থাকে। ইমন আর তানহা গল্প করছে। তোহা চুপচাপ মশল বাটছে।

একটু পরে সূচক চলে আসে। ওদের জন্য জামা নিয়ে এসেছে। আর সাথে একটা মেয়ে। মেয়েটা হলো সূচক ইমনের ফ্রেন্ড সাবিহা। এখানেই বাড়ি ওদের। ওদের সাথে আড্ডা দেবে বলে এসেছে। সূচক ওদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় সাবিহার।

“তানহা একটু রুমে আয়।

তোহার হাতে ওর জামাকাপড় ধরিয়ে তানহার দিকে তাকিয়ে বলে সূচক। তারপর চলে যায়।
তানহা ভীষণ লজ্জা পায়। তোহা আর সূচকের সামনে এভাবে বলতে হলো? পরে কি বলা যেতো না?

” ভাবি সাহেবা যাও
আমার ভাই অপেক্ষা করছে।

তোহা এক গাল হেসে বলে।

“হ্যাঁ জলদি যাও। বেচারার গলা শুকিয়ে গেছে।

সাবিহা বলে ওঠে।

তিনজনই ফিক করে হেসে ফেলে।
তানহা লাজুক হেসে হাতে থাকা পেঁয়াজ রেখে রুমে চলে যায়।
পেছন থেকে শুনতে পায় ওদের হাসির শব্দ।
এতো হাসির কি হলো?

চলবে

#প্রণয়
#পর্বঃ২৮
#তানিশা সুলতানা

“ঢং করে ডাকলেন কেনো? সবাই কেমন করে হাসলো।

তানহা রাগে গজগজ করতে করতে কোমরে হাত দিয়ে বলে।
সূচক তানহার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।

” এখানে বস। তারপর বলছি।

খাট দেখিয়ে বলে সূচক।

“বসবো না বলেন

তানহা ওড়না দিয়ে মুখের ঘাম মুছতে মুছতে বলে।

” না বসলে বলতে পারবো না।

সূচক টেবিলের ওপর থেকে একটা প্যাকেট নিয়ে খাটের ওপর বসে পড়ে। তানহাও গিয়ে ধপ করে সূচকের পাশে বসে।

“জলদি বলেন।

মুখ বাঁকিয়ে বলে তানহা।

” নাকে ব্যাথা আছে এখনো?

তানহার থুতনিতে হাত দিয়ে মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে আদুরী গলায় বলে সূচক। তানহা চোখ নামিয়ে নেয়। মাথা দুলিয়ে না বলে।

“মুখে বল?
নাক ফুল পড়তে পারবি?

নাক হাত দিয়ে বলে সূচক।

” এনেছেন?

তানহা ছোট করে জিজ্ঞেস করে।
একটাতে
সূচক নাকটা দেখে ফোলা কমে গেছে।
হাতের প্যাকেট খুলে সেখান থেকে প্রথমে আংটিটা হাতে নেয়।

“আজ তো তোর বার্থডে ছিলো আর আমাদের বাসর রাত ছিলো কাল। তো দুইটা মিলিয়ে একটা গিফট।

তানহা মিষ্টি করে হাসে। সূচক আংটির ওপর ঠোঁট ছোঁয়ায়।

” এবার নাক ফুল পরিয়ে দেই?

সূচক প্রশ্ন করতেই মাথা নারিয়ে সম্মতি দেয় তানহা।
সূচক খুব যত্ন করে নাক ফুল পরিয়ে দেয়। একটুও ব্যাথা পায় না তানহা।

“বাহ একদম নতুন বউয়ের মতো লাগছে।

তানহার থুতনিতে হাত দিয়ে মুখটা উঁচু করে বলে সূচক। তানহা চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে। লজ্জা লাগছে খুব।
সূচক গভীর মনোযোগ দিয়ে খানিকখন তাকিয়ে থাকে তানহার মুখের দিকে। কি আছে এই মুখটাতে? যা সূচককে এতো টানে? ওই তো সরু না টানা টানা দুটো চোখ, থুতনিতে ছোট একটা তিল দুই ভ্রুর মাঝে একটা লাল ব্রণ। সম্ভবত রাতে উঠেছে।

এসবই কি পাগল করেছে?
নিজেই ভাবনায় নিজেই হেসে ফেলে সূচক।

” চোখ খোল তানহা।

সূচক গম্ভীর সুরে বলে। মুখটা খুব কাছাকাছি হওয়াতে সূচকের নিশ্বাস একদম তানহার চোখে মুখ আঁচড়ে পড়ে। চোখ দুটো আরও শক্ত করে খিঁচে বন্ধ করে ফেলে তানহা।

“আমি তোকে খুব ভালোবাসি তানহা। বন্ধুরা বলে তুই ছোট এখনো ভালোবাসা বুঝিস না। যখন বড় হবি তখন আমাকে ভুলে যাবি। অন্য কাউকে ভালোবাসবি। ওদের কথা আমি মেনে নিতে পারছিলাম না। মনের মধ্যে ভয় ঢুকে গেছিলো। তাই বিয়ে করে ফেললাম।
আমি তোকে হারাতে চাই না।

তানহাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে সূচক। তানহা সূচকের কথা গুলো মন দিয়ে শুনছে বুকে মাথা রেখে। এতোটা ভালোবাসে এই মানুষটা ওকে?
নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে।

” শোন তানহা
আমি যা বলবো তাই শুনবি। একদম কথার অবাধ্য হবি না। নাহলে একদম থাপ্পড়ে দাঁত ফেলে দেবো।

ধমক দিয়ে বলে সূচক। তানহা গাল ফুলায়। এইতো নরম গলায় কতো আবেগ মিশিয়ে ভালোবাসার কথা বললো। এখনই আবার ধমক?
গিরগিটির থেকেও বেশি ভয়ংকর এই লোকটা।

সূচক ছেড়ে দেয় তানহাকে। তানহা সোজা হয়ে বসে।

“চেঞ্জ করে আয়।

জামাকাপড়ের প্যাকেট দেখিয়ে বলে সূচক। তারপর রুম থেকে বের হয়ে যায়। তানহা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।

” এতো অন রোমান্টিক মানুষ এখনো আছে দুনিয়াতে?
একটু তো রোমান্টিক হতে পারতো। আরে ভাই আমি তো তোর আপন বউ। একদম নিজের বউ। একটা চুমু তো আমার প্রাপ্য ছিলো। না কি? এভাবে অধিকার থেকে বঞ্চিত করা ঠিক না। একদম ভালো হলো না?

তানহা বিরবির করতে করতে দরজা ঠাস করে বন্ধ করে দিয়ো চেঞ্জ করে নেয়। তারপর বেরিয়ে যায় রুম থেকে।

সাবিহা মেয়েটা একদম মিশুক আর খুব ভালো। কি সুন্দর করে কথা বলে। দেখতেও মাশাআল্লাহ। সূচক আর ইমন রান্না করছে। সাবিহা আর তানহা পেঁয়াজ মরিচ মশলা পাতি বেটে দিচ্ছে। তোহা বসে বসে চিপস খাচ্ছে।

“এই জঙ্গিটাকে এখান থেকে সরাও তানহা।

ইমন তেলের মধ্যে পেঁয়াজ দিয়ে তোহার দিকে কটমট চাহনিতে তাকিয়ে বলে।
তেঁতে ওঠে তোহা।

” ভাইয়া আমাকে দিয়ে আয়। এই খাটাশের বাড়িতে থাকবো না আমি।

হাতে থাকা চিপসের প্যাকেট ফেলে দিয়ে গাল ফুলিয়ে বলে তোহা।

“ভাইয়া যাবো না। তুমি একাই চলে যাও। কুম্ভকর্ণদের এখানে থাকার কেনো অধিকার নেই।

ইমন বাঁকা হেসে বলে। তোহার রাগে দাঁত কটমট করে।

” ইমন আমার বোনকে এভাবে বললে কিন্তু আমিও চলে যাবো।

সূচক চোখ পাকিয়ে বলে।

“ইমন আমিও কিন্তু চলে যাবো।

সাবিহা বলে।

” হাই আল্লাহ,
তোরা একে লাই কেনো দিচ্ছিস? চেহারা দেখেছিস? খায় আর ঘুরে তাই একদম ছোটমট হাতির বাচ্চা হয়ে যাচ্ছে।
এই কুম্ভকর্ণ হাতিটাকে নিয়ে আমি সংসার করবো কিভাবে?

সবাই বড়বড় চোখ করে তাকায় ইমনের দিকে। সূচক মাংস দিচ্ছিলো পাতিলে। ইমনের কথায় দাঁড়িয়ে যায়। তোহা গাল ফুলিয়ে বসে আছে।

“কি বললি?

সূচক আবার জিজ্ঞেস করে।
ইমন থমথমে খেয়ে যায়।

” তাড়াতাড়ি মাংস ঢাল। পেঁয়াজ পুরে গেলো।

তাড়া দিয়ে বলে ইমন। সূচক সেদিকে খেয়াল দেয়। তোহা তানহাকে জোর করে উঠিয়ে দিয়ে পেঁয়াজ কাটতে বসে। তোহা কখনোই এসব কাজ করে নি। তানহা মাঝেমধ্যেই করে।

একটা পেঁয়াজ কাটতেই চোখের জলে নাকের জলে এক করে ফেলে তোহা। সাবিহা সমানে না করে যাচ্ছে কিন্তু কে শোনে কার কথা। কাটবে তো কাটবেই।
তানহা মিটমিট করে হাসছে আর তোহাকে দেখছে।

তোহা সাধারণত ভীষণ অলস একটা মানুষ। পানি পিপাসা পেলে পানি আনার ভয়ে খায় না। যতই খিধে পাক কেউ খাবার বেরে না দিলে খাবে না। জামাকাপড় একটাও কখনো গোছায় না তানহার গুছাতে হয়। জীবনেও মশারি টাঙায় না। বিছানা গুটানোর ভয়ে তানহার আগে ঘুম থেকে উঠে।
একবার গ্রামের পিচ্চি মেয়েদের সাথে জুতাচোর খেলেছিলো তানহা আর তোহা। তানহা বুক ফুলিয়ে সবাইকে বলেছিলো আমি আর তোহা। আর বাদ বাকি সবাই এক সাথে খেলো।
তারপর খেলা শুরু হওয়ার পরে তানহার একা একাই কুতকুত দিয়ে জুতো আনতে হয়েছে। তোহা শুধু দাঁড়িয়েই ছিলো। আর তানহা দম দিতে বললে শুধু বলেছে “আর একটা দম দে তুই তারপর আমি দিচ্ছি ”

কিন্তু পরে দৌড় দেওয়ার ভয়ে আর দমই দেয় নি। একা একাই খেলে জিতে ছিলো তানহা।

“তোহা রাখ তুই।

সূচক ধমক দিয়ে বলে। সূচকের ধমকে তানহার ভাবনা বন্ধ করে। তানহার মনে হচ্ছে এই ইমনই পারবে তোহাকে সোজা করতে।

” আরে বন্ধু করতে দে
কাজে লাগবে।

ইমন মুচকি হেসে বলে।

“হ্যাঁ পরে চোখ মুখ ফুলিয়ে বসে থাকবে। ওঠে তুই।

সূচক তোহার হাত থেকে ছুড়ি নিয়ে নেয়। হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে চোখের পানি মুছিয়ে দেয়।
তোহা ইমনের দিকে কটমট চাহনিতে তাকিয়ে একপাশে গিয়ে দাঁড়ায়।

রান্না শেষ করতে করতে রাত দশটা বেজে যায়। সবাই মিলে এক সাথে খেয়ে নেয়। দারুণ হয়েছে রান্না।
সাবিহা আজকে বাসায় যাবে না। ওদের সাথেই থাকবে।

রাতে সূচক আর ইমন এক রুমে ঘুমায়। আর অন্য রুমকি সাবিহা তানহা আর তোহা। তিনজন প্রায় সারা রাতই গল্প করে।

সবাই বেলা ঘুম থেকে উঠেই সাবিহা চলে যায়। তানহা আর তোহা চোখে মুখে পানি দিয়েই বেরিয়ে পড়ে। আজকেই ঢাকায় ফিরে যাবে ওরা। সাদিয়া বেগম রেডি হোয়ল বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

ইমন গাড়ি নিয়ে এসেছে। পনেরো দিন হয়েছে ইমন গাড়ি কিনেছে। নিজের টাকায় কিনে নি। বাবা কিনে দিয়েছে। অবশ্য এর জন্য ইমনকে দুই দিন না খেয়ে থাকতে হয়েছে।
খেয়েছে সেটা সবার অগোচরে। অবশেষে ছেলের জেদের কাছে হার মেনে গাড়ি কিনে দেয়।

সূচক ইমনের পাশে বসে তানহার আর তোহা পেছনে বসে। সূচক নানা বাড়িতে আর ঢুকবে না। মাকে কল দিয়ে রেডি হতে বলেছিলো।

সাদিয়া বেগম রেডি হয়ে গেইটের কাছেই দাঁড়িয়ে ছিলো। গাড়ি থামতেই তানহা নেমে পড়ে। এক দৌড়ে রুমে চলে যায়। সেখানে ফোন রেখে গেছিলো। তারাহুরো করে জামাকাপড় গুছিয়ে ফোন হাতে নিয়ে আবার চলে আসে।
সবাই দাঁড়িয়ে আছে গেইটের কাছে বিদায় দিচ্ছে তোহা সাদিয়া বেগম আর সূচককে। তানহার সাথে কেউ কথা বললো না।
তানহাও আগ বাড়িয়ে কথা না বলে চুপচাপ মাথা নিচু করে গাড়িতে বসে।

ফোন অন করতেই দেখে বাবার অনেক গুলো কল। সাথে দুটো মেসেজ। তাতে “শুভ জন্মদিন আম্মাজান লেখা”
তানহার মুখে হাসি ফুটে ওঠে।

গাড়ি চলছে আপন গতিতে। কারে মুখে কোনো কথা নেই।
সাদিয়া বেগম যে রেগে আছে সেটা সবাই ভালোই বুঝতে পারছে।
সূচক চোয়াল শক্ত করে ফেলে। কালকে নানাভাইয়ের বলা সব কথায় শুনেছে ও।
তানহা তোহার কাঁধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে আছে।

“মা আমি তানহাকে বিয়ে করে নিয়েছে। আর একটা সেকেন্ডও ওকে ছাড়া থাকতে পারবো না। তুমি বাবাকে বলে দিও।
আর আজকে থেকেই তানহা আমি রুমে থাকবে।

সূচক লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে বলে। সাদিয়া বেগম চমকে ওঠে। তানহা ধরফরিয়ে মাথা তুলে।

চলবে