প্রতিশোধ পর্ব-০২

0
270

#প্রতিশোধ
#২য়_পর্ব
#রাইটার_মেঘাদ্রিতা_মেঘা
সুই*সাইড নোটে লিখা ছিলো “আমার মৃ*ত্যুর জন্য মেঘা দায়ী”
লিখাটা পড়ে আমি কিছু বলতে যাবো ,আর তখনই সে আমার মুখ টা তার হাত দিয়ে আটকে ধরে বলে চুপ!কোন কথা বলোনা।কাউকে কিছু বলার দরকার নেই।সব কথা পরে হবে।

এই কথা বলে মানুষ টা কাগজ টাকে নিজের পকেটে আবার রেখে দিলো।এই মানুষ টা কে জানেন?
এই মানুষ টা আর কেউ না,অধরারই ভালবাসার মানুষ।যাকে কিনা অধরা ওর জীবনের থেকেও বেশি ভালবাসতো আবির ভাইয়াকে।আবির ভাইয়াও অধরাকে খুব ভালবাসে।
দুজনের প্রায় ১ বছরের রিলেশন।যদিও মেয়েটা সব সময় বলতো আমরা কিন্তু এক বাসায়ই বিয়ে করবো।যেই বাসায় দুই ছেলে আছে সেই বাসায় বিয়ে করবো।কিন্তু ভালবাসা এমন একটা জিনিস, কখন কার প্রতি হয়ে যায় বলা যায়না।
আবির ভাইয়া বাড়ীর এক মাত্র ছেলে হওয়া সত্বেও অধরা তার প্রেমে পড়ে যায়।
আর আমাকে বলে,দোস্ত কি করবো বল,জানি যে আবির বাবা মায়ের এক মাত্র সন্তান।
কিন্তু আমি যে ভালবেসে ফেলেছি ওকে।
সমস্যা নেই সতীন বানাবোনে তোকে।
তাহলেই তো এক সাথে থাকতে পারবো।
এই বলে হেসে দিতো মেয়েটা।

আমি বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি আবির ভাইয়ার দিকে।
আর ভাবছি,সুই*সাইড নোটে আমার নাম কেন লিখা?
ও আমার নাম কেন লিখবে?

অধরার আব্বু আম্মু আর বাকি সবাই কান্নাকাটি করছে,সাথে আবির ভাইয়াও।
আত্মীয় স্বজন যারা যারা আসতে পেরেছে দেখে নিয়েছে অধরাকে।
অধরার বাবা মা চাননা অধরার ময়না*তদন্ত হোক,কাটাছেঁড়া করা হোক তাদের মেয়েকে।
পুলিশি ঝামেলাও চান না তারা।

রাতেই অধরাকে দাফন করা হয়।
আমি আংকেল আন্টিকে খুব করে বলেছিলাম,ময়না*তদন্ত করতে।
কিন্তু তারা করবেন না।

তাদের ভাষ্যমতে, যে যাবার সে তো চলেই গিয়েছে,যা কিছুই করা হোক আর তো ফিরে আসবেনা।তাই তারা রাতেই অধরাকে কবরস্থ করেন।

অধরাকে বাসা থেকে নিয়ে যাবার পরই আম্মু আমাকে বাসায় নিয়ে আসে।

আমি পাগলের মত চিৎকার করতে থাকি।
আম্মু আমাকে বুঝায়,কিন্তু আমার মন তো মানেনা।
একেতো নিজের বেস্ট ফ্রেন্ডের রহস্যজনক মৃ*ত্যু।
তার উপর তার সুই*সাইড নোটে আবার আমার ই নাম লিখা।
আমি নাকি ওর মৃ*ত্যুর জন্য দায়ী।কিভাবে আমি এসব মেনে নিবো?

সারাটা রাত আমি ছটফট করতে থাকি।
সকাল হলে আম্মু আমাকে ডেকে বলে,মারে সারা রাত কিছুই তো খাস নি।
যা হয়েছে তাতো মেনে নিতে হবে।
তুই একটু স্বাভাবিক হ।
চল কিছু খাবি।

আমি আম্মুকে বলি,
খেতে ইচ্ছে করছেনা আমার আম্মু।
যখন ইচ্ছে করবে খাবোনে।

আম্মুও আমাকে আর জোর করেনা।কারণ সে জানে আমার কি মনের অবস্থা এখন।

সকাল গড়িয়ে বিকাল হলো।
হঠাৎ আমার মনে হলো,আবির ভাইয়াকে কল দেই।
অধরা প্রায়ই আমার ফোন থেকে কল দিয়ে আবির ভাইয়ার সাথে কথা বলতো,তাই আমার কাছে তার নাম্বারও আছে।

আমি আবির ভাইয়াকে কল দিলাম,আবির ভাইয়া ফোন রিসিভ করলো।

বেচারারও কন্ঠ পুরো ভেঙে গেছে।
অনেক কান্না করেছে অধরার জন্য।

_আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।
_ওয়ালাইকুম আসসালাম।
আচ্ছা মেঘা,সত্যি করে বলোতো কি হয়েছিলো তোমাদের মধ্যে?
যার জন্য অধরা এত বড় স্টেপ নিলো?
তুমি জানোনা অধরা আমার কি?
আমার একটা মুহূর্ত বাঁচতে ইচ্ছে করছেনা বিশ্বাস করবা তুমি?

কি এমন হয়েছে তোমাদের, কিসের জন্য ওকে দুনিয়া ছাড়তে হলো বলোতো?

_ভাইয়া আপনি বিশ্বাস করেন অধরার মৃ*ত্যুর জন্য আমি দায়ী?
_দেখো মেঘা,কেউ তো মরার আগে মিথ্যে লিখে যাবেনা।
প্লিজ বলো,কি এমন করেছো তুমি যার জন্য ওকে ম*রণ কে বরণ করতে হলো?

আমি কাঁদতে কাঁদতে আবির ভাইয়াকে বললাম,
ভাইয়া বিশ্বাস করেন আমাদের মধ্যে কিচ্ছু হয়নি।
ওর মৃ*ত্যুর কয়েক ঘন্টা আগেও আমাদের দেখা হয়েছে,কথা হয়েছে।

আমি বুঝলাম না ও কিসের জন্য সুই*সাইড করলো।
আর কিসের জন্য সুই*সাইড নোটে আমার নাম উল্লেখ করলো।

_সত্যিই কিছু হয়নি তোমাদের মাঝে?
_না ভাইয়া।

আচ্ছা ভাইয়া,আপনি কেন আমাকে তখন কিছু বলতে দিলেন না?
কেন আমার মুখ আটকে ধরলেন?

_কারণ সুই*সাইড নোট টা শুধু আমি দেখেছি,আমি পেয়েছি।
আমি চাইনি এই নোট টার কথা আর কেউ জানুক।
আর আমার সত্যি টা জানার দরকার ছিলো তোমার থেকে।কি হয়েছিলো আসলে।
তাছাড়া আমি অধরাকে পাগলের মত ভালবাসলেও চাইনা তোমার মায়ের বুক খালি হোক।তাই তোমাকে চুপ করতে বলেছিলাম।
যে যাবার সে তো চলেই গেছে।
চাইলেও তো আর ফিরে আসবেনা।
যদি তোমাকে শাস্তি দেয়ার পর ও ফিরে আসতো,তাহলে আমি তোমার শাস্তির ব্যবস্থা ঠিকই করতাম।

যাইহোক পরে কথা বলবো আবার।
আমার ভালো লাগছেনা কিছু।
আমার অধরা আর নেই,আমি এটা মানতেই পারছিনা।
আমাকে একটু একা থাকতে দাও।

আবির ভাইয়া এই কথা বলে লাইন টা কেটে দেয়।

আমার মাথায় শুধু ঘুরপাক খাচ্ছে,কেন অধরা এমন করলো?
কি হয়েছিলো ওর।
ও আমাকে জড়িয়ে ধরে কেন কান্না করছিলো।
আর কেনই বা আমার নাম লিখে গেলো।

সন্ধ্যা বেলা আমি আম্মুকে নিয়ে অধরাদের বাসায় গেলাম।

আন্টি আমাকে দেখে হাউমাউ করে কান্না করে ফেল্লো।
আমিও আন্টিকে জড়িয়ে ধরে কান্না কর‍তে লাগলাম।

_মারে কি জন্য করলো এমন,
কিসের জন্য করলো কিছু জানো তুমি?
_আমি নিজেও জানিনা আন্টি।
ও আমাকে কিচ্ছু বলেনি আন্টি।
ওর সাথে আমার গত কালও কত কথা হলো,কিন্তু কিছু তো বুঝতে পারলাম না।
আর ও নিজেও আমাকে কিছু বলেনি।

_আবির কে জিজ্ঞেস করলাম,আবিরও বল্লো কিছু হয়নি ওর সাথে।
অধরা কিছু দিন আগেই আমাকে আবিরের কথা জানায়।
ও নাকি একটা ছেলেকে খুব ভালবাসে।
জিজ্ঞেস করলাম,কে সে?
উত্তর দিলো ওর নাম আবির।
ও পড়াশোনার পাশাপাশি একটা জব করে।

আমি ওকে বললাম,তোর পছন্দই আমাদের পছন্দ।
পড়ালেখা শেষ কর,আমরা তোকে ওর সাথেই ধুমধাম করে বিয়ে দিবো।
কিন্তু ভুলেও কোন ভুলভাল ডিসিশন নিস না কিন্তু।

অধরা হাসি দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলো।

আমি আরো একদিন আবিরকে আমাদের বাসায়ও নিয়ে আসতে বলেছিলাম।

অধরা তাই আবিরকে একদিন বাসায়ও নিয়ে আসে।
আমি আবিরের সাথে কথা বলে দেখি,ছেলেটা ভালোই।
তাই আমার আর কোন আপত্তি ছিলোনা।

ছেলেটাও জানেনা কিসের জন্য অধরা এমন করলো।
এসেছিলো ও তুমি আমার কিছুক্ষণ আগে।
অল্প কিছু ক্ষণ থেকে চলে গেছে।
ওর মুখের দিকেও তাকানো যায়না।
খুব ভেঙে পড়েছে।

মেয়েটা কেন যে এত গুলো মানুষ কে এভাবে আঘাত করে চলে গেলো।

আন্টি আবারো হাউমাউ করে কান্না করে দিলো।

আমি আন্টিকে শান্তনা আর কি দিবো,নিজেও কাঁদতে লাগলাম।

দেখতে দেখতে সপ্তাহ খানিক কেটে গেলো।

কোন ভাবেই অধরার মৃ*ত্যুর রহস্য উদঘাটন হলোনা।

আমি না পারি ঠিক মত খেতে না পারি ঘুমাতে,আর না যাই কলেজে।
আমার নিজের জীবন টাই যেন থেমে গিয়েছে।

আর আমাকে একটা প্রশ্নই বার বার কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে,
অধরা সুই*সাইড নোটে আমার নাম কেন লিখে গেলো।

অনেক দিন হয়ে গেছে কলেজে যাইনা,তাই কলেজ থেকে এক বান্ধবী ফোন দেয়,কিছু দিন পর আমাদের নাকি পরীক্ষা।
তাই কলেজে যেতে।

আম্মুকে বলে আমিও রেডি হয়ে কলেজে যাই।
আর রাস্তায় বের হয়ে আবির ভাইয়াকে ফোন দিয়ে বলি সে যেন কলেজে আসে।
আবির ভাইয়া উত্তর দেয় সে নাকি কলেজেই আছে।

আমি কলেজে ঢুকতেই দেখি আবির ভাইয়া মেইন গেইটের কাছে দাঁড়িয়ে আছে,

আমি তার সামনে গিয়ে একটা লাল টুকটুকে গোলাপ ব্যাগ থেকে বের করে এগিয়ে দিয়ে বলি,
বিয়ে করবেন আমাকে?

চলবে?