প্রাপ্তির হাসি পর্ব-০৭

0
416

#প্রাপ্তির_হাসি
#পর্ব_০৭
DI YA

অসম্ভব সুন্দর লাগছে আপনাকে মিস ধানিলংকা – রিয়ান

এই আপনি কি বললেন আমাকে। আমি ধানিলংকা।তাহলে আপনি কি ? আপনি তো হচ্ছেন একটা আস্ত একটা খাটাশ – আমি

এই বেশি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু – রিয়ান

কিছুর বেশি হয়নি। আপনি তো শুধু খাটাশ না সাথে হলেন পাবনা পালিয়ে আসা পাগল ও। হুহ আমাকে বলে আমি নাকি ধানিলংকা। তাহলে তো আপনি হলেন আদা রসুন পেস্ট – আমি

নিজে যা আমাকে ও কি তাই মনে কর ? – মিটমিটিয়ে হাসতে হাসতে বললো রিয়ান

ভাল হচ্ছে না কিন্তু – আমি

তুমি ভাল করলে তো হবে ভাল – রিয়ান

উফ পাপা আর ভাল আন্টি তোমরা কি থামবা। বাচ্চা আমি নাকি তোমরা ? এত বাচ্চাদের মত ঝগড়া যে কিভাবে কর তোমরা? আচ্ছা সব বাদ এখন চলো নাহলে লেট হয়ে যাবে – রিয়ানা

হম চলো – আমি

তারপর আমরা গিয়ে গাড়িতে বসলাম। রিয়ান আর রিয়ানা সামনে বসেছে আর আমি পিছনের সিটে। রিয়ানার স্কুলে পৌঁছাতেই দেকি চারিদিকে অনেক সুন্দর ভাবে সাজানো।তার মধ্যে ছোট ছোট বাচ্চারা দৌড়াদৌড়ি করছে।হাসিমজা করছে।কেউ কেউ আবার নিজের বন্ধুদের সঙ্গে খেলা করছে।কেউ আবার চুপটি করে বসে আছে মা বাবার সাথে। এতগুলো বাচ্চাকে একসাথে দেখে আমার বেশ ভালই লাগছিল।এভাবেই অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেলো।সবকিছু ঠিক ভাবে কেটে যায়।অনুষ্ঠান শেষ হয় বিকেল ৪ টার দিকে।তারপর রিয়ানা বায়না ধরে আমাদের নিয়ে পাশের পার্কে যাবে।আমরা ও ওর কথা মেনে নেই।পার্কে গিয়ে আমি আর রিয়ানা দুজনে পুরো বাচ্চাদের মত দৌড়াদৌড়ি করে কেলতে শুরু করি।তারপর দুজনে কটন ক্যান্ডি নিয়ে প্রতিযোগিতা করতে থাকি। সেখানে রিয়ানা জিতে যায়।তারপর সে আমাকে বলে আমার নাকি তার সাথে লুকোচুরি খেলতে হবে।হেরে যখন গিয়েছি তখন তো আমাকে রাজি হতেই হবে তার শর্তে।রিয়ানা আমার চোখ বেঁধে দেয়।আর চারপাশে ঘুরে ঘুরে বলতে লাগে,

ভাল আন্টি আমাকে ধরো আমি এখানে – রিয়ানা

খুঁজতে খুজতে হঠাৎ মনে হলো আমি একটা খাম্বার সাথে ধাক্কা কাই। পরে ও মাগো বলে মাটিতে বসে পরি।চোখের কাপড়টা সরাতেই দেখতে পাই আমার সামনে মিস্টার রিয়ান দাঁড়িয়ে আছে।তাই আমি বলি,

আপনি এখানে কি করছেন খাটাশ সাহেব।এখানে তো মাত্র একটা খাম্বা ছিল।যার সাথে ধাক্কা খেয়ে আমি মাটিতে বসে পরি।উফ আল্লাহ গো এত শক্ত নাকি খাম্বা হয়।মনে হয় কেউ রড দিয়ে বানিয়েছে – আমি

আমার কথা শুনে হাসতে হাসতে রিয়ানা বলে,

ভাল আন্টি – রিয়ানা

হ্যা পাখি বলো – আমি

তোমার সেই রড দিয়ে বানানো খাম্বা কিন্তু হচ্ছে আমার পাপা – রিয়ানা

ও আচ্ছা। এ্যা খাটাশ সাহেব আপনি মানুষ নাকি এলিয়েন।বাবারে বাবা এত শক্ত নাকি মানুষ হয়।হু আপনি তো খাটাশ আপনি মানুষ কেন হতে যাবেন – একা একাই বিরবির করতে থাকি আমি।

মিস ধানিলংকা নিজের দোষ আগে দেখেন। তারপর আমাকে বলবেন – রিয়ান

পাপা এখন চলো বাসায় যাই।আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি। আমার রেস্ট দরকার – রিয়ানা।।

ওকে মাম্মা – রিয়ান।

তারপর আমরা বাসায় চলে আসি।পরদিন সকালে ও সব আগের মতোই হচ্ছিল। আজকে আমি চলে যাব এই বাসা থেকে। কারণ রিয়ু ও এখন যথেষ্ট সুস্থ হয়ে গেছে। আর আমারো হসপিটাল থেকে অনেক কল আসছিল।আবার বাবাই ও তো আছে বাসায়।ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসে সবাই ব্রেকফাস্ট করছিলাম তখনি কলিংবেল বেজে উঠে।একজন মেইড গিয়ে দরজা খুলে দেয়।ভিতরে প্রবেশ করে আমার মতো বয়সী একজন মেয়ে।তাকে দেখে আন্টি আর মিস্টার রিয়ানকে কেমন জানি লাগছিল দেখতে।রিয়ান আন্টিকে ইশারা করতেই আন্টি গিয়ে রিয়ু পাখিকে ঘরে রেখে আসে।আমি তখনো কিছু বুঝছিলাম ন।তাই কৌতুহল নিয়ে সবকিছু দেখছিলাম।মিস্টার রিয়ান বলতে শুরু করে,

আপনি এখানে কি জন্য এসেছেন? কি চাই আপনার এখানে ? আমার জানামতে আপনি ছয়বছর আগেই এ বাসার সাথে আর এ বাসার মানুষের সাথে সব সম্পর্ক নষ্ট করে দিয়েছেন। তাহলে এখন আপনার এখানে কাজ কি ? – রিয়ান

সেটা তুমি ঠিকই জানো। তাই মনে হয় না আমার আর বলার প্রয়োজন রয়েছে – মেয়েটি

আপনি যা চাচ্ছেন তা কোনোদিন ও হবেনা।অত্যন্ত আমি রিয়ান আহমেদ বেঁচে থাকতে তো এটা অসম্ভব – রিয়ান

তাহলে তুমি মরে যাও।আমার মেয়েকে আমার চাই।যে কোনো মূল্যে। এখন তোমরা ভালোয় ভালোয় আমার মেয়েকে আমার কাছে দিয়ে দিলে তো ভালই।নয়তো আমার পুলিশের সাহায্য নিতে হবে – মেয়েটি

তা কি বলে পুলিশের কাছে আপনি সাহায্য চাবেন শুনি ? আমার স্বামির মৃত্যুর পর আমি আমার মেয়ে আর মৃত স্বামির পরিবারের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে নতুন প্রেমিকের কাছে চলে যাই।কিন্তু এখন আমার মমতাবোধ জেগে উঠেছে। তাই আমার মেয়েকে আমার চাই। নাকি আমি আর কখনো মা হতে পারবনা তাই নিজের চিহ্ন হিসেবে আমার ওকে চাই। নিজের কমতি মুছাতে – রিয়ান

বেশি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু রিয়ান। এত বাড় বেড়ো না। খুব শীঘ্রই হয়তো ঝড়ে পরে যাবে – মেয়েটি

রিয়ান আহমেদ তোমার মত থার্ড ক্লাস মানুষ না বুঝলে। রিয়ান আহমেদ কখনো ঝড়ে পরবেনা। – রিয়ান

তোমাকে কিন্তু আমি দেখে নিব।আমার স্বামি কিন্তু পুলিশ অফিসার। তো আইনের দিক দিয়ে আমার ক্ষমতা কিন্তু আছে নিজের মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার – মেয়েটি

চেষ্টা করে দেখতে পারেন কিন্তু ফলাফল শূন্য হবে- রিয়ান

কেন আবার সবকিছু শেষ করতে চাইছো।চলেই তো গিয়েছিলে ভাল থাকতে। তাহলে কেনো আবার ফিরে এসেছো আমাদের ভাল থাকা নষ্ট করতে। – লিমা আহমেদ

আমি এত কিছু জানিনা। আমার শুধু আমার মেয়েকে চাই – মেয়েটি

এটা আপনার স্বপ্নে ও অসম্ভব। চাইলে চেষ্টা করতে পারেন – রিয়ান

আমি আজকে ঠিকই চলে যাচ্ছি। কিন্তু কালকে আবার আসবো আর আমার মেয়েকে আমি আমার কাছে নিয়েই ছাড়বো – বলে মেয়েটি বাসা থেকে বেরিয়ে যায়।

আমি এতক্ষণ নিরব দর্শকের মতো সবকিছু দেখছিলাম। মেয়েটা বেরিয়ে যাবার পর মিস্টার রিয়ান ও গাড়ির চাবি নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়।আন্টি হয়তো আমার অবস্থা টা বুঝেছেন তাই বলতে লাগলো,

ঘটনাটা আরো সাতবছর আগের। আমার বড় ছেলের বউ করে নিয়ে আসি আমি এই মেয়েটি মানে সিমাকে। প্রথম প্রথম সবকিছু ভালোই চলছিল।কিন্তু দিন যত যায় সিমা বিগড়ে যেতে শুরু করে।রাতভরে পার্টি। সারাদিন বন্ধুদের সাথে ঘুরাঘুরি আর নানাকিছু।তা ও আমার ছেলেটা তাকে কিছু বলেনা।তারপর হঠাৎই একদিন জানতে পারি সিমা প্রেগন্যান্ট। সেদিন খুশিতে কান্না করে দিয়েছিল আমার ছেলেটা। কিন্তু সুখ জিনিসটা আমার সেই ছেলের কপালে হয়তো ছিলই না।তাই তো সিমার প্রেগন্যান্সির সময় যখন ৮ মাস। তখন ছেলেটি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। অনেক ভেঙে পরেছিলাম আমরা কিন্তু সিমার জন্য আমি আর রিয়ান নিজেকে সামলিয়ে গেছি।কখনো ওর কোনো কষ্ট হতে দেয়নি। কিন্তু যেদিন রিয়ানার জন্ম হয়।সেদিনই সে হসপিটালে একটা চিঠি লিখে সেখানে থেকে চলে যায়।সেই চিঠিতে লেখা ছিল।

সিমা এখন কোনো বাচ্চা চায়না।বাচ্চার জন্য সে নিজের খুশির জীবন মাটি করতে পারবেনা।সে তার ভালোবাসার মানুষ টির কাছে চলে গিয়েছে

আন্টি আর কিছু বলবে তার আগেই মিস্টার রিয়ানের ফোনে থেকে আন্টির ফোনে কল আসে।কল রিসিভ করার পরপরই আন্টি জোড়ে একটা চিৎকার দিয়ে বলে,

আমার রিয়ান, কিছু হবেনা আমার ছেলের

চলবে 🥰

( ভুল ক্রুটি ক্ষমা করবেন 🥰হ্যাপি রিডিং)