প্রিয়মুখ পর্ব-০৬

0
539

#প্রিয়মুখ
#ফারিহা_জান্নাত
#পর্বঃ০৬

হাসিব সারাবাড়ি খুঁজে বেড়াচ্ছে কোথাও ঝুমুরকে পাচ্ছে না।মন মেজাজ দুটোই খারাপ হয়ে আছে। খুঁজতে খুঁজতে বাড়ির পিছনে গিয়ে দেখে,একটা মেয়ে পুকুর ঘাটে বসে আছে।নিরিবিলি শান্ত হয়ে পানির দিকে তাকিয়ে কি যেন দেখছে।কিন্তু মেয়েটা কে হতে পারে মুখ তো দেখতে পাচ্ছে না।হাসিব গাছের আড়ালে লুকিয়ে থেকে মেয়েটাকে দেখার চেষ্টা করছে।
মনে মনে শুধু ভাবছে এই মেয়েটাই যেন ঝুমুর হয়।

ঝুমুর মন মরা হয়ে শুধু পানির দিকে তাকিয়ে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখছে।হঠাৎ মনে হলো অনেক বেলা হয়ে যাচ্ছে এবার ঘরে যাওয়া দরকার।

পুকুর ঘাট থেকে উঠে সামনের দিকে তাকাতেই হাসিবের মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠলো। সেই প্রিয়মুখ যাকে সেই খুঁজচ্ছে।ছোটবেলার ঠোঁটের পাশে তিলটাও আছে।সেই মায়াভরা মুখ।ইচ্ছে করছে এক্ষুনি গিয়ে ঝুমুরকে জড়িয়ে ধরে সমস্ত আবেগ দিয়ে ভালোবাসতে।

ঝুমুর আনমনে হেঁটে আসছে হাসিবের কাছাকাছি আসতেই হঠাৎ হাসিব গাছের আড়াল হতে বের হয়ে ঝুমুরের সামনে এসে দাঁড়ালো। আর ঝুমুর ভয়ংকর রকমের ভয় পেয়ে পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে চোখ বড় বড় করে। একি হাসিব এখানে কি করে এলো?ভাবতে ভাবতে হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়ে যেতে লাগলো এমন সময় হাসিব ঝুমুরকে নিজের বুকের মধ্যে নিয়ে বসে পড়ে।

হাসিব ঝুমুরের কপাল থেকে চুল সরিয়ে দিয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সেই প্রিয়মুখ যাকে দেখার জন্য মনটা ছটফট করছিলো, যাকে কাছে পাবার জন্য এতটা বছর অপেক্ষা করেছিলো।আজ তাকেই বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে আছে। নিজের অজান্তেই কয়েক ফোঁটা চোখের পানি গড়িয়ে পড়লো। হাসিব বিড়বিড় করে বলতে লাগলো…

আমি আর কখনো তোমাকে হারিয়ে যেতে দিবো না। অনেক কষ্ট করে তোমাকে খুঁজে পেয়েছি এবার হারিয়ে ফেললে আমি মরেই যাবো।
কথাগুলো শেষ করে হাসিব আরও শক্ত করে ঝুমুরকে জড়িয়ে ধরে বসে রইলো।

কিছুক্ষণ এভাবে থাকার পর ঝুমুরের জ্ঞান ফিরে আসলো।জ্ঞান ফেরার পর ঝুমুর আবিষ্কার করলো কারও বুকের সাথে মিশে আছে। চোখ খুলেই হাসিবের দিকে তাকিয়ে তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়িয়ে গেলো।কিছু বলার ভাষা যেন হারিয়ে ফেলছে। গলা দিয়ে কোনো কথায় যে বের হচ্ছে না।যাকে দেখার জন্য পাগল ছিলো আজ তাকে এতটা কাছে পেয়েও যেন সেই অনেক দূরের কেউ।

হাসিবকে দেখার পর খুশি হবার পরিবর্তে অঝোরে চোখের পানি পড়তে লাগলো।এই চোখগুলো সময় অসময়ে বের হয়ে যায় বড্ড বেঈমান।
ঝুমুর মনে মনে বললো…

….না আমি কান্না করবো না। কার জন্য কাঁদছি কেন কাঁদছি?সে তো আমার কেউ না।চোখের পানি মুছে ঝুমুর চলে যেতে চাইলে হাসিব ঝুমুরের হাত ধরে টেনে নিজের বুকের সাথে মিশে নেয়।

ঝুমুরের খুব ইচ্ছে করছে হাসিবের বুকের মিশে থাকতে। পরম শান্তির ছোঁয়া পাচ্ছে। পরক্ষণেই মনে হলো এটা ঠিক না হাসিব ঝুমকার।

….ছাড়ুন আমাকে প্লিজ

অভিমান নিয়ে কথাটা বললো।হাসিব বেশ বুঝতে পারলো।

….ছাড়ার জন্য তো জড়িয়ে ধরিনি।আগে বলো ঝুমুর এত কষ্ট দিলে কেন আমাকে? আসার পর একটিবারও আমার সাথে দেখা করোনি কেন?কেন এই লুকোচুরি করছো বলো।

ঝুমুর হাসিবকে জোর করে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বলে….

….আপনি আমাকে জড়িয়ে ধরেছেন কোন সাহসে?আর আমি আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য না(বেশ রাগান্বিত হয়ে বললো)

….ভুলে গেছো তুমি যে আমার হবু বউ।বউকে জড়িয়ে ধরবো না তো কাকে ধরবো।

….আমি আপনার হবু বউ ছিলাম এখন ঝুমকা আপনার হবু বউ যত ইচ্ছে হয় তাকে গিয়ে ধরুন।আমাকে না বুঝলেন।আর কখনো আমার সামনে আসবেন না প্লিজ।

….ঝুমুর আমার কথাটা শুনো প্লিজ যা হয়েছে আমার ইচ্ছেতে কোনো কিছুই হয়নি।আমাকে বলার সুযোগ দিবে তো নাকি (চিৎকার করে বলে)

….আমি জানতে চাই না কার ইচ্ছেতে এসব হয়েছে আমি শুধু জানি আপনি আমার বোনের হবু বর।আর আমার কাছ থেকে দুরে থাকবেন(চোখের পানি কিছুতেই আটকিয়ে রাখতে পারছে না)

কথাগুলো বলা শেষ করে চোখের পানি মুছতে মুছতে দৌড় দিয়ে হাসিবের সামনের থেকে চলে গেলো।
হাসিব অনেক বার ডাকার পরও ঝুমুর পিছনে ফিরে একবারের জন্যও তাকায় নি।

হাসিব মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে আর বলছে…

…ঝুমুর আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো।তোমার চোখের পানি তার প্রমাণ। তোমার সব অভিমান আমি আমার ভালোবাসা দিয়ে মুছে দিবো।

ঝুমুর নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে হাঁটু গেড়ে বসে হাউমাউ কান্না করতে লাগলো।বলতে লাগলো…

…..কেন এমন হলো আমার সাথে,যাকে এত বছর ধরে ভালোবেসে আসলাম আজ তাকে এত কাছে পেয়েও কেন বলতে পারি নি ভালোবাসি তোমাকে। কেন পারিনি তাকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখছি তা সত্যি করতে। (কথাগুলো বলে অঝোরে কাঁদতে লাগলো)

অনেক্ক্ষণ কান্না করার পর ঝুমুর বাতরুমে গিয়ে শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে ইচ্ছেমতো ভিজতে লাগলো।
অনেক্ক্ষণ পর বাতরুম থেকে বের হয়ে বারান্দায় গিয়ে চেয়ারে বসে পড়লো।

ওদিকে দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য সবাই নিচে আসলেও হাসিব আসে নি।ঝুমকার মা ঝুমকাকে পাঠালো হাসিবকে ডেকে আনার জন্য। ঝুমকা মহা খুশি হয়ে হাসিবের রুমে গিয়ে দরজায় টোকা দিলো।হাসিব কোনো কিছু না ভেবেই….

….দরজা খোলা আছে।( বাতরুম থেকে আসতে আসতে বলে)

….আপনাকে খেতে ডাকছে

….আরে তুমি এখানে? (কিছুটা বিরুক্ত হয়ে)

….কেন অন্য কাউকে আশা করেছিলেন বুঝি(রোমান্টিক ভাব নিয়ে)

….সেই সৌভাগ্য কি আর আমার আছে (বিড়বিড় করে বললো)

…কিছু বললেন?

….বললাম তুমি যাও আমি আসছি।

নিচে সবাই আছে হাসিব সবার মাঝে শুধু ঝুমুরকে খুঁজছে।

ঝুমকা হাসিবের পাতে ওটা সেটা দিয়ে প্লেট ভরিয়ে ফেলছে।কিন্তু হাসিব শুধু ভাত নিয়ে নাড়াচাড়া করছে।

হাসিবের মা বিষয়টা খেয়াল করলো…

….হাসিব কিরে খাচ্ছিস না কেন?

মায়ের কথায় ধ্যান ভাঙ্গে হাসিবের

….এই তো মা খাচ্ছি, বলেই কিছুটা খাবার মুখে দিলো।

হাসিব অল্প কিছু খাবার খেয়ে হাত ধুয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। একে একে সবার খাওয়া শেষ হলো।
ঝুমুরের চাচী ঝুমুরকে ডাকতে রুমে আসে।দরজায় নক করার সাথে সাথে ঝুমুর এসে দরজা খুলে দিলো।

….কি রে ঝুমুর তোর চোখ ফুলে আছে কেন?কি হয়েছে তোর শরীর খারাপ করেনি তো?

….না চাচী আমার কিছু হয়নি। জানো চাচী অতীত বড় কষ্ট দেয় আর যদি অতীত বর্তমান হয়ে সামনে এসে দাঁড়ায় তাহলে তো আরও বেশী কষ্ট দেয়।

….তোর এসব কঠিন কথা আমি বুঝি না। খেতে আয়(ঝুমুরের মাথায় হাত রেখে বলে)

….আমার ক্ষিধে নেই চাচী

….ক্ষিধে নেই মানে কি? আমি, বড় ভাবী এখনো না খেয়ে আছি।তোর এসব কঠিন কথা বুঝতে হলে তো আমাকে খেতে হবে তাই না এখন চল তাড়াতাড়ি (আসলে ছোট চাচী সব বুঝে ঝুমুরের মন ভালো করার জন্য এসব বলে)

ঝুমুর জানে এখন না খেলে চাচী রাগ করবে তাই ইচ্ছে না হলেও খেতে হবে।

চলবে….