প্রিয় আসক্তি পর্ব-০৯

0
201

#প্রিয়_আসক্তি 🔥
তিতলী
পর্ব,,,৯

❤️❤️❤️❤️❤️

টানা ৯ দিন পর আজ প্রিয়তাকে হসপিটাল থেকে ডিসচার্চ করেছে। প্রিয়তার বাবা মা প্রিয়তাকে বাড়িতে নিয়ে যেতে চাইলে বাঁধ সাধে বিভোর। সবার সামনে স্পষ্ট করে বলে দিলো প্রিয়তাকে এক মুহূর্ত না দেখে থাকতে পারবে না সে। ।
এদিকে প্রিয়তা পারে না লজ্জা মাটি ফাঁক করে ঢুকে যেতে।
কি নির্লজ্জ ছেলে রে বাবা!! এভাবে সবার সামনে কি বলছে ছেলেটা। এতো কঠিন রাগি মানুষেষটার মনে তার জন্য এতো ভালোবাসা লুকিয়ে ছিলো। ভাবতেই প্রশান্তিতে ভরে যায় প্রিয়তার মন ,,,

বাকি সবাই মুখ টিপে হাসে। শেষে বিভোরের জেদের কাছে হার মেনে নেয় সবাই। প্রিয়তাকে নিয়ে বিভোরদের বাসায় আসে সকলে মিলে।

রোশনি আহমেদ বাসায় ফিরেই আগে সবার জন্য রান্নার বন্দোবস্ত শুরু করে দেয়। বিভোর প্রিয়তাকে নিয়ে সোজা ওর রুমে চলে যায়। প্রিয়তাকে বেডে বসিয়ে দেয়। তারপর কাবার্ড থেকে একটা পিচ কালারের সুতি থ্রি পিস এনে ওয়াসরুমে ঢুকিয়ে দেয়।

দীর্ঘ ৪০ মিনিট পর একেবারে শাওয়ার নিয়ে বের হয় প্রিয়তা। বেরিয়ে দেখে বিভোর খাবার নিয়ে এসেছে।
প্রিয়তাকে দেখে বিভোর মুখে হাসি টেনে এগিয়ে যায়।
অপলক তাকাই প্রিয়তার দিকে। শাওয়ার নিয়ে কত স্নিগ্ধ লাগছে প্রিয়তাকে। ভেজা চুল, ঘাড় বেয়ে নামছে পানি। কেমন ঘোর লেগে যায় বিভোরের।
বিভোর এগিয়ে গিয়ে টাওয়েল দিয়ে প্রিয়তাকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসিয়ে দিয়ে চুল মুছতে থাকে।

তারপর বেডের উপরে বসিয়ে দিয়ে বলে,,

‘:- এখন থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তুই নিচে নামবি না ‌।

:-কেন আমিতো এখন ঠিক আছি!!

:- না ঠিক নেই! পুরোপুরি রিকভার করতে এখনো পাঁচ-ছয় দিন লাগবে!!এই কয়দিন তুই সম্পূর্ণ বেড রেস্টে থাকবি। বিভরের কথায় ঠোঁট উল্টাই প্রিয়তা।

বিকেলে সবাই ডাইনিং রুমে একত্রে বসে। গুরুত্বপূর্ণ কিছু আলোচনার জন্য সবাইকে এক জায়গায় ডেকেছে সাজিদ খান। বিভোর প্রিয়তাকে নিচে নামতে দেয়নি। বাকি সবাই ড্রয়িং রুমে একত্র হয়। ধীরে সুস্থের সাজিদ খান বলেন,,

:- ভাইজান সবকিছুই তো আমাদের চোখের সামনে ঘটলো!! ছেলে মেয়ে দুজনই আমাদের নিজের!! প্রিয়তাকে কখনো আমি পর করে দেখিনি বিভার থেকে। প্রিয়তা যথেষ্ট মিষ্টি এবং বুদ্ধিমতী মেয়ে। আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন আমি কি বলতে চাইছি!! ছেলে মেয়েদের মাঝে যখন একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে তখন গার্জিয়ান হিসেবে আমাদের উচিত তাদের পরিণয় পাইয়ে দেয়া.

সাজিদ খানের কথাই নড়েচড়ে বসেন আনোয়ার হোসেন,, স্ত্রীর দিকে একবার তাকিয়ে বলেন,,

:- কি বলেন ভাইজান!! বিভোরকে কি আমরা চিনি না!! ছোট থেকে দেখছি। বিভোরের মতো একটা ছেলে লাখে একটা মিলবে নাকি সন্দেহ। তবে পরিণয়ের কথা বললে এখানেও একটা কিন্তু থেকে যায়। এলাকায় আমার একটা নাম ডাক আছে আপনাদের অজানা নয়।মেয়েটাকে এখানে রেখে লেখাপড়া করাচ্ছি এটা নিয়েও অনেকে অনেক ধরনের কথা বলে। এখন আমি ভাবছি যদি মেয়ে বিয়ে দেয়ার পর এমন কোন কথা ওঠে, আমার প্রিয়তা মায়ের চরিত্রের উপরে কোন আঙ্গুল ওঠে যে এখানে থেকেই তাদের ভেতরে কোন সম্পর্ক গড়ে উঠেছে বলে আমরা তাদের বিয়ে দিয়েছি। মেয়েকে আমরা সামলে রাখতে পারিনি।সেটা কি ভালো হবে??

আনোয়ার হোসেন কি বলতে চাইছে সেটা বিভোর খুব ভালো করেই বুঝতে পারে। বিভোর এগিয়ে এসে বলে,,

:- মামা আপনি এই যুগে এসে এইসব সমাজের ফালতু লোকের কথা ভাবছেন!! তারা কি এগিয়ে আসবে আপনার কোন কাজে?? তারা নিন্দাই করতে পারবে শুধু। তাছাড়া আমি….

বিভোর কে আর কিছু বলতে না দিয়ে সাজিদ খান বলেন,,

:- আহ,, আব্বু আমি তো কথা বলছি!! বড়দের মাঝে তুমি কিছু বলো না!
তারপর সাজিদ খান আবার বলেন ,,

:-দেখেন ভাইজান আমাদের ছেলে-মেয়েদের খুশি সবার উপরে! সমাজ কি বললো না বললো এসব দেখে আমাদের পেটে ভাত জুটবে না। আমি প্রিয়তাকে আমার পুত্রবধূ করে বাড়িতে তুলতে চাইছি। আপনাদের কোন আপত্তি আছে??

আনোয়ার হোসেন এবং নীলিমা হোসেন একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে সম্মতি দেন। প্রিয়তার মা বলেন ,,,

:-ভাইজান আমাদের কোন আপত্তি নেই। আপনি ঠিকই বলেছেন। ছেলে মেয়েদের ইচ্ছে ছেলেমেয়েদের খুশি আমাদের কাছে সবার আগে। আপনি বরং এত কিছু না ভেবে একটা ভালো দিন ঠিক করুন। আমরা ওদের আংটি বদলটা করিয়ে দিই। তারপর একটা ভালো দিন দেখে বিয়ের তারিখ ঠিক করলে হবে।

সবাই হাসিমুখে সম্মতি দেয়। পিয়ুস আড়ালে বিভা কে চোখ টিপ দেয়। সবার আড়ালে ঠোঁট গোল করে চুমু ছাড়ে। বিভা লজ্জায় লাল হয়। পিয়ুস তাকে ইশারায় বোঝায় এরপর আমাদের পালা।
বিভরের তো মনে মনে লাড্ডু ফুটছে। অবশেষে তার প্রিয় তার হবে। তার ঘরে তার বিছানায়🙈 24 ঘন্টা প্রিয়কে কাছে পাবে সে। আর কিছুই চাওয়ার নেই বিভোরের। পৃথিবীর সব সুখী নিহিত আছে তার প্রিয়র মাঝে। এটা ভাবতেই সুখ সুখ লাগছে বিভোরের।

বিভা তো বিয়ের খবরটা শুনেই ধুপধাপ সিঁড়ি বেয়ে দৌড় দেয় প্রিয়তাকে খবরটা জানানোর জন্য। বাকি সবাই বিভার কান্ড দেখে জোরে হেসে ফেলে।
রোশনি আহমেদ ছুটলেন ফ্রিজ থেকে মিষ্টি আনতে। বাড়িতে একটা বিয়ে বিয়ে আমেজ যেন এখন থেকেই শুরু হয়ে গেছে।

__________

প্রিয়তা বসে ফেসবুকে স্ক্রল করছিল তখনই হন্তদন্ত দৌড়ে আসে বিভা,,,

:-আপিই,,,বলে গলা জড়িয়ে ধরে প্রিয়তার। প্রিয়তা বিভার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,,

:- এত খুশি কেন কি হয়েছে??

:- আরে প্রিয়তাপু কি হয়েছে তুমি তো জানো না!! গ্রেট নিউজ আছে একটা !! কালকের পত্রিকা আর ম্যাগাজিনে ব্রেকিং নিউজ হবে বাংলাদেশের স্বনামধন্য তরুন বিজনেসম্যান দ্যা মোস্ট হ্যান্ডসাম পপুলার ইন্টারন্যাশনাল ক্রাস বিভোর খান অবশেষে লাখো মেয়েদের হৃদয় ভেঙে চুরমার করে দিয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চলেছে!!

বিভোর বিবাহ করতে চলেছে শুনে চমকে ওঠে প্রিয়তা,,

:-মানে কি বলছিস তুই??

:-ঠিকই তো বলছি। কিছুক্ষণ আগেই তো বিভোর ভাই আর বিয়ে ঠিক হলো। আমি নিজেই তো দাঁড়িয়ে থেকে শুনে এলাম।

:-মানে?? বিভোর ভাইয়া বিয়ে করবে?? সে রাজি হয়েছে??

:- হয়েছে মানে ভাইয়া তো এক পায়ে খাড়া। ভাইয়াই তো সব থেকে বেশি এক্সাইটেড কারণ বিয়েটা তো তার প্রিয়র সাথে হচ্ছে!!! বলেই খিল খিল করে হেসে ওঠে বিভা।

এতক্ষণে স্বস্তির নিঃশ্বাস নেই প্রিয়তা। হুট করে বিভোরের বিয়ের খবর শুনে বুকের ভেতরটা কেমন করে উঠেছিল!! মুহূর্তেই লজ্জায় লাল হয়ে যায় মুখ। অবশেষে তার স্বপ্ন সত্যি হতে চলেছে। সে হবে বিভোর এর অর্ধাঙ্গিনী।

______

রাতে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশের চাঁদের দিকে তাকিয়ে ছিল প্রিয়তা। তখনই পেছন থেকে কেউ জড়িয়ে ধরে কাঁধে থুতনি রাখে। শিউরে ওঠে প্রিয়তা।
বিভোর আবেশে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তার প্রিয় কে!!

:-আকাশের চাঁদের দিকে কি দেখছেন মহারানী!! আপনার চাঁদ তো আপনার পিছনে!!

:- মুখ নিচু করে হাসে প্রিয়তা। বিভোর প্রিয়তাকে ঘুরিয়ে সামনে নিয়ে আসে ।মুখের ওপর এলোমেলো হয়ে থাকা চুলগুলো সরিয়ে কানের পিছে গুজে দেয়।গালের এক পাশে হাত রেখে বলে,,,,

:-প্রিয় তুই প্রস্তুত তো আমার অর্ধাঙ্গিনী হতে!!!

প্রিয়তা মুখে কিছু না বলে জড়িয়ে ধরে বিভোরকে। বিভোর তার সম্মতি পেয়ে গেছে। বিভোর প্রশান্তির হাসি হেসে জড়িয়ে ধরে প্রিয়তাকে। প্রিয়তার শরীরের গন্ধ যেন বিভোরের কাছে টনিকের মতো কাজ করে। সব ক্লান্তি অবসর দূর করে দেয় নিমিষেই ।
এই মেয়েটা তার সমস্ত শিরায় উপশিরায় মিশে গেছে। প্রিয়তাকে সে সবার থেকে আড়াল করে নিজের বুকে বন্দী করে ফেলতে চাই। যেন অন্য কেউ সেখান থেকে তাকে কেড়ে নিতে না পারে ।প্রতিটা রন্ধে রন্ধে আবদ্ধ করে ফেলতে চায় প্রিয়তাকে। সেখানে অন্য কারো হস্তক্ষেপ চলবে না!! কিছুতেই না!!

প্রিয় তার ঘাড়ের একপাশ থেকে চুল সরিয়ে গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয় বিভোর। সারা শরীরে যেন বিদ্যুৎ খেলে যায় প্রিয়তার। বিভরের শার্ট খামচে ধরে প্রিয়তা। কিছুক্ষণ পর মুখ তুলে প্রিয় তার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয় বিভোর। আবেশে শুষে নিতে থাকে প্রিয় তার অধর সুধা।
প্রায় ১০ মিনিট পর প্রিয়তার তার ঠোঁট ছেড়ে দিয় বিভোর‌। জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে হবে দু’জনে ।
কপালে কপাল ঠেকায় বিভোর। ফিসফিস করে বলে,,,

:-ভালোবাসি !!ভীষণ ভালোবাসি!! প্রতিটা মুহূর্ত ভালোবাসি!!

প্রিয়তা আবেশে বিভোরের বুকে মাথা ঠেকায়। বিভোরের হার্টবিট যেন একশো দশে চলছে,,, কান পেতে শুনে সেই হার্টবিট এর শব্দ। প্রতিটা মুহূর্তেই যেন প্রিয়তার নাম জপ করছে সেখানে। এই হার্টবিট এর শব্দ টাও প্রিয়তার কাছে গানের সুমধুর ছন্দের মতো শোনায়।

________

সন্ধ্যায় পিয়ুস বাবা মাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছিল। সামনেই প্রিয়তার এনগেজমেন্ট। বাড়িতে অনেক কাজ পিয়ুসকেই সবকিছু সামলাতে হবে।
ডিনার সেরে নিজের রুমে গিয়েই বিভাকে কল করে পিয়ুস।

দুবার রিং হতেই রিসিভ করে বিভা।

:- হ্যালো পিয়ুস ভাইয়া ।বাসায় পৌঁছে গেছেন??

:-তুমি কিন্তু আমাকে প্রমিজ করেছিলে বিভাবতি ❤️ বাড়ির সবার সামনে ছাড়া আমাকে ভাইয়া বলে ডাকবে না!!

ফোনের ওপাশের জিব কাটে বিভা,,,

:- সরি !!অনেক দিনের অভ্যাস তো তাই মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে।

:-আচ্ছা হয়েছে আমি বাসায় এসেছি ডিনার করলাম মাত্র। কাল থেকে অনেক কাজ!!

:-ভাইয়ার প্রিয়তাপুর বিয়ে বলে কথা!! (আমাদের বিয়েটা যে কবে হবে) বিড়বিড় করে বললেও কথাটা কানে আসে পিয়ুসের,,, দুষ্টু হেসে পিয়ুস বলে,,

:-কেন গো বিভাবতি ❤️ আমাকে ছেড়ে থাকতে পারছে না বুঝি!!

:-অসভ্য একটা!! কি ফাজিল তুমি! আমি সেটা কখন বললাম??

:-ও তার মানে আমাকে ছেড়ে থাকতে পারছো?? তাহলে তো আমাদের বিয়েটা না হলেও সমস্যা নেই!!

:-এই না না আমি সেটা কখন বললাম??

এবার শব্দ করে হাসে পিয়ুস,,,,

:- হাহাহাহা,,,, কি ব্যাপার বলতো বিভাবতি ❤️ তুমি তো নিজেই বুঝতে পারছো না কি করবে। একবার বলছো আমাদের বিয়েটা যে কবে হবে!! আবার বলছে অসভ্য! আমি নিজেই তো কনফিউজড হয়ে যাচ্ছি তুমি কি চাও!!

:-আগে ভাইয়া আর প্রিয়তাপুর বিয়েটা হয়ে যাক, তারপর আপনাকে বোঝাবো আমি কি চাই!!!

:-ওকে আমার বউটা!! আপনার জন্য তো জান হাজির!!!

পিয়ুষের মুখে বউ ডাক শুনে লজ্জা পায় বিভা। অন্যরকম একটা অনুভূতি শিহরণ খেলে যায়।

_________

বিকেলের দিকে সেজেগুজে বাসা থেকে বের হয় রিয়া। দুপুরেই প্রিয়তা তাকে বিয়ে ঠিক হওয়ার নিউজটা দেয়। ফোন করে বলেছে আগামীকাল তাদের এংগেজমেন্টের আয়োজন করা হয়েছে। রিয়া যেন আজকেই যাই প্রিয়তার ওখানে।আজ থেকে বিয়ের দিন পর্যন্ত ওকে থাকতেই হবে।

রিয়ার পরিবারের লোকেরা প্রিয়তাকে যথেষ্ট ভালোবাসে। বিশ্বাস করে‌। রিয়াকে কখনো প্রিয়তার সাথে মিশতে না করে না। যখন যেখানে যেভাবে চাই প্রিয়তার সাথে সেখানেই যেতে দেয়।
রিয়ার বাবা-মা কেউ ইনভাইট করা হয়েছে। তারা সরাসরি এনগেজমেন্টের দিন এবং বিয়ের দিন উপস্থিত থাকবেন বলে কথা দিয়েছেন।কিন্তু রিয়াকে আগেই পাঠিয়ে দিতে বললেও তারা আপত্তি করে না। তাই রিয়া সবকিছু গুছিয়ে রওনা দেয় বিভোরদের বাড়ি। একটা রিক্সা নিয়ে আসছিল রিয়া। মাঝ রাস্তায় রিক্সাটার টায়ার পাংচার হয়ে যায়। মেজাজটা বিগড়ে যায় রিয়ার। এমন একটা জায়গা যেখানে খালি রিকশা পাওয়াও দুষ্কর।
রিক্সার ভাড়া মিটিয়ে লাগেজটা টেনে নিয়ে বিরক্তিতে বিড়বিড় করতে করতে হাঁটতে থাকে সামনের দিকে। এমন সময় একটা চকলেট কালারের কার এসে ঠিক রিয়ার সামনে ব্রেক কষে। আর একটু হলেই রিয়ার গায়ে মেরে দিতো গাড়িটা। এমনিতেই মেজাজ বিগড়ে আছে রিয়ার, তার উপরে আরো এক্সিডেন্ট হতে হতে বেঁচে গিয়েছে। বেশ বিরক্ত হয়ে গাড়ির দিকে এগিয়ে যায় সে। তারপর গাড়ির জানালায় কাঁচের টোকা দিয়ে বলে ,,

:-এই যে চোখ কি কপালে নিয়ে গাড়ি চালান মিস্টার?? এই যে হ্যালো শুনতে পাচ্ছেন!! রাস্তায় কি মানুষ মারার জন্য বেরিয়েছেন নাকি??নাকি চোখ বাড়িতে রেখে এসেছেন??

এমন সময় গাড়ির কাচ না নিচে নামতেই আবিরের মুখ সামনে আসে। আবিরকে দেখে আরো মেজাজ বিগড়ে যায় রিয়ার। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,,,

:- তাইতো বলি এরকম অসভ্য ফাজিল বাজে ডাক্তার ছাড়া এরকম কাজ করবে কে !!!!ইচ্ছে করে এক্সিডেন্ট করিয়ে হসপিটালে রোগী বাড়ান আপনি??
রিয়ার কথা শুনে হতভঙ্গ হয়ে যায় আবির ।গাড়ি থেকে নেমে এসে রিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,,,

:-এই যে রিয়া, ওরফে টিয়া !!!আপনি দেখছি বাঁচাল, বোঁচা ,,বান্দরনী,,ভিতু সাথে আবার ঝগড়ুটেও।
না জানি আর কত কত রূপ আছে আপনার।
আর হ্যাঁ কি যেন বলছিলেন আমি আপনার গায়ে গাড়ি মেরে দিচ্ছিলাম?? আমি আপনার গায়ে মেরে দিচ্ছিলাম না, আপনি হুশ জ্ঞান হারিয়ে রাস্তার মাঝ বরাবর দিয়ে হাঁটছিলেন। বলি রাস্তাটা কি আপনার কেনা??
রিয়া আবিরের মুখের সামনে আঙ্গুল তুলে বলে,,

:-দেখুন !!

সাথে সাথে আবি রিয়ার দিকে এগিয়ে এসে ঝুঁকে বলে,,

:-হ্যাঁ দেখান!!

আবিরের কাজের থতমত খেয়ে যাই রিয়া।

:-অসভ্য লোক বাজে ডাক্তার আপনার সাথে কথা বলাই আমার ভুল হয়েছে!!
বলে লাগেজ টানতে টানতে আবিরের পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যায়। আবির আবার দৌড়ে এসে রিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,,,
:- এই যে রিয়া ওরফে টিয়া এই অসময়ে লাগেজ টানতে টানতেকোথায় যাচ্ছেন?? ওহো বুঝতে পেরেছি!! নিশ্চয়ই আপনার বাড়ির লোকের আপনাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে!!দেবেই বা না কেন।যে পরিমাণের বাঁচাল আপনি, নিশ্চয়ই আপনার কথা সহ্য করতে না পেরে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে।
এবার রিয়ার মাথা আরো বেশি গরম হয়ে যায়।রেগে মেগে তাকাই আবিরের দিকে।

:-কেন আপনার বন্ধুর বিয়ে ঠিক হয়েছে জানেন না তাও আবার আমার বান্ধবীর সাথে সেখানেই যাচ্ছি আমি!! মাঝ রাস্তায় রিক্সা খারাপ হয়ে গেছে!!

আবির সবটা বুঝতে পেরেও ঠাট্টা করে বলে,,,

:-আমার কি মনে হয় বলুন তো!! রিক্সা খারাপ হয়নি!! আপনি মনে হয় রিকশায় বসেও বকবক করছিলেন !!তাই রিক্সাওয়ালা আপনার থেকে বাঁচার জন্য রিক্সা রিকশা খারাপ হওয়ার নাম করে রিক্সা নিয়ে ভেগেছে।

রিয়ার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায় আবিরের দিকে রেগে রেগে তেড়ে গিয়ে বলে,,,

:-এই আপনাকে ডাক্তার কে বানিয়েছে বলুন তো? ডাক্তারদের মনে তো এত জিলাপির প্যাচ থাকে না!! আপনি নিশ্চয়ই টুকলি করে পাস করে ডাক্তার হয়েছেন!!

:-কি বললে তুমি আমি টুপি করে পাশ করে ডাক্তার হয়েছি??

:-হ্যাঁ একদম তাই করেছেন আপনি। আপনার বিহেভিয়ারে সেটা বোঝা যাচ্ছে!! বাই দ্যা ওয়ে আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে!! আপনি এবার আমার রাস্তা থেকে ফুটুন তো।

আবির বুঝতে পারে রিয়া সত্যিই রেগে যাচ্ছে। অবশ্য আবির রিয়ার রাগী মুখটা দেখার জন্য ইচ্ছে করেই এসব বলে ওকে রাগাচ্ছিলো। রিয়াকে আবার হাঁটতে দেখে দ্রুত গিয়ে রিয়ার হাত টেনে ধরে,,

:-মাঝ রাস্তার অসভ্যের মতো হাত ধরছেন কেন??

:-দেখুন মিস রিয়া টিয়া!! আপনার হাত ধরে এখানে রোমান্স করার কোন ইচ্ছা নেই আমার। (রোমান্স করতে চাইলে অনেক জায়গা আছে) বিড়বিড় করে বলে আবির।

:-আজব রোমান্স করার কথা কখন বললাম আমি ??আর হাতই বা ধরছেন কেন??

:-ধরছি এই কারণে যে আমি বাংলাদেশের একজন সচেতন নাগরিক। এই ভর সন্ধ্যাবেলা একটা মেয়েকে এরকম রাস্তায় খুল্লামখুল্লা ছেড়ে তো আর দিতে পারি না। আমিও বিভোরের বাড়িতে যাচ্ছিলাম। আপত্তি না থাকলে আমার গাড়িতে যেতে পারো।

:- নও নিড। thanks,,

:-দেখুন রিয়া টিয়া এখন ইগো দেখানোর সময় নয়!! সন্ধ্যে হয়ে আসছে।এখানে কোন রিক্সাও পাবেন না।আমার সাথে গেলে অন্তত সেফলি পৌঁছাতে পারবেন।

রিয়াও মাথা ঠান্ডা করে ভেবে দেখে আবির যেটা বলছে সেটা ঠিকই। তাই আর কোন কথা না বলে গাড়িতে গিয়ে বসে। আবিরও মুখে একটা বিশ্বজয়ের হাসি টেনে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ে।

To be continue,,,,,,