প্রিয় আসক্তি পর্ব-১৪ এবং শেষ পর্ব

0
344

#প্রিয়_আসক্তি 🔥
Titli
(অন্তিম পর্ব)

❤️❤️❤️❤️❤️❤️

সময় ও স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। সময় তার নিজ গতিতে অনন্তকাল বহমান। নিজ গতিবেগে পেরিয়েছে আরো কিছু দিন। সাথে সাথে কিছু দুষ্ট মিষ্টি পরিণয়ের মধ্যে দিয়ে মজবুত হয়েছে দুটি সম্পর্ক।

প্রিয়তা ,বিভোর এবং আবির ,রিয়া দুজনেরই সম্পর্কের বেশ উন্নতি হয়েছে। রিয়া পুরোপুরিভাবে আবিরকে মেনে নিয়েছে। ভালবাসতেও শুরু করেছে। এখনো সুযোগ পেলেই দুজন ঝগড়া শুরু করে দেয়। তবুও ঝগড়া খুনসুটির সম্পর্কের মধ্য দিয়ে তাদের দুজনের সংসার বেশ ভালই চলছে। বিভোর রোজ প্রিয়তা আর বিভা কে কলেজ ছেড়ে অফিসে যায়। আবিরও রিয়াকে ভার্সিটিতে ছেড়ে তবেই হসপিটালে যায়।

_______

কয়েকদিন পরেই পিয়ুস বিভারর বিয়ে। দুই বাড়ির সবাই তাদের সম্পর্কটা মেনে নিয়েছে। পিয়ুসই সবাইকে জানিয়েছিলো ব্যাপারটা। সবাই নিজেদের ছেলেমেয়েদের খুশিটাই প্রধান্য দিয়েছেন।
বিয়েটা খুবই জাকজমক করেই হবে।গায়ে হলুদ থেকে শুরু করে মেহেন্দি দিয়ে সবটাই প্রিয়তার বাবার বাড়িতে অনুষ্ঠিত হবে। যেহেতু প্রিয়তার বিয়েটা বিভোরদের বাড়িতে হয়েছিলো তাই পিয়ুসের বিয়েটা সে নিজ বাড়িতেই করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

💛পিয়ুস বিভার হলুদ সন্ধ্যা 💛

দেখতে দেখতে গায়ে হলুদের দিন চলে আসে। প্রিয়তা আর রিয়া খুবই ব্যস্ত। মোটকথা মহিলা মহল দুইজনে সামাল দিচ্ছে। পাক্কা সংসারী হয়েছে দুজনে। তারমধ্যে কয়েকজন মহিলা প্রিয়তাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করে বাচ্চাকাচ্চার ব্যাপারে। প্রিয়তা ভীষণ লজ্জা পায়। ঠিক সেই সময়ই বিভোর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো। কথাটা তার কানে আসে। বউকে লজ্জা পেতে দেখে বিভোর এগিয়ে আসে। বলে,,

:- চিন্তা করবেন না আন্টি !!আমাদের ঘরে ছেলে মেয়ে যায় আসুক খবরটা আপনার বাড়িতে পৌঁছে যাবে। শুধু শুধু আমার বউটাকে লজ্জা দিচ্ছেন কেনো ??

বিভোরের কথা শুনে প্রিয়তা পারেনা মাটি ফাঁক করে ঢুকে যায়। উপস্থিত সবাই হিহিহ করে হেসে ওঠে। প্রিয়তা সেখানে দাঁড়াতে পারে না। দৌড়ে বিভার কাছে চলে যায়।

এদিকে রিয়া অনেকক্ষণ ধরে বসে থেকে কোমরটা ধরে গেছে। বিভার হাতে মেহেন্দি দিয়ে দিচ্ছিলো সে। বেশ কয়েকদিন ধরে শরীরটা মোটেই ভালো যাচ্ছে না রিয়ার। আবির সারাদিন হসপিটালে কাজ করে রাতের দিকে বাসায় আসে তাই আবিরকে কিছু বলেওনি সে। আজ কয়েকদিন থেকে থেকেই মাথাটা কেমন ঘুরছে। তবুও ঠিক পাত্তা দেয় না রিয়া‌।সবার সাথে বিয়ের আনন্দে মেতে ওঠে।

❤️পিয়ুস বিভার বিয়ে❤️

বিভা লাল টুকটুকে বউ সেজে অপেক্ষা করছে পিয়ুসের জন্য ।প্রিয়তা বিভাকে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে। দুই বান্ধবী মিলে নানা দুষ্টু কথা বলে বিভাকে লজ্জা দিচ্ছে। বিবাহ কম যায় না সেও তার ভাবি আর রিয়াকে ছেড়ে কথা বলে না। আরো কয়েকজন কাজিন আর বান্ধবীরাও যোগ দিয়েছে তাদের সাথে। দেখতে দেখতে বিয়ের সময় এগিয়ে আসে।

এক সময় কাজী এসে বিয়ের কার্যক্রম শুরু করে। বিভার বুকটা দুরু দুরু করছে। আজ সত্যিই তার পিয়ুসের সাথে বিয়ে। সে পিয়ুষের অর্ধাঙ্গিনী হবে।আজ থেকে তার জীবন সম্পূর্ণ বদলে যাবে। বদলে যাবে কিছু পরিচয় কিছু সম্পর্ক। তার জীবনের ভালো-মন্দ সকল কিছুর সাথেই পিয়ুষের নাম জুড়ে যাবে। ভাবতেই মনের মধ্যে অন্যরকম একটা শিহরণ বয়ে যায়। সেই মানুষটা যাকে সে মন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে। কখনো স্বপ্নেও ভাবতো না সেই মানুষটা তাকে ভালবাসবে। আর একদিন তার বউ হয়ে তারই ঘরে অবস্থান করবে সে। লজ্জা রাঙা মুখে তৃপ্তির হাসি হাসে বিভা।

কিছুক্ষণ পর পিয়ুষ আর রিভার বিয়েটা ধুমধাম করে হয়ে গেলো ।বাসর ঘরের লাল টুকটুকে বউ সেজে বসে আছে বিভা। বিভা বেশ ঘাবড়ে আছে। আবার ভালোও লাগছে। অন্যরকম এক অনুভূতিতে আচ্ছন্ন হয়ে আছে মন প্রাণ। কিছুক্ষণ পর পিয়ুস গোল্ডেন কালারের শেরওয়ানি পরে রুমে প্রবেশ করে। পিয়ুস কে দেখে বিভা বিছানা থেকে নেমে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে নিলে থামিয়ে দেয় পিয়ুস।

:-বিভাবতি এটা কি করছো??

:-কেনো সবাই যে আমাকে বললো তুমি আসলে আগে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে!!! কিন্তু তুমি তো আমাকে সালাম করতেই দিলে না!!

পিয়ুস বিভার কথা শুনে হাসতে হাসতে বলে,,,

:-পাগলী পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে নেই!! তোমাকে এত নিয়মকানুন দেখাতে হবে না। তাছাড়া তোমার স্থান আমার পায়ে নয় আমার বুকের বা পাশে।

বিভাকে পরম আবেগে জড়িয়ে ধরে পিয়ুস। বিভাও পিয়ুস কে জড়িয়ে ধরে শান্তিতে চোখ বন্ধ করে। কিছুক্ষণ পর চোখ খুলেই তার নজর যাই পাশেই রাখা টেবিলের উপরে একটা ডায়েরির দিকে। কপাল কুঁচকে ভাবে বিভা,, (পিউস ডায়রী লিখতো!!) কি লিখতো সেটা দেখার কৌতুহল জাগে বিভার।
পিয়ুষকে ছেড়ে টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় বিভা। ডায়েরিটা হাতে নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখে। প্রথম পেজ খুলে দেখে তারিখটা অনেক পুরনো ৮-১০ বছর আগের। বেশ অবাক হয় বিভা। এতদিনের পুরনো ডায়েরী এত যত্ন করে রেখেছে কেনো??

ডায়েরির প্রথম পেজ থেকে শুধুমাত্র বিভাকে নিয়ে লেখা। বিভা পিয়ুসের হাতের লেখা চেনে। এটা বুঝতে পারে তাকে নিয়েই লিখেছে। ডাইরিটার প্রথম পেজেই গোটা গোটা অক্ষরে লেখা,,
(তোমাকে নিয়ে আমার অনুভূতি কখনই বদলাবে না বিভাবতি ❤️ জানিনা এ কেমন অনুভূতি!! কিন্তু অনুভূতিটা খুবই ভয়ঙ্কর)

দ্বিতীয় পেজে লেখা,, (তোমাকে নিয়ে ভাবতে ভীষণ ভালো লাগে বিভাবতি ❤️ তুমিও কি আমাকে নিয়ে ভাববে কোনদিন?? মনের অনন্ত গহীনে আমার নামটা লিখবে? যেভাবে আমি লিখেছি তোমার নাম!! বিভাবতি,,, বিভাবতি এই নামটাই তো সারাক্ষণ জপ করে হৃদপিণ্ডে।)

তৃতীয় পেজে লেখা ,,,,(ভীষণ ভালোবাসি বিভাবতি ❤️ কবে বড় হবে তুমি?? কবে বুঝতে শিখবে আমার অনুভূতি?? আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না!! চোখের সামনে তুমি জীবন্ত পদ্ম ফুলের মত ফুটে উঠছো দিন দিন। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে কষ্ট হয়। মনের ভেতরের জমিয়ে রাখা সমস্ত ভালোবাসার আকুতিগুলো ঠিকরে বেরিয়ে আসতে চাই। তোমাকে জানাতে চাই!! ভালবাসতে চাই !!বুকের মাঝে তোমাকে চাই!! কিন্তু তুমি তো বড়ই হও না। তাড়াতাড়ি বড় হও না বিভাবতি ❤️)

এটা পড়েই হেসে ফেলে বিভা। এরকম হাজারো অনুভূতি প্রকাশ করেছে এক একটা পাতায়। ডাইরিটা হাতে নিয়ে পিয়ুশের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,,,

:- আপনি দশ বছর ধরে আমাকে এতটা ভালোবাসেন?? তখন থেকে ডাইরি লিখেন !!!আর আমি বুঝতেই পারলাম না!!😔😔
পিয়ুস হেসে বলে,,,

:- এমনি এমনি কি তোমাকে ছোট বলি!! তোমাকে নিয়ে আমার অনুভূতি 10 বছর আগে থেকেই মনের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়েছে। আমি না চাইতেও তোমার কথা বার বার ভাবতাম। তাই অনুভূতিগুলো তোমাকে বলতে না পেরে ডায়েরীর পাতায় বন্দি করতাম।

:-এত কেন ভালবাসেন আমায়??

:-ভালোবাসার সংজ্ঞাটা আজও আমার কাছে অজানা। শুধু এটা জানি ভীষণ ভালোবাসি তোমায় !!তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না!! আমার বাঁচার অক্সিজেন তুমি !!আমাকে বাঁচতে হলে তোমাকে ভীষণ প্রয়োজন। ভীষণ ভালোবাসি তোমায় বিভাবতি ❤️

বিভা হুট করেই পিয়ুশের গলা জড়িয়ে ধরে ঠোটে চুমু খেলো।
পিয়ুস বিভার কাজ দেখে হেসে বলে ,,,

:-এটা তুমি কি করলে বিভাবতি ❤️

বিভা হেসে বলে,,

:- কেন আমার বর কে আদর করলাম!!

পিয়ুস বিভাকে জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলে,,

:-তাহলে তো এবার আমার পালা!!

:-কিসের পালা শুনি?

:-কেনো আমার বউকে আদর করার পালা!!

বলেই বিভার গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয় পিয়ুস।কেঁপে ওঠে বিভা।ছোট ছোট চুমুই ভরিয়ে দেয় বিভাকে। তারপর বিভা ঠোঁট দুটো নিজের আয়ত্ত করে নেয়। আস্তে আস্তে মিলিয়ে যায় দুজনের মাঝের দুরত্ব।

_________

ভার্সিটি থেকে রিয়া আর প্রিয়তা শপিং করতে গিয়েছিলো। বর’দের তো আর সময় নেই!! তাই দুই বান্ধবী বেরিয়েছিলো। তাছাড়া দুদিন পরেই বিভা আর পিয়ুস আসবে। তাই ওদের জন্য কিছু শপিং করবে বলে ঠিক করেছে প্রিয়তা। রিয়াও কিছু কেনাকাটা করবে তাই দুই বান্ধবী শপিংমলে এসেছে। বেশ কিছু কেনাকাটা করার পর একটা কফিশপে এসে বসে দুইজন। প্রিয়তা হাতের শপিং ব্যাগগুলো একপাশে রেখে ওয়েটারকে দুটো কোলড্রিংস দিতে বলে।
অনেকক্ষণ ধরেই রিয়া কেমন ঝিম ধরে বসে আছে। তার হাঁটাচলা দেখে মনে হচ্ছে অনেকটা অনীহা নিয়ে হাঁটাচলা করছে। প্রিয়তা বেশ কয়েকবার খেয়াল করেও কিছু বলেনি। এবার বলে ,,,,

:-রিয়া তোর কি শরীর খারাপ লাগছে?? তোকে কেমন ক্লান্ত দেখাচ্ছে।

রিয়া চোখ তুলে প্রিয়তার দিকে তাকায়। বলে ,,

:-আর বলিস না কয়েকদিন ধরে শরীরটা একটু ভালো যাচ্ছে না! একটু বেশি হাটাহাটি করলেই কেমন হাঁফিয়ে উঠছি। মাথাটা কেমন ঘুরছে।কিছু খেতেও পারছি না। কেমন বমি বমি একটা ভাব লেগে থাকছে।

রিয়ার কথা শুনে প্রিয়তা কিছু একটা ভেবে বললো,,

:- রিয়া তুই ঠিক আছিস?? আই মিন তুই কনসিভ করিসনি তো ??
প্রিয়তার কথা শুনে রিয়া বড় বড় চোখ করে তাকালো। এরকমটা তো সে ভেবেই দেখেনি। সিজনাল শরীর খারাপ ভেবে আবিরকেও কিছু বলেনি। কিছুক্ষণ চুপ থেকে হিসেব মিলয়ে দেখে তার তো গত দুই মাসে পিরিয়ডও হয়নি। এরকম একটা গাধার মতো কাজ কি করে করতে পারলো!! রিয়ার তো বোঝা উচিত ছিলো !হঠাৎ এক্সাইটেড হয়ে দাঁড়িয়ে পড়তেই মাথাটা ঘুরে আসে রিয়ার। সাথে সাথে চোখের সামনে অন্ধকার নেমে আসে।
রিয়াকে ঢলে পড়তে দেখে প্রিয়তা সাথে সাথে ধরে ফেলে ।সেখানকার কয়েকজনের সাহায্য নিয়ে গাড়িতে উঠিয়ে প্রিয়তা রিয়াকে নিয়ে আবিরের হসপিটালে আসে।

আবির তখন রাউন্ডে ছিলো ।একজন ওয়ার্ড বয় এসে জানায়,,

:- স্যার বাইরে কেউ একজন এসেছে। আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।বললো ইমার্জেন্সি দরকার।
আবির তাকে বলে,,

:- আমি তো এখন ডিউটিতে আছি!! কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে বলুন। আমি আসছি।

ওয়াট বয় খানিকটা আনতাম তা করে বলে,,

:- স্যার বললো ইমারজেন্সি !!প্রিয়তা না কি নাম বললো যেনো!!

প্রিয়তার নাম শুনে ভ্রু কুঁচকে যাই আবিরের। প্রিয়তা হঠাৎ করে হসপিটালে কেন আসবে। ওকে আর রিয়াকে তো এখন ভার্সিটিতে থাকার কথা। বেশ কয়েকদিন ধরে রিয়ার উইকনেসটা আবিরের চোখেও ধরা পড়েছে। রিয়া কিছু না বলাই আবির কিছু জিজ্ঞাসা করেনি ।
হঠাৎ প্রিয়তাকে হসপিটালে আসতে দেখে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে যায় আবির।

হসপিটালে রিসিপশনে রিয়াকে কাঁধের উপরে আগলে নিয়ে বসে ছিলো প্রিয়তা।আবীর কে আসতে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সে। রিয়াকে প্রিয়তার কাঁধে ওভাবে অজ্ঞান অবস্থায় দেখে প্রান যেন উড়ে যায় আবিরের। দ্রুত এসে রিয়াকে আগলে ধরে বলে,,

:- কি হয়েছে রিয়ার??

প্রিয়তা আবিরকে সবকিছু খুলে বলে। আবির রিয়াকে কেবিনের শিফট করে। চেকআপ করে ইনজেকশন দেয়। হাতে স্যালাইনের কেনোলা লাগিয়ে সবকিছু ঠিকঠাক করে কিছু টেস্ট নিয়ে পাঠিয়ে দেয় ল্যাবে।
অদ্ভুত শঙ্কা কাজ করছে মনে। সত্যিই কি রিয়া প্রেগন্যান্ট!!

ভাবতেই বুকের ভেতরে ধক ধক করছে আবিরের। তাদের দুজনের সংসার পূর্ণ করতে সত্যি কি আসতে চলেছে নতুন একটা প্রান,,,, কিছুক্ষণ পর নার্স এসে আবিরের হাতে রিপোর্ট টা দিয়ে যায়। কাঁপা কাঁপা হাতে রিপোর্ট টা খুলে দেখে আবির। কাঙ্খিত রেজাল্ট দেখে সেখানেই চেয়ারে ধস করে বসে পড়ে। অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে তার।

________

ঘন্টা ২ পর চোখ খুলে রিয়া। হাতে টান পড়তেই ব্যথা অনুভূত হয়। চোখ খুলে আশেপাশে তাকাই। বুঝতে চেষ্টা করে সে কোথায়!! বেড আর সাদা পর্দা দেখে বুঝতে পারে সে হসপিটালে অবস্থান করছে। হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে স্যালাইন চলছে। একপাশের সোফায় মাথা কাত করে দিয়ে ঘুমিয়ে আছে প্রিয়তা।আর তার মাথার কাছে রিয়ার আরেকটা হাত চেপে ধরে বসে আছে আবির। কেবিনের দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সন্ধ্যা হয়ে এসেছে প্রায়।

হাতে নাড়া পড়তেই আবির রিয়ার দিকে তাকায়। রিয়ার জ্ঞান এসেছে দেখে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে চোখে মুখে কপালে চুমু এঁকে দেয়। বলে,,,

:-রিয়া টিয়া পাখি ঠিক আছো তুমি???

:- আমি,,, এখানে,,কি হয়েছিলো আমার!! আমি আর প্রিয়তা তো শপিং মলে ছিলাম। তারপর,,,, তারপর

:- আচ্ছা হয়েছে আর ভাবতে হবে না ।তারপর তুমি জ্ঞান হারালে!! প্রিয়তাই তোমাকে হসপিটালে নিয়ে এসেছিলো ।এখন কেমন লাগছে তোমার??

:- আমি ঠিক আছি। শুধু মাথাটা একটু ঝিম ঝিম করছে।

আবির আর রিয়ার কথা শুনে ঘুম ভেঙ্গে যায় প্রিয়তার! সারাদিনের ধকলে চোখটা লেগে এসেছিল তার। হন্তদন্ত উঠে এসে জিজ্ঞাসা করে,,,

:- রিয়া তোর জ্ঞান ফিরেছে!! ঠিক আছিস তুই??

রিয়া মুচকি হেসে বলে,,

:- ঠিক আছি।

সেই মুহূর্তেই বিভোর কিছু মেডিসিনের প্যাকেট নিয়ে কেবিনের প্রবেশ করে। রিয়াকে জ্ঞান ফিরতে দেখে নিশ্চিন্ত হয়।তারপর আবিরের দিকে গিয়ে বলে,,,

:- আমি সবকিছু ঠিকঠাক করে এসেছি!! এখন চল বাইরে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে!!
রিয়ার হাত থেকে স্যালাইনটা খুলে কোলে তুলে নেয় আবির। সামলাতে না পেরে আবিরের গলা জড়িয়ে ধরে রিয়া। সেভাবেই রিয়াকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। তারপর বিভোর আর প্রিয়তা আবির আর রিয়াকে ড্রপ করে দিয়ে বাসায় চলে যায়।

_________

সেই কখন থেকে আবিরকে জড়িয়ে ধরে হেঁচকি তুলে কাঁদছে রিয়া। মা হওয়ার সুসংবাদটা শুনে আবেগে আপ্লুত হয়ে গেছে সে। আবীর রিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে আদুরে কণ্ঠে বলে,,

:- রিয়া টিয়া পাখি !!আর কত কাঁদবে তুমি?? এখন কাঁদলে হবে?? তুমি জানো আমি কতটা খুশি!! আমাদের এই ছোট্ট সংসারের একটা ছোট্ট প্রাণ আসছে!! একটা ছোট্ট রিয়া টিয়া আসছে!! আর তুমি কাঁদছো??

রিয়া চোখ তুলে আবিরের দিকে তাকিয়ে বলে,,,

:- কোন রিয়া টিয়া আসবে না !!জুনিয়র আবির আসবে।

:-তাই?? কিন্তু আমার যে রিয়া টিয়াপাখিই চাই !!!

আবারো আবিরের বুকে মুখ গুজে রিয়া। আবির পরম আবেগে জড়িয়ে ধরে বলে,,,

:- আল্লাহ ভরসা!! তিনি খুশি হয়ে আমাদেরকে যায় দিবেন তাকেই আমরা আদর যত্নে বড় করবো। দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে সুখের স্বপ্ন বুনতে থাকে!!

___________

দুদিন হলো বিভা পিয়ুসে এ বাড়িতে এসেছে। বেশ হাসি খুশি আনন্দে পার হচ্ছে তাদের দিনগুলো। পিয়ুস বিভাকে একটু বেশিই ভালোবাসে। রিয়ার প্রেগনেন্সির খবর শুনে সবাই ভীষণ খুশি। বিভাকে নিয়ে হানিমুনে যাওয়ার প্ল্যান করছে পিয়ুস।

এদিকে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে প্রিয়তা। যবে থেকে রিয়ার প্রেগনেন্সির খবরটা শুনেছে তখন থেকে বিভোরের কানের কাছে টেপ রেকর্ডারের মতো চলতেই আছে ,,,আমরা কবে বেবি নেবো?? আমি কবে মা হবো??
বিভোর কোনমতেই প্রিয়তাকে বোঝাতে পারছে না আরো বছর দুই যাক!! তারপর না হয় আমরা বেবি প্ল্যান করবো।

কিন্তু কে শুনে কার কথা!!দুই বান্ধবী সবসময় একসাথে সবকিছু করেছে তাই এখন রিয়ার বেবি হচ্ছে আর তার হবে না সেটা কিছুতেই মানবে না প্রিয়তা। সে এখন বায়না ধরেছে তার বেবি চাই মানে এক্ষুনি চাই!! প্রিয়তার বায়না শুনে বিভোর হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারেনা !!!

প্রিয়তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে থুতনি রাখে কাঁধে,,

:- আমার বউটা কি রাগ করেছে ??তার কি সত্যি বেবি চাই??

বিভোরের মুখে এই কথা শুনে উৎফুল্ল হয়ে ওঠে প্রিয়তা। ঘুরে বিভোরের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,,,

:- হ্যাঁ হ্যাঁ চাই!!!

বিভোর মুচকি হেসে প্রিয়তার নাকে নাক ঘষে বলে,,

:- আচ্ছা তাহলে তো মিশন শুরু করতে হয়!! আমার বউটা কিছু চেয়েছে বলে কথা!! আমি কি না করতে পারি!!

বিভোরের দুষ্টুমি ভরা ইঙ্গিত শুনে তার বুকে একটা কিল মেরে বিভোরের বুকে মুখ গুজে প্রিয়তা। পরম আবেগে জড়িয়ে ধরে বিভোর।
তাদেরও কিছু সুখের স্বপ্ন বুনার সময় এসেছে। প্রিয়তাকে কোলে তুলে নেয় বিভোর। পাড়িজমায় এক ভালোবাসাময় সুখের রাজ্যে।

আর কইতাম না 🥱🥱

The end,,,,