প্রিয় দিও বিরহ পর্ব-৩১+৩২+৩৩

0
522

“প্রিয় দিও বিরহ”

৩১.

বারান্দার গ্রিলের চিকন চিকন ফাঁকগুলোর মধ্যে দিয়ে ভো ভো করে বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে। কখনোবা টালমাটাল বাতাস এসে গায়ে আছড়ে পড়ে জামা কাপড় উড়িয়ে দিচ্ছে। চোখের পাপড়ি গুলো লেপ্টে থাকা জল সরিয়ে শুকিয়ে কাঠ করে দিয়েছে। ব্রাউন শেডের হেয়ার কালার করা পিঠ এলিয়ে থাকা চুলগুলো অবিন্যস্ত ভাবে উড়ে চলছে। সুদীপ্ত বিশাল আকাশটা আজ পরিষ্কার। তবে কী আজ আকাশও মেহতিশার মতো সব রহস্যের সমাধান করে ফেলেছে? জেনে গেছে অতীতের সকল রহস্য? হয়তোবা।

আনমনা চোখে দূরদূরান্তে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মেহতিশা। এতগুলো সত্যি হঠাৎ হজম করতে বেগ পেতে হচ্ছে। এতো সহজেই সবটা সমাধান হয়ে গেলো, তা চিন্তাও করতে পারছেনা। এটাই তবে ভবিতব্য ছিলো। অমীমাংসিত রহস্য গুলোর পাজেলগুলো মিললো অবশেষে। মেহতিশার চোখ দু’টো ডুবন্ত সূর্যের দিকে। সন্ধ্যা হয়ে এলো। কী চমৎকার সাজে সজ্জিত আকাশটা। রাঙাবধূর মতো দেখাচ্ছে। অপূর্ব!

‘ম্যাডাম, আপনাকে খালা ডাকছেন খাবার খেতে। ‘

কুসুমের ডাকে ধ্যান ভাঙে মেহতিশার। গ্রিলের উপর থেকে হাত সরিয়ে বারান্দার দরজা আঁটকে লাইট জ্বালিয়ে দিলো। পায়ের স্লিপারগুলো পায়ে পড়ে বলল,

‘যাও, আসছি। ‘

মেয়ে সার্ভেন্ট কুসুম মাথা নাড়িয়ে বের হয়ে যায়। মেহতিশা ফোনটা হাতে নিয়ে বের হলো। ডাইনিং টেবিলের চেয়ারটা টেনে বসলো। বিনাবাক্যে চামচ উঠিয়ে সালাদ খাওয়া শুরু করলো। অথচ,সে জানে টেবিলের সাত জোড়া চোখ তাঁর দিকেই ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। গোগ্রাসে গিলতে থাকে মেহতিশা।
চোখ মুখ শক্ত একেবারে। মুখাবয়ব গম্ভীর। মেহতিশার মা কিছুক্ষণ করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। শামীউল্লাহ জামান গলা পরিষ্কার করে চামচ দিয়ে টুংটাং করে বললেন,

‘কী সিদ্ধান্ত নিলে তুমি? ‘

মেহতিশা মুখের খাবারটুকু গিলে গলধকরণ করে। পানির গ্লাসটা ভরতে ভরতে বলে,

‘নতুন করেও আবার কিছু বলতে হবে? যখন সিদ্ধান্ত বললাম তখন কোথায় ছিলেন?নাকি আমি এ বাড়িতে আসলেও এখন বিরাট সমস্যা! বিপদ হয়ে গেছি কিনা! নাহলে, ডিলে লাভ ছাড়া আর কীবা কাজে আসি আমি?’

ভড়কে চুপ মেরে রইলেন তিনি। মেহতিশা নিষ্প্রাণ দৃষ্টি দিয়ে উঠে চলে এলো। খাবারের বাকি এঁটো থালায় অবহেলায় রয়ে গেলো।
মেহতিশার মা ক্ষোভভরা চোখে তাকিয়ে বললেন,

‘হলো তো! শান্তি হয়েছে?সমস্যা কী তোমার? আসলে,দোষটা আমারই। যদি মেয়েটাকে জোর করে বিয়ে দেয়ার সময়ই প্রতিবাদ করতাম। তাহলে, আজ এমনটা হতোনা। যেদিন আমার বোনের মেয়েকে নিজের পরিচয় দিয়ে বড় করার কথা বলেছিলো অনেক বেশি খুশি হয়েছিলাম। এখন জানি, মেয়েটার জীবনটা নষ্ট করার জন্যই তুমি এনেছিলে। লাভ লোকসান অতশত আমি বুঝিনা। আমার মেয়েটা এখন যদি উল্টোপাল্টা কিছু করে ফেলে তোমাকে আমি কক্ষনো ক্ষমা করবো না। ‘

গজরাতে গজরাতে চলে গেলেন তিনি। কিছুটা স্বামীর প্রতি ক্ষোভ, অসন্তুষ্টি এবং নিজের চুপ থাকার অনুশোচনা দগ্ধ করছে। তবে, সময় গেলে সাধন হয়না!

শামীউল্লাহ জামান মাথা নিচু করে বসে রইলেন। তার ছোট ভাই বললেন,

‘বড় ভাই, প্রতিশোধের নেশায় আমরা এতোই অন্ধ ছিলাম ঠিক ভুল বিচার করিনি। আজ এর ফল আমাদের বাড়ির মেয়েটাকে ভোগ করতে হচ্ছে। ‘

শামীউল্লাহ জামান নিম্নস্বরে বললেন,

‘পাপ করার সময় সবাই-ই হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। হুঁশ তখনই ফিরে যখন ফলটা ভোগ করতে হয়। ‘

‘যে যাওয়ার সে তো যাবেই, অথচ আমরা এই সত্যিটাই মানতে পারছিলাম না। মেঝো যে আমাদের সবার আগে চলে যাবে তা বিশ্বাস করাটা অনেক কঠিন ছিলো।আমরা সত্যিই বোকা!একজন মৃতের জন্য জীবিত মেয়েটাকে খেলার গুটি বানিয়ে রেখেছিলাম। ‘

সবাই টেবিল থেকে উঠে গেলো। শামীউল্লাহ জামান মাথা চেপে রাখলেন। বুকপকেট থেকে রুমালটা বের করে চোখটা মুছে নিলেন। রুমালটায় চোখ পড়লো। সাদা কাপড়ের উপর সেলাই করে কাঁচা হাতে লেখা -মাই হ্যান্ডসাম ড্যাডি!
তিনি আরও একবার চোখ মুছে নিলেন। আজ যে কেনো এতো কান্না পাচ্ছে কে জানে!

তুলতুলে টেডিবিয়ারটা বুকে জড়িয়ে খাটের এক কোণায় মাথা ঝুলিয়ে শুয়ে আছে মেহতিশা। ফুল স্পিডে ফ্যান চলছে। এসিটা বন্ধ। গায়ে টপস একটা। এই বাড়িতে আসার সময় কোনো জামা কাপড় নিয়ে আসা হয়নি। অনন্যের কোম্পানি থেকে ফিরে আর ওই বাড়িমুখো হয়নি সে। সরাসরি এখানেই চলে এসেছে। বিছানা হাতরিয়ে মোবাইলটা নিলো। সাইলেন্ট মোডে দেয়ায় ভাইব্রেট করছে সেই কখন থেকে। সতেরোতম বার মেহতিশা কল কাটতে নিয়েও কাটলো না৷ রিসিভ করে কানে দিলো। হ্যা, ওর ধারণাকে সত্যি করেই অস্থির এক ক্লান্ত কন্ঠ কানে এসে লাগলো,

‘মেহতিশা, তুমি কোথায় আছো? এরকমটা কেউ করে! জানো আমি কতো টেনশনে পড়ে গিয়েছিলাম! রাস্তায় এক্সিডেন্ট করে ফেলেছি! দৌড়ে বাড়ি চলে এসেছি। মা কাঁদতে কাঁদতে পাগলপ্রায়। হেলো, হেলো?’

মেহতিশা নিঃশব্দে সবটা শুনে গেলো, যেমন এতগুলো দিন সে শুনে এসেছে। নিস্তব্ধ গলায় বলল,

‘বলা শেষ? ‘

দর্পণ অবাক হয়ে বলল,

‘মানে? ‘

‘মানে, আপনার কথা শেষ হয়েছে? এবার আমি বলি?’

দর্পণ শুকনো ঢোক গিলে নিজেকে শান্ত করলো। এতক্ষণ যাবৎ মনে হচ্ছিল শুধু শরীরটাই আছে। আত্মা নেই। মূল্যহীন অচল দেহ। গত তিন ঘন্টা পাগলের মতো ছুটাছুটি করেছে। মেহতিশা ভালো আছে, সুস্থ আছে এখন এটাই মূলকথা৷

‘বলো। ‘

‘প্রথমত, আমি আপনাদের খেলার পুতুল নই যে যা মন চায় করবেন। কেউ নিজের প্রতিশোধের জন্য জোর করে বিয়ে দিয়ে দিবে, কেউ বিয়ে করে নিজের কাছে আঁটকে রাখবে। আমি তো আর মেশিন নই। আমারও অনুভূতি আছে। দ্বিতীয়ত, যে নিজের স্ত্রীকে একবিন্দু বিশ্বাস না করে এতবড় সত্যিটা আড়াল করে রাখে তাঁকে নিয়ে অন্তত সংসার করা সম্ভব নয়। ‘

দর্পণ ভেঙে ভেঙে কাঁপা গলায় বলল,

‘আপনি এসব কী বলছেন বউজান?’

মেহতিশার কঠিন কন্ঠ –

‘ভালো থাকবেন। ‘

‘এটা তুমি করতে পারো না! আমি এখুনি আসছি তোমাকে নিতে। তুমি কোথাও যাবেনা। তুমি যেতে পারোনা! আমার বাচ্চাকে নিয়ে কোথাও যেতে পারবেনা তুমি! ‘

‘আমি পারবো দর্পণ, আমি পারবো! ‘

মাথায় হাত চেপে বসে পড়লো মেঝেতে দর্পণ। এটা কীভাবে সম্ভব! এটা তো হওয়ার কথা ছিলো না! মেহতিশাকে কে বলল সবকিছু! দর্পণ তো চেয়েছিলো বেবি হওয়ার পর সব খুলে বুঝিয়ে বলবে সে। অথচ, মেহতিশা সবটা আগেই কী করে জানলো! মুখ চেপে ডুকরে উঠলো সে। এটা সেই ঘর যেখানে দর্পণ আগে থাকতো। চারপাশে বিরাট বিরাট আয়না দিয়ে ঘেরাও করা। প্রতিফলিত হচ্ছে প্রতিটি কোণা। যেই আয়নায় একসময় নিজের এক রহস্যময়ী অবয়ব দর্পণ দেখতো, সেই আয়নাই যেনো আজ তাঁকে তাচ্ছিল্যে হো হো করে হেঁসে উঠলো।

দর্পণ রাগে দুঃখে দেয়ালে টাঙানো পুরনো আমলের বন্দুকটায় গুলি লোড করে সবগুলো আয়নায় অনবরত চালাতে থাকলো। প্রত্যেকটা কাচের আয়না খন্ড বিখন্ড হয়ে পড়ে রইলো। ভাঙাচোরা আয়নাটার দিকে তাকিয়ে হাসলো দর্পণ। শক্ত করে ঠোঁট দুটো চেপে রাখলো দাঁত দিয়ে। কয়েক সেকেন্ডের ভেতরই ঠোঁট কেটে রক্ত বের হতে লাগলো। পাশেই জ্বলজ্বল করে ওঠা মোবাইলে একটা মেসেজ পড়ে, দর্পণ নিজের চুল নিজেই টানতে বলল,

‘অনন্য অনন্য অনন্য, তোর ভালোবাসা চাওয়াচাওয়ির ফল আমি তোকে দেখাচ্ছি!’

ফ্লোরে ভাঙা আয়নাগুলোতে দর্পণের দর্পণ বা অবয়বই ভেসে উঠলো বিকৃতাকারে। ঠোঁটের চারিদিকে রক্ত মাখানো ফর্সাদেহী মানুষটাকে দেখে হয়তো দেয়ালেরা বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে। কী অবাকতর এ দৃশ্য!

চলবে-
লেখনীতে-নাঈমা হোসেন রোদসী।

“প্রিয় দিও বিরহ”

৩২.

পনেরো থেকে ষোলোয় পা দেওয়া সদ্য ষোড়শী কন্যা। দীঘল কালো কেশ ছিলোনা। তবুও, সে আমার মনের সোনার কন্যা। বড্ড কাব্যিক কথাবার্তা তাইনা! আমার বয়সটাও তখন খুব একটা বেশি না। সদ্য ভার্সিটি পাশ করে বেরিয়েছি। চোখের রঙিন পর্দাটা সরেনি। যা চোখে আসে তাই ভালো লাগে। কিশোরীর মুখ অন্য মেয়েগুলোর মতো আবেগী নয়। ওর মুখে সবসময়ই রাজ্যের গাম্ভীর্য, বিশাল এক বস্তা রাগ। কথার সে কী তেজ! আমি জীবনে অনেক মেয়ে দেখেছি। ঘুরেছিও কম না। যাকে ভালো লেগেছে তাঁর সঙ্গেই প্রেম করেছি। তা অবশ্য মনের সঙ্গে মনের নয়। মনের প্রেমটা আসার মতো সুখানুভূতী আমি কক্ষনো পাইনি এই জীবনে। আমার বাবা নায়েব শায়েরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু শামীউল্লাহ জামানের বাড়িতে সেদিন গ্র্যান্ড পার্টির আয়োজন। তাঁর একমাত্র মেয়ের জন্মদিন। বাড়িতে ঢুকে আমার বাবা তাঁর বন্ধুর সাথে কথা বলতে লেগে পড়লেন। আমি ইন্ট্রোভার্ট ধরনের। সহজে মানিয়ে নিতে পারিনা। চুপচাপ এক পাশে মোবাইল নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তারপর সেই শুভ সময় এসে পড়লো। সেটা কী আসলে আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর দিন কিনা আমি জানিনা, তবে সেদিনের মতো সুন্দর মুহূর্ত আমার জীবনে আর পাইনি। সাদা গোল জামা পড়া লম্বা, ফর্সা, কালার করা চুলের কিশোরী মেয়েটাকে দেখে পলক ফেলার জো ছিলো না আমার। আমি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে খুঁত ধরার চেষ্টা করেও একবিন্দু খুঁজে পাইনি। মেয়েটা খুব মেপে মেপে হাসলো। আদুরী একটা! কেক কেটে নিজের বাবা মা’কে খাইয়ে চলে গেলো ওপাশে। জানলোই না আমার মনটাও সে নিয়ে চলে গেলো নিজের মনভোলানো রূপে। হ্যা, প্রথম মুগ্ধতাটা আমার তাঁর মুখ দেখেই এসেছিলো। রঙিন বসন্তের মতো চোখ ধাঁধানো একটা মেয়ে। আমি সেই প্রথম ভীষণ অপ্রস্তুত হলাম। একটু পর পর চোখ দু’টো দিয়ে ওকে খুঁজে চললাম। একসময় শামীউল্লাহ জামানই তাঁর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে বড়ই গর্ব করে বললেন,এটি তাঁর কন্যা মেহতিশা জামান। মেয়েটা আমার দিক তাকিয়ে কিঞ্চিৎ ঠোঁট প্রসারিত করলো। এটাকে কী হাসি বলে? মেয়েটা এতো কম হাসে কেনো কে জানে! আমার ইচ্ছে করলো মেয়েটাকে সামনে বসিয়ে চোখ ভরে দেখে নিতে। শান্ত না কঠিন কাটকাট চোয়াল। নাকে ছোট নোজপিন। বোঝা যায়, বেশি দিন হয়নি নাক ফুরিয়েছে। খাবার খেয়ে উঠে যাওয়ার সময় বড্ড বেসামাল হয়ে আমি মেয়েটার কাছে চলে আসলাম কথা বলতে। অন্তত নিজের নামটুকু তাঁর মুখে শুনতে। কেমন লাগবে তাঁর মুখে?নিশ্চয়ই খুব মধুর! লাগুক। দুনিয়ার সবচেয়ে বিশ্রী নাম দিয়ে আমাকে ডাকলেও আমি খুশিতে পাগল হয়ে যাবো। মেহতিশা, বড়ই গোছানো টিপটপ নাম! তাইনা?শুনতে সুন্দর লাগে। আর কারো না লাগুক আমার লাগে। আমি মেয়েটার সামনে হাত বাড়িয়ে দিলাম হ্যান্ডশেকের জন্য। মুখটা তখনও হাসিহাসি। তবে,বেশিক্ষণ স্থায়ী হলোনা কথা শুনে।

মেয়েটা কাঠকাঠ গলায় বলল,

‘আপনি তো বেশ অভদ্র! সেই সময়ও কেমন লু’চ্চার মতো তাকিয়ে ছিলেন। এখন কী উদ্দেশ্যে এসেছেন আমি বুঝিনা ভেবেছেন?’

আমি বোকার মতো তাকিয়ে রইলাম। আমার ভাবনা থেকেও এক কাঠি উপরে চলে গেছে এই মেয়ে। আমি ফিক করে হেঁসে বললাম,

‘লু’চ্চামি করছি বুঝলে কী করে? ‘

মেয়েটা ভ্রু কুঞ্চন করে বলল,

‘আপনি তো ভারি অসভ্য! প্রথম দেখাতেই তুমি!’

‘তুমি করে বললে বুঝি অসভ্য হয়ে যায়! ঠিক আছে আর তুমি বলবো না, খুশি?’

‘জ্বি।’

মেয়েটা চলে গেলো সেদিন। কিন্তু আমার মন সরেনি। জেদি হয়ে রইলো। আসক্তিতে পরিণত হলো। টানা এক বছর যাওয়ার পর বাবা মাকে আমি আমার মনের কথাটা জানিয়ে দিলাম। আমার বাবা খুশিই হলেন। প্রস্তাব পাঠালেন তাঁর বন্ধুকে। কিন্তু, সেখানে বিপত্তি ঘটলো। প্রথম ধাক্কাটা খেলাম, মেহতিশাকে আরও আগে থেকেই ব্যবসায়ী ওয়াসিফ শেখের ছেলের দর্পণ শেখের জন্য পছন্দ করে রাখা হয়েছে। আমি পাগলের মতো হয়ে গেলাম। শামীউল্লাহ জামানের হাতে পায়ে ধরে তাঁকে রাজি করালাম
তিনি প্রথমে নাইনুকুর করলেও পরে রাজি হলেন মেয়ের সুখের কথা ভেবে। আমাকে শর্ত দিলেন, আমি এখন তাঁর মেয়ের সঙ্গে কোনোরকম দেখা সাক্ষাৎ করতে পারবোনা। ওর পড়াশোনার কথা ভেবে আমিও দূরে রইলাম। দেখতাম দূর থেকে। ওর সামনে যাইনি। মেয়েটা ভুলে গেলো আমাদের প্রথম সাক্ষাৎ। আমি দিনদিন বেপরোয়া হতে লাগলাম। আর মেয়েটা ততদিনে আরও বড় হলো। কথামতো ওর অনার্স শেষের পর আমাদের চার হাত এক হওয়ার কথা৷ হিসাবমতে আমি আমার আমানত পেয়ে যাবো। ভাগ্য তা চায়নি হয়তো। ঠিক আড়াই বছর আগে ফাটল ধরে আমার বাবা আর মেহতিশার বাবার সঙ্গে। এতগুলো বছর দু’জনের যে একসাথের বিজনেসটা আছে সেটা আমার বাবা পুরোপুরি কিনে নিতে চাইলেন। কারণটাও সহজ, আমার বাবার শেয়ার কোম্পানিতে ৬০ পার্সেন্ট অথচ টিভির শিরোনাম থেকে শুরু করে ইচ এন্ড এভরি পেপারে নাম হয় শুধু মেহতিশার বাবা, চাচার। যেহেতু আমার বাবার শেয়ার বেশি, এতদিন কিছু না বললেও তখন তিনি ব্যাপারটা নিয়ে মাথা ঘামালেন। পুরো কোম্পানিটা সেপারেট করে নিলেন। অনেক ঝগড়া বাদবিতণ্ডা হয় এই নিয়ে। আমি তখনও কোম্পানিতে জয়েন করিনি। অতশত বুঝিনা। একটা নরমাল স্কুলে টিচার ছিলাম। শখের বশে।
হঠাৎ একদিন আমার বাবার মৃত লাশ বাড়িতে আসলো। আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিলো। মানতে যে কী পরিমাণে কষ্ট হয়েছে! পুলিশ তদন্ত করে বের করলো এসবের পেছনে মেহতিশার মেঝোচাচার হাত রয়েছে। সে ভীষণ কলাকৌশলী লোক। শামীউল্লাহ জামান এই ব্যাপারে প্রথমে জানতেন না, কিন্তু যখন জানলেন তখন নিজের বন্ধুর সাথে অন্যায় করে নিজের ভাইকে লুকিয়ে রাখলেন৷ কেস টাকা দিয়ে ধামাচাপা দিলেন। তখন আমিও কিছু জানিনা। ব্যবসা তখন জলে ভাসা ভেলা। কোনো কূল নেই তাঁর। এদিকটা সামলে উঠে আমি শামীউল্লাহ জামানের কাছে গেলাম। তিনি বললেন, তাঁর বন্ধুই যখন বেঁচে নেই তাহলে কীসের পুরনো কথা! আমাকে ভুলে যেতে বলা হলো। কিন্তু আমি কীভাবে ভুলবো! যার ছবি আমি আমার হৃদয়পটে অনেক রঙতুলি দিয়ে এঁকে খোদাই করেছি তার ছবি কীভাবে মোছা হয়, আমি তো সেই নিয়মই জানিনা। আমার মাথায় তখন চারদিক থেকেই শুধু ইরোর,ইরোর,ইরোর!

বাবা ছাড়া অসহায় দুনিয়ায় শক্ত হতে শিখলাম। ব্যবসায় জড়িত হয়ে কখনো হারলাম, হারালাম অনেক জিনিস। আস্তে আস্তে শিখলাম। না শিখলে খাবো কী? আমার মা বোনের মুখে অন্য কোথা থেকে তুলে দিবো! কিছুটা পরিস্থিতি সামলে যেই আমি মেহতিশাকে নিজের করতে মরিয়া হয়ে আবারও গেলাম বেহায়া হয়ে। তখন আমাকে হুমকি ধমকি দিয়ে বের করে দেয়া হলো। আমি প্রতিদিন কোম্পানিতে গিয়ে কখনো তাঁর সঙ্গে ঝগড়াঝাটি করতাম। কখনোবা মারামারি করে আসতাম ৷ একদিন আমাদের মাঝে চূড়ান্ত পর্যায়ের কথা কাটাকাটি হলো। কারণটা ছিলো,তিনি মেহতিশাকে অন্য একজনের সাথে বিয়ে দিতে চাইছিলেন৷ আমি সাতদিন জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মরার মতো পড়েছিলাম৷ আর্তনাদ আহাজারি করে যখন কিছু করতে পারলাম না, তখন ঠিক করে নিলাম আমার চাওয়া যখন আমি পাবোই না তাহলে অন্তত আমার বাবার খুনীকে ছাড়বোনা। কোম্পানিতে আগুন লাগানোর ব্যবস্থা করে দিলাম। শয়’তানটা শুধু আমার বাবাকেই নয়, এর সঙ্গে ওয়াসিফ শেখের বড় ছেলে অর্পণকেও মারার চেষ্টা করছিলো। পার্সোনাল শত্রু’তার সূত্রপাতে। আরও অনেক পাপকর্মে লিপ্ত ছিলো। আমি এক ঢিলে দুই পাখি মেরে দিলাম। এক,কোম্পানির ক্ষতি করে দিলাম। দুই,ওই পাপীটাকেও মেরে দিলাম। চোখের সামনে পুড়তে পুড়তে ছাই হলো। তবে,শামীউল্লাহ জামান আমার সঙ্গে জেদ করে মেহতিশার বিয়েটা সেই আরেক ব্যবসায়ীর ছেলের সঙ্গেই দিয়ে দেয়। তারা তখনও জানেনা, যে দর্পণ ততদিনে জেনে গেছে তাদের পরিবারের মাঝেই কেউ একজন তাঁর বড় ভাইকে হত্যা করার চেষ্টা করেছে। দর্পণ, ঠান্ডা মাথার খেলোয়াড়। সে চুপচাপ বিয়ে করে অসহায় সেজে রইলো। একদিকে মেহতিশাকে বিয়ে করে সংসার পাতলো। আরেকদিকে বড় ভাইয়ের খুনীকেও বের করলো। আর যখন জানলো, সেই খুনীই আর বেঁচে নেই দর্পণ তখন সবকিছু নতুন করে শুরু করার কথা ভাবলো। তবে,শামীউল্লাহ জামানকে সে খুব ঘৃণা করে। তাকেও সমান অপরাধী ভাবে। এর মধ্যে আরেকটা কথা আছে, যা আমি না নিজমুখে তোমার স্বামীই তোমাকে জানাবে। ‘

মেহতিশা নিস্তব্ধতায় মোড়ানো পুতুলের মতো বসে রইলো থম মেরে। চোখ তুলে অনন্যের দিকে তাকালো। মুখ দেখে প্রথমেই মেহতিশার মনে হয়েছিলো চেনা। কিন্তু ঠাওর করতে পারেনি। কী আশ্চর্য! গত সাত বছরে কতকিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে! মেহতিশা উঠে যায়। বের হওয়ার সময় হয়েছে। যেতে যেতে পিছিয়ে এসে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,

‘বিয়ে করেননি কেনো এখনো?আপনি অনেক ভালো কাউকে পাবেন। ‘

অনন্য হাসলো। চোখদুটো লাল হয়ে আছে। নিচের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘আমার তোমাকে পাওয়া হয়নি, আমার আর কাউকে লাগবেনা! ‘

মেহতিশা শুয়ে শুয়ে সকালের সবগুলো কথা স্মৃতিচারণ করে। চোখ দুটো বুজে আসছে। কষ্ট গুলো কেমন যেন চিনচিন করে ব্যাথা দিচ্ছে। ভালো মানুষ গুলোর জীবনেই কেনো এতো কষ্ট থাকে! হিসাব মিলাতে না পেরে ঘুমিয়ে পড়ে সে।।

চলবে-

“প্রিয় দিও বিরহ”

৩৩.

দীর্ঘ এক মাস হলো মেহতিশা তাঁর বাবার বাড়িতে আছে। নিজেকে ঘরবন্দী করে রেখেছে এতোটা সময় ৷ দরকার ছাড়া রুম থেকেও বের হয়নি। মোবাইলের সিমও বদলে ফেলেছে। দর্পণ এসে অনেক চেষ্টা করেও পারেনি দুটো কথা বলে তাঁকে নিয়ে যেতে রাতে প্রচুর মাথা ব্যাথা ছিলো। একটু আগেই কুসুম মাথায় তেল দিয়ে ম্যাসেজ করে দিয়েছে। এখন হালকা ছায়ার রোদে বসে রোদ পোহাচ্ছে সে। দৃষ্টি তখনও দূরসীমানায়। ক’টা ছেলেমেয়ে গাছের নিচে বসে বেলি ফুলের মালা গাঁথছে। মনটা ওখানেই ছুটে গেছে। মাঝে মাঝে ওর ইচ্ছে করে সকল বাঁধা পেরিয়ে ওই সরল শৈশবে ফিরে যেতে। ব্যাপারটা ভাবতেও কেমন কেমন একটা শিহরণ অনুভব হয়। গর্ভাবস্থায় নাকি ত্বক উজ্জ্বল হয়, চুলের গ্রোথও বাড়ে। মেহতিশার গায়ের রং তো আগে থেকেই উজ্জ্বল। তবে,সত্যিই চুল আগের তুলনায় বেড়েছে। তেল মাখা চুলগুলো তাল মিলিয়ে উড়ছে ছন্দে। বারান্দার দরজায় অযাচিত শব্দে পেছনে ফিরলো সে। নিশ্চয়ই কুসুম যাওয়ার সময় দরজা খুলে চলে গিয়েছে। কে এসেছে দেখার জন্য মাথা উঁচু করে দেখলো দরজায় সৌজন্যে দাঁড়িয়ে আছে। মুচকি হেঁসে হাত দিয়ে ইশারা করে কাছে আসতে বলল মেহতিশা। সৌজন্যে কী যেনো ভেবে একটু ইতস্ততবোধ করলো।
তবুও, টিমটিমে পায়ে এগিয়ে এসে পাশের মোড়ায় বসলো। মেহতিশা ওর অস্বস্তি বুঝে স্বাভাবিক ভাবে বলল,

‘কীরে সৌজন্যে চাচা বলল তুমি নাকি ভিসার জন্য এপ্লাই করেছিস। কোন দেশে যাবি আবার?’

সৌজন্যে মুখটা নিচু রেখেই বলল,

‘জাপান। ‘

‘বেশ তো। ওখানে গিয়ে ভালো ডক্টর হয়ে ফিরে আয়। দেশের জন্য কিছু কর। কত মানুষের ইচ্ছে থাকে, কিন্তু সুযোগ হয়না। ‘

সৌজন্যে চোখ তুলে তাকিয়ে বলে,

‘তুমি কিন্তু পড়াশোনাটা চালিয়ে যেতে পারতে ৷ ‘

মেহতিশা হাসলো। কিছু ভাবতে ভাবতে বলল,

‘হয়নারে, বিয়ের পর কেমন একটা মানসিক পরিবর্তন চলে আসে। চাইলেও আসে না চাইলেও আসে। তখন আর বইয়ে মুখ ডুবিয়ে লেখার দিকে তাকাতে ইচ্ছে করে না। সংসারে কী করলে ভালো হবে,কোন জিনিসটা দরকার, কোনো লেকিংস আছে কিনা এসবই তখন কেন্দ্রবিন্দু হয়। নতুন মানুষদের মেনে নেওয়া, মানিয়ে নেওয়া সবটাই একটা পরিবর্তন৷ খুব বেশি মেধাবী বা বইপড়ুয়া না হলে পড়াশোনাটা হয়না। আগ্রহটা লাগে। ‘

‘তোমার অনুশোচনা হয়না?’

‘কীসের জন্য ? ‘

‘এই যে দর্পণ ভাইয়াকে বিয়ে করতে তো চাওনি তুমি। এখন কী আলাদা হয়ে যাবে? ‘

‘তোর এমন কেনো মনে হলো?’

‘মনে না হওয়ার কী আছে! কতদিন হলো এইখানে আছো। দর্পণ ভাইয়া রোজ আসে, সকালে তোমার দরজার পাশে কান পেতে বসে থাকে। তুমি দরজা খোলো না, এক ঘন্টা পর সে চলে যায়। তুমি জেনেও না জানার ভান করে থাকো। এটা কী সত্যি যে অনন্য শায়েরকে বিয়ে করে নতুন জীবন শুরু করবে? ‘

মেহতিশা নিঃশব্দে হাসতে থাকলো। গাল লাল হয়ে গেছে।

‘তোকে কে বলল এসব কথা?’

‘হাওয়ায় হাওয়ায় ভেসে এলো। ‘

‘একটা কথা কী জানিস, সংসার হচ্ছে একটা মায়ার বাঁধন।

চাইলেও না এই রশি খুলে ফেলা যায়না। কেমন একটা পাগল পাগল লাগে। দেখিস না, কত বছরের প্রেমকে ছেড়ে মানুষ বিয়ে করে দিব্যি সংসার করে বাচ্চার বাপ মা হয়ে যায়। সবই মায়া,অভ্যাস। একটা সময় গিয়ে ভালোবাসাটাও টের পাওয়া যায়। কোথাও না কোথাও ভালোবাসাটা ঘাপটি মেরে থাকে। এই যে ঐ পাগল লোকটা রোজ আসে। কত রকমের কথা বলে! কখনো বলে আমি তার সাথে গেলে সে আমাকে কক্ষনো বকবে না, কোনো আনহেলদি খাবার খেতেও বারণ করবেনা, মেয়ে হলে নাম রাখবে আয়না। ছেলে হলে জল। কী অদ্ভুত অদ্ভুত কথা যে বলে!কখনো হেঁসে ফেলি আমি রুমে বসে। কিন্তু দরজাটা খুলি না, কেনো জানিস? তাঁর শাস্তির প্রয়োজন আছে। খুব দূরে না গিয়েও কখনো কখনো শাস্তি দেয়া যায়৷ আমি চাইলেই পারতাম তাঁকে সত্যি সত্যি ডিভোর্স দিয়ে দূরে চলে যেতে। কিন্তু এটা কী সমাধান হতো? হয়তো কেউ সাময়িক ভাবে আমার সন্তানকে নিজের পরিচয় দিতো। কিন্তু কখনো না কখনো তো আক্ষেপ হবেই। আর ঐ পাগল লোকটার মতোই বা পাবো কোথায়?ঐ লোকটা একটা পিসই আছে। কখন কী করে নিজেও জানেনা। রাগলে তুলকালাম করে রাগে৷ ভালো হলে গলে পানি হয়ে যায়। ভালোবাসলেও পৃথিবী উজার করে ভালোবাসে। আর বাকি রইলো,অনন্য শায়েরের কথা তো? হ্যা আমার অনেক খারাপ লেগেছিল। কিন্তু, সব চাওয়াই কী পূর্ণতা পায়? ক’টা প্রেম এক হয়! আমি হয়তো তাঁকে তাঁর ভালোবাসা ফিরিয়ে দিতে পারবোনা। কিন্তু তাঁর ভালো থাকার দায়িত্ব তো নিতেই পারি। সে কথা দিয়েছে, নতুন করে সবকিছু শুরু করবে সে। পুরনো ক্ষত সবসময় মানুষকে খোঁচাতে পারেনা। মরার শোক ভাত মিটিয়ে দেয়। কেউ মা’রা গেলে যেমন তাঁকে ব্যতিত আমরা অন্য কাউকে ভাবতে পারিনা, কিন্তু ঠিকই প্রকৃতি তাঁর শূন্যস্থান পূরণ করে দেয়। আমার শূন্যস্থান পূরণ করতেও পৃথিবীর কোনো প্রান্তে হয়তো কেউ আছে।’

সৌজন্যে প্রশ্নসূচক চোখে তাকিয়ে বলল,

‘সবার জীবনেই আসে তিশা?’

‘হুম আসে। ‘

‘তোমার শূন্যস্থান তো আমার জীবনেও আমি টের পাই। সেই শূন্যস্থান পূরণ হয়না কেনো?’

ঘোরে ঘোরে পুরো কথাটা বলে নিজেই চুপসে গেলো সৌজন্যে। মেহতিশা সেটাকে আমলে না নিয়ে বলল,

‘সুযোগ দে, নিজেকে সব ভুলে সামনে নিয়ে যা। শূন্যস্থান কখনো কখনো সাফল্যতাও দূর করতে পারে। জীবনে প্র্যাকটিকাল থাকা খুব প্রয়োজন। প্রতিটা জিনিসেরই পজিটিভ নেগেটিভ দুটো পিঠ আছে। পজিটিভ চিন্তা করতে হবে। আর নেগেটিভ কিছু আমাদের সঙ্গে হলেও সেই মানসিক প্রেপারেশন রাখতে হবে। যেখানে যাচ্ছিস, এবং যে লক্ষ্যে সেটায় পুরো মনোযোগ দে। ‘

সৌজন্যে মৃদু হাসলো। তেমন আর কিছুই বললোনা। হাস্যজ্জ্বল মুখে একটা ছোট বক্স এগিয়ে দিলো। মেহতিশা ভ্রু কুচকে বলল,

‘এটা কী?’

‘গিফট। আমি তো আজ রাতই চলে যাবো। তুমি তো ঘরেই থাকো বের হওনা। তাই ভাবলাম আমিই দেখা করে যাই। ‘

‘এটা দরকার ছিলোনা সিজু!’

‘দরকার আছে, নতুন মেহমানকে তো আর আমি দেখবো না। তাই অগ্রিম গিফট। এছাড়া তুমিও তো কতদিন পর আমার সিজু ডাকলে! ‘

কথা বলতে বলতে উঠে দাঁড়ােলো সৌজন্যে। মেহতিশা বলল,

‘তুইও তো কতদিন হলো আমাকে তিশাদিদি ডাকিস না!’

‘যা পারবোনা তা বলো কেনো?’

‘পারবিনা কেনো?’

‘জানিনা। ভালো থেকো। ভুল টুল হলে ক্ষমা করে দিও, খুব জ্বালিয়েছি তো তোমাকে। ‘

মেহতিশা নির্মল চোখে তাকিয়ে থাকলো। সৌজন্যের দিকে নরম কন্ঠ দিয়ে বলল,

‘এক দুইটা ভুলেরও দরকার আছে জীবনে। কোনো বড় সাফল্যের সময় অতীতের ভুলগুলো ভেবে হেঁসে ফেলাটাও তো মজার। ‘


সেই রাতেই বাংলাদেশ থেকে জাপানে একটা নতুন স্বপ্ন নিয়ে পাড়ি জমালো সৌজন্যে। মেহতিশা একটা শান্তির শ্বাস ফেললো। অতীত ধরে বর্তমান নষ্ট করতে নেই। কথাটা শেষমেশ বোঝাতে সক্ষম হলো সে। ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। মোবাইলে টুং করে মেসেজ আসলো। চেক করে দেখলো আননোন নাম্বার থেকে,

‘আমি ওই বাড়ি আসি বউজান?’

মেহতিশা রাগী ইমোজি দিয়ে বলল,

‘না।’

‘প্লিজ!তোমাকে ছাড়া আমি ভালো নেই। ‘

চলবে-
লেখনীতে-নাঈমা হোসেন রোদসী।