#প্রিয়_ভালোবাসা
#নিশাত_তাসনিম
#পর্ব:শেষ পর্ব
—“তোমার সাথে করা আমার ব্যবহারের জন্য সরি। আমি জানি সরি বললেই সব ঠিক হয়ে যাবে না,তাও সরি বললাম, ক্ষমা করার বিষয়টা তোমার উপর নির্ভরশীল।তুমি যদি শাস্তি দিতে চাও তাও আমি মেনে নিবো।”
—“কিন্তুু আমাকে বলবেন তো আমার সাথে কেনো এমন করেছেন?”
—“আসলে,,,
–হ্যা,বলেন
—আসলে আমি ভেবেছিলাম তুমি ইশিকার মাডার কেসের সাথে জড়িত।ইনফেক্ট আমার কাছে প্রমানও ছিলো,কিন্তুু আজকেই জানতে পারি ওসব ভুল ছিলো।তোমার সাথে থাকার পর আমার সন্দেহ হতে লাগলো, আমার হয়তো কোনো কিছু ভুল হচ্ছে না হলে এত কিছুর পরেও তুমি কোনো রিয়েক্ট কেনো করছো না?তাই আমি আবার ইনভেস্টিগেট করে জানতে পারি তুমি এসবের সাথে কোনো ভাবে জড়িত ছিলে না।আমি শুধু সন্দেহর উপর তোমার সাথে এমন করেছিলাম।
আমি তোমার শাস্তি স্বরুপ তোমাকে মানসিক রোগী করে জেলে দিতে চেয়েছিলাম।যাতে তুমি ওখানে পঁচে মরো।কিন্তু আমি আজকেই জানতে পারি ওই মেয়ে তুমি নয়।”
—“ওই মেয়ে মানে কোন মেয়ে?”
—“যে ইশিকাকে ওই নরপশুদের হাতে তুলে দিয়েছিলো।ওই মেয়ে কত খারাপ তুমি জানো ও ইশিকাকে মিথ্যা কথা বলে ওদের আড্ডাতে নিয়ে গিয়েছিলো।যার কারনে আমার প্রিয় ভালোবাসা আর নেই,তাই ওকে এমন শাস্তি দিতে চেয়েছিলাম।কিন্তুু বাই মিস্টেক আমি তোমাকে ওই মেয়ে ভেবে ফেলি আসলে এটা আমাদের ডিপার্টমেন্টের ইনফরমেশনে ভুল ছিলো,কেউ মনে হয় ওই মেয়েকে বাঁচাতে চাচ্ছে।”
—“কে হতে পারে?নিশ্চয় আপনাদের ডিপার্টমেন্টের কেউ।”
—“হুম, আমার টিম নেমে পড়েছে এর রহস্য উদঘাটনে।ওকে ধরতে পারলে ওর এমন অবস্থা করবো যা জীবনেও না ভুলে।”
–“ভালো,,,,, শুধু সন্দেহর উপর আমার উপর একটা সপ্তাহ মানসিক অত্যাচার করাটা কী ঠিক ছিলো?”
—“আমি সত্যিই অনুতপ্ত আমার কৃতকর্মের উপর,কিন্তুু তুমি ভেবে দেখো।আমার জায়গাতে যদি তুমি হতে তাহলে তুমিও নিশ্চয় তোমার ভালোবাসার মানুষের সাথে এমন করার জন্য এর থেকে খারাপ কিছু করতে।”
—“আমার কোনো ভালোবাসার মানুষ নেই যে ওর জন্য এমন কিছু করবো।”
—“যেদিন কাউকে মন থেকে ভালোবাসবে সেদিন বুঝবে ভালোবাসা কী?”
আমি হু বলে বিছানায় চলে গেলাম।আমার উনার জন্য খারাপ লাগলেও আমার সাথে করা ব্যবহার কিছুতেই ভুলতে পারছি না।কতটা মানসিক প্রেশার পড়েছিলো এ কয়দিন আমার উপর,শুধু আমিই জানি।
এভাবেই কেটে গেলো একটা মাস একয়দিনে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে।উনি আর আমার সাথে আগের মত খারাপ ব্যবহার করে না,আমার অনেক যত্ন করে।বাড়ীর সবার সাথেই ভালো ব্যবহার করে।আমার ভেতর উনার জন্য অনেক ফিলিংস কাজ করে,কেনো যেনো মনে হয় আমি উনাকে অনেক ভালোবাসি।হুম আমি সিউর আমি উনাকে অনেক ভালোবাসি।উনাকে কীভাবে বলবো ভেবে পাই না।
এ এক মাস উনি প্রচুর পরিশ্রম করছেন,দিনরাত এক করে ওই মেয়েটিকে খুজছে।হঠাৎ একদিন উনি হন্তদন্ত হয়ে এসে বললেন,,”আমি মেয়েটিকে পেয়ে গেছি,আজকেই ওকে ওর আড্ডায় যাবো।”বলেই উনি উনার অস্ত্র নিয়ে রেডী হলেন যাওয়ার জন্য। উনি কাকে যেনো ফোন করে বের হয়ে গেলেন,আমিও চুপিচুপি উনার পিছন পিছন যেতে লাগলাম।
আল্লাহ কী ভয়ংকর জায়গা,সবার কাছে কত অস্ত্র-শস্ত্র।আমার তো ভয় লাগতেছে।হঠাৎ গুন্ডাদের ভেতর থেকে একটা মেয়ে বের হয়ে আসলো,মেয়েটার বয়স দেখে ২২/২৩ মনে হচ্ছে।দেখতেও অনেক সুন্দর।মেয়েটি উনাকে দেখেই হেসে উঠলো,উনি বিষ্ময় নিয়ে বললেন,,”মিথিলা..!!”
মেয়েটি বললো চিনতে পেরেছো তাহলে।
উনি এবার বললেন,,”কেনো চিনবো না, আফটার অল তুমি ইশিকার ফ্রেন্ড বলে কথা।”
মিথিলা এবার একটু ভাব নিয়ে বললো,,”উপপস, কারেকশন,ইশিকার ফ্রেন্ড নয় সালমানের কাজিন ।”
উনি চোখমুখ শক্ত করে বললেন,,”ওই জানোয়ারটার বোন তুমি?”
মেয়েটি রেগে বললো,,”মুখ সামলে কথা বল না হলে কী হাল করবো ভাবতেও পারবি না।”
উনাদের কথা বলার মধ্যেই মারামারি শুরু হয়ে যায়,উনার সাথে আরো ৪/৫ জন রয়েছে।সবাই একে অপরকে মেরে ফেলতেছে। এসব দেখেই আমার শরীর ভয়ে শিউরে উঠলো।হঠাৎ দেখলাম ওদের মধ্যে একজন উনাকে গুলি মারতেছে আমি সাথে সাথে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলাম অনুভববব।আমার চিৎকার শুনে উনি হঠাৎ কেঁপে উঠে সরে গেলেন আর সাথে সাথে ওই লোকটাকে মেরে দিলো।আমি তো দৌড়ে উনার কাছে যাচ্ছিলাম তখনই মিথিলা হাতের চাকু মারলো আমার দিকে,কিন্তুু চাকুটা আমার গায়ে না লেগে অনুভবের গায়ে লেগে গেলো।সাথে সাথে গলগল করে রক্ত বের হতে লাগলো,এদিকে অনুভবও হাতের বন্দুক দিয়ে মিথিলাকে গুলি করে দিলো।
এসব দেখে আমার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছিলো না। আমি অনুভবেরর কাছে যেতেই দেখলাম উনার রগ কাটা গেছে।উনি গলা কাটা মুরগীর মতো ছটফট করতেছেন,তাও আমার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলেন,,,”তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও,ভালো থেকো।”আবারো অস্ফুটস্বরে বলে উঠলেন,,”আমি আসছি প্রিয় ভালোবাসা।”
চোখের সামনে উনার মৃত্যু দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারি নি,ওখানেই সেন্সলেস হয়ে গেলাম। জ্ঞান ফিরতেই আমার অনুভবের কথা মনে পড়ে গেলো,সাথে সাথে আমি পাগলামী করতে লাগলাম।ডাক্তার, নার্স সবাই মিলে আমাকে থামানোর আপ্রান চেষ্টা করতে লাগলেন কিন্তুু আমাকে থামাতে পারলেন না।আমি সম্পূর্ণ পাগলের মত বিহেভ করতে লাগলাম।
তখনই অনুভবের অফিসার ডাক্তারকে বললেন,,,”উনি এমন কেনো করতেছেন?”
ডাক্তার রিপোর্ট দেখতে দেখতে বললেন,,,”উনার রিপোর্ট অনুযায়ী উনি গত কয়েকমাস থেকেই মেন্টাল প্রেশারে ছিলেন,এতে এর আগেও একবার মষ্তিষ্কে রক্ত ক্ষরন হয়েছিলো।উনি দিনদিন মানসিক আাপ সহ্য করেছিলেন, এন্ড লাস্ট মোমেন্টে উনি অনেক বড় শক খান, যার কারনে উনার ব্রেইনে অনেক চাপ পড়ে, ফলে উনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন।”
অফিসারটি এবার হতাশ স্বরে বলে উঠলো,,,”ডাক্তার আপনি বলতে চাইছেন, উনি পাগল হয়ে গিয়েছে।”
ডক্টর মাথা নাড়িয়ে বুঝালো হ্যা।উনাদের কথা শুনে আমি জোরে জোরে হাসতে লাগলাম।উনারা আমার দিকে হতাশ হয়ে চেয়ে রইলেন।আমাকে উনারা কয়েকদিন হাসপাতালেই ভর্তি করে রেখে দিলেন।এর মধ্যে জানতে পারলাম আমাকে আজ পাগলাগারদে পাঠিয়ে দিবে,তার মানে আমার অনুভবের কাছ থেকে দূরে পাঠিয়ে দিবে।না,এটা হতে পারে না,সবাই যখন গাড়ীতে উঠছিলো তখন আমি ছুটতে লাগলাম।উনারা সবাই আমার পিছন দোড় দিতেছে আর বলতেছে,,” এই পাগলীকে ধর,ধর।”
আমিও থামিনি প্রানপ্রনে ছুটতে লাগলাম, একসময় পৌঁছে গেলাম অনুভবের কাছে।ওমা,ও দেখি মাটির ভেতর শুয়ে আছে।আমি ওর কবরের পাশে বসে ওকে কতবার ডাকলাম,কিন্তুু ও একবারও উত্তর দেয় নি।এই অনুভব উঠো না,অনুভব উঠো।
এর মধ্যেই নার্সরা এসে আমাকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো,আর আমি বারবার বলতে লাগলাম,,”ছেড়ে দেও,আমি আমার প্রিয় ভালোবাসার কাছে যাবো,আমার অনুভবের কাছে যাবো,ছেড়ে দেও।”কিন্তুু ওরা কেউ আমাকে ছাড়েনি বরং আমাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যেতে লাগলো।আর আমি ওর কবরের দিকে চেয়ে রইলাম।ধীরে ধীরে ওর কবর অদৃশ্য হতে লাগলো একটা সময় পুরো অদৃশ্য হয়ে গেলো।
অনেকগুলো বছর কেটে গেলো আমার এ নতুন জায়গাতে,এখানে সবাই কেমন অদ্ভুদ ব্যবহার করে।সবাইকে দেখতেও অদ্ভুদ লাগে, মাঝে মাঝে মামা-মামী এসে দেখা করে যায় কিন্তুু আমাকে নেয় না।আমার এখানে খুব কষ্ট হয়,সবাইকে দেখলে ভয় লাগে,আমি ওদের সবাইকে বলি আমাকে অনুভবের কাছে নিয়ে যেতে কিন্তুু ওরা কেউ নেয় না। রোজ রাতের আঁধারে তারাদের দিকে তাকিয়ে অনুভবকে বলি ভালো থেকো প্রিয় ভালোবাসা।
_____সমাপ্ত_____