প্রীতিলতা আসবে বলে পর্ব-১১

0
1630

প্রীতিলতা আসবে বলে
লেখিকা:আফরিন ইসলাম
পার্ট :১১

প্রীতী শাকিলের সাথে কথা বলছে ৷আর টেবিলের নিচে কিছু একটা করছে ৷প্রীতির চেহারা দেখে কেউ বলবেই না যে সে একজন মেয়ে ৷আর সে এমন ভাবে হেসে হেসে কথা বলছে যে শাকিল কেন ৷কেউ প্রীতিকে সন্দেহ করবে না ৷প্রীতি টেবিলের নিচে যা সেট করার ৷তা করে দিয়েছে ৷তারপর প্রীতি বলল

স্যার গো পায়ের ব্যাথায় রাইতে ঘুমাইতে পারি না ৷ বউ খালি বকে আমারে ৷কিছু একটা করেন ৷পায়ের গিড়ায় এমন ব্যাথা যে মইরা যাইতে মন চায় ৷

শাকিল পুরুষ রূপী প্রীতির দিকে তাকিয়ে ঝাঝাঁলো গলায় বলল

আরে আপনি বড্ড বেশি কথা বলেন ৷এই নিন এখানে কিছু টেস্ট দিয়েছি ৷ টেস্ট গুলো করিয়ে আসবেন ৷এখন যান আপনি ৷আধা ঘন্টা ধরে বকবক করে যাচ্ছেন ৷

প্রীতি হালকা হেসে বেড়িয়ে গেল ৷তারপর নিজের অফিসের দিকে রওনা দিল ৷

অপর দিকে নিরুপমাকে আবেশ বাড়ীতে নিয়ে এসেছে ৷তার ছেলে মেয়ে ভালো আছে জানার পর থেকে পাগলামি আর করছে না ৷তবে বেশ অসুস্হ সে ৷নিরুপমা নিজের ঘরে শুয়ে ছিল ৷এমন সময় ওর ঘরের দরজায় কেউ নক করলো ৷নিরুপমা ভেতরে আসতে বলতেই নক করা ব্যক্তি ভেতরে ঢুকলো ৷

নিরুপমা নিজের ছোট ভাইকে দেখে দুই হাতে জরিয়ে ধরলো ৷তারপর চুমু খেল তার গালে ৷নিরুপমা নিজের ভাইকে বলল

এই দুইদিন তো কম করলি না আমার জন্য ৷দিন রাত এক করে পুলিশের কাছে ছুটলি ৷আবার হাসপাতালেও আমায় নিয়ে কত করলি ৷এত ভালো কেন তুই ভাই ৷

নিজের বোনের জন্য করবো না তো কার জন্য করবো ৷পুচকু দুইটাকে তো এখনো খুজে পেলাম না ৷

নিরুপমা নিজের ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল একটা কথা বলবো ভাই ৷

হুমমম বলো ৷

যে ওদের কিডন্যাপ করেছে ৷ সে কাল রাতে তোর দুলা ভাইকে কল করে ছিল ৷

মানে কি বলছিস ৷তা কি বলেছে ও ৷উত্তেজিত কন্ঠে বলল ৷

বাবুরা ভালো আছে ৷আর দুই দিন পর আমার সন্তান ফেরত দেবে ৷তবে একটা শর্ত আছে ৷

কি শর্ত ৷

বাবুদের দূরে কোথাও পাঠিয়ে দিতে হবে ৷এখানে নাকি ওদের প্রানের ঝুকি আছে ৷

যা ভালো হয় করো ৷কিন্তু একজন কিডন্যাপার কেন আমাদের নিয়ে চিন্তা করবে ৷

আমিও তো তাই ভাবছি ৷আর একটা কথা ভাই ৷ঐ কিডন্যাপার কোনো ছেলে নয় ৷ও একটা মেয়ে ৷আর আমার সন্দেহ মতে সে আমাদের প্রীতিলতা ৷

মানে কি বলছো আপু ৷প্রীতিলতা চৌদ্দ বছর আগে মারা গেছে ৷আমার প্রীতিলতার লাশটাও আমি দেখতে পাই নি ৷আর এত বছর পরে ও কিভাবে ফিরে আসবে ৷তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে আপু ৷কথাটা বলেই নিরুপমার ভাই চলে যেতে নিলে ৷নিরুপমা বলল

নির্ঝর ভাই আমার ৷আমি মিথ্যে বলছি না ৷ওই মেয়েটা কাল এমন একটা কথা বলেছে যে ৷তোর দুলাভাইও তাই সন্দেহ করছে ৷

নির্ঝর চুপ করে দাড়িয়ে আছে ৷ কোনো কথা বলছে না ৷

নিরুপমা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল তুই কি এখনো ওকে ভালোবাসিস ৷ ও যদি সত্যি আবার ফিরে আসে ৷

নির্ঝর নিজের বোনের দিকে একবার ফিরে তাকালো ৷তার চোখে পানি টলমল করছে ৷নির্ঝর নিরুপমার দিকে তাকিয়ে বলল

প্রীতি যদি ফিরে আসে ৷ তাহলে এইবার আমি ওকে মেরে ফেলবো ৷চৌদ্দ বছর আমাকে কষ্ট দেওয়ার শাস্তি দেব ৷আমি আসি এখন ৷নিচে মা , বাবা আর মিলা এসেছে দেখা করতে ৷

কি চাচা আর চাচি এসেছে ৷তুই যা আমি আসছি নিরুপমা বলল ৷

ঠিক আছে ৷

হ্যা নির্ঝর আর নিরুপমা ভাই বোন ৷তবে তারা চাচাতো ভাই বোন ৷চাচাতো ভাই বোন হলেও তারা আপন ভাই বোনের থেকে কম না ৷

অন্যদিকে ডাঃ শাকিল ভয়ে কাপঁছে ৷তার মাথায় কাজ করছে না ৷এসির মধ্যেও সে কাপঁছে ৷প্রীতি হাসপাতাল থেকে চলে যাওয়ার পর ডাঃ শাকিলের কাছে পিয়ন একটা খাম দিয়ে যায় ৷ ডঃ শাকিল জিজ্ঞাসা করে কে দিয়েছে ৷কিন্তু পিয়ন নাম বলতে পারে না ৷শাকিল খামটা খুলতেই তার ভেতর থেকে কিছু ছবি বেড়িয়ে আসে ৷ যেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে তিনি চারুলতা অর্থাৎ প্রীতির মা কে নির্যাতন করছেন ৷আর আয়ান চৌধুরীকে বাকিরা প্রহার করছে ৷ খামের ভেতর থেকে শাকিল একটা চিরকুট পায় ৷কাপাঁ কাপাঁ হাতে সেটা পড়তে শুরু করে ৷

তোমার মৃত্যু হয়ে আয়ান চৌধুরী ফিরে এসেছে শাকিল ৷ তোমায় আমি কঠিন মৃত্যু দেব ৷নিচে নাম লেখা আয়ান চৌধুরী ৷

শাকিল ভয়ে কাপঁছে চিঠিটা পড়ার পর ৷এই হাতের লেখা তার খুব চেনা ৷এটা তার বন্ধু আয়ানের লেখা ৷কিন্তু সে তো চৌদ্দ বছর আগে মারা গেছে ৷নিজের হাতে তাকে মাটি চাপা দিয়েছে সবাই মিলে ৷ওর মাথায় কাজ করছে না ৷তবে কি এখনো আয়ান বেচেঁ আছে ৷ শাকিল ছবি গুলোকে ছিড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলল ভয়ে ৷তারপর পাগলের মতো বাড়ীর দিকে রওনা দিল ৷

প্রীতি বাড়ি ফিরলো সন্ধ্যায় ৷বাচ্চা দুটো খেলছে ফ্লোরে বসে ৷প্রীতি ওদের জন্য অনেক কিছু কিনে এনেছে ৷বাচ্চা দুটো প্রীতির হাতে খেলনা দেখেই দৌড়ে এলো ৷প্রীতি ওদের জিনিস গুলো দিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেল ৷কোনো কথা বলল না৷ ওদের কাছে টেনে কষ্ট ছাড়া আর কিছুই পাবে না সে ৷কথা অনুযায়ী কালকেই দিয়ে আসবে ৷তাহলে ওদের কাছে টেনে কি লাভ ৷শুধু শুধু আবার কষ্ট পাবে ৷কাল থেকে আবারো সে একা ৷এই একাকিত্ব আর তাকে ছাড়লো না ৷

রাত হয়ে গেছে অনেক ৷আকাশে আজ তারার মেলা ৷নির্ঝর আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে ৷চাদেঁর আলোয় চারিদিক আলোকিত ৷নির্ঝরের হাতে একটা ছবি ৷এই ছবিটা দেখে চৌদ্দটা বছর পার করেছে সে ৷নির্ঝর ছবিটার দিকে তাকিয়ে বলল

আমার প্রীতিলতা ৷ তুই কি সত্যি ফিরে আসবি আমার জীবনে ৷সত্যি কি এই নির্ঝর শাহরিয়ার কথা তোর মনে আছে ৷নাকি পাল্টে গিয়েছিস ৷আমি তো পাল্টাই নি ৷জানিস ভার্সিটিতে একটা মেয়ে এসেছে ৷ওর নামও প্রীতিলতা ৷ও যেই দিন ওর নামটা বলেছিল ৷ঐ দিন থেকেই ওকে দেখলে আমার রাগ হয় খুব ৷আর জানিস ওই মেয়েটা একদম তোর মতো ৷এত উল্টা পাল্টা কথা বলি ৷তবুও আমার গলাই জরিয়ে ধরে সবার সামনে ৷আর তোর মতই ঠোটঁ কাটা স্বভাবের ৷লোকের সামনেই উল্টা পাল্টা কথা বলে ৷ঐ মেয়েটা আর তোর মধ্যে একটাই তফাৎ ৷ ঐ মেয়েটা আধারের মতো কালো ৷আর তুই পূর্নিমার মতো সুন্দর ৷মাঝে মাঝে মনে হয় ঐ টা তুই ৷ ঐ মেয়েটার জায়গায় তুই কেন ফিরে আসলি না আমার জীবনে বলতে পারিস ৷

চলবে…..