প্রীতিলতা আসবে বলে পর্ব-১২

0
1640

প্রীতিলতা আসবে বলে
লেখিকা : আফরিন ইসলাম
পার্ট : ১২

জীবন থেমে থাকে না ৷সময়ের সাথে জীবনের মানে পাল্টে যায় ৷সময়ের সাথে ভালোবাসার রং বদলায় ৷সময়ের সাথে ভালোবাসার ধরন পার্টায় ৷সময়ের সাথে ভালোবাসা প্রকাশের মাধ্যম পাল্টায় ৷তবুও দিন শেষে আমরা ভালোবাসি ৷তবুও দিন শেষে ভালো থাকার চেষ্টা করি ৷

প্রীতি আজ তার ভাইয়ের কাছে ছেলে মেয়ে দুটোকে দিয়ে আসবে ৷বুকের ভেতরটা তার খাঁ খাঁ করছে ৷সত্যি কি আর দেখা হবে ওদের সাথে ৷ওদেরকে কি আবারো নিজের বুকে জরিয়ে ধরতে পারবে ৷প্রীতির তা জানা নেই ৷একাকিত্ব আর হতাশা মানুষকে মানসিক রোগী বানিয়ে দেয় ৷প্রীতিও যার শিকার ৷পাল্লা দিয়ে রাতের গভীরতা বেড়েই চলেছে ৷প্রীতির চোখে ঘূম নেই ৷কত রাত সে ঘুমায় নি তার হিসেব নেই ৷প্রীতি বারান্দা থেকে ঘরে গেল ৷তারপর বক্স থেকে ঔষুধ বের করে খেয়ে নিল ৷গত চৌদ্দ বছর ধরে এই ঔষুধ যেন তার নিত্য সঙ্গী ৷তারপর আবারো চলে গেল বারান্দায় ৷কিছুই আর আজ ভালো লাগছে না ৷আকাশের দিকে তাকিয়ে প্রীতিলতা হাসে ৷কষ্ট হয় খুব নিজের বুক মাঝারে ৷আকাশের দিকে তাকিয়ে প্রীতি বলল

মা তুমি বলে ছিলে আমি নাকি অনেক বড় ডাক্তার হব ৷আমি নাকি লোকের প্রান বাচাঁবো চিকিৎসা করে ৷আমাকে দেখে নাকি মানুষ অনেক অনেক দোয়া করবে ৷কিন্তু জানো মা আমি বড় হয়েছি ঠিকই ৷কিন্তু ডাক্তার হই নি ৷আমি একটা খুনি হয়েছি মা ৷আমাকে এখন সবাই ভয় পায় ৷ খুব রাগ হয় না আমার উপর ৷কি করবো বলো আমি চাই না এমন করতে ৷কিন্ত আমার মাথাটা ঠিক থাকে না ৷জানো প্রথম খুনটা করে ছিলাম মেন্টাল হাসপাতালে ভর্তি থাকা কালীন এক ডাক্তারকে ৷ওর গলাটা ব্লেড দিয়ে কেটে দিয়ে ছিলাম ৷একটা গলা কাটা মুরগীর মতো ছটফট কর ছিল ঐ জানোয়ার টা ৷ কাল আবার একটা খুন করবো আমি ৷তাই বাচ্চা দুটোকে সড়িয়ে দিতে হচ্ছে ৷ওদের নিয়ে কোনো রিস্ক আমি নেব না ৷ আচ্ছা আমাকে কি তুমি এখনো আগের মতোই ভালোবাসো ৷তোমার কথা বড্ড মনে পরে ৷কোনো এক শ্রাবনে সময় করে আমায় না হয় নিয়ে যেও তোমাদের কাছে ৷তোমার নামের খোলা চিঠি পাঠিয়ে দিলাম নীল আকাশে ৷সময় হলে পড়ে নিও ৷

পরের দিন সকালে হাসপাতালের দিকে যাচ্ছিল শাকিল ৷কালকের ভয়টা তার কাটে নি এখনো ৷কাল সারা রাত ঘুমাতে পারে নি সে ৷হঠাৎ তার মোবাইলে একটা মেসেজ এলো ৷শাকিল নিজের ফোন হাতে নিল৷ তারপর মেসেজ ওপেন করতেই সে ঘামতে লাগলো ৷সেখানে স্পষ্ট লেখা

নিজের প্রিয় জিনিস যদি নষ্ট হয়ে যায় ৷ তাহলে খুব কষ্ট হয় ডঃ শাকিল ৷আর নিজের সন্তান যদি চোখের সামনে ছটফট করতে করতে মরে যায় তাহলে আরো কষ্ট হয় ৷তোমার সন্তান যদি মরে যায় ৷তোমারও কি এমন কষ্ট হবে শাকিল ৷যেমনটা আমার হয়ে ছিল ৷

শাকিল মেসেজটা পরে আবারো ভয়ে ঘামতে লাগলো ৷শাকিল অতি দ্রুত বেগে গাড়ী চালাতে লাগলো ৷তার একমাত্র ছেলের কিছু হলে সে বাচঁবে না ৷না কেউ তার ছেলেকে কিছু করতে পারবে না ৷

অপর দিকে আবেশ নিজের ছেলে মেয়েকে বুকে নিয়ে কাদঁছে ৷আজ কত দিন পর সে নিজের ছেলেমেয়েকে পেয়েছে ৷তাদের জ্ঞান নেই ৷অজ্ঞান অবস্থায় ওদের পেয়েছে ৷নিজের স্ত্রীকে কিছুক্ষন আগে আবেশ খাইয়ে দিচ্ছিল ৷হঠাৎ ওর মোবাইলে একটা কল আসে ৷আবেশ কলটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে শুধু একটা কথাই বলে

আপনার ছেলে মেয়ে বাইরে আছে ৷এসে নিয়ে যান ৷তারপর ফোনটা কেটে যায় ৷

আবেশ আর দেরি করে না ৷দৌড়ে গেটের কাছে চলে যায় ৷গেটের সামনেই তার ছেলে আর মেয়ে পরে আছে ৷তাদের কোনো জ্ঞান নেই ৷আবেশ ওদের তাড়াতাড়ি বাসার ভেতরে নিয়ে যায় ৷আর ডাক্তারকে কল করে ৷ছেলে মেয়েকে দেখে ডাক্তার বলল

ওদের ঘুমের ঔষুধ খাওয়ানো হয়েছে ৷তাই এমন অচেতন হয়ে ঘুমাচ্ছে ৷তবে কয়েক ঘন্টা পরে এমনিতেই জ্ঞান ফিরবে ওদের ৷চিন্তার কোনো কারন নেই ৷আবেশ চোখের পানি মুছে ডাক্তারকে বিদায় জানালো ৷

শাকিল নিজের ছেলের কলেজের সামনে দ্রুত গাড়ী চালিয়ে আসে ৷কোনো রকম দৌড়ে ভেতরে যায় সে ৷তার হাত পা কাপঁছে ৷একটু দূরেই তার ছেলে রাসেল বন্ধুদের সাথে হেসে কথা বলছে ৷তার ছেলে ভালো আছে এটাই অনেক ৷শাকিল ছেলের সাথে আর কথা বলল না ৷শাকিল চলে আসবে এমন সময় তার ফোনে আবারো মেসেজ এলো ৷

এত টুকুতেই ভয় পেয়ে গেলে নাকি শাকিল ৷তোমাকে তো কেবল একটু ভয় দেখালাম ৷বাকিটা তোলা রইলো কেমন ৷শাকিল কপালের ঘাম মুছে নিল ৷তারপর আবারো গাড়ীর দিকে এগিয়ে গেল ৷শাকিল আস্তে আস্তে গাড়ী চালিয়ে হাসপাতালে চলে গেল ৷

শাকিল নিজের চেম্বারে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে ৷কিছুই ভালো লাগছে না ৷হঠাৎ করেই একটা চাপা কান্নার আওয়াজ তার কানে এলো ৷কেউ কাদঁছে আর বলছে

শাকিল ভাই চারুকে ছেড়ে দে ৷আমাকে মেরে ফেলে দে কিন্তু ওকে ধর্ষন করিস না ভাই ৷শুধু একটা হাসপাতালের প্রধান প্রফেসর হতে এমন করিস না ৷ চারুলতা ডাক্তারি ছেড়ে দেবে ৷তবুও ওকে ধর্ষন করিস না ৷তোর পায়ে পরি আমি ৷চারু তোকে নিজের ভাই বলে শাকিল ৷এমন করিস না ৷আমার চারুকে তুই ছেড়ে দে শাকিল ৷চারু চারু না না ৷আল্লাহ তুমি কি বিচার করবে না ৷আল্লাহ আমার চারু ৷

শাকিল ভাই আমাকে ছেড়ে দিন ৷আমার সর্বনাশ করবেন না ভাই ৷একটু দয়া করুন ভাই ৷আল্লাহ তুমি কি দেখ না ৷না…….

সাইন্ডপ্রুফ ঘরটার মধ্যে শাকিল ভয়ে ঘামছে ৷হাঠাৎ করেই চিৎকারের আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেল ৷শাকিল পাগলের মতো কাপঁছে ৷

শাকিল দৌড়ে চেম্বার থেকে বেড়িয়ে গেল ৷হাসপাতালের সবাই অবাক হয়ে শাকিলের দিকে তাকিয়ে আছে ৷শাকিল পাগলের মতো হাসপাতাল থেকে বেড়িয়ে গেল ৷তারপর দৌড়ে গাড়ীতে বসলো ৷শাকিল বাড়ীর দিকে রওনা দিল ৷ সে পাগলের মতো গাড়ী চালাচ্ছে ৷ভয়ে মাথায় কাজ করছে না ৷শাকিল গাড়ী চালাচ্ছে ৷হঠাৎ করেই শাকিল দেখলো তার গাড়ী নিয়ন্ত্রনে নেই ৷তার গাড়ী ব্রেক করছে না ৷গাড়ী ব্রেক করতে ব্যর্থ হচ্ছে সে ৷গাড়ী নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ধাক্কা খেল একটা গাছের সাথে ৷

শাকিলের কপাল বেয়ে রক্ত পড়ছে ৷চোখের সামনে একটা ঝাপসা অবয়ব সে দেখতে পেল ৷কিন্তু চোখ খোলা রাখা তার সম্ভব হলো না

রাত দুইটা ছুই ছুই ৷শাকিল আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালো ৷ মাথাটা অনেক ব্যাথা করছে ৷ নিজেকে খোলা আকাশের নিচে আবিষ্কার করলো সে ৷শরীরটা এখনো দুর্বল ৷আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো কেউ নেই ৷কিন্তু এ কি তার হাত পা বাধাঁ কেন ৷মুখ থেকেও কোনো আওয়াজ বের করতে পারছে না ৷তার মুখ কাপড় দিয়ে বাধাঁ ৷তার পাশে বেশ কিছু জিনিস রাখা ৷যা দেখে সে আবারো ভয়ে কাপঁছে ৷

চলবে….