প্রীতিলতা আসবে বলে
লেখিকা:আফরিন ইসলাম
সিজন : ২
সমাপ্তি পর্ব
চারু আস্তে আস্তে উপরে সিড়ি বেয়ে উঠে পড়লো ৷কিন্তু উপরে উঠে যা দেখলো তাতে তার চোখ কপালে উঠে গেল ৷আয়ান আর তার বেড রুম খুব সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো ৷বিছানার দিকে তাকাতেই দেখলো একটা প্যাকেট রাখা ৷চারু প্যাকেটটা হাতে নিল ৷প্যাকেটের নিচে একটা চিরকুট ৷চিরকুটে লেখা
আমার সুন্দরী বউটা যেন তাড়াতাড়ি রেডি হয় ৷এই গরমে ফ্যান ছাড়া লুকিয়ে থাকতে খুব কষ্টে হবে আমাদের ৷
চারু একটা স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেললো ৷তারপর প্যাকেটটা নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেল ৷চারু ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে দেখলো আয়ান দাড়িয়ে আছে ৷আয়ান চারুর দিকে তাকিয়ে রইলো ৷চারুর পড়নে তার বিয়ের সেই লাল টুকটুকে শাড়ীটা ৷আয়ানের কাছে চারুকে সেই নতুন বউয়ের মতো লাগছে ৷আয়ান চারুকে আয়নার সামনে বসিয়ে দিল ৷তারপর চিরুনী দিয়ে চুল আচড়ে একটা হাত খোপা করে দিল ৷তারপর নিজের পাঞ্জাবীর পকেট থেকে একটা বেলীফুলের গাজরা বের করে খোপায় লাগিয়ে দিল ৷চারু বুঝতে পারছে না তার সাথে কি হচ্ছে ৷চারু আয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল
তা মহাশয় আজ হঠাৎ এত প্রেম কেন দেখানো হচ্ছে শুনি ৷
আপনি আজকেও ভুলে গেছেন চারু ৷কিন্তু আমি ভুলি নি ৷আপনি হয়তো ভুলে গেছেন আজকের দিনে আপনি আমার বউ হয়ে এই বাড়ীতে পা রেখে ছিলেন ৷চারু করুন চোখে আয়ানের দিকে তাকালো ৷চারু এই বছরও ভুলে গেছে ৷কিন্তু আয়ান প্রতিবছর চারুকে সারপ্রাইজ দেয় ৷ আয়ান চারুর হাতে কাচেঁর রেশমি চুড়ি পড়িয়ে দিল ৷তারপর বলল
এবার তাহলে দরজাটা খুলি চারু কি বলেন ৷
চারু খেয়াল করলো দরজা লাগানো ৷এতক্ষন খেয়ালই করে নি সে ৷আয়ান দরজা খুলেই দেখলো তার আট বছরের মেয়ে প্রীতিলতা আর ছেলে দাড়িয়ে আছে ৷পেছনে ডায়না ছোট ছেলে আদিত্যকে কোলে নিয়ে দাড়িয়ে আছে ৷তার পাশেই দিহান দাতঁ বের করে দাড়িয়ে আছে ৷
সবাই মিলে আয়ান আর চারুর তেইশতম বিবাহ বার্ষিকী পালন করেছে ৷আজ কত দিন ছেলে মেয়ে গুলোও মজা করে নি ৷কিন্তু আজ তারাও বেশ মজা করেছে ৷
রাত দুইটা বাজে ৷আয়ান আর চারু বাড়ীর পাশে থাকা দিঘীর ঘাটে বসে আছে ৷দুজনের দৃষ্টি চাদেঁর দিকে ৷চারু আয়ানের বুকে মাথা দিয়ে বসে আছে ৷আর আয়ান তার চারুলতাকে জরিয়ে বসে আছে ৷নিরবতা ভেঙ্গে চারু বলল
আপনার পাশে আমায় একদম মানায় না এখন আয়ান ৷ আপনাকে দেখুন এখনো কত সুন্দর লাগে ৷আর আমাকে দেখুন কেমন হয়ে গেছি ৷ তবুও কেন আমাকে ভালোবাসেন আপনি ৷
আয়ান চারুর দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালো ৷তারপর বলল
আর কখনো যদি আমার বউয়ের ব্যাপারে উল্টা পাল্টা কিছু বলেছেন চারু ৷সেই দিন আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না ৷আমার ভালোবাসাকে দয়া করে অপমান করবেন না ৷যদি নারী দেহের প্রতি লোভ থাকতো তাহলে অনেক মেয়েকে ব্যবহার করতে পারতাম ৷অনেক মেয়ের মাঝে যারা শারিরীক সুখ খোজেঁ ৷তারা আর যাই হোক মনের সুখ খুজে পায় না ৷এই দুনিয়ায় মানসিক ভাবে সুখী হওয়া খুব কঠিন চারু ৷ এই যে আপনি রোজ রাতে আমার জন্য অপেক্ষা করেন ৷এই যে আপনি রোজ রাতে আমাকে নিজের হাতে খাইয়ে দেন ৷এই যে আপনি রোজ রাতে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেন ৷এটাই তো আমার কাছে অনেক ৷আপনার এই ভালোবাসার মূল্য কিভাবে দেব বলুন তো ৷
আয়ান কিছুক্ষন থেমে বলল জানেন চারু আজকাল মনে হয় আপনাকে হয়তো আর ভালোবাসি বলতে পারবো না ৷আজকাল আপনার কাছে খুব থাকতে ইচ্ছে করে ৷মনে হয় সময় হয়তো আর নেই ৷
আয়ানের দিকে চারু ছলছল চোখে তাকিয়ে রইলো ৷হঠাৎ করেই জোড়ে কেদেঁ দিল ৷আর আয়ানের বুকে কিল মারতে লাগলো ৷ আয়ান তার চারুকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো ৷তারপর বলল
কাদঁছেন কেন চারু ৷একদিন না একদিন তো যেতেই হবে ৷বয়স তো বিয়াল্লিশ হয়েই গেছে ৷কখন যে ওপারের ডাক চলে আসে তা বলা যায় না ৷তবে আমার একটাই চাওয়া আপনার আগে যেন আমি চলে যাই ৷
চারু কেদেঁই যাচ্ছে ৷আয়ানও নিজের চোখের পানি মুছে নিল ৷তারপর নিজের পকেট থেকে একটা বক্স বের করে বলল
এভাবে কাদঁলে আপনাকে আমি উপহারটা কিভাবে দেব বলুন তো ৷আয়ান চারুর চোখ মুছে দিল ৷তারপর বক্স থেকে একটা চেইন বের করে চারুকে পড়িয়ে দিল ৷তারপর চারুর কপালে চুমু খেয়ে বলল
আমার লাল টুকটুকে বউ ৷আমার পরী বউ ৷
আয়ান আর চারু একে ওপরকে জরিয়ে ধরলো ৷তাদের ভালোবাসার যেন শেষ নেই ৷যে ভালোবাসা সময়ের সাথে শেষ হয়ে যায় ৷তা কখনোই ভালোবাসা হয় না ৷যেই ভালোবাসা সময়ের সাথে গাঢ় হয় ৷তাই সত্যিকারের ভালোবাসা ৷যে ভালোবাসা ছেড়ে যাওয়া যায় না ৷
চৌধুরী বাড়ী আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হচ্ছে ৷আবারো সবাই হাসি খুশিতে মেতে উঠছে ৷
এক সপ্তাহ পার হয়ে গেছে ৷চারুর শরীরে জ্বর তিন দিন ধরে ৷আজ শরীরটা অনেকটাই ভালো তার ৷আয়ানের অফিসেও কাজ কম ৷তাই সেও আজ অফিসে যায় নি ৷প্রীতি আজ স্কুলে যায় নি ৷তার নাকি পেট ব্যাথা ৷ আয়ান জানে এই সব প্রীতির চালাকি ৷সে একদম স্কুলে যেতে চায় না ৷বড্ড ফাকিঁবাজ সে ৷আবেশ সকালেই স্কুলে গেছে ৷ডায়না তার ছেলেকে নিয়ে বাবার বাড়ীতে গেছে ৷দ্বীপ তাকে কিছুদিন ঘুড়ে আসতে বলেছে ৷
আয়ান আর প্রীতি লুকোচুরি খেলছে ৷চারু ছোট ছেলে আদিত্যকে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছে ৷ আয়ান চোর হয়েছে ৷তাই সে প্রীতিকে খুজছে ঘরের মধ্যে ৷আয়ান খুব ভালো করেই জানে প্রীতি আলমারির ভেতর ৷তবুও সে ঢং করেই প্রীতিকে খুজছে ৷
হঠাৎ করেই কলিংবেলের আওয়াজ আসে ৷আয়ান নিচ তলায় চলে যায় দরজা খুলতে ৷
অনেক সময় পার হয়ে যায় কিন্তু আয়ান আসে না ৷চারু আদিত্যকে রেখে বাইরে যায় ৷ কিছুক্ষন পর চারু দৌড়ে প্রীতির কাছে আসে ৷তারপর আলমারীর দরজা খুলে বলে ৷আজ যাই হয়ে যাক তুই এখান থেকে বের হবি না মা ৷আমরা মরে গেলেও না ৷নিজের খেয়াল রাখিস মা ৷আমরা না থাকলে পালিয়ে যাস তুই ৷ছোট প্রীতি মায়ের কথার মানে বোঝে নি ৷শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল ৷তারপর চারু আলমারীর দরজা আলগা করে লাগিয়ে চলে গেল ৷ তারপর তার পরিবারের সাথে যা হয় সেটা ভাবতেই প্রীতির চোখ থেকে একফোটাঁ পানি গড়িয়ে পরে ৷
বর্তমানে…..
প্রীতি নিজের ডায়রীটা বন্ধ করলো ৷ডায়রীর পরবর্তী পৃষ্ঠা ফাকাঁ ৷প্রীতি নিজের চোখের পানি মুছে নিল ৷আকাশের দিকে তাকালো প্রীতি ৷সকাল হয়ে গেছে ৷এখনো যে পাচঁজনকে খুন করা বাকি তার ৷তারপর আর তার পিছুটান নেই নির্ঝর ছাড়া ৷সব পিছুটান থেকে মুক্ত হয়ে তারপর সেও না হয় চলে যাবে নিজের মা বাবার ঘুম ভাঙ্গাতে ৷
সমাপ্তি