প্রীতিলতা আসবে বলে
লেখিকা :আফরিন ইসলাম
সিজন :২
পার্ট: ৪
আজ নয় দিন আয়ানের কোনো খোজ নেই ৷এদিকে চারুর বাড়ীর অবস্থা ভালো না ৷এলাকার মানুষ চারুকে ছিঃ ছিঃ করছে ৷চারুর নামে এলাকায় খারাপ কথা রটেছে ৷চারু নাকি আয়ানের সাথে অবৈধ ভাবে রাত্রি যাপন করে এমন কথা এলাকায় ছড়িয়ে গেছে ৷গত দুই দিন ধরে চারুকে নিয়ে বাজে কথা রটে যাচ্ছে ৷চারুর দাদু চারুকে মেরেছে গতকাল ৷চারু খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে ৷আয়ানের কোনো খবর সে পায় নি ৷গত দুই দিন ধরে এলাকার ছেলেরা বাড়ীর সামনে এসে বাজে কথা বলছে চারুকে ৷গত রাতে চারুর জানালার কাছে কয়েকজন ছেলে এসে ছিল ৷চারু জানালার কাছেই ছিল ৷চারু প্রতি রাতের জন্য কত টাকা নেয়ে ৷তার রেট কত জানতে চেয়েছে তারা ৷চারু ওদের বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারে নি ৷শুধু কেদেঁ গেছে ৷ নয় দিন আগে আয়ান তার জানালার কাছে এসেছিল ৷এটা অনেকেই লুকিয়ে দেখেছে ৷চারুকে দিয়ে ওর দাদা দাদি গোপনে দেহ ব্যবসা করায় এই কথা এখন এলাকায় ছড়িয়ে গেছে ৷গতকাল রাতে তাদের একঘর করা হয়েছে ৷
চারু বিছানার চাদর খামচে ধরে কাদঁছিল ৷হঠাৎ ওর দাদি এসে বলল তোর লগে জামিল নামের একটা পোলা দেহা করতে আইছে বইন ৷
চারু জামিলের কথা শুনে কোনো রকম ওরনা জরিয়ে দৌড়ে গেল ৷বসার ঘরে জামিল বসে আছে ৷তার মাথায় ব্যান্ডেজ করা ৷দেখে তাকে অসুস্থ মনে হচ্ছে খুব ৷বেশ শুকিয়ে গেছে ৷চারু জামিলের কাছে দৌড়ে যেয়ে বলল
জামিল ভাই আমার ৷তোমার মাথায় কি হয়েছে ৷তুমি এত দিন পর কেন এসেছো ৷আয়ান কোথায় আছে ৷তুমি জানো আমার উপর দিয়ে কি যাচ্ছে ৷আমরা এলাকায় মুখ দেখাতে পারছি না ৷ আয়ান কেন আসছে না ৷
চারু কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো ৷জামিলের চোখেও পানি চারুর অবস্থা দেখে ৷সে মূলতো চারুর ব্যাপারে কাল রাতেই খবর পেয়েছে ৷আয়ানই তাকে পাঠিয়েছে ৷চারুদের বাড়ীতে ঢোকার সময় অনেকেই ইঙ্গিতে খারাপ কথা বলেছে তাকে ৷কিন্তু সে তো চারুকে নিজের বোনের মতোই দেখে ৷জামিল চারুর পাশে বসে বলল
আজ বিকেল পাচঁটায় আয়ান আসবে ৷তাকে দেখলেই বুঝতে পারবে কেন সে আসে নি এত দিন ৷চিন্তা করো না কোনো ৷তোমার চিন্তা দূর করার ব্যবস্থা হচ্ছে ৷আর সেটা আজই ৷
মানে ৷
মানেটা সময় হলেই জানতে পারবে ৷এবার আমি যাই কেমন ৷
জামিল চলে গেল ৷আর চারু তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো ৷
আয়ান আসবে কথাটা শোনার পর থেকেই চারুর মনটা কেমন যেন আনচান করছে ৷ হাজারো প্রশ্ন নিয়ে তার হৃদয় বসে আছে ৷যার উত্তর আয়ান নামের শ্যাম পুরুষের কাছে আছে ৷হাজারো চিন্তার মাঝেই বাইরে কারো গলার আওয়াজ পেল চারু ৷কন্ঠটা সে চেনে ৷এটা তাদের পাশের বাড়ীর লোক ৷লোকটার নাম রমিজ ৷তার একটা ছেলে আছে ছাদেক ৷এলাকায় বখাটেদের অন্যতম একজন সদস্য ৷চারুকে বড্ড জ্বালায় ৷এক বছর ধরে বিয়ে করার জন্য উঠে পরে লেগেছে বখাটে ছাদেক ৷কিন্তু চারুর দাদা দাদি মোটেই রাজী নয় এই প্রস্তাবে ৷রমিজ আলীর চিৎকারে চারুর দাদা বাইরে এলো ৷এসে দেখলো তার সাথে আরো কিছু লোক আছে এলাকার ৷চারুর দাদা বলল
কি হইছে এমনে ডাকতাছো ক্যান ৷
রমিজ আলী নিজের দাতঁ কেলিয়ে বলল তোমার জন্য একটা ভালো সংবাদ নিয়া আসলাম ৷
কি এমন সংবাদ শুনি ৷
তোমার ঐ নষ্টা নাতনিরে এহন আর কেউ বিয়া করবো না ৷এহন আমার ছাদেকের চাইতে ভালা পোলা আর পাইবা না ৷আমার পোলা চারুরে বিয়া করতে এহনও রাজী ৷আর ছাদেকের লগে বিয়া দিলে তোমাগো আর একঘর হইয়া থাকা লাগবো না ৷
চারুর দাদা রাগী চোখে রমিজ আলীর দিকে তাকিয়ে বলল তোমার সাহস হয় কেমনে আবার বিয়ার প্রস্তাব দেহনের ৷বাহির হইয়া যাও আমার বাড়ী থেইকা ৷চারুরে আমি কাইট্টা নদীতে ভাসামু তাও তোমার পোলা ছাদেকের মতো একটা নেশাখোরের লগে বিয়া দিমু না ৷
রমিজ মিয়া চিৎকার করে বলল এহনো বুইড়ার তেজ কমে নাই ৷ঐ বুইড়া তোর নাতনি তো একটা বেশ্যা ৷তোর ঐ বেশ্যা নাতনিরে কে বিয়া করবো ৷তোর ঐ নাতনিরে ফূর্তি করার জন্য ভাড়ায় নিয়া যাইবো পোলারা ৷কেউ বিয়া করবো না ৷আর বিয়া দিলে তো ব্যাবসা বন্ধ হইয়া যাইবো ৷আমিও দেখমু তোর ঐ নাতনি এই এলাকায় কেমনে থাকে ৷ঐ তোমরা চলো সবাই ৷চারু এতক্ষন সবই শুনেছে ৷চারু বসে বসে কাদঁছিল ৷হঠাৎ করেই নিজের অসুস্থ শরীরে প্রচন্ড আঘাত অনুভব করলো চারু ৷চারুকে ওর দাদা এলোপাথারী লাঠি দিয়ে মারছে ৷চারু ওর দাদার পায়ে পড়ছে কিন্তু লাভ হচ্ছে না ৷চারুর দাদিও থামাতে পারছে না ৷চারুর দাদা মারতে মারতে থেমে গেল ৷তারপর বলল
আমি আর কত অপমান সহ্য করমু ৷তোরে নিজের সন্তানের মতো মানুষ করছি ৷আর এহন তোরে মানষে বেশ্যা কয় ৷এই দিন দেহনের আগে আমার মরন ক্যান হইলো না ৷চারুর দাদা চোখের পানি মুছতে মুছতে বেড়িয়ে গেল ৷আর চারু ওর দাদীকে ধরে কাদঁতে লাগলো ৷
বিকেল হয়ে গেছে ৷ঘড়িতে পাচঁটা বাজে ৷আয়ান দাড়িয়ে আছে চারুর বাড়ির সামনে ৷কেউ নেই আশেপাশে ৷আয়ানের দৃষ্টি ছাদে ৷চারু আসে নি ৷তবে কি আজকেও তার চারুলতা আসবে না ৷নিজের দিকে না তাকিয়ে সে যার জন্য এলো সে কি আসবে না ৷কি হয়েছে তা চারুর কাছ থেকে জানতে চায় আয়ান ৷চারু হয়তো আসবে না ৷এটা ভেবেই আয়ান চলে যাবে ৷হঠাৎ করেই আয়ানকে অবাক করে দিয়ে একটা লাল টুকটুকে বউ ছাদে এসে উদয় হলো ৷তার মুখটা স্পষ্ট না আয়ানের কাছে ৷ তবুও আয়ান তাকিয়ে রইলো ৷ তবে কি চারুও তাকে ভালোবাসে ৷ এটা কি তার লাল টুকটুকে বউ ৷হ্যা এটা তারই বউ ৷আয়ানের মুখে হাসি ফুটলো ৷তার চারু লাল বেনারসি পড়েছে ৷তার চারু বউ সেজেছে ৷
অপর দিকে ছাদের উপর থেকে চারু তার শ্যাম পুরুষকে দেখে আতঁকে উঠলো ৷একি অবস্থা মানুষটার ৷তার মাথায় ব্যান্ডেজ করা ৷ ডান হাতের কবজি থেকে কনুই ব্যান্ডেজ করা ৷চারু অপেক্ষা করলো না ৷ছাদ থেকে দৌড়ে নেমে গেল ৷চারু দৌড়ে বাড়ীর বাইরে চলে এলো ৷ আয়ানকে অবাক করে দিয়ে চারু আয়ানকে ঝাপটে জরিয়ে ধরলো ৷চারু আয়ানকে কয়েক সেকেন্ড পর ছেড়ে দিল ৷তার পর আয়ানের ব্যান্ডেজে হাত বুলাতে বুলাতে হাউমাউ করে কেদেঁ উঠলো ৷চারু কাদঁতে কাদঁতে বলল
কিভাবে এমন হলো তোমার ৷সব সময় আমার খেয়াল কেন রাখতে হবে ৷ নিজের খেয়াল রাখতে পারো না ৷
অপর দিকে আয়ানের নজর চারুর চেহারার দিকে ৷চারুর দুই গালে পাচঁ আঙ্গুলের দাগ স্পষ্ট ৷ঠোটেঁর পাশে কাটা দাগ আয়ানের চোখ এড়ালো না ৷ডান হাতের কবজিতে কালশিটে দাগও আয়ান দেখলো ৷গলার পাশেই কাটাঁ দাগ ৷হয়তো কোনো ধারালো কিছুতে কেটেঁ গেছে ৷আয়ানের চোখে পানি ৷যেই মেয়েটাকে সামান্য আঘাত করার কথা চিন্তাও সে করতে পারে না ৷ সেই মেয়েটাকে কেউ এভাবে মেরেছে ৷এটা সে সহ্য করবে কি করে ৷তার সামান্য অসুস্থ থাকায় মেয়েটার উপর দিয়ে কি গেছে তা চিন্তাও সে করতে পারছে না ৷আয়ানের চিন্তার মাঝেই কেউ চারুকে তার থেকে দূরে সরিয়ে দিল ৷চারু ছিটকে দূরে পরে গেল ৷আর আয়ানের গালে প্রচন্ড জোড়ে একটা চড় পড়লো ৷আয়ান সামনে তাকিয়ে দেখলো চারুর দাদা ৷তার সাথে আরো বিশ পচিঁশ জন লোক ৷
চারুর দাদা চারুর কাছে যেয়ে বলল
তার মানে সবাই ঠিক কইতাছে ৷ তুই এই পোলার লগে নষ্টামি করছ ৷ রমিজ আলী আমারে নিজের চোখে না দেখাইলে তো বিশ্বাসই করতাম না আমি ৷চল তুই ভিতরে ৷আজকেই আমি ছাদেকের লগে তোর বিয়া দিমু ৷চারুর দাদা হেচঁকা টান দিয়ে চারুকে নিয়ে যেতে লাগলো ৷কিন্তু বেশি দূর যাওয়ার আগেই সে বাধা পেল ৷পেছনে তাকিয়ে দেখলো আয়ান চারুর অন্য হাত ধরে আছে ৷ আয়ান চারুকে নিজের দিকে হেচঁকা টান দিয়ে বলল
আমি চারুকে বিয়ে করবো ৷আমি বেচেঁ থাকতে চারুর বিয়ে অন্য কারো সাথে হবে না ৷
চারুর দাদা রেগে কিছু বলবে তার আগেই আয়ান চিৎকার করে বলল আমি যে চারুর সাথে এক ঘরে থেকেছি এটা কেউ দেখেছে নিজেদের চোখে ৷আমি রাতে চারুর ঘরে ঢুকেছি এটা কেউ দেখেছে ৷আমি শুধু আমার চারুলতাকে একটু দেখতে এসে ছিলাম ৷ আর সেটাই সবাই বানিয়ে দিল রাত্রিযাপন বাহ ৷ আমি চারুকে বিয়ে করবো ৷কারো বাপের ক্ষমতা থাকলে যেন আয়ান চৌধুরীকে ঠেকায় ৷ আয়ান চারুকে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরলো ৷কিন্তু একি চারু কোনো সাড়া দিচ্ছে না কেন ৷
আয়ান চারুর দিকে তাকাতেই চারু বলে চিৎকার করে উঠলো ৷চারুর মুখ থেকে ফেনা বেড়িয়ে আসছে ৷তার রক্তজবার মতো লাল টুকটুকে বউটার দেহ নেতিয়ে এসেছে ৷আয়ান চারুকে নিয়ে মাটিতে বসে পড়লো ৷আয়ান চারুর গালে হাত রেখে কাদঁতে কাদঁতে বলল চারু কি হয়েছে আপনার ৷আপনার মুখ থেকে এগুলো কি আসছে চারু ৷
চারু তার নিভু নিভু চোখে আয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল
আমি নাকি বেশ্যা আয়ান ৷আমাকে নিয়ে টাকা দিয়ে ফুর্তি করে ছেলেরা ৷আমি নাকি নষ্টা ৷আমি আর পারছি না আয়ান ৷আপনার জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে ৷তাই আপনার কাছে আসার আগে বিষ পান করেছি আমি ৷
চলবে